®রোজা রহমান
‘
রাত বারটার কাঁটা ছুঁই ছুঁই। ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের দিন যেমন উৎসবমুখর হয় তেমন ঈদের রাত হয় উৎসবমুখর।
তেমনই উৎসবমুখর পরিবেশ আজ রাত। চারিদিকে গান-বাজনা, হৈ হুল্লোড়, রাস্তা-ঘাটে মানুষ ভর্তি। চারিদিকে তেল মসলা খাবারের সুগন্ধে ম-ম করছে। এতটা রাত হয়ে গেছে তবুও যেন মনে হচ্ছেনা রাত বারটা ইতোমধ্যে। সকলে আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। বিনোদনের জায়গা গুলোতে ঈদের সপ্তাহ খানেক তো পা ফেলার মতো জায়গায় পাওয়া যায় না। এই রাতে গান-বাজনা সহ বাজি ফাটাচ্ছে বাচ্চারা, তরুণরা৷ বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছে সব।
‘
শিশিররা রাত এগারটার পরে বাড়িতে এসেছে। ঈশাকে দিয়ে এসেছে বাড়িতে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে খাওয়া দাওয়া করে তবেই বাড়িতে এসেছে। বাড়িতে এসে কেউ আর খাবার খায় নি। এতসময় ঘুরাঘুরি আড্ডা, ইনজয় করে কারো বোধহয় মন ভরেনি৷ বাইরে থেকে এসে সকলে আবার প্ল্যান করেছে, আজকের রাত ছাদে গল্প করে কাটাবে। কেউ অমত করে নি। আনন্দ করাই যায়! এমন উৎসবমুখর পরিবেশ আসেই বছরে দুইবার৷ তার মাঝে সব সময় তো আর কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ বা কাছে পাওয়া হয় না! এবার যখন সকলে একসাথে হয়েছে তবে একটু আনন্দ করাই যাক ক্ষতি কি তাতে!!
‘
ঘুরতে গিয়ে ঘুরাঘুরির বিনোদনের সাথে সকলে শিশির, কুয়াশার ঝগড়ার বিনোদনও নিতে ভুলেনি। আসল বিনোদন ওরাই দিয়েছে। যে কয় ঘন্টা ঘুরেছে তার থেকে বেশি মিনিট তারা বোধহয় ঝগড়া করেছে। পান থেকে চুন খসলেই ঝগড়া। চুলোচুলিটা অবশ্য হয়নি রাস্তায়। আর অয়ন সবসময় কুয়াশার পিছন পিছন ঘুরেছে। এত এত আদিক্ষেতা দেখিয়েছে রীতিমতো কুয়াশা বিরক্ত।
আসলেই ছেলেদের এতটা গায়ে পড়া স্বভাবও মানায় না। ছেলেরা হবে স্ট্রোং পার্সোনালিটির। ছেঁচড়া টাইপ কেন হবে? এই প্রকৃতির ছেলেদের জাস্ট অসহ্য লাগে কুয়াশার। কুয়াশার ভাষায় ফেবিকল টাইপ।
‘
তবে প্রেমে পড়লে একটু আধটু ছেঁচড়া হতেও হয় নয়তো ভালোবাসার মানুষটা হাতছাড়া হয়ে যায়। পিছন পিছন ঘুরে ঘুরে যদি ভালোবাসায় জাহির করতে না পারে তবে সেটা কিসের ভালোবাসা? ভালোবাসা প্রমাণ করতে একটু আধটু ছেঁচড়া হওয়ায় যায়, তাতে ক্ষতি কি??
