®রোজা রহমান
‘
তুহিন অবাক নয়নে চেয়ে দেখছে সব৷ কাহিনীটা কি সে বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু ধরতে পারছে না। কি এমন এটা? যেটা খেয়ে এদের সকলের মুখের এক্সপ্রেশন এরকম?
কুয়াশা ঠোঁট কামড়ে এখনো হাসছে। আপন মনে ভাবছে, সেদিনের অপমানের প্রতিশোধ আজ নিতে পারল, আহা! এই সুযোগটাই তো সে খুঁজছিল এবং আজকের দিনটার জন্য সে অধির অপেক্ষায় ছিল, ফাইনালি পেয়েছে আজ৷ জব্বর ভাবে প্রতিশোধ নিতে পেরেছে৷ এবার দেখ কেমন লাগে! এই কুয়াশাও কম না, হু! সে-ও সুযোগ বুঝে পাটকেল ছু’ড়তে জানে। সব সময় তুই কেন জিতে যাবি? মারবিও তুই আবার জিতবিও তুই? অত সস্তা আমি না। এবার সহ্য কর কত ধানে কত চাল। আহ শান্তি..!!
কুয়াশার ভাবনার মাঝে তুহিন ভর্তার বাটিটা নিয়ে নিজে খেতে গেল তৎক্ষনাৎ কুয়াশা তড়িঘড়ি করে এসে কেঁড়ে নিল বাটিটা৷ আমতা আমতা করে বলল,
” আরে ভাইয়া এটা খেতে হবে না তোমার। এখানে অনেককিছু আছে ওগুলো খাও৷ এটা বরযাত্রীদের জন্য ছিল, বরের জন্য না৷ তোমার জন্য ঐ যে ইয়া বড় রুই মাছের মাথা। ওটা খাও ”
তুহিন কুয়াশার কথায় ভ্রু কুঞ্চিত করল অনেকটা৷ ভারী কন্ঠে বলল,
” কুহেলি..! কি মিশিয়েছিস এতে? কি এটা? ”
” আরে ভাইয়া কিছু মিশায় নি ট্রাস মি, এটা ভর্তা ”
” সে তো আমিও দেখছি। কিন্তু এরা এমন রিয়াকশনে আছে কেন? ”
কুয়াশা শিশিরদের দিকে তাকাল। চোখ মুখ সবার লাল হয়ে এসেছে। মেয়ে হলে বোধহয় এতক্ষণ হাত পা ছুড়ে কান্না জুড়ে দিত। কুয়াশা সহ সকলে মিটমিটি হাসল আবার৷
এদিকে শিশিরদের অবস্থা বেগতিক। নীহার বহু কষ্টে কথা বের করল,
” কুশু..! বুনো ওল ভর্তা এটা? ”
মেয়েরা সকলে এবার ফিক ফিক করে জোরে শব্দ করে হেসে দিল। এতক্ষণের আটকানো হাসি আর ধরে রাখতে পারল না। ঈশা হাসতে হাসতে বলল,
” হ্যাঁ ”
নীহারেরও এবার প্রচুর রাগ উঠল। সে সহজে রাগে না। কিন্তু রেগে গেলে তাকে আটকানো যায় না। কিন্তু সে জায়গা বুঝে তাই আশেপাশে প্রচুর লোক বলে সিনক্রিয়েট না করে অতিরিক্ত রূঢ়, ভারী স্বরে বলল,
” এটা কেমন বে’য়াদবি তোদের??”
