
আধুনিক প্রেম
২০১৪ সালের ঘটনা,
ভারতের তামিল নাড়ুতে প্রেমিকার ঘড়ে এক যুবকের আত্যহত্যা তোলপাড় তুলেছিল সে সময়।সেই সাথে জন্ম দিয়েছিল হাজারো প্রশ্নের।সিভা নামের অজো পাড়া গায়ের মাস্তান যুবকের প্রেমে পড়া এবং সে প্রেমের জন্য নিজের জীবন এভাবে বিসর্জন দেয়া সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়েছিল সে সময়।
সত্যিকার এই হৃদয় স্পর্শী ঘটনাকে পুঁজি করে ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয় সিনেমা RX100.
মুভিটি মুক্তির পরে ব্যবসায়ীক সাফল্যের পাশাপাশি নতুন করে নানা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।
আমাদের আজকের গল্প RX100 সিনেমা নিয়ে।কি ঘটেছিল সিভার জীবনে। সিভার জীবনের সে গল্প জানলে আপনি ও হতোবাক হতে বাধ্য।বারবার ভাববেন আরে এতো আমার আশেপাশেই ঘটে চলা কাহীনি।
গল্পের শুরু সুন্দর একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে,সেখানে আমরা দেখতে পাই সিভাকে যার জীবন পাড়ার আর দশটি ছেলের চেয়ে আলাদা।প্রয়োজনে প্রতিবাদ,মারপিট কিম্বা অসহায় কাউকে উপকার করা সবই সিভার এক চরিত্রে।জন্মগত পিতা না হয়েও সিভার একমাত্র আপন ডেডি,যে আপন ছেলের মতোই মানুষ করেছে সিভাকে।সিভাও তার জন্য জীবন বাজী রাখতে পারে,এমনি তাদের দুজন দুজনের জন্য ভালবাসা এমনি প্রেম তাদের।
সিভা তার ডেডির হয়ে একটি থিয়েটারে কাজ করতো।এক মূহুর্তের দেখায় আমাদের এই সিভার প্রেমে পড়ে যায় ইন্দু। ইন্দুর এ ( প্রেম ) ভালোবাসা সিভার অজানাই থেকে যায় বেশ কিছু দিন।ইন্দু গ্রামের মোড়লের মেয়ে।কাজের প্রয়োজনে সিভার আশা যাওয়া লেগেই থাকতো ইন্দুদের বাড়ি।
একদিন সুযোগ বুঝে ইন্দু তার মনের কথা বলে ফেলে সিভাকে।ইন্দু দেখতেও অসম্ভব সুন্দরী হওয়াই তার প্রেমে পড়তে খুব বেশি সময় নেয়না সিভা।এ পর্যন্ত শুনার পরে দর্শকের মনে হতে পারে এতো আর দশটা সাধারণ সিনামার মতই। কোন নতুনত্ত নেই,এই যদি ভেবে থাকেন দর্শক তবে মারাত্নক ভুল করবেন। আগেই বলেছি আমাদের আজকের গল্প আর দশটা সাধারণ প্রেমের গল্পের মতো নয়।
উত্তাল প্রেমে মত্ত সিভা আর ইন্দু যৌবনের এই দিক দক্ষীণায় দুজনেই ভাসতে থাকে প্রেম সাগরে।ছন্নছাড়া সিভা নিজেকে আবিষ্কার করে ইন্দুর দুবাহুর মাঝখানে।সারাটি ক্ষণ যেন দুজন ডুবে থাকতে চায় একজন আরেক জনের মাঝে। তাদের সম্পর্কে ব্যপারে পরিবারকে জানাতে চায় সিভা,ইন্দুকে বলে তার বাবকে বলতে।ইন্দু ও রাজি হয়ে যায় কিন্তু ভাগ্য দেবতার মনে যেন অন্যকিছু। ইন্দু তার বাবাকে কিছু বলার আগেই তাদের দুজনকে একসাথে দেখে ফেলে ইন্দুর বাবা। যদিও ইন্দু বুঝতে পারেনি এই সম্পর্কের ব্যপারে তার বাবা সবকিছু জানে।সিভাও তার বাবার সমতুল্য ডেডিকে জানায় তাদের সম্পর্কের ব্যপারে এবং অনুরোধ করে সে ইন্দুর বাবাকে তাদের বিয়ের ব্যপারে প্রস্তাব দেয়।সমান্তরাল ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল পুরো সিনেমা,যেন একটু পরেই শেষ হবে সিনেমা দুপরিবারের মিলনের মাধ্যমে।