‘
প্ল্যান অনুযায়ী সকলে ফ্রেশ হয়ে ছাদে চলে এসেছে। বড়রা সকলে ক্লান্ত থাকায় শুয়ে পড়েছে। বৃষ্টি মাদুর এনে বিছিয়ে দিল৷ সে তুষারকেও ধরে এনেছে এবার৷ তুষার কাজ করে বিকেলে ঘুমিয়ে সন্ধ্যার আগে উঠে নামাজ পড়ে তার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছিল৷ এরপর বৃষ্টিরা আসার পরে এসেছে৷ মূলত বৃষ্টিই কল করে ধরে এনেছে বেচারাকে। ঈদের দিন বাড়িতে এত এত মেহমান থাকতে বাইরে কি? এছাড়া ঘরে বউও আছে সে ছেলে বাইরে কেন থাকবে? তাই বৃষ্টি ধরে এনেছে। তুষারও বউয়ের জেদকে প্রাধাণ্য দিয়ে চলে এসেছে।
সকলে একজোট হয়ে বড় মাদুর এনে বিছিয়ে কিছু বালিশও আনল। ছাদে শুধু লাইটিং এর মৃদু টিমটিমে আলো জ্বলছে সাথে খোলা আকাশের চাঁদের আলোই চারিদিকে আলো-আঁধারি করে রেখেছে৷
বৃষ্টি, কুয়াশা, শশী, অনি চারজন দু’হাতে করে আটটা বালিশ আনল। আটটা বালিশ যার যার প্রয়োজন পড়ল নিয়ে নিল। একটা বালিশ কুয়াশা নিয়েছে৷ আরগুলো সব দখল৷ কুয়াশা বালিশটা নিয়ে মাত্রই ছাদের রেলিঙের সাথে হেলে বসেছে আর ঠিক সেই সময়ে শিশির এসে কুয়াশার পিঠের পেছন থেকে টান দিয়ে বালিশটা নিয়ে নিল৷ হয়ে গেল, শুরু হলো তাদের যু-দ্ধ। এরা একজন আরেকজনকে শুধু নাড়তে যেটুকু সময় লাগে কিন্তু চুলোচুলি বাঁধতে দেরি হয় না৷
শিশির এতক্ষণ অন্যপাশে রিজভীর সাথে কথা বলছিল৷ আজ রিজভীর শিশিরদের এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু সে আসতে পারে নি। তার বড় বোনের ওখানে যেতে হয়েছে তাকে৷ জানিয়েছে একবারে বুধবারে আসবে।
কথা শেষ করে কুয়াশার থেকে বালিশটা কেড়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল। শুলো তো শুলো একদম কুয়াশা যেখানে হেলান দিয়ে বসেছে তার বাম পাশে। ডান পাশে শশী বসেছে। শশীর পাশে নীহার। আর ওদের চারজনের সামনে এবং পাশে সকলে গোল হয়ে বসেছে। অয়ন নিচে ছিল মাত্র এলো৷ এসে দেখল কুয়াশা পাশে বসার জন্য আর জায়গা নেই। সে চেয়েছিল কুয়াশার পাশে বসে আড্ডা দেবে। কিন্তু হলো কই আর!! শশীর ভাই মিহির বলল,
” শিশির ভাইয়া, তোমরা আবার শুরু করবা? প্লিজ আমাদেরকে আড্ডা দিতে দাও। সারা রাস্তা তোমাদের টম জেরির বাস্তব ভার্ষণ দেখেছি এখন আর শুরু হইও না ”
কে শুনে কার কথা! কুয়াশা মিহিরের কথা পাত্তা না দিয়ে বলল,
” এ্যাই তুমি আমার বালিশ কেন নিলে? আবার আমার বালিশ নিয়ে আমারই পাশে শুলে? ”
এই বলে শিশিরের মাথার নিচে থেকে বালিশ টানতে লাগল আবার বলল,
” বালিশ দাও আর উঠো আমার পাশ থেকে৷ সরো এখান থেকে। ”
কুয়াশা টেনেও বালিশ নিতে পারছে না৷ এ ছেলের শরীরে এত জোর কেন? শিশির বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা কানি, দেখছিস না কোথাও জায়গা নেই? আর আমার এখন বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না৷ এখানে শোবার মতো পেলাম তাই শুলাম৷ তা না ছাড়া তোর মত দূর্গন্ধ যুক্ত গোবর ঠাঁসার কাছে বসতে, শুতে আমার বইয়ে গেছে! মরে যাচ্ছি না আমি। আর রইল কথা বালিশের, তোর নাম আছে এতে? পারলে নিয়ে দেখা৷”
