Skip to content

kobitor

সেরা গল্পের ওয়েবসাইট

Connect with Us

Social menu is not set. You need to create menu and assign it to Social Menu on Menu Settings.

Categories

  • Golpo
  • Kobita
  • love story link
  • More Than Love
  • Picture Status
  • sad golper link
  • Uncategorized
  • অতৃপ্ত আত্মা
  • অনির কলমে আদ্রিয়ান
  • অন্তর্হিত কালকূট
  • অন্যরকম তুমি
  • অন্যরকম বউ
  • অরোনী তোমার জন্য
  • আত্মা
  • আমার তুমি
  • আমার তুমি সিজন ২
  • আমি পদ্মজা
  • আরশিযুগল প্রেম
  • ইট পাটকেল
  • ইসলামিক গল্প
  • উইল ইউ ম্যারি মি?
  • উপন্যাস
  • এক কাপ চা
  • এক প্রহর ভালোবাসা
  • এক মুঠো কাঁচের চুরি
  • এক মুঠো রোদ
  • এক সমুদ্র প্রেম
  • একটি ডিভোর্স লেটার
  • একটি রাতের গল্প
  • ওহে প্রিয়
  • কাঞ্চাসোনা
  • কালো বউ
  • কিছু জোড়া শালিকের গল্প
  • কোথাও কেউ ভালো নেই
  • ক্যান্সার যুদ্ধ
  • ক্যামেলিয়া
  • খুন
  • ঘেউলের সংসার
  • চার আনার জীবন
  • চিঠি
  • চিত্ত চিরে চৈত্রমাস
  • চেম্বার কথন
  • জলনূপুর
  • জানা অজানা
  • জীবন যখন যেমন
  • জীবনি
  • জ্বিন রহস্য
  • টু ফাইভ এইট জিরো
  • ডার্ক সাইট অফ এ বিউটিফুল লেডি
  • ডিভোর্স
  • ডিভোর্স পেপার
  • তিনি আমার সৎ মা
  • তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
  • থ্রিলার নভেম্বর রেইন
  • দাম্পত্য সুখ
  • দেহ
  • দ্বিতীয় পুরুষ
  • দ্যা ব্লাক বুক
  • ধারাবাহিক গল্প লিংক
  • নবনী
  • নীল ক্যাফের গল্প গ্রুপ
  • নীল চিরকুট
  • নীলার শাশুড়ী
  • নয়নে লাগিল নেশা
  • পরগাছা
  • পরবাসী মেঘ
  • পাপ
  • পিশাচ দেবী
  • পিশাচ পুরুষ
  • পুকুর রহস্য
  • পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা
  • প্রণয়ের আসক্তি
  • প্রতিশোধ
  • প্রাণি জগত
  • প্রিয়োসিনী
  • প্রেমাতাল
  • প্রেমিক অপ্রেমিকের গল্প
  • ফিরতি উপহার
  • ফুলসজ্জা
  • ফ্রিজ
  • বজ্জাত বউ
  • বন্ধু
  • বিচ্ছেদ
  • বিমূর্ত প্রতিশোধ
  • বিশ্বাস অবিশ্বাস
  • বিয়ের চাপ
  • বৃষ্টিময় প্রেম গল্প
  • বৃহন্নলার ডিভোর্স
  • বেপরোয়া ভালোবাসা
  • ভাড়াটিয়া
  • ভাবির সংসার
  • ভালোবাসা রং বদলায়
  • ভুতের গল্প
  • ভ্যাম্পায়ার বর
  • ভয়ংকর নির্জন
  • ভয়ঙ্কর সেই মেয়েটি
  • মায়াবতী
  • মুভি
  • মেঘে ঢাকা আকাশ
  • মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি
  • যেদিন তুমি এসেছিলে
  • যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২
  • রানিং গল্প
  • রুম নম্বর ৯০৯
  • রূপকথা
  • রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
  • রোমান্টিক অত্যাচার
  • লিংক+রিভিউ
  • লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বিবাহ
  • লেখক
  • শিমুল ফুল
  • শিশির বিন্দু
  • শিশিরের আদ্র
  • শেষ
  • শেষ পেইজ
  • শ্রাবন আধারে তুমি
  • সঙ্কোচ
  • সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে
  • স্যার i love you
  • হাসির গল্প
  • হীরের নাকফুল ও লাল বেনারসি
  • ১৬ বছর বয়স
  • ১৮ বছর বয়স
Primary Menu
  • Home
  • Picture Status
  • Blog
  • Kobita
    • পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা
  • লেখক
  • লিংক+রিভিউ
    • love story link
    • sad golper link
  • রানিং গল্প 2
    • জলনূপুর
    • অন্তর্হিত কালকূট
    • সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে
    • ধারাবাহিক গল্প লিংক
    • মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি
    • এক মুঠো কাঁচের চুরি
    • নবনী
    • শেষ
    • শেষ পেইজ
    • বিমূর্ত প্রতিশোধ
    • শ্রাবন আধারে তুমি
    • লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বিবাহ
    • কোথাও কেউ ভালো নেই
    • চিত্ত চিরে চৈত্রমাস
    • পরবাসী মেঘ
    • খুন
    • ভালোবাসা রং বদলায়
    • আত্মা
  • ভুতের গল্প
  • Golpo
    • জীবনি
    • ইসলামিক গল্প
    • প্রাণি জগত
    • জানা অজানা
    • হাসির গল্প
  • উপন্যাস
    • ওহে প্রিয়
    • ডার্ক সাইট অফ এ বিউটিফুল লেডি
    • স্যার i love you
    • বজ্জাত বউ
    • কিছু জোড়া শালিকের গল্প
  • নীল ক্যাফের গল্প গ্রুপ
    • নয়নে লাগিল নেশা
    • প্রিয়োসিনী
    • চিঠি
    • বেপরোয়া ভালোবাসা
    • শিশিরের আদ্র
    • মায়াবতী
  • Home
  • Golpo
  • অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প
  • Golpo

অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প

alamin21 24/01/2023 1 min read
বিয়ের পিক

অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ১

বিয়ের তিনদিন পর বুঝতে পারলাম তুলি মেয়েটা খুব বোকা।শুধু বোকা বললে ভুল হবে কারন তার আচরণ অনেকটা শিশু সুলভ।সারাদিন টিভির সামনে বসে বাচ্চাদের মতো কার্টুন দেখছে।বাসা ভর্তি মেহমান কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।সে সোফায় বসে কার্টুন দেখে কখনও হাসছে আবার কখনও মন খারাপ করে বসে রয়েছে।

Table of Contents

  • অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ১
  • অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ২
  • অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৩
  • অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৪
  • অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৫
  • অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৬
  • অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৭

যে সকল মেহমানরা নতুন বউ দেখতে এসেছে সবার সাথেই সে হাসিমুখে কথা বলছে।পরিচিত হওয়ার পর তাদেরকেও খুব সুন্দর করে কার্টুনের কাহিনী বুঝিয়ে দিচ্ছে।

মেহমান গুলো বাসা থেকে যাওয়ার সময় আমাকে বলছে,

– মিহু,তুমি খুব ভালো মনের একটা মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছো।খুবই সহজ-সরল।

কিন্তু বিয়ের চতুর্থ দিন খেয়াল করলাম তুলির ভীষন মন খারাপ।বারবার ফোন বেজে যাচ্ছে কিন্তু সে ধরছে না।সকাল পেরিয়ে বিকাল হয়ে যাচ্ছে তবুও তার মনের অবস্থার কোনো উন্নতি দেখছি না।

এরপর তার কাছে গিয়ে বললাম,

– সকাল থেকে দেখে যাচ্ছি, আপনি মনমরা হয়ে বসে আছেন।ফোন বেজে যাচ্ছে, ধরছেন না।কেউ কি অপরিচিত নম্বর থেকে বিরক্ত করছে?

কষ্ট লুকানোর হাসি দিয়ে আমাকে সে জবাব দিল,

– অপরিচিত কেউ না,বান্ধবীরা ফোন দিচ্ছে।

– তাহলে ধরছেন না কেনো?

ওদেরকে কী বিয়েতে দাওয়াত দেন নি?

– সেরকম কিছু না।আসলে আমরা ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত গার্লস স্কুলে পড়েছিলাম তো ।ছয় বছর আগে এসএসসি পাশ করেছি,এরপর অনেকের সাথে দেখাও হয়নি।খুব পরিচিত কয়েকজনের সাথে কথা-বার্তা হয়।আজকে বিকেলে ছোট একটা পুণর্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছে।অনেকেই আসবে শুনলাম।আমাকেও যেতে বলেছিল।যেতে পারবো না তো এই ভেবে কিছুটা মন খারাপ।

– আপনিও দেখা করে আসুন।এই আয়োজন তো আর সব সময় করা হবে না।আবার কবে হবে,সেটাও তো বলা যাচ্ছে না।

– বিয়ে হয়েছে মাত্র তিনদিন।এখনও তো বাসায় মেহমান রয়েছে।এই অবস্থায় যদি নতুন বউ বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরতে যায়, তাহলে সেটা কেউ ভালো চোখে দেখবে না।

আমি একটু ধমকের সুরেই বললাম,

– রাখেন তো আপনার চোখের হিসাব।আপনি তো কোনো খারাপ কাজ করতে যাচ্ছেন না।আপনি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকুন।আমি আপনাকে নিয়ে যাবো।

তুলিকে কথা গুলো বলে আমি মায়ের কাছে গিয়া বললাম,

– মা,আমি একটু তুলিকে নিয়ে বের হবো কিছুক্ষণ পর।ওর মনটা খুব খারাপ। নতুন পরিবেশে এসেছে তো।একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসলে বোধহয় ভালো লাগবে।

– আমিও তোকে এই কথাই বলতে চাচ্ছিলাম।বাবা-মা ছেড়ে নতুন পরিবেশে এসেছে, মন খারাপ হওয়াটা তো স্বাভাবিক।

মা’কে রাজি করিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকে আমি রিতীমত আশ্চর্য। যেই মেয়ে কিছুক্ষণ আগে মনমরা ছিল মুহূর্তের মধ্যেই সেই মেয়ে বিছানার মধ্যে চারটা শাড়ি একসাথে রেখে হাসিমুখে বসে আছে।

আমাকে রুমে ঢুকতে দেখে বলল,

– দেখেন তো কোন শাড়িটা পরবো?

লালটা দিয়েছে মামা,নীলটা দিয়েছে চাচ্চু,সবুজটা দিয়েছে খালু।আর কালোটা কে দিয়েছে মনে পরছে না।

– আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাই পরুন।

– শুধু আমার ভালো লাগলে তো চলবে না।এতদিন পর সবার সাথে দেখা হবে।দেখেই যদি বলে, তোকে এই শাড়িতে মানাচ্ছে না।তাহলে কি ভালো লাগবে?

আমি চারটা শাড়ি হাতে নিয়ে বললাম,

– কালো রঙেরটা আপনাকে খুব মানাবে মনে হচ্ছে।তবুও আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাই পরুন।

-আচ্ছা, তাহলে কালোটাই পরছি।

-ঠিক আছে।আপনি তাহলে দ্রুত তৈরি হয়ে নিন।

আমি দশ মিনিটের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে আধাঘন্টা ধরে সোফায় বসে রয়েছি।কিন্তু তুলির এখনও সাজগোজ হয়নি।প্রায় একঘণ্টা পর রুমের দরজা খুলার শব্দ শুনে রুমে ঢুকলাম।

আমাকে দেখে বলল,

-চলুন,দেরি হয়ে যাচ্ছে।ভালোভাবে সময় করে একটু সাজতেও পারলাম না।কালো শাড়িটার সাথে মিলিয়ে কোনো চুড়ি পরে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না।যাওয়ার সময় চুড়ি কিনে নিয়ে যেতে হবে।আপাতত একজোড়া দিয়ে চালিয়ে দিয়েছি।

– তাহলে তো আরও দেরি হবে।

– বেশিক্ষন লাগবে না।শুধু চুড়িই তো।

তার কথা মতো শপিং মলে ঢুকলাম।একটার পর একটা চুড়ি দেখেই চলেছে কিন্তু কোনোটাই নিচ্ছে না।হাতে যতটা আগ্রহ নিয়ে ঢুকাচ্ছে ঠিক ততটাই মনমরা হয়ে আবার হাত থেক বের করছে।

আমি বুঝতে পারলাম আজকে সারাদিনেও এই মেয়ে চুড়ি পছন্দ করতে পারবে না।

শেষমেশ আমি একজোড়া চুড়ি তুলির হাতে পরিয়ে বললাম,

-বাহ,খুব সুন্দর মানিয়েছে আপনাকে।এদিকে আমি চুড়ির রংটাও পর্যন্ত জানি না।হালকা সবুজ আর নীলের মাঝামাঝি কিছু একটা হবে।

আমার মুখে চুড়ির প্রশংসা শুনে সে আর কোনো দেরি না করে এটাই নিয়ে নিলো।

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,

“মেয়েদের বোকা বানানোর এই একটাই রাস্তা,যখন দেখবেন কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে তখন যেকোনো একটা হাতে নিয়ে বলে দিবেন খুব সুন্দর লাগছে।দেখবেন সে আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে না।কারন মেয়েরা নিজের থেকে নিজের ভালোবাসার মানুষের সীদ্ধান্তকে বেশি গুরুত্ব দেয়।”

আমার হাতের দিকে তাকিয়ে তুলি বলল,

-আপনার হাত তো দেখি খালি।হাতে একটা ঘড়ি পরলে খুব সুন্দর মানাবে।দাঁড়ান আপনার জন্য একটা ঘড়ি দেখি।

-আপনার দেখতে হবে না, আমিই দেখছি।আপনি আবার একঘন্টা লাগিয়ে দিবেন ঘড়ি পছন্দ করতে।

এরপর দুই মিনিটের মধ্যে একটা ঘড়ি কিনে শপিং মল থেকে বের হয়ে গেলাম।

তুলির গার্লস স্কুলে যেতে যেতে আরো কিছুক্ষণ লেগে গেল।স্কুলে গিয়ে দেখলাম তাদের অনুষ্ঠান মোটামুটিভাবে শুরু হয়ে গেছে।তুলিকে দেখে তার বান্ধবীরা রীতিমতো চমকে গেছে।

একজন এসে বলতে লাগলো,

-তুলি, তুই না বলেছিলি আসবি না?

-আরে তোদের কে চমকে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম।স্কুলের এত বড় অনুষ্ঠান হয়ে যাবে আর আমি থাকবো না, তা কি করে হয়।

আমি চারপাশে এক নজর তাকিয়ে দেখলাম যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু মেয়ে।যেহেতু গার্লস স্কুল তাই কোনো ছেলে থাকার কথাও না।তবে আমার মতো কিছু বেচারা স্বামীও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে।

তবে কোনো স্বামীর মুখেই হাসি নেই।সবাই কেমন যেন বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে রেখেছে।

বান্ধবীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষ করে আমার কাছে এসে তুলি বলল,

-আপনি তাহলে আমাদের স্কুলটা ঘুরে দেখতে থাকুন।এমন সুযোগ আর পাবেন না।আমাদের স্কুলে ছেলেদের প্রবেশ নিষেধ।এই কথা বলে মূহুর্তের মধ্যেই সে চলে গেল।

এদিকে আমিও ভাবছি,

“নিষিদ্ধ কোনো কিছুই ভালো না।শুধু শুধু কেনো যে মেয়েটাকে নিয়ে আসলাম।বাড়িতে থাকলেই সময়টা ভালো কাটতো।”

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তুলি স্টেজে উঠে বলতে লাগলো,

– অনুষ্ঠানে যত পুরুষ লোক আছেন,তারা একটু দয়া করে প্রস্থান করুন।এখন এখানে মেয়েরা নাচবে, গাইবে।আমরা চাচ্ছি না,কোনো পুরুষ আমাদের নাচ দেখুক।খাবারের সময় হলে আপনাদের আবার ফোন করে জানানো হবে।এরপরেও যদি কোনো পুরুষ মানুষ বসে থাকেন, তাহলে ভেবে নিবো আপনি মহিলা।

এই কথা শুনার সাথে সাথে আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম।

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম, সব পুরুষ মানুষ মুহূর্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে পরেছে।এভাবে সবাইকে একসাথে দাঁড়াতে দেখে মনে হচ্ছে শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য এখন জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হবে।কিন্তু না একে একে সব পুরুষ মাথা নিচু করে জায়গা ত্যাগ করছে।বেশি পুরুষ হবে না, হাতে গুনা ১৫-২০ জনের মতো।আমিও তাদের সাথে হাঁটতে হাঁটতে স্কুল গেইট পার হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

সবার মুখের দিকে তাকিয়েই বোঝা যাচ্ছে, সবাই ব্যাপকভাবে অপমানিত।আমিও তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত। 

মনমরা হিয়ে গেইটের পাশে একটা বট গাছের নিচে বসে ভাবছি,

“একেই বলে খাল কেটে কুমির আনা অথবা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।বাকিরাও হয়তো এটাই ভাবছে।কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছে না।”

আমি সবার উদ্দেশ্যে বললাম,

-চলেন ভাই, মন খারাপ করে বসে না থেকে আমরাও কোনো একটা জায়গা থেকে ঘুরে আসি।”

আমার সাথে সহমত পোষণ করে কয়েকজন বলল,

-ঠিকই বলেছেন ভাই।মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই।তারা যা ইচ্ছা তাই করুক,আমি আর ওর সাথে নেই।

একজন আবার দাঁড়িয়ে বলল,

-ভাইজানেরা আমরা কিন্তু একটা কাজ করতে পারি।এই বটগাছের উপরে উঠে কিন্তু আমরা চেষ্টা করলে আমরা আমাদের স্ত্রীদের নৃত্য উপভোগ করতে পারি।যখন যার স্ত্রী নাচবে শুধু সেই গাছে উঠে দেখবে।

তারমতো কয়েকটা বউ পাগল সম্মতি জানিয়ে বলল,

-ভালো বুদ্ধি দিয়েছেন, ভাইজান।

তাহলে শুনুন তো এখন কে নাচবে?

