®রোজা রহমান
‘
” তো আর কি? লুলা ঠেঙ নিয়ে বেড়া এখন “
কথাটা বলে শিশির চলে যেতে নিল। কিন্তু রিজভী ওর বাহু ধরে আটকে দিয়ে বলল,
” আরেহ কই যাস দাঁড়া। দেখ ভাই রাগ করিস না। প্রথম কোনো মেয়ে পছন্দ হয়েছে আর দিলে আমার ঘন্টি বাজিয়েছে। ”
তা শুনে শিশির কিছু বলল না। এটা অবশ্য ঠিক।
এদিকে শিশির আর রিজভী কথা বলছে। রিজভী যখন শিশিরের কথায় হেসে ফেলেছিল তখন কুয়াশা হা করে তাকিয়ে ছিল। ঐ যে তাকাল রিজভীর দিকে আর চোখ নামায় নি। ওরা কি নিয়ে কথা বলছে দূর থেকে সেসব কানে অবশ্য আসছেও না আর যদিও আসতো কুয়াশা আদৌও শুনতো কি না জানা ছিল না। সে তো অপলক, অনিমেষ তার জীবনের প্রথম ক্রাশকে দেখছে।
হ্যাঁ ঠিকই বুঝলেন সকলের আদরীনি পিছলা খেয়ে ঠাঁস করে উল্টায় পড়েছে। তাও আবার তার জম্মের শত্রু বুনো ওল ওরফে শিশির মালিথার বেস্ট ফ্রেন্ডের উপর৷ ভাবা যায়!!
‘
রিজভী দেখতে শুনতে কোনো দিক দিয়ে কোমা না। যেমন শিশির তেমন রিজভী। দু’জনের বডি ফিটনেস, হাইট, গায়ের রঙ সবই প্রায় মিল খাবে। দু’জনের চেহারার মধ্যে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে আর সেটা হলো দু’জনের মুখের আকৃতি গোলাকার। গোল গাল মুখের ছেলে দু’টো স্কুল বলো কলেজ আর ভার্সিটি বলো সব খানেই দাপটে চলেছে এবং চলে। সুন্দর পুরুষ অহরহ আছে। তারা যে শুধু সুন্দর তা কিন্তু না! তাদের থেকেও হাজার গুণ সুন্দর পুরুষ আছে৷ কিন্তু এই দু’জন সুদর্শন পূরুষের মাঝে কিছু একটা যেন আছে। যা সকল যুবতী নারীকে টানে। আকর্ষণীয় কিছুর একটা ব্যাপার আছে তাদের মধ্যে। ঐ যে থাকে না কিছু কিছু মানুষ যাদের হাজার সাদা চামড়া হোউক না কেন কিন্তু নারীরা আকৃষ্ট হয় না আবার কিছু উজ্জ্বল হলুদ ফর্সা পুরুষদের প্রতিই নারীরা বেশি এবং বার বার আকৃষ্ট হয়। চম্বুকের ন্যায় আকর্ষণ করে। ঠিক তেমনই একটা ব্যাপার এই শিশির আর রিজভীর মধ্যে। দু’জনের পার্সোন্যালিটিও এক। মানুষটা যেমন তার বন্ধু এক না হলে হয়? তেমনি শিশির আর রিজভী একই প্রকৃতির। অনেক মিল আছে দু’জনের৷
এই নিয়ে তো একবার ইন্টারে থাকতে একটা হাস্যকর ঘটনাও ঘটেছিল। লোকে শুনে হাসবে বলে তারা কখনো সেগুলো প্রকাশ করে না৷
এখন বলি তাদের মেয়ে পছন্দ না হওয়া নিয়ে,
গার্লফ্রেন্ড তো সবাই-ই হতে পারে, ভালোবাসার মানুষ কয়জনে হয়?? তারা দু’জন চাইলে তো অহরহ গার্লফ্রেন্ড বানাতে পারে। মেয়েরা তো সব সময় তার জন্য তৈরি। যদি একটা ছেলে দশ-বারটা করে গার্লফ্রেন্ডই থাকে তাহলে সেই ছেলের ব্যক্তিত্ব বলে কি থাকল? পাক্কা খেলোয়াড়ে পরিণত হবে না?
