Jack The Giant Slayer বা দৈত্য হত্যাকারি।
রুপকথার গল্প কমবেশি আমরা সবাই পছন্দ করি।যদি এমন হতো পৃথিবী আর স্বর্গের মাঝে কোন এক রাজ্য থাকতো এবং তা হতো ভয়ঙ্কর সব দানবদের আবাসস্থল।মানুষের ভুলে তারা যদি নেমে আসতো পৃথিবীতে,মানুষ কি পারতো তাদের সাথে লড়াই করতে?পাড়তো কি নিজেদের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে?
বলছিলাম ২০১৩সালে মুক্তি পাওয়া মুভি jack the giant slayer এর কথা।পৃথিবীর গহীনে কোন রাজ্যে বাস করতো জ্যাক নামের এক ছেলে।কৃষক বাবার একমাত্র ছেলে ছিল জ্যাক।ছোট বেলা থেকেই জ্যাক রুপ কথার গল্প শুনতে ও পড়তে ভালবাসতো।জ্যাকের বাবা মাঝে মাঝেই তাকে রুপকথার গল্প শুনাতো।
জ্যাকের প্রিয় গল্প ছিল পৃথিবীতে দৈত্যদের নেমে আসা এবং তাদের ধ্বংস লিলা চালানো।কিভাবে তারা মানুষের উপর অত্যাচার করে দাসে পরিণত করে বা কখনো তাদের খেয়ে ফেলে তাদের রাজ্য দখল করে নেয়।
রাজা এরিকের রাজ্যে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়,শুরু হয় নানা অরাজকতা। ওখানকার মানুষ জন মনে করতে শুরু করে সৃষ্টকর্তার করুনা তাদের উপর থেকে চলে গিয়েছে।তাই ওখানকার কিছু সন্ন্যাসীরা আনুগত্য পাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে যেতে চাচ্ছিল।তারা স্বর্গের পথ খুঁজছিল,এজন্য তারা তৈরি করলো যাদুর এক বীজ। যাদুর এই বীজটি ছিল সীমের।তারা বীজটি রোপন করলো এবং তা থেকে গাছ জন্ম নিয়ে চলে গেল অদূর ওই আকাসশে।সন্ন্যাসিরা গাছ বেয়ে আকাশে গিয়ে দেখলো সেখানে রয়েছে আরেক রাজ্য।পৃথিবী ও স্বর্গের মাঝের রাজ্য দৈত্যদের রাজ্য,এর নাম গান্টউয়া।ওখানে থাকা হিংস্র দৈত্যরা গাছ বেয়ে নেমে আসল পৃথিবীর বুকে। এসে তারা রাজ্যের সম্পদ লুট করতে শুরু করলো,নানা প্রকার জিব জন্তু সহ মানুষ খেতে থাকল।
দৈত্য বশীভূত করণ
রাজা এরিক দৈত্যদের বশিভূত করতে সন্ন্যাসীদের কালো জাদু ব্যাবহারে আদেশ দিল।
তখন রাজার বাহিনী বিশাল এক দৈত্যকে মেরে ফেললো এবং দৈত্যটির বুক চিরে হৃপিণ্ড বেড় করে তার সাথে কালো জাদু মিশিয়ে তৈরি করলো এক জাদুর মকুট। রাজা এরিক এই মুকুট পড়ে সমস্ত দৈত্যকে তার দাস বানিয়ে ফেললেন এবং দৈত্যদের ফিরত পাঠালেন যেখান থেকে তারা নেমে এসেছিল।তারপর রাজার আদেশে কেটে ফেলা হলো সেই গাছ।রাজা এরিকের রাজ্যে আবার শান্তি ফিরে আসলো।মুকুট আর বীজগুলো রাজা আজীবন তার কাছেই আগলে রেখেছিল, তাই রাজার মৃত্যুর পর মুকুট আর বীজগুলো তার সাথেই দাফন করে দেয়া হয়।
এই রুপকথার গল্পটি জ্যাকদের রাজ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিল।শুধু জ্যাক নয়,ওই রাজ্যের রাজকন্যা ও রাজপুতদের ও এই গল্প শুনানো হতো।বলা হতো গল্পটি সত্য নয় তবে রাজা এরিক একসময় এই রাজ্যেই বেঁচে ছিলেন।
