ছেলের বউ অন্তরাকে পেপের ঝোল আর কাঁচাকলা সেদ্ধ করতে দেখে শিউলি বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
-বউমা এমন রোগীর খাবার কার জন্য রাধতেছো? ।
– আপনার ছেলের জন্য মা, আজকাল পেট বড্ড খারাপ থাকে ওর তাই এসব খাওয়াচ্ছি।
বউমা তোমাদের বিয়ের আগে আতিক যখন আমার হাতের রান্না খেতো তখন ওর পেট এতো খারাপ হয়নি, এখন কেনো যে হচ্ছে বুঝতেছি না।
শাশুড়ির ঠান্ডা মাথায় দেওয়া খোচাটা অন্তরা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। খোচার পাল্টা জবাবে সে হাসি মুখে বললো,
– আসলে মা বিয়ের আগে ওর ভালোমন্দ খাওয়ার অভ্যাস তেমন ছিলো না তো তাই এখন একটু ভালো কিছু খেলেই পেট খারাপ করে।
বউয়ের পাল্টা জবাব শুনে শিউলি বেগম কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
সন্ধ্যা সময় বাসায় ঢুকতেই বাড়ির কাজের লোক টুকু মিয়া দুপুরে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা আতিককে জানালো।
টুকু মিয়া খবর সরবরাহ করতে ভালোবাসে, তার একমাত্র শখ ব্রেকিং নিউজ দেওয়া। এইসব নিউজ সবসময় পুরোপুরি সত্য হয় না, এর ভিতর টুকু মিয়ার নিজস্ব কিছু সৃজনশীল উপাদান থাকে। যা খবরটাকে আরো চটকদার বানায়।
আতিকের মা আর বউয়ের ভালো একটা দিক তারা নিজেরা সরাসরি কখনো ঝগরা চুলাচুলি টাইপ কিছু করে না। কিন্তু উভয়ে সেটার ঝাল আতিকের উপরে ঝারে।
খুব থমথমে চেহারা নিয়ে আতিক অন্তরার ঘরে ঢুকলো, রাগে তার চোখ লাল হয়ে আছে। আতিক গম্ভীর গলায় অন্তরাকে বললো, ” অন্তরা, ব্যাগপত্র সব গুছায়ে নেও,এতো অপমান সহ্য করে এই বাড়িতে আর এক মূর্হুত থাকবো না আমরা ”
আতিকের এমন কথার জন্য অন্তরা তৈরি ছিলো না, সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞেস করলো
– বাড়ি ছেড়ে যাবে মানে, কই যাবে?
– বস্তিতে ঘর নিয়ে থাকবো, তাও না হলে গাছতলায় থাকবো তবু তোমাকে এই বাড়িতে রেখে আর অপমানিত হতে দিবো না।
বর এভাবে তার সার্পোট দেওয়াতে অন্তরা খুশি হলেও ব্যাপটারটা বিরাট টেনশনের হয়ে দাড়ালো।
এতো বড় আলিসান বাড়ির দাবি ছেড়ে চলে গেলে পুরো বাড়িটা অন্তরার ননদ পেয়ে যাবে, এ ছাড়াও শাশুড়ির গহনার একটা ভাগ তার পাওয়ার কথা সেটাও যাবে৷
সামান্য ঝগড়ার কারনে এতো বড় লোকসান করা মোটেও উচিত হবে না।
কিন্তু এদিকে আতিক তার মায়ের সাথে বোঝাপড়া করতে গেছে।
আতিক চোখমুখ কালো করে শিউলি বেগমের রুমে ঢুকলো।
– আম্মা এই অপমানজনক কথাবার্তা আর সহ্য করা যায় না, এই কোন মেয়েরে আপনি আমার জন্য পছন্দ করলেন বলেন তো?
শিউলি বেগম ছেলেকে তার সাপোর্টে পেয়ে মনে মনে ব্যাপক খুশি, কিন্তু সেটা তিনি প্রকাশ করলেন না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
– ঐখানেই তো ভুল করেছিরে বাবা, এখন তো সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই।
আতিক গলা নিচু করে মায়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো,
-উপায় আছে আম্মা। ধরেন আপনি আর আমি মিলে মাঝরাতে অন্তরারে খালাস করে দিলাম, তারপর ওর বডি আমাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে নদীতে ভাসায় দিলাম বা কুয়ায় ফেলায় দিলাম। পরে আমরাই পুলিশের কাছে মিসিং ডাইরি করবো, সাংবাদিক ডেকে কান্নাকাটি করবো। কিছুদিন খোজাখুজি চলবে তারপর ধীরে ধীরে সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
– আসতাগফিরুল্লাহ, এসব কি বলিস বাবা? বাড়ির বউরে খুন করাবি আমারে দিয়ে? এই বয়সে ফাঁসিতে ঝুলায়ে মারবি নাকি আমাকে?
– আম্মা আপনি ভয় পাচ্ছেন কেনো? ধরা পরলে আপনারে তো পুলিশ খুনি বলে ধরবে না, ধরলে আমারে ধরবে কিন্তু আমি তো অবস্থা খারাপ দেখলে ব্যাংকক পালায় যাবো । আপনাকে খুব বেশি হইলে খুনে সহয়তার জন্য ধরতে পারে। ঐটার সাজাও চার পাঁচ বছর অনলি। এরপর সব ঠান্ডা হইলে আমি দেশে এসে আরেকটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করবো, ইনশাআল্লাহ আপনি জেল থেকে বের হয়ে দুইটা নাতি-নাতনি রেডি অবস্থায় পেয়ে যাবেন।
ছেলের কথা শোনার পর থেকে শিউলি বেগমের হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়েছে, বউয়ের সাথে শুরু করা কোল্ড ওয়ার এখন ওর্য়াল্ড ওয়ারের রুপ নিতে চলেছে। যা মোটেও ভালো হচ্ছে না, শিউলি বেগম যেভাবেই হোক এটা থামানোর চিন্তা করলেন।
কিছুক্ষন পর রাতে খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে, শিউলি বেগম ও অন্তরা দুইজনে টেবিলে খাবার পরিবেশনে ব্যাস্ত।
খাবার টেবিলে আতিকের আজ বিশেষ খাতিরদারি হচ্ছে, তার মা তাকে বড় একটা মাছ ভেজে দিয়েছেন । অন্তরা তার জন্য তড়িঘড়ি করে চিকেনকারি তৈরি করছে।
শিউলি বেগম ও অন্তরা নিজেদের মধ্যে হাসি মুখে কথা বলতেছে, পরিবেশ স্বাভাবিক করতে তারা দুইজনেই খুবই তৎপর। কারন তারা দুইজনেই জানেন আতিকের আজ মাথার ঠিক নেই সে খুবই ক্ষিপ্ত, যে কোনো মূহুর্তে ভয়াবহ কিছু একটা ঘটতে পারে।
লেখা কুন্তল হোসেন