তাদের ভাবনা, বিবেক; ভালোবাসা আসবে একদিন, হুট করেই চলে আসবে৷ সেদিনের জন্য না হয় অপেক্ষায় করল! এত এত গার্লফ্রেন্ড পুষে কি হবে? যেখানে মন-ই দিতে পারবে না কাউকে! ভালোবাসা বলে, মন বিনিময় বলেও একটা জিনিস আছে। আসল ভালোবাসা যখন তাদের মাঝে এসে হানা দেবে, যেদিন কোনো মেয়েকে দেখে মনে হবে, নাহ এই মেয়েটায় তার মনের রাণী হবার যোগ্যতা রাখে সেদিন সেই মেয়ের প্রতি তারা নিজেরাই আকৃষ্ট হবে। এসব তাদের না রূপের অহংকার আর না এটিটিউড। সব কিছু মনের ব্যাপার। মন কখন কি বলে কেউ বলতে পারে না।
এই যে এখন রিজভী স্মৃতিকে দেখে পিছলাল? এটা কিন্তু সত্যিকারের অর্থেই পিছলিয়েছে সে। স্মৃতি মেয়েটা দেখতে ভারী মিষ্টি। খুব বেশি লম্বা না। কুয়াশার থেকে খাটো কিন্তু তার চেহারায় যেন রাজ্যর মায়া। এক কথায় কিউট একটা মেয়ে। শরীরের গড়ন বেশ ভালো। খুব বেশি স্বাস্থ্যবান না আবার খুব বেশি চিংচিংই না। স্মৃতির চুল অনেক লম্বা আর ঘণ কালো। যেখানে কুয়াশার চুল কোমড় অবধি। মেয়েটা সত্যি ভারী মিষ্টি। আর এই মিষ্টি মেয়েটার উপরই পিছলিয়েছে রিজভী৷
‘
আজ শাড়ি পড়ে এক একটা মেয়েকে যেন হুর পরী লাগছে। সবাইকেই চোখ ধাঁদানো সুন্দরী লাগছে। এর উপর ও। এত এত সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে রিজাভী সেই মনের মতো মেয়েটার খোঁজ পেয়ে-ই গেল।
দূর থেকে কুয়াশা দেখেই চলেছে রিজভীকে। শিশির আর রিজভী হেসে হেসে কথা বলছে৷ কুয়াশা বিড়বিড়াল,
” হায়… কিতনা সুন্দর হ্যা মেরা রাজকুমার”
” কারে কি কস?”
স্মৃতির কথায় কুয়াশা বলল,
” দোস্ত আমি ক্রাশ খেয়েছি”
” পেট ভরেছে? “
” না আরো খেতে মন চাই “
” তো গিল, পেট ভরলে কইস ”
” জিজ্ঞেস করলি না সেই ভাগ্যবান কে?”
” কে সেই হতভাগা? ”
” রিজভী ভাইয়া”
” এ্যাঁ..”
” হ্যাঁ ”
” বেচারার জীবন তেজপাতা, সে ভাগ্যবান না হতভাগা হতে চলেছে। কপাল পু’ড়েছে তার ”
” এ্যাই তুই আমার বন্ধু না শত্রু? ”
” আমি শত্রু না তোর। কিন্তু তুই যার উপর উল্টায়ছিস সে তোর শত্রুর বন্ধু ”
” এই তাই তো, এটা তো ভাবি নি! ”
” তো আর কি? এখন ভাব বসে বসে ”
” এ্যাই, এ্যাই দাঁড়া কই যাইস? আমার শত্রুর বন্ধু তাইলে কি আমার ক্রাশ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে? ”
” তো আমি কি জানি? শত্রু তো তোর ঘরেই ”
” আমি কেয়ার করি না৷ ঐ বুনো ওল ব্যাগড়া দিতে আইলে ওর খবর করব আমি “
স্মৃতি আর কি বলবে? সে মাথা চাপড়ে দাঁড়িয়ে রইল। যুদ্ধ একটা আসতে চলেছে।
‘
এদিকে অয়ন মুগ্ধ নয়নে কুয়াশাকে দেখছে। লাল পেড়ে হলুদ জমিনের সিল্ক শাড়ি বাঙালি স্টাইলে পড়েছে৷ কৃত্রিম হলুদ ফুলের গহনা, মুখে হালকা মেকাপ, গাঢ় লাল খয়েরী লিপস্টিক, হাত ভর্তি কাচের চুড়ি, কোমড়ে বিছা, চুল খোঁপা করে পুরো খোঁপা জুড়ে গোলাপ দিয়েছে অপূর্ব, অপ্সরা লাগছে।
‘
সবকিছু ঠিকঠাক করে সবাই বাড়ির মধ্যে থেকে বের হলো। আম্বিয়া সকল ত্বত্ত্ব গাড়িতে তুলে দিতে বললেন। একে একে একটা মাইক্রোতে ত্বত্ত্ব তোলা হলো। ত্বত্ত্ব তুলে দিয়ে বড়রা সকলে ভেতরে চলে গেলেন নিজেদের কাজে। যারা যাবে তারা ঠিক করে নিক কে কিসে যাবে।
কথা হচ্ছে, সকলে গাড়িতে উঠবে কিন্তু কে কিসে যাবে এটাই ভাববার বিষয়।