যখন যার বউ নাচবে তখন সেই শুধু গাছে উঠবে। বাকিরা হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করবো।

আমি আবারও মনে মনে ভাবতে লাগলাম,

“ব্যাকবেঞ্চাররা স্বামী হলে যা হয় আরকি।তবে বুদ্ধিটা খারাপ দেয় নি।”

উপস্থাপিকা মেয়ের কথা গেইট থেকেও শুনা যাচ্ছে।

মেয়েটা বলল,

– এখন নৃত্য পরিবেশন করতে আসবে নিতু।

আমাদের এখান থেকে একজন বলল,

– ভাই নিতুর জামাই কি এখানে আছেন?

থাকলে গাছে উঠে পরুন,আপনার বউ এখন নাচবে।

সাথে সাথেই একটা ছেলে শত বাধা পেরিয়ে বট গাছের উপরে উঠে পরলো।

বুঝতে বেশি দেরি হলো না যে, এই নিতুর জামাই।

নিতুর নৃত্য শেষ হওয়ার পর যখন এই ছেলে গাছ থেকে নামবে তখন গাছের উপর থেকে বলল,

-ভাই গাছ থেকে নামতে পারছি না তো।

-তাহলে উঠেছিলেন কীভাবে?

-ভাই অতি আবেগে উঠে পরেছিলাম এখন তো নামতে পারছি না।কিছু একটা করেন।

উপস্থাপিকা এবার বলতে লাগলো, 

– এখন নৃত্য পরিবেশন করতে আসবে রিমা।

এই কথা শুনে আমাদের এখানে থাকা রিমার বর গাছে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,

-ভাই আপনি নামেন তো।এখন আমার স্ত্রী নাচবে।আমি গাছে উঠবো।

এসব কান্ড দেখে আমার মনটাও ভালো হয়ে গেল।আমাদের এখানেও একটা বিনোদন শুরু হয়ে গেছে।সবাই অপেক্ষায় রয়েছে, কখন কার স্ত্রী নাচবে এই কথা শুনার জন্য।

অনেক কষ্টে ছেলেটাকে গাছ থেকে নামানো হলো।

সে নামার সাথে সাথেই রিমার বর গাছে উঠে পরলো।

এভাবে একে একে পাঁচজন গাছে উঠেছে।তারমানে পাঁচজন নৃত্য পরিবেশন করেছে।

এরপর উপস্থাপিকা বলল,

– এখন নৃত্য পরিবেশন করতে আসবে তুলি।

তুলির নাম শুনার পর বুকের বা পাশটা মুহূর্তের জন্য চিনচিন করতে লাগলো।

একজন বলল,

-তুলির বর কে আছেন?

জলদি গাছে উঠে পরুন।

আমি দাঁড়িয়ে বললাম,

-ভাই, আমি তুলির বর।কিন্তু জীবনে কোনো দিন গাছে উঠি নি।একবার উঠতে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম।

-তাহলে কীভাবে দেখবেন?

-কিছু একটা ব্যবস্থা করেন।

-দেয়াল টপকাতে পারেন?

-বলতে পারবো না।স্কুল্ব থাকতে কোনোদিন দেয়াল টপকাই নি।

-তাতে কি?

আজকে স্ত্রীর নৃত্য দেখার জন্য টপকাবেন।

আমরা আপনাকে ঘাড়ে তুলে দেয়ালের উপর তুলে দিচ্ছি।আপনি উপরে উঠে দেখবেন।

আমি আগ্রহ নিয়ে বললাম,

-তাহলে তাই করেন ভাই।

সবাই মিলে আমাকে দেয়ালের উপর তুলল।

আমি দেয়ালের উপর থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তুলি কালো শাড়ি পরে স্টেজে উঠছে। 

 সাথে সাথে শ্রেয়া ঘোষালের গান বেজে উঠলো,

“বারছো রে মেঘা মেঘা.. “

সেই সাথে তুলিও পা দুলাচ্ছে।

আমি কেবল মুগ্ধতার দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য উপভোগ করে চলেছি।

  (চলবে…)

© খাদেমুল আলম মিঠুন

অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ২

#মিহুর_সংসার

#পর্বঃ২

সবাই মিলে আমাকে দেয়ালের উপর তুলল।

আমি দেয়ালের উপর থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তুলি কালো শাড়ি পরে স্টেজে উঠেছে। 

 সাথে সাথে শ্রেয়া ঘোষালের গান বেজে উঠলো,

“বারছো রে মেঘা মেঘা.. “

সেই সাথে তুলিও পা দুলাচ্ছে।

আমি কেবল মুগ্ধতার দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য উপভোগ করে চলেছি।

 তুলির নৃত্যের ভেতরে এতটাই ঢুকে পরেছিলাম যে নৃত্য শেষ হওয়ার পর ভুলেই গিয়েছিলাম আমি দেয়ালের উপর দাঁড়িয়ে।হঠাৎ একটা পা সামনে দিতেই ঠাস করে স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতর মাটিতে পরে গেলাম।

উপর থেকে বড় কিছু পরার শব্দ শুনে দারোয়ান মামা দৌড়ে এসে আমার নিকট উপস্থিত হলো।

মামা গেইট থেকে চলে আসায় গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ভাইয়েরাও আমার কাছে চলে আসলো।

আমি মাটিতে শুয়ে আছি আর আমার মুখের উপর চার-পাঁচজনের মাথা।

একজন বলল,

-মিহু ভাই, বেশি ব্যাথা পেয়েছেন কি?

হাসপাতালে নিতে হবে মনে হয় নাকি?

আমি আস্তে ধীরে শুয়া অবস্থা থেকে বসে বললাম,

-তেমন ব্যাথা পাইনি,তবে প্যান্টটা বোধহয় ছিড়ে গেছে।

-যাক ভাই, তাও ভালো।সব কিছু প্যান্টের উপর দিয়ে গেছে ভাই।

দারোয়ান মামা একবার আকাশের দিকে আরেকবার মাটির দিকে তাকিয়ে কৌতুলের সুরে বলল,

-ভাইজান,আপনি পরলেন কোন থাইকা?

আমি তো গেইটের কাছেই ছিলাম, কোনো পুরুষ মানুষরে তো ভিতরে ঢুকতে দেখলাম না।

আমি জবাব দিলাম,

-আমিও বুঝতে পারছি না, কিছুক্ষনের জন্য মনে হয় মহাশূন্যে ভাসছিলাম।এরপর অভিকর্ষজ ত্বরনের প্রভাবে নিচে পরে গেছি।

-কি বলেন ভাইজান এইগুলা। আপনার মাথা ঠিক আছে?

– মাথা ঠিকই আছে, তবে প্যান্টটা বোধহয় ছিড়ে গেছে।

এবার আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারলাম, প্যান্টটা সত্যিই ছিড়ে গেছে এবং তা খুব বাজে ভাবে ছিড়েছে।

নিতু নামক মেয়েটির বর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

-মিহু ভাই, প্যান্ট এর ভিতর থেকে শার্টটা বাইরে বের করে রাখুন আপাতত।তারপর চলুন মার্কেট থেকে প্যান্ট কিনে নিয়ে আসি।মার্কেট বেশি দূরে না এখান থেকে।

আমি প্যান্টের ভিতর থেকে শার্টটা বাইরে বের করে দেখলাম এখন আর ছেড়া বুঝা যাচ্ছে না।আপাতত চলা যাবে।তবে এভাবে তো বাসা পর্যন্ত যাওয়া যাবে না।কিছুক্ষণ পর আবার সবাই একসাথে বসে খেতে হবে।মোট কথা প্যান্ট একটা কিনতেই হবে।

আমি সবাইকে বললাম,

– চলুন ভাই, প্যান্ট একটা কিনেই নিয়ে আসি।

সবাই মিলে মার্কেটে চলে গেলাম প্যান্ট কিনার জন্য।

দোকানদার আমাদের সবার উদ্দেশ্যে বলল,

-কি লাগবে স্যার আপনাদের?

আমি বললাম,

-আমার জন্য মজবুত একটা প্যান্ট বের করুন তো।যে প্যান্ট থেকে মনে করুন অন্তত ১০ ফুট লম্বা দেয়াল থেকে পরলেও ছিড়বে না।

আমার কথা শুনে দোকানদার হাসি দিয়ে বলল,

-স্যার,আমাদের সব গুলো প্যান্ট-ই খুব মজবুত।আপনি যদি পাঁচতলা ছাদ থেকে লাফ দেন তাহলে আপনার মৃত্যু হলেও আমাদের দোকানের প্যান্ট ছিড়বে না।

-ভাই চাপাবাজি একটু পরে কইরেন, আপাতত ভালো একটা প্যান্ট দেখান।আর আপনাদের এখানে ট্রায়াল দিতে পারবো তো?

-শুধু ট্রায়াল কেন স্যার?

আপনি প্যান্ট পরে সেলফিও তুলতে পারবেন।এইজন্য আলাদা কোনো টাকা দিতে হবে না।

-আচ্ছা ভাই,তাহলে আমাকে ওই কালো আর সাদা এই দুইটা প্যান্ট দেখান তো।

দোকানদারের কাছ থেকে দুইটা প্যান্ট নিয়ে ট্রায়াল রুম থেকে কালোটা পরে চলে আসলাম।

দোকানদার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

– এই প্যান্টটা আপনাকে খুব মানাইছে স্যার।দেখে মনে হচ্ছে প্যান্টটা আপনার জন্যই তৈরি করা হইছে। সাদাটাও নিয়ে নিন স্যার, ওইটাও আপনাকে খুব ভালো মানাবে।আসলে আপনি যেটা পরবেন সেটাই মানাবে। 

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,

“সকাল বেলা তুলিকে একবার এগুলো বলে বোকা বানিয়েছিলাম এখন দোকানদার আবার আমাকে বোকা বানাতে চলেছে।এইজন্যই  বোধহয় বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছেন,

” প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।”

দোকানদারের সাথে আর তর্কে না জড়িয়ে দোকানদারকে শুধু কালো প্যান্টের দাম দিয়ে চলে আসলাম।যেহেতু ফিক্সড রেটের দোকান তাই দামাদামি করারও কোনো মানে হয় না।

এদিকে আবার দেখলাম তুলি ফোন দিয়েছে।

ফোন ধরতেই তুলি বলল,

– আপনি কোথায় আছেন?

চলে আসুন তাড়াতাড়ি, এখন খাবার দেওয়া হবে।

-আমি আশেপাশেই আছি।অপেক্ষা করুন কিছুক্ষণ, চলে আসবো।

-হুম, দ্রুত আসুন।পরে খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার বলবেন, আমাদের স্কুলের খাবার ভালো না।

সবাই যার যার স্ত্রীদের সাথে কথা শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলে চলে গেলাম।

খাবারের টেবিলে বসে খেয়াল করলাম,

মেয়েদের জন্য একধরনের খাবারের ব্যবস্থা আর ছেলেদের জন্য অন্যধরনের খাবারের ব্যবস্থা।

ছেলেদের খাবারের টেবিলে এমন কোনো খাবার রাখা হয়নি যেটা খেলে ভুড়ি জমতে পারে।

ছেলেদের খাবার টেবিলে গরুর মাংস নেই কিন্তু মেয়েদের টেবিলে রয়েছে।

ছেলেদের খাবার টেবিলে শশা আর গাজরের পরিমানটাই বেশি।

এত অপমান মুখ বুজে সহ্য করে নিলেও খাবার নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না।

তবুও কিছু বলার নেই,সবার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে।সামনে যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

কথায় আছে, 

“নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।”

খাবার পর্ব শেষ এবার বিদায় নেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।

এদিকে মেয়েরা এতক্ষণ হৈ-হুল্লোড় করে এখন আবার একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে  কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।মেয়েরা এই কাজে খুব দক্ষ।ওরা নিজের মন খারাপ বোঝানোর জন্য কাঁদে আর ছেলেরা নিজেদের মন খারাপ কাউকে বুঝতে না দেওয়ার শত প্রতিকূলতার মধ্যেও হাসে।

তুলির কান্না দেখে ভাবছি,

“মেয়েটা তো বিয়ের দিনেও এত কান্না করে নি।আমার কাছ থেকে কেবল মাত্র চার-পাঁচটা টিস্যু নিয়েই পুরো রাস্তায় চোখের জল মুছেছিল। কিন্তু এখন তো বৃষ্টির মতো চোখ দিয়ে জল পরেই চলেছে।দেখে কিছুটা মায়াও লাগছে আবার ভালোও লাগছে।পুরো মুখ টকটকে লাল হয়ে গেছে।

এদিকে আমরা ছেলেরাও হাসিমুখে বিদায় নিয়ে নিলাম।

কান্নার পর্ব শেষ করে তুলি আমার কাছে এসে বলল,

-দুইটা টিস্যু দেন তো,আমি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে টিস্যু নিতেই ভুলে গেছি।কিন্তু এমন ভুল আমি কখনও করি না,এরকম অনুষ্ঠান হলে সবার প্রথম আমি যেই জিনিসটা সংগ্রহে রাখি সেটা হলো টিস্যু। 

আমি দশ টাকার একটা টিস্যুর প্যাকেট তুলির হাতে দিয়ে বললাম,

-যতগুলো প্রয়োজন ব্যবহার করুন।

-এতগুলো লাগবে না।একটা রিকশা দেখুন।বাসায় যেতে হবে তো,রাত হয়ে গেছে।

কথাগুলো শেষ করে আমার প্যান্টের দিকে তাকিয়ে তুলি বলল,

-বের হওয়ার সময় তো দেখেছিলাম সাদা রঙের একটা প্যান্ট পরে এসেছিলেন।এই কিছুক্ষনের মধ্যে প্যান্টের কালার পরিবর্তন হলো কীভাবে?