কুয়াশা বালিশ যেমন তেমন ওকে যে দূর্গন্ধ যুক্ত বলল এতেই ও রেগেমেগে আ-গুন হয়ে উঠল৷ মুখ তার আ-গুনের শিখার ন্যায় জ্বল জ্বল করছে। বলল,
” দেখ বুনো ওল, তোর মতো নিজেকে সব সময় দূর্গন্ধ বানিয়ে ঘুরি না আমি। আমাকে দূর্গন্ধ বলার আগে নিজের শরীরের গন্ধ শুঁকেক৷ দূর্গন্ধে তোর কাছেই টিকতে পারছি না। ওঠ ওঠ, ওঠ বলছি ”
শিশির এবার দাবা-নলের ন্যায় জ্বলে উঠল। কতবড় কথা? তার শরীরে দূর্গন্ধ? তার শরীরে সুগন্ধের মোহতে আ’ফি’মের ন্যায় মেয়েরা মাতাল হয় আর এই গোবর ঠাঁসা সেটাকে গন্ধ বানিয়ে দিল? একলাফে উঠে এক থাবাই কুয়াশার বাহু ধরে নিচে ফেলে দিল অর্থাৎ ছাদের ফ্লোরে। নিচে ফেলে শিশির কুয়াশার উপর ঝুঁকে গেল। অনেকটা কাছে ঝুঁকেছে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ফাঁক আছে। কুয়াশার এক বাহু হাত দিয়ে ধরা আরেক হাত কুয়াশার গলা চেপে ধরল৷ খুব একটা জোরে ধরে নি আলতোই ধরেছে৷ কুয়াশার মুখের উপর মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
” গোবর ঠাঁসা, এই শরীরের গন্ধে মেয়েরা পাগল হয়, মাতাল হয়৷ লাগে আমি আ’ফিম। তোর কাছে তা দূর্গন্ধ মনে হয়? বাহিরে মেয়েদের পাশ দিয়ে গেলে আমার চোখের ইশারাও লাগবে না। জাস্ট পাশ দিয়ে যাব আমি তাতেই এনাফ৷ আর বাহিরের মেয়ের কথা বাদই দিলাম তোর চোখের সামনে এই অনিকেই দেখ না সারাদিন আমার শরীরের ঘ্রাণে মিশে থাকতে চায় সেখানে তোর এত বড় কথার সাহস!! ”
শিশিরের বাঘের মতো থাবা দিয়ে ধরা থেকে শেষ বলা কথা অবধি এতটায় দ্রুত হলো যে উপস্থিত সবাই হা তো হয়েছেই সাথে ভড়কেও গেছে। ফিসফিস করে বলা কথাগুলো অবশ্য কারো কান অবধি পৌঁছায় নি। কিছুক্ষণের মাঝে সকলে কথা বলার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আর কুয়াশা?? সে তো কথা বলতেই ভুলে গেছে। সে এখনো ডোজটা গিলতে পারেনি।
এদিকে শিশির নিজেও হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে যে ও কি করছে? রাগে ওর শরীর রি রি করছে। তার ব্যক্তিত্বে লেগেছে কুয়াশার কথাটা। নিজের অহং এ এসে হানা দিয়েছে কুয়াশার ব্যঙ্গ করাটা৷
শিশির কুয়াশাকে এমন ভাবে নিচে ফেলেছে যে পাশে থেকে শুধু শশীরই চোখে পড়ল ওদের শারীরিক দূরত্বটা বাদবাকি কেউ সেটা ঠাওর করতে পারে নি৷ কারণ আড়াল করা। কিন্তু ও যে কুয়াশাকে বাঘের ন্যায় থাবা দিয়ে নিচে ফেলেছে এটা সবাই-ই দেখেছে। ঐ সময়টুকুর মাঝেই শিশির আবার ফিসফিস করে বলল,
” এখন বল, দূর্গন্ধ পাচ্ছিস আমার শরীর থেকে? নাকি অন্যকিছু পাচ্ছিস? ”
কুয়াশার এবার জ্ঞান এলো। সে আকষ্মিক থাবাটা এখন হজম করল। পিঠে লেগেছে মেয়েটার। যে ভাবে ফেলল!! লাগারি তো কথা?
তুষার এবার রাম ধমক দিয়ে শিশিরকে ধমকে উঠল পিছন থেকে বলল,
” শিশির…! কি হচ্ছে কি? এ কোন ধরণের অসভ্যতামি? ছাড় ওকে, লাগছে ওর? ওভাবে ধরে ফেললি কেন? যদি মাথা ফেটে যেত? ফা’জলামোর একটা লিমিট থাকে শিশির, ছাড় ওকে!! ”
ভাইয়ের ধমক খেয়ে শিশির এবার কুয়াশার আতঙ্কিত মাখা চেহারার দিকে তাকাল। ছাদের লাইটিং এর মৃদু আলো ও জোৎস্নার আলো মিলিয়ে কুয়াশার আতঙ্কিত চেহারা অতি কাছে থেকে স্পষ্ট দেখতে পেল। এতটা কাছে আবারও না চাইতে চলে এলো!! উফফ!