দশ বছর পার হয়ে যায়,জ্যাক গরীব ঘরের ছেলে তাই নানা কাজ করে তার পরিবারের ভরণ পোষণ করতে হয়।জ্যাক তাদের ঘোড়া বিক্রির জন্য শহুরের এক বাজারে যায়।ওখানে গিয়ে দেখে জনপ্রিয় এই লোকগল্প নিয়েই নাটক হচ্ছিল।নানা লোকের ভিড়ে ওখানে এক সুন্দরী মেয়েও ছিল,তার নাম ইজাবেল।ওখানে থাকা কিছু বখাটে ছেলে ইজাবেলকে উত্তক্ত করতে থাকে।জ্যাক সেখানে গিয়ে তাদের বাঁধা দেয়,এতে সে বখাটে ছেলেগুলোর হাতে মার ও খেয়ে নেয়।মার খাবার পর জ্যাক উঠে দারায়,সঙ্গে সঙ্গে সবাই হাটু গেড়ে বসে।জ্যাক অবাক হয় কেননা তাকে তো এরকম সম্মানোনা দেবার কথা না।পরে সে পিছন ফিরে দেখতে পায় রাজরক্ষী রাজকুমারী কে নিতে এসেছে।জ্যাক খুশি হয় কেননা সে রাজকুমারীকে বাঁচানোর চেস্টা করেছে।কিন্তু এরই মধ্যে জ্যাকের ঘোড়ার গাড়ি চুড়ি হয়ে যায়,সেখানে সে শুধু ঘোড়া খুঁজে পায়।
ওই রাজ্যের আরেক রাজা ছিল লর্ডরিক,আর এই লর্ডরিকের সাথেই ইজাবেলের বিয়ে দিতে চান তার বাবা।লর্ডরিক বয়সে ইজাবেলার দ্বিগুন ছিলেন,আর ছিলেন ক্ষমতা লোভী ও খারাপ মন মানুষীকতার মানুষ।লর্ডরিক লাইব্রেরীতে যায়,তখন ওখান থেকে তাড়াহুড়া করে এক সন্ন্যাসী বেড়িয়ে আসে।লর্ডরিক তার লাইব্রেরীতে যায় এবং দেখতে পায় সবকিছু এলোমেলো।লর্ডরিক দেখতে পায় ওখানে থাকা একটি বইয়ের ভিতরে লুকিয়ে রাখা বীজ নিয়ে পালিয়েছে সন্ন্যাসী।তবে সে রাজা এরিকের জাদুর মুকুট নিয়ে যেতে পারেনি।
এই বীজ আর মুকুট রাজার সাথে দাফন করা হলেও রডরিক এগুলো বেড় করে এনেছিল। হয়তো এসব নিয়ে তার কোন বিস্তর পরিকল্পনা রয়েছে।রডরিক রাজপ্রাসাদের মূখ্য দুয়ার বন্ধের এবং সেই সাথে ওই সন্ন্যাসীকে জীবিত ধরে আনার আদেশ দেয়।সন্ন্যাসীটি বুঝতে পারে রাজ্যের সবাই সতর্ক হয়ে গেছে,তাকে যে কোন সময় ধরে ফেলা হবে। ওই সময় ওখানে জ্যাক ও ছিল।সন্ন্যাসীটি জ্যাকের কাছ থেকে ঘোড়া কিনে নিতে চায়, তবে অর্থের বিনিময়ে সে তাকে ওই সীম বীজ গুলো দেয়।জ্যাক বীজ গুলো নিতে চায় না,তখন সে বলে এগুলো সাধারণ কোন বীজ নয় এগুলো অতীতের বিশেষ সময়ের পবিত্র বীজ। এই বীজগুলো পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। সন্ন্যাসীদের কাছে এই বীজগুলোর মূল্য অনেক বেশি। তবে এই বীজগুলো কোন ভাবেই পানিতে ভেজানো যাবেনা।
এই বলেই সন্ন্যাসীটি জ্যাকের ঘোড়া নিয়ে পালিয়ে যায়।কিন্তু কিছুদূর যেতেই সে আটোক হয়ে যায়। তবে সে ওই বীজগুলো কাকে দিয়েছে তা বলেনা।সে রডরিককে বলে এগুলো দিয়ে যেভুল একবার হয়েছে তা সে দ্বিতীয় বার হতে দিবেনা। সৃষ্টিকর্তা একবার মাফ করে দিয়েছেন। দ্বিতিয়বার এই ভুলের কারণে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এটা শুনে রডরিক রেগে যায় এবং সন্ন্যাসীকে মেরে ফেলে।