আমি তার কথায় আগ্রহ না দেখিয়ে হতাশ মুখে বললাম,

-আপনি শুধু প্যান্টের কালার দেখলেন, এই কিছুক্ষনের মধ্যে আমার জীবনের কালার টাই বদলে গেছে।এসব কথা না বলে চলুন বাসায় যাই, সবাই মনে হয় অনেক চিন্তা করছে।

সেদিন বাসায় আসার পর জীবনে নতুন এক ব্রত নিয়েছিলাম,

” জীবনে আর কোনোদিন তুলির সাথে তাদের স্কুল-কলেজের প্রোগ্রামে আমি আর যাচ্ছি না।এইসব প্রোগ্রামে না গিয়ে বাসায় শুয়ে ঘুমানো উত্তম।”

বিয়ের দুইমাস হয়ে গেছে।বাবা-মা দুজন বিশেষ কাজে কিছুদিনের জন্য বাড়িতে গিয়েছেন।বাসায় আমি আর তুলি থাকি শুধু।আমি সকালে বের হয়ে অফিস শেষে সন্ধ্যায় আসি, তুলি শুধু সকালে নাস্তা তৈরি করে আর রাতের জন্য কিছু খাবার তৈরি করে।বাকি সময় টিভিতে কার্টুন আর মুভি দেখেই পার করছে।

এই কয়েকদিন আমি তুলিকে তুমি বলে সম্মোধন করলেও সে আমাকে আপনি বলেই ডেকে চলেছে।

একবার বলেছিলাম,

-এখন থেকে তাহলে তুমি আমাকে আর আপনি না ডেকে তুমি করে ডেকো।

সে আমাকে জবাব দিয়েছিলো,

” আমি কাউকে তুমি বলে ডাকতে পারি না।যাদের সাথে খুব বেশি মিশে যাই তাদেরকে তুই করে ডাকি আর বাকি সবাইকে আপনি করেই ডাকি।”

 আমি তখন বলেছিলাম,

-তাহলে আপনিই থাক।তুই এর থেকে আপনি ভালো।আমার দাদীও দাদাকে আপনি করে ডাকতো।বেশ ভালোই শুনা যেতো।

 আজকে সকালে খাবার টেবিলে নাস্তা করার সময় রুটির আকৃতি দেখে আমি হতবাক।জীবনে অনেক সাইজের রুটি দেখেছি, এই যেমন গোলাকার,চতুর্ভুজাকার,ত্রিভুজাকার ও হয় শুনেছি।

কিন্তু আমার সামনে যেটা রাখা হয়েছে সেটাকে কোনোভাবেই রুটি মনে হচ্ছে না।

রুটিটা হাতে নিয়ে একটু গবেষণা শুরু করে দিলাম।আট থেকে দশটা কোণা বের হয়েছে এই  রুটি নামক বস্তুটির।

দেখে মনে হচ্ছে আটা-ময়দা থাকা অবস্থায় বোধহয় জীবনে অনেক বড় কোনো ভুল করে ফেলেছিলো এই রুটিটা।এখন সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছে।

আমি বসে বসে ভাবছি,

“এটাকে কি খাওয়া ঠিক হবে?

সারাজীবন শুনে আসলাম পরিবারের পছন্দে বিয়ে করলে বউয়ের রুটি গোল হয়।কিন্তু এখন দেখছি বাস্তবতা ভিন্ন।

এরমধ্যেই তুলি আরেকটা একই আকৃতির রুটি আমার কাছে নিয়ে আসলো।

আমার হাতে রুটি দেখে বলল,

-রুটি না খেয়ে হাতে নিয়ে বসে আছেন কেন?

-আমি ভাবছি এত সুন্দর রুটি বানানো তোমাকে কে শিখিয়েছে!

-কেউ শেখায়নি তো।নিজের মতো করে বানিয়েছি।

-এটাকে রুটি বললে ভুল হবে।এটা হচ্ছে তুটি।তুলি থেকে তু আর রুটি থেকে টি।নামটা সুন্দর না?

তুলি রেগে গিয়ে আমার হাত থেকে রুটি কেড়ে নিয়ে বলল,

-আপনি রুটির সাথে আমার তুলনা করলেন কেন?

আপনাকে রুটি খেতে হবে না।হোটেল থেকে খেয়ে নিবেন।আধাঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে এই দুইটা রুটি বানাতে আমার।

আমি আর তর্কে না জড়িয়ে সোজাসুজি বাসা থেকে কেটে পরলাম।রুটির সাইজ দেখেই পেট ভরে গেছে এখন অন্য কিছু খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে।

সন্ধ্যার দিকে আবার অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখি নতুন কাহিনী। তুলি বিছানায় বসে বসে কাঁদছে আর রুমের চারপাশে পনেরো থেকে বিশটা ভেজা টিস্যু পরে রয়েছে।

আমি তার কাছে গিয়ে বললাম,

-কি হয়েছে,তুলি?

তোমার এই অবস্থা কেনো?

তুলি কোনো কথা বলছে না।টিস্যু দিয়ে চোখ মুছায় ব্যস্ত।

– সকালের ব্যবহারে কি মন খারাপ করেছিলে?

রুটির সাথে তুলনা দেওয়াতে?

সে না সূচক মাথা নাড়ালো।

-তাহলে কাঁদছো কেন?

-একটা মুভি দেখেছি।মুভিটার শেষটা ছিল অনেক করুণ। কিছুতেই চোখের জল আটকে রাখতে পারছি না।

– আরে বোকা মেয়ে, মুভি দেখে এভাবে কেউ কাঁদে নাকি।মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু এভাবে কাঁদার কোনো মানে হয় না।

-আমার চোখ যখন ইচ্ছা ভেজাবো তাতে আপনার কি?

-আমার কিছু না।এভাবে অকারনে যখন তখন চোখের জল ছিটালে চোখের জল তো শেষ হয়ে যাবে।এরপর দেখবে এমন সময় আসবে যখন খুব কাঁদতে ইচ্ছে করবে  কিন্তু তখন চোখে জল আসবে না।চোখ মুছে ফেলো,আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

দুইমিনিটের মধ্যে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দেখি তুলি তার ব্যাগ-ট্যাগ সব গুছানো শুরু করে দিয়েছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,

-এভাবে তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ গুছাচ্ছো কেন?

-যেই বাসায় মনের সুখে দুই-চার ফোঁটা চোখের জল ফেলা যাবে না, সেই বাসায় আমি আর থাকছি না।

   (চলবে…)

© খাদেমুল আলম মিঠুন

অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৩

#মিহুর_সংসার

#পর্বঃ৩

দুইমিনিটের মধ্যে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে দেখি তুলি তার ব্যাগ-ট্যাগ সব গুছানো শুরু করে দিয়েছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,

-এভাবে তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ গুছাচ্ছো কেন?

-যেই বাসায় মনের সুখে দুই-চার ফোঁটা চোখের জল ফেলা যাবে না, সেই বাসায় আমি আর থাকছি না।

– এটা কোনো কথা হলো। আমি কি খারাপ কিছু বলেছি?

আমার কথায় কোনো ধরনের আগ্রহ না দেখিয়ে সে নিজের মতো করে সব কিছু ভালোভাবে গোছাতে গোছাতে বলল,

-কান্না হচ্ছে যার যার ব্যক্তিগত অধিকার।এই অধিকারে যে বাধা দিবে আমি তার সাথে থাকবো কেন?

আমি বললাম,

-আচ্ছা, ঠিক আছে।যত খুশী কাঁদো, আমি আর কিছুই বলবো না।তবুও এই সন্ধ্যা বেলায় নাটক টা বন্ধ করো।

– আচ্ছা,ওই প্রোগ্রামের দিন তো কালো শাড়ি পরেছিলাম।এখন কোন শাড়িটা পরবো,একটু দেখে বলুন তো?

-তুমি কি সত্যিই চলে যাচ্ছো?

-অবশ্যই, আমি মিথ্যে কথা বলি না আর যে বলে তাকেও পছন্দ করি না।আজকে নীল শাড়িটা পরতে হবে।নীল রঙ হচ্ছে বিচ্ছেদের দৃষ্টান্ত। আজকের পরিস্থিতির সাথে বেশ মানাবে।

আমি কোনো কথা না বলে বিছানার একপাশে বসে তুলির কান্ড কারখানা দেখছি।

কিছুক্ষণ কান্ড কারখানা সহ্য করে বললাম,

– কালকে গেলে হয় না।কালকে তো শুক্রবার।আমিও সাথে গেলাম তাহলে।অনেক দিন হয়ে গেলো তোমাদের বাড়িতে যাওয়া হয়না।এই সন্ধ্যার সময় হুটহাট না জানিয়ে চলে গেলে আব্বা-আম্মা কি ভাববে?

– যা ইচ্ছা ভাবুক।আমার বাসায় আমার যখন ইচ্ছা হবে যাবো, এতে ভাবার কি আছে?

– তাহলে এক কাজ করি।আমিও তোমার সাথে চলে যাই।তাহলে কেউ কিছু ভাববে না।

– আপনার শ্বশুর বাড়িতে আপনি যখন ইচ্ছা যাবেন, এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।

– তাহলে আমিও হালকা কিছু খেয়ে তৈরি হয়ে নিচ্ছি।শনিবার সকালে চলে আসবো।

রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম খাওয়ার মতো কিছুই নেই।

তুলিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

-আজকে কি রান্না করো নি?

– না। ভেবেছিলাম মুভিটা শেষ করে রান্না করবো।কিন্তু সেটা তো হলো না।

– ও, আচ্ছা।বুঝতে পেরেছি, মনের এই অবস্থা নিয়ে আর যাই হোক রান্নাবান্না তো সম্ভব না।তাহলে আমি মুড়ি দিয়ে চানাচুর মাখাচ্ছি দুজনে একসাথে খেয়ে রওনা দিব।তুমিও তো বোধহয় কিছু খাওনি?

-মুভি দেখতে দেখতে কয়েকটা বিস্কুট খেয়েছিলাম।মুভি দেখার পর কিছু খাইনি।আর কিছু খাবোও না।মন খারাপের সময় খেতে নেই।

সোফায় বসে বসে মুড়ি চাবাচ্ছি আধাঘন্টা হয়ে যাবে। তুলি এখনও সাজগোজ করছে।আগে জানতাম,

“মেয়েদের মন যখন প্রচন্ড রকমের ভালো থাকে  তখন তারা সাজগোজ করে।মন খারাপের সময় মেয়েরা ইচ্ছে করলেও সাজতে পারে না।চুল গুলো থাকবে এলোমেলো, গালগুলো থাকবে ফোলা আর চোখ দুইটা চিন্তায় বড় হয়ে থাকবে তাহলেই বুঝে নিতে হবে এই মেয়ের মন খারাপ।কিন্তু তুলির ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটছে।প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম এই মেয়ের একেবারেই ধৈর্য্য নেই।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল।সে ধৈর্য্য নিয়ে একটা কাজই ভালোভাবে করতে পারে সেটা হচ্ছে সাজগোজ।শুধু সে না,বাঙালি প্রায় সব মেয়েই এই কাজে খুব ভালো ধৈর্যের পরিচয় দেয়।”

সন্ধ্যা সাতটার সময় রুমের দরজা বন্ধ করেছিল এখন ন’টা বাজে।এখনও সাজগোজ চলছেই।

সাড়ে ন’টার দিকে দরজা খুলে দুইটা ব্যাগ নিয়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

এই মেয়েকে দেখে কে বলবে সে অভিমান করে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে।

আমার হাতে ব্যাগ দুইটা দিয়ে বললো,

-নিচে গিয়ে রিকশা খুঁজুন।আমি ঘরের দরজা জানালা সব আটকে দিয়ে নিচে নামছি।

ব্যাগ দুইটার ওজন কমপক্ষে হলেও দশ কেজির নিচে হবে না।

তুলির বাপের বাড়ি এখান থেকে বেশি দূর নয়।রিকশা দিয়ে গেলে আধাঘন্টার মতো লাগে।

এখন বুঝতে পারছি, 

“বিয়ে সব সময় দূরে করা উত্তম।তখন যত ইচ্ছা স্বামীর সাথে ঝগড়া করলেও বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা মুখে নেওয়ার আগে স্ত্রীরা কমপক্ষে দশবার ভেবে নিবে,

 একা যেতে পারবো তো? 

কিন্তু আফসোস আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর সাথেই জুটি বাঁধতে পছন্দ করি।সেই বিচারে আমরা সবাই বোকা।”

একটা রিকশা নিয়ে দুজনে চলে আসলাম তুলির বাসার নিচে।যখনই ব্যাগ গুলো নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকতে যাবো তখন-ই তুলি রাস্তা আটকে বলল,

-এভাবেই চলে যাবেন নাকি?

– কেনো কি হয়েছে?

– শ্বশুর বাড়িতে কেউ খালি হাতে যায় নাকি।আপনার মানসম্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমার তো আছে এবং সেটা পরিমানে অনেক বেশি।

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাড়ে দশটা বাজে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম,

কয়েকটা মুদি দোকান ছাড়া তেমন কিছুই খোলা নেই।শীতের রাতে এতক্ষন দোকান খোলা রাখার কথাও না।

আমি বললাম,

– আগে বলতে, এখন তো সব দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে।

– আমার বলতে হবে কেন?

এটা তো আপনার মাথায় থাকার কথা।

-আচ্ছা, তর্ক না করে বলো কি নিয়ে আসবো?

দেখি কিছু খোলা পাই কিনা।

– কয়েক কেজি মিষ্টি জাতীয় কিছু আনবেন আর সাথে একটা বড়সড় মাছ নিয়ে আসবেন।

– ঠিক আছে, তুমি একটু দাঁড়াও।আমি দেখে আসি কিছু খোলা আছে কিনা।

বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট ঘুরাঘুরি করে একটা মিষ্টির দোকান থেকে দুই কেজি মিষ্টি আর মাছের বাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল সেখানে কিছু জরিমানা দিয়ে বড়সড় একটা মাছ নিয়ে নিলাম।

মামা জিজ্ঞেস করলো,

– মাছটা কি কাইট্টা দিতাম, ভাইজান?

– না, মাছে হাত দিতে হবে না।শ্বশুরবাড়ি যাব তো এই মাছ নিয়ে।যদি দেখাতেই না পারি এত বড় মাছ তাহলে নিয়ে কি লাভ!

– তাইলে ভাইজান, হাতে দড়ি দিয়া ঝুলাইয়া লইয়া যাইন।

– হুম, তাই দেন।

মিষ্টি আর মাছ নিয়ে তুলির কাছে গিয়ে বললাম,

– চলো, এখন তো কোনো আপত্তি থাকার কথা না।

কিন্তু তুলি বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছে না।দেখলাম রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে।

– কি হলো?

আমার চোখার দিকে তাকিয়ে তুলি বলল,

– আপনার হাতে কি ওইটা?

আমি ডান হাত তুলির চোখের সামনে নিয়ে বললাম,

– মিষ্টি, দুই কেজিই অবশিষ্ট ছিল দোকানে।

-অন্য হাতে কি?

এবার বাম হাতটা তুলির দিকে এগিয়ে নিয়ে বললাম,

-চোখের কি মাথা খেয়েছো নাকি?

এত বড় একটা মাছ, আর তুমি বলছো এটা কি?

-মাছ তো দেখতেই পাচ্ছি।কিন্তু এটা কি মাছ?

– কি আবার?

পাঙ্গাশ মাছ, বেশ সুস্বাদু। 

– শ্বশুর বাড়িতে কেউ পাঙ্গাশ মাছ নিয়ে যায়?

আর আমাদের বাসায় তো কেউ পাঙ্গাশ মাছ ছুয়েও দেখে না।

জরিমানা দিয়ে মাছ কিনে তুলির মুখে এই কথা শুনে কিছুটা কষ্ট আর সেই সাথে কিঞ্চিৎ অপমান বোধও লাগছে।

আমি বললাম,

– বিয়ে তো আগে কখনও করি নি।কীভাবে বুঝবো যে কি নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া যাবে আর কি নিয়ে যাওয়া যাবে না?

– পাঙ্গাশ মাছ পাল্টে অন্য মাছ নিয়ে আসুন।মাছটা দেখেও তো ভালো মনে হচ্ছে না, কেমন দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

– এখন পাল্টে আনা সম্ভব না।দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।আর এই একটা মাছই ছিল।

-সেকারনেই আপনাকে বোকা বানিয়েছে দোকানদার।ইশ, এই নোংরা মাছটা নিয়ে এখন বাসায় মুখ দেখাবো কি করে!

– এসব চিন্তা না করে চলো ভিতরে যাই।মেয়ের জামাই শখ করে কিনেছে আব্বা-আম্মা কিছু মনে করবেন না।

পাঁচ মিনিট কলিং বেল বাজানোর পর তুলির মা দরজা খুলে দিলো।

আমাদের দেখে রীতিমতো চমকে গিয়েছেন।চোখ দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পরেছিলেন।কাঁচা ঘুম ভেঙে দরজা খুলে দিয়েছেন।

আমাদের দেখে বললেন,

– এত রাতে তোমরা কিছু না জানিয়েই চলে আসলে যে?

