®রোজা রহমান
‘
কথায় আছে না? সমাজের মানুষের কথার থেকে বড় ধারাল অস্ত্র আর দুটি নেই। যা দিয়ে অপর পাশের মানুষটির হৃদয় পর্যন্ত ক্ষত বিক্ষত করতে সক্ষম হয়। চামড়ার মুখ দিয়ে একটা কথা একবার বের করে ফেললে তা ঘোচাতে জীবন শেষ। তারা বলার দরকার বলে দেয়। সেই কথাটা যে অপর মানুষের উপর কেমন প্রভাব পড়বে সে-সব ভাবাভাবির প্রয়োজনবোধ বলে মনে করে না। মানুষের কথার রসাতলে একবার পড়লে তা তিল থেকে তাল হয়। অন্যের নামে ঘাটাঘাটি করতে কার না ভালো লাগে? এতে কত মজা পায় না? মানুষ বড় অদ্ভুত প্রাণী! নিজের পেছনে লেজ আছে কিনা দেখার চেষ্টা করে না, অন্যর লেজ খুঁজতে তাদের যত দুনিয়ার আগ্রহ। নিজের খাবে পরের গীত গাবে৷ এটাই মানুষজাতি।
‘
শিশির গিয়ে সেই বাড়ির সামনে দাঁড়াল। তাদের বাড়ি থেকে দুইবাড়ি পরে। এই বাড়ির মধ্যে বয়স্ক মহিলাটা অতিরিক্ত খারাপ। তার কাছে কখনো কেউ ভালো হতে পারে না, সে যত দুনিয়ার ভালো। একটা কথা শুধু শুনবে ব্যস তখন থেকে গীত গাবে৷ আর তার নজর পাড়ার যত ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে কোন বাড়ি কোন বউ কী করে! মেয়ে কী করে! এসব দেখা।
শিশির চেঁচিয়ে উঠল বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। মহিলার নাম ছাবিনা। তারা কাকি বলে ডাকে। সেটা বলেই সম্মোধন করল। আগাগোড়াই এই মহিলাকে সে সহ্য করতে পারে না। মহিলার এই স্বভাবের জন্য। আর আজ তো সহ্যসীমা বাহিরে চলে এসেছে। স্বামী নেই বলে আরো বিবাগী। মহিলা ওমন বাজখাঁই কন্ঠ পেয়ে বেড়িয়ে এলো। ওদের চার ভাইকে একসাথে দেখে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। বিভীষিকা চেহারা নিয়ে এসে দাঁড়ালেন। একটু আগে যে তিনি কী করেছেন ভেবে হাত পা ঠান্ডা করে ফেললেন। কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করল শিশির,
” কুয়াশাকে কি বলেছেন আপনি? “
ভয়ে ঢোক গিললেন তিনি। কন্ঠটা এতটা রূঢ় তিনি রীতিমতো ঘামতে লাগলেন। কোনো উত্তর না পেয়ে শিশির আবার একই কন্ঠে বলে উঠল,
” ওর পরিচয় ও মালিথা বাড়ির একমাত্র মেয়ে। জালাল মালিথার একমাত্র নাতনী, জাকির মালিথার ছোট বৌমা, জাহিদ মালিথার একমাত্র ভাতিজি, জাহিন মালিথার একমাত্র আদরের মেয়ে। তারথেকে বড় পরিচয় ওর, ও শিশির মালিথার একমাত্র আহ্লাদী বউ। আপনার সাহস কিকরে হয় আমার বউকে এতসব জঘন্য কথা শোনানোর? “
কেঁপে উঠলেন তিনি। কারণ শেষ বাক্যটা এতটাই বাজখাঁই, রূঢ়, গম্ভীর, ভারীক্কি ছিল যে কোনো মানুষের হৃদয়-রূহ, অন্তর-আত্না কেঁপে উঠতে বাধ্য তা শুনে। পেছনে থাকা তুষার, তুহিন, নীহারেরও হৃদয়ে গিয়ে বাড়ি দিল শিশির বলা শেষ কথাটা। তারা অবাক চোখে বিস্মিত হয়ে শুধু চেয়ে আছে।
এদিকে মহিলার অবস্থা খারাপ। কথা বলার সাহসটুকুও পাচ্ছেন না৷ কারণ শিশির অস্বাভাবিক রেগে। কিছু বললেই বোধহয় এখানে খু–ন করে দেবে। শিশির আবার বলল,
” আমার বউ বার পুরুষের খাওয়া হোক আর ওর সতীত্ব না থাকুক সেটা আপানাকে কে দেখতে বলেছে? আমার বউ আমি বুঝব, আমি দেখব। আমি ও’কে তিন কবুল বলে গ্রহণ করেছি। আপনার এসব দেখার আছে? ”
কোনো কথা নেই মহিলার। সে আবার বলল,
” ও যদি সতিত্ব খুঁয়ে-ই আসে পতিতালয় থেকে আপনাকে সেটার প্রমাণ দেবার প্রয়োজন পড়বে আমার? আছে কি আমার প্রয়োজন? ”
শিশরের প্রতিটা কথা হৃদয় কাঁপিয়ে তুলছে। চোখ মুখ অস্বাভাবিক লাল। মুখে দাম্ভিকতার ছাপ সাথে রাগের ঝাঁঝ।
” ও যেখানেই রাত কাটিয়ে আসুক তবুও ও আমার মান, ও আমার সম্মান। আপনার সাহস কিকরে হয় আমার সম্মানে আঘাত করার? “
” উত্তর দিন…!”
