রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ৩৭
#লেখিকা- নৌশিন আহমেদ রোদেলা
____________________
“রাঁধব মোরা রাঁধব আজি রাঁধব ছড়া ছন্দেতে,
তিনটি ভুবন ভরিয়ে দেব সুখাদ্যেরই গন্ধেতে।।”
মসজিদে মসজিদে শেষ বিকেলের সম্মোহনী সুর বাজতেই রান্না ঘরে ঢুকে গিয়েছি আমরা। রাতের আড্ডার বিশদ তালিকা নিয়ে রাঁধতে বসেছি। ফুসকা,,চটপটি, পিঁয়াজু, সমুচা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারের কোনটাই যেন বাদ পড়ে নি এই তালিকায়।
আপু আর রাফিয়া ব্যস্ত ভঙ্গিতে ডিমের খোসা ছাড়াচ্ছে। তনিমা আপু ময়দা মাখছে আর আমি ছোলা-আলু সিদ্ধ করছি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে দুষ্টু মিষ্টি হাসির গল্পও চলছে পুরোদমে। এমন একটা হাস্যোজ্জল পরিবেশের ইতি ঘটিয়ে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালেন শয়তানদের কর্ণধার শুভ্র ভাই। তার পিছু পিছু এসে দাঁড়াল সব কটা। আমরা কপাল কুঁচকে তাকালাম। ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—-” কি সমস্যা?”
শুভ্র ভাই বাঁকা হেসে বললেন,
—-” সমস্যা হল তোরা।”
—-” মানে?”
—-” মানেটা সিম্পল! একটু আগে কি বলে এলি? মেয়েরা রাঁধবে মেয়েরাই খাবে। মেয়েদের খাওয়ার পর কিছু থাকলে ছেলেদের উপর দয়া করা হবে নয়ত নয়। এত বড় দুঃসাহস তোদের?”
তনিমা আপু মুখ কাঁচুমাচু করে তাকালেন। কথাটা উনি অদুত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করেই বলেছিলেন। তার এই সামান্য কথাটা যে প্রমিকপুরুষকে টপকে পুরো ভাইজাতির গায়ে লেগে যাবে বুঝতে পারেন নি । তারওপর শুভ্র ভাই! আমি আড়চোখে তনিমা আপুর দিকে তাকালাম। আপু অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন। শুভ্র ভাইকে বেশ সমীহ করেই চলেন তনিমা আপু। শুধু তনিমা আপু নয়, খুব অদ্ভুত কিছু কারণে ছোট থেকে বড় সবাই-ই একটু আধটু ভয় পান উনাকে। কারণটা হয়ত উনার নাছোড়বান্দা স্বভাব। আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম,
—-” যা সত্য তাই বলা হয়েছে। প্রবলেমটা কই? মেয়েরা কষ্ট করে রান্না করবে তো খাবারে মেয়েদের অগ্রাধিকার থাকবে এটাই স্বাভাবিক।”
শুভ্র ভাই দরজায় হাত রেখে দাঁড়ালেন। বামহাতে চুল ঠিক করতে করতে বললেন,
—-” সেটাই! এই অতি সুন্দর স্বাভাবিক যুক্তিটা দেওয়ার জন্য তোদের সব ক’টাকে রান্নাঘর থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। আজ ছেলেরা মানে আমরা, ভাইয়েরা রান্না করব। এবং সেই খাবারের অবশিষ্ট অংশও তোরা পাবি না। যা ভাগ….”
আমি কোমরে হাত রেখে চোখা দৃষ্টিতে তাকালাম,
—-” বললেই হল? মামার বাড়ির আবদার?”
—-” মামার বাড়ির আবদার নয় ফুপ্পির বাড়ির আবদার। যা বের হ সব।”
—-” সেই স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। এখানে শুধু এবং শুধুই আমাদের রাজত্ব। ভাগেন যান।”
শুভ্রভাই ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। রাগী গলায় বললেন,
—-” একটা থাপ্পড় লাগাব বেয়াদব। বড়দের মুখে মুখে কথা। আমার ফুপ্পির বাড়ি তো আমার অধিকার…. এই মুহুর্তে বের হবি সবক’টা। নয়ত মেরে তক্তা বানিয়ে দেব।”
আলিফ ভাই দাঁত কেলিয়ে বললেন,
—-” একটা পয়েন্ট মিস গিয়েছে শুভ্র ভাই। শশুরবাড়িও….”