তুলি কিছু বলার আগেই আমি আম্মাকে সালাম দিয়ে বললাম,

– তুলির ভীষন মন খারাপ করছিল আম্মা আপনাদের জন্য।সেকারনেই নিয়ে আসলাম,যদি মনটা কিছুটা ভালো হয়।মন ভালো হলেই আবার চলে যাবো আমরা।

মিষ্টির প্যাকেট টা ডাইনিং এ রাখলাম আর পাঙ্গাশ মাছটা আম্মার হাতে দিয়ে বললাম,

-ফ্রিজে রেখে দিন আম্মা মাছটা।এত রাতে বায়না ধরেছে আপনার মেয়ে যে ভালো কিছু কিনে নিয়েও আসতে পারলাম না।

আম্মা হাসিমুখে আমার হাত থেকে মাছটা নিয়ে বললেন,

-এগুলো আনার কি দরকার ছিলো।তুমি হাত মুখ ধুয়ে আসো, আমি ভাত নিয়ে আসছি।রাতের খাবার তো বোধ হয় কেউ খাওনি?

-জি, আম্মা।তবে না খেলেও চলবে।

-সে কি করে হয়?

তুমি বসো, আমি সব কিছু গরম করে নিয়ে আসছি।

তুলির একটা ছোট ভাই আছে বয়স বারো এর কাছাকাছি। এই রাতের বেলায় চিৎকার করে করে বলছে,

“কি মজা! আপু এসেছে।আজকে রাতে কিন্তু আমাকে গল্প শোনাতে হবে আপু।”

তুলিও তাকে আদর করে বলছে,

” শাড়িটা পাল্টে  নেই, এরপর গল্প বলবো।”

আমি বললাম,

– দুই ঘন্টা সময় নিয়ে শাড়ি পরলে এখনই পাল্টে ফেলবে?

তুলি আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে তার ছোট ভাই তুহিনকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেলো।

এদিকে আমি হাত-মুখ ধুয়ে খাবার-দাবার সেরে তুলির রুমে ঢুকলাম।

তুলি গল্প শুনাচ্ছে তুহিনকে।

আমি এসে বললাম,

-তুহিন, রাত বারোটা বেজে গেছে।তোমার রুমে যাও।আমরা এখন ঘুমাবো।

তুলি তুহিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

” বাকি গল্প কালকে বলবো।এখন তুই তোর দুলাভাইকে নিয়ে তোর রুমে ঘুমাতে চলে যা।”

– আমি যাব মানে?

– অবশ্যই যাবেন।আপনি পাঙ্গাশ মাছ ধরেছেন,আজকে আপনাকে এই রুমে রাখা যাবে না।তুহিন তোর দুলাভাইকে নিয়ে তোর রুমে যা।আমার মাথাটা কেমন যেন ঝিনঝিন করছে।একটু চা বানিয়ে খেতে হবে।

তুহিন আমাকে হাতে ধরে তার রুমে নিয়ে যাচ্ছে।আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে তুলিকে বললাম,

– আমার জন্যও এক কাপ চা ওই রুমে নিয়ে এসো, চিনি কম দুধ বেশি।

তুলি কিছু বলল না।

তুহিনের সাথে শুয়ে রয়েছি।তুহিন বলছে,

-দুলাভাই একটা গল্প শোনান।

-ঘুমিয়ে পরো।গল্প শুনতে হবে না।

-কালকে তো শুক্রবার দুলাভাই।স্কুল বন্ধ, দেরি করে ঘুমালে কিছু হবে না।

এই ছেলেকে গল্প না বললে ঘুমাবে না।

তাই শুরু করে দিলাম এক গল্প।

“এক দেশে ছিলো এক রাজপুত্র।আরেক দেশে ছিল এক রাজকন্যা।পরিবারের সিদ্ধান্তে রাজপুত্র আর রাজকন্যার বিয়ে হয়।বিয়ের পর রাজপুত্রটা বুঝতে পারে যে, সে এই রাজকন্যাকে বিয়ে করে জীবনে অনেক বড় ভুল করেছে।কারন রাজকন্যাটা ছিল খুবই বোকা।কিন্তু রাজপুত্রটা রাজকন্যাকে খুব ভালোবাসতো।একদিন রাজকন্যা অভিমান করে বাপের বাড়ি চলে আসে।রাজপুত্রও পিছু পিছু চলে আসে।”

এতটুকু গল্প বলার পর তুহিন আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

-থামেন দুলাভাই।এই গল্পটা তো মাত্রই তুলি আপু আমাকে বলেছে।কিন্তু এখানে রাজপুত্রের জায়গায় একটা ছাগল ছিল।রাজকন্যাটা ওই ছাগলটাকে ভালোবাসতো।

আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে তুলি আমাকে ছাগলের সাথে তুলনা করেছে।

এদিকে তুলি আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে রুমে ঢুকে বলছে,

– এই নেন আপনার চা।

আমি বিরক্তির সুরে বললাম,

” এসব চা-টা আমার পাকস্থলী দিয়ে নামবে না।তুমি বরং কিছু কাঁঠাল পাতা আর ঘাস নিয়ে আসো। বসে বসে সেগুলো চাবাই।

আমিতো ছাগল।”

 (চলবে…)

© খাদেমুল আলম মিঠুন

অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৪

#মিহুর_সংসার

#পর্বঃ৪

এদিকে তুলি আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে রুমে ঢুকে বলছে,

– এই নেন আপনার চা।

আমি বিরক্তির সুরে বললাম,

” এসব চা-টা আমার পাকস্থলী দিয়ে নামবে না।তুমি বরং কিছু কাঁঠাল পাতা আর ঘাস নিয়ে আসো। বসে বসে সেগুলো চাবাই।

আমিতো ছাগল।”

তুলি কোনো কথা না বলে চায়ের কাপটা পাশে থাকা টেবিলে রেখে তার রুমে চলে গেল।

তুলি রুম থেকে যাওয়ার পর তুহিন আমাকে বলল,

-তারপর কি হলো দুলাভাই?

গল্পটা শেষ করেন।

– তারপর আর কি হবে! ছাগলটা রাজকন্যার ভাইয়ের সাথে রাতে ঘুমিয়ে পরলো।বাকি গল্প আরেকদিন বলবো।

– না দুলাভাই, আজকেই বলুন।

– তারপরে কি হবে সেটা তো আমি নিজেও জানি না।চোখ বন্ধ করে এখন ঘুমানোর চেষ্টা করো।

শুক্রবার দিনটা শ্বশুর বাড়িতে থেকে শনিবার বিকালে নিজের বাসায় চলে আসলাম তুলিকে নিয়ে।

রবিবার সকালে অফিসে যাওয়ার আগে নাস্তা করতে টেবিলে বসেছি।টেবিলে বসে দেখি আজকের রুটি গুলো খুব সুন্দর গোল হয়েছে।একেবারে পূর্ণিমা চাঁদ যেটাকে বলে।

তুলিকে বললাম,

-আজকের রুটি গুলো তো খুব সুন্দর।খেতেও বেশ সুস্বাদু। ইচ্ছে করলে তো সব কিছুই পারা যায়।

খুশীমনে তুলি জবাব দিল,

-ধন্যবাদ আপনাকে।

কথাগুলো বলে তুলির দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম, সে একটা বিশেষ মেশিনে রুটি গুলো মোটা করে ফেলে দিচ্ছে তারপর সেখানে একটা  ভালোভাবে চাপ দিচ্ছে।অতঃপর সেখান থেকে চাঁদ আকৃতির চ্যাপ্টা রুটি বের হয়ে যাচ্ছে।তুলি সেগুলো হাসিমুখে কড়াইয়ে ছেড়ে দিচ্ছে।

বিষয়টা বুঝতে পেরে তুলিকে বললাম,

– এতো দেখছি সব মেশিনের কারসাজি।তোমাকে প্রশংসা করা ঠিক হয়নি।

আমার কথায় সে বিশেষ কোনো গুরুত্ব না দিয়ে মনের সুখে রুটি বানিয়েই চলেছে।

আমি বললাম,

– আরো দুইটা রুটি নিয়ে আসো তো আমার কাছে।

-এখান থেকে নিয়ে যান।

-বাহ! কি সহজ জবাব।পাশের বাসার আনিছ ভাইয়ের বাসায় গিয়ে ঐদিন দেখলাম,

আনিছ ভাই নাস্তা করছে আর ভাবি পাশে বসে আনিছ ভাইকে পাখা দিয়ে বাতাস করছে।

আহা! সে কি দৃশ্য, দেখে এতো ভালো লেগেছিল।

– ঢং কত! পাখা দিয়ে বাতাস করার কি দরকার?

বাসায় কি সিলিং ফ্যান নেই?

– সিলিং ফ্যান তো আছেই।কিন্তু পাশে বসে বাতাস করা হচ্ছে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।সেটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে আমাকে রুটি রান্নাঘর থেকে নিয়ে আসতে বলতে না।

– ভালোবাসা কি দেখানোর জিনিস নাকি?

যত্তসব ন্যাকামো। আমারও পরিচিত একজন ভাইয়া আর ভাবি ছিল।বাহির থেকে দেখে সবাই ভাবতাম তাদের মধ্যে অনেক মিল।এই ধরেন, ভাইয়া যখন অফিসে যেত ভাবি তখন গলায় টাই পরিয়ে দিত, খাওয়ার সময় বাতাস করতো, আরো কত কি!

দুই বছর পরে জানেন কি হলো?

আমি বললাম,

– কি আর হবে, বাচ্চাকাচ্চা-ই তো হওয়ার কথা।এত সুখি পরিবার আমার যদি থাকতো।তোমার কথাগুলো শুনে মনটা ভরে গেল।

– ঘোড়ার ডিমের সুখি পরিবার ছিল।দুইবছর পর তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়।এমনকি এটাও শুনেছিলাম, ভাবি নাকি সিলিং ফ্যানে ঝুলে পরার চেষ্টাও করেছিলো।চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আশেপাশের বাসা থেকে মানুষ এসে পরেছিল যে কারনে আর ঝুলতে পারেনি।

তুলির মুখে এই কথা শুনে হাত থেকে রুটি টা মাটিতে পরে গেলো সেই সাথে রুটি গলায় আটকে গিয়ে প্রচুর কাশি আসা শুরু করলো।

আমার কাশির শব্দ শুনে তুলি বলল,

– আর হ্যা, ভাইয়ার যখন কাশি আসতো ভাবি তখন ভাইয়াকে আদর করে পানি পান করিয়ে দিতো।

এখন বলো, আমি কি আপনার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসবো?

– না থাক, পানি কীভাবে পান করতে হয় সেটা আমি ভালোভাবেই জানি।এত ভালোবাসা দেখাতে হবে না।

– হুম, সেকারনে-ই তো বললাম ভালোবাসা দেখানোর জিনিস না।এটা আগে বুঝতে হবে এরপর অনুভব করতে হবে।

বিকাল তিনটা বাজে। অফিসের কাজকর্ম নিয়ে খুব ব্যস্ত আমি।অফিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হচ্ছে যেটার দায়িত্ব পুরোপুরি আমার উপর।

তখন দেখলাম তুলি ফোন দিয়েছে।প্রথম বার ধরলাম না, দ্বিতীয় বার কেটে দিলাম।

সেই সাথে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম,

” এখন মিটিং এ খুব ব্যস্ত। একটু পর ফোন দিচ্ছি।”

কিন্তু আমার কথা না শুনে সে আবার ফোন দিতে লাগলো।

আমি মিটিং এ উপস্থিত সবার কাছে এক মিনিট সময় নিয়ে পাশের রুমে গিয়ে ফোনটা ধরে বললাম,

– কি হয়েছে?

বারবার ফোন দিচ্ছো কেন?

তুলি দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলল,

-আপনি তাড়াতাড়ি একটু চলে আসুন।ওরা আমাকে মেরে ফেলবে?

– কি বলছো এগুলো!

ওরা কারা?

আমি আসার পর দরজা লক করোনি?

তুলি ভয়ে ভয়ে বলল,

– করেছিলাম তো।কিন্তু ওরা আগে থেকেই বাসাতে ছিল।

– বলো কি!

ওরা কয়জন?

– দুইজন।

– ওদের কাউকে আগে থেকে চিনতে তুমি?

– হ্যা,চিনবো না কেন!

একজন তেলাপোকা আর আরেকজন হচ্ছে মাকড়সা।মাথার উপর সারাক্ষণ ঘুরাঘুরি করছে।আমার ভীষণ ভয় ভয় লাগছে।

তুলির কথা শুনে প্রথমে স্বস্তি বোধ করলেও তার বোকামির জন্য কিছুটা রাগও হচ্ছে।

বললাম,

-চোখ বন্ধ করে রাখো,এগুলো দেখার প্রয়োজন নেই।তারচেয়ে ভালো হয় তুমি ঘুমিয়ে পরো।আমি মিটিংটা শেষ করে দ্রুতই চলে আসবো।

– এতক্ষনে এগুলো আমাকে কামড়ে মেরে ফেলবে।

– তেলাপোকা আর মাকড়সা দুটোই খুব নিরীহ প্রাণী। দুশ্চিন্তা করার কোনো কারন নেই।

– আমি কিন্তু এখনই জানালা থেকে লাফ দিব।সাথে আবার দুইটা তেলাপোকাও জড়ো হয়েছে।

এই মেয়ের বিশ্বাস নেই।দেখা গেল সত্যি সত্যিই লাফ দিয়ে দিতে পারে।

মিটিং রেখে আমি অফিসে বসের রুমে গিয়ে বললাম,

-স্যার, আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে এখনই।

– মিটিং কি শেষ হয়ে গেছে?

-জ্বি না, স্যার।অন্য কাউকে দিয়ে বাকিটা চালিয়ে দিন।বাসায় একটু সমস্যা হয়েছে।

আমার অবস্থা দেখে স্যার বললেন,

– তুমি এভাবে ঘামছো কেন?

কি সমস্যা আমাকে বলো?

– স্যার, বিষয়টি খুবই সাধারণ তবে অবহেলা করলে অনেক খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।

– বুঝিয়ে বলো।

– স্যার আমার স্ত্রীর রুমে একটা তেলাপোকা আর একটা মাকড়সা আক্রমন করেছে।সে এগুলোকে প্রচন্ড রকমের ভয় পায়।ফোন দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।আমাকে যত দ্রুত 

সম্ভব বাসায় যেতে হবে।

স্যার আমাকে চোখ রাঙিয়ে বললেন,

– এই মিটিংয়ের এর চেয়ে তুমি তুচ্ছ বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছো,মিহু।

– বিষয়টি মনে হচ্ছে তুচ্ছ কিন্তু আমাকে ফোন দিয়ে বলল, বেশি দেরি হলে জানালা দিয়ে লাফ মারবে।আমার বাসা দু’তলাতে,স্যার।যেকোনো বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।আমার স্ত্রী খুব ভীতু স্যার।

– তোমার স্ত্রীর চেয়ে তুমি যে আরো বেশি ভীতু সেটা কি তুমি জানো?

-জ্বি না,স্যার।

– বিয়ে করেছো কতদিন হবে?

– দুই মাসের উপরে হবে।

– এই সময়ের মধ্যে নিজের স্ত্রীকে যে নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছে না, সে আমার অফিসের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রনে আনবে কি করে?

-স্যার, বেশি সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।অন্য কোনোদিন বেশি সময় নিয়ে অফিসের কাজ করে দিবো।আজকের মিটিংটা আপাতত অন্য কাউকে দিয়ে চালিয়ে দিন।

– ঠিক আছে।কিন্তু এরকম ছোট বিষয়ে আর কখনও ছুটি চাইতে আসবে না।অন্য কেউ বললে ছুটি দিতাম না কিন্তু তোমাকে দিচ্ছি কারণ তুমি সততার সাথে অফিসের কাজকর্ম করো এবং তা মনোযোগ দিয়ে।এখন যাও,

যত দ্রুত সম্ভব স্ত্রীর মায়া কাটিয়ে আবার অফিসে মনোযোগী হও।

– ধন্যবাদ,স্যার।

বসের সাথে কথা বলা শেষ করে একটা সিএনজি নিয়ে বাসায় এসে পরলাম।সিএনজিতে বসে কয়েকবার ফোন দিয়েও তুলির কোনো সাড়া পেলাম না।

অবশেষে বাসায় এসে নিজের পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম।

ভিতরে ঢুকে দেখি তুলি বিছানায় ঘুমিয়ে পরেছে।হাত আর নাকের নিশ্বাস দেখে বুঝলাম,

সে ঘুমিয়ে পরেনি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পরেছে।দুই হাত দুইদিকে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় খুবই শক্ত।চোখ-মুখে দুই-চার ফোঁটা পানি ছিটাতেই সে সাড়া দিতে লাগলো।তবুও জ্ঞান ভালো ভাবে ফিরছে না।এরপর বালতি দিয়ে পানি এনে মাথায় দেওয়ার কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো।

জ্ঞান ফিরার পর শুয়া অবস্থা থেকে বালিস সোজা করে বিছানায় বসিয়ে বললাম,

– এভাবে ভয় পেলে চলে বোকা মেয়ে।আজকাল তো ছোট বাচ্চারাও তেলাপোকা, মাকড়সা নিয়ে খেলাধুলা করে।

তুলি কোনো কথা বলছে না।চুপচাপ অবুঝ বাচ্চাদের মতো বসে রয়েছে।

– কি হলো, কথা বলছো না কেন?

