®রোজা রহমান
‘
দেখতে দেখতে আবার শুক্রবার চলে এলো। দিন যেন বিদ্যুৎ গতিতে চলে। দেখতে দেখতে ঘন্টা ফুড়িয়ে আসে দিন, দিনের পর আসে সপ্তাহ, সপ্তাহ ফুড়োলে আসে মাস, মাস ফুড়োলে বছরও ফুড়িয়ে যায় নিমেষেই। একসময় মানবজীবনও এভাবেই ফুড়িয়ে যায়।
‘
আজ শুক্রবারে মালিথা ভিলায় আয়োজন চলছে মেহমানদের জন্য। মেহমান বলতে আগের সপ্তাহে ইয়াসমিনদের বাড়িতে দাওয়াত করে এসেছিলেন জাকির মালিথারা। কথা হয়েছিল ঈদের আগে দেখা সাক্ষাৎটা হয়ে যাক। তাই জাকির মালিথা বলেছিলেন আমিনুল হক-কে, তাদের পরিবার সহ বাড়ির আরো আত্মীয় থাকলে তাদেরও যেন আনেন। তো আমিনুল হকের পরিবার সহ ঈশার নানার বাড়ির কিছু লোক এবং আম্বিয়ার বোন অর্থাৎ ইশার আরেক ফুপুরাও আসছেন। ঈদের আছে আর মাত্র দুই সপ্তাহ মতো। এই সপ্তাহে মেহমানদের খাতিরযত্ন করে দুই একদিন পর থেকে বিয়ের এবং ঈদের জন্য কেনাকাটা শুরু করবে দুই পরিবার।
তো কথা অনুযায়ী আজ সবাই মালিথা ভিলায় আসবে। সেই আয়োজনেরই তোড়জোড় চলছে৷ বাড়ির তিন জা সহ বৃষ্টি এবং দুটো কাজের মহিলা কাজে লেগেছে। হাত কারো খালি নেই৷ ঝটপট হাতের কাজ সামলাচ্ছে সকলে৷ বৃষ্টি রান্নাঘরে সব এগিয়ে দিয়ে এসে কুয়াশাকে নিয়ে ঘরদোর সাজাচ্ছে৷ হিমেলও অবশ্য কাজে সাহায্য করছে। সে ঘরে ঘরে নতুন পর্দা টাঙানোর কাজ করছে। এই কাজটা সে বরাবরই পেয়ে থাকে। কুয়াশাও বেশ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। সকাল সকাল নাস্তাপানি খেয়ে এই কাজে লেগেছে সকলে। সকাল সকাল টুংটাং শব্দ তুলে মালিথা বাড়িতে কাজ চলছে।
‘
জাকির মালিথা সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছেন। তুষার, তুহিন সোফায় বসে ফোন স্ক্রোল করছিল। সেসময়ে শিশির আর নীহার এলো। এ দু’টো শুক্রবারে কখন উঠে ঠিক নাই। অন্যান্য দিন রুটিন মাফিক উঠলেও শুক্রবারে তারা নিজের মনমর্জি মতো ওঠে৷ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে এসেছে। দু’জনই খাবার টেবিলের দিকে গেল৷ শিশির সবটা দেখে বুঝল না ব্যাপার টা কি? এত আয়োজন কিসের!