শুভ্রভাই চোখ রাঙিয়ে তাকাতে গিয়েও হেসে ফেললেন। কথাটা কাটিয়ে যাওয়ার আগেই ফটাফট প্রশ্ন ছুঁড়ল রাফিয়া,
—-” শশুরবাড়ি মানে?”
পাশ থেকে ধমকে বলে উঠলেন রাতুল ভাইয়া,
—-” কথায় কথায় এত মানে মানে করিস কেন? গিলুহীন মহিলা। আলিফ বোঝাতে চাইছে এখানে তোদের কোন অধিকার নেই। এত পচপচ শশুরবাড়ি গিয়ে দেখাস যা।”
রাফিয়া গলা উঁচু করে বলল,
—-” বাঁদর কোথাকার। কথায় কথায় ধমকাস কেন আমায়?”
রাতুল ভাইয়া কিছু বলার আগেই শীতল কন্ঠে বলে উঠলেন শুভ্র ভাই,
—-” রাফিয়া বাইরে যাও।”
রাফিয়া অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বলল,
—-” জ্বি ভাইয়া?”
—-” রান্নাঘর থেকে বেরুতে বলছি। তনিমা আর রুহিও বের হ।”
আমি জ্বলে ওঠে বললাম,
—-” একদম বের হবি না রাফিয়া। এই যে আদিবার সো কল্ড দাদাভাই? ফুপ্পির বাড়ি বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি?”
—-” অবশ্যই নিয়েছি। আমি তো শুধু নিয়েছি তুই তো কিনে নিয়ে আবার বিক্রিও করে দিয়েছিস। মামুর বাসায় গিয়ে যে ধাপট দেখাস…..নিজেকে তখন অসহায় মোরগ মনে হয়। সেখানে তোর দাপট মেনে নেওয়া হয় বলে এখানেও মেনে নেওয়া হবে তা কিন্তু নয়। এখন চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে চোখদুটোকে শান্তি দে, ছকিনার মা।”
আমি জেদ নিয়ে বললাম,
—-” যাব না মানে যাব না। আমরা আগে আসছি তো আমরাই রান্না করব। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মামানিকে ডাকব বলে দিলাম।”
শুভ্র ভাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
—-” আমিও ফুপ্পিকে ডাকব। এন্ড এজ ইউজাল, ফুপ্পি আমার কথায় বিশ্বাস করবেন।”
আমি কটমটে দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম। রাফিয়া আমার হাত খামচে ধরে বলল,
—-” চল চলে যাই। শুধু শুধু শুভ্র ভাইয়ার সাথে ঝামেলা করে কি লাভ?”
এমনিতেই রাগ আর জেদে শরীর কাঁপছিল আমার। রাফিয়ার বলা শুভ্র বাণীতে সেই রাগ-জেদ যেন আকাশ ছুঁলো। যেখানে নিজের মা জননীই শত্রুপক্ষের ভারী অস্ত্র সেখানে কি জেতার আশা করা চলে? আমার ধারণা, কোন একদিন যদি শুভ্র ভাই গিয়ে বলে, ‘ফুপি? তোমার ছোট মেয়ে আমাকে খুন করে মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছে।’ সেটাও বিনাবাক্যে বিশ্বাস করে নিবেন আম্মু।
আম্মুর বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে, আমরা তার বাপের বাড়ির লোকদের পছন্দ করি না। যদিও উনার বাপের বাড়ি বলতে এই এক মামু, মামানি আর শুভ্র ভাই। তবুও তার ধারণা ফুফাতো বা কাকাতো ভাই-বোনদের যতটা পছন্দ করি তার ভাতিজাকে ততটা পছন্দ করি না। আর আমাদের এই অপছন্দের পেছনে আছেন আব্বু। আব্বুকে অনুসরণ করেই নাকি এতোটা অসামাজিক হয়ে উঠেছি আমরা। আমি মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
এই ‘শুভ্র’ নামক মানুষটিকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারলে মাথাটা বোধ হয় কিছুটা শান্ত হত আমার। নিজের রাগটা কমাতে টিভি অন করে থম মেরে বসে রইলাম সোফায়। পাশেই সাংসারিক আলোচনায় মত্ত দু’জন রমণী। আপু আর তনিমা আপু শোয়ার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে গল্প করছে। রাফিয়া হয়ত বয়ফ্রেন্ডের ফোনালাপে ব্যস্ত। টিভি দেখতে দেখতে রাগটা কিছুটা নুইয়ে এলো। ঘন্টাখানেক যাবৎ দেখা মুভিটাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীনটা যখন এলো ঠিক তখনই আমার পাশে ধপ করে বসে পড়লেন শুভ্র ভাই। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রিমোটটা হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বললেন,
—-” আজাইরা মুভি দেখিস অলওয়েজ। বাচ্চা মানুষ হয়ে এতো রোমান্টিক মুভি কেন দেখবি? তোর জন্য টম এন্ড জেরি পার্ফেক্ট। ভাবছি, তোকে টম এন্ড জেরির কিছু এপিসোড ডাউনলোড করে দেব। ভালো হবে না?”
