শুধু তোমাকেই ভালবাসি এ কথার জন্ম মধ্য প্রাচ্যের কোন তেল খনিতে। সংকট মুহুর্তে যা বিস্ফরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে শত মানুষের হৃদয়ে। ফিরছি মূল গল্প-
একটা লঞ্চ দূর্ঘটনার কবলে পড়লো। লঞ্চের এক পৌড়া দম্পত্তি একটা লাইফবোট পেল। স্বামীট বুঝে ফেললো সেখানে একজনের বেশি উঠতে পারবেন না। তাই সে তার স্ত্রীকে পিছনে ঠেলে দিয়ে নিজে লাফিয়ে উঠে পড়লো লাইফ বোটে। ডুবন্ত লঞ্চে একা দাঁড়িয়ে থেকে মহিলা স্বামীর উদ্দেশ্যে চরম আক্ষেপ নিয়ে একটি মাত্র বাক্য চিৎকার করে বলেছিলেন……
শিক্ষক এটুকু বলার পর থেমে গেলেন…….. চারদিকে তাকিয়ে তিনি ছাত্রদের অনুভূতি বোঝার চেস্টা করলেন, এরপর জিজ্ঞাস করলেন- “তোমাদের কি মনে হয়? কি বলে ছিলেন মহিলা!”
-“হারামজাদা, তুমি একটা ইতর, …….আমি কি অন্ধই না ছিলাম!” অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই এ ধরনের জবাব দিলো।
শিক্ষক লক্ষ্য করলেন একটা ছেলে পুরোটা সময় ধরেই চুপ আছে, তার মনটা অনেক খারাপ মনে হচ্ছিল। তাই শিক্ষক তার কাছে গিয়ে মতামত জানতে চাইলে সে বললো, “স্যার, আমার মনে হয়, মহিলাটি বলেছিল, আমাদের বাচ্চাটার যত্ন নিও, ওকে দেখে রেখ।“
শিক্ষক কিছুটা অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই গল্প আগে শুনেছ, তাই না!”
ছেলেটি জবাব দিলো, “আমার মাও অসুখে মারা যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে বাবাকে এ কথাই বলেছিলো।“
শিক্ষক তার সাথে একমত হলেন, “তুমিই ঠিক।“
শিক্ষক আবার গল্পটি বলা শুরু করলেন……..লঞ্চটা ডুবে গেলো,চোখের সামনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল প্রাণ প্রিয় স্ত্রীর তাজা প্রাণ। লোকটা বাড়ি ফিরে একাকী মেয়েকে যত্ন করে বড় করলো।
লোকটি মারা যাওয়ার কয়েক বছর পর……….
তাদের কন্যা রুমের অপ্রয়জনিয় জিনিসগুলো বিক্রি করে দিচ্ছিল; এমন সময় সে তার বাবার একটি ডায়েরী পেল।
সেখানে সে আবিষ্কার করলো, লঞ্চযাত্রায় যাওয়ার আগেই মায়ের দুরারোগ্য অসুখ ধরা পড়েছিলো, চরম মূহূর্তে তার বাবা তাই বাঁচার একমাত্র উপায়ের সঠিক ব্যবহার করেছিলেন।
ডায়েরীতে তার বাবা আরও লিখেছে,
“আমারও তোমার সাথে সাগর তলে ডুবে যেতে ইচ্ছে করছিল নিলা, কিন্তু শুধু মাত্র মেয়ের কথা ভেবে নিষ্ঠূর হয়ে চিরদিনের জন্য তোমাকে একাই সাগর তলে ছেড়ে আসলাম। তুমি হয়তো আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ, কিন্তু আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি কখনো।“
গল্প শেষ হলো, ক্লাসের সবাই একদম চুপ।
শিক্ষক বুঝতে পারলেন, ছাত্র-ছাত্রী গল্পের শিক্ষাটা ধরতে পেরেছে।
পৃথিবীর ভাল এবং মন্দ সব কিছুর পেছনেই অনেক গভীর জটিলতা আছে যা সব সময় খালি চোখে বোঝা যায় না।
……………………
আমাদের কখনোই শুধুমাত্র মানুষের উপরটা দেখেই যাচাই করা উচৎ নয়, না বুঝে অন্যকে বিচার করে ফেলাটা বোকামি।
##খাবারের বিলটা যে সবসময়ই নিজে দিতে চায়, তার মানে এই নয় যে তার টাকা উপচে পড়ছে, এর কারন সে টাকার চেয়ে বন্ধুত্বকে অনেক বড় করে দেখে।
##যারা আগে ভাগেই কাজ করে ফেলে, এর মানে এই নয় যে সে বোকা না, আসলে সে দায়িত্বজ্ঞান সম্পূর্ণ মানুষ।
##যারা ঝগড়া বা বাকবিতন্ডার পরে আগে মাফ চেয়ে নেয়, তার মানে এ নয় সেই ভুল ছিলো, বরঞ্চ সে চারপাশের মানুষকে যথাযথ মূল্যায়ন করে।
##তোমাকে যে সাহায্য করে, সে তোমার কাছে কিছু আশা করে না, বরং তোমাকে একজন প্রকৃত বন্ধু মনে করে।
##কেউ আপনাকে প্রায়ই ম্যাসেজ করে তার মানে কখনো এটা নয় যে তার কোন কাজ নেই, আসলে সে আপনাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে।
একদিন আমরা একে অপর থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো, কিন্তু আমাদের আচার আচরন ও ভালোবাসাগুলো মানুষের হৃদয়ে থেকে যাবে। কেউ না কেউ তো স্মরণ করবে, “বলবে এই হচ্ছে সেই মানুষ যার সাথে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু সময় অতিবাহিত করেছি।“
ভালবাসুন, ভাল থাকুন, ভাল রাখুন।। শুধু তোমাকেই ভালবাসি এ কথার অপব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
আমদের গল্প যদি আপনাদের ভাললাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন এবং বেশি বেশি বন্ধু দের সাথে শেয়ার করে আমাদের উৎসাহ দিবেন যেন আমরা আপনাদের জন্য নতুন নতুন গল্প নিয়ে আসতে পারি।