®রোজা রহমান
‘
মালিথা ভিলায় আনন্দের বর্ষণ বইছে। বইবে না কেন? তারা যে আনন্দের আস্ত একটা বর্ষণ-ই পেয়েছে! বর্ষণকে নিয়ে আজ মালিথা ভিলায় পা রেখেছে তুষার বৃষ্টি। বর্ষণ’র আগমনে খুশিরও বর্ষণ হচ্ছে সকলের চোখে মুখে। এই মালিথা ভিলার ছোট্ট নতুন অতিথির নাম যেন স্বার্থকতা লাভ করছে। যেমন নামে বর্ষণ তেমনই কামেও বর্ষণ। সব জায়গায় শুধু বর্ষণ আর বর্ষণ৷
আজ পাঁচদিন পর বৃষ্টি ও বর্ষণকে নিয়ে তুষার সহ শিশির, নীহার, কুয়াশা এলো। তুষার সেদিনই বিকেলে মিষ্টি বিলিয়েছে ছেলে হবার খুশিতে। এছাড়া ছেলের দোয়া চেয়ে অনেক টাকা ফকির, এতিমখানায় ও মসজিদে দিয়েছে। ছেলে তারা হারাতে হারাতে ফিরে পেয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় সহ ভবিষ্যত দোয়া নিয়েছে।
বাড়িতে খুশি আনাচে কানাচে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়েছে। তিন দাদি সহ দুই দাদা আনন্দ আহ্লাদে আটখানা৷ তাদের নাতিদের সাথে খেলার বয়স হয়ে গেল! ভাবা যায়! জাকির মালিথা ও জাহিদ মালিথা আজ প্রথম দেখছেন বর্ষণকে৷ আজমিরা, হিম, ইয়াসমিন এরা হসপিটাল থেকেই দেখে এসেছিল৷ বৃষ্টির বাবা, মা সেদিন এসে আবার চলে গেছেন। বৃষ্টির প্রতি তারা কোনোই দায়িত্ব পালন করেন না ধরতে গেলে। চোখের দেখাটুুকু দেখে শুধু। বিয়ে দিয়েই খালাশ৷ যদিও বাবা মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেন তবে সৎ মায়ের জন্য সেটাও আর করতে পারে না বেশি। গ্রামের মেয়ে তার সৎ মা তার বাবার বাড়িও অবশ্য গ্রামেই। মেয়েটা এটার জন্য খুব কষ্টে পায়। কিন্তু তুষার অনেক সান্ত্বনা দেয়। মন খারাপ করতে মানা করে। সব পরিবার বা সব মানুষের মন মানসিকতা তো আর এক হয় না! সে তার পরিবার দেখিয়ে বলে,
” আমার পরিবার আঁকড়ে ধরে রাখো বৃষ্টি। দেখবা এখানে সব পাবে তুমি। কিচ্ছুর কমতি থাকবে না তোমার”
বৃষ্টি সেটাই করার চেষ্টা করে। মেয়েটার বিয়ের আগেও এমন কষ্টে ভুগত। এখন এমন শ্বশুরবাড়ি, স্বামী পেয়ে রাজকপাল মনে করে৷ আল্লাহ সব কিছু একেবারে কেঁড়ে নেন না৷ কোনো না কোনো দিকে বান্দাকে অবশ্যই খুশি করেন৷ আর এই মালিথার ভিলায় যে বা যারা বউ হয়ে আসবে তাদেরই রাজকপাল মনে হবে। কারণ এই মালিথা ভিলা পুরোটাই আস্ত একটা রাজপ্রাসাদ আর এই রাজপ্রাসাদের ছেলেগুলো এক একটা রাজপুত্র। সুখী না হয়ে পারবে কেউ? কপাল করে না জন্মালে এমন সব স্বামী সংসার পাওয়া যায় না৷ ভাগ্য থাকা লাগে৷ আর সেই ভাগ্য লেখনেওয়ালাও স্বয়ং আল্লাহ। তিনি চাইলে সব সম্ভব। রাজপ্রাসাদও সম্ভব রাজপুত্রও সম্ভব।
হসপিটালে বৃষ্টির কাছে আজমিরা, আম্বিয়া, ইয়াসমিন এরাই রাতে থেকেছে রাতে আর সাথে তুষার তো ছিলই! সে ডিউটি করেই রাতে হসপিটালে যেত সেখানেই রাত কাটাত৷ জাকিয়াকে একটা রাতও থাকতে দেয়নি কেউ৷ কারণ সকলে রাতে জাকির মালিথাকে দেখার কথা বলেছিল।
‘
জাকির মালিথাকে নিচে আনা হয়েছে। তিনি সোফায় বসে আছেন। বৃষ্টিকে সোফায় বসানো হয়েছে। বর্ষণ বাড়িতে এসেছে কুয়াশার কোলে চড়ে। ঢুকেছেও কুয়াশার কোলে চড়ে। ফুপুকে যেন খুব পছন্দ হয়েছে তার৷ একমাত্র ফুপুর কোলে থাকতে সে আনন্দবোধ করে৷ সকলে তা নিয়ে কত হাসাহাসি৷ শিশির যদি কোলে নেই, যেই না নিয়ে গালে গাল লাগাবে অমনি চেঁচাতে লেগে যায় সে। তখন কুয়াশা দেখেই শুরু করে ঝগড়া। গত দিনগুলোর মাঝে বেশ কয়েকবার এমনটা হয়েছে। বর্ষণ চাচুর দাঁড়িতে খুবই বিরক্তবোধ করে।
কুয়াশার কোল থেকে দুই দাদা দেখে বলে উঠলেন,
” মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ”
সকলে মুচকি হাসল। জাকিয়া এবার কুয়াশার থেকে নিলেন। নিয়ে জাকির মালিথার কাছে এগিয়ে গেলেন৷ বললেন,
” কোলে নাও তোমার প্রথম ছেলের ঘরের প্রথম প্রদ্বীপ”
জাকির মালিথা অমায়িক হাসলেন। বললেন,
” দাও “
জাকির মালিথা বসে আছেন জাকিয়া উনার যে হাতটা ভালো সেই হাতের পাশ করে নাতিছেলেকে দিলেন। আহ্ কী সুন্দর! জাকির মালিথা আনন্দে অমায়িক হাসলেন। বলে উঠলেন,
” আমার দাদু..! “
প্রশান্তিময় হাসল সকলে। বর্ষণ দাদুর কোলে চড়তে পেরে বোধহয় অতি আনন্দিত। ফোকলা দাঁতে হাসির রেখা টানল গুলুমুলু গালে। গাল জোড়া টেনে দিতে মন চাইবে দেখলে। চোখ জোড়া হয়েছে মার্বেলের ন্যায় ডাগর ডাগর। সেই চোখে চেয়ে দাদুকে দেখছে৷ জাকির মালিথা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। বর্ষণকে বললেন,
” আমার দাদু..! দাদুর কোলে উঠেছ? “
তা শুনে বর্ষণ ঠোঁট প্রশারিত করল। হাসির রেখা দেখা দিল। বৃষ্টি, তুষার অবাক চোখে সেই দৃশ্য দেখছে৷ এই আনন্দটা যদি উপভোগ করার সুযোগ না পেতেন তিনি! ভাবলেই বুক কাঁপে৷ সকলে মুগ্ধ হয়ে দেখছে দাদু আর নাতিকে। জাহিদ মালিথা পাশে থেকে হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলেন। প্রথমে চুমু আঁকলেন। এই দাদুকেও বোধহয় তার প্রচুর পছন্দ হলো। কোলে উঠেই হাত পা নাড়াতে লাগল। এই পাঁচদিনেই মনে হচ্ছে বড় হয়ে গেছে অনেকটা।
সকলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল৷ আনন্দ অটুট থাকুক৷ একে একে সকলে বর্ষণকে নিয়ে মাতল। জাকির মালিথা তুষারকে বললেন,
“কাল তো সপ্তমদিন হবে আকিকাহ’র ব্যবস্থা কোরো”
তুষার সম্মতি দিল। জাহিদ মালিথা বললেন,
” কিছু টাকা আমি দিব বাবা। একা এত পারবে না “
তুহিনও বলল,
” আমিও দিব ভাই। সমস্যা হবে না। এমনিতেও প্রথম ভাতিজাকে কিছু দিতেই হতো ”
তুষার কিছু বলতে চাইলে জাহিদ মালিথা বললেন,
” সবাই তোমারই। একা বাবার দায়িত্ব পালন করতে হবে না। আমাদেরও নাতি হিসেবে দায়িত্ব আছে। প্রথম নাতির মুখ দেখলাম। এটুকু সকলে মিলেই করো। “
সকলে অমায়িক হাসির রেখা টানল ঠোঁটে। তুষার আর কি বলবে? খুঁজে পেল না৷ তারা খুশি হয়ে নিজ দায়িত্ব থেকে দিতে চাইছে এখানে কি বা বলার আছে? এই পরিবারের সবাই সবার আপন। জাকির মালিথা ও জাকিয়াও সম্মতি দিলেন৷
আত্মীয়দের দাওয়াত করার কথা হলো। নীহার আজ সকালে শশীকে জানিয়েছে বর্ষণকে আনা হবে৷ সেটা শুনে সে আসার জন্য পাড়াপাড়ি বাঁধিয়েছে। জিনিয়াদের বলা হয়েছে। জানিয়েছেন আগামীকালই আসবেন। বোনের প্রথম নাতিছেলেকে তিনিও দেখবেন কিন্তু খালি হাতে তো আর দেখা যায় না নতুন অতিথিকে? আসলে সেই ভাবেই আসতে হবে। এই জন্য কাল আসবেন৷ শশীর যেন তড় সইছে না। নিজের ভাইয়ের এখনো বাচ্চা হয়নি। তার ভাই ভালোবেসে বিয়ে করে এনেছিল নিজে নিজেই। বিয়েরও তিন-চার বছর হয়ে গেছে সৌরজের কিন্তু বাচ্চা নেয়নি এখনো।
‘
বর্ষণ মালিথা ভিলার সকলের কাছেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোট হিমও বর্ষণকে নিয়ে বসে বসে থাকছে। তার যেন নেবার মানুষের অভাব নেই। তাকে ঠিকমতো ঘুম অবধি কেউ আসতে দিচ্ছে না৷ এ ছেড়ে ও নিচ্ছে ও ছেড়ে এ। মানে পুচ্চুটার শান্তি নেই। বেজায় বিরক্ত হচ্ছে মাঝে মাঝে সে। হয়তো মনে মনে সে ভাবছে,
“এত আদিক্ষেতারই বা কি আছে ভাই? দুনিয়ায় কি আর পুচ্চু পাচ্চি আসে না নাকি! আমাকে তোমরা একটু ঘুমাতে তো দেবে নাকি!”