এবার মুখ থেকে কথা বের হলো।কিন্তু তা একেবারে আস্তে।

– আমার চোখের সামনে দুইটা টিকটিকি এসে মাকড়সাটাকে খেয়ে ফেলেছে।

কি ভয়ানক দৃশ্য!

কল্পনা করতে পারেন?

আর তেলাপোকাটা পুরো ঘর জুড়ে উড়াউড়ি শুরু করে দিয়েছিল।

চোখের সামনে এতগুলো দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।

– আচ্ছা, এসব কল্পনা বাদ দিয়ে ভালো করে চোখ মুখ ধুয়ে আসো।

তুলি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলে আমি ভাবতে লাগলাম এরকম আচারণ কি কোনো রোগ হতে পারে?

আমার বন্ধু হাসান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।তাকে ফোন দিয়ে বললাম সময় করে একদিন যেন তুলিকে দেখতে আসে।

দুইদিন পর বন্ধু হাসান আমাদের বাসায় আসলো।অফিস শেষে তাকে নিয়ে বাসায় ঢুকলাম।তাকে আলাদা ভাবে বুঝিয়ে সব কিছু বললাম সাথে এটাও বলে দিলাম তুলি যেন বুঝতে না পারে এই ব্যাপারগুলো।তুই আমার বন্ধু হিসেবে বাসায় আসবি।

এক দেড় ঘণ্টার মতো তুলিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলো হাসান।তুলিও নিজের মতো করে সব জবাব দিলো।

এরপর রাত আট’টার দিকে হাসানকে নিয়ে আমি বাসার বাইরে চলে আসলাম।

বাইরে বের হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

– কেমন দেখলি?

কোনো সমস্যা মনে হয়েছে কি?

– না, তেমন কোনো সমস্যা মনে হয়নি।আমি যেটা বুঝলাম ছোট বেলা থেকে একদম পরিবার আর স্কুল কলেজের বাইরে কারও সাথে তুলি তেমন মিশেনি।এখনও ম্যাচুরিটি আসে নি মনের মধ্যে।এগুলো তেমন সমস্যা না, আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারবে।

– তাহলে কি অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই?

– এক কাজ করতে পারিস।মাঝে মধ্যে অবসর সময় পেলে দুজনে একসাথে ঘুরতে বের হতে পারিস।সমাজের বিভিন্ন ধরনের মানুষদের খুব কাছ থেকে দেখলে খুব দ্রুত মনের মধ্যে পরিবর্তন এসে যাবে।বিয়ের পর দুজন একসাথে কখনও ঘুরতে গিয়েছিলি?

– না, সময় বের করা যাচ্ছে না।ভাবছি সামনে এক সপ্তাহের জন্য অফিস থেকে ছুটি নিব।বসকে বললে না করবেন না।উনি আমাকে যথেষ্ঠ ভালোবাসেন।

– তাহলে ঘুরে আয় দূরে কোথাও প্রাকৃতিক পরিবেশে।

হাসানের কথা মতো অফিসের বসকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এক সপ্তাহের জন্য ছুটি নিলাম।

স্যার তেমন কিছু বলেন নি।শুধু বলেছেন,

” ঘুরাঘুরি শেষ করে কাজে যেন ভালোভাবে মন দেই।”

শেষমেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এক সপ্তাহের জন্য আমরা ঘুরতে যাবো।প্রথম তিনদিন কক্সবাজার আর শেষের তিনদিন সাজেক।আর একদিন আসা-যাওয়াই লেগে যাবে।

সব পরিকল্পনা তুলি নিজে থেকেই করেছে।

সাথে এটাও বলেছে সেখানে যাওয়ার পর নাকি আমাকে বিশেষ সারপ্রাইজ দিবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজার যে হোটেল বুক করেছিলাম সেখানে পা রাখতেই আমি সত্যিই চমকে গেলাম।

তুলির পাঁচ-ছয় জন বান্ধবীও চলে এসেছে এখানে তাদের বর নিয়ে। সবার সাথে সেই মাস খানেক আগে তাদের স্কুল প্রোগ্রামে দেখা হয়েছিল। 

মেয়েরা একজন আরেকজন কে দেখে মনের আনন্দে জড়িয়ে ধরলেও আমরা স্বামীরা তা করতে পারছি না।

কারণ আমরা জানি এই সাতটা দিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আমাদের উপর দিয়ে সুনামি বেয়ে যাবে সেই সাথে সবাইকে নয় নম্বর মহা বিপদ সংকেত মোকাবেলা করে চলতে হবে।

  (চলবে…)

© খাদেমুল আলম মিঠুন

অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৫

#মিহুর_সংসার

#পর্বঃ৫

মেয়েরা একজন আরেকজন কে দেখে মনের আনন্দে জড়িয়ে ধরলেও আমরা স্বামীরা তা করতে পারছি না।

কারণ আমরা জানি এই সাতটা দিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আমাদের উপর দিয়ে সুনামি বেয়ে যাবে সেই সাথে সবাইকে নয় নম্বর মহা বিপদ সংকেত মোকাবেলা করে চলতে হবে।

মেয়েরা এসে প্রথমেই হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর কাছ থেকে যার যার রুমের চাবি নিয়ে চলে গেল।

যাওয়ার সময় আমাদের বলল,

– ব্যাগ-ট্যাগ আর লাগেজ গুলো যেন ঠিক ভাবে উপরে নিয়ে আসি।এই ব্যাগ গুলোতে তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রয়েছে।

পাশে থাকা সব বরদের উদ্দেশ্যে বললাম,

– কেমন আছেন ভাই আপনারা সবাই?

একজন বলল,

– আগে ভালো ছিলাম না,ভাই।একটু শান্তির জন্য এখানে এসেছিলাম।এখন বোধহয় আগের চেয়ে খারাপ দিন পার করতে যাচ্ছি।

আরেক জন বলল,

– সবই কপাল ভাই।আমাকে কত সুন্দর সুন্দর কথা বলে এখানে নিয়ে আসলো।আমাকে বলেছিল,

কক্সবাজার গিয়ে আমরা অনেক মজা করবো।

সে ঠিকই বলেছিল কিন্তু আমি বুঝতে পারি নি যে সেই আমরা কথাটার ভিতরে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।আমরা বলতে সে তার বান্ধবীদেরকে ইঙ্গিত করেছিল। 

সবাই হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি।তবে সবচেয়ে বেশি হতাশ দেখা যাচ্ছে নিতুর জামাইকে।সে এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।কিন্তু এই ছেলেটিই সবচেয়ে চঞ্চল ছিল।প্রোগ্রামের দিন সে-ই অতি আবেগে গাছে উঠে পরেছিল শুধুমাত্র নিতুর নাচ দেখার জন্য। আবার আমাকে দেয়ালের উপরে উঠানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব তারই ছিল।

এখন এভাবে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে বললাম,

– ভাই, এভাবে বসে না থেকে চলুন হোটেলে যাই।

সে জবাব দিলো,

– মিহু ভাই, কত আশা নিয়ে এসেছিলাম!

এদিকে আমার চাকরিটা থাকবে কিনা জানি না।একমতো জোর করে নিয়ে আসলো নিতু আমাকে। শেষ-মেষ কোনো কিছু না ভেবে চলে আসলাম।এখন আসার পর এগুলো কি মেনে নেওয়া যায়?

– আমারও মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তবে মেনে তো নিতেই হবে।আমরা তো ওদের এখানে ফেলে রেখে এখন চলে যেতে পারি না।তারা তাদের মতো মজা করবে আর আমরা আমাদের মতো মজা-ফূর্তি করবো।

আমার কথায় সহমত পোষণ করে কয়েকজন বলল,

– সেটা না হয় মেনে নিলাম।কিন্তু আমাদের এভাবে বোকা বানিয়ে নিয়ে আসা কি ওদের ঠিক হয়েছে?

আমি বললাম,

– অবশ্যই ঠিক হয়নি।তবে এখন থেকে যাতে আমাদের আর বোকা বানাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।ওরা আমাদের বোকা কেন বানাতে পেরেছে জানেন আপনারা?

নিতুর জামাই জবাব দিল,

– কারণ আমরা বোকা।বোকাদের সবাই বোকা বানাবে এটাই স্বাভাবিক।

– জ্বি না ভাই।ওরা বোকা বানাতে পেরেছে কারণ ওদের মধ্যে একতা আছে কিন্তু আমাদের মধ্যে তা বিন্দু পরিমানেও নেই।আমাদের সেই শেষবার দেখা হয়েছিল প্রোগ্রামের দিন। এরপর আর কথা হয়নি।কিন্তু ওরা সব সময় একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ রাখে।আজ যদি আমাদের মধ্যেও যোগাযোগ ভালো থাকতো তাহলে আমরা আগে থেকেই সব কিছু বুঝতে পারতাম। তাহলে এতো সহজেই বোকা বানাতে পারতো না।

– একদম ঠিক কথা বলেছেন।এবারই শেষ, এরপর থেকে তাহলে আমরা আর বোকা হচ্ছি না।এখন থেকে আমরাও তাদের মতো ঐক্যবদ্ধ ভাবে চলবো।

নিতুর জামাই বলল,

– সবচেয়ে ভালো হয়, আমরা যে বিবাহিত এই বিষয়টা এক সপ্তাহের জন্য ভুলে গেলে।এখন থেকে মনে রাখবেন,

” আমরা ছয় বন্ধু ঘুরতে এসেছি।আমাদের সাথে আর কেউ আসেনি।আসলেও ওদেরকে আমরা চিনি না, আমাদের কেউ নেই।”

– মনের কথা বলেছেন ভাই, এখন বেশ আরাম বোধ করছি।চলেন রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেওয়া যাক।

এই সব হোটেলের রুম বুক করার দায়িত্বও তুলি নিজেই খুশী মনে নিয়েছিল।না জানি কি আছে এখন কপালে!

ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে যেই রুমে ঢুকতে যাবো তখন-ই দেখি তুলি সহ বাকি মেয়েরা একটা ডাবল বেডের রুম দখল করে রেখেছে। এক-এক বেডে তিনজন করে ভালো ভাবেই শুয়ে পরা যাবে।দুই বেডে ছয়জন বসে আড্ডা জমিয়ে দিয়েছে।

আমি গিয়ে বললাম,

– তুলি, আমার তো খুব ক্লান্ত লাগছে।আমাদের রুম কোনটা?

– পাশেরটা।সেখানে গিয়ে শুয়ে পরেন।

– তুমি আসবে না?

– না, আমরা মেয়েরা এই রুমে থাকবো।আর আপনারা পুরুষরা সব ঐ রুমে থাকবেন।

আমি বললাম,

– এটা কোনো কথা?

একসাথে আড্ডা দাও ঠিক আছে। তাই বলে আমরা এক রুমে ঘুমাবো আর তোমরা অন্য রুমে এটা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়?

তাহলে তো আমাদের পুরুষদের আসার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।

তুলি আহ্লাদের স্বরে বলল,

– এ কেমন কথা বলছেন?

আপনি-ই তো প্রথমে এখানে আসার কথা বলেছিলেন।তাহলে আপনাকে ছাড়া আসি কি করে?

তাছাড়া হোটেলে বিবাহিতদের জন্য ত্রিশ পার্সেন্ট ছাড় চলছে।শুধু আমরা আসলে কি সেই ছাড় পাওয়া যেত?

– বাহ! তুমি তো বেশ সংসারী মেয়ে।কিন্তু কি লাভ এত সংসারী হয়ে যদি ঠিক ভাবে সংসারটাই করতে না জানো।

– আপনি কি সবার সামনে আমাকে অপমান করে কথাটা বললেন?

একটু ঘুরতে এসেও শান্তি নেই।সারাদিন বাসায় বসে থাকি তখন তো কোনো খবর নেন না, এখন একটু আড্ডা দিচ্ছি সেটা আপনার সহ্য হচ্ছে না।কথা গুলো বলার সাথে সাথেই তুলির চোখ দিয়ে জল পরা শুরু হয়ে গেল।

সাথে আরও বলল,

– আগে যদি জানতাম এখানে এসেও কাঁদতে হবে তাহলে সবার আগে টিস্যু নিয়ে আসতাম।ব্যাগে করে তো কোনো টিস্যুও আনিনি।

পাশে থাকা মেয়েগুলোর মধ্য নিতু নামের মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

– আপনার এভাবে কথাগুলো বলা উচিৎ হয় নি মিহু,ভাই।ফরহাদ যদি আমাকে এই কথা গুলো বলতো তাহলে খবর করে ছাড়তাম।

আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিতুর জামাই ফরহাদ বলল,

– নিতু, কি দরকার এসব কথা সবার সামনে বলার। আমাদের মধ্যে যা হয় তা সবাইকে জানানোর তো কোনো দরকার নেই, তাই না?

আর মিহু ভাই তো খারাপ কিছু বলে নি।উনার কথায় তো ন্যায্য অধিকার ফুটে উঠেছে।

নিতু দাঁত কামড়ে বলল,

– বাসায় যাওয়ার পর তোমাকে ন্যায্য অধিকার শিখাতে হবে।

এরপর তুলির দিকে একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,

– এই নে টিস্যু।চোখের জল মুছে নে।যে তোর মনের অবস্থা বুঝতে পারে না তারজন্য তুই কেনো মন খারাপ করে বসে বসে কাঁদবি।সেই ব্যক্তির সাথে-ই মন খারাপ করে কাঁদা যায় যে তোর মন খারাপের কারন বুঝতে পারে।

আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম,

” কি নিঁখুতভাবে কথার প্যাচ দিয়ে আমাকে দোষী বানানো হচ্ছে।এদিকে তুলিও কাঁদছে।তাই কিছু বলারও সাহস পাচ্ছি না।এখন বুঝতে পারছি, শুধুমাত্র নারীজাতির চোখের পানি সহ্য করতে না পেরে যুগে যুগে অনেক পুরুষ অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে নিজেদের সংযত রেখেছেন। এখানে অবস্থানরত আমরা ছয়জন পুরুষও সেই দলে।

আমি বললাম,

– তর্ক করার কোনো দরকার নেই তো।কিছুদিনের জন্য সবাই মজা করতে এসেছি, মজা করেই চলে যাবো।তুলি তুমি চোখ মুছে ইচ্ছামতো আড্ডা দাও।আমরা চলে যাচ্ছি।আর বিরক্ত করবো না।

একে একে সবাই মেয়েদের রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।

এরপর যে যার মতো হাত-মুখ ধুয়ে রাতের খাবার সেরে ফেললাম।

রাত দশটা বাজে।সবাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রয়েছি।কারো চোখেই ঘুম আসছে না।

সবার মনের অবস্থা উপলব্ধি করে আমি সবার উদ্দেশ্যে বললাম,

– এভাবে মন খারাপ করে শুয়ে না থেকে চলেন আমরাও আড্ডা দেই।

একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে আমার। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে খুব লজ্জা পাচ্ছি।

বাকি সবাই বলল,

– আরে লজ্জা কীসের ভাই?

আপনি কি মেয়ে নাকি?

আজকাল তো মেয়ে মানুষের মুখেও লজ্জা উঠে যাচ্ছে।আপনি পুরুষ হয়ে কেন লজ্জা পাচ্ছেন?

– না মানে, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে যে এখানে বিবাহিতদের মধ্যে কার কার লাভ মেরেজ ছিল?

আমার কথা শুনে এখন মনে হচ্ছে রুমের সব পুরুষই লজ্জাই পরে গেছে শুধুমাত্র আমি ছাড়া।

সবার মুখের দিকে একবার করে তাকিয়ে বললাম,

– আপনাদের সবারই কি লাভ মেরেজ ছিল?

মুখ দিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না।নিতুর জামাই ফরহাদ ছাড়া সবাই হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।

আমি বললাম,

– ভাই, আপনারা জেনে শুনে কেন এদের গলায় ঝুলতে গেলেন?

