পারফিউম বা সুগন্ধি খালি চোখে দেখা যায়না কিন্তু অনুভব করা যায়।এই অনুভব যে কতোটা মহো সৃস্টি করতে পারে তা আসলেই অজানা।যুগে যুগে বিশেষ কিছু উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে বিশেষ কিছু মানুষের আগমন ঘটে।ঠিক এই রকমই পারফিউমের সর্বোচ্চ সৌন্দর্য অনুভব করাতে পৃথিবীতে সেরা নাক নিয়ে যে মানুষ জন্ম নিয়েছিল সে তার তৈরি পারফিউম দ্বারা পুরো এক সাম্রাজ্যকে বশিভূত করেছিল।মানুষ হত্যার মতো পাপ করেও সে এনজেল এর খেতাব পেয়েছিল।
এমনি একটি গল্প নিয়ে ১৯৮৫ সালে জার্মান রাইটার PATRICK SUSKIND তৈরি করেছিলেন ঐতিহাসিক উপন্যাস perfume the story of murderer.পরে ২০০৬ সালে উপন্যাসটিকে চলচিত্রে রুপদান করা হয়।
পারফিউম মুভির গল্প
মুভির শুরুতে দেখা যায় জন ব্যপটিস নামক একজন মানুষ জেলখানায় বন্দি।তার হাত-পা শিকলে বাধা।তাকে নির্মম ভাবে টেনে বাহিরে আনা হয়।বাহিরে অসংখ্য লোকের সমাগম,তারা সবাই তাকে মার্ডারার,মার্ডারার বলে ডাকছিল।সবার কাছে সে ঘৃণার পাত্র হিসাবেই ছিল।এই জনো সমাগম এর সামনেই তার অপরাধের শাস্তি শোনানো হয়।তাকে মৃত্যু দণ্ড দেয়া হয়,কিন্তু সাধারণ কোন মৃত্যু দন্ড নয়।মৃত্যুর আগে তার হাত-পা ভেঙ্গে ফেলা হবে তার পর তাকে ফাঁসি দেয়া হবে।এই রায়ে সবাই অনেক খুশি হয়ে যায়,সবার মধ্য অনন্দের উচ্ছ্বাস দেখা যায়।কে এই জন ব্যপটিস,কি তার অপরাধ,কেন সবাই তাকে ঘৃণা করছে?
এই উত্তরগুলো জানানোর জন্য আমাদের ফ্লাশ ব্যকে নিয়ে যাওয়া হয়।দেখানো হয় অতীতের ১৭৩৮সাল প্যারিস শহর।সেখানকার সবচেয়ে নোংরা জায়গা ছিল সেখানকার মাছের বাজার।এই মাছের বাজারের এক মহিলা মাছ বিক্রেতা প্রেগনেন্ট ছিল।মাছ বিক্রির সময় তার পেটের ব্যথা ওঠে,সে ওখানেই আড়ালে সন্তান প্রসব করে।সুন্দর প্যারিসের সবচেয়ে নোংরা জায়গায় জন্ম হয় এই ব্যপটিসের।এর আগেও তার মায়ের কিছু সন্তান হয়েছিল,যার মৃত ছিল অথবা বিকলংগ।
তাই ব্যপটিসের মা তাদের নদীতে ফেলে দিয়েছিল।এই বাচ্চাটিও অজ্ঞান অবস্থায় জন্ম নেয়,তাকেও তার মা ফেলে দিত কিন্তু বাচ্চাটি কোন সাধারণ বাচ্চা ছিলনা।অদ্ভুত ঘ্রাণ ক্ষমতা ছিল বাচ্চাটির,বলা যেতে পারে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ঘ্রাণ নিতে পারা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা ছিল বাচ্চাটির।দূর্গন্ধময় জায়গায় জন্ম নেয়ায় বাচ্চাটি সে সব ঘ্রাণ নিতে না পেরে কেঁদে ওঠে।কান্নার শব্দ শুনে আশে পাশের সবাই সেখানে চলে আসে।মা তাকে আর ফেলে দিতে পারেনা,তাই সে ওখান থেকে পালিয়ে যায়।তার মায়ের এই অপরাধের জন্য পরে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়।জন ব্যপটিসের সাথে অন্যদের নিয়তির এক অদ্ভত তাল-মিল রয়েছে।