‘
বিকেল হয়ে গেছে। বর্ষণকে নিয়ে সব বৃষ্টির ঘরে গল্প গুজব করছিল গতকালের কথাও হচ্ছিল। পুরুষরা অবশ্য কেউ নেই। তুষার ডিউটি সহ আকিকাহ’র ব্যবস্থায় ব্যস্ত। শিশিররাও সকলে বাহিরে। জাকির মালিথাকে নিয়ে জাহিদ মালিথা বাহিরে গেছেন হাঁটতে।
কিছুক্ষণ পর শিশির এলো বাড়িতে। কুয়াশাকে না পেয়ে বিরক্ত হলো। ওটাকে কখনোই এসে পায় না সে। এখন তো আরোই পাওয়া যাবে না। বাহিরে গিয়ে ডেকে এলো। ডেকে বাথরুম ঢুকেছে গোসলের জন্য।
কুয়াশা বর্ষণকে কোলে করেই এসেছে ঘরে। মূলত তার কোলে ছিল বর্ষণ তাই ওভাবেই নিয়ে চলে এসেছে। সকলে এ নিয়ে কিছু বলেও নি৷ যানে কুয়াশাই বেশিটা সময় রাখছে ও’কে৷
এসে দেখল শিশির বাথরুমে। তাই বর্ষণকে নিয়ে বসল বিছানায়। টুকটাক কথা আর খেলা চালিয়ে গেল। জেগে আছে সে ফুপুর কোলে। ঘুম থেকে একটু আগেই উঠেছে৷ আর তখনই কুয়াশা নিয়েছে।
শিশির গোসল করে এসে দেখল বউ তার ভাতিজা নিয়ে খেলছে। কিছু বলল না আর৷ চুল মুছতে মুছতে মিররের সামনে গেল৷ নিজের কাজ সারল। কুয়াশা শিশিরকে সহ বর্ষণকে দেখতে থাকল। কুয়াশা জিজ্ঞেস করল,
” ডাকলে কেন? ”
শিশির ঘুরে ভ্রু কুঁচকাল। আবার পূর্বের ন্যায় ঘুরে চুলে চিরুনি করল। বলল,
” বউ আমার ঘরে নেই ডাকব না? “
কুয়াশা তাকিয়ে রইল শুধু উত্তর করল না। তবে বর্ষণকে বলল,
” এ্যাই পুচ্চু শোন! চাচুর মতো খবরদার বউ পাগল হবি না ওকে? “
বর্ষণ কী বুঝল কে জানে! হাসি হাসি মুখ করল কুয়াশার কথা পেয়ে। এদিকে শিশির ভ্রু কুঁচকে তাকাল কুয়াশার দিকে। মানে তাকে বউ পাগল বলল এই ফাজিলটা? কথাটা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেল কুয়াশার কাছে৷ গিয়ে কুয়াশার মতো করেই পা তুলে হাঁটু মুড়িয়ে দুই পা ভাজ করে বসল বিছানায় কুয়াশার সামনাসামনি। বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা, তুই আমাকে বউ পাগল বললি? “
” বুঝতে এত সময় নিলে কেন? “
কতটা ফাজিল ভাবো! কিড়মিড় করে বলল,
” একশ বার হব। আমার বউ আমি পাগল হব তোর দেখার আছে?”