কেউ কোনো কথা বলছে না।মনে মনে সবাই আফসোস করছে বোধহয়। 

তবে আমি বেশ ভালোই মোটিভেশান পেলাম।

ওদের লাভ মেরেজ হয়ে যদি এই অবস্থা হতে পারে তাহলে আমার ক্ষেত্রে হওয়াটা তো স্বাভাবিক।আমার তো এরেঞ্জ মেরেজ।

ফরহাদকে বললাম, 

– ভাই আপনার কি তাহলে এরেঞ্জ মেরেজ ছিল?

– কিছুটা।

– কিছুটা মানে?

খুলে বলেন,ভাই।

– নিতু যখন ক্লাস টেনে পড়তো তখন থেকে তাকে ভালোবাসতাম।তাকে দেখার জন্য গার্লস স্কুলে উকি মারতাম।এরপর সে যখন গার্লস স্কুল পাশ করে অন্য কলেজে ভর্তি হলো আমিও তখন সেই কলেজে ভর্তি হলাম।যেই ছেলে কোনোদিন স্কুলে যেতো না ঠিক মতো, সেই ছেলে শুধুমাত্র নিতুকে দেখার জন্য নিয়মিত কলেজে যাওয়া শুরু করে।একবার ভেবেছিলাম, নিতুকে বলবো ভালোবাসার কথা।

আমরা অতি আগ্রহ নিয়ে ফরহাদের প্রেমের কাহিনী শুনতে লাগলাম।

– তারপর বলেন ভাই।থেমে গেলেন কেন ভাই?

– কিন্তু আমার আগেই কলেজের একটা ছেলে তাকে ভালোবাসার কথা বলে দেয়।নিতু তার গালে এমন জোরে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছিল যে মনে হচ্ছিল এই চড়টা আমারও প্রাপ্য ছিল।

ছেলেটিকে নিতু বলেছিল,

– যোগ্যতা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলার জন্য।তার কাছে এই সব আবেগের কোনো দাম নেই।

এরপর আমিও বুঝতে পারি আবেগ দিয়ে কাজ হবে না।ভালো করে পড়াশোনা শুরু করে দিলাম।

পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা জব নিয়ে সোজাসুজি নিতুর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম।নিতুর বাবা-মাও রাজি হয়ে গেলো।

তারপর বিয়ে করে ফেললাম।কিন্তু নিতুকে এখনও বলতে পারিনি যে তাকে আমি সেই ক্লাস টেন থেকে ভালোবাসতাম।অবশ্য বললেও বিশ্বাস করবে না।সে শুধু শুধু আমাকে সন্দেহ করে।অথচ আমি তাকে ছাড়া কিছুই বুঝি না।

বেচারা ফরহাদের মুখে কথা গুলো শুনে আমরা সবাই আপ্লূত হয়ে পরলাম।সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না।

হঠাৎ আমাদের অবাক করে দিয়ে ঘরের দরজা দিয়ে নিতু ফরহাদকে জড়িয়ে ধরে বলল,

– আমাকে আগে বলোনি কেন, এই কথা গুলো?

ফরহাদ বলল,

– তুমি কীভাবে শুনলে এই কথা গুলো?

– আমি আবারও সন্দেহের বসে দরজায় উকি দিয়ে দেখছিলাম তুমি কি করছো!

সন্দেহ করতে এসে ভালোবাসাটা বেড়ে গেল।

পাশে থাকা আমরা আবারও আপ্লূত হয়ে পরলাম। 

আমি ভাবলাম তুলিও বোধহয় দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কথা গুলো শুনছে।এই সুযোগে আমিও কিছু বলে ফেলি।

তাই আমিও বললাম,

– আমি এরেঞ্জ মেরেজ করেছি ঠিকই। কিন্তু আমিও তুলিকে খুব ভালোবাসি।কিন্তু তুলি সেটা কোনো ভাবেই বুঝতে পারছে না।অফিস থেকে ফেরার সময় তুলির জন্য ভালোবেসে কত কিছু নিয়ে আসি কিন্তু সে কোনো পাত্তাই দেয় না আমাকে।এমনকি সে যখন ঘুমিয়ে পরে তখন আমি আধ শুয়া অবস্থায় তুলির গালের কালো তিলের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকি।কিন্তু তাকে কখনও বুঝতেও দেই নি।

আমি ভাবলাম, তুলিও বোধহয় নিতুর মতো দরজার ওপাশ থেকে আমার কাছে ছুটে আসবে কথাগুলো শুনে।এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে এরপর আমি হাত বাড়াবো সে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। 

কিন্তু দুই মিনিট অপেক্ষা করার পরও এমন কিছুই ঘটলো না।

আমি নিতুকে বললাম,

– তুলি কোথায়?

– সে তো লুডু খেলছে।কিছুক্ষণবপর আমরা কুতকুত খেলবো।

– তাহলে আমি এতক্ষন এই কথাগুলো কা কে শুনালাম?

 (চলবে…)

© খাদেমুল আলম মিঠুন

অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৬

#মিহুর_সংসার

#পর্বঃ৬

আমি ভাবলাম, তুলিও বোধহয় নিতুর মতো দরজার ওপাশ থেকে আমার কাছে ছুটে আসবে কথাগুলো শুনে।এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে এরপর আমি হাত বাড়াবো সে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। 

কিন্তু দুই মিনিট অপেক্ষা করার পরও এমন কিছুই ঘটলো না।

আমি নিতুকে বললাম,

– তুলি কোথায়?

– সে তো লুডু খেলছে।কিছুক্ষণ পর আমরা কুতকুত খেলবো।

– তাহলে আমি এতক্ষন এই কথাগুলো কা কে শুনালাম?

আমার কথা শুনে রুমে থাকা সবাই একসাথে হাসতে শুরু করলো।

তাদের হাসির শব্দে আমার কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল।

হাসি থামিয়ে নিতু ফরহাদকে বলল,

– চলো, আমরা দুজন হোটেলের ছাদে যাই।সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দেই।

ফরহাদ বলল,

– এতো রাতে ছাদে যাওয়া কি ঠিক হবে?

– এখন না গেলেও একটু পরে তো সবার-ই যেতে হবে।

আমি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

– সবার যেতে হবে মানে?

– কিছুক্ষণ পর তো কুতকুত টুর্মামেন্ট শুরু হবে ছাদে।হোটেল ম্যানেজমেন্টকে আগে বলে দিয়েছিলাম আমরা।তারা প্রায় সবকিছু আয়োজন করে ফেলেছে।আপনারাও ইচ্ছা করলে খেলতে পারবেন আমাদের সাথে।এটা তো গার্লস স্কুল না যে শুধু আমরা মেয়েরাই খেলবো।এই হোটেলে নারী-পুরুষ সবারই সমান অধিকার।

আমি বললাম,

– সেই অধিকারের কোনো দরকার নেই যেটা দিয়ে আমরা কুতকাত খেলতে পারবো।আমরা এখন একটু শান্তিতে ঘুমাবো।

আমার কথা শুনে নিতু চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

নিতু যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ফরহাদ বলল,

– চলেন ভাই, কুতকুত না খেললেও ছাদে গিয়ে তাদের খেলা উপভোগ করি।আগে তো কত কষ্ট করে নৃত্য দেখেছিলাম আর এখন তো তারা নিজেরাই দাওয়াত দিয়ে গেল খেলা দেখার জন্য।আমরা চাইলে কিন্তু নিজেরাও খেলতে পারি।অনেক মজা হবে ভাইয়েরা।

আমি বললাম,

– ভাই আপনার কি ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নাই?

এত অপমানের পর ও আপনি ছাদে যাবেন কুতকুত খেলা দেখতে?

– দেখতে যাবো না মিহু ভাই, খেলতে যাবো।ছোটবেলা যেই দুই-চারটা বিষয়ে ট্যালেন্ট ছিল এরমধ্যে কুতকুত খেলা অন্যতম।এমনকি আমার সাথে কুতকুত খেলে কোনো ছেলে তো দূরের কথা, মেয়েরাও পারতো না।

– তাহলে আপনি খেলে আসুন ভাই।আমার এই রকম কোনো ট্যালেন্ট নেই দেখানোর মতো।

এরপর ফরহাদ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

– কেউ গেলে আমার সাথে যেতে পারেন।না খেললেও আমাকে উৎসাহ দিতে পারেন।

রিমা নামের মেয়েটার বর ফরহাদের কথায় সাড়া দিয়ে ছাদে চলে গেল খেলা দেখতে।

আমরা বাকি চারজন বিছানায় শুয়ে রইলাম।

রাত বারোটার দিকে হঠাৎ ফরহাদ আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললেন,

– মিহু ভাই, উঠেন তাড়াতাড়ি। আপনার জন্য সুখবর আছে একটা।

আমি আধ ঘুমে থাকা অবস্থায় জিজ্ঞেস করলাম,

– এত রাতে চেঁচামেচি করছেন কেন ভাই?

– ভাই, তুলি ভাবি তো কুতকুত খেলায় প্রথম হয়েছে।হোটেল ম্যানেজম্যান্ট এর পক্ষ থেকে আপনাকে ডাকা হচ্ছে।যারা বিজয়ী হয়েছে তাদের স্বামীরা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিবে।

আমি তার কথায় গুরুত্ব না নিয়ে বললাম,

– বিরক্ত করবেন না তো ভাই আমাকে একটু ঘুমাতে দিন।

এক প্রকার জোড়াজুড়ি করেই সবাই মিলে আমাকে ছাদে তুলে ফেললো।

উপস্থাপক আমাকে দেখে বলল,

– আপনিই কি মিহাদ সাহেব?

– জ্বি।

– আরে স্যার, আপনার স্ত্রী তো কুতকুত, লুডু দুই খেলাতেই প্রথম হয়েছে।কি ভাগ্য আপনার, খুব ভালো একটা বউ পেয়েছেন।

আমি মনে মনে বললাম,

“যে মেয়ে আমার জীবন নিয়ে এত সুন্দর করে ছিনিমিনি খেলতে পারে তার পক্ষে কুতকুত আর লুডু এইসব কোনো বিষয়ই না।”

এরপর তিনি বললেন,

” এবার মঞ্চে আসছে লুডু আর কুতকুত উভয় খেলার বিজয়ী তুলি।তার হাতে পুরস্কার তুলে দিবেন তার সবচেয়ে প্রিয়জন, কাছের মানুষ মিহাদ হোসেন।সম্পর্কে উনারা স্বামী-স্ত্রী।

আমি হাসি মুখে তুলির হাতে পুরস্কার দিয়ে বললাম,

– খুব ভালো খেলেছো।জীবনে কুতকুত খেলে বহুদূর যাও।

উপস্থাপক বলল,

– তুলি আপু, আপনি যদি নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করতেন।এত ভালো কুতকুত খেলা কার কাছ থেকে শিখেছিলেন?

তুলি হাসিমুখে বলল,

– ধন্যবাদ আপনাকে।সত্যি বলতে আমি হাতে কলমে কারো কাছ থেকে কুতকুত খেলা শিখিনি। কুতকুত খেলার জন্য শৌখিন একটা মন দরকার।যার ভিতরে শৌখিন মন নেই তার দ্বারা কুতকুত খেলা সম্ভব না।

– আর লুডু খেলা নিয়ে যদি কিছু বললেন?

– আমাদের দেশে সবচেয়ে মজার খেলা হচ্ছে লুডু।কিন্তু এই খেলা তার ন্যায্য সম্মান কোনোভাবেই পাচ্ছে না।অনেকেই লুডু খেলাকে ছোট চোখে দেখেন।কিন্তু লুডু খেলা আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।লুডু খেলা আমাদের ধৈর্য্যশীল হতে শিখায়, জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত যে আমাদের লড়াই করে যেতে হবে সেই শিক্ষাটাও আমরা এই লুডু খেলা থেকে পেয়ে থাকি।আবার মাঝেমধ্যে অনেক চেষ্টা করেও আমরা সফল হতে পারি না, ভাগ্যের উপর আমরা সবাই নির্ভরশীল। এই বিষয়টাও কিন্তু এই লুডু খেলার মাধ্যমেই বুঝতে পারি।

– খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।আপনি আরও বহুদূর এগিয়ে যান, আমরা সেই প্রত্যাশা করি।

এরপর উপস্থাপন আমার কাছে এসে বললেন,

– আপনার স্ত্রীর যে এতো অর্জন ওগুলো কীভাবে দেখছেন?

– খুব ভালো ভাবেই দেখছি।আমি ভাবছি আমাদের বাসাতেও তার জন্য কুতকুত খেলার আয়োজন করবো মাঝেমধ্যে।আর কেউ তার সাথে লুডু না খেললেও আমি হেরে গিয়ে বারবার তাকে জিতিয়ে দিবো।স্বামী হিসেবে যতটা সাপোর্ট দেওয়া সরকার ঠিক ততটাই দিবো।

– বাংলার সব ঘরে ঘরে এমন স্বামীর খুব প্রয়োজন।আপনাদের দুজনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন। 

এরপর রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলাম।এভাবেই যেতে লাগলো কক্সবাজারের ঘুরাঘুরি।কক্সবাজার তিনদিন থেকে পরের তিনদিন সাজেক কাটালাম।

যতটা আশা নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম ঠিক ততটাই হতাশ হয়ে ফিরে আসলাম বাসায়।

তবে এই সাতটা দিন আমরা ছয়জন স্বামীও খুব মজা করেছি।একসাথে অনেক ঘুরাঘুরি করেছি, রাতে বিরহের গান গেয়েছি, সকালে উঠে আবার স্ত্রীদের দিকে নজর রেখেছি।

আমদের দেখে মনে হয়েছিল,

” কয়েকটা স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের শিক্ষাসফরে আনা হয়েছে।এখানে শিক্ষার্থী হচ্ছে স্ত্রীরা আর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাদের।ঠিকভাবে সবকিছু করছে কিনা এই সব খেয়াল রাখা-ই আমাদের দায়িত্ব।

শেষমেশ সবকিছুর ভালোভাবেই অবসান ঘটিয়ে সাতদিন পর বাসায় চলে আসলাম।

বাড়ি থেকে বাবা- মা ও তাদের কাজকর্ম শেষ করে ফিরে এসেছেন।

বাসা আগের মতোই জমজমাট। আগে যেভাবে দিনকাল চলতো এখনও ঠিক সেই ভাবেই দিনকাল চলছে। 

এভাবে আরও ছয় মাসের মতো কেটে গেলো আমার সংসার জীবন।

এখনও তুলি বসে বসে বাচ্চাদের মতো কার্টুন দেখে,কখনও ইমোশনাল কিছু দেখে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে।

এখন আমারও অভ্যাস হয়ে গেছে এসব কিছু দেখতে দেখতে।আমি এখনবার তেমন কিছু বলি না এসব দেখে।শুধু পরিবর্তনের মধ্যে একটা বিষয়ই হয়েছে।সেটা হলো আগে মন খারাপ থাকলে তুলি একা একা কাঁদতো আর এখন মন খারাপ হলে আমার বুকে,কাঁধে মাথা রেখে কাঁদে।

আমিও বাচ্চাদের মতো ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিই।

একদিন সকালে অফিস যাবো কিন্তু উঠে দেখি বাসায় কোনো খাবার নেই।

অথচ আম্মা আর তুলি দুজনই বাসাতে রয়েছে।

আমি আর আব্বা দুইজনই টেবিলে বসে রয়েছি কিন্তু কেউ আমাদের খেয়াল করছে না।

তুলিকে হাঁটতে দেখে বললাম,

– নাস্তা আনো, অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

সে সোজাসাপ্টা বলে দিলো,

– আজকে নাস্তা নেই।না খেয়ে অফিসে চলে যাও।একদিন না খেয়ে থাকলে তেমন কিছুই হবে না।

– সকালে তো দেখলাম তুমি আর মা দুইজনে মিলে নাস্তা তৈরি করছিলে?

ঐসব নাস্তা গেলো কোথায়? 

– সেগুলো সব শেষ।

– তোমরা দুজনেই সব শেষ করে দিলে।আমাদের জন্য তো কিছু রাখতেও পারতে।

– আমরা কিচ্ছু খাই নি। 

– তাহলে কে খেয়েছে?

– সকালে একটা ফকির এসে বলল,

” আম্মা দুইদিন ধরে কিছু খাই না।বাসায় কিছু খাওয়ুন হইবো।ফকিরটা এতো মায়া দিয়ে আম্মা ডাকটা দিলো যে নিজেকে সামলাতে পারলাম না।এভাবে কেউ কোনোদিন ডাকে নি তো।এরপর আম্মাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম ফকিরের বিষয়ে।

– তারপর?

