৩৫.
সময় টা আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি। ভ্যপ্সা গরমে সবাই অতিষ্ঠ। ঠিক তখনই আল্লাহ তায়ালার রহমতের বৃষ্টি শুরু হলো ভোর থেকে। সকাল হতে হতেই বেশ ঠান্ডা হয়ে গেলো আবহাওয়া, ঠান্ডা পেয়ে বাচ্চারা বেশ আরাম করে ঘুমাচ্ছে তাই মলি ভাবলো আজকে আর ডাকবে না তিতলিকে স্কুলে যাবার জন্য।
গত দুইদিন যাবত মলি খুব অনিশ্চয়তাতে ছিলো। জিংগেল গাইবার যে অফার এসেছে তা নিয়েই ভাবছে। যেদিন অফার এসেছিলো সেদিন রাতেই ফাহাদ ফোন করেছিলো।
হ্যালো, মলি, কংগ্রেচুলেশন।
আরে ধুর কি বলো, এখনো কিছুই ঠিক হয়নি।
ঠিক হয়নি মানে? তুমি এক্সেপ্ট করো নি অফার?
আমি আসলে বুঝতে পারছিনা আমার এক্সেপ্ট করা ঠিক হবে কিনা। আমি খুব ই কনফিউজ।
ফাহাদ একটু ভেবে বলল, হুম,কেন কনফিউজ বলো তো। একদিন তুমি ই কিছু একটা করতে চাইলে, মনে আছে? নিজের জন্য কিছু, নিজের পায়ে দাড়াতে পারোনি বলে মন ভার করেছিলে। তবে আজকে এত ভাল অফার পেয়ে এখনো ভাবছো।
মলি বুঝতে পারছে না কি বলবে। তারপর নিচু গলায় বলল, ফাহাদ, আমি কি আসলে পারবো ভালো গাইতে। তুমি ও তো গাও, আমার গাওয়া গান কিছু হলেও বুঝবে। সত্যি করে বলো তো, আমি কি জিংগেল টা গাইতে পারবো?
ফাহাদ খুব কনফিডেন্টলি বলল, অবশ্যই পারবে। কি বলছো! তুমি কত্ত ভালো গাও। তোমার এই গান গাওয়ার জন্যই কত ছেলে পেলে কলেজ লাইফে পাগল ছিলো।
মলি অবাক হয়ে ঠোঁট হা হয়ে গেলো। তারপর আশ্চর্য কন্ঠে বলল, কি যা তা বলছো!
ফাহাদ অট্টহাসি দিয়ে বলল সেই তালিকাতে কিন্তু আমি ও ছিলাম। দেখছো না বিয়ে করিনি। হা হা হা।
মলি খুব বিব্রতবোধ করলো, কি বলছে ফাহাদ। এই নিয়ে দুই দিন ফাহাদ বিয়ে না করার কারণ হিসেবে মলিকে দাঁড় করিয়েছে। তাই মলি সিরিয়াস কন্ঠে বলল,
ফাহাদ আমি সিরিয়াস, কোনো ফাজলামো না প্লিজ।
ফাহাদ ও আত্মসমর্পণ ভংগীতে বলল, ওকে ওকে আমি সিরিয়াস। শোনো আমি বলছি তুমি গাইতে রাজি হউ। নিজেকে প্রুভ করার এইটাই সুযোগ।
কিন্তু আবিদ! ও যদি মাইন্ড করে। মলি চিন্তিত হয়ে বলল।
আচ্ছা কেন মাইন্ড করবেন উনি। তোমার সংসার সব সামলেই তো পাশাপাশি কিছু করছো। আর উনি তো দুইদিন যাবত অফিসে যাচ্ছেন ই। এখন ত অফিসের প্যারা ও নাই তোমার।
মলি রাজি হয়, তারপর আরো কিছুক্ষণ তাদের মাঝে কথা হয়। ফাহাদের সাথে কথা বললে আসলেই সব টেনশন গায়েব হয়ে যায়। এর কিছুদিন পর ই রুমকির বাসাতেই বসেই পার্থ এর সাথে ডিল ফাইনাল হয়। এর কয়েকদিন পর থেকেই মলির স্টুডিও তে গিয়ে গান প্র্যক্টিস শুরু হয়। শুরু হয় তার জিংগেলে কন্ঠ দেয়া। তার গাওয়া গান যেদিন রিলিজ হলো সেদিন সে এত টেনশনে ছিলো। কেমন হবে, দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে সব ভেবে অতিরিক্ত উত্তেজনা আর টেনশনে মলি সারা ঘর পায়চারি শুরু করে।
