রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ২৩
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা
১১.
বিকেল ৪ টা। সবাই মিলে দাঁড়িয়ে আছি মিথি আপুদের উঠোনে। ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরঘেষে মিথি আপুদের বাড়ি।যৌবন কালে বেশ শৌখিন লোক ছিলেন বড় ফুপা। সেই সুবাদেই হাফ বিল্ডিং বাড়ির চারপাশটা ছেয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের ফুল আর দেশী-বিদেশী গাছে। সকালে এখানে পৌঁছানোর পর পরই শুরু হয়েছিলো বৃষ্টি। সারা দিনের সেই মুশলধারার বৃষ্টি এসে থেমেছে এই বিকেলে। প্রকৃতিকে বৃষ্টিস্নান থেকে খানিক জিরুতে দিতেই যেন হঠাৎ এই নীরবতা। আগামীকাল শনিবার, আগামীকালই আবারও ময়মনসিংহের পথে পাড়ি জমাবো আমরা। তাই সবাই মিলে বেরিয়ে এসেছি খানিক ঘুরাঘুরির উদ্দেশ্যে।
গন্তব্য —- মিথি আপুর ছোট ফুপ্পির বাসা। মিথি আপুর ছোটফুপ্পি থাকেন জামালপুরের ঘোষপাড়ায়। ব্রহ্মপুত্রের তীর থেকে গাড়ি করে ১৫/২০ মিনিটের পথ। বাড়ির সামনে দু- দুটো অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। দুটো অটোরিকশাই গ্রুপের বড়দের জন্য বরাদ্দ অর্থাৎ, বাবা-মা,মামু-মামানি,বড় ফুপ্পি-ফুপা, ছোট ফুপ্পি-ফুপা, আদিবা-জারিফ,মিথি আপু আর মিলাদ ভাইয়া। আর আমাদের জন্য বরাদ্দ তিনটি বাইক। বড়রা অটোরিকশায় উঠে যেতেই শুভ্র ভাইয়ার বাইকের দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। কিন্তু মাঝপথেই বাঁধ সাধলো মামানি। অটোরিকশা থেকে ডেকে উঠে বললেন,
—” রোদু? রাহাত দাঁড়িয়ে আছে তোর জন্য। তুই আর রুহি রাহাতের বাইকে যা। তাড়াতাড়ি কর।”
মামানির কথায় মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো আমার সাথে কিছুটা অপমানিতও বোধ করলাম। রাগ আর অভিমান মাখা দীর্ঘশ্বাসটা গোপন করে পিছিয়ে এসে ভাইয়ার বাইকে চেপে বসলাম। সাথে সাথেই মামনির কন্ঠ কানে এলো। রাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,
—“রাফিয়া? দাঁড়িয়ে কেন? তুমি বরং শুভ্রর সাথে যাও। ওর বাইকটাতো খালি। যাও যাও…”
কথাটা কানে যেতেই কানদুটো গরম হয়ে এলো আমার। মুখ দিয়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বললাম,
—” ভাইয়া? বাইক স্টার্ট না দিয়ে বলদের মতো বসে আছিস কেন? স্টার্ট দিবি নাকি নেমে যাবো?”
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
—” চড়াইয়া কানপট্টি গরম করে দিবো। আমি কি চিনি মিথির ফুপুর বাসা? বললেই কি চলে যাওয়া যায় নাকি? চুপ করে বস ধৈর্যহারা রমনী!”
আমি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম। ভাইয়া ফুপাকে ডেকে কোনদিকে কোনদিকে যেতে হবে তার ডিরেকশন জেনে নিয়েই বাইক ছুটালো। প্রায় দশ/পনের মিনিটের মাথায় একটা ভারি লোহার গেইটের সামনে বাইক থামলো। গেইটের ওপাশে পাঁচতলা এপার্টমেন্ট। মিথি আপুর ফুপিরা পাঁচ তলার ঠিক কোন ফ্লোরের কোন ফ্ল্যাটে থাকে জানা নেই আমাদের। তাই গেইটের সামনেই অপেক্ষা করতে লাগলাম আমরা।
তার কয়েক মিনিট পরই রাফিয়াদের বাইক এলো। কিন্তু বাইক চালকের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলাম আমি। আলিফ ভাইয়া!! কিন্তু রাফিয়া তো শুভ্রর বাইকে উঠেছিলো, তাহলে? আমার প্রশ্নের জবাবে প্রায় সাথে সাথেই এলো অদুদ ভাইয়ার বাইক। তার পেছনেই বেশ শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছেন শুভ্র ভাই। সবাই বাইক পার্ক করে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। রাফিয়া এসেই আমার আর আপুর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। আমি অনুসন্ধানী গলায় বললাম,
—” তুই না শুভ্র ভাইয়ের বাইকে উঠেছিলি? তাহলে আলিফ ভাইয়ার পেছনে কিভাবে চলে এলি?”
রাফিয়া আক্ষেপের সুরে বললো,
—” আর বলিস না, বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগমুহূর্তে শুভ্র ভাইয়া বললেন উনার চোখ ব্যাথা করছে বাইক চালাতে পারবেন না। চালালে এক্সিডেন্টও হয়ে যেতে পারে। উনার চোখদুটোও লাল লাল লাগছিলো তাই আলিফ ভাইয়াকে এই বাইকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে অদুদ ভাইয়ার পেছনে গিয়ে বসলেন।”
আমি ছোট্ট করে বললাম,
—“ওহ।”
রাফিয়া মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাতেই আড়চোখে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম আমি। উনি আমার থেকে বেশখানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আলিফ ভাইয়া, অদুদ ভাইয়া আর ভাইয়ার সাথে খোশগল্পে মেতে আছেন। গায়ে ব্ল্যাক টি-শার্টের উপর হোয়াট-ব্লু চেইক শার্ট।
শার্টের সবগুলো বাটন খোলা। শার্টের হাতাদুটো কনুই পর্যন্ত মোড়ানো। বামহাতে কালো ঘড়ি, পরনে জিন্স আর ক্যাটস্। কপাল জুড়ে ছড়িয়ে আছে একরাশ সিল্কি বাদামী চুল। হঠাৎ করেই চোখে চোখ পড়ে গেলো দুজনের। সাথে সাথেই কেঁপে উঠলো বুক। সারা শরীরে বয়ে গেলো লজ্জারাঙা স্রোত। চোখের পলক ঝাপিয়ে দ্রুত চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম। কানে চুল গুঁজতে গুঁজতে আবারও আড়চোখে তাকাতেই উনার গভীর চাহনীতে চোখ আটকালো আমার।
সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন উনি। কয়েক মিনিট পর প্রত্যাশিত অটোরিকশা দুটো এসে থামতেই শুভ্র ভাই আরো দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। রাস্তার পাশে সামান্য কাদা থাকায় হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে খুব সাবধানে মামানিকে নামালেন উনি। মামানিও তৃপ্তির হাসি হাসলেন। কিন্তু আমার মুখে হাসি ফুটলো না৷ কেমন একটা অজানা ভয়ের শিহরণ বয়ে গেলো গায়ে৷ তবে কি, মায়ের খুশিকেই প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুভ্র ভাই? তাহলে, তাহলে…. আমি?
#রোদবালিকা
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/