ঠিক সেই সময় সিনেমা এমন একটি বাক নেয় যা দেখে দর্শক সতভম্ব হতে বাধ্য। ইন্দু জানায় সে এক ছেলেকে খুব ভালবাসে এবং বিয়ে করলে তাকেই করবে। ইন্দুর বাবা বুঝে যায় মেয়ে কার কথা বলছে, কিন্তু বাবাকে চমকে দিয়ে ইন্দু মহেশ নামে অন্য একটি ছেলের কথা বলে।মহেশ অর্থবিত্ত,সম্মান,শিক্ষা সবদিক থেকেই অনেক উঁচু। মেয়ের কথা শুনে ইন্দুর বাবা কিছুটা অবাক হলেও রাজি হয়ে যান।কেননা তিনি জানেন সিভার ভবিষ্যৎ কি,আর দশটা গুন্ডার সাথে সিভার কোন পার্থক্যই নেই।
এদিকে ছেলের অনুরোধ রাখতে ড্যাডি ইন্দুদের বাসাত ওই রাতে এসে দরজার বাহিরে দাড়িয়েই সব শুনতে পান।বাসার ভিতরে না ঢুকেই বেড়িয়ে যান, হতোবিহব্বল হয়ে যান,সিভাকে কি জবাব দিবেন তিনি।
এরপর সিভার সাথে ড্যাডির দেখা হলে তিনি বলেন এক্সিডেন্ট হবার কারণে ইন্দুর বাবার সাথে দেখা করতে পারেনি এখনো।
পরের দিন সিভা জানতে পারে ইন্দুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে অন্য জায়গাতে।পাগল প্রায় সিভা দৌড়ে চলে যায় ইন্দুদের বাড়িতে,ইন্দুকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইলে ইন্দুর বাবা বাঁধা হয়ে দাড়ায়।তিনি ইন্দুকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান এবং সিভাকে একটি গুদাম ঘরে আটকে রাখা হয়।কয়েক দিন পরে সিভা যখন সেখান থেকে ছাড়া পেল তখন সবকিছু শেষ।বিয়ে করে ইন্দু আমেরিকা চলে গিয়েছে।
কিছুই যেন বুঝ উঠতে পারেনা সিভা,তার কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেয়া হয়েছে তার ভালবাসার মানুষকে। যে সব সময় হাসি খুশি দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখত তার জীবনে যেন ঝড় নেমে আসে।সিভা তখনো জানেনা ইন্দু নিজ ইচ্ছায় অন্য কাউকে বিয়ে করে চলে গিয়েছে।ইন্দুকে না পাওয়ার বেদনা দুমড়ে মুচড়ে ফেলে সিভাকে।কেটে যায় তিনটি বছর,যে সিভা কখনো সিগারেট ছুঁয়েও দেখেনি এখন নিকটিন যেন তার নিত্য দিনের সঙ্গি। ঠোঁটে সিগারেট আর তার বাইক r এ বসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে কবে ইন্দু আসবে।
একদিন জানতে পারে ইন্দু আমারেকা থেকে গ্রামে এসেছে।সিভা খুশীতে আত্মহারা হয়ে যায়,সে ভাবে এবার বুঝি পেয়ে যাবে তার ভালবাসার মানুষকে,ইন্দু হয়তো সিভার টানেই ফিরে এসেছে।এদিকে ছেলের এ অবস্থা দেখে সিভাকে বার বার গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে ড্যাডি,কিন্তু সিভা সাফসাফ জানিয়ে দেয় ইন্দুকে না নিয়ে সে কোথাও যাবেনা।