আমি তেতে উঠে বললাম,
—-” রিমোট দিন।”
আমার কথাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চ্যানেলটা পাল্টে দিলেন উনি। রাগে দুঃখে চোখদুটো টলমল করে উঠল আমার। চেঁচিয়ে উঠে বললাম,
—-” মামানি? আমি কিন্তু তোমার ছেলেকে খুন করে ফেলব বলে দিলাম। ভাল্লাগে না অসহ্য… রিমোট দিন।”
শুভ্র ভাই সোফায় গা এলিয়ে আরাম করে বসলেন। মামানি বিরক্ত চোখে তাকালেন। শক্ত কন্ঠে বললেন,
—-” শুভ্র? সারাদিন মেয়েটার পেছনে কেন লেগে থাকো তুমি? রিমোট দাও ওকে।”
শুভ্র ভাই গম্ভীর গলায় বললেন,
—-” ওর পেছনে কেন লাগতে যাব আমি? বাচ্চা পোলাপানদের রোমান্টিক মুভি দেখার মানেটা কি? এগুলো দেখেই তো নষ্ট হচ্ছে দিন দিন। চূড়ান্ত বেয়াদবও হচ্ছে। দিন-রাত থাপড়ানো উচিত এদের।”
—-” আপনি দিবেন রিমোট? উফফ… আস্ত একটা অসহ্যকর মানুষ আপনি। আমি নষ্ট হলে হচ্ছি…. দরকার হলে আরও নষ্ট হব, তাতে আপনার কি? আমার রিমোট আমাকে ফেরত দিন ব্যস!”
আম্মু গলা চড়িয়ে বললেন,
—-” একটা চড় লাগাব। বড়দের সাথে এটা কেমন ব্যবহার? এতোক্ষণ দেখেছিস মন ভরে নাই? শুভ্র যা দেখবে তাই দেখ নয়ত দেখার দরকার নেই। আস্ত বেয়াদব একটা।”
আম্মুর কথা শেষ হতেই চোখ থেকে টপাটপ দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল গালে। রাগ নিয়ে উঠে যেতে নিতেই হাত চেপে ধরলেন শুভ্র ভাই। আমি লাল চোখে উনার দিকে তাকালাম। উনি মনোযোগ দিয়ে টিভি স্ক্রিনে তাকিয়ে আছেন। উনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে, আমার হাত যে উনার হাতে আটকে আছে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও উনার নেই। এই পৃথিবীতে টিভি এবং তার দুটো চোখ ছাড়া অন্যকিছুর অস্তিত্ব থাকতেই পারে না, অসম্ভব! আমি চাপা গলায় বললাম,
—-” হাত ছাড়ুন।”
শুভ্র ভাই জবাব না দিয়ে টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিলেন। সাথে সাথেই গল্প ভুলে টিভির দিকে তাকালেন আম্মু-মামানি। টিভিতে তখন খবর চলছে। ব্রেকিং নিউজে বড় বড় করে লেখা বেরুচ্ছে, ‘ মারধোরের এক পর্যায়ে স্বামীর হাতে স্ত্রীর মৃত্যু’ ব্রেকিং নিউজটা শুনেই সরু চোখে তাকালাম আমি। মামানি আফসোসের সুরে বললেন,
—-” আহারে! কোন মায়ের বুকটা খালি হল কে জানে? এসব ছেলেদেরকে পিটাইয়া মারা উচিত। কাকে কি বলি? আমার নিজের ছেলের যে রাগ কয়েক বছর পর শুভ্রর নাম ব্রেকিং নিউজে এলেও আমি অবাক হব না। রাগের মাথাতেই বউ মেরে ফেলবে আমার ছেলে।”
শুভ্র ভাই একবার আমার দিকে তাকিয়েই মামানির দিকে তাকালেন। অনুযোগের সুরে বললেন,
—-” আম্মু? সত্যিই কি তুমি আমার আম্মু? সুনামের চেয়ে আমার বদনামই তুমি বেশি কর। এমন চলতে থাকলে চিরকুমার হয়েই মরতে হবে আমায়। ফু্প্পি? তোমার মনে হয় আমি আমার বউকে এতো অত্যাচার করব?”