শিশির, নীহার, রিজভীর বাইক আছে তারা বাইকেই যাবে। তুহিনের বাইক নিবে অয়ন। তুষারের বাইক আছে কিন্তু তুষার যাবে না জানিয়েছে৷ যাদের বাইক আছে তাদের বলা হয়েছে একজনকে করে নিতে।
এমন সময় কোথা থেকে কুয়াশা দৌড়ে এসে রিজভীর সামনে দাঁড়িয়ে বায়না করে বসল তার বাইকে সে যাবে। সে বাইকে ছাড়া যাবে না। এমন সেজে বাইকের হাওয়া খেতে খেতে যাবে গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে বসবে না।
কুয়াশা এসে বলতেই রিজভী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। হা করে তাকিয়ে আছে। কই সে ভাবছে সুযোগ সুবিধা বুঝে স্মৃতিকে নিবে এখন কুয়াশা কই থেকে উদয় হলো!!
কুয়াশা জেদ ধরে বলল,
” আমি রিজভী ভাইয়ার বাইকেই যাব। ”
শিশির সেই প্রথম থেকেই কুয়াশাকে লক্ষ্য করছে। ব্যাপার কি? এই গোবর ঠাঁসা এতগুলো ভাই রেখে রিজভীর বাইকে যাবার জন্য জেদ করছে কেন? মনে মনে ভাবতে ভাবতে শিশির বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা তোর জায়গার অভাব পড়েছে? ”
” এ্যাই বুনো… “
থেমে গেল আসে পাশে তাকাল ছোট, বড় মানুষ অনেকেই আছে। তাই দমে গিয়ে বলল,
” দেখো এখানেও নাক গলাতে আসবা না। আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই উঠব ”
বলে আবার বলতে লাগল রিজভীকে৷ সে একবার স্মৃতিকে দেখে নিয়ে শিশিরকে ইশারায় অনুরোধ করল অর্থাৎ,
“কিছু একটা কর ভাই! ”
শিশির তা বুঝল। এদিকে কুয়াশা একের পর এক বলেই চলেছে তার বাইকে নিতে। শিশির এবার বেজায় চটে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তোর ইচ্ছের খেতাপুড়ি ”
বলে বাইক থেকে নেমে দাঁড়াল। কুয়াশাদের কাছে এসে বলল,
” স্মৃতিকে নে আমি এই গোবর ঠাঁসাকে দেখছি ”
বলে কুয়াশার হাত চেপে ধরল। ধরল তো ধরল এতটা জোরেই ধরল যেন কুয়াশার হাতটা শরীর থেকে ভেঙে খসিয়ে নেবে। কুয়াশা ব্যথায় ‘আহ’ করে উঠল। পাত্তা দিল না শিশির। সে হুরহুর করে টেনে নিয়ে গেল। শিশিরের বাইকের কাছে শশী ছিল। শশী শিশিরের বাইকে যাবে বলে ঠিক করেছিল। শিশির এসে বলল,
” শশী তুই নীহার ভাইয়ের বাইকে ওঠ গিয়ে ”
শশী এবার গেল বিপদে পড়ে। কোথায় সে ভেবেছিল ঐ লোকটার থেকে দূরে দূরে থেকে বিয়েটা খেয়ে চলে যাবে। এখন তাকে সেই লোকের বাইকেই উঠতে হবে? শশী কিছু বলতে যাবে নীহার এসে সকলের সামনেই শশীর হাত ধরল। বলল,
” বেশি কথা না বলে জলদি এসো। ”
বলে বাইকের কাছে গেল। সে উঠে শশীকে উঠতে বলল। বাকিরা বেশি কিছু এ নিয়ে ভাবল না।
অয়ন তুহিনের বাইক নিয়ে অনিকে নিল। সাব্বির, সাবিব একটা বাইক নিল। মিহির বাইক এনেছিল ওর বাবার সেটাতে সে আর হিমেল উঠল।
স্মৃতিকে রিজভী উঠতে বলল। সে দোনোমোনো করে উঠে বসল। কারণ তারও মাইক্রোতে যাবার ইচ্ছে নেই। এদিকে বাদ পড়ল বৃষ্টি সে কিসে যাবে! তুষার জানাল সে বৃষ্টিকে দিয়ে চলে আসবে। বৃষ্টিও সাজ নিয়ে মাইক্রোতে যেতে রাজি হচ্ছিল না। আর বাদবাকি কাজিনরা যার যার কাপলের সাথে বাইকে বসল এবং বাকিরা একটা মাইক্রোতে উঠল। মাইক্রো দু’টো চলে গেলে একে একে অন্যরাও চলে গেল।
কুয়াশা আর শশী এখনো দাঁড়িয়ে ঘাড়ত্যাড়ার মতো। শশীর দিকে চোখ গরম করে নীহার তাকাতেই সে না চাইতেও উঠল। কিন্তু ধরল না। নীহার বলল,
” ইঁচড়েপাকা মেয়ে, কোলে উঠতে মন চায় কিন্তু বাইকে উঠে ধরে বসতে মন চায় না?”
