#অবন্তিকা_তৃপ্তি
একটা আয়োজিত,ঝমকালো রাত অদিতি হারিয়ে যাওয়ার খবরে যেন মুষড়ে পরলো। রাতের অন্ধকার বাড়ছিল ক্রমশ; সেই সঙ্গে বাড়ছে ধ্রুবর বুকের ব্যথাগুলো! ওই ব্যথাগুলো ধ্রুবকে উন্মাদ করে দিচ্ছে; ধ্রুব আজ যেন নিজের মধ্যেই নেই। কোনরকম নিজের মানসিক অসুস্থতাকে ঠেলে,এড়িয়ে ধ্রুব বাইক নিয়ে পৌঁছালো হোস্টেএল বিল্ডিংয়ে। অফিস রুমের সামনে যেতেই দেখে;
রুমের সামনে অদিতির ডিপার্টমেন্টের অনেকেই জড়ো হয়ে আছে। অফিস ম্যানেজার হাক-ডাক ছেড়ে সবাইকে সামলানোর চেষ্টা করছে। কিছু থেকে,বাকি সবাইকে চলে যাওয়ার জন্যে বারবার বলছে। ধ্রুব বাইকের চাবি পকেটে ঢুকতে ঢুকতে অধৈর্য্য ভঙ্গিতে বড়বড় পা ফেলে অফিস রুমে ঢুকে গেলো।
ধ্রুবকে দেখেই;ওরা কম্পিউটারের সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। ধ্রুব ধপ করে কম্পিউটারের সামনে চেয়ারে বসে গেল। পুরো হোস্টেলের গত দুই ঘণ্টার সিসিটিভি গুটেজ উন্মাদের ন্যায় চেক করে যেতে লাগলো একের পর এক!
পাশ থেকে ইমন ধ্রুবকে এভাবে মাউস-কিবোর্ড চাপতে দেখে, কাচুমাচু ভঙ্গিতে বললো—-‘ সিসিটিভি ফুটেজে কিছুই নেই, ধ্রুব।আমরা খুঁজেছি।’
ধ্রুব চোখ বুজে শ্বাস ছাড়লো! তবুও হাল ছাড়লো না, আবার লেগে গেল চেক করতে। ওর হাতের ভেইনসগুলো যেন এখন আরো বেশি ফুলে উঠেছে। ফোল্ড করা কুর্তার হাতার দিকটা নীল নীল ভেইনসে আরো আকর্ষণীয় হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ইমন সেগুলো দেখে চমকে উঠল! ধ্রুব..ধ্রুব কি আবার অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে? ওর মেন্টাল ট্রমা এলে ভেইনস ফুলে যায়; সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ারও রেকর্ড আছে।ইমন ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইল; এখন ধ্রুবকে কিছুই বলা যাবে না। এই মুহূর্তে ও বন্ধু-ফন্ধু দেখবে না।
পাশ থেকে তানিয়া বলল —-‘ভাইয়া, আমরা সব খুঁজে ফেলেছি, অদিতিকে দেখা যায়নি হোস্টেলের আশেপাশে।’
কিছু খুঁজে না পেয়ে ধ্রুব এবার হার মানল। কম্পিউটারের কিবোর্ড ছেড়ে দিয়ে; দুহাতে মুখ ঢলে, মুখে হাত চেপে বসে রইলো কিছুক্ষণ। যেন কিছু একটা ভাবছে সে। অদিতি- ধ্রুব, ধ্রুবর বাবা; রাজনীতি! এই ব্যাপারগুলো মেলানোর চেষ্টা করছে ও!
তারপর একদম হঠাৎ, ধ্রুব চেয়ার থেকে উঠে পড়ল। বাকিরা তখনও অবাক চোখে এক উন্মাদ প্রেমিককে দেখে যাচ্ছিল।
ধ্রুব অফিস রুমের বাইরে গিয়ে সবার দিকে তাকাল। সবাইকে জহুরি চোখে দেখল; দেখল করো মুখের এক্সপ্রেশন কেমন। সবাইকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। ধ্রুব তাই ওদেরকে সন্দেহ করলো না, বরং কথা তুললো; গমগমে স্বরে বললো———‘অদিতিকে কেউ দেখেছো আজ? কেউ দেখে থাকলে, কোথায় এন্ড কখন দেখেছিলে? মনে পরছে কিছু?’
