কখন যে সকাল দশটা বেজে গেছে টেরই পাইনি।আমি আসলে কোন কাজের না। ভাবী যেতে বলেছিলেন কাল রাতে।আমি গিয়েছিলাম ও বটে।তবে আর একটু ধর্য্য ধরে অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল।
সে যা হবার হয়েছে;রাতের কাজ এখন সকালেই করতে হবে।শুরুতেই হোক আর দেরিতেই হোক খাওয়া তো আর ছেড়ে দেয়া যায় না।দ্রুত বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।এরপর এক দৌড়ে ভাবীর বাসার দরজায় গিয়ে নক করলাম।
দরজা খুললেন ভাবীর শ্বাশুড়ি
খুলেই আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন। তিনি কনফিউশানে আছেন আমাকে ভিতরে আসতে বলবেন না-কি বাইরে থেকেই বিদায় করে দিবেন।
শেষমেশ পান চিবানো থামিয়ে এক গাদা রস গিলতে গিলতে বললেন, ‘কী হয়েছে, নাদিম’
-….ইয়া..মানে…ভাবী, আসতে বলছিলেন।
তিনি সরে দাঁড়ালেন। আলী বাবা ও চল্লিশ চোর গল্পের মতো চিচিং ফাঁক স্টাইলে দরজাটা খুলে গেল। আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম।
ভাবীর মেয়ে ঊষা বসে বসে টিভিতে কার্টুন দেখছে।আর একটু পর পর আমার দিকে কেমন যেন অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। আমি ওর কার্টুন চুরি করে নিয়ে যেতে পারি চেহারায় এমন একটা আতঙ্কের ছাপ এনে বললো, ‘আঙ্কেল, তুমি কী আমাদের বাসায় কার্টুন দেখতে এসেছ?’
-না মামনি, তোমার আম্মুর সাথে দেখা করতে এসেছি।
আমার কথা শুনেই মেয়েটা আম্মু আম্মু বলে চিল্লাতে চিল্লাতে রুমের ভিতরে ঢুকে গেল।
একা একা বসে মোটু পাতলু দেখছি। কিন্তু হঠাৎ করেই কেন যেন মনে হলো মোটু চরিত্রটা আমার সামনে চলে এসেছে। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলাম কার্টুনের মোটু না, ভাবির শ্বশুর জামসেদ আঙ্কেল, মানে আমার সামনে জামসেদ আঙ্কেল দাঁড়ানো।
-কী ব্যাপার নাদিম, তোমার আব্বু-আম্মু ভালো আছেন?
-আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল, জ্বি ভালো আছেন। আপনি কেমন আছেন?
-আল্লাহ রাখছেন। তা, এত সকাল সকাল কী মনে করে?
-জ্বি..ভাবী আসতে বলছিলেন।
-ওহ্…
ওহ্ বলেই জামসেদ আঙ্কেল ভিতরে চলে গেলেন। আঙ্কেল ভিতরে যেতে না যেতেই আঙ্কেলের মেয়ে লাকি বেরিয়ে আসল। দূরে ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটা আমার দিকে কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।
ভাবীর ননদ লাকি
মেয়েটা দেখতে খারাপ না। একসময় আমার ভালোই লাগত। কিন্তু আফসোস! প্রেম করে একটা বখাটের সাথে। আসলেই মেয়েরা কখনো ভালো ছেলেদের সাথে প্রেম করে না। তারা খারাপ ছেলেদেরকে ভালো করবার এক মহান ব্রত নিয়ে জন্মায়। নইলে কী আর আমার মতো একটা ভালো ছেলের এখনো সিঙ্গেল থাকা লাগে!
লাকি দূর থেকেই বলল, ‘নাদিম ভাইয়া, কেমন আছেন?
-ভালো। তুমি কেমন আছ?
-জ্বি, ভালো। তা, হঠাৎ আমাদের বাসায় যে?