প্রথম যেদিন তার গাওয়া জিংগেল টি প্রকাশ পায় সেদিনই শুভেচ্ছা জানাতে রুমকি আর ফাহাদ আসে মলির বাসায়। ড্রয়িং রুমেই আড্ডা দিচ্ছিলো তারা, মলি ওদের দুইজন কেই রাতের খাবার খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো। মলি নিজ হাতে সেদিন বিরিয়ানী, রোস্ট আর স্যালাদ করলো। সাথে রাখলো লেমন মিন্ট। খাবার টেবিলে বসে সবাই এক সাথে হু হু হা হা হিহি করে যাচ্ছিলো। ঠিক ওই সময় ই আবিদ আসলো বাসায়। ড্রয়িং রুম পার হয়ে ডাইনিং থেকে আওয়াজ আসতেই ময়না কে জিজ্ঞেস করলো,
কারা এসেছে বাসায়? ময়না ও ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো, ভাবিসাবের বন্ধু বান্ধব। মূহুর্তেই আবিদের মেজাজ তেঁতে উঠলো। বন্ধুবান্ধব মানে কি? নিশ্চয়ই ফাহাদ নামের ছেলেটা আছে সাথে আবিদ মনে মনে ভাবলো। আবিদ সাথে সাথেই ডাইনিং এর পথে চলল। তাদের কথা ও হাসির মাঝেই আবিদ প্রবেশ করে। আবিদ কে দেখে রুমকিই প্রথম সালাম দেয়, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন?
আবিদ বেশ রুড হয়ে প্রবেশ করেছিলো কিন্তু রুমকির এমন হাস্যজ্জ্বোল ব্যবহারে সেও হাসি হাসি মুখে জবাব দিলো।
জি, ভালো আছি, বসুন না দাঁড়িয়ে কেন? প্লিজ বসুন। ফাহাদ ও হাত বাড়িয়ে দিলো সাথে সাথে বলল,ভাই জয়েন আস। আবিদ ব্যাপার টা এরিয়ে গেলো কিন্তু অবাক চোখে মলির দিকে তাকিয়ে দেখলো একবার। মলি স্থির,যেন এখানে কেউ নেই, কারো সাথে কথা বলার ও প্রয়োজন নেই। আবিদ মনে মনে রাগে ফেটে পড়লো। এই মলি কে কি সে বিয়ে করেছিলো? অফিস থেকে আসলে তো মলি সারাক্ষণ তার প্রয়োজনীয় সব ব্যপার গুলো মিটায়। মাঝে কেয়ার সাথে এটাচ থাকার সময় মলির সংগ যখন চাইতো না তখনো ময়না কে দিয়ে সব খোজ নেয়াতো। অথচ জলজ্যান্ত মানুষ এখন সামনে দাঁড়িয়ে। আবিদের বুকে কষ্ট জমতে লাগলো, স্পষ্ট বুঝতে পারলো তার জন্য মলির ইগ্নোরেন্স বরাদ্ধ। সাথে হয়তো এখানে মলি তাকে চাইছে না থাকুক। অবহেলা, অবহেলা অবহেলা মনের মাঝে ঘনটার মতন বেজে উঠলো একটি শব্দ। যেনো মলি ফিরিয়ে দিচ্ছে পুরো টা। অবহেলা অবহেলাতে কাটাকাটি, কিছুই জমা রাখবে না আর, শোধবোধ করেই ছাড়বে মেয়ে টা। এসব ভাবতে ভাবতেই টাই টা আলগা করতে করতে চলে যাচ্ছিলো। যাবার আগে নিজ থেকেই বলে গেলো,
মলি ফ্রি হয়ে একবার এসো উপরে।
এমন সময় ফাহাদ ই আবার ডেকে বসে। আবিদ ভাই, একটা সারপ্রাইজ আছে। আমরা কিন্তু মলিকে অভিনন্দন জানাতে এসেছি। সারপ্রাইজ টা আপনাকেই দিবে মলি।