আমি ফোঁড়ন কেটে বললাম,
—-” মনে হওয়ার কিছু নেই। আপনি এর থেকেও বেশি অত্যাচার করবেন। তবে, আমার ধারণা আপনার কপালে বউই জুটবে না। এমন প্যারাময় বিরক্তকর পুরুষকে কেউ দুই সেকেন্ডের জন্যও বিয়ে করতে চাইবে না।”
আম্মু ধমক দিয়ে বললেন,
—-” তুই বললেই হল? আমার ভাতিজা লাখে একটা। শুভ্র তার বউকে মাথায় করে রাখবে।”
শুভ্র ভাই খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
—-” এই না হলে আমার ফুপি! রক্ত কথা বলে। আর এগুলো তো পরের বাড়ির মেয়ে। সব কয়টা আমার শত্রু!”
শুভ্র ভাইয়ের কথায় আম্মু আর মামানি দু’জনেই হেসে উঠলেন। শুভ্র ভাই আবারও গভীর মনোযোগে চ্যানেল পাল্টাতে লাগলেন। আমি সোফায় গা এলিয়ে অসহায়ের মত বসে রইলাম চুপচাপ। উনি ঘুরেঘুরে আবারও সেই মুভিটাই দিলেন। আমি খুশি হয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি টিভির দিকে তাকিয়েই মৃদু হাসলেন। মুহুর্তেই মনে হল, নাহ! লোকটা খুব একটা অসহ্যকর পুরুষ নয় বরং টক,ঝাল, মিষ্টি!
___________________
চাঁদের আলোতে নয় ঝকঝকে বিদ্যুতের আলোতে গোল হয়ে বসে আছি আমরা। আমাদের ঠিক মাঝখানে প্লেটে সাজানো কেক, পেঁয়াজু জাতীয় খাবার। কাজিনরা সবাই একসাথে হয়েছি শুনে গাঙিনাপাড়া থেকে মিথি আপু আর চয়ন ভাইয়াও এসেছেন। ছেলেদের বানানো খাবার আর চয়ন ভাইয়ার কিনে আনা খাবারে আড্ডাটা বেশ মেতে উঠেছে তখন। রাফিয়ার বানানো চিরকুট খেলাটাতেও বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে সবাই। একমাত্র আমিই একটু পর পর উশখুশ করছি। অস্থির চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে এই আড্ডামহল থেকে বেরুবার সুযোগ খুঁজছি।
—-” শুভ্র ভাইকে কিন্তু আজকাল ঘন ঘন পাঞ্জাবীতে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কি ভাই?”
আলিফ ভাইয়ার প্রশ্নে সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকাল। শুভ্র ভাই নির্মল হেসে বললেন,
—-” কোনো কারণ নাই আবার আছেও। প্রথমত, সামনে যা পাচ্ছি তাই পরছি। দ্বিতীয়ত, সে বলেছে পাঞ্জাবিতে নাকি আমায় চরম লাগে।”
কথাটা বলে চোখ টিপলেন শুভ্র ভাই। শুভ্র ভাইয়ের শেষ কথাটাতে সবাই হৈ হৈ করে উঠল। আমি সরু চোখে তাকালাম। ডাহা মিথ্যা! এমন কিছু কাশ্মিনকালেও বলেছি বলে মনে পড়ছে না আমার।
—-” কিন্তু সেই ‘সে’ টা কে? বলে দিলেই হয়। আমরা কি তুলে নিয়ে যাব নাকি আপনার তাকে?”
রাফিয়ার কথার খেই ধরেই চয়ন ভাইয়া বললেন,
—-” রাফিয়ার সাথে সহমত আমি। বলে দাও শুভ্র। আমাদের মাঝে এতো ঢাকাঢাকির কি আছে?”
শুভ্র ভাই অলস ভঙ্গিতে বললেন,
—-” এই এক কথা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত। আমি ঢাকলামটা কই? সবই চাঁদের আলোর মতো পরিষ্কার। আরও পরিষ্কারভাবে জানতে চাইলে ওয়েট করতে থাকুন। বাসররাতের পরের দিন দেখাব….এর আগে দেখালে নজর লাগানোর ভয় থাকে।”
মিথিলা আপু ফোঁড়ন কেটে বললেন,
—-” কেন রে শুভ্র? আমরা দেখে ফেলার ভয়ে বিয়ের দিন তোর বউকে কি ড্রামের ভেতর ঢুকিয়ে রাখবি নাকি? নয়ত আমাদের না দেখিয়ে বাসর ঘর পর্যন্ত নিবি কিভাবে তাকে?”