জ্যাক বাসায় ফেরার পর
এদিকে বীজের বিনিময়ে ঘোড়া বিক্রি করায় জ্যাকের চাচা রেগে যায়।তিনি বলেন সন্ন্যাসী বেশে থাকলেই কেউ সন্ন্যাসী হয়না, তোমাকে ঠকানো হয়েছে।তিনি আরো বলেন সন্ন্যাসীরা কাউকে লোভ দেখায় না।আর এগুলো সাধারণ শিমের বীজ,এই বলে তিনি বীজগুলোকে মাটিতে ফেলে দেন।জ্যাক দ্রুত বীজগুল কুড়িয়ে নেয়,কিন্তু একটি বীজ মেঝেতে হারিয়ে যায়।
এদিকে এজাবেল তার বাবার কাছে আসে।সে বলে তার ব্যক্তি স্বাধিনতা প্রয়োজন, সে তার নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে চায়।সে কখনোই তার বয়সের দ্বিগুন কাউকে বিয়ে করতে চায়না।সে তার জীবনকে উপভোগ করতে চায় এবং নিজের পছন্দ মতোই বিয়ে করতে চায়।সে এই মহলে বন্দী অবস্থায় তার জীবন অতিবাহিত করতে চায়না।কিন্তু তার বাবা এসবে রাজি হয়না,তিনি বলেন তোমার মা ও এমন জীবন চেয়েছিল।সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, আমি চাইনা তুমি ও আমাকে ছেড়ে চলে যাও।তুমি এই মহলেই নিরাপদ,তাই তোমাকে এই সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে।বাবার মুখে না শোনার পর এজাবেল ওই শহর থেকে ছদ্মবেশে পালিয়ে যায়। বৃষ্টির এই রাতে সে আশ্রয় খুঁজতে থাকে।এমন সময় সে একটি বাড়িতে আলো দেখতে পেয়ে সেখানে গিয়ে কড়া নাড়ে।জ্যাক দরজা খোলে এবং এজাবেলকে দেখেয় চিনে ফেলে।জ্যাক তাকে প্রশ্ন করে সে রাজপ্রাসাদ থেকে এতো দূরে এসেছে কেন? এজাবেল তখন বলে, সে প্রায়ই এমন করে,কারণ সে তার জীবনে এডভেঞ্চার খুঁজে বেড়াচ্ছে।হয়তো এভাবেই সে তা পেয়ে যাবে।
প্রবল বর্ষনের কারণে পানিতে পুরো গ্রাম তলিয়ে যায় এবং জ্যাকদের বাসার মেঝে পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়।আর মেঝেতেই পড়ে ছিল জাদুর ওই বীজ।জ্যাক এজাবেলকে ওই গল্পের বই দিয়ে বলে আপনি এখানে হয়তো কিছু এডভেঞ্চার পেতে পারেন।বইটি দেখে এজাবেল বলে সেও ছোট বেলা থেকে এই গল্পগুলো শুনে আসছে।
বৃষ্টির পানিতে বীজটি ভিজে যায় এবং তা থেকে গাছ জন্ম নিয়ে বাড়ি ভেদ করে আকাশে চলে যায়।গাছটির সাথে বাড়িটিও আকাশে চলে যায়, বাড়িতে আটকা ছিল রাজকুমারী এজাবেল।প্রথমে যদিও জ্যাক গাছে উঠে গিয়েছিল,কিন্তু পরে পিছলিয়ে নিচে পড়ে যায়।
পরের দিন সকালে রাজা তার সৈন্যদল নিয়ে সেখানে চলে আসে। তারা অচেতন অবস্থায় জ্যাককে খুজে পায়।রাজা জ্যাককে বলে রাজকুমারীর কথা জিজ্ঞাস করে।জ্যাক তখন সব কিছু খুলে বলে।সে বলে রাজকুমারী তার বাড়ির সাথে দূর আকাশে চলে গিয়েছে।রাজা রাজকুমারীকে নিয়ে আসার আদেশ দেন।