এই জন ব্যপটিস যখন যার কাছে যেত তখন তার কোন না কোন ভাবে অনেক উন্নতি হতো,আবার জন ব্যপটিস যখন তার কাছে থেকে চলে যেত তখন তার মৃত্যু হতো।বাচ্চাটিকে অনাথ আশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয়।অনেক ছোট এই অনাথ আশ্রমে জায়গার অনেক ঘাটতি ছিল।তাই নতুন এই বাচ্চার এখানে আসা অন্য বাচ্চারা সহ্য করতে পারেনা।তারা তাকে মেরে ফেলার চেস্টা করে কিন্তু ওই সময় অনাথ আশ্রমের কেয়ার টেকার দেখে ফেলে এবং বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে।তার মানে এই না যে সে এই বাচ্চাদেরকে ভালবাসে উল্টো বলা যায় তার ইনকম এই বাচ্চাদের উপর নির্ভর করে।
এই বাচ্চাগুলো একটু বড় হয়ে গেলে তাদের বিভিন্ন কারখানায় বিক্রি করে দেয়া হতো।অনাথ আশ্রমে বাচ্চাগুলোর অবস্থা খুবই শোচনিয় ছিল।তার অনেক কস্টে জীবন যাপন করতো।অনাথ আশ্রমে আনার পরেই সবায় বুঝে গিয়েছিল সে সবার চেয়ে আলাদা এবং বিশেষ কেউ।
ধিরে ধিরে জন বড় হয় এবং ৫বছর পর্যন্ত সে কারো সাথে কথায় বলে নি।অন্য সব ছেলেরা যখন খেলাধূলা নিয়ে ব্যস্ত থাকত জন তখন তার ঘ্রাণ ক্ষমতা নিয়ে ব্যস্ত থাকত।সে তার আশে পাশের সবকিছুরই ঘ্রাণ নিতো।তার ঘ্রাণ ক্ষমতা এতটাই প্রক্ষর ছিল যে তার দিকে যদি কোন কিছু ছুড়ে মারা হতো তবে সে তা না দেখে ঘ্রাণ শুকেই ধরে ফলতো।জন এর বয়স যখন ১৩ তখন তাকে এক চামড়া কারখানায় তাকে শ্রমিক হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়।একই ভাবে জনকে বিক্রি করে দেওয়ার পরে অনাথ আশ্রমের ওই মহিলা সিনতাই এর কবলে পড়ে মারা যায়।
জনকে যে চামড়া কারখানায় কারখানায় নিয়ে আসা হয় তার পরিবেশ খুবই নোংরা ছিল।এখানের পরিবেশ এতটাই নোংরা ছিল যে এখানকার কর্মচারি কেউই ৪/৫ বছরের বেশি বাঁচত না।একমাত্র জনই এখানে ৫ বছরের বেশি সময় কাজ করেছিল।এ থেকে বুঝা যায় জন এখানের সবার চেয়ে আলাদা।তার আলাদ কিছু ক্ষমতা আছে।যা তাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে।
তার মালিক একবার তাকে চামড়া বিক্রির জন্য তাকে শহরে নিয়ে যায়।সে প্রথম শহরে আসে,এতোদিন সে অপরিষ্কার পরিবেশে ছিল এবার সে শহরে এসে নিত্য নতুন ঘ্রাণ নিতে পারছিল।এভাবে ঘ্রাণ নিতে নিতে সে একটি সুগন্ধির দোকানের সামনে চলে আসে।এটা ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত পারফিউমের দোকান।এখানে এসে সে ওই সময়ের বিখ্যাত পারফিউম এমো এন সাইকির ঘ্রাণ পায়।এরপর পরই সে আরো একটি ঘ্রাণ পায় যা,যে ঘ্রাণ তার মনকে মাতিয়ে তোলে।সে মুগ্ধ হয়ে ওই ঘ্রাণটির পিছু পিছু চলতে থাকে।সুগন্ধিটি এক ফল বিক্রেতা মেয়ের শরীর থেকে আসতেছিল।