—- ” আমি কি তোর মতো সং সেজে বিয়ে করব নাকি? আমার বিয়ের খোঁজটাও তোদের জুটবে না। হঠাৎ কোনো বিকেলে…. ”
শুভ্র ভাইয়ের কথার মাঝেই উঠে দাঁড়ালাম আমি। মৃদু গলায় বললাম,
—-” তোমরা গল্প কর। আমার শরীর খারাপ লাগছে। আমি ঘুমোব।”
আলিফ ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন,
—-” মাত্র নয়টা বাজে। এখনই কিসের ঘুম? আজ আমাদের আড্ডা বারোটা পেরুবে। আর তুই না থাকলে চলবে নাকি? এই মুহুর্তে তো তোকেই প্রয়োজন।”
কথাটা বলে দাঁত বের করে হাসলেন আলিফ ভাইয়া। আমি কপাল কুঁচকে মৃদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
—-” আমার শরীর ভালো নেই। তোমরা গল্প কর।”
কথাটা বলেই ঘুরে দাঁড়ালাম আমি। শুভ্র ভাই কিছু সন্দেহ করার আগেই দ্রুত পায়ে নিচে নেমে এলাম। মামানি ড্রয়িং রুমেই ছিলেন। আমাকে দেখেই ইশারা করলেন। আমি আম্মুর পাশে গিয়ে দুঃখী দুঃখী মুখ নিয়ে বললাম,
—-” আম্মু? আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে। একটু ঘুমুতে পারলে ভালো লাগত। বাসায় এতো মানুষ আর এতো চিল্লাচিল্লি এর মাঝে কি করে ঘুমাব?”
মামানি ঝটপট বললেন,
—-” রোদকে আমার সাথে নিয়ে যাই অরি। তোমার ভাইও বাসায় নেই। আমার সাথেই থাকবে না’হয়। চোখ-মুখ কেমন শুকিয়ে গিয়েছে মেয়েটার।”
মামানির কথায় আমার দিকে তাকালেন আম্মু। আমি চোখে-মুখে দুঃখ দুঃখভাব আনার যথাসম্ভব চেষ্টা চালালাম। আম্মু রাজিও হলেন। মামানি আর আমি দু’জনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলাম। যার অর্থ প্ল্যান সাকসেসফুল!
_________________
ওভেন থেকে কেকটা বের করে অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে মামানির কাজ দেখছি। দ্রুত হাতে এটা সেটা বানাচ্ছেন তিনি। ঘড়িতে প্রায় দশটা বাজে। সারা বাসা নিস্তব্ধ। ব্যালকণির পর্দাটা বাতাসের ধাক্কায় অল্প সল্প উড়ছে। আমি অন্যমনস্ক দৃষ্টিতে ঘড়ির দিকে তাকালাম। আরও এক ঘন্টা এভাবেই আহাম্মকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আমাকে। চোখের কার্ণিশে ঘুমেরাও যেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে আসছে।
শুভ্র ভাই জন্মদিনে অযথা কাঁচাল পছন্দ করেন না। উনার ধারণা, জন্মদিন নেচে গেয়ে মরে যাওয়ার মত কোন ঘটনা নয়। খুবই স্বাভাবিক একটি সত্য। সুতরাং, স্বাভাবিক বিষয়গুলো নিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করাটা বোকামি। কিন্তু আমি আর মামানি সেই বোকামোটাই করছি। শুভ্র ভাই সহজে চমকান না। দুনিয়ার সবকিছুই উনার কাছে অতি সাধারণ এবং স্বাভাবিক বলে বোধ হয়। সারপ্রাইজগুলোও কোনো না কোনোভাবে বুঝে ফেলেন উনি। আমার ভাবনার মাঝেই কথা বললেন মামানি,
—-” সব কমপ্লিট। খাবারগুলো প্যাক করে সরিয়ে রাখতে হবে বুঝলি? শুভ্র আসার আগে সারা ঘরে রুমস্প্রে লাগাতে হবে। নয়ত আমার ধুরন্ধর ছেলে সব ধরে ফেলবে। কি খেয়ে যে এই পোলাকে জন্ম দিয়েছিলাম কে জানে?”
মামানির কথায় হেসে ফেললাম আমি। কেক ডেকোরেশনে মামানির সাথে হাত লাগালাম। কেকটা নজরে না পড়ে এমন জায়গায় রেখে পুরো রান্নাঘরে স্প্রে করলেন মামানি। সচেতন গলায় বললেন,
—-” তোর নুপুরটা খুলে রাখ।”
—-” কেন?”
