অরোনী, তোমার জন্য~১০
লিখা- Sidratul Muntaz
রাবেয়ার মুখে ক্ষমা শব্দটা শুনে অরোনী হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকাল। সে প্রত্যাশা করেনি যে এমনটা হবে। রাফাত অবশ্য তাকে বলেছিল, কিন্তু অরোনী তার শাশুড়ীকে চেনে। তিনি ক্ষমা চাওয়ার মতো এতো বিনয়ী মানুষ হতেই পারেন না। কিন্তু আজ কি হলো? সত্যি অবাক কান্ড!
রাফাত মায়ের কথা শুনে এতো আনন্দিত হলো যে সাথে সাথেই মাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর কপালে চুমু দিয়ে বলল,” থ্যাঙ্কিউ মা।”
রাবেয়া কর্কশ গলায় বললেন,” হয়েছে ছাড়। আর ঢং করতে হবে না।”
রাফাত হেসে বলল,” না। আজ আমি তোমাকে পাঁচমিনিট এভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখবো।”
অরোনী কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ তার একটু অস্বস্তি হচ্ছে। রাফাত তার কথা রেখেছে এইটা ভেবে ভালোও লাগছে। রাবেয়ার মতো মহিলার মুখ থেকে ‘ক্ষমা’ নামক শব্দ বের করা কোনো সহজ ব্যাপার নয়। রাফাত এই অসাধ্য কিভাবে সাধন করল!
রাফাত মাকে জড়িয়ে ধরে রেখেই অরোনীর মুখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল,” তুমি মাকে ক্ষমা করেছো তো অরোনী? আর কোনো রাগ নেই তো?”
অরোনী অপ্রস্তুত হয়ে মাথা ঝাঁকাল। তার রাগ নেই।রাবেয়া বললেন,” রাগ থাকার প্রশ্নই আসে না। শোনো অরোনী, আমি জীবনে তোমার শ্বশুরের কাছেও ক্ষমা চাইনি। ঝগড়ার পর প্রত্যেকবার সে-ই আমার কাছে মাথা ঝুঁকিয়েছে। কিন্তু এই প্রথমবার আমি কারো কাছে ক্ষমা চাইলাম। শুধু আমার ছেলের মুখের এই হাসিটা দেখার জন্য।”
এই কথা বলেই রাফাতের চেহারায় আদর করে হাত বুলিয়ে দিলেন রাবেয়া। রাফাত হো হো করে হেসে বলল,” তাহলে তো বলতে হয় আমি খুব ভাগ্যবান। আমার জন্য মা পঞ্চাশ বছরের রেকর্ড ভেঙে কারো কাছে প্রথমবার ক্ষমা চাইলেন!”
ছেলের কথা শুনে রাবেয়া ঝলমল করে হেসে উঠলেন। মা-ছেলের খুনশুঁটি দেখে অরোনীর হাসি পাচ্ছে না। পাচ্ছে কান্না। চোখ ভিজে আসছে আবেগে। এতো আবেগী কেন সে?
রাফাত সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করল,” কেমন লাগছে এখন?”
অরোনী কোমল হেসে বলল,” ভালোই।”
” ভালোই? মা ক্ষমা চাইবেন তুমি এটা এক্সপেক্ট করেছিলে?”
” না।”
” তাহলে আনেক্সপেক্টেড সারপ্রাইজ পেয়ে কেমন লাগছে?”