শশী উত্তর করল না। সে মুখে কলুপ পেতেছে। নীহার বিরক্ত হয়ে ধমক দিল,
” ধরে বসো মেয়ে “
শশীর কান্না পেল খুব। চোখে পানি এসে টলমল করছে। বাইকের মিররে তা স্পষ্ট দেখল নীহার। শশী বাধ্য হয়ে ধরে বসল। মিটমিট করে হাসছে নীহার। এখনি কিছু বলবে না এই মেয়েকে একটু জ্বালিয়ে নিক নয়তো মাথায় উঠবে।
সকলে চলে গেছে নীহারও শিশিরকে বলে চলে গেল।
এই আরেকটা ঘাড়ত্যাড়া দাঁড়িয়েই আছে।শিশির রাগ নিয়ে ধমকে বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা উঠবি? নাকি রেখে চলে যাব? ”
” বুনো ওলের বাচ্চা তোরে বলেছি আমায় নিতে? যাব না তোর বাইকে আমি, তুই যা”
” তো আমার কি? থাক একা পড়ে। আমার ঠ্যাকা পড়ে নি তোকে আদর করে বাইকে নিতে “
কত্তো বড় ফাজিল চিন্তা করা যায়? সবার বাইক জোড়া করে দিয়ে আর তার ইচ্ছে মতো না যেতে দিয়ে এখন এরকম কথা বলছে? মনডাতো চাচ্ছে এখানে একটা একটা করে চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে নিতে।তার ভাবনার মাঝে শিশির আবার বলল,
” দেখ রাগ উঠাস না! উঠলে ওঠ না উঠলে নাই। এখানে তোর জন্য দাঁড়ায় থেকে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নাই আমার ”
” কেন তোর গার্লফ্রেন্ডরা তোকে দেখতে না পেয়ে ম-রে যাচ্ছে? এ্যাই তুই কয়টা গার্লফ্রেন্ড পুষিস রে? ”
শিশিরের রাগ উঠে সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেল এবার। কিরকম বেয়াদবি করছে? মনটা চাচ্ছে গালটা লাল করে দিতে। শিশির বাইক থেকেই এক ঝটকায় কুয়াশা টেনে এনে বাইকের উপর ফেলল। বলল,
” ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে উঠবি নয়তো এই বাইকের নিচেই তোকে চাপা দিয়ে চলে যাব। ওঠঠ…! ”
শেষ শব্দটা অতিরিক্ত রাগ আর ধমকে বলল। কুয়াশা কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠে বসল। তার যাবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে এখন তাকে ধমকাচ্ছে। কে বলেছিল একে তাকে নেবার জন্য? সেধে তো আসতে চায় নি!!
কুয়াশা উঠে বসে ধরল না। সে ফুঁসছে৷ শিশির আবার ধমকে বলল,
” ধরে বয় বে-য়াদব ”
এবার কুয়াশা শিশিরকে, ধরল তো ধরল এমন ধরায় ধরেছে শিশিরের শরীরের গোস্তো টোস্তো তুলে তো নেবার পণ করেছেই সাথে শিশিরকে গলিয়ে চ্যাপ্টা করারও পণ করেছে। শিশির তো প্রথমে চমকে উঠেছে। তার শরীরের ভেতর শিরশির করে উঠেছে। এবার মাথার মধ্যে ঝনঝন করতে শুরু করল৷ দম আঁটকে আসছে, এই দম আঁটকে কেন আসছে বুঝল না সে কুয়াশার ধরার জন্য হচ্ছে নাকি অন্যকিছু!!