—-” শুভ্র যদি এখনই চলে আসে তাহলে তোর নুপুরের শব্দেই তোর উপস্থিতি বুঝে যাবে ও। পুরো প্ল্যানই শেষ। তারচেয়ে বরং খুলে রাখ।”
আমি অসহায় চোখে তাকালাম। মিনমিনে বললাম,
—-” আমি সাবধানে হাঁটব মামানি। খুলে রাখলে পরতে ভুলে যাব নয়ত হারিয়ে যাবে।”
মামানি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু হাসলেন। আমার ডান গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বললেন,
—-” শাড়িতে সুন্দর লাগছে। এরপর থেকে সব শাড়ি দুটো করে কিনব। দু’জন একই শাড়ি পরলে একদম মা- মেয়ে লাগবে।”
মামানির এই ছোট খাটো পাগলামোতে মাঝে মাঝেই প্রচন্ড হাসি পায় আমার। মানুষ ছেলের জন্য হা-হুতাশ করে আর মামানি করেন মেয়ের জন্য। উনার শুকনো মুখ দেখে মনে হয় একটা মেয়ে হলেই বোধহয় পৃথিবীর সব সুখ ডানা ঝাপ্টে পড়ত তার ঝুলিতে। শুধুমাত্র একটা মেয়ের অভাবেই সেই সুখগুলো ধরা দিচ্ছে না তাকে। আমি কিছু বলার আগেই কলিংবেল বাজল। মামানি তাড়াহুড়ো করে বললেন,
—-” ছেলেটা ঠিক বাপের মত হয়েছে। সবসময় অসময়ে ঘরে ফেরা। আর একঘন্টা পর ফিরলে কি হত? তুই জলদি লুকিয়ে পড় রোদু। আমি এই একঘন্টা কোনভাবে আটকে রাখব ওকে। সেই সময়টাতে খুব সাবধানে ঘর সাজিয়ে নিবি তুই….পারবি না?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
—-” পারব।”
আমাকে কিচেনে রেখেই দ্রুত পায়ে দরজা খুললেন মামানি। আমি ফ্রিজের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। দরজা খোলার কয়েক সেকেন্ড পরই শুভ্র ভাইয়ের কন্ঠ ভেসে এলো,
—-” বাবা ফিরছে নাকি আজ?”
—-” না তো। কেন?”
—-” নতুন শাড়ি পরেছ যে তাই বললাম।”
মামানি হঠাৎ করে কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন,
—-” আস্ত ফাজিল তুই। মায়ের সাথেও ফাজলামো। নতুন শাড়ি পড়ার জন্য তোর বাপের পারমিশন লাগবে আমার?”
—-” কি যন্ত্রণা? আমি সাদা মনে একটা প্রশ্ন করলাম আর তুমি কই থেকে কই নিয়ে গেলে।”
মামানি জবাব না দিয়ে বললেন,
—-“খাবি এখন? খাবার দেব?”
—-” হু খাব।”
—-” হাত-মুখ ধুয়ে আয়।”
ফ্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা আমার জমে যাওয়ার পালা। পায়ে নুপুর থাকায় কিচেনের ভেতরে হাঁটাচলা করাও সম্ভব হচ্ছে না। মামানি আর শুভ্র ভাই ডাইনিং এ বসে আছেন। আধা ঘন্টা যাবৎ উনি খাচ্ছেনই। পেটে এত জায়গা কোথায় থাকে আল্লাহ মালুম।
—-” প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে রে শুভি। মাইগ্রেনের ব্যথা মনে হচ্ছে।”
—-” পুত্রবধূকে সাথে আনলেই পারতে। শাশুড়ি মায়ের সেবা করত রাতভর।”
মামানি ধারালো গলায় বললেন,
—-” তোর কি ন্যূনতম লজ্জা-শরম নাই? মায়ের সামনে যা ইচ্ছে বলিস। আর পুত্র থাকতে পুত্রবধূর কি দরকার? খাওয়া শেষ করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি। যতক্ষণ না ঘুমিয়ে পড়ি ততক্ষণ পাশে বসে থাকবি।”
—-” লজ্জা পাওয়ার মত কিছু বলেছি বলে তো মনে হচ্ছে না। শুরু থেকে শেষ অব্দি সবই তুমি জানো তো লজ্জা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বরং পৃথিবীর ইতিহাসে তুমিই প্রথম মা যে নিজের ছেলেকে ইচ্ছে করে এভাবে ডুবিয়ে দিয়েছ….এখন আর উঠতেই পারছি না। ভবিষ্যতে পারব বলেও মনে হয় না।”
—-” একটা চড় খাবি ফাজিল। তোর চক্ষুলজ্জা ছোট বেলাতেও ছিল না, এখন তো নাই-ই এমনকি বুড়ো বয়সেও থাকবে বলে মনে হয় না। এখন চুপচাপ খাওয়া শেষ কর। খাওয়া শেষ করে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি। আমি ঘুমাব।”
—-” আমি টায়ার্ড আম্মু।”
—-” মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। ক’দিন পর বউয়ের মাথাব্যথা হলে তো ঠিকই রাত জেগে বসে থাকবি। মায়ের সময়ই টায়ার্ড? আজ একটা মেয়ে নাই বলে!”