পাশ থেকে এক ছেলে ক্লাসমেট কিছুটা উঁচু কণ্ঠে বললো—‘আমি দেখেছিলাম। ভার্সিটির গেইটের সামনে ওকে দেখা গেছিল লাস্ট বার; কতগুলো ছে..ছেলেদের সাথে।’
ধ্রুব থামল, জিজ্ঞেস করলো——‘ছেলেগুলোকে চেনো?’
ছেলেটা উত্তর দিল —‘মনে হয়না আমাদের ভার্সিটির কেউ। বাইরের কেউই লাগছিল।’
ধ্রুব চোখ বুজে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা কর! তারপর হুট করে কি মনে করে ছুট লাগাল সামনের দিকে। পেছনে ইমন দৌঁড়ে আসছে!
ধ্রুব ভার্সিটির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। দারোয়ান তখন নক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। ধ্রুব ওর সামনে দাঁড়িয়ে, অপেক্ষা করলো না আর। তাকে না জাগিয়েই, পকেট থেকে গেইটের চাবি বের করে গেইট খুলে ফেললো। ইমন ধ্রুবর কাণ্ড আর দারোয়ানকে এখনও মরার মতো ঘুমুতে দেখে ওর হাসি পেয়ে গেল। তবে ওর হাসি ঠোঁটে আসছে না; ধ্রুবর অতিরিক্ত উন্মাদনা দেখে।
ধ্রুব অফিস রুমের দিকে যেতে যেতে ইমনকে বলল ——‘অদিতি ভার্সিটি থেকে বেরোয় নি, তারমানে ভার্সিটির সিসিটিভি ফুটেজ দেখা লাগবে। তুই ম্যানাজার থেকে অফিস রুমের চাবি নিয়ে আয়, কুইক!’
ইমন হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো, বললো ——-‘কিন্তু চাবি তো উনারা আমাকে দিবেন না। তুই গেলে হয়তো তোকে—‘
ধ্রুব হাঁটতে হাঁটতে জবাবে বললো——‘ গিয়ে বল; ধ্রুব ইয়ামিন চেয়েছে; যা!’
ইমন এক দৌঁড়ে গেল। চাবি নিয়ে আসতেই ধ্রুব তালা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ম্যানেজার মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে; সতর্কভাবে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বলা যায়না এই বখাটে ছেলে আবার কোন কাণ্ড করে বসে। চাবি না দিলে চাকরি থাকবে না; আবার দিলেও বিপদ!
ধ্রুব কম্পিউটারের সামনে বসে দেখছে সব! পাশে ইমন ঝুঁকে আছে কম্পিউটারের দিকে। দুজনের তীক্ষ চোখ দুটো স্থির স্ক্রিনে।
হঠাৎ ধ্রুবর ভ্রু কুঁচকে গেল! ইমনও অবাক হয়ে বললো——-‘এই এই; এটা ওই ছেলেগুলো না? যাদের তুই পি//টিয়েছিলি তোদের ফ্যাক্টরিতে ঝামেলা করার জন্যে।’
ধ্রুব ঝুঁকে এলো অনেকটাই স্ক্রিনের দিকে। ভালো করে একেজনের কাজগুলো দেখলো ও। ওরা রাত নটা থেকে ভার্সিটির গেইটের সামনে ঘুরঘুর করছে। ধ্রুব বেরিয়ে আসার সময় যে যার জায়গায় লুকিয়ে পরেছিলো। ধ্রুব যেতেই আবার বেরিয়েছে।
