#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘ফায়ান গাড়ির স্টিয়ারিং এর উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।এমন কোনো জায়গা নেই,যেখানে আরিমা’র খোঁজ করেনি সে।বরাবরের মতোই সে হতাশ।
-স্যার,কোথাও পেলাম না ম্যাম কে,তাহলে কি ম্যাম নিজ থেকে নিখোঁজ?
‘ফায়ান বেশ বিরক্ত হলো নাদিমের কথায়,কিন্তু আপাতত চুপ আছে সে।কিছু ভাবছে ফায়ান।
“ওহ শিট” বলে ফায়ান একটা ঘুসি দিলো সি’টে।এত বড় মিস্টেক কীভাবে হতে পারে তার?
-আরিমার লাস্ট লোকেশন চেক করো,
-করেছি ভাই।আপনাদের বাসার সামনে যে মোড় আছে,ওখানে এসে থেমেছে।
-আগে বলোনি কেনো?
‘ফায়ানের স্বর শান্ত।কিন্তু কথা’গুলো ভয়ঙ্কর শুনাচ্ছিলো।
নাদিম ঢোক গিললো।
-ভ.ভাই,ভুলে গেছিলাম।আমি ভাবছিলাম ওটার দরকার হলে আপনি জিগ্যেস-ই করতেন।
-আজ-কাল বেশি বুঝা শুরু করেছো দেখছি,হাহ্?
‘নাদিম মাথা নিচু করে চুপ হয়ে থাকলো।এখানে বেশি কিছু বলা মানেই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা’রা।
-গাড়ি ঘুরাও,মো’ড়ের কাছে গাড়ি থামাবে।যেখানে লোকজন কম।ফাস্ট।
***
‘আরিমা থম ধরে বসে আছে।একটা ছোট্ট কুটিরে।দিনের বেলাতেও অন্ধকার লাগছে ঘরটা।বাহির থেকে কিঞ্চিৎ সূর্যের আলো কুটিরের দেয়ালে এসে স্থান পেয়েছে।আচ্ছা এখন কয়টা বাজে?তার কাছে ঘড়ি নেই।না আছে ফোন!সবকিছু রাতেই নিয়ে নেয়া হয়েছে।
‘আরিমা বসে বসে ফায়ানের অপেক্ষা করছে।কখন আসবে নেতা সাহেব?তার বিশ্বাস ফায়ান তাকে খুঁজতে আসবেই।কারণ এতে তার স্বার্থ রয়েছে।
-বাহ,এত সুন্দর করে বসে বসে কি ভাবছো?নিশ্চয় আমার কথা?বেশি ভেবো না পাখি।আমি তোমার সাথেই আছি।
‘আরিমা লোকটার দিকে শান্ত ভঙ্গিতে তাকালো,,!
-এভাবে দেখো না পাখি।আমি যে কন্ট্রোল”লেস হয়ে পরি।
‘আরিমা নিশ্চুপ।
-চিন্তা করো না সোনা।কিছুক্ষণ পরেই আমাদের সন্তান’কে আমাদের কাছে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করবো।
‘আরিমা এবার খেঁকিয়ে উঠলো,,
-খবরদার,আমার ছেলের দিকে তুমি তোমার নোংরা হাত বাড়াবে না।আরহাম আমার ছেলে,আমিই তার বাবা আমিই তার মা।তোমার মতো অসভ্য নর্দমার কীট কখনো কারো বাবা হবার যোগ্যতা রাখে না রাজ।
-ইশশশ জান পাখি,তোমার মুখে আমার নাম এততো সুইট শুনায় কি বলবো।আরেকবার ডাকো সোনা।
-চুপ করো তুমি।আমাকে এখানে আনার উদ্দেশ্য যেটা,সেটা কখনোই পূরণ হবে না।নেতা সাহেব এসে আমাকে নিয়ে যাবেই।অপেক্ষা করো।
-না’গো।কীভাবে উদ্দেশ্য পূরণ করতে হয় তা রাজ ভালো’ভাবেই জানে।সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে রাজ আঙুল বাঁকাতে জানে।তাও খুব জঘন্য ভাবে।
‘বলেই রাজ কিট’কিট করে হাসতে লাগলো।
আরিমার শরীর রাগে থর’থর করে কাঁপছে।তার গা গুলিয়ে আসছে।আরিমার ভাবতেও ঘৃণা লাগে,এক সময় এই সুদর্শন যুবকের হাসি তার বক্ষস্থল আন্দোলিত হতো।আরিমা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,,
-দেখো রাজ!তোমার যতো দেনা-পাওনা,রাগ,ক্ষোভ আছে,সব আমার প্রতি।এর মাঝে ছেলেটাকে টেনে এনো না প্লিজ।ও একটা বাচ্চা।
-তো?ও আমার ছেলে।আরহামের শরীরে আমার রক্ত বইছে।আমার ছেলে’কে আমি পেতেই পারি।
-না ও তোমার ছেলে না।ও আমার ছেলে।আমাকে যা’ ইচ্ছে করো।কিন্তু আরহামের দিকে দৃষ্টি দিবে না।
‘আরিমা একটু থেমে বললো,,
-দৃষ্টি দিতে’ও পারবে না।কারণ জানো?সে এখন নেতা সাহেবের কাছে।
‘আরিমার নির্নিমেষ চাহনি দেখে রাজের রাগ উঠে গেলো।সে ফায়ানের কথা শুনতেই চায় না।
‘এগিয়ে গিয়ে আরিমার দুই গাল চেপে ধরলো,আরিমা টু শব্দটি করছে না।রাজ থেকে সরারো চেষ্টা করছে না।
‘রাজ দাঁত কিড়িমিড়ি করে বললো,,
-নেতা সাহেব তাইনা?তোর নেতা সাহেব তোকে কি করেছে?এতো ফায়ান ভক্তি কীভাবে হলি?টাকার লোভ?সেটা তো তোর নেই।তাহলে?ফায়ান তোকে কি এমন দেখিয়েছে যার কারণে তুই সারাদিন ফায়ানের নাম জপিস?