-ভাবি আসতে বলছেন।
-ওহ্…
-ভাবি কই?
-মেহেদী লাগায়।
-ছি! তুমি না আসলেই একটা…
-আশ্চর্য! ছিছি করেন ক্যান, হাতে মেহেদী লাগানো দোষের কি?
-ওহ্..তাই বলো! ভেঙ্গে বলবা না? তা, মেহেদী ভাই কই?
-ভাইয়া, গোসলে।
লাকি যেতে না যেতেই মেহেদী ভাই এসে হাজির। মেহেদী ভাই আমার বড় আপুর ব্যাচমেট ছিল। কলেজে পড়ার সময় মেহেদী ভাই সারাদিন আমাদের বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করত। টাওয়েলে মাথা মুছতে মুছতে মেহেদী ভাই জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে নাদিম,কী অবস্থা?’
-জি ভাই, ভালো। আপনি কেমন আছেন?
-আর থাকা! বিবাহিত মানুষদের থাকা নেই।চাই শুধু টাকা; টাকা-নাই রে..।এখনোও তো বিয়ে করিসনি, বুঝবি না।
-আমি হেহে করে হেঁসে দিলাম।
-হাসিস না, যা বলছি সত্যি। তা, নাদিয়ার কী অবস্থা?
-আপু আসবে তো, নেক্সট উইক। বাসায় আইসেন।
-তা, হঠাৎ সকাল সকাল আমাদের বাসায়? কখনো তো আসিস না!
-ভাবী আসতে বলছিলেন।
-ভাবী!
-জি, ভাই।
মেহেদী ভাই যাবার আগে আমার দিকে তাকিয়ে এমন একটা লুক দিলেন যেন আমি তার বউটাকে রেপ করতে এসেছি।
বুঝলাম না বেশি সকাল সকাল চলে আসলাম না-কি! সবাই আমার দিকে এমন অদ্ভত ও উদ্ভট দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে কেন? অবশ্য ছুটির দিন– বেলা বারোটাও কারো কারো কাছে ভোর।
আরো পাঁচ মিনিট পর নীলা ভাবী আসলেন। কিছুটা শঙ্কিত, কিছুটা চিন্তিত, কিছুটা বিরক্ত মুখ ভঙ্গি করে বললেন, ‘কী ব্যাপার নাদিম,কেমন আছ?’
-ভালো, আপনি?
-হুম, ভালো। তা, আমি না-কি তোমাকে আসতে বলছি?
-জি ভাবী।
-কিন্তু কখন! আমার তো মনে পড়ে না।
-জি ভাবী, বলছেন।
আমার এমন কনফিডেন্টলি উত্তর শুনে ভাবি ভিরমি খেয়ে গেলেন। একটু নিচু সুরে বললেন, ‘সিরিয়াসলি?’
-জি ভাবি, সিরিয়াসলি।
-কিন্তু কখন..বলো তো একটু?
-কেনো! আপনিই না গতকাল রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন…বন্ধুরা আজ খিচুড়ি রান্না করলাম, যারা যারা খেতে চাও বাসায় চলে এসো।
ভাবী ছেলেমানুষের মতো রাগে চোখ-মুখ শক্ত করে বললেন, ‘তুমি সে জন্য এই সকাল সকাল বাসায় চলে আসছ?’
-জি ভাবি,কাল রাতেও একবার এসেছিলাম। আপনারা বোধ গতকাল একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ছিলেন। নিচে গেটে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলাম; কিন্তু কেউ খুলল না।
ভাবি রাগে আমার দিকে সাধু-সন্ন্যাসীদের মতো তাকিয়ে আছেন। আমি যেকোনো সময় ভস্ম হয়ে যেতে পারি। ভস্ম হই আর যাই হই আজকে ভাবির হাতের খিচুড়ি না খেয়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না। তবে বুঝতেছি না ভাবি খিচুড়ি খাওয়াবেন কি-না?