যেইনা অদিতি বেরিয়েছে; ওরা সবাই মিলে ওর পিছু নিয়েছিল। অদিতি সেটা বুঝে ভয়ে সেটিয়ে, দ্রুত পা চালিয়েছিল। ওদের মধ্যে একজন আচমকা অদিতির সামনে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর অদিতির ব্যাগ নিয়ে টানাহ্যাচড়া করলো কিছুক্ষণ, অদিতি ভয়ে কেঁদে ফেলেছে। বারবার কিছু বলছে ওদের। তারপর ওদের সামনে একটা গাড়ি এসে থামল। মুখোশ পড়া একটা ছেলে গাড়িতে বসা। ওই ছেলেগুলো অদিতিকে জোর করে গাড়িতে তুলে দিল। গাড়ি অদিতিকে নিয়ে চলে গেল। গাড়ি নম্বর—D189260
এসব কিছু দেখে ধ্রুবর রাগ আর দেখে কে! ও চেয়ার থেকে উঠে কম্পিউটার তুলে ফেলেছে হাতে,আছাড় দেওয়ার জন্যে। পাশ থেকে ম্যানেজার তটস্থ হয়ে চেয়ে আছে; ধ্রুবকে আটকাতে গেলেই বিপদ।
এদিকে ইমন দ্রুত ধ্রুবকে আটকে ফেলল—-‘কি করছিস? রাখ এটা, রাখ বলছি।’
ধ্রুবর হাত থেকে কম্পিউটার কেড়ে নিয়ে জায়গায় রাখলো ইমন। ধ্রুব রাগে হাঁপাচ্ছে; রাগে ওর কপালের রগ অব্দি ফুলে গেছে। চোখ-দুটো মারাত্মক লাল!
ধ্রুব এবার নিজের রাগে সহ্য করতে না পেরে পা দিয়ে লা/থি দিল চেয়ারে, চেয়ার ভেঙ্গে গিয়ে মাটিতে পরলো। ধ্রুব ওই ভাঙা চেয়ারটাকেই শুন্যে তুলে আ/ছাড় মারলো; গর্জে উঠলো ভয়ংকরভাবে—–‘শু/য়োরে/র বাচ্চাগুলো আমার কলিজায় হাত দেওয়ার সাহস কই থেকে পাইল?’
ধ্রুব আর একমুহূর্ত দাঁড়ায় না; ভাঙা চেয়ার ডিঙিয়ে বেরিয়ে আসে। ইমন পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছে। ধ্রুব বড়বড় পা ফেলে যাচ্ছ; আর রাগে অন্ধ হয়ে পাশে যা পাচ্ছে তাতেই লা/থি বসাচ্ছে। ওর মেজাজ আজ যেন চুড়ান্ত উগ্র! ইমন ভয় পাচ্ছে; আজ ধ্রুব কাউকে খু//ন করেও ফেলতে পারে। ও কি করবে; কিভাবে সামলাবে ধ্রুবকে ভেবে পাচ্ছে না। ধ্রুব বাইকে উঠল, ইমন দ্রুত পেছনে উঠে বসলো।
বাইকের গতিও স্বাভাবিক না; পাগলা ঘোড়ার ন্যায় ছুটছে। ইমন দুহাতে বাইক চেপে দোয়া-দুরুদ পড়েছে।যে স্পিড বাইকের; যেকোনো সময় ম/রে ভূত-টুত হয়ে যেতে পারে।
ধ্রুব ওই গ্যাংয়ের ডেরায় গিয়ে বাইক থামালো। বাইকের চাবি না খুলেই বড়বড় পা ফেলে এগুচ্ছিল, মাটিও হয়তো ধ্রুবর হাঁটাতে আজ ব্যথা পাচ্ছে। ইমন দ্রুত বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ করে, চাবি নিয়ে ধ্রুবর পিছু পিছু ছুটলো।
ছেলেগুলো তখন হই-হল্লোড় করে মেঝেতে বসে কার্ড খেলছিল। ধ্রুব সোজা ঢুকে মুহূর্তের মধ্যেই ওদের মধ্যমণি, শাহীনের কলার ধরে শুন্যে তুলে ফেলল। ওই অদিতির গায়ে হাত দিয়েছিল।
শাহিনের কলার ধরে শুন্যে তুলে ফেলতেই শাহীন বড়বড় চোখে তাকালো। কিচি বুঝে উঠার আগেই; ধ্রুব নিজের কপাল দিয়েই ওর নাকে একটা ঘু/ষি বসিয়ে দিল!