আবার কেঁপে উঠলেন। বার বার শুকনো ঢোক গিলছেন৷ তিনি কোনো উত্তর করতে পারছেন না। শুধু এটা বুঝে গেছেন বাঘের গুহার আদরের সম্মানে হাত দিয়েছেন আর সব বাঘ এখন খেপে উঠেছে৷
এবার শিশির একটু মুখটা এগিয়ে ঝুঁকে কন্ঠ খাদে নামিয়ে আগের ন্যায় রূঢ় স্বরে বলল,
” ওর ভা’র্জি’নিটি আই মিন সতিত্ব দেখার বিষয় আমার৷ বউ সে আমার। সে-সব চিন্তা আপনার কেন এত? আর এসবের জন্য, বাড়ির সম্মান রক্ষা করার জন্য যদি বাড়ির ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে-ই থাকে তাহলে আপনার কি খসে পড়েছে? আপনার মেয়ের মতো আমার বউ বার-ভা** রী? বার পুরুষের খাবার দ্রব্য তো আপনার মেয়ে। পাড়ার মানুষ কিছুই টের পায় না? ঘাসে মুখ দিয়ে চলে ভাবেন? আর মেয়ের কথা বাদ দিলাম আপনার ছেলে যে বার মেয়ে খেয়ে বেড়ায়! সেটা বলতে এসেছি আমি? তবে আপনি কেন আমার বউকে কদর্যপূর্ণ কথা বলেন? কোন সাহসে বলেন? “
আসলে যে যেমন তার সাথে তেমনভাবে কথা বলাটাই উচিত। যে যেমন ব্যাবহারে যোগ্য তার সাথে ঠিক তেমন ব্যাবহার-ই মানানসই। মহিলাটা এত এত নোংরা কথা বলেছেন কুয়াশাকে যে যেকোনো মানুষ শুনলে আস্তাগফিরুল্লাহ্ পড়তে বাধ্য হবে। আর তার ছেলে মেয়েরা ঠিক ঐ জাতের৷ কিন্তু তিনি নিজের পেছন কখনো তাকিয়েও দেখেন না। কিছু মহিলা থাকে না এমন? এই মহিলা ঠিক ঐ জাতের, ঐসব মহিলার কাতারে পরে৷
শিশির কথাগুলো আস্তে বললেও পেছনে থাকা তুষাররা ঠিকই শুনল। আর শুনে ওরা হতভম্ব, হতবাক হয়ে রইল৷ শিশির যে এমন ভাষা দেবে সেটা ধারণায় ছিল না। তারা বুঝল এ ছেলের সম্মান কুয়াশা, আত্না কুয়াশা তাকে কেউ কদর্যপূর্ণ কথা বলেছে আর সে মেনে নেবে? তার সম্মানে হাত দিয়েছে এই মহিলা। বাড়ির কোনো মানুষের আজ অবধি ক্ষমতা হয়নি কয়াশাকে এভাবে কাঁদানোর আর এই মহিলা সেই সাহস দেখিয়েছে। ভাইরা, চাচুরা যত্নে, আদরের, ভালোবাসার চাদরে ঢেকে রেখেছে সবসময়। কোনো কু-নজর পড়তে দেয়নি কখনো৷ তাদের সকলের একমাত্র আহ্লাদী ঐ মেয়ে। বিস্ময় নিয়ে শুধু মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইল তিন ভাই৷ কিচ্ছুটি বলল না। আর না শিশিরকে আঁটকানোর চেষ্টা করল।
মহিলাটা বোধহয় এখানে হার্ট অ্যাটাক করে মা-রা যাবেন এত এত ভারী কথার যাঁতাকলে পড়ে৷ তিনি কী বলবে বুঝছেন না৷ কারণ শিশির যা বলছে কিছুই মিথ্যা না৷ তিনি কুয়শাকে এসবই বলেছেন৷
কুয়াশা ইয়াসমিন মিষ্টি দিতে এসেছিল অনেক হাসি মুখে৷ কিন্তু মিষ্টি দিতে আসতেই তিনি কুয়াশাকে জিজ্ঞেস করেন,
” কিসের মিষ্টি?”