শিশির সাথে সাথে ছেড়ে দিল কুয়াশাকে। মেজাজটা ভেতর থেকে গরম হলো। যত চাচ্ছে কাছে না যেতে তত কাছে চলে আসছে। এই রাগ যে কেন আসে!! যত দোষ একমাত্র এই রাগের।
শিশির আমতা আমতা করে বলল,
” আমি ওমন ধরতে চাই নি। মাথা গরম হয়ে গেছিল গোবর ঠাঁসার কথায় ”
” তোদের এই মা-রা মা-রি কবে বন্ধ করবি? এগুলো কোনসময় না বড় কোনো ক্ষতির কারণ হয়। বড় হচ্ছিস, ছোট আছিস এখনো? ”
তুষারের কথায় প্রত্যুত্তর করল না শিশির। কুয়াশা এখনো ঘোরে মধ্যে। শিশিরের ওরকম ধরে নিচে ফেলার জন্য যতখানি না পিঠে লেগেছে তারথেকে শিশিরের কথাগুলো খুবই অদ্ভুত লেগেছে৷
‘
আর কোনে কথা বলল না কেউ এ নিয়ে। আস্তে আস্তে সকলে নানান বিষয় নিয়ে আড্ডাতে মাতল। তুষার বৃষ্টির কোলের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে গল্প শুনতে শুনতে। বেচারা বউয়ের শুধু মন রাখতে এসেছিল। এখন সবার গল্প শুনতে শুনতে ঘুমে তলিয়ে গেছে৷
শিশির কুয়াশার পাশেই শুয়ে ফোন টিপছে৷ তুহিন আসে নি এখানে। এই আসরে শশী আর কুয়াশার কন্ঠই বেশি শোনা যাচ্ছে।
‘
গল্পে গল্পে রাত দেড়টা বেজে গেছে৷ হিমেল ঘুমিয়ে গেছে। শশীর কথার ঝুলি ফুরিয়ে সে এখন রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে ঢুলছে। বৃষ্টি, অনি, কুয়াশা, অয়ন, নীহার, মিহির আর শিশিরের দুই মামাত ভাই সাব্বির, সাবিব গল্প করছে এখনো। শিশির মাঝে মাঝে কথা বলছে।
এক সময় শশী ঘুমে বিভর হয়ে নীহারের বুকের উপর এসে পড়ল। কারণ নীহার কাৎ হয়ে শশীর দিকের ছিল। চমকে নীহার তাকাল। দেখল শশী ঘুম। বৃষ্টি বলল,
“মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে? ”
মিহির বলল,
” ও তো বাড়িতে এত রাত কখনো জাগেই না ”
নীহার বলল,
” আচ্ছা ঘুমোক, সমস্যা নেই। ”
বলে নীহার কি মনে করে যেন আলতো করে শশীর মাথাটা নিজের কোলের উপর নিল। নয়তো ওর ঘাড় ব্যথা হতো। শশীর ঘুম ভেঙে গেল পিটপিট করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায়! যখন বুঝল সে তার প্রিয় মানুষের কোলের উপর তখন মনটা নেচে উঠল। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিল৷ এই চোখ দুনিয়া উল্টে গেলেও সকালের আগে আর খুলবে না সে। এভাবেই রাত কাবার করবে।
‘
এক সময় কুয়াশার চোখেও ঘুম এসে হানা দিল। ঘুমে তার চোখ বুজে আসছে। উপস্থিত কারো কথায় আর ধারণ করতে পারছে না তার মস্তিষ্ক। ঘুমের প্রভাবে। মস্তিষ্ক তার গল্পের থেকে ঘুমকে বেশি প্রাধাণ্য দিতে বলছে। তাই সে ঘুমকেই প্রাধাণ্য দিল। হেলান দিয়ে ঘুমে তলিয়ে গেল৷ বৃষ্টিরা গল্পে মগ্ন থাকায় দেখল না কে জেগে আছে আর কে ঘুমিয়ে গেছে।
কুয়াশা গভীর ঘুমে চলে গেলে একসময় সে-ও গড়িয়ে শিশিরের বুকের উপর পরল। শিশির হেলান দিয়ে ফোন টিপছিল৷ শুয়ে থেকে পিঠ লেগে গেছিল বলে৷ বুকের উপর ধারাম দিয়ে কিছু পড়তে দেখে ভড়কে গেল। তারপর দেখল এ আর কেউ না তার ভাষার গোবর ঠাঁসা। কুয়াশা ঠাস করে পড়াতে ঘুম হালকা হয়ে গেল কিন্তু পুরোপুরি কাটল না৷ শিশির কুশার মাথা ধরে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা, আমার বুক তোর বালিশ মনে হচ্ছে নাকি বিছানা? ওঠ!!”