একই সুরে কুয়াশা বলল,
” ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, তুমি যে বউকে নিয়ে পাগল হবে সেই বউ-ই আমি, বুঝেছ? “
শিশির মনে মনে হাসল। কিন্তু মুখে প্রকাশ না করে ঝগড়া চালিয়ে যেতে কুয়াশার মাথায় চাটি মা-রল। ব্যথা পেল সে। এই ফাজিল বুনো ওলটা মা-রে কি করে এভাবে? যে মাথায় মা-রলেই ব্যথা লাগে! কুয়াশা রাগে ফুঁসে উঠল। কিছু বলতে যাবে তার আগেই শিশির বর্ষণের দিকে কিছুটা ঝুকে আস্তে করে বলল,
” বর্ষণ আব্বু শুনো, চাচুর মতোই বউ পাগল হবে, ওকে? বড় হয়ে চাচুর কার্বন কপি হবে। চাচুর মতো হতে আমি নিজে হেল্প করব তোমায়, নো টেনশন।”
শিশিরের কথা পেয়েও বর্ষণ ঠোঁট প্রশারিত করল। শিশির মুচকি হাসল। কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল,
” দেখ, আমার ছেলে আমার মতোই হবে একদম৷ সে রাজি এবং বেজায় খুশি, দেখলি গোবর ঠাঁসা!”
বলে আবার মাথায় মা-রল। কুয়াশা আবার ফুঁসে উঠল। এবার সে এক হাত দিয়ে বসে থাকা শিশিরের চুল টেনে দিল আচ্ছা মতো। চুল সহ মাথা ঘুরিয়ে দিয়ে রাগে কিড়মিড় করতে করতে বলল,
” বুনো ওলের বাচ্চা ছেলেকে বউ মা-রাও শিখাচ্ছ নাকি? “
শিশিরও মেকি রাগ তুলে বলল,
” হ্যাঁ, কীভাবে ঘাড়ত্যাড়া বউকে মে-রে সোজা করতে হয় সেটাই শিক্ষা দিচ্ছি “
বলে নিয়ে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আব্বু, দেখে শিখে রাখো হুঁ? এভাবেই কিন্তু বউ পি-টাতে হয় বুঝলে! “
বলে মনে মনে দম ফাটা হাসি হাসল সে মুখে প্রকাশ না করে। কুয়াশা শিশিরের বাহুতে চাপ্পড় সহ কি-ল, ঘু-ষি দিল। বর্ষণকে বলল,
” এ্যাই পুচ্চু শোন, একদম এই বুনো ওল মার্কা গলা চুলকানোর গোডাউন চাচুর মতো হবি না! না হলে তোর প্রমোশন দেব না! “
শিশির হাসতে হাসতে শেষ হচ্ছে ভেতরে ভেতরে। কিন্তু কুয়াশার শেষ কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা, কি প্রমোশন দিবি তুই ও’কে? “
কুয়াশা তা শুনে পাত্তা দিল না৷ মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,
” হুহ্ তোমায় কব ক্যা?”
শিশির কুয়াশার মাথায় আরেকটা বসাতে গিয়েও থেমে গেল। মা-রার জন্য হাত উঠিয়ে সেটা ওভাবে উপর করে কুয়াশার মাথা কাছে রেখে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এ্যাই চাচু, একটু চোখটা বন্ধ করো তো। তোমার এই ফুপু নামক চাচিটাকে আগে কয়েকটা বসিয়ে নিই। নয়তো সোজা হবে না “
কুয়াশা তা শুনে আবার ফুঁসে উঠল। কু- লিম সা-পের মতো করে ফোঁসফোঁস করতে লাগল। শিশির মা-রার আগেই সে মে-রে দিল।
বেচারা বর্ষণ পড়ল এক জ্বলায় দুনিয়ায় এসেও বিপদে পড়ে গেছে। এসে পর্যন্ত এদের ঝগড়া মা-রা মা-রি, চুলোচুলি দেখতে দেখতে সে পাঁচটা দিন কাটিয়ে দিল। এখন সারাজীবন তারও এটাই দেখেই কাটানো লাগবে। জীবন তারও ত্যাজপাতা। কোনো মাফ নেই৷ তার এই চাচি নামক ফুপু থুক্কু, ফুপু নামক চাচি নাকি কী! আচ্ছা যায়হোক, তার আর এই সামনে থাকা বুনো ওল মার্কা চাচুর ঝগড়া চুলোচুলি দেখতে দেখতে বড় হতে হবে। মনে মনে হয়তো সে-ও ভাবছে এরা পারে কি করে এতো? মুখ, হাত, পা লাগে না এদের? দুনিয়ায় এসে পর্যন্ত দেখছে এসব। এসব করার বয়স তো তার আসছে সামনে। হয়তো আরো একটা কথা সে-ও বলছে, চাচু, চাচি, ফুফু, মামা যায় হও না তোমরাও একটা পুচ্চু আনো দুনিয়ায় আমিও করি তোমাদের মতো চুলোচুলি। নিজেরা ছেড়ে আমাদের সুযোগ দাও এবার।