” বললাম তো ভালো। “
” এখন থেকে আর কোনো ঝামেলা হবে না অরোনী। সব ঠিক হয়ে যাবে। বাড়িতে শান্তি বিরাজ করবে।”
অরোনী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” তাই যেন হয়।”
রাফাতের চেহারা থেকে খুশি ভাব সরছেই না৷ তার চোখেমুখে একটা আনন্দের ঝিলিক চলে এসেছে। কিন্তু অরোনীর মনে এখনও কিঞ্চিৎ সন্দেহ। আসলেই কি সব ঠিক হয়ে গেছে? একটা মানুষ যাকে অনেক ঘৃণা করতো তাকে কি চোখের পলকেই ভালোবেসে ফেলা যায়? রাবেয়া কি পেরেছেন অরোনীকে মেনে নিতে? মনের এই অযাচিত সন্দেহের ব্যাপারে রাফাতের সাথে কোনো কথা বলল না অরোনী।
ছেলেটা খুশি আছে। থাকুক এভাবেই। নিজের মনের দুশ্চিন্তা রাফাতের মনে ঢুকিয়ে তার মনের শান্তি নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। কি অদ্ভুত! অরোনী আর রাবেয়া দু’জনই বিপরীত স্রোতের মানুষ। কিন্তু একদিক দিয়ে তাদের উদ্দেশ্য মিলে যায়। সেই উদ্দেশ্য হলো রাফাতকে খুশি রাখা। এই কাজের জন্য তারা দু’জনেই আবার সব করতে পারে।
অরোনী বারান্দার দাঁড়িয়ে আছে। খুব বিরক্তিকর অবস্থা হলো তাদের বারান্দা থেকে দীপ্তিদের বারান্দাটা আবার দেখা যায়। রাহাত ভাই যদি এখন কোনো কারণে বারান্দায় এসে দাঁড়ান তাহলেই অরোনী আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না৷ তাকে চলে যেতে হবে ভেতরে। কি যন্ত্রণা! রাফাত অরোনীর পাশে এসে দাঁড়ালো। মৃদু কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” কি করছো?”
” কিছু না? চাঁদ দেখছি।”
রাফাত অরোনীর দিকে তাকিয়ে রইল। অরোনী একটু পর বলল,” তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
” আমিও চাঁদ দেখছি।”
অরোনী রাগার চেষ্টা করল। কিন্তু তার হাসি পেয়ে গেল। সেই হাসিতে প্রশ্রয় পেয়েই আচমকা রাফাত কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল অরোনীর কোমড়। অরোনী চোখ দু’টো রসগোল্লার চেয়েও বড় বানিয়ে বলল,” কি হচ্ছে? পাশে কাদের বারান্দা দেখেছো? যদি কেউ চলে আসে?”
” এলে কি হবে?”
” কি হবে মানে? দেখে ফেলবে তো।”
” আমি তো চুরি করছি না যে দেখে ফেললে সমস্যা হবে। কোনো ইলিগ্যাল কাজও করছি না। এখানে পুরোটাই লিগ্যাল।”
অরোনী জোর করে রাফাতের হাত সরিয়ে বলল,” ঠিক হচ্ছে না।”
রাফাত কিছুসময়ের জন্য চুপ রইল। তারপর হঠাৎ বলল,” বিয়ের প্রথম রাতে আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছিল। মনে আছে অরোনী?”
অরোনী মাথা নাড়ল। তার মনে আছে। রাফাত তবুও নিজের মতো বলল,” তুমি আমার পরিবার থেকে আলাদা হতে চেয়েছিলে। যা আমি কখনও চাইনি। কিন্তু যেহেতু তুমি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে বিয়ে করেছো তাই আমার একটা দায়বদ্ধতা ছিল তোমার প্রতি। আমি বলেছিলাম সর্বপ্রথম তোমার মন জয় করবো। তারপর তোমাকে।”
অরোনী মুচকি হেসে রাফাতকে প্রশ্ন করল,” তুমি কি তাহলে আজকের কাজটা আমার মন জয় করতেই করেছো?”
” ঠিক তা না। তখন এটা আমার মাথাতেও আসিনি। আমি শুধু ভাবছিলাম পারিবারিক ঝামেলা কিভাবে মেটানো যায়। কিভাবে সবকিছু ঠিক করা যায়! কারণ এতো সমস্যা আমার ভালো লাগছিল না। দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠছিলাম।”
অরোনী ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,” ও।”
রাফাত অরোনীর দিকে সরাসরি তাকিয়ে প্রশ্ন করল,” এই কথা কেন জিজ্ঞেস করলে? তার মানে কি আমি তোমার মন জয় করতে পেরেছি?”