” উহু এটা বেয়াদবি না। এটা আমাদের শালিকাদের হক। বরযাত্রী এবং দুলাভাইয়ের সাথে মজা করা শালিকাগত অধিকার। তোমরা আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে আসবা না। আর যদি আসো তবে হরতাল করব। ”
তুহিন বলল,
” তাইবলে নিমপাতা, বুনো ওল ভর্তা? ”
” একদম। এগুলোই ইউনিক এবং পারফেক্ট ”
কুয়াশা উৎফুল্ল উত্তর। শিশির এক পলকের জন্যও কুয়াশার উপর থেকে নজর সরায় নি। সে শকুনি নজরে তাকিয়ে। কখন যে বাজপাখির ন্যায় হামলে পড়বে কুয়াশার উপর তার দিক ঠিকানা নেই। দাঁতে দাঁত চেপে গলা চুলকানো সহ করছে৷ কতপরিমাণে ধরেছে গলা তা বলার মতো না৷ মনে চাচ্ছে কে’টে ফেলতে।
বুনো ওল বলে কথা!! এটা নাকি খেতে মজা কিন্তু তার মর্ম পরে বোঝা যায়। তারউপর কুয়াশারা যেটা এনেছে এটা বোধহয় বেশিই বাঘা৷ গলার মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। কেটে যাচ্ছে। সেই চুলকানির জ্বালা এক আর এক কুয়াশার এই আনন্দ সব মিলিয়ে শিশিরকে দাউদাউ করে জ্বালিয়ে তুলছে। আজ এই শরীরের আ-গুনেই কুয়াশাকে জ্বালাবে৷
হিমেল এবার আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠল,
” এ্যাই ভাই সব চুলকে খেয়ে নিচ্ছে আমার৷ এ কি খাওয়াইলো আমারে? কিছু একটা করো “
হিমেলের কথায় সকলে ওর দিকে তাকাল। একে আর কি বলবে? তাদেরও তো একই অবস্থা। না সহ্য করা যাচ্ছে আর না কিছু করা যাচ্ছে।
মেয়েরা ঠোঁট টিপে হাসল। এটাকেও বেশ সোজা করা গেল। শুধু ঐ বুনো ওলের চামচা হয়ে থাকে।
অয়ন বলল,
” ভাইরে আমারও সব খেয়ে নিচ্ছে। তোরে কি কব?”
সকলের কথা আটকে আটকে আসছে। কথা বলার সময় গলায় হাত দিচ্ছে সাথে ভেতরের চুলকানো উপর থেকে নিরাময়ের জন্য গলা চুলকাচ্ছে৷ কিন্তু এটা কি হয় তাই? চুলকাচ্ছে তো ভেতরে উপরে তা চুলকালে কমে?
এতক্ষণ পর শশী মুখ খুলল,
” বেয়াইনদের এই জ্বালাটুকু যদি না নিতে পারেন তবে কিসের বরযাত্রী আপনারা? ”
কথাটা সে নীহারের দিকে তাকিয়ে নীহারকে উদ্দেশ্য করে বলল৷ প্রত্যুত্তরে নীহার জহুরী নজর দিয়ে বলল,
” ইঁচড়েপাকা মেয়ে, বেয়াইন হবার খুব শখ?”
উত্তরে শশী মুখ ঝামটাল। কুয়াশা বলল,
” আপাতত আমরা তোমাদের বোন না৷ আমরা কনেপক্ষ৷ তাই এই জ্বালা সহ করো। ”
এবার শিশির মুখ খুলল,
” গ্রেট, তো এবার তোরাও তাহলে বেয়াইদের জ্বালা সহ্য করার জন্য প্রস্তত হ। চল তোদের দেখিয়ে দিই বেয়াইদের জ্বালা কত প্রকার! ও কি কি!! “