বার বার বাসার সামনে এসে বিরক্ত করায় সিভাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ইন্দুর বাবা।সিভাকে পুলিশ নিয়ে গেছে শুনে ড্যাডি থানায় এসে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ঘর বন্দী করে রাখে,যেন তাকে আর লাঞ্চিত হতে না হয়।তারপরেও ইন্দুর বাবা প্ল্যান করে যেন ইন্দু গ্রাম ছাড়ার আগ পর্যন্ত সিভা আর ইন্দুর সামনে না আসতে পারে এবং সে সঙ্গে এও বলে দেয় সিভাকে যেন প্রাণে মারা না হয়।
অন্যদিকে সিভাকে ড্যাডি যেখানে আটকিয়ে রেখেছিল সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ইন্দুর বাবার ভাড়া করা গুন্ডাদের হাতে ধরা পড়ে ।সেখানে শুরু হয় দু পক্ষের তুমুল মাড়ামারি,মারামারির এক পর্যায়ে সিভা জানতে চায় কে তদের পাঠিয়েছে তাকে মারার জন্য। সে জানতে পারে ইন্দুই তাদের একজন কে টাকা দিয়েছে তাকে মারার জন্য,তখন যেন তার পুরো পৃথিবী উল্টপাল্ট হয়ে যায়।সে এই কথা বিশ্বাস করতে চায়না,যেন বিশাল এক পাথর রাখা হয়েছে তার বুকে।শতকষ্ট বুকে জমে শুরু হয় মৃত্যু যন্ত্রণা।ভিতরে ও বাহিরে ক্ষতো বিক্ষতো হওয়া সিভা চায় ইন্দুর মুখ থেকে এর সত্যতা জানতে,সে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সত্যি কি ইন্দু তাকে খুন করতে পাঠিয়েছে।
দেয়াল টপকিয়ে সিভা হাজির হয় ইন্দুর bedroom এ, ইন্দু সিভাকে এই অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে যায়।সিভা চাইলে ইন্দুকে মেরেও ফেলতে পারতো,কিন্তু সে তাকে প্রাণ ভিক্ষাদেয় এবং আহত অবস্থায় ইন্দুর সামনে মৃত্যু বরণ করে।মৃত্যুর ঠিক আগ পর্যন্ত সিভা ইন্দুকে এক কঠিন শাস্তি দেয় আর সেটা হলো তার দেয়া জীবন ভিক্ষা। যতদিন ইন্দু বেঁচে থাকবে ততোদিন তার দেয়া ভিক্ষার জীবন নিয়ে বেঁচে থাকবে এ যেন নরক যন্ত্রণার চেয়েও কঠিন।
অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন ইন্দুরই বা কি দরকার ছিল প্রেমের অভিনয় করে সিভার জীবন শেষ করে দেয়ার।আসলে সিভার প্রতি ইন্দুর ওই প্রেম কেবলিই উত্তাল যৌবনের তাড়না থেকে।ইন্দুর কাছে যেমন প্রয়োজন ছিল সিভার শরীরটা, শরীরের উষ্ণতা ঠিক তেমনটা হতে পারেনি সিভা; সিভা ইন্দুকে চেয়েছিল সাড়া জীবনের জন্য।ভালবাসায় ও মায়ায় হেসে খেলে বাকি জীবনটা পার করার জন্য। ভুল ঠিকানায় অন্ধ ভালবাসায় মজেছে সিভা।যার মাশুল গুনতে হয়েছে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে।বাস্তবের সিভা ও ইন্দুর উপর যেমন এই মুভি বানানো হয়েছে তেমনি আমাদের চারপাশে সিভা ও ইন্দুর অভাব নেই। সাময়িক যৌবন তাড়নার সুখ হাসিল করতে প্রেম প্রতারণায় আরেকটা মানুষের অবুঝ মন ভেঙ্গে ফেলা ইন্দু ও সিভা আমরাই; আমাদের চারপাশেরই মানুষ জন।
শেষ করছি এই পর্ব, ভালোবাসার মোড়কে এই বিশ্বাস ঘাতকতা কিছুটা হলেও নতুনত্ব দিয়েছে আশা করি।আপনি যদি জীবনে কখনে প্রেমে ব্যার্থ হয়ে থাকেন তাহলে এই মুভি আপনার জন্য। কেমন লাগলো এই পর্ব জানাতে ভুলবেন না।গল্পটি ভাল লাগলে অবশ্যই আপনার প্রেম বিরহে থাকা ব্যার্থ বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন ।
right