– দুজনে মিলে নাস্তার সাথে পোলাও মাংস রান্না করে ফকিরটাকে সব দিয়ে দিয়েছি।তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন।এই জন্য সব কিছু বেশি বেশি করেই দিয়েছি যেন দুই তিনদিন ধরে খেতে পারে।

তুলির কথা শুনে পাশে বসে থাকা বাবা বলল,

– বাহ! খুব ভালো করেছো।নিজেদের জন্য কিছুই না রেখে সব কিছু ফকিরকে দিয়ে দিলে।তোমাদের বউ-শাশুড়িকে তো যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল দেওয়া দরকার। 

বাবার কথা শুনে তুলি রুম থেকে চলে গেল।

আমি বললাম,

– তাহলে আর টেবিলে বসে থেকে কোনো লাভ নেই বাবা।চল, উঠে পরি।

বাবা আমাকে ধমক দিয়ে বলল,

– এই জন্যই বিয়ে করার আগে বলেছিলাম তোর মায়ের পছন্দে কখনও বিয়ে করিস না।নিজে দেখে শুনে বিয়ে কর।তোর মা নিজে যেমন জন দরদী সে দেখে শুনে নিজেও একটা তেমন মেয়েই বাসায় এনেছে।

– মাকে তো এরকম করতে কখনো দেখিনি।

– আরে তখন তো তোর জন্মই হয় নি।দেখবি কি করে?

– ও, তাহলে প্রথম প্রথম মা ও তুলির মতো এই রকম ইমোশনাল  ছিল?

-হুম, হুবুহু কার্বন কপি।

– তাহলে তুলিও বোধহয় কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।

– হলে তো ভালোই।তবে বাসায় কিন্তু আমি সেই পঁচিশ বছর আগের ফিল পাচ্ছি।খুব ভালোও লাগছে আবার না খেতে পেরে পেটটা কেমন যেন করছে।

– চলো, হোটেল থেকে খেয়ে আসি বাবা।

– চল।খেতে তো হবেই।

– আচ্ছা বাবা, মা ও কি তুলির মতো রাগ করে বাপের বাড়িতে চলে যেতো।

– মাসে দুই তিনবার তো যেতোই।তবে বেশিক্ষণ থাকতে পারতো না।কারণ তোর মায়ের হাতের রান্না ছাড়া আমি বাইরের কিছু খেতে পারতাম না।তাই আমার কষ্ট হবে ভেবে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারতো না।

বাবার কথা শুনে বেশ ভালোই সান্ত্বনা পেলাম।তাহলে তুলিও আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয়ে যাবে।

বিয়ের দুই বছর হয়ে গেছে।তুলির একটা মেয়ে হবে।আট মাসের মতো হয়ে গেছে।

কিন্তু এখনও তুলির মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

ঠিক মতো খাচ্ছে না, সময় করে ঘুমাচ্ছে না।ডাক্তারের দেওয়া কোনো নিয়মই মানছে না।

আমি যখন বলি সময় মতো খাবার খেতে, ঘুমাতে,বিশ্রাম নিতে তখন তার একটাই জবাব,

” আমার শরীর নিয়ে কারো ভাবতে হবে না।আমি তো জানি কীভাবে চলতে হবে।”

মা’কে ফোন দিয়ে যখন জিজ্ঞেস করি তুলি খেয়েছে কিনা তখন তিনি বলেন,

“আমি তো বলে আসলাম খেতে।”

কখনও মা নিজেই মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন।

কখনও বাবা ধমক দিয়ে খেতে বলছেন।কিন্তু  সে আগের মতোই জীবনযাপন করছে।

 (চলবে…)

© খাদেমুল আলম মিঠুন

অভিমানী বউ এর ভালোবাসার গল্প মিহুর সংসার পর্ব ৭

#মিহুর_সংসার

#পর্বঃ৭ (শেষ পর্ব)

মা’কে ফোন দিয়ে যখন জিজ্ঞেস করি তুলি খেয়েছে কিনা তখন তিনি বলেন,

“আমি তো বলে আসলাম খেতে।”

কখনও মা নিজেই মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন।

কখনও বাবা ধমক দিয়ে খেতে বলছেন।কিন্তু  সে আগের মতোই জীবনযাপন করছে।

তুলিকে দেখে কোনোভাবেই সিরিয়াস মনে হচ্ছে না, অথচ এই সময়টাতে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হয়।

প্রতিদিন অফিস থেকে আসার পর একই কথা শুনতে হয়,

” সারাদিনে মাত্র একবার খাবার খেয়েছে তুলি।”

কিছু বললে জবাব দেয়,

“কিছুই ভালো লাগে না।”

আজকে অফিস থেকে আসার পর দেখলাম বাসায় নতুন এক যন্ত্রনার আমদানি হয়েছে।তুলি বাসায় একটা বিড়াল পোষা শুরু করে দিয়েছে।

রুমে ঢুকে দেখি তুলি নিজে খাবার না খেয়ে বিড়ালকে খাওয়াচ্ছে।

আমি পাশে গিয়ে বললাম,

– এখন কি এসব বিড়াল পোষার সময়?

বিড়াল তো পরেও পোষা যাবে।এই সব বিড়ালের যত্ন না নিয়ে নিজের যত্ন নাও।

আমার কথা শুনে তুলি উত্তেজিত হয়ে বলল,

– আপনি এটাকে বিড়াল কেন বললেন?

 আমি আবার বিড়ালটার দিকে ভালো করে তাকালাম।কোনোভাবেই তো এটাকে বিড়াল ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছে না।

– কেনো?

এটা কি বিড়াল না?

– আপনি কি মানুষ না?

– অবশ্যই আমি মানুষ।

– তাই বলে কি আপনাকে মানুষ বলে কেউ ডাকে?

কখনও কি কেউ আপনাকে ডেকেছে যে,

“এই মানুষ এদিকে আসেন?”

– না।তুমি এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো, এই সামান্য বিষয়ে।এখন থেকে কথা কম বলার চেষ্টা করবে।

– সারাদিন তো একা একাই শুয়ে থাকি,এভাবে কতক্ষণ থাকা যায়।আগের মতো টিভি দেখতেও ভালো লাগে না,কাঁদতেও ভালো লাগে না, খেতেও ভালো লাগে না।মোটকথা কিছুই ভালো লাগে না।

আসল কথা বলতেই তো ভুলে গেলাম।

– কি কথা?

– আপনার যেমন একটা নাম আছে তেমনি তারও একটা নাম রেখেছি। আপনার নাম মিহাদ হোসেন।আদর করে সবাই মিহু ডাকে।

আপনার নামের সাথে মিল রেখে ওর নাম রেখেছি।

ওর নাম কি জানেন?

– না।

– ওর নাম মিনু।খুব সুন্দর না?

এত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো যে সুন্দর কিনা এখন যদি সুন্দর ছাড়া অন্য কিছু বলি,

মূহুর্তের মধ্যেই মন খারাপ করে বসে থাকবে।

অবশ্য মিনু নামটাও খুব সুন্দর।

আমি বললাম,

– বাহ! খুব সুন্দর।নামের সাথে বিড়ালটার চেহারার অনেক মিল আছে।

তুলি চোখ বড় বড় করে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

–  আবার বিড়াল ডাকলেন তাকে?

– আর ডাকবো না।

– এরপর থেকে তাকে বিড়াল ডাকলে আপনাকেও ছাগল ডাকবো।অবশ্য আপনি এমনিতেও ছাগল স্বভাবের।একদিন তো কাঁঠাল পাতা আর ঘাস চেয়েছিলেন খাওয়ার জন্য, আমি তখন চা দিয়ে চলে গিয়েছিলাম।এরপর একে বিড়াল ডেকে চা চাইলেও আমি আপনাকে ঘাস, লতাপাতা দিয়ে চলে যাবো।

আমি তার সাথে আর তর্কে জড়ালাম না।চুপচাপ খাটের একপাশে শুয়ে রইলাম।

তুলি এখন নিজের থেকে বিড়ালটার খেয়াল বেশি রাখছে।নিজে না খেলেও বিড়ালটাকে আদর করে তিনবেলা খাওয়াচ্ছে।নিজে অপরিস্কার থাকলেও বিড়ালটাকে পরিস্কার রাখে।

বিড়ালটাও কয়েকদিনে বেশ ভালো মোটাতাজা হয়েছে।

আজকে তুলি আমাকে ফোন করে বলল,

আসার সময় যেন বার্গার, স্যান্ডউইচ নিয়ে আসি।

আমি ভাবলাম,

মেয়েটার বোধহয় মুখে এখন রুচি এসেছে।অনেকদিন ধরেই তো মুখে রুচি নেই।

বাসায় গিয়ে যখন তার হাতে বার্গার আর স্যান্ডউইচ দুইটা দিলাম সে সাথে সাথেই আমার চোখের সামনে প্যাকেট খুলে বিড়ালটাকে দিয়ে দিলো।

বিড়ালটা খাচ্ছে আর তুলি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

এই দৃশ্য দেখে এখন আমাকে নিজের কাছে নিজেকেই ছাগল মনে হচ্ছে।আগে জানলে কখনও এগুলো আনতাম না।

আমি বললাম,

– তুমি কিছু খাবে না?

– না, আমার এগুলো খেলে বমি আসে।মুখে নিতে পারি না।

– নিজে তো না খেয়ে থাকতে পারো কিন্তু শরীরের ভিতর যে একজন বড় হচ্ছে সেদিকে কি খেয়াল রাখতে হবে না?

সে তো পুরোপুরি তোমার উপর নির্ভলশীল।ওর তো ক্ষুধা লাগে।

তুলি আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলল,

– আমার যেহেতু না খেয়ে থাকলে সমস্যা হয় না, তারও নিশ্চয়ই হচ্ছে না।সে তো আমারই মেয়ে।

– তার সমস্যা হচ্ছে।সে মনে মনে কি বলছে জানো?

-কি?

– আমার মা’টা খুব নিষ্ঠুর।সে কি জানে না, সে না খেলে আমি সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবো না?

– এমন কথা তো কখনও বলে নি।আমার সাথে তো ওর নিয়মিত কথা হয়।সে খুব ভালো আছে।

– আমার কথা কিছু বলে না?

– বলে তো।কালকেও বলল, আমার বাবাটা এতো বোকা কেন?

আমি পৃথিবীতে আসলে তাকে চালাক বানাবো।

– তাহলে এখনই মা-মেয়ে দুজনে মিলে আমার নামে বদনাম দেওয়া শুরু করে দিয়েছো।

এবার তুলি কোনো কথা না বলে বিড়ালটার মাথায় আবার আদর করতে লাগলো।

পরের দিন অফিস থেকে আসার সময় আবার দুইটা বার্গার আর স্যান্ডউইচ নিয়ে আসলাম।

তুলি কে দিয়ে বললাম,

– মিনুর জন্য খাবার এনেছি।কিন্তু শর্ত আছে।

– কি শর্ত?

– সে যতটুকু খাবে তোমাকেও ততটুকু খেতে হবে।শর্তে রাজি থাকলে দিবো।

– মিনুটা আজকে সারাদিন কিছু খায় নি।আমার কাছে দেন দেখি কিছু খাওয়াতে পারি কিনা?

– তুমি মিনুকে খাওয়াও আর আমি তোমাকে খাওয়া-ই।

প্রথমে খেতে না চাইলেও পরে মিনুর জন্য কষ্ট করে হলেও খাওয়া শুরু করলো তুলি। 

খেতে খেতে বলল,

– আমি মিনুকে বাসায় এনেছি কেন জানেন?

– না।

– আগে কখনও কাউকে তো সেবাযত্ন করি নি।কিন্তু এখন তো আমাদের একটা মেয়ে হবে। তাই মিনুর সেবাযত্ন করে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছি।মিনুও নিষ্পাপ আমাদের মেয়েও নিষ্পাপ।

আমি তুলির মুখে খাবার দিয়ে বললাম,

– তুমি তো খুব চালাক মেয়ে।আমি তো এভাবে কখনও ভাবি নি।

– কিন্তু আমাদের মেয়ের নাম কি রাখবো বুঝে উঠতে পারছি না।আপনি কি নাম নিয়ে কিছু ভেবেছেন?

– নাম নিয়ে পরেও ভাবা যাবে।আগে সে সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আসুক।এরপর যত ইচ্ছা নাম রাখবো, যখন যেটা ডাকতে ইচ্ছে করবে তখন সেটাই ডাকবো।

– আমার তো একেক সময় একেক নাম ভালো লাগে।যখন মিনা কার্টুন দেখি তখন মনে হয়ে আমাদের মেয়ে মিনার মতো হবে।ওর নাম মিনা রাখবো।যখন অন্য কোনো কার্টুন ভালো লাগে তখন মনে হয় সেটাই রাখি।নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না।

– নাম নিয়ে এতো অস্থির হতে হবে না।তুমি আগে খাওয়া শেষ করো।

এরমধ্যে একদিন অফিসের কাজে আমি খুব ব্যস্ত।

তুলি ফোন দিয়ে বলল,

– ডাকনাম রেখে ফেলেছি, আমাদের মেয়ের।

– কি নাম রাখলে শুনি?

– মিলি। মিহু থেকে মি আর তুলি থেকে লি।দুইটা মিলে মিলি।

তার যুক্তি শুনে আমি কিছুক্ষণ হাসলাম।নাম নিয়ে সারাদিন চিন্তা করতে করতে এখন পাগল হয়ে যাওয়া শুধু বাকি এই মেয়ের। 

শেষ কয়েকটা দিন তুলির খুব কষ্ট হলো।তার যন্ত্রনায় কাতরানো দেখে আমার নিজের চোখেই পানি চলে আসে মাঝেমধ্যে।কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুমাতেও পারে না।মাঝেমধ্যে যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে কান্না শুরু করে।এখন কান্নার মধ্যে আর ন্যাকামো ভাব নেই।

আমি শুধু ভাবি,

” যেই মেয়ে কাল্পনিক মুভি দেখে সারাদিন কাঁদতো এখন এই নিজের যন্ত্রনাগুলো কীভাবে সহ্য করছে?

কোনো সন্তান যদি তার মায়ের প্রসব বেদনার কান্না শুনতে পেতো তাহলে সে কখনও তার মায়ের সাথে উচু গলায় কথা বলতো না।”

আমি ছেলে হয়ে এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারলাম আজ যখন নিজে সন্তানের বাবা হলাম।তুলিকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো।

কয়েকদিন ধরে তার মুখের দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।এত যন্ত্রনা সহ্য করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা শুধু মেয়েদেরই দিয়েছেন।

এরপর ডাক্তার এসে যখন জানালো,

মা-মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছেন তখন অনেকটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম।তবুও নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত মনের মধ্যে শান্তি পাচ্ছিলাম না।

কিছুক্ষণ পর আম্মা মেয়েটিকে নিয়ে আমার হাতে দিয়ে বলল,

” তোর মেয়ে,কোলে তুলে নে।”

আমি মেয়েটিকে কোলে নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম,

– তুলি কেমন আছে মা?

– সেও ভালো আছে।

মেয়েকে কোলে নিয়ে নিজের মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে।এর আগেও অনেক বাচ্চা কোলে নিয়েছি কিন্তু এমন অনুভূতি হয়নি।

তুলির জ্ঞান ফিরলে তার পাশে মেয়েটিকে রাখা হলো।কিছুক্ষণ আগেও সে যন্ত্রনাই কাতরাচ্ছিল কিন্তু এখন মেয়ের সাথে শুয়ে খেলছে,মাথা হাতিয়ে দিচ্ছে।এখনও তার শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ না, শরীরে অনেক কাটাছেঁড়া করা হয়েছে।কিন্তু এসব যন্ত্রনা তার কাছে কিছুই মনে হচ্ছে না।

আমি শুধু দূর থেকে তাকিয়ে মা-মেয়ের খুঁনসুটি উপভোগ করে চলেছি।

এরপর নার্স এসে আমাকে বলল,

বার্থ সার্টিফিকেট এর জন্য কিছু তথ্য লাগবে।

আপনি সন্তানের কে হোন?

-বাবা।

মায়ের নাম কি?

– তুলি।

-বাবার নাম

– মিহাদ হোসেন।

– মেয়ের কোনো নাম ঠিক করে রেখেছেন?