কথাটা এমনভাবে বলল শিশির উপস্থিত সকলে শুকনো ঢোক গিলল৷ যে মেয়েগুলো আজ শিশিরের প্রতি ফিদা হয়েছিল তারাও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে উঠল। কুয়াশা শুকনো ঢোক গিলে নিজেক সামলে নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” আরেহ বাহ, বুনো ওলের দেখি বুনো ওল খেয়ে কথা ফুটেছে। আমি তো আরো ভাবলাম বুনো ওল বুঝি বুনোওল ভর্তা খেয়ে তার কথায় হারিয়ে ফেলেছে। তা বুনো ওল মশাই..! বুনো ওল ভর্তাটা কি সেই স্বাদ ছিল? অনুভূতি বলেন ”
কুয়াশার ব্যাঙ্গ করা কথায় মেয়েরা আবার হেসে দিল। শিশির ফুঁসছে তুহিন শিশিরকে থামিয়ে দিল। বলল,
” শিশির এখানে অনেক লোক আছে এমনকিছু করিস না যেটাতে লজ্জায় পড়তে হয়। “
তারপর থেমে কুয়াশার উদ্দেশ্যে বলল,
” দেখ কুহেলি, কাজটা ঠিক হচ্ছে না। জলদি গিয়ে তেঁতুল নিয়ে আয় বড় চাচু জানলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে৷ ”
শিশির তুহিনের কথায় যদিও শান্ত হলো কিন্তু রাগে তার মাথার রগ ছিঁড়ে যাচ্ছ সেটা স্পষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে তার কপালের ভ্রু দ্বয়ের উপরিভাগের ভাজ গুলো৷ সেগুলো যে রাগে ভাজ পড়েছে সেটা স্পষ্ট।
এরা এমন তর্ক করছে সেগুলো অনেকেই শুনছে তবে বেশি পাত্তা দিচ্ছে না কারণ বিয়ে বাড়িতে বরযাত্রীদের সাথে এমন মজা হয়-ই। তুষার তার বাবার সাথে অনেকটা দূরে প্রথম সারিতে বসেছে তাই এখানে ঘটনাটা কি ঘটেছে সে জানে না৷ খাওয়া রেখে আসতেও পারছে না।
এবার রিজভী বলল,
” প্রচুর কষ্ট হচ্ছে, কুয়াশা কিছু নিয়ে এসো। তোমাদের মজা মাথা পেতে নিলাম এবার যাও তেঁতুল আনো। ”
লক্ষ্য করল কুয়াশারা সকলের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। স্মৃতি পেছন থেকে আস্ত করে বলল,
” এ্যাই কুশু, এবার ছেড়ে দে। অনেক হয়েছে৷ বেচারাগণ সহ্য করতে পারছে না আর৷ ওদের যা অবস্থা হচ্ছে ওরাই বুঝতে পারছে। দিয়ে দে তেঁতুল ”
কুয়াশা এবার ঈশার একটা কাজিনকে বলল তেঁতুল আনতে। কথা অনুযায়ী তেঁতুল আনা হলো৷ সকলকে সেটা দিল৷ শিশির বাদে সকলে মুখে দিল৷ মুখে দিয়ে মুখ চোখ বিকৃত করে ফেলল৷ প্রচুর টক। ‘বাঘা তেঁতুল’ বলে কথা!
সকলের তেঁতুল চুষে খাবার পর গলার চুলকানি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে এলো। এতক্ষণ যেই যুদ্ধ চলছিল সেটা দমন হলো। শিশিরকে ঘাড়ত্যাড়ার মতো বসে থাকতে দেখে কুয়াশা ভ্রু কুঁচকাল। মনে মনে আউড়াল,
” ঢং দেখ, যেন বীরযোদ্ধা এমন-ই বসে থেকে চুলকানো নিরাময় করে নিবেন”
তুহিন বলল,
” শিশির, কীরে নে! ”
