®রোজা রহমান
‘
কেটে গেছে সপ্তাহখানেক। সপ্তাহের মাঝে কুয়াশা অনেকটা সুস্থ এখন। সেদিন জ্বর আসাতে তাকে পরেরদিন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। বড় ডক্টর দেখিয়ে মাথা চেকআপ করানো হয়। বড় ডক্টরও জানিয়েছিল খুববেশি ক্ষতি হয়নি তবে রক্ত জমাট বাঁধাতে সমস্যা হবে এবং সিটিস্ক্যান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এও বলেছিলেন এই আঘাতটায় মাঝে মাঝে মাথায় যন্ত্রণার সৃষ্টি করতে পারে যতদিন ব্যথা থাকবে আরো করবে। এরপর নানান ঔষধ লিখেছিলেন৷ সেখানে তিনদিন এডমিট ছিল সে। সবরকম সেবা করেছিলেন মেয়েকে আজমীরা। শিশির সবটা শুনে এই প্রথম অনুশোচনায় ভুগেছে। কারণ তারা চুলোচুলি করলেও এত বড় ক্ষতি আজ অবধি কারো হয়নি।
তিনদিনের দিন সুস্থ হলে কুয়াশাকে বাড়িতে আনা হয়। এরপর সকল চিকিৎসা, সেবা বাড়িতে বাড়ির লোকই করেছে৷ মাথার ব্যথাও অনেকটা কম এখন। এই কয়দিনে মেয়েটার মুখ শুকিয়ে মুড়ি হয়ে গেছে৷ শরীরও অনেকটা ভেঙে গেছে৷ সোফায় বসে আছে সে৷ বাড়ির বড়রাও আছে। সকালে চা, কফি খাচ্ছেন। কুয়াশার ঘুম সকালে ভেঙে গেছে বলে বসে আছে।
এই সপ্তাহখানেক কুয়াশা অসুস্থ ছিল তাই শিশিরও কুয়াশার সাথে লাগতে আসে নি। যার জন্য বাড়িটা একদম শান্তশিষ্ট হয়ে আছে। বিষয়টা এই বাড়ির জন্য একটু অস্বাভাবিকই বটে৷ কারণ বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলের চুলোচুলি ছাড়া বাড়িটা নিরামিষ লাগে। ভাবটা এমন,’ নূন ছাড়া পান্তাভাত।’ তিনদিন পর রিলিজ হয়ে এসে বেশ অসুস্থ থাকায় মন মানসিকতা খারাপ। তাই কোনো বিষয় নিয়ে উচ্চবাচ্চও করেনি কুয়াশা। মুখবুজেই আছে মেয়েটা। শিশিরকেও তেমন কাছে পায়নি। সে পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। কোথায় নাকি কোন লয়ারের সাথে ইনভেস্টিগেটে যেতে হয়। এইজন্য দুইজন বেশ দূরে দূরে যার ফলে ঝগড়াটাও মিস করছে। তবে বলা যায় না কখন আবার এরা আদিম রূপে আদিম নিয়মে ফিরে আসবে।
‘
সেদিন শশীকে নিয়ে ঐ রাতেই চলে গেছিলেন শশীর বাবা মা। হাজার থাকতে বলেও থাকেন নি। কারণ হানিফ সাহেবের অফিস ছিল সকালে জানিয়েছিলেন। শশীর যাবার ইচ্ছে ছিল না৷ কান্নাভেজা চোখে বিদায় নিয়েছিল মেয়েটা। নীহারও চেয়েছিল রাতটা রাখার জন্য কিন্তু বড়দের সামনে কিছু বলতেও পারেনি আবার কিছু করতেও পারেনি৷