কিন্তু আফসোস বর্ষণের কথাটা ওরা না বুঝল আর না শুনল। ওরা ওদের কাজে ব্যস্ত৷ সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে বুনো ওল বাঘা তেঁতুলের চুলোচুলি করা৷
শিশির এবার বর্ষণকে কোলের উপর নিল৷ কুয়াশা একটু এগিয়ে এলো শিশিরের দিকে। একটু আগে যে দু’টো ঝগড়া, হাতাহাতি করল সেটার কোনো লেশমাত্রই নেই৷ সব হাওয়ায় ভাসিয়ে দিল৷ এরা পারেও বটে। মা-রা মা-রি করতেও দেরি লাগে না আবার পিরিত দেখাতেও দেরি লাগে না৷
দু’জন সামনাসামনি বসে বর্ষণকে নিয়ে খেলতে লাগল আর বর্ষণের সাথে কথা বলতে লাগল৷ বর্ষণ কথা পেয়ে ঠোঁট প্রশারিত করে হাসির ভাব বোঝাচ্ছে। তা দেখে কুয়াশা বলল,
” এ্যাই, এটা দেখো সেই লেভেলের পটানো ওয়ালা হবে। দেখো কীরকম হেসে মানুষ ভুলাচ্ছে! “
” হ্যাঁ তোর মতো, কেউ পাত্তা না দিলে হেসে আর আহ্লাদ করে মানুষ ভুলাবে “
কুয়াশা বিরক্ত চোখে চায়ল৷ শিশিরও ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসি ঠোঁটে রেখে কুয়াশার দিকে তাকাল৷ কুয়াশা মুখ ঝামটাল। শিশির দুষ্টু হেসে দুষ্টুমি করে বলল,
” লাগবে তোর এমন একটা?”
কুয়াশা তাকাল আবার শিশিরের চোখের দিকে৷ কথার মর্মার্থ বুঝতে সময় নিল না। কুয়াশা লজ্জা তো পেল কিন্তু এক চুল পরিমাণ সেটা বাহিরে প্রকাশ করল না৷ বর্ষণের হাতের মাঝে আঙুল দিল৷ বর্ষণ তা আঁকড়ে ধরল। তা দেখে সে হাসল৷ বর্ষণের দিকে তাকিয়েই স্বামীর কথার উত্তর করল,
” লাগবে তো অবশ্যই। কিন্তু কী জানো তো! আমার স্বামী বলেছে দুই তিন বছর অপেক্ষা করতে। তার নাকি আগে ক্যারিয়ার গড়তে হবে। তো আমিও সেই অপেক্ষাতেই আছি৷ দেখি কবে তার সময় হয়৷ সেদিনের জন্য না হয় একটু অপেক্ষা করেই নিলাম? আমার মনে হয় না খুব বেশি তাতে ক্ষতি হবে! “
শিশির হেসে ফেলল মুখ খুলে ফিসফিস শব্দ করে। তা দেখে কুয়াশাও হাসল শব্দহীন৷ বলল,
” দেখো ছেলে এখনই আবদার করছে হাত পেড়ে ধরে বোন অথবা ভাই এনে দেবার জন্য “
কুয়াশার কথায় শিশির নিচে নজর দিল। দেখল বর্ষণ কুয়াশার তর্জণী আঙুলটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়েছে৷ হাসল তা দেখে নিঃশব্দে সে। বলল,
” এনে দেব সোনা৷ কিন্তু কয়েকবছর অপেক্ষা করতে হবে তোমায়। জানো তো, অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়! “
বর্ষণের গালে হাত দিয়ে হালকা টিপে দিয়ে বলল কথাটা। এরপর কুয়াশার দিকে তাকাল। সে লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে। শিশিরও কুয়াশার দিকে দুষ্টু চোখে মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে আবার বলল,
” আর কী জানো তো আব্বু! তোমার এই ফুপু নামক চাচিটা নিজেই এখনো বাচ্চা। তিড়িং বিড়িং করে দৌড়ে বেড়ানোর তার স্বভাব। তাই এটাকে আগে বড় করে নিই। বড় না করে তোমার বোন বা ভাই আনলে তাকে নিয়েই তিড়িং বিড়িং করে বেড়াবে। তোমার চাচুর হয়েছে যত দুনিয়ার জ্বালা বুঝলে তোহ্! “