কুয়াশা বলতেই তিনি তার গীত শুরু করেন। বাড়ির ছেলে সাথে বিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে একের পর এক বলেই গেছেন৷ সে-সবের জবাব সম্পূর্ণ কুয়াশা পুরোটা দাম্ভিকতার সাথে দিয়ে গেছে এই মহিলাকে৷ কিন্তু জবাব দিয়ে সে আর ঠিক থাকতে পারেনি। তার ভেতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলেছে কথাগুলো। একটা মেয়ের নিজের কানে যে এসব শোনা কতটা কষ্টদায়ক, যন্ত্রণাদায়ক আর সম্মানে লাগা সেটা যে মেয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে সেই বুঝবে৷ কানে যেন গরম সীসা ঢালার ন্যায় যন্ত্রণাদাক মনে হয়। কোনো মেয়েই চায় না তার সম্মান নিয়ে, সতিত্ব নিয়ে কেউ কথা শোনাক৷ যেমনটা সে নাকো-ই। সে যদি ঐসব কাতারের মেয়ে হতো তবে মানতে পারত, হজম করতে পারত কথাগুলো৷
কুয়াশার সাথে যা হয়েছে সব ভাগ্যর পরিহাস সে নিজে ইচ্ছেতে তো সেখানে যায়-ই নি! আর বার-পুরুষের খাবার দ্রব, বার-পুরুষ খেয়েছে এইসব কথা তার ভেতর পর্যন্ত ভে’ঙে দিয়েছে। জীবনে যেসব শুনেনি, যেসব কথার ধারে কাছেও যায়নি সেসব শুনতে কার ভালো লাগবে? ভদ্র ঘরের, ভদ্র মেয়ে সে অথচ, তার নামের সাথে জঘন্য কলঙ্ক লেপ্টে দিয়েছে। কালি যার সম্মানে একবার লাগে তা কী কখনো ওঠে? আল্লাহর ভাগ্যর পরিহাসে সে অপহ’র’ণ হয়ে একরাত পতিতালয়ে ছিল সেটাই হয়েছে ওর জীবনের কাল। যদিও সব সত্যি সে নিজে বলেছে কিন্তু মানুষ কি মুখের সাফাইতে বিশ্বাসী? যেখানে নিজের চোখে তারা কিছুই দেখেনি৷ কুয়াশা শক্ত মনে এতদিন সকলকে বলে গেলেও, শক্ত মনে এতদিন থেকে গেলেও এতটা কদর্যপূর্ণ কথা আজ শুনল সে৷ তাই আরোই সহ্য করতে পারেনি৷ মেয়েটার ভেতরের সব ভেঙে এই জন্য কান্না এসেছে৷ এত বড় বড় কথা তার হজম করতে খুবই কষ্ট হয়েছে।
‘
শিশির মহিলাটাকে কোনো কথা বলতে না দেখে এবার অতিশয় রাগ নিয়ে মুখে কাঠিন্যতা রেখে হাতের মুঠো পাকিয়ে রগ ফুলিয়ে বাজখাঁই কন্ঠে বলে উঠল,
” কসম আল্লাহর, আপনি যদি আমার বড় না হতেন আর মহিলা না হতেন আমি এখানেই আপনাকে পুঁ-তে রেখে যেতাম। আমার বউকে আঘাত করেছেন অর্থাৎ আমার বুকে আঘাত করেছেন৷ আজকের এইসব কথা আর দ্বিতীয়বার যদি শুনি আমি ভুলে যাব আপনি একজন মহিলা, আমার বড় ”
থেমে আবার চোখ মুখ লাল করে কপালের শিরার রগ ফুলিয়ে দাম্ভিকতার সাথে বলল,
” ওর একমাত্র জোর ওর স্বামী। ওর শক্ত মেরুদণ্ড ওর স্বামী। ও সেই জোরে, সেই মেরুদণ্ড উঁচু করে সমাজে চলবে। স্বামীর শক্তিতে বাঁচবে। আমার বউয়ের নিঃশ্বাসের বাতাস যতোদূর যাবে ততোদূর পর্যন্ত যেন আপনার ছায়াও না দেখি। আমি চাইনা আমার বউয়ের নিঃশ্বাসে কোনো দূর্গন্ধ বাতাস ঢুকুক।”
