আঁখি : দ্যা ক্রাশ গার্ল
———————-
ক্লাস নাইনের বি সেকশনের ফার্স্ট গার্ল আঁখি। যেমন সুন্দর তেমন পার্সোনালিটি, দেখলেই যে কারো কঠিন মন তরলে দ্রবিভূত হতে বাধ্য। আমার তো তার চশমা হতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছা করে আই ড্রপ হয়ে মিশে যেতে তার তুলতুলে নরম গালে।
বেনী করা চুলের পুতুল পুতুল মেয়ে আইরিন আঁখি।কতিপয় শিক্ষক থেকে শুরু করে ক্লাসমেট, সিনিয়র ,জুনিয়র সবাই তাঁর আজন্ম প্রেমিক। কিন্তু কেউই প্রকাশ করেনা!
হাই স্কুলে নাকি প্রেমে পড়া পাপ। তাছাড়া ক্লাস নাইনের আঁখির প্রেমে পড়া আরো বড় পাপ!
কেউ না জানলেও ক্লাস টেনের টপ-টেরর নাদিম ভাই জানে। কমন রুমের দরজায় নাদিম ভাই লিখেছিল, “আঁখি তোমার চশমা হবো।“
পরের টুকু ইতিহাস। বেলায়েত স্যার নাদিম ভাইকে পিটিয়ে সানগ্লাস বানিয়ে ফেলছিল !
ক্লাস সেভেনের ফুটফুটে ছেলে শোভন সিনিয়র আঁখির প্রেমে পড়ে বাথরুমের দেয়ালে লিখেছিল
“আঁখি + শোভন”।
শোভনের এমন অশোভন আর অসম প্রেমের কঠিন বিচার করলেন অগ্নিশর্মা বেলায়েত স্যার। ভরা মজলিশে মাঝ মাঠে শোভনকে দিয়ে বলালেন, “বড় আপু মায়ের সমান, আঁখি আপু আমার মায়ের মতো, মা আমাকে ক্ষমা করে দিন।“
এতে শোভনের বাবার কোন লাভ না হলেও; পুত্র স্নেহে বিগলিত হয়ে আঁখি সেদিন শোভনকে মাফ করে দিয়েছিল। এরপর থেকে জুনিয়র ছেলেরা আঁখিকে মাতৃজ্ঞান করে। নাদিম ভাই পিটুনি খাওয়ার পর থেকে সিনিয়র ভাইরাও আর খুব একটা আগায় না।
আগে আঁখিকে দেখলে অনেকেই ননস্টপ হিন্দি গান গাইতো ,
“আখিয়া মিলাও কাভি
আখিয়া চুরাও মে
তুনে কিয়া যাদু…”
নাদিম ভাইয়ের পিটুনি খাওয়া দেখে এখন তারাও চুপসে গেছে। বেলায়েত স্যারের প্রশ্রয়ে আঁখি হয়ে গেল স্কুলের টেরর সুন্দরী। অসংখ্য বোবা প্রেমিকের গর্বিত প্রেমিকা আঁখি এখন হাঁটে যায় হাওয়ায় ভর করে।
সুন্দরী মেয়েদের প্রেমে পড়া যায় কিন্তু ব্রিলিয়ান্ট সুন্দরীরা বিপদজনক। আঁখি সেই ব্রিলিয়ান্ট সুন্দরীদের দলে , স্কুল প্রশাসন তাঁর পক্ষে।
বেলায়েত স্যারের ব্যাপারটা বুঝি না। শালা বুড়া শালিক, ম্যানকা শয়তান কোথাকার । সন্তানসম ছাত্রীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আঁখিকে কেউ কিছু বললেই বুনো ষাঁড়ের মতো তেড়ে আসে !
ক্লাস নাইনে ৭৩ জন স্টুডেন্টের মধ্যে আমার রোল ৭১ আর রাজুর ৭২। প্রেম তো আর রোল নম্বর দেখে হয় না। আমরা দুজন ব্যাক বেঞ্চার ফার্স্ট গার্ল আঁখির কাছে চিঠি লিখবো বলে ঠিক করলাম। সারা রাত জেগে মনের মাধুরি মিশিয়ে চিঠি লিখলাম। প্রশাসন আর বেলায়েত স্যারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ভীতু-রাজু অতি সাহসিকতার সাহিত পিয়নের দায়িত্বটি পালন করলো ! দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার।
শুক্রবার…….
অতঃপর শনিবারে চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার :
জনাব অনিকেত ,
আপনার উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। আপনার আবেগতাড়িত প্রেমপত্র খানা পাইয়াছি।যেহেতু আপনার ১২৮ শব্দের প্রেমপত্রে ৪২ টি বানান ভুল ! সেহেতু পত্রখানা আমাদের বাংলার শিক্ষক শ্রদ্ধেয় বেলায়েত স্যারের কাছে সমর্পণ করিয়াছি। অদ্য টিফিন পরবর্তী বাংলা-২য় ক্লাসে আপনাকে বাংলা বানান সহিশুদ্ধ ভাবে লেখার এক বিশেষ তালিম দেওয়া হইবে। যথাসময়ে উক্ত ক্লাসে উপস্থিত হইয়া তালিম গ্রহনের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে বলা হইল !
বিনীতা
নাম: আঁখি
শ্রেণী : নবম
সেকশন : বি
রোল : ০১
আঁখি নামের এই মেয়ে আমার নিখাঁদ ভালবাসায় ও কেবল ভুল খুঁজে বেড়ালো। হৃদয়ের গভীর ভালবাসা বুঝার ক্ষমতা আঁখি নামের মেয়েদের থাকে না! হে ঈশ্বর আঁখি নামের মেয়েদের হৃদয়ের আঁখি খুলিয়া দিন, খুলিয়া দিন!
আমদের গল্প যদি আপনাদের ভাললাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন এবং বেশি বেশি বন্ধু দের সাথে শেয়ার করে আমাদের উৎসাহ দিবেন যেন আমরা আপনাদের জন্য নতুন নতুন গল্প নিয়ে আসতে পারি।