আসলে শিশির নীহার এখনো জানে না দাওয়াতের বিষয়টা। বাড়িতে তেমন বলা হয়নি। বড়রাই নিজেদের মতো আয়োজন করেছে। তাই শিশির নীহারকে বলল,
” ব্যাপার কিরে ভাই? এমন সব দৌড়া দৌড়ি চলছে কেন? “
” বুঝছি না ”
বলতে বলতে খাবার টেবিলে বসল। শিশির চেঁচিয়ে বলল,
” আম্মু খেতে দাও ”
তিন জা এতটাই ব্যস্ত যে রান্নাঘর থেকে উঠে ওদের খেতে দেবার মতো সময় নেই। তাই জাকিয়া বৃষ্টি আর কুয়াশাকে ডেকে বললেন ওদের খাবার দিতে। বৃষ্টি কথা মতো খাবার একে একে নিয়ে গেল। কুয়াশার ইচ্ছে না থাকা সত্বেও খাবার নিয়ে যেতে হলো বৃষ্টিকে সাহায্য করার জন্য। কি দূর্ভাগ্য তার!! এই বুনো ওল’কে খাবারও দেয়া লাগছে। কথাটা আপন মনে বিড়বিড়াল সে। বৃষ্টিকে খাবার নিয়ে আসতে দেখে শিশির প্রশ্ন করল,
” ভাবি কি হবে আজ বাড়িতে? এতো আয়োজন কেন? ”
বৃষ্টি মজা করে বলল,
” কুয়াশাকে দেখতে আসবে। পছন্দ হলে আজই বিয়ে ”
শিশির মাত্রই পানি মুখে দিয়েছিল। কথাটা কান অবধি শ্রবণ হতেই কাশি উঠে গেল ফল স্বরুপ মুখের পানি ছুটে চারিদিকে ছিটে পড়ল। কুয়াশা তো বৃষ্টির কথায় অবাক হলো। বৃষ্টির দিকে তাকাতেই বৃষ্টি কুয়াশাকে চোখ টিপল। অর্থাৎ
” সত্যিটা বলিয়ো না। একটু মজা নিই ”
কুয়শাও কিছু বলল না। এদিকে শিশির চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে মৃদু জোরে বলল,
” কিহহ!! ”
” হু আমাদের কুশুর আজ বিয়ে ”
বলে মেকি মন খারাপ করার ভান ধরল বৃষ্টি। নীহার শিশিরকে লক্ষ্য করল। তারপর বৃষ্টিকে বলল,
” কি বলছো ভাবি? এমন কিছু তো শুনি নি? ”
বৃষ্টি নীহারকেও একই ভাবে ইশারা করল। নীহার মুচকি হাসল। এরপর খাবার বেড়ে নিয়ে পরের পর্বে কি হয় দেখার জন্য অতি আগ্রহ নিয়ে বসল। শিশির বিস্ময় নিয়ে বলল,
” যা তা! ওর মতো গোবর ঠাঁসাকে কে বিয়ে করবে? আর ওর বিয়ের বয়স হয়েছে? গাল টিপলে দুধ বেরোবে এখনো। কোনো কাজ-কর্ম তো কিছুই জানে না। অকর্মার ঢেঁকি, পারে শুধু আমার সাথে ঝগড়া করতে। এরে আবার কে বিয়ে করবে? ”
বলা শেষ করে এবার কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল,
” বাই দ্যা ওয়ে, এখন থেকে চুলোচুলি করা বন্ধ কর। এই অভ্যাস রয়ে গেলে বরের সাথেও করবি। বিয়ে টিকবে না তখন। যতই হোক মালিথা বাড়ির সম্মান বলে কিছু একটা আছে। ”
কুয়াশা ফুঁসে উঠল। চোখ মুখ ছোট ছোট করে বলল,
” এ্যাই বুনো ওল। আমার বিয়ে হবে কি হবে না আর টিকবে কি টিকবে না তোমায় দেখতে কে বলেছে? তোমার মাথা না ঘামালেও চলবে।”
” বাহ, বিয়ের দেখি বহুত শখ? হ্যাঁ রে, তোর লজ্জা করছে না বিয়ে নিয়ে এমন করে বলতে? আর তুই না লয়ার হবি? সেসব সব হাওয়া? “
শিশিরের কথা শুনে নীহার ওর পাশে থেকে কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
” এত চিন্তা ওর জন্য না করে তুই-ই করে নে না বিয়েটা। আর কারো বিয়ে করতে হবে কেন? তুই-ই করে নে। ভেবে দেখ সারাজীবনের জন্য মা-রা মা-রি চুলোচুলি, ঝগড়া করা কনফার্ম ”
শিশির নীহারের দিকে বিরক্ত নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। পরক্ষণে মুখ উল্টিয়ে বমি করার মতো ভাব করে উঠে নীহারের মতো ফিসফিস করে বলল,