সুন্দরী সে মেয়ে জনের পিছু আসা বুঝতে পারে।সে জনকে কিছু ফল দেখিয়ে বলে সে কিনতে চায় কি না?কিন্তু জন তো শুধু সুগন্ধই বুঝে,সে আর কিছুই বুঝে না।সে ওই মেয়ের এগিয়ে দেওয়া হাত থেকে সুগন্ধ নিতে থাকে।এরকম আচরণ দেখে মেয়েটি ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।জন তার ঘ্রাণ পেয়েছিল,সে ওই ঘ্রাণের পিছু করতে থাকে।এভাবে পিছু করতে করতে সে এক সময় মেয়েটিকে পেয়ে যায়।
সে মেয়েটির কাছে এসে আবার ঘ্রাণ নিতে থাকে,মেয়েটি ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে।জন মেয়েটির মুখ চেপে ধরে ঘ্রাণ নিতে থাকে।এভাবে মুখ চেপে ধরে রাখার জন্য মেয়েটি মারা যায়।জন নিজেও জানেনা,সে অজান্তে কিভাবে একটি মেয়েকে হত্যা করে ফেলেছে।কিন্তু তাতে তার বিন্দু মাত্র আফসস নেই,তার সম্পর্ক যেন শুধু সুগন্ধের সাথেই।সে এর জন্য সবকিছু করতে পারে,এতা পেলে তার আর কিছুর দরকার নেই।
জন মৃত মেয়েটির পাশে বসে তার ঘ্রাণ নিতে থাকে,কিন্তু মৃত্যুর পরে ধিরে ধিরে মেয়েটির শরীর থেকে ঘ্রাণ নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছিল।জন বিচলিত হয়ে পরে,সে এই ঘ্রাণ কিছুতেই হারাতে চায়না।ওই রাত জন আর ঘুমাতে পারেনা।সে সাড়া রাত জেগে জেগে ভাবতে থাকে সে কি ভাবে ওই ঘ্রাণ ধরে রাখতে পারে।
ওই শহরের এক সময়ের বিখ্যাত পারফিউম প্রস্তুত কারক ছিল বালতেনি। একসময় তার বিপুল জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন তা নেই।নতুন ধাঁচের পারফিউম প্রস্তুত কারকদের আনাগোনায় তার পুরনো ধাঁচের পারফিউম টিকতে পারছিল না।
সে নিত্য নতুন ফরমুলা ব্যবহার করেও এ ব্যবসায় সফল হতে পারছিল না।সে ওই সময়ের জনপ্রিয় পারফিউম এমন এন সাইকির ফর্মূলা জানার চেস্টা করে যাচ্ছিল, কিন্তু সক্ষম হচ্ছিলনা।
একদিন জন সেখানে চামড়া ডেলিভারি দিতে আসে।সে এখানে এসে এমন এন সাইকির ঘ্রাণ পায়।সে বালতিনি কে বলে সে তাকে এই ঘ্রাণ প্রস্তুত করে দিতে পারবে।বালতেনি তার কথা বিশ্বাস করেনা,সে তাকে হেও করে।পারে বালতেনি তার কথায় রাজি হয়ে তাকে একটি সুযোগ দেয়।জন বালতেনিকে এমন এন সাইকির থেকেও ভাল পারফউম তৈরি করে দেয়।বালতেনি সেই পারফিউমের ঘ্রাণ নিয়ে জীবনের সেরা অনুভূতি পায়।জন বালতেনিকে বলে সে যদি জনকে তার কাছে রেখে দেয় তবে সে এরচেয়েও ভালো পারফিউম বানিয়ে দিতে পারবে।তাকে শুধু পারফিউম সংরক্ষণ এর কৌশল শিখাতে হবে।বালতেনি জনকে চামড়া ব্যবাসায়ীর কাছ থেকে কিনে নেয়।জনকে দূর করার সাথেই চামড়া ব্যবসায়ী পানিতে ডুবে মারা যায়।