‘
খাবার টেবিলে পুরুষগুলো খাচ্ছে। কুয়াশাও খাচ্ছে বসে। এই সপ্তাহখানেক বৃষ্টি, ইয়াসমিন শাশুড়িদের সাথে খায়। শিশির খেতে খেতে চোখ বুলিয়ে কুয়াশার শরীরের হালচাল দেখছে। তার আবার সকলের সামনে এই গোবর ঠাঁসার শরীরের খোঁজ নিতে ইগোতে বাঁধে। খোঁজ নিতে হলে নীহারের থেকে নেয় নয়তো হিমেলের থেকে নেয়৷
কুয়াশা অসুস্থ থাকায় কলেজে যায় না। স্মৃতি এসে দুইদিন করে দেখে গেছে। রনি কুয়াশার কথা স্মৃতির থেকে শুনে কুয়াশাকে অনেকভাবে দেখতে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু স্মৃতি তাকে আসতে দেয়নি। কুয়াশার বাড়ির বিষয়ে বলেছে তাকে।
নীহার চুপচাপ খাচ্ছে। মনটা তার বেজার। কুয়াশা, শিশির তা লক্ষ্য করল। বুঝল সকালে শশীর সাথে কথা হয়নি। যার জন্য এমন বাংলারপাঁচের মতো করে রেখেছে বদনখানি। সে নিয়ম করে শশীর সাথে দুইবেলা কথা বলে। শশীকে বলেছিল রোজ একবার করে কল দিয়ে কথা বলবে কিন্তু সে নিজেই কথা না বলে থাকতে পারে না৷ তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে শশীর সাথে বিছানা থেকেই কথা বলা শেষ করে বিছানা ছাড়বে। এরপর রাত এগারটার পর কথা বলে। রাত এগারটা অবধি শশী পড়ে। নীহার কল দিয়ে তার পড়াশুনার খোঁজ সহ নানান কথা বলতে বলতে ঘুম এসে যায়। এটা যেন এই সপ্তাহখানেকে অভ্যাস হয়ে গেছে৷
আজ কথা হয়নি মেয়েটার সাথে কারণ শশীর কাছে ফোন ছিল না৷ শশীর এখনো নিজের ফোন কেনা হয়নি৷ সে মায়ের ফোন ব্যবহার করে। এটা নীহার দুইদিন আগে যেনেছে৷ যেনে একটা ফোন কিনে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে জলদিও কেনা হবে না সময় লাগবে৷ দিতে হলে তো আর যে সে ফোন দেয়া যায় না? ভালোকিছুই দিতে হবে আর বাপের কাছেও টাকা চেয়ে হবুবউকে ফোন দিতে পারে না সে। এই ভেবে একটু লেট করেই দেবে৷
কুয়াশা মিটমিট করে হাসছে আর খাচ্ছে। বৃষ্টি, ইয়াসমিন দেখে ভ্রু কুঁচকাল। ইশারায় জিজ্ঞেস করল হাসছে কেন? সে-ও ইশারায় নীহারকে দেখাল৷ দু’জনেই নীহারের দিকে তাকিয়ে বুঝল কারণটা। ওরাও মিটমিটিয়ে হাসল৷ ভাবল, হায়রে দেবরজীটার কী অবস্থা হয়েছে! একটা বাচ্চা মেয়ের পাল্লায় পড়ে! প্রেমে পড়ে সে নিজেও শশীর মতো বাচ্চা হয়ে গেছে। এরেই বলে প্রণয়ের জ্বালা। আসলে পিরিতি সত্যি কাঁঠালের আঠা। যা লেগে গেছে নীহারের শরীরে সেটা আর সহজে ছাড়বে না।