কুয়াশা শিশিরকে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে। ডান হাত শিশিরের কাঁধ খামচে মাংস তুলে নিচ্ছে আর বাম হাত শিশিরের পেট গলিয়ে সামনে নিয়ে পাঞ্জাবির উপর থেকেই খামচে ধরেছে। নখ তো বিঁধে গেছে সাথে অনেকটা শক্ত করে ধরেছে। কুয়াশার পুরো শরীর শিশিরে পিঠের সাথে। শিশিরের জীবন যায় যায় অবস্থা এদিকে কুয়াশা শিশিরের কাঁধের উপর মুখ নিয়ে কানের কাছে লো ভয়েজে দাঁতে দাঁত চেপে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
” হয়েছে তো ঠিকমতো ধরে বসা? চল এবার৷ ধরে বসেছি। নাকি আরো শক্ত করে ধরব? ”
কুয়াশার কথায় শিশিরের হুস এলো। খামচি ধরা জায়গাগুলো ইতোমধ্যে জ্বলে যাচ্ছে। দাঁত মুখ খিঁচে তা হজম করল সে। রূঢ়, ভারী, কঠিন স্বরে বলল,
” কুয়াশা ছাড়..! ”
কথাটায় কিছু একটা ছিল যা কুয়াশার বুকের মাঝে বাড়ি দিতে সক্ষম হলো। হাত আলগা করে দিল। পেট থেকে তৎক্ষনাৎ হাত সরিয়ে নিল। কিছুটা দূরত্বে এলো। শুধু কাঁধের উপর হাত রেখে দিল। শিশির নিজেকে সামলে নিয়ে বাইক স্টার্ট দিল। কেউ আর কথা বলল না।
এরা যে আর ছোট নেই আগের মতো সেটা বোধহয় ভুলে যায়। ভুলে যায় আগের মতো আর যেমন তেমন ভাবে মা-রা মা-রি করা যায় না। যতই হোক তারা একটা ছেলে আর মেয়ে। যেখানে চাচাতো ভাই-বোন হলেও ইসলাম ধর্মে চাচাতো ভাই-বোনের সম্পর্ক সম্পূর্ণ হালাল।
_______
ইয়াসমিনদের বাড়িতে সকল ছেলেরা চেয়ার পেতে বসে আছে প্যান্ডেলের মধ্যে। যেটা করা হয়েছে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে খোলা উঠোন জুড়ে। এখানে আগামীকাল বরযাত্রী বসবে। আজ লগনের লোকজনও বসেছে।
শিশিররা সকলে একজোট হয়ে বসে ফোন টিপছে যে যার মতো। এছাড়া আপাতত তাদের কাজ নেই।
এমন সময় সেখানে কুয়াশা, স্মৃতি, ঈশা, শশী, অনি আরো কয়েকটা কাজিন এলো হাসাহাসি করতে করতে। এসে শিশিরদের থেকে ডান সাইডে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে চেয়ার পেতে বসল৷ বসে আড্ডা দিতে লাগল। বৃষ্টি ইয়াসমিনের কাছে। এখানে ছোটরা ছাড়া আর কেউ নেই। আড্ডা দিতে দিতে এমন সময় কুয়াশা জোর গলায় সুর ধরে গেয়ে উঠল,
” দিলি বড় জ্বালা রে পাঞ্জাবি ওয়ালা ”
গানটা সে রিজভীর দিকে তাকিয়ে গাইছে।
এদিকে কুয়াশার গান শুনে শিশির সহ সকলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ফোন থেকে চোখ তুলে সেদিকে তাকিয়ে দেখল এটা আর কেউ গাইছে না শিশিরের ভাষায় যাকে বলে গোবর ঠাঁসা। সে আবার গাইলো,
“” রসিক দিলকা জ্বালা, ঐ লাল কোরতা ওয়ালা”
—দিলি বড় জ্বালা রে পাঞ্জাবি ওয়ালা
—দিলি বড় জ্বালা রে পাঞ্জাবি ওয়ালা “”
|| চলবে ||
গান শুনে শিশির কি করবে মনে হয়!!
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part )