জন বালতেনিকে বিভিন্ন ফর্মুলা ব্যবহার করে নিত্য নতুন পারফিউম বানিয়ে দেয়। এ পারফিউম গুলো বিক্রি করে বালতেনি তার জনপ্রিয়তা আবার ফিরে পায়। বালতেনি জনকে বিভিন্ন পারফিউম সম্পর্কে জানাতো।সে বলে একটা পারফিউমের ৩টা স্তর থাকে।প্রতিটা স্তরে ৪টা করে নোড থাকে।এভাবে ১২টি নোড মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ ভালো পারফিউম তৈরি হয়।পারফিউমকে যদি একটি বাড়ি ধরা হয় তবে স্তর গুলো তার দেয়াল আর নোডগুলো হচ্ছে ইট।কথিতো আছে এই ১২টি নোডের বাহিরে আরেকটি নোড আছে,যদি তা ব্যবহার করা হয় তবে তা পৃথিবীর সেরা পারফিউম হবে।যার মোহ পৃথিবীকে বশ করে ফেলবে,দিতে পারবে স্বর্গের অনুভূতি।এতোটাই ক্ষমতা হবে সেই পারফিউমের।জন অবাক হয়ে এসব শুনছিল,হয়তো সে ভাবছিল একদিন সে সবাইকে এই পারফিউম বানিয়ে দেখাবে।
বালতেনির কাছ থেকে জন
পারফিউম সংরক্ষন
করা শিখতে চাচ্ছিল।সে চাচ্ছিল সে যদি অন্য কোথাও ভাল সুগন্ধ পায় তা যেনো সে বের করে অন্য কোথাও সংরক্ষণ করতে পারে,সে সুগন্ধ যেন কখনো হারিয়ে না যায়।বালতিনি তাকে একটি পদ্ধতি শিখায়,সে দেখায় কিভাবে দশ হাজার গোলাপ ফুল থেকে গন্ধ বের করে তা সংরক্ষণ করা যায়।বালতিনি তার যন্ত্রের সাহায্যে গোলাপের বাষ্প আলাদা করে ও সুগন্ধ সংরক্ষণ করে।বালতিনির কাছ থেকে এটা শিখে জন ফুলের পর অন্য জিনিস থেকেও সুগন্ধ আলাদা করার চেস্টা করতে থাকে।একদিন রাতে বালতিনি দেখে জন কাদছে।জন বলে বালতিনি তাকে মিথ্যা বলেছে।এভাবে সব ঘ্রাণ ধরে রাখা যায়না।সে লোহা,তামা ও গ্লাস জাতিও পদার্থের ঘ্রাণ ধরে রাখতে পারছিলনা। বালতিনি দেখতে পায় জন তার বিড়ালটার উপরেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে।সে বিড়ালটার শরীর থেকেও সুগন্ধ বের করার চেস্টা করেছে।
বালতিনি এতে রেগে যায়,সে বলে এভাবে কোন প্রাণির শরীর থেকে সুগন্ধ বের করা যায়না।এটা শুনে জন সেন্সলেস হয়ে যায়,শরীর থেকে ঘ্রাণ বের করা যায়না এটা শুনে সে ধিরে ধিরে অসুস্থ হয়ে যায়।বালতিনি অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে,কেননা তার পারফিউম ব্যবসা জনের উপরেই নির্ভর করে।
জন তার কাছে প্রাণির সুগিন্ধ ধরে রাখার অন্য উপায় আছে কি না জানতে চায়। বালতিনি বলে প্রাণির চর্বি গলিয়ে সে তার সুগন্ধ সংরক্ষণ করতে পারবে,কিন্তু এই পদ্ধতি সে পাড়ে না।সে গ্রাস শহরে গেলে এই পদ্ধতি শিখে নিতে পারবে।জন সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।একশত পারফিউম ফর্মূলা দেওয়ার মাধ্যমে বালতিনি তাকে মুক্তি দেয়,সাথে একটি সুপারিশ পত্র ও লিখে দেয় যেন জন ওখানে গিয়ে কাজ পায় এবং পদ্ধতিটি শিখে নিতে পারে।একশতো ফর্মুলা পেয়ে বালতিনি অনেক খুশি হয়,কিন্তু একই ভাবে জন দূরে যাওয়াই বালতিনির বাড়ি ধসে পড়ে বালতিনি মারা যায়।