কুয়াশা তা শুনে শিশিরের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল। শিশির আগের ন্যায় তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। কুয়াশা আবারও মুখ ঝামটাল৷ মুখ ঝামটিয়ে আবার স্বামীরই বুকের উপর এসে পড়ে আশ্রয় নিল। আগের ন্যায় বসে থেকেই শিশিরের বুকের উপর মাথা রেখে পেট সহ কোমড় জড়িয়ে ধরল। আহ্লাদী ঝগড়া করে এখন আবার আহ্লাদ দেখাতে লাগল৷ শিশির নিঃশব্দে হাসল৷ কুয়াশা বাম সাইট থেকে জড়িয়ে ধরেছে আর বর্ষণ শিশিরের ডান সাইটের হাতের উপর৷ সে ফ্যালফ্যাল করে একবার চাচুর দিকে দেখছে তো একবার ফুপু নামক চাচির দিকে দেখছে৷ সে সাক্ষী হলো চাচু ও ফুপু নামক চাচির ঝগড়ার, মা-রা মা-রির, চুলোচুলির এবং আদর ও ভালোবাসার৷ সে-ও দেখল এই দু’টো বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুল কী পরিমাণে ঝগড়া, চুলোচুলি করে আবার তখনই আদর ভালোবাসা দেখায়।
শিশির তার বুকের উপর মাথা দিয়ে থাকা কুয়াশার দিকে তাকাল৷ কুয়াশাও মুখ তুলে শিশিরের দিকে তাকাল৷ দুই জনেরই ঠোঁটে তৃপ্তিময় ও সুখের হাসি৷ তারা অনেক সুখী। এই সুখে যেন কখনো কুনজর না লাগে৷ আল্লাহ্’র কাছে শুধু এই টুকুই চাওয়া। ভেবে কুয়াশা স্বামীকে আরেকটু শক্ত করে ধরল। বুকের মাঝে বিড়াল ছানার মতো করে ঢুকে যেতে চাইল৷ শিশির মুচকি হেসে কুয়াশার কপালে ঠোঁট জোড়া দাবিয়ে চুমু আঁকল। কুয়াশা চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল স্বামীর বুকে৷ কী সুন্দর একটা দৃশ্য নাহ্? এমন একটা সুখময় সংসার তাদেরও হোক মনে মনে সেই বাসনা দু’জনই পোষণ করল৷
___________
কেটে গেল আরো দুইটা সপ্তাহর বেশি। শিশিরের চলে যাবার সময় ঘনিয়ে আসছে ক্রমেই। ফেব্রুয়ারী মাস শেষ হয়েছে। মার্চেরও অর্ধেক হয়ে এলো। এই মাসের শেষের দিকে চলে যাবে। ঢাকায় গিয়ে সব ঠিকঠাক করবে। রেজাল্ট পেলেই ভর্তি। সে-সবরই গোছগাছ করছে সে আর রিজভী। দু’জনে একই সাথে যাবে এবং থাকবে৷
‘
শুক্রবার আজ। সকলে বাড়িতেই আছে৷ সকালের দিকে সকলে খাওয়া দাওয়া করে টুকটাক গল্প গুজব করছে। বর্ষণের সাথে মূলত খেলা করছে সকলে। ওকে নিয়ে ঘাটাঘাটি হচ্ছে। বৃষ্টি এখন সুস্থ। সে টুকটাক কাজও করে। তবে শাশুড়ীরা করতে দেয় না বললেই চলে৷ কাটা ছেঁড়া নিয়ে তাকে রেস্টে থাকতে বলেন৷ জাকিয়াই নাতির কাঁথা, কাপড় ধুয়ে দিত কিছুদিন। তবে আজমিরাই বেশি করে এসব। তিনি জাকিয়াকেও বেশি চাপ দিতে চান না। স্বামীর জন্য এমনিতেই ক্লান্ত থাকেন। এছাড়া আজমিরার থেকে বয়সটাও বেশি হওয়াতে তিনি একটু মুটিয়ে যাচ্ছেন। চিরকাল তো আর মানুষ এক থাকে না! আম্বিয়া স্কুলের জন্য সকাল থেকেই বাড়িতে থাকতে পারেন না। তবে বিকেলে এসে নাতিকে নিয়ে বসে থাকেন। এছাড়া ইয়াসমিনও বৃষ্টিকে অনেক সাহায্য করে। কুয়াশা তো বর্ষণকেই নিয়ে বেশি থাকে৷ সকালে নাস্তার পর বর্ষণ জাকির মালিথার কোলের মাঝে শুয়ে খেলা করে দাদুর সাথে। ঐ সময়টা তার বরাদ্দ দাদুর জন্য। নাস্তা করেই আগে বর্ষণকে আনার জন্য জাকিয়াকে তাগাদ দেবেন৷
হসপিটাল থেকে এসে পরেরদিনই বর্ষণের আকিকাহ’র আয়োজন করা হয়েছিল। শশীরা সহ অনেক আত্মীয়রা এসেছিল। রিজভী, স্মৃতিরা সহ ঈশারাও এসেছিল। জাকিয়ার ভাই, ভাবিরাও এসেছিলেন। সাব্বির, সাবিব আকিকাহ্তে আসতে পারেনি। তবে অন্যরা এসেছিল। সকলে আবার এক হয়েছিল ছোট্ট প্রাণটার জন্য।
‘
রাতের খাবার খেয়ে কুয়াশা শুয়ে পড়েছে৷ শিশির একটু বাহিরে গেছিল। একটু আগেই এসেছে। রাতের খাবার খেয়ে ঘরে এলো৷ শীত চলে গেছে প্রায়। এখন বেশ গরমই পড়ে। ঘরে এসে শিশির ঘড়ি দেখল৷ দশটা পাড় হয়ে গেছে। এত জলদি কুয়াশা শুয়ে পড়েছে আজ! কথা না বলে নিজের কাজ সেরে অতিরিক্ত লাইট অফ করে দিল৷ জিরো লাইট রাখল৷ কুয়াশা ঘুমচ্ছে বোধহয় নয়তো জেগে যেত৷ ভেবে বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বসল লেপটপ নিয়ে৷ কিছু কাজ করার আছে সেগুলোই করবে৷