শিশির কুয়াশার হাসি দেখল৷ আজ মেয়েটাকে উৎফুল্ল লাগছে৷ ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
সকলে খেয়ে খেয়ে উঠে পড়ল। শিশির এক প্রকার দৌড়ানোর মতো করে বের হলো৷ ফোন কল আসছে বার বার তার৷
______
ক্যাম্পাসে রিজভী, শিশির অতিরিক্ত ভাবনায় ব্যস্ত। একটু পর বের হবে। তারা টপ দশজন দু’জন দু’জন করে ইনভেস্টিগেটের সুযোগ পেয়েছে। সর্বপ্রথম পেয়েছে শিশির, রিজভী। এরপর বাকিদের যখন সময় হবে তখন তারা যাবে৷
আজ দুইদিন যাবত একটা কেসের ইনভেস্টিগেটরে আছে সহকারী হিসেবে৷ কুষ্টিয়ার নামকরা এডভোকেট মনিরুজ্জামানের (কাল্পনিক) সাথে। যিনি কখনো কেসে হারেন না। তুখোড় বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তিনি সকল কেসেই জয়ী হোন। তবে এই কেসটা অতিশয় জটিল মনে করছেন তিনি। সবকিছু কেমন এলোমেলো। তার ক্লাইন্টের বিরুদ্ধে সব প্রমাণ। তাকে বাঁচানোর জন্য কোনো প্রমাণই তিনি পাচ্ছেন না। শিশির, রিজভিও হাল ছাড়া পাত্র না। তারা দু’জনেই উনাকে আশ্বাস দিয়েছে জয় সত্যরই হবে, কোনো মিথ্যার হবে না। শিশিরদের এমন আত্নবিশ্বাস দেখে এডভোকেট মনিরুজ্জামান মনোবল ভাঙেননি। অতি অবাক হচ্ছেন যে এই দু’জন যুবক তার শক্তি হিসেবে কাজ করছে! এমনকি তাদের আশ্বাস দেয়াতেও তিনিও মনোবল পাচ্ছেন৷
সবথেকে বড় কথা শিশির এই প্রথম তবুও প্রতিটা পয়েন্ট সে তুখোড় বুদ্ধিমত্তার সাথে ধরছে এবং সেগুলো অতিক্রম করছে। প্রমান সে যোগার করেই ছাড়বে ভাবটা এমন। এডভোকেট মনিরুজ্জামান শিশিরের প্রতি অতিশয় সন্তুষ্ট। তার ঈগল চোখ দিয়ে তিনি বুঝে গেছেন এরাই দেশের ভবিষ্যত।
‘
শিশিরদের তদন্তের আজ সপ্তাহ পাড় হয়ে গেছে। আদালত থেকে আর একবার সুযোগ নিয়েছে তারিখ ১৯শে জুলাই। সেদিনই কেস ক্লোজ করবে আদালত। কিন্তু তারা কোনো প্রমাণ পায়নি। আর মাত্র চারদিন সময় আছে। মাথা পুরো এলোমেলো সবার। তাদের ভাবনা কেসটা যতটা জটিল করে তাদের দেখানো হচ্ছে ততটাকি জটিল? নাকি সামনের উপর প্রমাণ থেকেও তাদের চোখে পড়ছে না?