জন অন্য শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।সে এই প্রথম মুক্তির স্বাদ পায়,সে এখন কারো গোলাম নয়।সে পাহার পথ দিয়ে গ্রাস শহরে যেতে থাকে।পাহারের এক গুহায় সে কিছুদিন অবস্থান করে।একদিন রাতে সে স্বপ্নে দেখে ওই ফল বিক্রেতা মেয়ে তার কাছাকাছি রয়েছে কিন্তু সে তাকে অনুভব করতে পারছে না,সে তাকে দেখতে পাচ্ছেনা।জনের ঘুম ভেঙ্গে যায়,উঠে সে তার নিজের শরীরের ঘ্রাণ নিতে থাকে কিন্তু তার নিজের শরীরের কোন ঘ্রাণ নেই।তাই মেয়েটি তাকে দেখতে পারছিলনা।পৃথিবীর সর্ব উৎকৃষ্ট নাক যার শরীরে, যে পৃথিবীর সেরা সুগন্ধময় প্রসাধনি তৈরি করতে পারে তার নিজের শরীরের কোন সুগন্ধ নেই।জন এতে কস্ট পায়,সে ভাবে যার শরীরের কোন গন্ধ নেই এই পৃথিবীতে তার কোন মূল্য নেই।সে সিদ্ধান্ত নেই সে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা পারফিউম বানিয়ে পৃথিবীকে তার মূল্য বুঝিয়ে দিবে।
গ্রাস শহরে ঢুকার সময় জন আবার সে ঘ্রাণ পায় যে সে এর আগেও পেয়েছিল ওই ফল বিক্রেতা মেয়ের কাছে।এই সুগন্ধ আসতেছিল লৌরা নামের এক মেয়ের শরীর থেকে।সে এই ঘ্রাণের পিছু নিতে নিতে ওই মেয়ের বাড়ি পর্যন্ত চলে আসে।লৌরা এই শহরের সবচেয়ে ধনি ও প্রভাবশালী লোক এন্টনির মেয়ে ছিল।জন গ্রাস শহরে এনরফি নামক এক মহিলার দোকানে কাজ শুরু করে।এখানে সে প্রাণি চর্বি থেকে সুগন্ধ বের করার দুটি পদ্ধতি শিখছিল।জন পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা পারফিউম বানাবে এর জন্য সে যে কোন কিছু করতে রাজি।এরই ধারা বাহিকতায় সুন্দর সুবাসের অধিকারী এক মেয়েকে হত্যা করে,তার শরীর সে প্রাণি চর্বির সাথে সিদ্ধ করে।এবারও সে ব্যর্থ হয়,সে মেয়েটির শরীর থেকে সুগন্ধ বের করতে পারেনা।
এবার সে দ্বিতীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে।সে ওখানকার এক পতিতাকে ভাড়া করে নিয়ে এসে তার শরীরে চর্বির লেপ লাগিয়ে দেয়।পতিতাটি এসব দেখে ঘাবড়ে যেতে থাকে,এক পর্যায়ে সে আর রাজি হয়না।জনকে তার টাকা ফেরত দিয়ে চলে যেতে বলে।তখন জন তাকেও মেরে ফেলে এবং তার শরীরে চর্বির লেপ লাগিয়ে তাকে সংরক্ষণ করে।পরে জন তার শরীরের চর্বি উঠিয়ে তা থেকে ঘ্রাণ বের করতে সক্ষম হয়।এরপর জন বালতেনির কথা অনুযায়ি ১৩ বোতলের একটি সেট তৈরি করে। এই সেট পূরণের মাধ্যমে সে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট পারফিউম তৈরি করবে।
আর এই ১৩ বতলের প্রত্যেকটির জন্য প্রয়োজন হবে একটি করে নারীর দেহ।
লৌরার বার্থডের দিন জন তাকে তুলে নিয়ে যাবার জন্য তাদের বাসায় আসে।জন লৌরাকে একা পেয়ে তুলে নিতেই ধরে কিন্তু ওখানে একজন চলে আসায় তা আর হয়ে ওঠে না।তাই সে ওই পার্টিতে আসা দুই যমজ বোনকে তুলে নিয়ে যায়।তাদের শরীর থেকে সুগন্ধ বের করে জন তার প্রথম দুই বোতল পূর্ণ করে।