—-” আল্লাহ! আম্মু? তুমি কি জানো? তোমাকে ঠিক সময়ে ফিল্মে দিলে অভিনয় করেই কোটিপতি হয়ে যেতে তুমি। আর আমি হতাম কোটিপতির একমাত্র ছেলে।”
—-” ফাজলামো করিস আমার সাথে?”
—-” একদমই না।”
মা-ছেলের খুনশুটি দেখে ঠোঁট চেপে হেসে ফেললাম আমি। মামানিটা সত্যিই অদ্ভুত একজন মহিলা। কখনও কখনও ছেলে আর স্বামীর প্রতি উনার অভিমান দেখলে মনে হয় শরীরটা বাড়লেও মনটা এখনও সেই বাচ্চায় রয়ে গিয়েছে। শুভ্র ভাইয়ের অভিমানী ছোট্ট একটা বাচ্চা!
____________________
আধাঘন্টা যাবৎ কন্টিনিউয়াসলি দৌড়ঝাঁপ পেরে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছি আমি। শাড়ি পড়ে ঘর সাজানোটা দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে বোধ হচ্ছে আমার। কেক, মোম আর বাকিসব খাবারগুলো ঠিক জায়গায় রেখে চারপাশটাই একবার চোখ বুলালাম আমি। রুমটাকে খুব বেশি সাজানো হয় নি। এদিক ওদিক বেশ কিছু বেলুন, শুভ্র ভাইয়ের ছোট থেকে বড় হওয়ার ক্রমান্বয়ে কিছু ছবি, কিছু তাজা গোলাপ। কোমরে আঁচল পেঁচিয়ে যখন চারদিকটা পর্যবেক্ষণ করছি ঠিক তখনই ফোনের ম্যাসেজ টুন বাজল।
মামানির ম্যাসেজ, ‘ শুভ্র রুমে যাচ্ছে। লুকা তুই…” হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি। কোমরে গুঁজা আঁচলটা খুলে তাড়াহুড়ো করে রুমের আলো নিভিয়ে করে দিলাম। আলো নিভিয়ে কানা মামার মতো কিছুদূর এগুতেই দরজা খুলে আলো জ্বালালেন শুভ্র ভাই। আমি কি বলব বুঝতে না পেরে দাঁত বের করে হাসলাম। বোকা বোকা গলায় বললাম,
—-” হ্যালো!”
শুভ্র ভাই জবাব দিলেন না। আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন। চোখে-মুখে চরম বিস্ময়। আমি দৌঁড়ে বেরিয়ে যাব নাকি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকব বুঝে উঠার আগেই আবারও আলো নেভালেন শুভ্র ভাই। মুহুর্তেই ঘরটা অন্ধকারে তলিয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড পর আবারও আলো জ্বালালেন। আগের মতোই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। চোখ পিটপিট করে বললেন,
—-” সত্যিই তুই?”
আমি বোকার মতো হাসলাম। উনি হতভম্ব গলায় বললেন,
—-” সত্যিই তুই? আমরা কি বিয়ে টিয়ে করে ফেলছি নাকি?”
আমি কপাল কুঁচকে বললাম,
—-” জ্বি?”
আমার কথায় শুভ্র ভাইয়ের চমক কাটল। হাতে পরা ঘড়িটা দেখে নিয়ে বললেন,
—-” এই এতো রাতে তুই এখানে কেন? তাও আবার আমার রুমে? আশ্চর্য তো! তোকে তো ধরে দেওয়া দরকার কয়েকটা চড়। তু….”