মলি স্তম্ভিত, ভাবতেই পারেনি এই পাষাণ লোক কে এভাবে বলবে ফাহাদ। মলি তো ঠিক করেছিলো কিছুই বলবে না। জানলে জানুক না জানলে না জানুক। কিন্তু বলবেনা তাকে। কি বলবে আসলে, যে আবিদ আমি একটা জিংগেলে কণ্ঠ দিয়েছি। কিংবা আমি গান দিয়েই নতুন করে ক্যারিয়ার গড়তে চাই। এসব মলির কাছে অর্থহীন। তাই বলবে না ভেবেছিল। অথচ ফাহাদ তাকে বলেই দিল। আবিদ ফাহাদের কথা শুনে আবার ফিরে এলো। ফাহাদের দিকে তাকিয়েই আবিদ বলল,
আপনি ই বলুন, কি সারপ্রাইজ। যেহেতু মলির সব কিছুই জানেন। ফাহাদ ঠিকই পিন মেরে কথা টা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু সে এটাই চাইছে মলির জন্য একটু হলেও সে পসেসিভ হোক। তবেই দুজনের মাঝে আবার ভালোবাসা তৈরি হবে।
ফাহাদ হেসে বলল, আপনার বউ তো গায়িকাদের তালিকায় নিজের নাম লিখালো। আজকেই ওর গাওয়া একটা টিভি এডের জিংগেল রিলিজ হলো। সকালে রিলিজ হলো বিকেলেই সবার মুখে মুখে। এবার বলুন সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম।
আবিদ স্তব্ধ হয়ে রইলো, মলি গান গাইছে তাও জিংগেল সং। অথচ আবিদ কিছুই জানলো না। তার একটা মিশ্র অনুভূতি তৈরী হল। মলির দিকে তাকিয়ে অভিননদন জানাতেই মলি থ্যংকিউ বলে সেখান থেকে চলে গেল। পরিস্থিতি কেমন যেন ঘোলাটে হলো যে রুমকি ফাহাদের হাত টেনে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করলো। সারা রাস্তা রুমকি বেশি কথা বলার জন্য ফাহাদ কে বকলো অথচ ফাহাদ রহস্যময়ভাবে মিটি মিটি হেসেই যাচ্ছিলো।
৩৬.
বৃষ্টির তোড়ে বারান্দা ভিজে একাকার। অর্ধভেজা কাপড় গুলো ময়না টেনে এনে কিছু হ্যাংগারে টানিয়ে দিলো। মলি বিছানায় পা ভাজ করে বসে বসে ফোন চাপছে। বিছানায় তার রাজপুত্র আর রাজকন্যা ঘুমিয়ে। ময়না দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
ভাবীসাব, ও ভাবী সাব।
মলি ফোন থেকে চোখ না তুলেই হুম বলল। ময়না সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার মলি চোখ তুলে তাকালো,
ভাবীসাব, ভাইজান তো খায় নাই। বলল খিদা নাই।
মলি ফোন দেখতে দেখতেই বলল, হয়ত সত্যি খিদে নেই। তাই খায়নি।
ময়না বিরক্ত, মহাবিরক্ত। এত দিনেও কি এই মাইয়া তার জামাই এর হাব ভাব বুঝে না। এত বছর সংসার করার পর ও। সে যে কেন খাইনাই তা তো ময়না ও বুঝে অথচ এই মাইয়া বুঝে না। ফট করে বলেই ফেলে,
আফনে যান না ভাইজানের কাছে। মনে হয় আফনারে ডাকে।
মলি অবাক হয়ে বলে, কই কখন ডাকলো। শুনিনি তো।
এবার ময়না খুব কনফিডেন্ট হয়ে উত্তর দিলো। ডাকলো তো, আমি যখন জিগাইলাম খাবার কথা তখন ই তো আফনের কথা জিগাইলো।
মলি কিছুক্ষণ একটা কিছু ভেবে বিছনা থেকে পা নামায়। তারপর ধীরে সুস্থে আবিদের রুমে হেটে যায়। এখন যেন আবিদের রুম টা আবিদের একার ই, মলি আসেই না খুব একটা, অথচ এই ঘরময় তাদের কত স্মৃতি। সেই বিয়ে থেকে শুরু করে আজ অবধি নানা রংগের দুঃখ কষ্ট ভালবাসাবাসির স্মৃতি জড়িয়ে।