– জি। মেয়ের নাম মিলি।

মিলির যখন এক বছর বয়স তখন বুঝতে পারলাম এই মেয়ে তার মায়ের মতো হয়েছে।

মা সারাদিন কার্টুন দেখে, সাথে মেয়েও।মা যখন কার্টুন দেখে হাসে মিলিও তখন হিহি করে হাসে, মায়ের মন খারাপ থাকলে মিলিরও মন খারাপ।কিন্তু মিলির মন ভালো রাখার জন্য বাসায় আরেক জন তো আছেই, তার নাম মিনু। মিলির মন খারাপ থাকলেই সে তার সাথে খেলা শুরু করে দেয়।

মিলি এখন শব্দ করে ডাকতে শিখে গেছে।সুন্দর করে মা আর মিনু ডাকতে পারে।বাবা ডাকার আশে-পাশেও নেই সে।তবে ইদানীং মায়ের সাথে কার্টুন দেখে হালুম, শিকু, গোপাল, মিনা ডাকার চেষ্টা করে।

দুই বছর পর খেয়াল করলাম মিলিকে একটু ধমক দিয়ে কথা বললে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে আবার বাসায় ফকির আসলে হাতের কাছে যা পায় তাই দেওয়া শুরু করে দেয়।ফকিরের পায়ে জুতা না থাকলে বাসার সবার জুতা দান করে দেয়।

এখন আমি এগুলো দেখে আর বিরক্ত বোধ করি না।কারন বিয়ের পর তুলির এসব কান্ড দেখে দেখে এখন আমার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে।

কিন্তু মেয়ের এসব কান্ড দেখে তুলি এখন সহ্য করতে পারে না।

মাঝেমধ্যে যখন মিলিকে ধমক দিতে আসে তখন আমি বলি,

” খবরদার আমার মেয়েকে ধমক দিবে না।আগে তোমার এসব যন্ত্রনা আমি চোখ,মুখ বুজে সহ্য করেছি।তোমাকেও এখন এসব সহ্য করতে হবে।

বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছেন,

” প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে।”

তুলি আমার কথা শুনে শুধু বলে,

” জীবনে সুখ বলতে জিনিসটার ছোঁয়া আমি কখনও পেলাম না।আগে একজন যন্ত্রনা দিতো এখন তার সাথে আরেক জন যুক্ত হয়েছে।”

আমি কেবল হাসি আর মনে মনে ভাবি,

” তুলি এখন সংসারের দায়িত্ব ঠিকই নিয়েছে কিন্তু মিলি তার মায়ের আগের রূপে ফিরে এসেছে।মেয়ের সারাদিনের কর্মকান্ড দেখে আমি বুঝতে পারি ছোট সময় তুলি কেমন ছিল সেই সাথে বড় হয়ে মিলি কেমন হবে সেটাও এখন আমি জেনে গেছি।”

 (সমাপ্ত)

© খাদেমুল আলম মিঠুন

Tags: bangla short story

Continue Reading

Previous: নতুন বিয়ের গল্প
Next: সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে কিছু কথা

Related Stories

লোডশেডিং নিয়ে স্ট্যাটাস লোডশেডিং নিয়ে ফানি পোস্ট
1 min read
  • Golpo
  • Kobita
  • love story link
  • ধারাবাহিক গল্প লিংক
  • রানিং গল্প
  • লিংক+রিভিউ
  • হাসির গল্প

লোডশেডিং নিয়ে স্ট্যাটাস

03/06/2023
গরম নিয়ে মজার জোকস বিদ্যুৎ নিয়ে ফানি স্টাটাস
1 min read
  • Golpo
  • ধারাবাহিক গল্প লিংক
  • রানিং গল্প
  • হাসির গল্প

গরম নিয়ে মজার জোকস

03/06/2023
ব্রেকাপ ভালোবাসার গল্প ব্রেকআপ হওয়ার গল্প পিক
1 min read
  • Golpo
  • sad golper link
  • লিংক+রিভিউ

ব্রেকাপ ভালোবাসার গল্প

30/05/2023

Recent Posts

  • লোডশেডিং নিয়ে স্ট্যাটাস
  • গরম নিয়ে মজার জোকস
  • অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ২১
  • মায়াবতী পর্ব ৩৭
  • মায়াবতী পর্ব ৩৬

Archives

  • June 2023
  • May 2023
  • April 2023
  • March 2023
  • February 2023
  • January 2023
  • December 2022
  • November 2022
  • October 2022
  • September 2022
  • August 2022
  • July 2022
  • June 2022
  • January 2022
  • December 2021
  • October 2021
  • September 2021
  • August 2021
  • July 2021
  • June 2021

Categories

  • Golpo
  • Kobita
  • love story link
  • More Than Love
  • Picture Status
  • sad golper link
  • Uncategorized
  • অতৃপ্ত আত্মা
  • অনির কলমে আদ্রিয়ান
  • অন্তর্হিত কালকূট
  • অন্যরকম তুমি
  • অন্যরকম বউ
  • অরোনী তোমার জন্য
  • আত্মা
  • আমার তুমি
  • আমার তুমি সিজন ২
  • আমি পদ্মজা
  • আরশিযুগল প্রেম
  • ইট পাটকেল
  • ইসলামিক গল্প
  • উইল ইউ ম্যারি মি?
  • উপন্যাস
  • এক কাপ চা
  • এক প্রহর ভালোবাসা
  • এক মুঠো কাঁচের চুরি
  • এক মুঠো রোদ
  • এক সমুদ্র প্রেম
  • একটি ডিভোর্স লেটার
  • একটি রাতের গল্প
  • ওহে প্রিয়
  • কাঞ্চাসোনা
  • কালো বউ
  • কিছু জোড়া শালিকের গল্প
  • কোথাও কেউ ভালো নেই
  • ক্যান্সার যুদ্ধ
  • ক্যামেলিয়া
  • খুন
  • ঘেউলের সংসার
  • চার আনার জীবন
  • চিঠি
  • চিত্ত চিরে চৈত্রমাস
  • চেম্বার কথন
  • জলনূপুর
  • জানা অজানা
  • জীবন যখন যেমন
  • জীবনি
  • জ্বিন রহস্য
  • টু ফাইভ এইট জিরো
  • ডার্ক সাইট অফ এ বিউটিফুল লেডি
  • ডিভোর্স
  • ডিভোর্স পেপার
  • তিনি আমার সৎ মা
  • তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
  • থ্রিলার নভেম্বর রেইন
  • দাম্পত্য সুখ
  • দেহ
  • দ্বিতীয় পুরুষ
  • দ্যা ব্লাক বুক
  • ধারাবাহিক গল্প লিংক
  • নবনী
  • নীল ক্যাফের গল্প গ্রুপ
  • নীল চিরকুট
  • নীলার শাশুড়ী
  • নয়নে লাগিল নেশা
  • পরগাছা
  • পরবাসী মেঘ
  • পাপ
  • পিশাচ দেবী
  • পিশাচ পুরুষ
  • পুকুর রহস্য
  • পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা
  • প্রণয়ের আসক্তি
  • প্রতিশোধ
  • প্রাণি জগত
  • প্রিয়োসিনী
  • প্রেমাতাল
  • প্রেমিক অপ্রেমিকের গল্প
  • ফিরতি উপহার
  • ফুলসজ্জা
  • ফ্রিজ
  • বজ্জাত বউ
  • বন্ধু
  • বিচ্ছেদ
  • বিমূর্ত প্রতিশোধ
  • বিশ্বাস অবিশ্বাস
  • বিয়ের চাপ
  • বৃষ্টিময় প্রেম গল্প
  • বৃহন্নলার ডিভোর্স
  • বেপরোয়া ভালোবাসা
  • ভাড়াটিয়া
  • ভাবির সংসার
  • ভালোবাসা রং বদলায়
  • ভুতের গল্প
  • ভ্যাম্পায়ার বর
  • ভয়ংকর নির্জন
  • ভয়ঙ্কর সেই মেয়েটি
  • মায়াবতী
  • মুভি
  • মেঘে ঢাকা আকাশ
  • মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি
  • যেদিন তুমি এসেছিলে
  • যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২
  • রানিং গল্প
  • রুম নম্বর ৯০৯
  • রূপকথা
  • রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
  • রোমান্টিক অত্যাচার
  • লিংক+রিভিউ
  • লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বিবাহ
  • লেখক
  • শিমুল ফুল
  • শিশির বিন্দু
  • শিশিরের আদ্র
  • শেষ
  • শেষ পেইজ
  • শ্রাবন আধারে তুমি
  • সঙ্কোচ
  • সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে
  • স্যার i love you
  • হাসির গল্প
  • হীরের নাকফুল ও লাল বেনারসি
  • ১৬ বছর বয়স
  • ১৮ বছর বয়স

Trending News

লোডশেডিং নিয়ে স্ট্যাটাস লোডশেডিং নিয়ে ফানি পোস্ট 1

লোডশেডিং নিয়ে স্ট্যাটাস

03/06/2023
গরম নিয়ে মজার জোকস বিদ্যুৎ নিয়ে ফানি স্টাটাস 2

গরম নিয়ে মজার জোকস

03/06/2023
অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ২১ মেহজাবিন চৌধুরী পিক 3

অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ২১

03/06/2023
মায়াবতী পর্ব ৩৭ keya payel picture 4

মায়াবতী পর্ব ৩৭

03/06/2023
মায়াবতী পর্ব ৩৬ keya payel picture 5

মায়াবতী পর্ব ৩৬

03/06/2023
জলনূপুর পর্ব ৭ 6

জলনূপুর পর্ব ৭

03/06/2023
নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৮ মেহজাবীন চৌধুরী পিক 7

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৮

03/06/2023

Categories

  • Golpo (246)
  • Kobita (37)
  • love story link (73)
  • More Than Love (18)
  • Picture Status (43)
  • sad golper link (22)
  • Uncategorized (12)
  • অতৃপ্ত আত্মা (14)
  • অনির কলমে আদ্রিয়ান (33)
  • অন্তর্হিত কালকূট (21)
  • অন্যরকম তুমি (58)
  • অন্যরকম বউ (6)
  • অরোনী তোমার জন্য (20)
  • আত্মা (5)
  • আমার তুমি (44)
  • আমার তুমি সিজন ২ (56)
  • আমি পদ্মজা (93)
  • আরশিযুগল প্রেম (65)
  • ইট পাটকেল (48)
  • ইসলামিক গল্প (8)
  • উইল ইউ ম্যারি মি? (10)
  • উপন্যাস (1,584)
  • এক কাপ চা (48)
  • এক প্রহর ভালোবাসা (20)
  • এক মুঠো কাঁচের চুরি (51)
  • এক মুঠো রোদ (50)
  • এক সমুদ্র প্রেম (57)
  • একটি ডিভোর্স লেটার (4)
  • একটি রাতের গল্প (8)
  • ওহে প্রিয় (49)
  • কাঞ্চাসোনা (15)
  • কালো বউ (35)
  • কিছু জোড়া শালিকের গল্প (30)
  • কোথাও কেউ ভালো নেই (15)
  • ক্যান্সার যুদ্ধ (3)
  • ক্যামেলিয়া (36)
  • খুন (5)
  • ঘেউলের সংসার (4)
  • চার আনার জীবন (4)
  • চিঠি (1)
  • চিত্ত চিরে চৈত্রমাস (30)
  • চেম্বার কথন (45)
  • জলনূপুর (7)
  • জানা অজানা (2)
  • জীবন যখন যেমন (20)
  • জীবনি (8)
  • জ্বিন রহস্য (6)
  • টু ফাইভ এইট জিরো (4)
  • ডার্ক সাইট অফ এ বিউটিফুল লেডি (8)
  • ডিভোর্স (4)
  • ডিভোর্স পেপার (3)
  • তিনি আমার সৎ মা (8)
  • তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর (42)
  • থ্রিলার নভেম্বর রেইন (4)
  • দাম্পত্য সুখ (14)
  • দেহ (8)
  • দ্বিতীয় পুরুষ (36)
  • দ্যা ব্লাক বুক (6)
  • ধারাবাহিক গল্প লিংক (32)
  • নবনী (9)
  • নীল ক্যাফের গল্প গ্রুপ (343)
  • নীল চিরকুট (71)
  • নীলার শাশুড়ী (6)
  • নয়নে লাগিল নেশা (8)
  • পরগাছা (6)
  • পরবাসী মেঘ (4)
  • পাপ (3)
  • পিশাচ দেবী (5)
  • পিশাচ পুরুষ (11)
  • পুকুর রহস্য (4)
  • পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা (5)
  • প্রণয়ের আসক্তি (41)
  • প্রতিশোধ (3)
  • প্রাণি জগত (1)
  • প্রিয়োসিনী (29)
  • প্রেমাতাল (57)
  • প্রেমিক অপ্রেমিকের গল্প (32)
  • ফিরতি উপহার (2)
  • ফুলসজ্জা (20)
  • ফ্রিজ (15)
  • বজ্জাত বউ (45)
  • বন্ধু (5)
  • বিচ্ছেদ (20)
  • বিমূর্ত প্রতিশোধ (10)
  • বিশ্বাস অবিশ্বাস (7)
  • বিয়ের চাপ (10)
  • বৃষ্টিময় প্রেম গল্প (76)
  • বৃহন্নলার ডিভোর্স (12)
  • বেপরোয়া ভালোবাসা (50)
  • ভাড়াটিয়া (20)
  • ভাবির সংসার (59)
  • ভালোবাসা রং বদলায় (4)
  • ভুতের গল্প (17)
  • ভ্যাম্পায়ার বর (26)
  • ভয়ংকর নির্জন (5)
  • ভয়ঙ্কর সেই মেয়েটি (5)
  • মায়াবতী (38)
  • মুভি (11)
  • মেঘে ঢাকা আকাশ (16)
  • মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি (10)
  • যেদিন তুমি এসেছিলে (51)
  • যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ (46)
  • রানিং গল্প (444)
  • রুম নম্বর ৯০৯ (4)
  • রূপকথা (17)
  • রোদ শুভ্রর প্রেমকথন (63)
  • রোমান্টিক অত্যাচার (17)
  • লিংক+রিভিউ (96)
  • লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বিবাহ (4)
  • লেখক (5)
  • শিমুল ফুল (52)
  • শিশির বিন্দু (7)
  • শিশিরের আদ্র (23)
  • শেষ (3)
  • শেষ পেইজ (9)
  • শ্রাবন আধারে তুমি (22)
  • সঙ্কোচ (7)
  • সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে (8)
  • স্যার i love you (23)
  • হাসির গল্প (88)
  • হীরের নাকফুল ও লাল বেনারসি (5)
  • ১৬ বছর বয়স (44)
  • ১৮ বছর বয়স (32)

তালিকা

  • Home
  • Picture Status
  • Blog
  • Kobita
    • পৃথিবীর সেরা প্রেমের কবিতা
  • লেখক
  • লিংক+রিভিউ
    • love story link
    • sad golper link
  • রানিং গল্প 2
    • জলনূপুর
    • অন্তর্হিত কালকূট
    • সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে
    • ধারাবাহিক গল্প লিংক
    • মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি
    • এক মুঠো কাঁচের চুরি
    • নবনী
    • শেষ
    • শেষ পেইজ
    • বিমূর্ত প্রতিশোধ
    • শ্রাবন আধারে তুমি
    • লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বিবাহ
    • কোথাও কেউ ভালো নেই
    • চিত্ত চিরে চৈত্রমাস
    • পরবাসী মেঘ
    • খুন
    • ভালোবাসা রং বদলায়
    • আত্মা
  • ভুতের গল্প
  • Golpo
    • জীবনি
    • ইসলামিক গল্প
    • প্রাণি জগত
    • জানা অজানা
    • হাসির গল্প
  • উপন্যাস
    • ওহে প্রিয়
    • ডার্ক সাইট অফ এ বিউটিফুল লেডি
    • স্যার i love you
    • বজ্জাত বউ
    • কিছু জোড়া শালিকের গল্প
  • নীল ক্যাফের গল্প গ্রুপ
    • নয়নে লাগিল নেশা
    • প্রিয়োসিনী
    • চিঠি
    • বেপরোয়া ভালোবাসা
    • শিশিরের আদ্র
    • মায়াবতী

Recent Posts

  • লোডশেডিং নিয়ে স্ট্যাটাস
  • গরম নিয়ে মজার জোকস
  • অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ২১
  • মায়াবতী পর্ব ৩৭
  • মায়াবতী পর্ব ৩৬
  • Home
  • About us
  • Contact Us
  • Privacy Policy
  • নীল ক্যাফের গল্প গ্রুপ

Copyright © All rights reserved by kobitor.com