রাজকুমারীকে আনতে, রাজা রডরিক,সেনাপতি এলমন্ড ও আরো কিছু সেনাপতি শিম গাছ বেয়ে উপরে যায়।তাদের সাথে জ্যাক ও যায়।
এখানে রডরিক যেতে রাজি হয়েছিল কিন্তু রাজকুমারীকে বাঁচানোর ইচ্চা তার ছিলনা, সে অন্য এক উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু জ্যাকের একমাত্র উদ্দেশ্য রাজকুমারীকে বাঁচিয়ে তার মন জয় করা।
পথের মধ্য রাজার কিছু সৈন্য দুরঘটনায় গাছ থেকে ছিটকে পড়ে,কিন্তু রডরিক তাদের না বাঁচিয়ে মেরে ফেলার হুকুম দেয়।রডরকিক শুধু লোভিই নয়,সে অমানবিক একজন মানুষ।অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে স্বল্প কয়েক জনই সর্বোচ্চ উচুতে উঠতে পারে।
তারা সবাই উপরে এসে নতুন এক জগৎ দেখতে পায়,বলা যেতে পারে স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝের জগৎ।তারা এখানে এসে যা কিছু দেখতে পায় তার ওই গল্পের সাথে পুরোপুরি মিল ছিল।তারা অনেক খোজাখুজির পর জ্যাকের বাড়ি খুঁজে পায় কিন্তু সেখানে এজাবেল ছিলনা।
এখানে এসেই রডরিক কৌশলে জ্যাকের কাছ থেকে সব বীজ নিয়ে নেয় এবং বলে এ ব্যপারে কেউ জানলে পরিণাম ভাল হবেনা।জ্যাক সব বীজ দিয়ে দিলেও কৌশলে একটা বীজ নিজের কাছে রেখে দেয়।
জ্যাকদের প্রচুর ক্ষুধা পায়,তাই তারা খাদ্য খুঁজতে বেড় হয়।তারা একটি নদীর পাশে ভেড়ার পাল দেখতে পায়।ভেড়া ধরার জন্য সেখানে যেতেই তারা একটি ফাঁদের মধ্য আটকা পড়ে।তারা অনেক কষ্টে সে ফাঁদ থেকে বেড়িয়ে তারা নদীতে লাফ দেয়।তখনই তারা অনেক জোরে জোরে কোন কিছু হেঁটে আসার আওয়াজ পায়। একটু পরেই তারা একটি দৈত্য আসতে দেখে যেটি ওখানে থাকা একটি ভেড়া তুলে নিয়ে খেয়ে ফেলে।এরপর সে মানুষের গন্ধ পায় এবং সেনাপতি ও এক সৈন্যকে খুঁজে বেড় করে ধরে নিয়ে যায়।জ্যাক পানির নিচে থাকায় বেঁচে যায়।
জ্যাক দৈত্যটির পিছু নেয়,কেননা সে বুঝতে পারে দৈত্যটি এদের যেখানে নিয়ে যাচ্ছে এজাবেল ও সেখানেই আছে।অন্যদিকটি খুঁজছিলেন রডরিক ও তার দুই সাথি।একটি পাহাড়ের চুড়ায় এসে রডরিক তার এক সাথিকে ইচ্ছা করেই নিচে ফেলে দেয়,কেননা তার যে প্লান রয়েছে তাতে তার কাউকেই প্রয়োজন নেই।এমন সময় এক দৈত্য এসে রডরিকের অন্য সাথিকে তুলে নিয়ে খেয়ে ফেলে।একটু পরেই পাহাড়ের নিচ থেকে অন্য আরেক দৈত্য আসে।দৈত্যগুলো রডরিককে আক্রমন করার আগেই সে ওই জাদুর মুকুট তুলে ধরে।এতে দৈত্যগুলো তার দাসে পরিণত হয়ে পড়ে। কেননা এই মুকুটটি পড়ে দৈত্যদের সামনে আসলে,তাদের হৃদয় কাপা শুরু করে।আর তার বস্যতা শিকার করে।