এই ডেড বডিগুলো শহরের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যেতে থাকে,যার ফলে শহরের মানুষদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।পুরা শহর কার্ফু জারি করা হয়।সবাই তাদের বাসার মহিলাদের লক করে রাখতে শুরু করে।লৌরার বাবা তার মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে,সে ভাবে এই হত্যাকারী সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করে তাদের কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে নিয়ে মেরে ফেলছে;আর তার মেয়ে ওই শহরের সবচেয়ে সুন্দরি মেয়ে ছিল।
এর মধ্য জন ১২টি মেয়ে হত্যা করে ১২টি বোতল পূর্ণ করে ফেলেছে।তার আর মাত্র একটি মেয়ের সুগন্ধ দরকার, আর এটা সে লৌরা নামক ওই মেয়ের শরীর থেকেই নিবে।এতোগুল মেয়ে হত্যা হবার জন্য চার্চে একটি সভা বসে,এখানে সবায় মর্মাহতো আর ক্ষুদ্ধ চিল।তারা সবাই এটা থেকে নিস্তার পেতে চাচ্ছিল।ওই সময় একটি সংবাদ আসে কেনাবল শহরে একটি হত্যাকারি ধরা পড়েছে আর সে নিজেকে হত্যাকারী বলে স্বীকার করেছে।এটা শুনে সবাই খুশি হয় এবং আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে।
এন্টনি এটা মেনে নিতে পারেনা, সে বলে এটা ভুল কোন লোক;কেননা লোকটি বলেছে সে মেয়েগুলোকে চুল কেটে নির্যাতন করেছে। লাশগুলোর চুল কাঁটা থাকলেও তাদের শরীরে নির্যাতন এর কোন চিহ্ন ছিলনা। হত্যাকরী এদের অনেক যত্নে খুন করেছে,কিন্তু এন্টনির এসব কথা কেউ মেনে নেয়না।সবাই খুশিতে মেতে থাকলেও এন্টনি ওই শহর থেকে চলে যায়।যাবার সময় লৌরার ঘ্রাণ জন এর নাকে আসে,সে ওই ঘ্রাণের পিছু পিছু শহর ছেড়ে চলে যায়।
অন্যদিকে মারা যাওয়া ওই পতিতার বিড়াল জনের বাড়ি এসে মহিলাটির জামা কাপড় মাটি থেকে খুঁড়ে বের করে ফেলে।পরে আশেপাশের সবাই সেখানে এসে এখন পর্যন্ত খুন হওয়া ১২জন মেয়েরই কাপড় খুঁজে পায়।পুলিশ জনকে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে,কিন্তু জন ততোক্ষণে লৌরাদের পিছু অন্য শহরে চলে গেছে।
এন্টনি নতুন শহরে এসে একটি হোটেলে ওঠে।এখানে সে তার মেয়েকে একটি রুমে বন্দী করে রাখে।এন্টনি ওই রুমের চাবি সব সময় নিজের কাছে রাখতো।জন একরাতে ওই হোটেলে এসে গোপনে লৌরার রুমের চাবি নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে।এরপর সে লৌরাকে হত্যাকরে এবং তার ১৩তম বোতল ভর্তি করে।পরের দিন এন্টনি তার মেয়েকে মৃত অবস্থায় পায় ।মেয়েকে হারিয়ে সে পাগলের মতো কাঁদতে থাকে।
অন্যদিকে জন তার ১৩তম সুগন্ধ পেয়ে গেছে।এটাকে সে অন্য ১২টির সাথে মিশিয়ে নতুন পারফিউম তৈরি করে,যেটা বানানো প্রায় অসম্ভব।এরপর সেখানে পুলিশ চলে আসে এবং জনকে গ্রেফতার করা হয়।এখানে থেকে আমাদের নিয়ে আসা হয় একদম মুভির শুরুতে,যেখানে জনকে দুই দিন পর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