আজ অনেকদিন পর মলি শাড়ি পরেছিলো। স্লিম হবার পর থেকে কুরতি কাফতান সিংগেল কামিজ ই বেশি পরে। শাড়ি যার জন্য পরতো সে তো মলির দিকেই ফিরেও তাকাতো না। তাই ধীরে ধীরে অভ্যাস বাদ দেয়ার চেষ্টা করছিলো।
রুমের দরজা ভিড়ানো ছিলো, না নক না দিয়েই মলি প্রবেশ করলো। প্রবেশ করে দেখলো বিছানায় আবিদের শার্ট প্যান্ট পরে আছে, হয়ত অফিস থেকে ফিরে সব বিছানায় ছুড়ে ফেলেছে। রুমের কোথাও না পেয়ে বেলকোনির দিকে তাকাতেই চোখ পরলো অন্ধকারে একজন মানুষের অবয়ব। মলি তাকে না ডেকেই বিছানা গুছিয়ে ফেললো। সাইড টেবিলের জিনিসপত্র গুছাতে গিয়ে ফুলদানি টা পরে একদম ভেংগে চুরমার হলো। আর তাতেই আবিদ পিছনে ফিরে দেখলো মলি এসেছে।
এখনো পায়ে প্রায়ই টান খায় হাটতে গেলে, তাই খুড়িঁয়ে খুড়িঁয়ে হেঁটে এসে বিছানায় বসলো। মলি দ্রুত কাঁচের টুকরো গুলো উঠাতে গিয়ে হঠাৎ মুখে আউচ শব্দ করে উঠলো। আবিদ বুঝতে পেরেছে মলি হাতের আংগুল কেটে ফেলেছে। আবিদ খুব দ্রুত নিচে বসে মলি আংগুল চেপে ধরলো। তারপর বলতে থাকলো,
এত রাতে এসব কেন গুছাতে গেলে, ময়না তো ছিলোই। কাল সেই গুছিয়ে দিয়ে যেতো।
মলি নিশ্চুপ হয়ে আছে, কিছুই বলছে না। আবিদ ময়না কে চেচিয়ে ডাকতে থাকে, ময়না ময়না, জলদি ফার্স্ট এইড বক্স টা আনো। ময়না আনতে আনতেই মলি হাত টানতে থাকে।
লাগবে না, আমি নিজেই করে নিতে পারবো। কিন্তু আবিদ শক্ত করে চেপে ধরে আংগুল। তারপর বলে, জানি তো পারবে। যেহেতু আমার রুম গুছাতে হাত কেটেছে তাই আমি ই করে দিচ্ছি। আফটার অল, গায়িকা আঞ্জুমান হাসান মলির হাত কেটেছে বলে কথা। তাই না?
মলি ঠিক বুঝতে পারে খোঁচাটা, তাই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নেয়। তারপর শাড়ির আচল ঠিক করতে করতে বলে, রাতে খাওনি কেন?
আবিদ বেডে বসতে বসতে বলে, ইচ্ছা হয়নি।
মেডিসিন খেয়েছো?
আবিদ আবারো বলে, ইচ্ছা হয়নি।
মলি বিরক্ত হয়ে বলে, ইচ্ছা হয়নি আবার কি কথা। মেডিসিন না খেলে ভালো হবে কিভাবে?
আবিদ মলি কে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।কোমড়ে জড়িয়ে বলতে থাকে, কিসে ভালো হবে সেটা বুঝো অথচ কিভাবে ভাল থাকব বুঝো না? মলি মোচড়া মুচড়ি করছিলো। এমন সময় ময়না কথা বলতে বলতে ঢুকে,
ভাবীজান ফার্স্ট এইড বক্স ত,,,, এত টুকু বলে জিবে কামড় দিয়ে আবার বের হয়ে যায়। মলি লজ্জায় হতভম্ব হয়ে যায়। এত বছরের সংসারে কখনো অন্যকারো সামনে ওরা ঘনিষ্ঠ অবস্থা তে পরেনি। ময়না কথা না বাড়িয়ে চলে যায় সাথে সাথেই। আবিদ নিজে উঠে দরজা লাগিয়ে দেয়। আর মলি সাথে সাথে কড়া গলায় বলে দরজা লাগাচ্ছো কেনো? আমি বাচ্চাদের রুমে যাবো।
আবিদ আবারো এসে মলি কে জড়িয়ে ধরে, তারপর বলে, আমি কেন খাইনি রাতে একবারো জিজ্ঞেস করলে না?
