#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ১১
#M_Sonali
কলেজে পৌঁছেই পাগলের মতো শ্রাবনকে খুঁজতে লাগলো চাঁদনী। চাঁদনীকে এমন উত্তেজিত হয়ে কাউকে খুঁজতে দেখে শ্রাবনী দৌড়ে এসে চাঁদনীর হাত ধরে বললো
— কিরে দুষ্টুপাখি কি হয়েছে তোর? এভাবে এদিক ওদিক ছুটে বেরিয়ে কাকে খুজছিস তুই?
— তুই শ্রাবনকে কোথাও দেখেছিস শ্রাবনী? আমি ওকে কোথাও দেখছিনা কেনো? ও কি আজকে কলেজে আসেনি?
চাঁদনীর কথা শুনে চাঁদনীর হাতটা ছেড়ে দিলো শ্রাবনী। তারপর ভয়ার্ত গলায় বললো
— তু তুই শ্রাবনকে কেনো খুঁজছিস চাঁদ?
— দরকার আছে বলেই তো খুঁজছি তাই না।
কথাটা বলেই লাইব্রেরীর দিকে চলে গেলো চাঁদনী। আর শ্রাবনী সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।আর মনে মনে বললো
— যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই সত্যি হলো। চাঁদও ভাইয়াকে ভালবেসে ফেলেছে। কিন্তু এ ভালবাসার পরিনতি যে খুব ভয়াবহ হবে চাঁদের জন্য।
লাইব্রেরীতে পৌঁছেও শ্রাবনকে পেলো না চাঁদনী। শেষে মন খারাপ করে কলেজের মাঠে এসে একটা গাছের নিচে মন খারাপ করে বসে পরলো। সেখানেই ওরা তিন বান্ধবী সব সময় আড্ডা দেয়।
— ঐ চাঁদ দেখ কে এসেছে কলেজে,,
শ্রাবনীর কথা শুনে শ্রাবনীর দিকে তাকালো চাঁদনী। আর দেখলো মিতু হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মিতুকে দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো চাঁদনীর। চাঁদনী দৌড়ে গিয়ে মিতুকে জরিয়ে ধরে বললো
— কেমন আছিস তিতু, তোকে অনেক মিস করেছিরে এই দুদিন। তোর শরীর এখন কেমন?
— আমি ভালো আছি চাঁদ কিন্তু তুই ভালো নেই। কি হয়েছে তোর বলতো কেনো এভাবে আনমনা হয়ে বসে ছিলি তুই?
মিতুর কথা শুনে মিতুকে ছেড়ে দিয়ে চাঁদনী বললো
— তোদের কাছে আমি কখনো কোনো কিছু লুকাইনা। তাই আজকেও লুকাবো না কারন তোরা আমার সব চাইতে কাছের দুজন মানুষ আমার বেষ্টু। আমি শ্রাবনকে ভালবাসি আর শ্রাবনও আমাকে,,
চাঁদনীর কথা শুনে শক্ত করে চাঁদনীর হাত ধরে ঝাকি দিয়ে শ্রাবনী বললো
— চাঁদ কি বলছিস কি তুই এসব। যা বলছিস ভেবে বলছিস তো? কারো সম্পর্কে ভালো করে না জেনে শুনে মাত্র দু একদিনের পরিচয়ে এভাবে কাউকে ভালবাসা যায় না চাঁদ। এটা শুধুই তোর আবেগ। আর আবেগের বসে কিছু করা মানে নিজের ক্ষতি করা।
শ্রাবনীর কথা শুনে চাঁদনী অবাক চোখে তাকিয়ে বললো
— তুই এভাবে কেনো রিয়েক্ট করছিস শ্রাবনী। আর এত রেগেই বা আছিস কেনো। আমি শ্রাবনকে সত্যিই ভালবাসি এটা আবেগ নয় শ্রাবনী এটা শুধুই ভালবাসা। আর আমি শ্রাবনকে বিয়ে করতে চাই।শ্রাবনও নিজে থেকে আমায় বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে।
চাঁদনীর কথা শুনে শ্রাবনীর ভয় যেনো আরো বারতে লাগলো। শ্রাবনী মনে মনে বললো
— আমি তোকে কি করে বোঝাই চাঁদ একজন পিয়র ভ্যাম্পায়ারকে ভালবাসা মানে নিজের মৃত্যুকে আমন্ত্রণ করা। তোর জীবনটা শেষ হয়ে যাবে চাঁদ। আর সেটাও হবে ভাইয়া আর আমার চোখের সামনে যেটা আমরা কেউই সহ্য করতে পারবো না।মনে মনে
শ্রাবনী মনে মনে কথাগুলো বলছে কিন্তু ওর চোখে পানি স্পষ্ট ভাবে ছলছল করছে। শ্রাবনীকে চুপ করে থাকতে দেখে মিতু বললো
— এই শ্রাবনী তোর কি হয়েছে বল তো? তুই এমন রিয়েক্ট কেনো করছিস? আর কেনই বা এমন মুড অফ করে ছলছল চোখে দাড়িয়ে আছিস?