অরোনী মাথা নিচু করে হেসে বলল,” হ্যাঁ, পেরেছো।”
রাফাত এক মুহূর্তও দেরী না করে অরোনীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যে অরোনী থতমত খেয়ে গেছে। নড়াচড়া করারও জো নেই। অরোনী হেসে বলল,” ছাড়ো রাফাত। আজ এমনিতেও কিছু হবে না। আমি অসুস্থ।”
” উফ অরো, তুমি আমাকে এতো খারাপ ভাবো? আমি তো জানি তুমি অসুস্থ! কিন্তু তাই বলে কি কিছুই হবে না? আমি কি তোমার ঠোঁটে চুমুও দিতে পারবো না? “
” না পারবে না। যখন হবে সব একেবারে হবে৷ নো হাফ চান্স।”
অরোনী ভেবেছিল রাবেয়ার পরিবর্তন কেবল রাত পর্যন্তই থাকবে। সকাল হতেই রাফাত অফিসে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সব ভুলে যাবেন। আবার খোচা মেরে কথা বলতে শুরু করবেন। সবার সামনে অপমান করবেন। কিন্তু এমন হলো না। বরং আজ সারাদিনই রাবেয়া অরোনীর সাথে ভালো ব্যবহার করলেন। প্রাণ খুলে হেসে কথা বললেন। কেউ দেখলে বলবে না যে গতকালও তাদের মধ্যে সাপে-নেউলের সম্পর্ক চলছিল!
তবে এইসময় সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে অরোনীর মেজাজ খুব খিটখিটে হয়ে থাকে। কেউ ভালো কথা বললেও তার ভালো লাগছে না। কেউ যদি অকারণে অরোনীর দিকে হাসি দিয়ে চেয়ে থাকে তাহলে অরোনীর ইচ্ছে করছে তার দিকে কঠিন মুখে তাকিয়ে থাকতে। তাকে কঠিন করে কথা বলতে। কেউ বেশি কথা বললে ইচ্ছে হয় তার মুখে স্কচটেপ মেরে দিতে। আর কথায় কথায় মুড সুয়িং হয়। অরোনী ভেবেছিল আজ নিচে গিয়ে সবার সাথে মিলেমিশে লাঞ্চ করবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইচ্ছে হলো না।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে কষ্ট লাগবে। তাই সে নিজের ঘরেই কিছু একটা রান্না করে খেয়ে নিল। তারপর বিছানায় এসে চুপচাপ শুয়ে রইল। এখানে আরেকটা সমস্যা হয়েছে। দীপ্তি ভাবী তার বাপের বাড়ির সবাইকে ডেকে এনে দুইতলার বৈঠকঘরে আড্ডাখানা বানিয়েছে। একটু পর পরই সবার হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। অরোনী ঘুমাতে পারছে না। আগে এই দু’তলা ছিল শান্ত, নিস্তব্ধ। এখানে স্বস্তি ছিল। কিন্তু এখন শুধুই অস্বস্তি হচ্ছে। বাড়িটা মেহমান দিয়ে ভরে গেছে।
এবার অরোনী কিছুটা আন্দাজ করতে পারল যে কেন রাহাত ভাই বউ নিয়ে আলাদা থাকেন! কারণ শ্বশুরবাড়িতে তো বারোমাস বাপের বাড়ির লোকজন এনে ঘর ভরিয়ে রাখা যাবে না। কিন্তু এখন দীপ্তি ভাবীর অনেক কদর। সে এই বাড়ির বড় বউ। উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তার দাপটই অন্যরকম! ননদদের প্রিয় ভাবী, শাশুড়ীর প্রিয় বউ মা। রাবেয়ার সাথে দীপ্তির কথা বলার ধরণ দেখলে মনে হবে মা আর মেয়ে। সে নিজের চৌদ্দগুষ্ঠী এখানে এনে উঠিয়ে রাখলেও কেউ কিছু বলবে না।
অরোনীর মোবাইল বাজছে। ফোনটা অনেক দূরে। অরোনী চিৎকার করে রিতুকে ডাকল। রিতু দীপ্তির বাপের বাড়ি থেকে আসা মেহমানদের খেদমতে ব্যস্ত। কিন্তু অরোনীর ডাক শুনে হড়বড় করে ছুটে এলো।
” কি হইছে ছোটভাবী?”