ঘন্টা খানেক পর লেপটপ রেখে কুয়াশার দিকে তাকাল। এক পাশ হয়ে জোড়োকোড়ো হয়ে শুয়ে আছে৷ শিশির মুচকি হেসে এগিয়ে গেল। পাতলা কাঁথা টেনে গায়ের উপর দিল। শিশির বালিশে মাথা না রেখে অন্যপাশ ঘুরে শুয়ে থাকা কুয়াশার মুখ দেখার চেষ্টা করল। একদম এগিয়ে গিয়ে কুয়াশার শরীরের সাথে শরীর ঠেকিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে কুয়াশার জামাবিহীন পেটে স্লাইড করতে করতে আদুরে স্বরে বলল,
” এ্যাই আহ্লাদী বউ! ঘুমিয়ে গেছিস সোনা? “
কুয়াশা পেট স্লাইড ও কথা পেয়ে জেগে উঠল। ঘুমটা বেশি গাঢ় না তার। অল্পতেই জেগে যায়। শরীরটা ভালো না তাই জলদি ঘুমিয়ে গেছিল। শিশিরের মুখের দিকে তাকাল। বলল,
” হ্যাঁ, কখন এলে তুমি? “
ঘুম জড়ানো ভারী কন্ঠ তার। শিশির সব সময়ই বউয়ের উপর মাতাল হয় আজকাল। ভালোবাসা বাসির পর থেকেই কেন যেন কুয়াশার প্রতিটা জিনিসই তার মাদকতায় রূপ নিয়েছে। এই যে ঘুম জড়ানো আহ্লাদী বাণীগুলো অতিরিক্ত আহ্লাদী মনে হলো। কিছুদিন পর থেকে তার এই আহ্লাদী বউয়ের এই সুন্দর সুন্দর জিনসগুলো কাছে পাবে না, শুনতে পাবে না, দেখতে পাবে না। এই আহ্লাদী বউটার নেক স্মেল, সকালের তৈলাক্ত ফোলা ফোলা মুখ, ঘুম জড়ানো সালাম কিচ্ছুটি পাবে না। কতদিনের দূরত্ব হবে কে জানে! ভাবলেই বুকটা চিনচিন করে। থাকবে কীকরে সে? শিশির কুয়াশার দিকে তাকিয়ে ভাবল কথাগুলো। কথার উত্তর না দিয়ে কুয়াশার উন্মুক্ত কাঁধ সহ গলায় নাক ঘষতে লাগল৷ এরপর ছোট ছোট চুমু দিল। অন্তরের অশান্তিতে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল আরো। কুয়াশা স্বামীর ইরাদা বুঝে কিছু বলতে যাবে শিশির অধরে অধর ছুঁতে গেল তখনই কুয়াশা আঁটকে দিল৷ বলল,
” ঘুমে ছিলাম আমি!”
শিশির কুয়াশার দিকে নেশাতুর দৃষ্টি দিল। ঘারে চুমু খেয়ে বলল,
” যাহ্ উঠে ফ্রেশ হয়ে আয় “
কুয়াশা একটু ইতস্তত হয়ে আমতাআমতা করতে লাগল৷ বলল,
” শুনো! “
শিশির উত্তর করল না। নাক ঘষতে ব্যস্ত সে। কুয়াশা বলল,
” অসুস্থ আমি “
শিশির শুনে মুখ তুলে তাকাল। কুয়াশার মুখটা কাচুমাচু করা। হাসল তা দেখে৷ বউ তার পাক্কা বুদ্ধিমতি হয়েছে। নামেই শুধু গোবর ঠাঁসা। কখনো স্বামীকে ফেরায় না অসুস্থ না থাকলে। শিশির এই কয় মাসে এটা বুঝে গেছে। সে কুয়াশার গ্রীবাদেশে আরো একটা চুমু আঁকল। বলল,
” তো এটা এভাবে বলার কি আছে? গোবর ঠাঁসা। “
বলে লাইট অফ করতে গেলে কুয়াশা বলল,
” রাখো, ফ্রেশ হয়ে আসছি। ঘুম ছুঁটে গেছে আমার।”
শিশির তা শুনে শুয়ে পড়ল। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলল। নিজেকে সংবরণ করল। কুয়াশা উঠে বসে সবই দেখল। সে-ও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে গেল। কিছুক্ষণের মাঝে এসে শুয়ে শিশিরকে লাইট বন্ধ করে দিতে বলল। শিশির শুনে বন্ধ করল৷ কুয়াশা শুয়ে এগিয়ে গেল স্বামীর দিকে। চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা স্বামীর বুকে মাথা রাখল। পেটের উপর হাত রাখল৷ শিশির কুয়াশার পিঠের উপর হাত দিয়ে আগলে ধরল। বলল,
” নিজের পরিস্থিতি ওভাবে কেন বলিস আমাকে? আমি কখনো তোকে জোর করি? “
কুয়াশা তড়িঘড়ি করে বলল,
” আরেহ্ নাহ্। তেমন কিছু না। আসলে..!”