‘
আরো দুইদিন পর এডভোকেট মনিরুজ্জামান সহ শিশির, রিজিভী প্রমাণের আশায় রাত এগারটার দিকে ভি’ক’টি’মের বাড়ির আশেপাশে এসেছে। প্রয়োজনে এখানে আজ সারারাত কাটাবে তবুও প্রমান চায়। একঘন্টা যাবত তারা ঘুরাঘুরি করে হঠাৎ শিশিরের চোখে কিছু একটা পড়ল। সেদিকে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সে। কিছু মিনিট যাবত একপলও চোখের পলক ফেলল না৷ জহুরী নজরে তাকিয়ে দেখল। শুধু দেখল এগিয়ে গেল না৷ কথাও বলল না এমনকি কাউকে বলতেও দিল না। এরপর কিছুক্ষণপর সে বাঁকা হাসি দিল। এডভোকেট মনিরুজ্জামান তা খেয়াল করলেন। জিজ্ঞেস করলে শিশির শুধু বলল,
” স্যার কাল সকাল পর্যন্ত আমাকে সুযোগ দেন। জিৎ সত্যরই হবে। পরশুদিন আমরা সঠিক বিচার পেতে চলেছি ”
_______
অবশেষে আজ সেই ১৯শে জুলাই৷ মা-ম-লা খালাস হয়েছে। আদালত সঠিক বিচার করেছেন। ভি’ক’টি’ম এর খু-নিরা সঠিক শাস্তি পেয়েছে। সব প্রমাণ শিশিররা আদালতে হাজির করেছিল। এডভোকেট মনিরুজ্জামান সহ রিজভী নিজেও অবাক। সামান্য সুত্র ধরে পুরো প্রমাণ যোগাড় করে ফেলেছিল শিশির৷ যেখানে আশার আলো কিঞ্চিৎ পরিমাণও ছিল না। মনিরুজ্জামান ধরেই নিয়েছিল এবার কেস তিনি হারবেন। একটা সহজ কেসে হারলে তিনি খুবই অপমানিত হতেন৷ কারণ সহজ কেসটাকে খু-নিরা জটিল করে দেখিয়েছিল৷ সকল প্রমাণ লাপাত্তা করেছিল।
‘
কোর্ট থেকে বেড়িয়ে এডভোকেট মনিরুজ্জামান শিশির এবং রিজভীকে জড়িয়ে ধরলেন৷ একে অপরকে কংগ্রেস জানাল৷ এডভোকেট মনিরুজ্জামান শিশিরের কাঁধ চাপড়ে বললেন,
” থ্যাঙ্ক’স ডিয়ার। আ’ম প্রাউড অফ ইউ মাই সন। অল ক্রেডিট অনলি ফর ইউ। তুমি না থাকলে কিছুই সম্ভব হতো না। এই প্রথম বোধহয় কোনো ক্যাস হারতাম আমি। তুখোড় বুদ্ধিমান ছেলে তুমি। আ’ম রিয়েলি প্রাউড অফ ইউ।”
বলে তিনি থামলেন৷ শিশির বলল,
” থ্যাঙ্কিউ স্যার, আই হ্যাব বিন এ্যবল টু ডু মাই ডিউটি উইথ ইউ, আ’ম হেপি এ্যবাউট দ্যাট, ইট’স মাই প্লেজার।”
থেমে আবার বলল,
” এসবকিছু আপনার সৎ সাহসিকতা৷ আমরা শুধু পাশে থেকেছি। আপনি আমাদের আইডল। আপনাকে আমরা অনেক আগে থেকে আইডল মানি। আপনার বুদ্ধিমত্তা, সততা সবকিছু তুখোড়। ডিপার্টমেন্টে আপনার নাম শুনে আমি খুশি হয়েছিলাম৷ আপনার সাথে কাজ করতে পেরে আমি এবং আমরা আনন্দিত। দোয়া করবেন যেন আপনার মতো সততাকে আদর্শ মেনে এগিয়ে যেতে পারি৷ ”
মনিরুজ্জামান অমায়িক হাসলেন৷ লোকটা অমায়িক৷ চল্লিশাঊর্ধ্বে বয়স তবুও যেন দেখতে একদম যুবক লাগে। তুখোর বুদ্ধিমান ব্যক্তি৷ এডভোকেট মনিরুজ্জামান সততাকে আদর্শ মনে করেন। ওনার নাম আইনবিভাগের কোণায় কোণায়। তিনি হেসে বললেন,
” আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভবিষ্যতে অনেক বড় হবে তোমরা। তোমরাই দেশের ভবিষ্যত। তোমাদের আত্নবিশ্বাসে আমি গর্ববোধ করেছি এমন ব্যক্তিত্বের যুবক তোমরা ভবিষ্যত উজ্জ্বল করবে। দেশ সত্যের ন্যায় পাবে৷ ভবিষ্যতে আমার থেকেও অনেক বড় হও তোমরা এই দোয়া রইল, বেস্ট অফ লাক ”
তিনি মুচকি হেসে হেসে কথা গুলো বললেন। থামতেই শিশির মুচকি হাসল। রিজভীও হেসে দু’জনে এক সাথে বলল,
” থ্যাঙ্কিউ স্যার ”
শিশির মুচকি হেসে বলল,
” আমরা ইন্টার্নি যেন আপনার সাথে করার সুযোগ পাই সেই চেষ্টা করব ”
এডভোকেট মনিরুজ্জামান এবার শব্দ করে হেসে দিলেন৷ আবার শিশিরের কাঁধ চাপড়ে বললেন,
” আমার থেকে ভালো কাউকে পাবে৷ ঢাকা থেকে করার সুযোগ নেবে। ইনশাআল্লাহ বড় কিছু অপেক্ষা করছে তোমারদের জন্য। তা তোমরা বিসিএস দেবে নাকি একবারে বিজেএস দেবে? “
শিশির উত্তর করল,
” আগে বিসিএস দেব। আল্লহর কৃপায় সাফল্যের দ্বারে পৌঁছাতে পারলে সুযোগ, সুবিধা এবং সময় বুঝে বিজেএস দেব। ”
” বাহ দারুণ পরিকল্পনা। ইনশাআল্লাহ সাফল্য তোমাদের মতো উজ্জ্বল ভবিষ্যতদের জন্য অপেক্ষা করছে। সাফল্য তোমরা পাবেই। দোয়া রইল। বেস্ট অফ লাক মাই সন’স ”
শিশির, রিজভী প্রত্যুত্তরে হাসল শুধু৷ তিনি বললেন,
” তোমাদের সাথে কাজ করে পরিচয় হয়ে অনেক আনন্দিত হলাম। চলো কোথাও বসা যাক? একটু সময় কাটানোও হবে। ”
শিশির রিজভী আর মানা করতে পারল না। তারাও সম্মতি দিল। সেখান থেকে বেড়িয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে গেল৷
‘
বিজেএস ক্যাডার (জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট)
বিজেএস পরিক্ষা বিসিএস এর মতোই। বর্তমানে জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হয় বিজেএস বা ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন’ এর মাধ্যমে। এই পদে নিয়োগ লাভের সুযোগ শুধুই আইনের গ্রাজুয়েটদের জন্য সংরক্ষিত। এক মাত্র আইন পড়লেই বিসিএস ও বিজেএস দুটি ক্যাডার পরীক্ষায় একত্রে অংশ নেয়া সম্ভব।
_____
শিশিরদের তদন্তের সময় কেসের শিরনাম ছিল,
“সম্পত্তির লোভে ভাই ভাইকে খু-ন করেছে”
কিন্তু আদালতের রায়ের পর শিরনাম উল্টে হয়েছে,
” প্রেমিকের সাথে মিলে স্ত্রী তার স্বামীকে খু-ন করে সম্পত্তি নিয়ে তাদের রাজ করার পরিকল্পনা”
‘
সমাজ, দেশ এইসব বিবেকের, রুচির দুর্ভিক্ষে পড়ে রসাতলে চলে যাচ্ছে। যাচ্ছে কী? চলে গেছে। মানুষ ঘরে বউ রেখে পরকিয়া করে বেড়ায়, বউ স্বামী রেখে পরকিয়া করে বেড়ায়। দিন দিন সমাজ রসাতলে চলে গেছে।