কুয়াশার ঘুমটা গেল ভেঙে৷ ধরফর করে উঠে বসল। সদ্য হানা দেওয়া ঘুমটা ভেঙে যাওয়াতে বেজায় বিরক্ত হলো সে৷ ভ্রু কুঁচকে বলল,
” নিজেকে কি ভাবিস বলতো? গলা চুলকানোর গোডাউন একটা। স্বাধে কি আর বলি বুনো ওল।”
এই বলে বিড়বিড় করে বলল,
” বা** ঘুমটায় দিল ভেঙে ”
এদিকে শিশির রাগ নিয়ে মা-রল চাটি কুয়াশার মাথার উপর। বলল,
” তুই তুকারি করবি তো দেব একদম আউড়িয়ে ছাদের নিচে”
যারা জেগে আছে তারা কপাল চা’পড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। এদের কিসে লাড়া দেয় সারাক্ষণ? শয়-তানে নাকি অন্যকিছুতে! কে জানে!!
বৃষ্টি বলল,
” চলো সব ঘরে গিয়ে শুবে৷ সবাই ঘুমিয়ে যাচ্ছ আর থাকতে হবে না। ওঠো ”
সকলে সম্মতি দিয়ে উঠে পড়ল একে একে। কুয়াশা ঢুলতে ঢুলতে উঠল৷ বৃষ্টি তুষারকে ডেকে তুলল। কিন্তু কথা হচ্ছে এখন এই ম-রার মতো ঘুমওয়ালী শশীকে কে তুলবে? নীহার সহ সকলে হাজার ডাক দিয়েও তুলতে পারল না৷ মিহির জানাল এর ঘুম অতি গাঢ়। কিন্তু বান্দা এত ডাক দিয়েও উঠছে না কেন !!
উপায় না পেয়ে কুয়াশা বলল,
” ওকে কোলে করে কেউ দিয়ে আসো ”
কথা হচ্ছে, কোলে নেবে তো ঠিক আছে কিন্তু নেবেটা কে? মিহির কুয়াশার এক বছরের বড় অনেকটায় ছোট৷ তারউপর শরীর সাস্থও তেমন হয়ে ওঠে নি সেই হিসেবে। সে শশীকে কোলে নিয়ে ছাদের সিঁড়ি ভেঙে নামতে পারবে না। এমনটায় জানাল৷ আর তুষার ঘুমে এখনো ঢুলছে। সাব্বির, সাবিব নিতে পারবে না বলে দিল৷ আর অয়নের সাথে তো অনেক দূরের সম্পর্ক। শিশির বলল,
” আমি নিচ্ছি দে ”
তা শুনে নীহার বলল,
” থাক তোকে নিতে হবে না৷ আমিই নিয়ে যাচ্ছি। কুয়াশা তোর ঘরেই তো থাকবে না?”
” হ্যাঁ আমার ঘরে দিয়ে এসো ”
এদিকে নীহারের কথায় শশীর ঘুমের মাঝেও মনে হলো ঠোঁটে হাসি ফুটল। কিন্তু কেউ সেটা খেয়াল করল না৷ এ মেয়ে যে ড্রামা করছে সেটা সকলে যদি একবার জানত!!
শেষমেশ নীহারই কোলে তুলে নিল শশীকে। কোলে নিতেই শশী আষ্টেপৃষ্টে নীহারের গলা জড়িয়ে ধরল। নীহার গেল ভড়কে। শশীর দিকে তাকাল। দেখল চোখ বন্ধ কিন্তু এমন ভাবে ধরল তার মাথায় একটা কথায় এলো,
” এ কি আদৌ ঘুমে!! ”
|| চলবে ||
শুনো পাঠকগন’স শিশির কুয়াশার কাছে যাওয়াটা কিন্তু একমাত্র রাগের দোষ
না শিশিরের দোষ আর না কুয়াশার। এমনকি তোমাদের লেখিকা আপুরও না কিন্তু
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part )