শিশির কুয়াশার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন কুয়াশা তেঁতুলের বাটিটা নিয়ে শিশির সামনে বসল। চোখে চোখ রেখে ফিসফিসিয়ে বলল,
” বাহাদুরি না করে তেঁতুল নাও। আর এটা আমার প্রতিশোধ। ভুলে যায় নি আমি সেদিনের স্টেশন থেকে অপমান, মুড়ি ঠুসে আমার গাল কেটে দেওয়া সব পইপই করে মনে রেখেছি৷ এখন হা করো”
” খুব বেশিই উড়ছিস দেখছি? এখান থেকে বের হতে দে নিজ দায়িত্বে তোর ডানা ছাঁটার ব্যবস্থা করছি ”
” বিশ্বাস করো, তুমি কিছুই করতে পারবে না। মিলিয়ে নিয়ো ”
আত্নবিশ্বাসের সাথে কথাটা শিশিরের বলার ভঙ্গিমাতেই উত্তর দিল৷ শিশির অনিমেষ কুয়াশার চোখের দিকেই তাকিয়ে। যেন পলক পড়লে কুয়াশা হারিয়ে যাবে আর সে কুয়াশাকে ধরতে পারবে না৷ কুয়াশাকে শায়েস্তা করার জন্য ওর নজরে নজর রাখাটা অত্যাবশ্যক। ভাবটা এমন।
শিশির ওর কথার উত্তর দিতে যাবে এমন সময়-ই কুয়াশা শিশিরের মুখের মধ্যে তেঁতুল ঠুসে দিল। বলল,
” তোমার মতো বুনো ওলের জ্বালা মেটানোর জন্য আমার মতো এই বাঘা তেঁতুল কুয়াশারই প্রয়োজন আজীবন, আমরণ ”
কথাটার মধ্যে এমনকিছু ছিল যা শিশিরের সর্বশরীরে ঝাঁকুনি দিতে সক্ষম হলো। মস্তিষ্ক অচল করে দিল। কিছুক্ষণ শুধু কুয়াশার কথাটায় বাড়ি দিল মস্তিষ্কে।
তার এমন অনুভূতির কারণ পেল না৷ কিন্তু সামনে বসা মেয়েটা তো তার মন মতো কথাটা বলে খালাস পেল। সে কি কথাটা বুঝে বলেছে? নাকি সবসময়ের মতো না বুঝেই বলল? ভাবভঙ্গি পুরোটাই বলে দিচ্ছে সে কথা মর্মার্থ বুঝে বলে নি৷ ব্যস তার বলার দরকার বলে দিয়েছে৷ কিন্তু এই কথাটা সারমর্ম সে কী আদৌ যানে!!
শিশিরের ভাবনার মাঝেই কুয়াশা বলল,
” বিশ্বাস না হলে খেয়েই দেখো “
বলে উঠে পরল৷ সবার উদ্দেশ্যে বলল,
” সরি ভাইগণ’স আমি শুধু একজনকে এটা খাইয়ে শাস্তি দিতে চাইছিলাম আর সেটা ঐ বুনো ওলকে। কিন্তু তোমরাও নিজ ইচ্ছেতে সামিল হয়ে গেছ। এখানে আমদের কিছুই করার নেই৷ কে জানতো সব গণপতি ওটা খাবার জন্য হামলে পড়বা? যায়হোক, বরযাত্রী যখন হয়েছ এইটুকু হেনস্তা সহ্য করেই নাও৷ আফটার অল, কনেপক্ষ থেকে বেয়াইন বলে কথা!!”
অয়ন বলল,
” আচ্ছা? তবে তো বেয়াইদেরও জবাব সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে, বেয়াইন সাহেবাগণ! জানেন তো বেয়াইদের জবার হয় তীর? সেই জবাবের তীর দিয়েই কিন্তু কাবু করে বেয়াইনদের! বি রেডি, বেয়াইন সাহেবাগণ ”
বলে অদ্ভুত দৃষ্টিতে ঠোঁট কামড়ে হাসল অয়ন৷ ওর কথার ধরন, মানে আর কেউ না বুঝলেও না ধরলেও শিশির সুক্ষ্ম নজরে ধরল এবং দেখল৷ এর আবার মতিগতি কী!!