সঙ্গেসঙ্গে নাক দিয়ে ওর গলগল করে র/ক্ত পরতে লাগলো, ধ্রুব রীতিমত জা//নোয়ারে মতো ওই ছেলেটাকে মাটিতে নামিয়ে এবার ওর ঘাড় চেপে ধরে দেয়ালে মধ্যে ঠুকতে লাগলো, আর প্রতিবার হিং/স্র দা/নবের ন্যায় বলতে লাগল ———‘শি ইজ ম্যাই ওমেন, ম্যাই ওমেন। তুই কোন সাহসে ওর গায়ে হাত দিসোস, খা/নকি* পোলা!’
শাহীন আচমকা আ/ক্রমণ সামলাতে পারেনি। ওর গায়ে আর একটুও জোর নেই পাল্টা আ/ক্রমণ করার। ও বারবার, বারবার মাফ চাইতে লাগলো; কেঁদেই দিল ব্যথায়——‘ভা-ভাই, ম-মা-মাফ কইরে দেন। আ-আর হইবো ন-না।’
ধ্রুব বারবার, বারবার দেয়ালে ঠু/কছে ওর মাথা; এবার সিংহের মতো গর্জে উঠে বলল —‘কই আছে অদিতি? বল শু/য়োরে/র বাচ্চা!’
শাহিনের নাক-মুখ থে/তলে যাচ্ছে দেয়ালের সঙ্গে! ও হাপাতে হাপাতে বললো—-‘আ-আপনাদের আ..ভার..ভার্সিটির ভার্সিটির সামনে; আআ..ভাঙা পোড়াবাড়িতে…আ!’
বাকিরা ধ্রুবর এমন হিংস্র/তা দেখে শাহিনকে এই অবস্থায় রেখেই পালিয়ে গেল তাৎক্ষণিক। ইমন ওদের ধরতে চেয়েছিল পেছন থেকে; পারেনি।জানের ভয়ে ইমনকে রীতিমত ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গেছে।
ধ্রুব এবার শাহীনকে মাটিতে ফেলে লা/থি দেওয়া শুরু করলো, একেকটা লা/থি শাহীনের পেট অব্দি পঁচিয়ে ফেলছে যেন!
শাহীনের কপাল ফেঁ/টে গেছে, চোখ উল্টে গেছে! যেকোনো মুহূর্তেই ম/রে যাবে। ইমন এবার দ্রুত ধ্রুবকে আটকাল; দুহাতে ধ্রুবকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গায়ের জোরে আটকাচ্ছে——-‘ও মরে যাবে ধ্রুব; খোদার কসম, থাম বন্ধু! থাম, অনেক হইসে; থাম;থাম!’
ধ্রুব তবুও থামছে না। ওর মানসিক অসুস্থতা এবার পুরোটাই এফেক্ট ফেলল শাহিনের উপর। শাহীন ততক্ষণে অজ্ঞান হয়ে শরীর ছেড়ে দিয়েছে। ধ্রুব ওর কলার ধরে ছিলো। কলার ওর হাত থেকে খসে গেল; লুটিয়ে পরলো শাহীন মাটিতে। ওই অজ্ঞান অবস্থাতেও আরো কয়েকটা লা/থি পরলো ওর শরীরে!
শাহীন হুশে নেই। ইমন দ্রুত ধ্রুবকে আটকে দিল, ধ্রুব নিজের মধ্যে নেই। ওকে শান্ত করতে হবে; নাহলে আজ যা হবে- তার জন্যে পরে দুজনেই ফেঁসে যাবে। ইমন দ্রুত গিয়ে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে ফেলল।
ধ্রুব কিছুক্ষণ ছোটাছোটি করল; ধস্তাধস্তি করলো। ইমন তবুও ছাড়লো না; বরং ধ্রুবর শক্ত পিঠে হাত দিয়ে থাপ্পড় দিতে দিতে অধৈর্য্য ভঙ্গিতে বলতে লাগলো—-‘কুল,ধ্রুব!! শান্ত হো ভাই, শান্ত হো!’