ফাঁসির দিন এসে যায়।শুধু ওই শহর নয়,আশে পাশের শহর থেকেও বিভিন্ন মানুষ আসে ঐতিহাসিক এই খুনিকে দেখার জন্য।গার্ডগুলো জনকে নিয়ে আসতে যায়,ওই সময় সুযোগ বুঝে জন তার বানানো পারফিউমটি খুলে ধরে।পারফিউমের গন্ধে গার্ড ও আশেপাশের সবাই গন্ধে মুগ্ধ হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর দেখা যায় জন ফাঁসির মঞ্চে এসে প্রবেশ করে রাজকুমারের বেশে।জল্লাদ তার গায়ে লেগে থাকা পার্ফিউমের গন্ধে মুগ্ধ হয়ে যায়,সে তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং জনকে নির্দোষ বলতে থাকে।
এরপর জন তার পারফিউম এর সুবাস একটি রুমাল কিছুটা ঢেলে সবার মাঝে এই সুবাস ছড়িয়ে দেয়।আশেপাশের সবায় এই সুবাসে মুগ্ধ হয়ে যায়।তার অদ্ভত সুবাস পায়,যেন সর্গের সুবাস তাদের মহিত করে যাচ্ছে।তার পৃথিবীর সবকিছু ভুলে যায়,ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে।তারা সবাই জনকে এঞ্জেল মনে করতে থাকে,এমন কি লৌরার বাবা পর্যন্ত নিজেকে জনের কাছে সোপে দেয় এবং জনের কাছে ক্ষমা চায়।জন এই প্রথম বারের মতো ভালবাসা অনুভব করে।সে এর আগে কখনো ভালবাসা পায়নি।
সে চোখ বন্ধ করে ওই ফল বিক্রেতা মেয়ের কথা মনে করে;যাকে সে ভালবাসতে পারতো,ভালোবাসা পেতে পাড়তো।তার দেহের সুগন্ধকে আজীবনের জন্য আপন করে নিতে পারতো।শুধু সুগন্ধের সন্ধানে সে ওই মেয়ে সহ আরো অনেক কে হত্যা করে ফেলেছে।এগুলো ভেবে জন অনেক কস্ট পায়।
জন সেখান থেকে চলে যায়।সে এমন ক্ষমতা পেয়েছিল যা পৃথিবীর সকল ক্ষমতার উর্দ্ধে।তার কাছে এমন এক শক্তি রয়েছে যা দিয়ে সে পৃথিবীর যে কোন সম্প্রদায়কে বসীভুত করতে পারবে।সে চাইলেই বাদশা কে প্রজা বানিয়ে পুরো সম্রাজ্য তার করে নিতে পারবে,কিন্তু সে এসবের কিছুই করেনা।সে তখন ভাবতে থাকে সবাই তাকে এই পার্ফিউমের মোহে ভালোবাসতেছে,সম্মান করতেছে কিন্তু এই মোহ কেটে গেলেই তার আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না।তাকে কেউ ভালবাসবেনা,সম্মান করবেনা।
এই কৃত্রিম ভালবাসা দিয়ে কি হবে?দিন শেষে যার অস্বিত্ব নেই।তাই সে আর এই ভালোবাসা চায়না।সে নিজেকে পূর্বের মতোই তুচ্ছ মনে করতে থাকে।সে যে লক্ষ্য নিয়ে এগচ্ছিল তা হয়তো পূরণ হয়ে গেছে কিন্তু জীবনের আসল লক্ষ্যই সে হারিয়ে ফেলেছে।জীবনে তার আর কোন আশা নেই। সে হাটতে হাটতে ওই মাছের বাজারে চলে আসে যেখানে সে জন্মেছিল।ওইখানে তার ঘ্রাণ নিতে নিতে সবাই তার উপর ঝাপিয়ে পড়তে শুরু করে একপর্যায়ে তার তার শরীরের বিভিন্ন আংশ ছিঁড়েই ফেলে।
পরের দিন সকালে ওইখানে জনের বস্ত্র ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়না।আর এইভাবেই পৃথিবীর সেরা নাকের অধিকার ও গুনি পার্ফিউম তৈরি কারির মৃত্যু ঘটে।আর ওই বোতল থেকে সর্বশেষ ফোটা পার্ফিউম সেখানে পরে শেষ হয়ে যায়।যার জন্য হয়তো Parish শহরকে বলা হয়
THE CITY OF LOVE AND ROMANCE