কুয়াশারা একসাথে বলে উঠল,
” দেখা যাবে ”
কুয়াশা বলল,
” আপাতত এই পর্যন্তই, একটুপর আবার আসছি, হাত ধুয়ানোর জন্য। বি রেডি ”
বলে চুল ঝাঁকিয়ে একটা ভাব নিল। নিয়ে সেখান থেকে সবাই প্রস্থান করল৷
কুয়াশারা চলে গেলে সকলে ভর্তার বাটিটা এক প্রকার ছুড়ে দেয়ার মতো করে সরিয়ে অন্য খাবার দিয়ে টুকটাক খাওয়া ধরল।
______
খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে সকলে একটু জিড়িয়ে নিচ্ছে৷ একটু পর বউ নিয়ে সকলে রওনা হবে৷
খাবার পর একচালান যুদ্ধ হয়েছে কুয়াশাদের সাথে টাকা নিয়ে। শেষ মেশ কুয়াশারা জিতেছে৷ তাদের চাওয়া অনুযায়ী টাকা পেয়ে খুশি হয়েছে। কিন্তু টাকার বিনিময়ে তাদেরকে বরের সাথে বসা সকলের হাত ধুয়ে দিতে হয়েছে৷ শিশির সেই সুযোগ ছাড়ে নি। হাত ধুয়ে দিতে হয়েছে তার। আর সেটা কুয়াশাকে দিয়েই ধুইয়েছে সে।
_____
সব কিছু ঠিকঠাক করে বিয়ের কনেকে নিয়ে সকলে বের হচ্ছে। বের হবার আগে সকল নিয়ম পালন করা হলো৷ বাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টি সহ কুয়াশা, ঈশা, অনি আরো দুটো ভাবি ইয়াসমিনকে ধরে নিয়ে এলো। সেখানে ইয়াসমিনের মা মনিরা, আমিনুল হক এসে মেয়ের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়লেন৷ ঈশা বোনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল। আজ থেকে তার একা থাকতে হবে৷ জন্মের পর থেকে বোনের সঙ্গ পেয়েছে সে। কান্না তো করবেই।
আমিনুল হক তুহিনের হাত ধরে ইয়াসমিনের হাত তার হাতে রেখে কন্যাদান করলেন৷ তুহিন মামাকে সম্পূর্ন আশ্বাস দিয়ে ইয়াসমিনের হাত শক্ত করে ধরল অর্থাৎ এ হাত আজীবনের জন্য ধরল এবং তাকে সুখে রাখার দায়িত্ব নিল।
মনিরা বেগম মেয়েকে গাড়িতে তুলতে গিয়ে মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাবেন। জাকির মালিথা এসে কিছু কথা বলে আশ্বাস দিলেন। বৃষ্টি, কুয়াশা মনিরাকে শান্ত করলেন। ইয়াসমিনের অবস্থা বেগতিক জলদি এখান থেকে বের হতে হবে এই ভেবে জলদি সকলে গাড়িতে উঠতে লাগল।
কিন্তু গাড়িতে এবার উঠতে গিয়ে বাঁধল বিপত্তি। আসার সময় তো কুয়াশা গাড়িতে এসেছে, বৃষ্টি ও এসেছে এখন যে কোনো একজনকে গাড়ি থেকে নামতে হবে। এছাড়া ঈশাও যাবে। তুহিনের বাইক অয়নের কাছে। সে কারে এসেছে৷ তাই কুয়াশাকে নামতে হলো। কারের ভেতরে তিনজন ছাড়া বসা যাবে না গেলেও অনেক ঠাসাঠাসি হবে।
তাই ঠিক হলো বৃষ্টি, তুহিন কারেই যাবে। ঈশা না হয় অভির বাইকে যাবে আর হিমেলকে মিহিরের সাথে উঠতে বলল শিশির কারণ সে কুয়াশাকে নেবে। এদিকে কুয়াশা শিশিরের বাইকে উঠতে নারাজ সে মিহিরের বাইকে যাবে কারণ সে জানে শিশির তাকে এমনি এমনি বাইকে নিতে চাচ্ছে না৷ এত ভালো বান্দা সে না যে সমঝোতায় তাকে বাইকে নেবে৷ আর আজ দুই’দুই বার যে কাণ্ড করেছে সে! এর পরে তো আর যাওয়াই যাবে না৷
একে একে সকল গাড়ি রওনা দিল৷ কুয়াশাকে শিশির হুরহুর করে টানতে টানতে বাইকে উঠাল। কুয়াশা কাঁদো কাঁদো হয়ে বাইকে বসল। তার বুক কাঁপছে হাত পা অসার হয়ে আসছে না জানি আজই পৃথিবী ছাড়তে হয় কিনা!
শিশির বেশ চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। এটা একদম তাণ্ডবের পূর্বাভাসের অবস্থা। এমন শান্ত প্রকৃতি নেয়া যাচ্ছে না। কখন যে তার লীলাখেলা দেখানো শুরু করে দেবে কে জানে!