একটাসময় ধ্রুব ধীরে ধীরে শান্ত হলো। নেতিয়ে পড়ল ইমনের গায়ের উপর। ইমন ধ্রুবকে দ্রুত আগলে নিলো। বলল —-‘বাইক আমি চালাচ্ছি; তুই অসুস্থ!’
ধ্রুবর মনে পরে গেল আবার অদিতির কথা। ইমনকে ফেলেই এগিয়ে গেল বাইকের দিকে। বাইক চালাতে চেয়েছিল শুরুতে, ইমন ওকে সরিয়ে নিজে সামনে বসলো।
তারপর দিল এক টান। ধ্রুব অস্থির, বারবার বলছে জোরে চালাতে। ইমন হতাশ হয়ে নিজের বাইকের স্পিড দেখে, তো আরেকবার আয়নায় অস্থির ধ্রুবকে দেখে। ও পুরোটা রাস্তা নিজেই নিজেকে প্রবোধ দিয়ে শান্ত করে রাখলো!
______________________
ভাঙা বাড়ির সামনে আসতেই ধ্রুব বাইক থেকে নামলো। দৌঁড়ে বাড়িটার সামনে। ধ্রুবকে আসতে দেখেই একেকজন হুড়মুড়িয়ে পালিয়ে গেল জায়গা ছেড়ে। ধ্রুবর এখন ওদিকে মন দেওয়ার সময় নেই। ওর পুরো মাথা-ভর্তি চেপে আছে—‘অদিতি, যেই মেয়েটা ভয় পায় ভীষণ ছেলেদের; ওই মেয়েকেই আজ ছেলেরা তুলে নিয়ে গেছে। ধ্রুব ওই মেয়ের সামনে একটা ছেলে হয়ে কি করে মুখ দেখাবে?’
দরজা খোলা; ধ্রুব উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেল অদিতিকে। দড়ি দিয়ে ওর হাত বাধা, পা বাধা! ফেলে রেখেছে ওকে মেঝেতেই। শাড়ি এলোমেলো; চুল এলোমেলো। কামরার মেঝে জুড়ে লাল ছোপ ছোপ ভেজা র//ক্তের দাগ! ধ্রুব যখন দরজা ভেঙে ঢুকে তখন অদিতি নিভুনিভু চোখে দেখেছে ধ্রুবকে! ওর বুকে সাহস এলো যেন; বহু কষ্টে ক্ষীণ কণ্ঠে ডাকলো ও——-‘ধ্রু….ধ্রুব!’
ধ্রুব দরজার সামবে বিধ্বস্তের ন্যায় দাঁড়িয়ে; ওর চোখ টলমলে! ঘামে ভেজা পুরো গা; চুল এলোমেলো; কুর্তা অ্যাব্রো-থ্যাব্রো! অদিতির চোখ নিভে যাচ্ছে; বহু কষ্টে চোখ খুলে আছে সে। ওর চোখ-দুটো স্থির ধ্রুবর দিকে।
অদিতিকে এভাবে দেখে ধ্রুবর শরীর হেলে পরেছে যেন। পাঁচ-পাঁচটা ঘণ্টা পর মেয়েটাকে চোখের সামনে দেখছে ও!রেখে গেছিল সহি-সালামত; অথচ পেলো র/ক্তা//ক্ত অবস্থায়! বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে ধ্রুবর অদিতিকে এভাবে দেখে। ইমন তখন দ্রুত অদিতির হাত-পায়ের বাঁধন খুলছিলো।
ধ্রুব উদ্ভ্রান্তের ন্যায়; ঢুলতে ঢুলতে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে অদিতির দিকে।ও হাঁটু ভেঙ্গে; ঢুলতে ঢুলতে ধপ করে বসে পরলো অদিতির পাশে। ধ্রুব বসতেই, ইমন একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
ধ্রুবর ওর পাশে বসে টলমলে চোখে অসহায়ের মতো অদিতির দিকে চেয়ে রইল! তারপর কি হলো আচমকা! অদিতিকে ওই অবস্থায় দেখে ও নিজেকে আর একটুও সামলাতে পারলো না। দুহাতে আচমকা অদিতিকে টেনে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে ফেললো! অদিতি চোখ বুজে ফেলল;জোরে শ্বাস টানল! স্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর এই মুহূর্তে; তার উপর ধ্রুবর এমন ছোঁয়া!