মলি পাত্তা না দিয়ে আবারো বলে, ছাড়ো আবিদ। আমার ঘুম পাচ্ছে।
তাহলে ঘুমাও, এটা ত তোমারো রুম।
মলি অবাক হয়ে বলে, কবে থেকে আবিদ?
আবিদ নিষ্পলক তাকিয়ে মলির ঘাড়ে মুখ ডুবায়। তারপর ফিসফিস করে বলে, মাফ করে দাও না বউ। আমি জানিনা আমার কি হয়েছিলো। অনেক অন্যায় করেছি আমি। প্লিজ চলো নতুন করে শুরু করি।
মলি কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, যেন তার দেহে প্রাণ নেই। আবিদের কথার প্রেক্ষিতে বলে উঠে, নতুন করেই ত শুরু করেছি আবিদ। নতুন করে বাচঁতে শিখছি। আবিদ ঘাড় থেকে মুখ তুলে, তারপর মলির দুই হাত সামনে এনে চুমু খায় আর বলে, আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। তুমি দেখবে আরো নতুন নতুন অনেক অফার পাবে গানের। আবিদ মলির হাত টা ছাড়তেই মলি নিজ থেকে আঁকড়ে ধরলো আবিদের হাত। তারপর কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পরলো চোখ থেকে,
এই হাতেই কেয়াকে ছুঁতে তাই না। কই কই ছুঁতে আবিদ? কেয়ার হাতে? কোমড়ে, ঠোঁটে? বুকে? আর কোথায় কোথায়? কেয়া চিতকার করে হঠাৎ কাঁদা শুরু করে। তারপর আবিদের কলার ধরে বলে, কিভাবে পারলে তুমি? তখন এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো? এত দ্রুত আবার সাভাবিক হয়ে গেলে। কিন্তু আমি পারিনা সাভাবিক হতে। পারবো ও না। তুমি কাছে আসলেই আমার সব মনে পরে যায়, তোমার যত প্রতারণা তোমার যত অপমান অবহেলা। মলি কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরে। আবিদ প্রথমে হতভম্ব হলেও পরে মলি কে শান্ত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। সেও হাটুঁ গেড়ে বসে পরে। কষ্ট হচ্ছে তার। কি করলো সে। পরকিয়াতে মজে নিজের সোনার সংসার ভাংগতে বসেছিলো। কিভাবে এই ভুলের প্রায়শ্চিত্য করবে।
ছেলে মানুষ কষ্ট পেলেও সহজে কাঁদতে পারেনা। আবিদ নিজের চুল টেনে ধরে। উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে থাকে ঘরের ভিতরে। তারপর আবার কাছে এসে বসে বলে,
তুমি বললে তোমার পায়ে ও ধরবো আমি। তুমি যত খুশি মারো কাটো। তবু সাভাবিক হউ মলি। প্লিজ।
মলি কিছুই বলছে না। চুপ করে বসে ছিলো, চোখের জল গড়িয়ে পড়তেই লাগলো। আবিদ অধৈর্য কন্ঠে বলল, প্লিজ মলি, প্লিজ। দুই হাতে ধরে আবিদ কপাল ঠেকালো। কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো মলির হাতে। মলি টের পেলো আবিদ কান্না করছে। সে আস্তে করে উঠে দাড়ালো।চোখ মুছলো, শাড়ি ঠিক করে আস্তে করে চলে যাচ্ছিলো। ঠিক দরজা পার করার আগে বলে উঠে,
আমার জীবন টাই অস্বাভাবিক বানিয়ে দিয়েছো তুমি। আর আমাকে স্বাভাবিক হতে কিভাবে বলো! আমি শুধু পরে আছি এখানে আমার বাচ্চাদের জন্য। বাচ্চাদের কখনো জানাতে বুঝাতে চাইনা তাদের বাবা একজন প্রতারক।
চলবে,,,,,,,,