” ইয়াকক, এই গোবর ঠাঁসাকে বিয়ে? আমার রুচি এতটাও খারাপ হয় নি এখনো যে, ওরে বিয়ে করব। আস্থ গোবর ঠাঁসা। আর যে ঝগড়ুটে সারাজীবনের জন্য জীবন আমার ত্যানা ত্যানা। আমাকে সুখে খেতে ভূতে কি’লা’চ্ছে নাকি? তবে আর যাই বলিস এর সাথে ঝগড়া, মা-রা মা-রি করতে ভালোই লাগে। এনজয় করি বেশ। আমার চিরজম্মের শত্রু কিনা!! তোদের ওর প্রতি আদিক্ষেতা বন্ধ কর এখন থেকে। আর তোর এই এক প্যানপ্যানানিও অফ দে। “
বলা শেষ করে সামনে রুটির সাথে ডিম ভাজি তুলে নিল। খেতে খেতে বলল,
” ভাবি শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়ো তোমার আদুরীনি ননদকে। নয়তো বিয়ের দিনই ফিরে আসবে আমাদের ঘাড়ে। পড়াশোনা ওর জন্য না৷ বিয়ের জন্য লাফাচ্ছে, রাত জেগে বয়ফ্রেন্ডের সাথে গল্প করে ওর বিয়ে দিয়ে দেয়াই উত্তম। আপদ বিদেয়ই হবে আমারও ভালোবাসার ভাগ থেকে মুক্তি হবে। কম কম করে গিলতে বলে, কাজ শিখতে বলো। “
শিশিরের খোঁচা মা-রা কথাগুলো কুয়াশার গায়ে বিঁধে একদম শরীর জ্বলে উঠল রাগে। দা’উ’দা’উ করে দা-বা-নলের ন্যায় জ্বলছে ভেতরের সব। গা পিত্তি এক্কেবারে এই বুনো ওল জ্বালিয়ে খাক করে দিল। তাই রাগের সাথে বসে খাবার চিবনো শিশিরের কাছে এসে ওর চুল দু’হাতে মুচড়িয়ে ধরে ঘুরিয়ে দিতে দিতে বলল,
” তুই বেশি করে গিলেক বুনো ওলের বাচ্চা। যাব না কোথাও তোর ঘাড়ে বসেই খাব সারাজীবন। কি করবি তুই করে নিস”
বলা শেষ করে চুল ছেড়ে দিল। এবার একটা ভোঁদৌড় দেবে। এখানে আর থাকা যাবে না কারণ বাঘের গায়ে থাবা দিয়েছে সে। ভাবনা অনুযায়ী দৌড় দিতে গিয়েও পারল না দৌড় দিতে। সেই ধরেই নিল চিতাবাঘ এক থাবায় ওর হাত পাকড়াও করেছে। জীবন শেষ এবার তার। এবার কি করবে সে? আজ বোধহয় ছাড় পাবে না আর। তাকে আজ কাঁচায় চিবিয়ে খাবে। কথায় আছে না? ‘চোরের সাত দিন গৃহস্থের একদিন’ আজ কুয়াশার হয়েছে সেই দশা।
শিশির ওর হাত খপ করে ধরে সাথে সাথে এক টান মে-রে ওরই কোলের উপর বসিয়ে নিয়েছে। রাগে শরীর কাঁপছে তা টের পেল কুয়াশা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই। চোখ মুখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে নিয়েছে সে। বার বার ঢোক গিলতে লাগল। এরপর তাকিয়ে দেখল রণমুর্তি ধারন করেছে বাঘ। শিশির বাম হাতে কুয়াশার কোমড় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ডান হাত দিয়ে ওর প্লেটের ডিম থেকে ছাড়িয়ে রাখা যতগুলো ঝালের টুকরো ছিল সব একসাথে তুলে নিয়ে কুয়াশার মুখে ঢুকিয়ে দিল। একদম একটা টুকরোও বাদ রাখল না। ঠেলেঠুলে ঠাঁসিয়ে মুখে ভরল। মুখে ভরেই ক্ষ্যান্ত হলো না একদম হাত দিয়ে ধরে রাখল অর্থাৎ যতক্ষণ না চিবিয়ে গিলবে ততক্ষণ মাফ নেই৷ আজ এই ঝাল খাইয়েই ওকে শিক্ষা দেবে। কত বাড় বেড়েছে!! কথায় কথায় চুল ধরা? উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে গবর ঠাঁসাকে আজ।
কুয়াশা ঝালে উমম উমম শব্দ করছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না কারণ শিশির ওর মুখ আঁটকে রেখেছে। না চিবানো পর্যন্ত ছাড়বে না। শিশির ওকে মুচড়াতে দেখে আর ওমন উমম উমম করতে দেখে বলল,
” আজ তোকে এই ঝাল খাইয়ে-ই আমি
ক্ষ্যান্ত হবো। গেলেক, জলদি গেল এক টুকরোও বাদ রাখবি না। যতক্ষণ না গিলবি ততক্ষণ এমনি ধরে রাখব। দেখি কে তোকে ছাড়াই আমার থেকে! ”
বৃষ্টি আর নীহার পুরো ঘটনা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখল। নীহার তড়িঘড়ি করে কিছু বলতে উদ্যত হতেই শিশির ওর দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন নীহার কিছু বললে ওকেও চিবিয়ে খাবে৷ যদিও পুরো দোষটা কুয়াশারই। নীহার কি বলবে ভেবে পেল না।