এই বলে আর এক সেকেন্ডও সেখানে পা রাখল না৷ যেই ভাবে এসেছিল ঠিক সেই রেশ ধরেই হনহন করে চলে গেল। তুষার, তুহিন, নীহার যেতে যেতে কঠিন নজর দিয়ে গেল মহিলাটাকে। মহিলাটা একটা কথাও বলার সাহস দেখাতে পারল না৷ যদি দেখাত বোধহয় আর বড় মানত না শিশির।
‘
বাইরে আসতেই মাগরিবের আযান দিয়ে দিল৷ তাই বাড়ির দিকে আগাল না কেউ৷ চারভাই মসজিদে দিকে রওনা দিল৷ নামাজ পড়ে বাড়ি ঢুকবে। তার আগে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে বাহবা দিতে কেউ ভুলল না। তিন ভাই একই সুরে বলল,
” বাবা, চাচুরা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেন নি৷ তারা সঠিক মানুষ বিবেচনা করেই আমাদের বোন দিয়েছেন৷ “
উত্তরে শিশির শুধু মুচকি হেসেছে৷ এতদিনে ঐ মেয়ে তার বড্ড আপন হয়ে উঠেছে। তখন যেভাবে কাঁদল তার নিজেরও অন্তর ছিঁড়ে যাচ্ছিল। আর যখন শুনল সেই কান্নার কারণ বাইরের একটা মহিলা তখন আরো ভয়ংকর রূপ নিল। তার বউয়ের কান্নার কারণ সে হবে, তার বউকে সে-ই কাঁদাবে অন্যদের কোনো অধিকার নেই তার বউকে কাঁদানোর।
___________
নামাজ পড়ে চার ভাই বাড়িতে ঢুকল। তখন ধরণীর বুকে আলো লুকিয়ে অন্ধকারে ঢেকে গেছে৷ শিশির আগে নিজের ঘরে গেল। দেখল পাশে ইয়াসমিন, বৃষ্টি, হিম বসে আছে৷ মায়েরা বোধহয় চলে গেছে এদের কাছে রেখে। কুয়াশা চোখমুখ ফুলিয়ে বসে আছে৷ সে যে যাবার পরও কেঁদেছে দেখেই বুঝল। শিশির দরজার কাছে দাঁড়াতেই সেদিকে কুয়াশা ফ্যালফ্যাল করে অসহায় নজরে তাকাল৷ চোখজোড়া আবার ছলছল করে উঠল। কলঙ্ক যে তার গায়ে!! কী করে ঘুচাবে সে? ইহজীবনেও বোধহয় ঘুচবে না৷ সারাজীবন লেপ্টে থাকবে তার গায়ে ‘এই মেয়েটাকে অপহ’র’ণ করে পতিতালয়ে নিয়ে গেছিল’ কথাটা যে কতটা জঘন্য শুনতে লাগছে! কুয়াশা তা মনে করেই আবার হুঁ-হুঁ করে কেঁদে উঠল৷ এ কী মরণ যন্ত্রণা হচ্ছে তার ভেতরে? সমাজ তাকে এই নজরে দেখে? সে বার-পুরুষের খাওয়া মেয়ে? তার সতিত্ব নেই সমাজের চোখে? ভাবলেই দম আঁটকে কান্না আসছে। বুক ভেঙে যাচ্ছে।
শিশির আবার ও’কে গুঙিয়ে, ডুকরে কাঁদতে দেখে তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকল৷ ব্যস্ত হলো থামাতে। নানান কথা বলতে লাগল। ইয়াসমিনরা তা দেখে ওদের একা ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। যার জিনিস সেই সামলাক। সে ছাড়া কেউ পারবে না বোঝা হয়ে গেছে। এখন শিশিরকেই প্রয়োজন কুয়াশার। তাকে আঁকড়ে ধরে অভিযোগ করবে সে, তার বুকে মাথা রেখে নাকের পানি চোখের পানি এক করবে সে৷ আহ্লাদী হবে স্বামীর কাছে। তার স্বামীও তার আহ্লাদীকে নিয়ে আহ্লাদ করে কান্না থামাবে। বুকে নিয়ে আদর করে বুঝাবে। এখন প্রয়োজন সেই আহ্লাদের মানুষটার৷ প্রতিটা নারী পুরুষের এরকম কঠিন সময়ে একটা মনের মানুষের প্রয়োজন হয়। যে তাকে আগলে ধরে সাহস দেবে৷ আদর দিয়ে কষ্ট ভুলাবে। বুকে নিয়ে শান্ত করবে। নর-নারীর মধ্যেকার সম্পর্ক বড়োই আশ্চর্যপূর্ণ।