এটাই ছিল রডরিকের প্ল্যান,সে চেয়েছিল দৈত্যদের ও রাজা হতে, আর তাদের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী শাসন করতে।
জ্যাক পুর্বের দৈত্যের পিছু নিয়ে দৈত্যের গুহায় প্রবেশ করে।সে এজাবেলকে এখানে বন্ধি দেখতে পায়। ওখানে থাকা এক দুই মাথাওয়ালা দৈত্য এজাবেলকে বলে তোমার শরীরে তো রাজা এরিকের রক্ত,আমরা এখনো তার শরীরের ঘ্রাণ ভুলিনি, অবশেষে আমরা তার শরীরের ঘ্রাণ নিতে পারব। ওই দুই মাথাওয়ালা দৈত্য সবাইকে বলে, যে রাজা আমাদের দাস বানিয়ে উপরে পাঠিয়েছে,এর শরীরে তাদেরই রক্ত।আজ আমরা এর রক্তখেয়ে রাজ বংশের উপরের রাগ মেটাব।
তখন অন্য দৈত্য সেনাপতি আর তার সাথিকে নিয়ে আসে।দুই মাথাওয়ালা দৈত্য ওই সাথিটিকে জিজ্ঞাস করে তারা এখানে কিভাবে আসলো? তারা যে পথে এসেছে তার সন্ধান চায়।কিন্তু সাথিটি কিছু বলে দিতে রাজি হয়না।তাই সে ওর ঘাড় মটকিয়ে মেরে ফেলে এবং খেয়ে নেয়।
তার একটু পরে ওখানে মুকুট পড়ে রডরিক আসে, তাকে দেখে সবাই হাটু গেড়ে বসে পড়ে। রডরিক ওই দৈত্যের লিডারের মাথায় পা রেখে দৈত্য সিংহাসনে বসে। রডরিক ওই দৈত্যদের নির্দেশ দেয় তারা কাল পৃথিবীতে যাবে এবং একে একে পৃথিবীর সবকিছু দক্ষল করবে।সে তাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলে।এতে দৈত্যরা খুশি হয় কেননা তারা এতো দিন এটাই চেয়ে এসেছে।
এটা শুনে এজাবেলরা বুঝতে পারে রডরিক একজন খারাপ মানুষ, সে তার লোভের জন্য পুরো মানুষ জাতির ক্ষতি করছে। দৈত্যরা এলমন্ডকে রান্না করার জন্য নিয়ে যায়।তারা এলমন্ডকে রুটির সাথে পেঁচিয়ে চুলার ভেতর ঢুকিয়ে দেয়।এরপর দৈত্যটি এজাবেলকে ছুরি দিয়ে কাটতেই ধরে আর তখনই জ্যাক এসে একটি ছুরি দৈত্যটির পিঠে বসিয়ে দেয়।এরপর এজাবেল ও সেনাপতি এলমন্ডকে নিয়ে জ্যাক পালিয়ে যায়।
এদিকে পৃথিবীতে রাজা তার সৈন্যদের নিয়ে অপেক্ষা করছিল, অনেক সময় পাড় হয়ে যাওয়াই তার ভাবতে শুরু করে গাছটিকে এভাবে রেখে দেওয়া ঠিক হচ্ছে কি না? কেননা যদি এই গাছ সত্য হয়ে থাকে তবে লোক কথার দৈত্যগুলোও সত্য। আর এগুলো সত্য হলে দৈত্যগুলো পৃথিবীতে এসে সব কিছু শেষ করে ফেলবে।
রডরিক জানতে পারে এজাবেলরা পালিয়ে গেছে।সে অনেক চিন্তায় পড়ে যায়। কেননা তারা যদি নিচে নেমে যায় তবে সবাই তার চরিত্র সম্পর্কে জেনে যাবে। আর গাছটিও কেটে ফেলা হবে।সে আর নিচে গিয়ে পৃথিবী শাসন করতে পারবেনা।তাই সে একটি দৈত্যকে আদেশ দেয় ওই গাছের পথ পাহাড়া দিতে।
দৈত্য পাহাড়ায়