” কি আসলে? “
বলে কুয়াশার দিকে কাৎ হয়ে শুয়ে দুই হাতে জড়িয়ে ধরল। বলল,
” কোনো প্রকার খারপ লাগলেই আমাকে বলবি। আমি বললেই যে আসতে হবে তার কোনো মানে নেই। নিজেকে আমার কাছে কখনো তুচ্ছ করে দিবি না৷ আমার চাহিদার থেকে তোর সুস্থতা এবং মানসিকতা আগে প্রায়োরিটি পাবে। মন না চাইলে আমাকে জানাবি নির্দ্বিধায়। সব সময় সবার মন মানসিকতা এক থাকে না৷ আমি তেমন স্বামীদের মতো হতে চাই না যারা পশুর ন্যায় আচরণ করে। আর এটাও চাই না তুই আমাকে সেই সুযোগ দে। আমার বউ তুই। তোর সম্পূর্ণ প্রায়োরিটি আমার কাছে আছে এবং থাকবে৷ সেটাই সব সময় ধরে রাখার চেষ্টা করব। কুয়াশা একটা সংসারে শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী চলে না। ভালোবাসা দিয়ে চলাতে হয়৷ তুই ভালোমতো জানিস আমাদের মাঝে তেমন সম্পর্ক বা সংসার গড়ার হলে আমরা বিয়ের রাত থেকেই পারতাম। কিংবা আমি চাইলেই পারতাম। বল পারতান নাহ্? কিন্তু আমি কখনো সেটা চাই নি। আমি চেয়েছি ভালোবাসা দিয়ে সংসার বাঁধতে। সেই জন্য সময় নিয়েছিলাম। আর সেটা দিয়েই বেঁধেছি৷ শারীরিক চাহিদা একটা সংসারের মূল্যবান মাধ্যম সেটা আমি বা তুই বা অন্য কেউই অস্বীকার করতে পারব না৷ সেটা আদিম চাহিদা। কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে সংসার কয়জনে বাঁধে বল? কত এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ আছে তারা বিয়ের পর থেকেই সব চালিয়ে যায়। আমার কাছে সেটা অযাচিত লাগে আর মানুষের কাছে কী লাগে জানি না আমি শুধু আমার কথা বললাম৷ যায়হোক সেসব কথায় না যাই। এখন বল আমি কি বলতে চাইলাম এবং বোঝাতে চাইলাম বুঝেছিস কিনা! “
কুয়াশা এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে স্বামীর কথা শুনছিল। সে কপাল করে স্বামী পেয়েছে। কে জানত এই জোর করে বিয়ে দেয়াটাই একদিন তাদের কাছে কোহিনূর হাতে পাওয়ার মতো আনন্দ দেবে! তার স্বামী এতক্ষণ যা বলল সব সঠিক। সত্যি তো সে চাইলে বিয়ের রাত থেকেই অধিকার খাটিয়ে নিজের অধিকার বুঝে নিতে পারত৷ কিন্তু সে তেমনটা চায়নি। সে আগে তার মনের দখল নিয়েছে। ভেবেই স্বামীর বুকের মুখ ঘষল, নাক ঘষল এরপর চুমু আঁকল। বলল,
” বুঝেছি, আর মনে থাকবে৷ “
শিশির নিঃশব্দে হাসল। বলল,
” ব্যথা আসে নি আজ? “
” সন্ধ্যায় এসেছিল। চা, আদা, সেঁক নিয়ে কমিয়েছি। তারপর ঘুমিয়ে গেছিলাম “
শিশির কুয়াশাকে বুক থেকে তুলে গলায় মুখ গুঁজল৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুখ গুঁজে রেখেই বলল,
” ঘুমা “
এখন ঘুম আসবে না আর৷ তুমি ঘুমোও আমি বিলি কেটে দিচ্ছি মাথায়। শিশির কিছু বলল না৷ সে জানে বউ তার এই কাজে খুব পটু। এক একটা বদ অভ্যাস তৈরি করে দিয়েছে এই গোবর ঠাঁসাটা৷ কী করে যে থাকবে দূরে গেলে! ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো।
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click