______
বিয়ের বরের গাড়ি বউ নিয়ে এসে থামল মালিথা ভিলার সামনে৷ চারিদিকে হর্ণের তীব্র শব্দ জানান দিল তারা বউ নিয়ে চলে এসেছে। বাড়ির মধ্যে থেকে সকলে বেড়িয়ে এলে। আশেপাশের মানুষজনও এলো নতুন বউ দেখতে। যদিও বউ আগেই সকলের দেখা তবুও কেন জানি সকলে বিয়ের দিন আবার দেখতে আসে। কি দেখে কে জানে! মুখে তো বলে,
” বউ সেজে কেমন লাগছে দেখি”
কিন্তু আদৌ কি বউ সাজে দেখে নাকি অন্যকিছু দেখে সেটার আবার আলোচনা সমালোচনাও করে।
যায়হোক সকলে হুড়মুড়িয়ে বউ দেখার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আম্বিয়া সহ দুই জা নেমে এসে ছেলেবউকে বরন করে নিলেন। সব নিয়ম কানুন হয়ে এলে বৃষ্টি ইয়াসমিনকে নিয়ে বসার ঘরে সোফায় বসাল।
‘
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা আসতে চলল। বউ নিয়ে সকলে বসার ঘরে ব্যস্ত। ইয়াসমিনকে ঘরে তোলা হবে রাতে। যে যার কাজে ব্যস্ত।
কুয়াশারা এখন সকলে ড্রেস চেঞ্জ করতে ব্যস্ত৷ এতক্ষণও তারা সাজ অবস্থায় ছিল।
কুয়াশার ঘরে শশী, অনি থাকে অনিকে গেস্ট রুমে দেয়া হয়েছিল কিন্তু অতিরিক্ত মেহমান আসাতে কুয়াশার ঘরে থাকে। শশী অনির হয়ে গেলে তারা চলে গেল। কুয়াশা নিরিবিলি নিজের মতো করে করবে।
সে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে লেহেঙ্গার ওরনা খুলল। ওড়নাটা অনেক ভারী৷ অস্বস্তি হচ্ছে। এখন কেউ আসবে না সকলে নিচে ব্যস্ত। আর ছেলে তো আসবেই না। তার এতগুলো ভাই সচারাচর তার ঘরে আসে না। দরকারে তাকে ঘর থেকে ডেকে নেয় তবুও কুয়াশার ঘরে ঢোকে না সহজে। ঢুকলেও বাইরে নক করে ঢোকে।
কুয়াশা মিররের সামনে গিয়ে মেকাপ তুলতে ব্যস্ত হলো। এরই মাঝে ঘরে কেউ প্রবেশ করল। মিরর থেকে চোখ সরিয়ে দেখল শিশির ঢুকে দরজা আটকে দিচ্ছে। সে এখনো কুয়াশার দিকে তাকায় নি। কুয়াশা হতভম্ব হয়ে চোখ বড় বড় তাকাল। এই সময়ে শিশিরকে তার ঘরে বিনা নকে সে আশা করে নি। তারউপর এসেই ঘরে ছিটকানি দিচ্ছে কেন? আর হাতে গ্লাসেই বা ওটা কী?
দরজা আটকে দিয়ে কুয়াশার দিকে মাত্রই শিশির তাকাল তৎক্ষনাৎ সে পিছন ঘুরে দাঁড়াল। এবার নিজেরই নিজেকে মা-রতে ইচ্ছে করছে। রাগের মাথায় নক করতেও ভুলে গেছে৷ আবারও সেই অপ্রস্তত অবস্থা। এই রাগই না তার জীবনের কাল হয়!
কুয়াশাও তড়িঘড়ি করে পিছন ঘুরে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়াল৷ চুল খোঁপা করা ছিল সেটাও খুলে দিল। এমন অস্বাভাবিক, অপ্রস্তত অবস্থায় আজ পর্যন্তও পড়েনি সে। এতগুলো ভাই বাড়িতে থাকে কখনো ওড়না বিনা বাহিরে বের হয় না সে। এমনকি ঘরেও কখনো ওড়না খুলে রাখে না। মূলত ওড়না সে খুলেই না৷
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click
শিশির কি এনেছে গ্লাসে?