এজাবেলরা সেখানে গিয়ে দেখে বিশাল এক দৈত্য শেখানে ঘুমিয়ে আছে, তারা বুঝতে পাড়ে শক্তিতে তারা এই দৈত্যের সাথে পারবেনা, কিন্তু একে বোকা বানানো যেতে পারে। জ্যাকের মাথায় তখন একটা বুদ্ধি আসে, সে ওখানে থাকা একটি মৌচাক দৈত্যটির দিকে ছুড়ে মারে।মৌমাছির কামড়ে দৈত্যটি দিশেহারা হয়ে যায় এবং পা পিছলিয়ে নিচে পড়ে যায়।এখন এজাবেলরা নিচে যাবে, কিন্তু এলমন্ড যাবেনা।সে এখানে থেকে রডরিককে বাঁধা দিবে যেন সে নিচে যেতে না পারে।এজাবেলরা নিচে নামতে থাকে।
মৌমাছির কামড়ে পড়ে যাওয়া ওই দৈত্যটিকে দেখে রাজা বুঝতে পারে ওই লোক কাহিনী সত্য ছিল।তাই সে রাজ্য রক্ষার জন্য নিজের মেয়ের মায়া ত্যাগ করে গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।রাজার আদেশে সব সৈন্যরা মিলে ওই গাছটি কেটে ফেলায় লেগে পরে।
পরদিন সকালে এলমন্ড দেখতে পায় রডরিক ওই দৈত্যদের যুদ্ধের সাজে সাজিয়ে নিয়ে ওই গাছের দিকে আসছে।রডরিক কাছে আসতেই এলমন্ড ছুরি নিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে।তাদের মধ্য লড়াই শুরু হয়, লড়াইয়ের এক পর্যায়ে রডরিক এর কাছে থাকা বীজের থলি পড়ে যায়। তারা লড়াই করতে করতে এক পর্যায়ে পাথরের সরু গিরিপথে ঢুকে যায়।দৈত্যগুলো তাদের বেড় করার চেষ্টা করে। এলমন্ড এখানেই রডরিক কে মেরে ফেলে,কিন্তু সে মুকুটটি নেবার আগেই ওই দুই মাথাওয়াল দৈত্যটি নিয়ে নেয় এবং আংটির মতো করে তার আঙুলে পড়ে।
নিচের রাজার সৈন্যরা ওই গাছটি কেটে ফেলে, এলমন্ড এটা বুঝতে পিরে ওই গাছে ঝাঁপিয়ে পড়ে,আর এজাবেল ও জ্যাক ও ওই গাছেই ছিল, ফলে তারা ওই গাছের সাথেই নিচে এসে পড়ে।কষ্টে থাকা রাজা নিজের মেয়েকে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি হয় এবং জ্যাককে ও অনেক বাহবা দেয়।
গাছটি কেটে ফেলায় ওখানকার দুই মাথাওয়ালা দৈত্যটি অনেক আর্তনাদ করে, কিন্তু পরে সে ওই বীজের থলে দেখে অনেক খুশি হয়। সে বীজগুলো পানিতে ফেলে দেয়,সঙ্গে সঙ্গে গাছ তৈরি হয়ে তা পৃথিবীতে নেমে আসে আর এই গাছগুলো বেয়ে নেমে আসে ওই দৈত্যগুলো।
জ্যাক তার হাতে থাকা বিজটি দেখছিল,হঠ্যাৎ সে আকাশ থেকে আওয়াজ শুনতে পায়।সে উপর দিকে তাকাতেই বুঝে ফেলে কি ঘটতে চলেছে।সে ঘোড়ায় চড়ে দ্রুত রওনা দেয় রাজপ্রাসদের দিকে।দৈত্যদের আগমনের খবর পেয়ে সন্ন্যাসী সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়।
রাজার সৈন্যরা দৈত্যদের অতর্কিত হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়ে।দৈত্যগুলো সব কিছু তছনছ করে ফেলছিল এবং সৈন্যদের ধরে খাওয়া শুরু করে।রাজা তার সৈন্যদের রাজমহলে প্রবেশ করিয়ে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় । দুই মাথাওয়ালা দৈত্যটি দরজা আটকানোর চেস্টা করে কিন্তু সৈন্যদের তীরের আঘাতে সে নদীতে পড়ে যায়, কিন্তু সে হার মানে না।ততক্ষনাৎ সে অন্য দরজা খোজার কাজে লেগে পড়ে।