‘আরিমার শরীর রাগে রিঁ”রিঁ করে উঠলো।
রাজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু পারছে না।
‘রাজ আরিমাকে ছেড়ে দিয়ে তার গালে স্ব জোরে একটা থাপ্প’ড় মা’রলো।আরিমা ছিঁটকে গিয়ে দেয়ালের সাথে বারি খেলো।
‘আরিমা কপাল চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মাথা’টা ভঁন’ভঁন করে ঘুরছে।
কপাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।রাজ একটু এগিয়ে এসে বললো,,
-অপেক্ষা করো সোনা।একটু কষ্ট সহ্য করো।
একটু পরেই আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে।আর তোমার মুখে ফায়ানের নাম আরেকবার নিলে তোমার মুখ ছিঁড়ে ফেলবো সোনা।
‘আরিমা দাঁত মুখ খিঁচে রাজের কথা শুনছে।আরেকটু সময়ের অপেক্ষা।তারপর রাজের বিষ দাঁত ভাঙতে সময় নিবে না সে।
***
-স্যার,এখন লোকজন কিছু কম আছে।আপনি মাস্ক পরে নিন।
‘ফায়ান আর নাদিম সকলের অগোচরে বড় মাঠ’টার দিকে এগিয়ে গেলো।লোকজনের সম্মুখে পরলে বিপাকে পরতে হবে।
‘নাদিম আর ফায়ান নতুন নির্মাণাধীন বিল্ডিং টার দিকে এগিয়ে গেলো।তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছুর হদিস মিললো না।
-নাদিম মাঠের ডান পাশে একটা কুটির আছে না?চলো একবার দেখে আসি।
-ভাই,ওখানে কি আর থাকবে?ছোট্ট একটা কুটির।পোঁকা’ও মাড়ায় না সেদিক।
-তাই তো আমরা যাবো।
***
-এই তো পাখি আ’ম হেয়ার।
-বেশি পাখি পাখি করো না।উড়ে যেতে টাইম লাগবে না।
‘রাজ হাসলো,,
-আমার পাখি,তোমাকে মনের কুঠরী’তে বন্দি করে রাখবো।
কাজী সাহেব ভিতরে আসেন।
‘আরিমা হালকা হাসলো।
-তুমি বুঝি জানো না রাজ?ক’দিন আগেই আমার আর নেতা সাহেবের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে?
-সেটা তুমি আমি আর তার বাড়ির লোক জানে।মিডিয়া’রা জানে না।আর না বাহিরের লোক।
‘রাজ বাঁকা হাসলো।
-আমি তোমাকে কখনোই বিয়ে করবো না।তুমি একটা অযোগ্য মানুষ। একটা কীটের থেকেও অধম তুমি।তোমার পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়ে গেছে শুধু ভাঙার সময় আসার অপেক্ষা।
-চুপপ,একদম চুপ।তুই বিয়ে করবি না’ তোর ম’রা বাপ এসে করবে।
-খবরদার রাজ।আমার বাবাকে নিয়ে কিছু বললে জিভ টে’নে ছিঁড়ে ফেলবো আমি।
‘আরিমা দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে রাগে।নিজেকে সামলাতে না পেরে রাজ’কে একটা থাপ্প’ড় লাগিয়ে দিলো।
‘রাজ গালে হাত দিয়ে আরিমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিয়ৎক্ষণ পরেই আরিমার দিকে এগিয়ে গেলো রাজ।তারপর চুলের মুঠি ধরে এনে কাজী’র সামনে বসালো।
‘বেচারা কাজী সাহেব থত’মত খেয়ে বসে আছে।তাকেও তো ধরে বেঁধে এনেছে।হুমকি দিয়ে।তখন বুঝতে না পারলেও এখন ঢের বুঝতে পারছে ব্যাপার’খানা।
‘আরিমা বার’বার দরজা’র দিকে তাকাচ্ছে আর মনে মনে আওড়াচ্ছে।
“নেতা সাহেব,আজকেও আপনি লে’ট?কখন আসবেন?আমার একটুও ভাল্লাগছে না।আমি চাই আপনি এসে নিয়ে যান আমাকে।
আসেন প্লিজ।
চলবে,,,
(আসসালামু আলাইকুম,ভুল’ত্রুটি হলে ক্ষ’মার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)