মিতুর কথা শুনে চাঁদনীও জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকালো শ্রাবনীর দিকে। শ্রাবনী কিছু বলবে তার আগেই শ্রাবন পিছন থেকে শ্রাবনীকে ডেকে উঠলো
— এই শ্রাবনী তোরা এখানে আর আমি তোদের কোথায় কোথায় খুজে চলেছি।
শ্রাবনের মুখে শ্রাবনীর সাথে তুই তুই করে কথা শুনে অবাক চোখে তাকালো মিতু আর চাঁদনী।ওদের আরো অবাক করে দিয়ে শ্রাবন এসে শ্রাবনীর মাথায় টোকা দিয়ে বললো
— ঐ তুই আমার বউটাকে কি উল্টা পাল্টা বোঝাচ্ছিস হুমম?
শ্রাবনের কথা শুনে শ্রাবনী মাথায় হাত দিয়ে বললো
— ভাইয়া তুমি আমায় মাড়লে কেনো?
শ্রাবনীর মুখে ভাইয়া কথাটা শুনে মিতু আর চাঁদনী এক সাথে চিৎকার করে বলে উঠলো
— ভাইয়াআআআ,,,,
— হ্যা চাঁদপাখি শ্রাবনী আমার বোন। আমরা দুজন জমজ ভাইবোন। তবে মায়ের মুখে শুনে ছিলাম আমি ওর চাইতে কিছু সময়ের বড়।
শ্রাবনের কথা শুনে চাঁদনী কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রাগি গলায় বললো
— পেত্নী শ্রাবইন্নীর ঘরের শ্রাবইন্নী তোরে আজকে আমি একে বারে মেরেই ফেলবো। এত বড় একটা কথা তুই আমাদের থেকে এতদিন লুকিয়ে রাখছিস? আর এখন কিনা তুই আমায় তোর ভাইয়ের বউ হতেও বাধা দিচ্ছিস? কেনো রে আমাকে বুঝি ভাবি হিসাবে পছন্দ হয়না তোর?
চাঁদনীর কথা শুনে মাথা নিচু করে চুপ করে দাড়িয়ে আছে শ্রাবনী কোনো কথা বলছে না ও। শ্রাবনীর বিষয়টা শ্রাবন বুঝতে পেরে চাঁদনী আর মিতুকে উদ্যেশ্য করে বললো
— তোমরা এখানে একটু দাড়াও আমি শ্রাবনীর সাথে কিছু জরুরি কথা বলেই এখনি ফিরে আসছি। আর তোমাদের জন্যে আরো একটা সার্প্রাইজ আনছি।
কথাটা বলেই মিতু আর চাঁদনীকে কিছু বলতে না দিয়ে শ্রাবনীর হাত ধরে নিয়ে চলে গেলো শ্রাবন। ওরা চলে যেতেই মিতু বললো
— চাঁদ তুই একটা জিনিস খেয়াল করেছিস? ওরা দুজন ভাই বোন কেমন একটা অদ্ভুত না? এতদিন শ্রাবনীকে দেখেছি আজকে শ্রাবন ভাইয়াকেও কেমন অদ্ভুত টাইপের লাগলো।
— তুই তো সব কিছুতেই অদ্ভুত জিনিস খুজে বেরাস মিতু। আমার চোখে তো তেমন কিছুই পরেনি কখনো। জানিনা তোর কেনো এমন মনে হলো।
— আচ্ছা বাদ দে এখন বল তোর আর শ্রাবন ভাইয়ার রিলেশন হলো কি করে। আর কবে থেকে চলছে এসব যে একেবারে বিয়ে পর্যন্ত চলে গেলি?
মিতুর কথা শুনে একে একে সব কিছু মিতুকে খুলে বললো চাঁদনী। সব শুনে মিতু বললো
— আমার এখানেও একটা খটকা লাগছে চাঁদ।
— এখানে আবার কিসের খটকা লাগলো তোর শুনি?
— আরে গাধি তোর কি একবারও মনে হয়নি শ্রাবন ভাইয়া এত রাতে তোর রুমে কি করে যায় প্রতিদিন।
— গাধি আমি নই গাধি হলি তুই পেত্নী। আরে শ্রাবন তো আমার রুমে প্রতিদিন জানালা দিয়ে যায়। কারন আমার জানালায় গ্রিল নেই কাঁচ আছে শুধু। আর কাঁচটা সরিয়ে একটা হাতিও রুমে ঢুকতে পারবে।
— হুমম সেটা মানলাম। কিন্তু তোর রুমের জানাটাতো অনেক উচুতে সেখানে শ্রাবন ভাইয়া কি করে ওঠে ওতো রাতে?
মিতুর প্রশ্নের উত্তরে চাঁদনী কিছু বলবে তার আগেই সেখানে শ্রাবন আর শ্রাবনী এসে হাজির হলো। শ্রাবনীর মুখে এখন হাসি ফুটে আছে। শ্রাবন আসতেই মিতু বলে উঠলো
– তা কি কথা হলো এতক্ষণ ভাই বোনের মাঝে? আর সার্প্রাইজটাই বা কি?
মিতুর কথা শুনে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে শ্রাবন বললো
— আমি আজকেই আমার চাঁদপাখিকে বিয়ে করবো। আর আমাদের বিয়ের শাক্ষি হিসাবে থাকবে শ্রাবনী আর মিতু আপুনি তুমি।আর আমাদের এই বিয়ের কথাটা আমরা চারজন ছাড়া আর কেউ জানবে না,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আগামি পর্বে শ্রাবন আর চাঁদনীর বিয়ে। সবার দাওয়াত রইলো আইসক্রিম নিয়া দাওয়াত খাইতে আইসেন