তেমন-ই একটা কেস এডভোকেট মনিরুজ্জামান পেয়েছিলেন। সেখানে শিশিরদের ডিপার্টমেন্ট হেড জানিয়েছিলেন টপ দশজনকে উনারা পড়াশুনা চলাকালীন সময়ের মধ্যই একটা সুযোগ দিবেন। মূলত কার কেমন বুদ্ধিমত্তা আছে সেটাই বাছ-বিচার করার জন্য। সেই হিসেবে শিশিরদের সুযোগ হয় এডভোকেট মনিরুজ্জামানের সঙ্গে৷
কেসটায়, স্ত্রী পরকিয়ায় লিপ্ত ছিল৷ স্বামী অনেক সম্পত্তির মালিক। শুধু দেখতে কুৎসিত এটায় ত্রিশের ঘরের বউ মানতে পারে না। মূলত শুরু থেকে হেয়ো করে আসত৷ স্বামী সকল সুখ এনে দিলেও তবুও তার পোষাত না৷ পরকিয়া করে সুন্দর প্রেমিক জুটিয়েছিল। অবৈধ মেলামেশা সহ সকল প্রকার কাজই চালিয়ে যেত স্বামী টের পেয়ে শাসন করলে সেটায় হয় কাল৷ রাতে প্রেমিকের সাথে মিলে খু–ন করে। এরপর সকল প্রমাণ লোপাট করে ভিকটিমের নিজের ভাইয়ের নামে চালিয়ে দেয়৷ পাশাপাশি বাড়ি দুই ভাইয়ের মনমালিন্য থাকায় সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে লা-শ সেই ভাইয়ের বাড়ির পেছনে মাটি চা’পা দিয়ে রাখে। এরপর পুলিশ সেসব উদ্ধার করার পর কেস কোর্টে ওঠে৷
তারা এমন ভাবে সব পরিকল্পনা করেছিল একদম প্রফেশনাল খু–নির মতো করে। প্রমাণ সব ভাইয়ের দিকে ছিল। সহজ কেস অথচ জটিল করে দিয়েছিল৷ স্ত্রীর বয়ান নিতে গেলে জানায় তার স্বামীকে সম্পত্তির জন্য খু–ন করা হয়েছে। এক্টিংও বেশ ভালো মতো চালিয়ে গেছিল।
এরপর এলো সেই রাত। যে রাতে প্রমাণ পেয়েছিল শিশির৷ আশার আলো হারিয়ে যখন দিকবিদিক ভুলে যাচ্ছিল তারা তখন রাত এগারটায় চুপিসারে ভিকটিমের বাড়ি আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতে শিশিরের চোখে পড়ে রাত বারটায় ভিকটিমের বউ কোনো পুরুষকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকছে। তাদের যাওয়াটাও ছিল অসংলগ্ন অর্থাৎ যেতে যেতেই কুরুচিপূর্ণ আচরণ করছিল পুরুষটা মহিলাটার সাথে। মহিলাটাও হেসে সাদরে গ্রহণ করছিল তা৷ কতটা অশ্লীল মানুষ হলে এমন ব্যবহার করতে পারে! এটাই মাথায় বাড়ি খাচ্ছিল শিশিরের। একজন মৃত স্বামীর স্ত্রী পুরুষ নিয়ে ঘরে ঢোকে? এই সুত্র ধরে সকল প্রমাণ পেয়েছিল। ভিকটিমের স্ত্রীকে সকালে আটক করে সকল কথা বের করা হয় এবং জবানবন্দি নিয়ে সেগুলো রেকর্ড করে আদালতে প্রমাণ সহ পেশ করা হয়।
______
বাড়িতে শিশির পৌঁছাল দুপুর চারটার দিকে। হাতে কিছু প্যাকেট আছে। সোফায় কুয়াশা সহ দুই ভাবি বসা ছিল। তারা গল্প করছিল। তুহিনের বিয়ের ভিডিও, ফটো সেগুলোই দেখছিল ল্যাপটপে৷