” আমার মোবাইলটা টিভির কাছে বাজছে। একটু এনে দিবে?”
রিতু মোবাইল এনে দিল। রাফাতের কল। অরোনী রিসিভ করে বলল,” হ্যালো।”
” কি অবস্থা? লাঞ্চ করেছো?”
” হ্যাঁ। তুমি করেছো?”
” হুম… আজ একটা সুন্দরী ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং ছিল তো! তার সাথেই লাঞ্চ করলাম। ভালোই লাগল।”
অরোনী হাসছে। সে জানে রাফাত তাকে জ্বালানোর জন্য এসব বলে। প্রথম প্রথম সে বোকার মতো রেগে যেতো। এখন আর রাগে না। অরোনী জিজ্ঞেস করল ” সুন্দরী ক্লায়েন্ট কি বলে তোমাকে?”
” সত্যি বলবো? শুনলে আবার রাগ করবে না তো?”
” না, বলো।”
” জিজ্ঞেস করল আমি ম্যারিড কি-না। আমি বললাম, আমি ম্যারিড। কিন্তু সে বিশ্বাসই করল না৷ তাকে বিশ্বাস করানোর জন্য আমি বললাম, তাহলে আমার স্ত্রীর ছবি দেখুন। সে সত্যি দেখতে চাইল। আমি তাকে তোমার ছবি বের করে দেখালাম৷ তখন সে কি বলে জানো?”
” কি বলে?”
” সে বলে, ওরে আল্লাহ! আপনার স্ত্রী দেখি আমার চেয়েও সুন্দর! “
অরোনী খিলখিল করে হেসে উঠল। হাসির জন্য তার পুরো শরীর কাঁপছে। রাফাত ওই পাশ থেকে অরোনীর হাসি শুনছে চুপ করে। একটু পর বলল,” তোমার কি আজ বেশি খারাপ লাগছে অরোনী?”
” তুমি কি করে বুঝলে?”
অরোনীর কণ্ঠে বিস্ময়। রাফাত প্রশ্নের জবাব দিল না। কিন্তু সে বোঝে। অরোনী সামান্য রসিকতায় কখনও এতোক্ষণ ধরে হাসে না। তবে আজ সে অনেকক্ষণ ধরে হেসেছে। এর মানে তার শরীর খারাপ লাগছে। সেই খারাপ লাগাটা ভুলে থাকার জন্যই অরোনী হাসার চেষ্টা করছে। রাফাত বলল,” শুয়ে থাকতে ভালো না লাগলে রিতুকে নিয়ে বাহিরে হেঁটে আসতে পারো।”
অরোনীর মেজাজ হুট করেই গরম হয়ে গেল। তার শরীর এতো দূর্বল যে বিছানা ছেড়েই উঠতে মন চাইছে না। আর রাফাত বলছে বাইরে থেকে হেঁটে আসতে! পাগল নাকি! অরোনী গম্ভীর গলায় বলল,” না। এভাবেই ভালো লাগছে। আর শোনো, বেশি কথা বলতে আমার ভালো লাগছে না। আমি রাখি।”
” আচ্ছা, রিতুকে ফোনটা দাও।”
অরোনী রিতুকে মোবাইল দিয়েই বালিশে মাথা গুজে শুয়ে রইল। একটু পর রিতু অরোনীর জন্য বাদাম গুড়ো দিয়ে গরম দুধ বানিয়ে আনল। অরোনী অবাক হয়ে বলল,” আমার এখন ঠিক এটাই খেতে ইচ্ছে করছিল। তুমি কিভাবে বুঝলে রিতু?”