—-” হ্যাপি বার্থডে বাবু।”
মামানির কথায় ফিরে তাকালেন শুভ্র ভাই। মামানি শুভ্র ভাইয়ার ডান গালে হাত রেখে বললেন,
—-” পঁচিশ বছরের হয়ে গেলি! এতো তাড়াতাড়ি? মনে হচ্ছে সেইদিন হসপিটাল থেকে আনলাম তোকে। একদম এইটুকু একটা বাবু….আমার বাবু।”
মামানির কথায় হেসে ফেললেন শুভ্র ভাই। মামানিকে একহাতে জড়িয়ে ধরলেন। মামানি হেসে বললেন,
—-” চেয়ারে বসলে টেবিল নাগাল না পাওয়া আমার ছেলেটার কি বিশাল শরীর এখন, বিশাল হাত, চওড়া বুক। মাঝে মাঝে ভাবি আর অবাক হই…এই এতোবড় জোয়ান ছেলেটা আমার? সত্যিই আমার? আরও হাজার বছর বেঁচে থাক শুভি। আমি এভাবেই মুগ্ধ চোখে দেখতে থাকি তোকে।”
কথাটা বলে চুমু খেলেন শুভ্র ভাইয়ের বুকে। শুভ্র ভাইয়া হেসে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন মাকে। এই অসম্ভব সুন্দর মুহূর্তটুকুকে ক্যামেরাবন্দী করে তৃপ্তির হাসি হাসলাম আমি। মামানিকে ছেড়ে দিয়ে কপাল কুঁচকে বললেন উনি,
—-” এসব তাহলে এই দুই রমণীর প্ল্যান?”
মামানি হেসে বললেন,
—-” চমকেছিস? “
শুভ্র ভাই চোখের ইশারায় আমাকে দেখিয়ে বললেন,
—-” সামনের জনকে দেখে চমকিয়েছি।”
—-” তবু তো চমকিয়েছিস….এবার চল কেক কাটবি।”
—-” আমার এইসব ভাল্লাগে না।”
—-” শুভ্র!!”
—-” আচ্ছা চল। সাময়িক কেক কাটা চলুক আজ। আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি আর তোমরা আনন্দ করছ। আমার তো দুঃখে ঘুমিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।”
শুভ্র ভাইয়ের কথায় হেসে ফেললাম দু’জনেই। মামানি মোমবাতি জ্বালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। শুভ্র ভাই আমার পাশে দাঁড়াতেই মৃদু গলায় বললাম আমি,
—-” জন্মদিনের শুভেচ্ছা মামুর ছেলে।”
শুভ্র ভাই হাসলেন। আমার দিকে খানিকটা চেপে এসে আমার থেকেও মৃদু গলায় বললেন,
—-” জন্মদিনের শুভেচ্ছা রোদপাখির শুভ্রকেও।”
হঠাৎ করেই ভীষণ লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি। অস্থির চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। শুভ্র ভাই অলস ভঙ্গিতে কেক কাটলেন। মাত্র রাতের খাবার খাওয়ায় একটা খাবারও মুখে তুললেন না। আমার খাবার-দাবার নিয়ে বেরিয়ে এলাম। সবকিছু কোনরকম ফ্রিজে রেখে ক্লান্ত ভঙ্গিতে সোফায় বসলাম। মামানি ওয়াশরুমে যেতেই ফোনে ম্যাসেজ টুন বাজল। শুভ্র ভাইয়ের ম্যাসেজ,
—-” ঘড়িটা আমার জন্য? তুই কিনেছিস? অত টাকা কোথায় পেলি? আজকের এই সময়টুকু যে এতোটা স্পেশাল হবে ভাবতেই পারি নি আমি। জীবনের প্রথম চমক আর প্রথম চিরকুটটা আজই পেলাম আমি। নিজের জন্মদিনটাকে গুটিয়ে বুক পকেটে রেখে দিতে ইচ্ছে করছে। বার বার বলতে ইচ্ছে করছে, আমার জীবনের মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট রমণী দু’জনকে ভীষণ ভালোবাসি আমি। ভীষণ! ”
আমি মৃদু হাসলাম। সোফায় গা এলিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন শুভ্র ভাই। তার গভীর দৃষ্টিজোড়া আমিতেই নিবদ্ধ। আমি বামহাতে শাড়ির আঁচলটা মুখের উপর মেলে দিলাম। মামানি না ফেরা পর্যন্ত এই আঁচল সরবে না। কিছুতেই না…..
#রোদবালিকা
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/
( ভীষণ বড় করে লিখছি আজ। লিখতে লিখতে একটার ঘর পেরিয়ে একদম মধ্যরাত!!)