ধ্রুব আজ আর জাত-পাত, মান-সম্মান কিছু ভাবে না। শক্ত করে অদিতিকে জড়িয়ে ওর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে নিঃশব্দে চোখের জল ছেড়ে দিল। অদিতি চোখ বুজে আছে; ওর গায়ে একফোঁটা শক্তি নেই ধ্রুবকে আটকানোর; কথা বলে মানা করার।
হঠাৎ করে যেন ধ্রুবর ছোঁয়া ভালো লাগছে অদিতির; খরা বুকের মধ্যে এতক্ষণে যেন পানির ঢল নেমে এলো। অদিতি চোখ বুজে জুড়ে শ্বাস ছাড়ে, দুর্বল ভাবে গা পুরোটাই এলিয়ে দিল ধ্রুবর বুকে। ধ্রুব সঙ্গেসঙ্গে অদিতিকে আগলে ধরে; আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ওর যেন তাতেও শান্তি নেই। এই মেয়েটাকে বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে পারলেই আজ ওর শান্তি; তৃপ্তি!
ধ্রুব অস্থির আচরণ করছিল। অদিতির ঘাড় থেকে মুখ তুলে; চোখ মুছে অদিতির মুখটা দুহাতে আগলে ধরলো। বারবার ওর চুল গুছিয়ে দিচ্ছে, মাথায় ফুঁ দিচ্ছে; যেন ব্যথা কমে যায়। কি করবে, কি করা যায়; কি করলে মেয়েটা একটু শান্তি পাবে; ওর আত্মা ঠান্ডা হবে; ও নিজেও সেটা বুঝছে না।
ধ্রুব ছাড়ল ওকে! একটু সরে টলমলে চোখে চেয়ে রইল আহত অদিতির দিকে। ঢোক গিলে কাপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো —-‘ঠ..ঠিক আছো ত..তুমি?’
ধ্রুবর কণ্ঠ যেন জমে আছে।ওর সারা শরীর কাঁপছে। ও কথা বলতে বলতেই কম্পিত হাতটা ধীরে ধীরে উঠিয়ে অদিতির মাথায় রাখল! শান্তিতে অদিতি চোখ বুজে ফেলল; এতক্ষণে…
হঠাৎ ধ্রুব হাতে ভে/জা র/ক্তের স্পর্শ অনুভব করতেই ওর রূহ অব্দি থমকে গেল। ধ্রুব ভয় পেয়ে গেল; হাত চোখে সামনে ধরলো; হাত-ভর্তি ট/কট/কে লা/ল র/ক্ত! ধ্রুব বিস্মিত; বিড়বিড় করলো—–‘র..ক্ত!’
ধ্রুব মাথা তুলে অদিতির দিকে তাকাল! অদিতির মাথা থেকে র/ক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে কানের পেছনে গড়িয়ে পরছে। ধ্রুব হতভম্ব হয়ে গেল! অদিতির দিকে তাকাল ও; অদিতি চোখ বুজে হেলে পরেছে ওর বুকের উপর।ধ্রুবর চোখ-গুলো আবার ধীরে ধীরে লাল হচ্ছে!
ও হেলে পরা অদিতিকে দুহাতে আগলে ধরলো; অদিতির হাতটা চেপে ধরে কপালে চুমু খেলো শক্ত ভঙ্গিতে, দাঁতে দাঁত পিষে বললো-
‘অ্যাই প্রমিজ, ওরা একটাও বাঁ/চবে না। ধ্রুব ইয়ামিন ওদের একেকটা মাথা নিজের হাতে পি/ষবে!’
#চলবে