রিতু মিষ্টি করে হাসল। রাফাত যে তাকে ফোনে এটাই বলেছে তা আর রিতু অরোনীকে জানাল না।
দরজার সামনে একজন বয়স্ক মহিলা এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি অরোনীর দিকে তাকিয়ে আছেন ড্যাবড্যাব করে। প্রশ্ন করে জানা গেল তিনি দীপ্তি ভাবীর মা। অরোনীর সামনে এসে বসলেন গল্প করতে।
কথায় কথায় ‘ সুন্দরী বউ’ বলে মুখে ফেনা তুলতে লাগলেন। অরোনীর খুব অস্বস্তিবোধ হলো। এই বাড়ির সবাই নাকি বলে রাফাতের বউ সবচেয়ে সুন্দরী। অথচ অরোনীর সামনে এই কথা কেউ কখনও বলেনি। এই মহিলা না বললে অরোনী জানতেও পারতো না। দীপ্তি নাকি অরোনীর রূপের এমন প্রশংসা করেছে যে বৃদ্ধা আজ শুধু অরোনীকে দেখার জন্যই এখানে ছুটে এসেছেন।
তিনি জোর করে অরোনীকে বিছানা থেকে তুলে তাদের ঘরে নিয়ে গেলেন গল্প করার জন্য। ভদ্রমহিলা এতো বিনয়ের সাথে বললেন যে অরোনী নিষেধ করতে পারেনি। দীপ্তি অরোনীকে দেখে খুব খুশি হলো। অথচ কাল কথাও বলছিল না। শাশুড়ী বদলানোর পর থেকে সবই কেমন ম্যাজিকের মতো বদলে যাচ্ছে! একে একে দীপ্তির পরিবারের আরও অনেক মানুষের সাথে অরোনীর আলাপ হলো। দীপ্তি সবার সাথে অরোনীকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে৷ এদের মাঝে দীপ্তির এক কাজিন ছিল যার নাম রুবায়েত।
ছেলেটা অরোনীর মুখের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইল যেন গাম টেপ দিয়ে তার দৃষ্টি কেউ আটকে দিয়েছে। হ্যান্ডশেকের জন্য সে অরোনীর দিকে হাতও বাড়িয়েছিল। কিন্তু অরোনী এমন ভাব করেছে যেন দেখতেই পায়নি! একটা পুরুষের হাত ধরে হ্যান্ডশেক করার মতো মানসিকতা অরোনীর নেই। এতে রুবায়েতের সামান্য ইগো হার্ট হলো। সুন্দরী মেয়েদের ভাব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অহংকারই সুন্দরীদের অলংকার!
কিন্তু তাই বলে এভাবে অবহেলা করবে! নাহ, রুবায়েত মানতে পারছে না। অরোনী যতক্ষণ ওই জায়গায় ছিল ঠিক ততক্ষণ রুবায়েত নামের অদ্ভুত ছেলেটা তার দিকে তাকিয়েই ছিল। খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি। রুবায়েত কারো সাথে কথা বললেও অরোনীর দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। কি আশ্চর্য! অরোনীর অস্বস্তিতে গা কাটা দিচ্ছে। রুবায়েতের এই ব্যাপারটা কেউ লক্ষ্য করছে না কেন? না পারতে সেখান থেকে উঠে এলো অরোনী। অসহ্য লাগছিল তার।
ডিনারের সময় রাবেয়া নিজে অরোনীকে নিচে যাওয়ার জন্য ডাকতে এলেন। সবার সাথে গল্প করে খেলে নাকি অরোনীর ভালো লাগবে। অরোনী অভিভূত হয়ে গেল। তিনি এখন অরোনীর ভালো-মন্দ নিয়েও চিন্তা করছেন। অথচ আগে অরোনী না খেয়ে থাকলেও খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করতেন না। অরোনী শাশুড়ীর সাথে নিচে গেল। পারিবারিক আলোচনায় এবার সেও সামিল হলো।
সবার আজকের আলোচনার বিষয় বস্তু রুমা। তার বিয়ের কথা আবার উঠেছে। কিন্তু পাত্রের নাম শুনে অরোনী বিষম খেল। আজ বিকালে দেখা হওয়া সেই অদ্ভুত ছেলেটি, মানে রুবায়েতের সাথেই রুমার বিয়ের কথা ভাবছে সবাই। অরোনীর ইচ্ছে করল এখনি নিষেধ করতে। কারণ ছেলে সুবিধার না। কিন্তু দীপ্তির সামনে এই কথা বলা যাবে না। তাছাড়া অরোনীর কথা কি কেউ শুনবে?
চলবে………..