শিশির আসলে বৃষ্টি, ইয়াসমিন অ’ভিনন্দন জানাল। শিশির হেসে সেটা সাদরে গ্রহণ করল৷ কুয়াশা এখন সুস্থ হওয়ার পর থেকে শিশিরকে আরোই দু চোক্ষে দেখে পারে না। সে শিশিরের হাসি মুখ দেখে মুখ বাঁকিয়ে রাগ নিয়ে শিশিরের চোদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করল। শিশির তা লক্ষ্য করেছে। সে এগিয়ে এসে হাতের প্যাকেটগুলোর মধ্যে থেকে দুইটা প্যাকেট বৃষ্টির হাতে দিয়ে বলল,
” ভাবি এতে বিরিয়ানি, পিৎজা, কোল্ড ড্রিংস সহ আইসক্রিম আছে। তোমরা দু’জন খাবে আর হিমকে দিবে। আর কেউ যেন হাতও না দেয় ”
কুয়াশা তা শুনে শিশিরের বাড়িয়ে রাখা হাতের দিকে তাকাল। বৃষ্টি নিতে যাবে তখন কুয়াশা ছোঁ মেরে নিয়ে নিল। দেখল সত্যি শিশির সেগুলো এনেছে। ভাবিরা হাসল। শিশিরও মনে মনে হেসে নিয়ে বলল,
” এ্যাই তোরে নিতে বলেছি আমি? ছোঁচা, তোর লজ্জা করে না আমার আনা জিনিস খেতে? ”
” এ্যাই বুনো ওল তোর জিনিস কোথায় পেলি? নাম লেখা আছে? তুই তৈরি করেছিস? নাকি তোর ইনকাম করা টাকা দিয়ে কিনেছিস? কিনেছিস তো সেই বাপের টাকা দিয়ে। বাপের টাকায় খাইস আবার বড় বড় লেকচার মা-রিস? নিজে যেদিন ইনকাম করে কিছু কিনে আনবি সেদিন তোর জিনিস ছোঁয়া কেন? তাকিয়েও দেখব না। তাই এখন আমার জিনিস বলে বরাই করা বন্ধ কর! ”
শিশির রাগল বেশ। রাগতে চাইছিল না সে কথাগুলো মজা করে বলেছিল। কিন্তু তাকে ইনকামের খোঁটা দিল বলে রেগে উঠল। বলল,
” গোবর ঠাঁসার বাচ্চা, আমি কার টাকায় খাই আর না খাই তোকে কে দেখতে বলেছে? আর আমি ইনকাম করি কি না করি সেটা তোর দেখার বিষয় না৷ সময় হলে তোর মতো কুয়াশা দশটাও পুষতে পারব। বুঝেছিস? আর এগুলো আমার হাতখরচের উপর থেকে কেনা সো, সেগুলো আমারই। বুঝলি গোবর ঠাঁসা! এখন রাখ ওগুলো হাতও দিবি না তুই একদম! ”
” আমি তো দিবই, পারলে ঠেকা! ”
” আর একবার তুইতোকারি করবি তো গাল লাল করে দেব পাঁচ আঙুল বসিয়ে। বে-য়াদব! ”
” একশবার করব, কী করবি? করে দেখা! ভয় পাই তোরে আমি? ”
” তোকে তো…!”
বৃষ্টি আর ইয়াসমিন এবার আর সহ্য করতে পারল না। শিশিরকে তেড়েমেরে আসা দেখে আটকে দিল। বৃষ্টি বলল,
” থাকনা শিশির, বাদ দাও ”
শিশির বিরক্ত হয়ে কুয়াশার উপর ঈগল চোখে তাকিয়ে রাগ নিয়ে উপরের পথ ধরল। হাতে আরো দুইটা প্যাকেট সেগুলোতে কি? কুয়াশা ঈগল চোখে শিশিরের হাতে থাকা প্যাকেট গুলোতে নজর দিল। দেখতে হবে কী আছে অতে ভেবে নিয়ে হাতে থাকা প্যাকেট থেকে পিৎজা বের করে খাওয়া ধরল। ঐ বুনো ওল এনেছে তো কী হয়েছে? তাই বলে তার প্রিয় খাবারগুলো না খেয়ে বসে থাকবে? উহু, কখনো না।
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click