এদিকে বৃষ্টি নিজেই নিজেকে বকতে লাগল। কেন যে এরকম একটা মজা করতে গেল। ভাবল কি? আর হলো কি? সে কেন যে ভুলে গেছিল, এরা দু’টো ‘বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুল’
শিশির এখনো শক্ত হাতে ধরে রেখেছে কুয়াশার মুখ আর কোমড়। কুয়াশার মুখ ঝালে ভেতরে সব জ্বলে যাচ্ছে। মেয়েটা যেখানে অল্প ঝালও সহ্য করতে পারেনা, সেখানে এতগুলো ঝাল একবারে মুখের মধ্যে। ঝালে অজ্ঞান হবার যোগাড়। চোখ থেকে টুপটাপ করে পানি গলিয়ে পড়ছে। উজ্জ্বল হলুদ ফর্সা মুখটা লাল আভায় রূপ নিয়েছে ইতোমধ্যে। শিশির কুয়াশার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ কুয়াশার দুই হাত শিশির যে হাতে ওর মুখ ধরে আছে সে হাতের কব্জা চেপে ধরে রেখেছে। যেগুলো একটু আগে ছটফট করার সাথে ছাড়ানোর জন্য জোর খাটাচ্ছিল। কিন্তু না পেরে এবার সে সহ তার হাতও শান্ত হয়ে গেছে।
চোখে পানি নিয়ে শিশিরের চোখের দিকে অসহায় নজরে তাকাল৷ অতি গভীর সেই তাকানোটা মনে হলো। এদিকে কোমড়ও খুব জোরে ধরেছে শিশির। ব্যথায় টনটন করছে৷ কুয়াশা শিশির হাত ছাড়াতে না পেরে ওর হাতের কব্জা ধরে থাকা দুই হাত শিশিরের কোমড়ের কাছটাতে নামিয়ে নিল। বাম হাতটা শিশিরের কোমড়ের একপাশে দিয়ে ওর গায়ে থাকা টি-শার্ট খামচে ধরল। আর ডান হাতটা গলিয়ে শিশিরের কোমড় বরাবর পিঠের উপর নিয়ে গেল। সেখানেও টি-শার্ট শক্ত করে মুচড়ে ধরল। দু’জন দু’জনের দিকেই তাকিয়ে আছে। কুয়াশা শিশির কোলের উপর আঁধা শোয়ার মতো করে বসা৷ ঠিক যেমনটা বাচ্চা শিশুদের কোলে নিয়ে সুজি কিংবা ফিডার খাওয়াই? ঠিক তেমন করে বসা। কুয়াশার এমন অসহায় তাকানোতেও বোধহয় কাজ হলো না৷ শিশির একচুলও গলল না। গলবে কি করে? সে তো রেগে এখন বাঘ হয়ে আছে। রাগের কাছে অন্য কিছুরই পাত্তা পাওয়া যায় না।
এদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনা বাড়ির আর কোনো সদস্যেরই নজরে পরছে না। কারণ তারা তো ডাইনিং রুমে এদিকটা ড্রয়িং থেকে একটু আলাদা পিছন সাইডে। আবার অনেকটা দূরেও। আর রান্নাঘর তো অন্যদিকে৷ এখনো কুয়াশাকে ছাড়তে না দেখে নীহার অসহায় কন্ঠে মিনতি করার মতো করে বলল,
” ছেড়ে দে না ভাই৷ মাফ করে দে ভুল করেছে৷ ও তো তোর ছোট বল। ছেড়ে দে৷ ওর ঝাল লাগছে। দেখ চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে মেয়েটার “
নীহারের কথা শুনে কুয়াশা আরেকটু শিশিরের টি-শার্ট খিঁচে ধরল দু’হাতে। চোখে পানি নিয়েই শিশির চোখের দিকে তাকাল। মুখে বলতে পারছে না বলে ওভাবে বোঝাতে চাইছে ছেড়ে দেবার জন্য। শিশির ওর দিকে তাকাল তখন। কুয়াশা আর সহ করতে না পেরে শিশিরের বুকের উপর মাথাটা এলিয়ে দিল। ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল।
শিশিরের সারা শরীরে এবার ঝটকা লাগল। আবার নিজের হাতটাও কুয়াশার কোমড় সহ পেটের উপর অতি গভীরে জড়িয়ে ধরা। যেটা টেবিলের নিচে ঢাঁকা পরে আছে বলে উপস্থিত কারো চোখে পড়ছে না। যতোই চাচতো বোন হোক সে একটা মেয়ে তো?? আর একটা মেয়ের এমন সান্নিধ্য অতি কষ্টদায়ক একটা ছেলের জন্য। যেখানে আজ অবধি শিশির কোনো মেয়ের এমন সান্নিধ্যে যায় নি। যদিও কুয়াশার সাথে চুলোচুলি করে তুবও সেটা তো হাত অবধিই সীমাবদ্ধ থাকে!