‘
ভাবিরা যেতেই শিশির আগে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। অতিরিক্ত পাওয়ার লাইট বন্ধ করে দিয়ে জিরোলাইট রাখল। এরপর কুয়াশাকে বুকে নিয়ে কাৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। একদম বাচ্চাদের মতো করে কোলের মধ্যে মিশিয়ে নিল। কুয়াশা শক্তহাতে গলার মাঝে মুখগুঁজে ফুঁপিয়ে চলেছে৷ শিশির কুয়াশার গালে দু’ঠোঁট দাবিয়ে গভীর চুমু দিয়ে আদুরে কন্ঠে ডাকল,
” সোনা…! ”
কুয়াশা নিরব। ফুপাচ্ছে৷ শিশির একই স্বরে আবার বলল,
” এ্যাই আহ্লাদী বউ..! তুই আমার কাছে একদম পবিত্র। পুষ্প যেমন হাজার মানুষ ছুঁলেও সে তার সৌন্দর্য বজায় রাখে, তার পবিত্রতা বজায় থাকে? তুই আমার সেই পুষ্প। আমি জানি এবং মানি তোর সাথে কোনো খারাপ কিছুই হয়নি। আর যা হয়নি তা নিয়ে কেন তুই নিজেকে গুটিয়ে নিবি? তুই না আমার সাহসী বউ? দুইদিন পর লয়ার হবি তুই। যেমন কোর্টে লড়বি, তেমনই সমাজে লড়বি তুই। তুই মেরুদণ্ড উঁচু করে বাঁচবি। আমি তোর জোর হব, ঢাল হব। তুই আমার পরিচয়ে সমাজে চলবি। “
কুয়াশা নিরব। এখন ফুঁপানিটাও ছেড়ে দিয়েছে। শুধু শুনে গেল কথাগুলো। এই ছেলে তার হৃদয় ছুঁয়ে নিয়েছে। যে পুরুষ নারীর হৃদয় ছুঁতে পারে সেই তো আসল পুরুষ! শরীর না ছুঁয়ে হৃদয় ছুঁয়েছে। পুরুষের ভালোবাসা পাওয়া যে নারীর সাধনার বিষয়। সেই সাধনা অর্জন করতে কি সে সক্ষম হয়েছে? সে কি এই পুরুষের হৃদয় ছুঁতে পেরেছে?
শিশির কুয়াশাকে নিরব হতে দেখে মুখ নিচু করে দেখার চেষ্টা করল হালকা আলোয়৷ কিন্তু মুখ গুঁজে রাখার জন্য সক্ষম হলো না৷ ঘুম এসে গেল নাকি? ভেবে জিজ্ঞেস করল,
” ঘুমিয়ে গেছিস? “
” উহু “
মুচকি হাসল। সে আবার গালে চুমু আঁকল কুয়াশার। কুয়াশা এবার কাঁচুমাচু করে নড়ে উঠল বাচ্চাদের মতো৷ যেমন বাচ্চাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে করে ওঠে ঠিক তেমন। শিশিরের বুকে নাক ডলতে লাগল। সে টের পেল তা। আবারও হাসল নিঃশব্দে। এ তো সত্যি তার আহ্লাদী বউ! পুরোই বিড়াল ছানা৷ আদরে রাখতে হবে অনেক। কিন্তু শাসন করা একদম বন্ধ করা যাবে না। ভেবেই দু’হাতে ধরে আরেকটু মিশিয়ে নিয়ে গভীর হলো৷ যতটা গভীর হলে মনে হবে এখানে শুধু একটা অঙ্গ আছে। অর্ধনারী অর্ধপুরুষ দুইয়ে মিলে একঅঙ্গ।
| চলবে |
ভালোবাসা কি প্রকাশ করাতে সক্ষম হচ্ছি আমি?
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click