রাজা এজাবেলকে গুপ্তপথে বেড় হয়ে যাওয়ার কথা বলে, আর যাওয়ার সময় টাওয়ারের মশাল জালিয়ে দিতে বলে যেন অন্য রাজ্যগুলো সতর্ক হয়ে যেতে পারে এবং তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে।জ্যাক এজাবেলকে সাথে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
দৈত্য আর মানুষের মধ্য তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়,
দৈত্যগুলো যা পাচ্ছিল তাই মহলের দিকে ছুড়ে মারছিল।দৈত্যগুলো গাছে আগুন লাগিয়ে মহলের দিকে ছুড়ে মারছিল।সৈন্যরাও অনবরতো তীর মারছিল কিন্তু তারা এই অতকায় দৈত্যগুলোর সাথে পেড়ে উঠছিলনা।
এদিকে এজাবেল ও জ্যাক মহলের ওই গুপ্ত রাস্তার কাছে চলে আসে কিন্তু তখনই ওখানের মেঝে ফেটে ওই দুই মাথাওয়ালা দৈত্যটি বেড় হয়।সে এজাবেল ও জ্যাককে ধরে ফেলে।দুই মাথাওয়ালা দৈত্যটি জ্যাককে খেয়ে ফেলতেই ধরে তখনই জ্যাক তার হাতে থাকা শেষ বীজটি দৈত্যের মুখের মধ্য ঢুকিয়ে দেয়।দৈত্যটির পেটের ভিতর থেকে গাছ বেড় হয়ে আকাশের দিকে চলে যায়।এতে দৈত্যটির মৃত্যু হয়।তার অঙ্গ প্রতঙ্গ খুলে খুলে পরে যেতে থাকে।আঙুলে থাকা ওই মুকুট সহ তার হাত পরে থাকে।
অন্যদিকে দৈত্যরা তাদের শক্তি বলে রাজমহলের প্রধান ফটক ভেঙ্গে ফেলে ভিতরে প্রবেশ করে।কিন্তু রাজা হার মানে না, তিনি তার রক্তের শেষ বিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই করবেন।তিনি সৈন্যদের নিয়ে দৈত্যদের সামনে দাঁড়ান মোকাবেলার জন্য। কিন্তু একটু পড়ে রাজা দেখতে পান রাজমহল ভেদ করে শিম গাছ উপরে উঠে যাচ্ছে, আর দৈত্যরা হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব করে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।এলমন্ড ভাবে দৈত্যরা কেন তাদের সম্মান প্রদর্শন করছে, তাদের তো এই সম্মান দেখানোর কথা না।সে পিছন ফিরে দেখে মাথায় মুকুট পরে জ্যাক সেখানে এসেছে, এখন সে দৈত্যদের রাজা।
জ্যাক দৈত্যদের তাদের রাজ্যে ফিরে যেতে আদেশ করে।দৈত্যরা ফিরে গেলে ওই গাছ গুলো কেটে ফেলা হয়।পরে জ্যাকের সাথে এজাবেলের বিয়ে দেয়া হয়।জ্যাক দরিদ্র ঘরের ছেলে হলেও রাজা জ্যাকের বিচক্ষণতা দেখে তার সাথে এজাবেলের বিয়ে দেন।
এই গল্পটি জ্যাক ও তার স্ত্রী এজাবেল প্রায়ই তাদের দুই সন্তানকে শুনায়,এরপর বাচ্চারা যখন ওই মুকুটটি সম্পর্কে জানতে চায় তখন বলে মুকুটটি নিরাপদ জায়গাতেই আছে।মুকুটটিকে আরো সুন্দর করে পালিশ করে মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে।প্রত্যেক বছর অনেক মানুষই এ মুকুট পরিদর্শন করে যায়,যদিও এর পিছনের গল্প তাদের বেশীরভাগ মানুষেরই ওজানা।