বৃষ্টি বলল,
” দেবরজী ছেড়ে দাও মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে। দেখো কেমন নেতিয়ে গেছে ঝালে৷ “
শিশির লক্ষ্য করল তা। তখন মুখ থেকে হাত সড়িয়ে নিল। তারপর শান্ত স্বরে গম্ভীর ভাবে আদেশ করার মতো করে বলল,
” ফেল মুখ থেকে ওগুলো। পানি খা, ওঠ।”
বলে কুয়াশার মাথাটা তুলল তার বুক থেকে৷ কুয়াশা ঝাল গুলো ফেলল না। জেদ নিয়ে চিবিয়ে খেল। আর সেটা শিশিরের কোলের উপর বসেই এবং ওর দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে। খাওয়া হয়ে গেলে নেমে পড়ল। মনে মনে কঠিন কিছু বলল, আর প্রতিশোধ নেবে বলে কঠিন কিছু ভাবল। শিশিরকে রাগের তেজে ঝলসে দেবার মতো করে ওর উপর নজর দিয়ে ধেই ধেই করে উপরে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা ধরল।
সেদিকে তাকিয়ে বৃষ্টি আর নীহার দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। শিশির সেসব পাত্তা না দিয়ে খাবারে মনোযোগ দিল।
_______
দুপুর তিনটে৷ নামাজ শেষে তুহিনের মামারা, খালারা আর মামার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসে পৌঁছালেন৷ তুহিনের খালারা অবশ্য আলাদা এসেছেন এবং আগেই এসেছেন। এসে সবাই সবসর সাথে কথাটথা বলে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস-টিজ্ঞেস করল। তুহিনের খালাত ভাই অভি আজ আসে নি। শুধু অয়ন, অনি এসেছে। ইশার নানা-নানি বেশ জোয়ানই আছে এখনো। ভালোই কথা বার্তা বলে। তুহিনের মামিটাও অনেক ভালো মনের। বসার ঘরে সবাই টুকটাক কথা বলছে সাথে নাস্তা পানি খাচ্ছে।
অয়ন, অনিরা সহ ইশার মামাত কাজিন খালাত কাজিনরা আলাদা বসেছে শিশিরদের সাথে। সেখানে ওরা পরিচয় পর্ব সারছে।
একটুপর খেতে ডাকা হলো। বড়দের আগে খাওয়ানো হয়ে গেছে। এখন ছোটরা খাবে শুধু।
খাওয়া দাওয়া পার্ট চুকিয়ে আবার গল্পে মজলো সবাই৷ সেখানে বিয়ের কথা বার্তা বেশি সোভা পেল৷
ছোটরা একজোট হয়ে প্ল্যানিং করা শুরু করল কে কি করবে! কেমনভাবে আনন্দ করবে! কে কেমন করে সাজবে! কারা কোন পক্ষ থাকবে! এসব নিয়ে কথা চলছে। কথার মাঝে শিশির খেয়াল করল কুয়াশার প্রতি অয়ন খুবই পজেটিভ এ্যাট্রাক্টেড। যেটা অয়ন তার প্রতিটা কথায় এবং কাজে বুঝিয়ে দিচ্ছে। কুয়শার পাশেই বসা ছিল অয়ন। ওদের ওরকম আদিক্ষেতা দেখে শিশির বিড়বিড়াল,
” আমাদের বাড়িতে এই গোবর ঠাঁসার জন্য আদিক্ষেতা দেখানোর লোকের কি অভাব ছিল? যে এখন আবার আরেকজন এসে জুটলো? যত্তসব!! “
| চলবে |