রুপকথা পর্ব ১০
– নিহাল তুমি?
মাহিয়ার চাঁপা চিৎকারে নিহাল হেসে উঠলো। এগিয়ে আসলো ওর কাছে।
-হ্যালো মাহিয়া।
মাহিয়ার আবার কথা বন্ধ হয়ে গেছে। থম মেরে তাকিয়ে আছে ও নিহালের দিকে। নিহাল প্রথমে মাহিয়ার পাশে দাড়ানো লোকটাকে থ্যাঙ্কস দিয়ে দিলে সে ওখান থেকে চলে গেল। নিহাল আর মাহিয়া এবার পুরোপুরি একা। ঘটনার আকস্মিকতা থেকে মাহিয়া যে এখনো উঠতে পারেনি, নিহালের বুঝতে সমস্যা হলো না। কাছে এসে ওর হাতটা ধরলো নিহাল।
-হ্যাপি বার্থডে । কেমন লাগলো আমার সার্প্রাইসটা?
-তুমিই আমাকে মেসেজ পাঠাচ্ছিলা? কিন্তু কিভাবে? তুমি তো কাল রাতে আমার সামনেই কাজ করছিলা ল্যাপটপে।
মাহিয়ার প্রশ্নের বন্যা শুনে আর ওর আস্তে আস্তে বাড়তে থাকা এক্সাইটমেন্ট দেখে নিহাল মিষ্টি একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখলো ঠোটে। কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে মাহিয়ার হাতটা ধরেই কথাগুলো শুনতে লাগলো ও। বেশ ভাল লাগছিল ওর। উপভোগ করছিল মাহিয়ার আকস্মিকতার বহিঃপ্রকাশ।
এইদিকে মাহিয়া সাতে পাঁচে কিছুই মিলাতে পারছিলো না। একদিকে এক্সাইটমেন্ট অন্যদিকে নার্ভাসনেস মিলে ওর অনুভূতির একটা জগা খিচুড়ি হয়ে যাচ্ছিলো। তাই অকপটে শুধু নিহালের দিকে প্রশ্নই ছুড়ে যাচ্ছিলো ও। তবে যখন বুঝলো যে নিহাল কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু ওর কথা শুনেই হাসছে, তখন চুপ হয়ে গেল মাহিয়া। এই প্রথম লজ্জায় লাল হয়ে গেল ও।
নিহাল বুঝলো ব্যাপারটা। মাহিয়ার আরেকটু কাছে আসলো ।
-তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব আমি। আজ তোমার সব কথাই মানবো আগেই বলেছি আমি। তবে চলো আগে বসি।
নিহাল মাহিয়াকে রেস্টুরেন্টের একদম কর্নারের দিকে নিয়ে চললো, যেখান থেকে শহরের মনরোম দৃশ্য স্পষ্ট উপভোগ করা যায়। হাতটা ও তখনো ধরেইছিল। মাহিয়ারও কোনো ইচ্ছা হচ্ছিলো না নিজেকে আলাদা করতে। থাকুক না এভাবে যতক্ষণ থাকা যায়।
একটা টেবিলের কাছে এসে থামলো নিহাল। টেবিলটা ওদের জন্যই বরাদ্দ করা তা সেটার সাজ দেখেই বুঝে ফেললো মাহিয়া। নিহাল প্রথমে ওর জন্য চেয়ার টেনে দিয়ে তারপরে ওর পাশে যেয়ে বসলো।
– এখন বলো। যা ইচ্ছা জিজ্ঞেস করো। তোমার সব প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমি রেডি।
কিন্তু মাহিয়ার মুখ থেকে এখন আর কোনো কথাই বের হচ্ছে না। লজ্জায় সে শুধু হেসেই যাচ্ছে। নিহালের খুব মন চাচ্ছিলো এই সময়টায় মাহিয়াকে নিজের একদম কাছে টেনে নিয়ে অনেক গল্প করতে। তবে মাহিয়া হওতোবা এখনো এতদূর আগায়নি ওর সাথে। তাই পরিস্থিতি বিগড়ে যাবার ভয়ে চিন্তাটা বাদ দিল নিহাল।
-কি এখন চুপ করে আছ যে?
– এতো সুন্দর করে আমাকে সারপ্রাইস দেওয়ার জন্য থ্যাঙ্কস নিহাল। আই এম রিয়ালি ইম্প্রেস্ড। তবে নাম্বারটা কার?
-এটা আমার অফিসের নাম্বার। এই মোবাইলটা অফিসেই থাকে। আম্মুও অফিসে আসলে এইটা ব্যবহার করে বলে সেও নাম্বারটা চেনে। তবে তোমাকে দেওয়া হয় নাই এখনো। আসলে এটা দিয়ে অন্য কোথাও ফোন করা হয় না বিজনেসের কাজ ছাড়া।
যেহেতু তোমার কাছে নাম্বারটা নেই, তাই এটা দিয়েই সবকিছু করার প্ল্যান করলাম। আর তুমি যে ল্যাপটপে আমাকে কাজ করতে দেখেছ তা তোমাকে মেসেজ পাঠানোর কাজই ছিলো। এই মোবাইলটা আমার ল্যাপটপের সাথে সিঙ্ক করা। সো আমি সবকিছুই ল্যাপটপ থেকেই করতে পারি। এবার বুঝলেন ম্যাডাম।
মাহিয়ার তখন কোন রকম খুশি অনুভব হচ্ছিলো তা বলে বোঝাতে পারবে না ও। এত উঁচু একটা জায়গায় বসেও মনে হচ্ছিলো আরও অনেক উঁচুতে উড়তে। মনের ভেতর হাজারো অনুভুতি লুকোচুরি খেলছিল ওর। কিভাবে হাসবে, বেশী না কম, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না।
ওদের এই মুহূর্তের মাঝেই ট্রলিতে করে মাহিয়ার জন্য অর্ডার করা কেট টা নিয়ে আসলো একজন ওয়েটার। মোমবাতি জ্বালিয়ে চলে গেল সে। হার্ট শেপের কেকটায় বড় করে লেখা,
HAPPY BIRTHDAY
TO MY
LOVELY WIFE
নিহাল মাহিয়ার দিকে ছুড়িটা আগিয়ে দিয়ে বললো,
– কেক কাটো মাহিয়া,
ছুড়িটা না নিয়ে মাহিয়া বললো,
-একসাথে কাটি?
নিজের জায়গা থেকে উঠে মাহিয়ার পেছনে এসে দাড়ালো নিহাল। তারপর
নিহালের গাওয়া জন্মদিনের গানের সুরে সুরে কেক কাটলো দুজন। তবে কেক তুলে খাওয়ানোর সময় ঘটলো বিপত্তি। প্রথম প্রথম না মাহিয়া তুলে খাওয়াতে পারছিল নিহালকে আর না নিহাল এগিয়ে আসছিল খেতে। পরে মনে হয় এটা চিন্তা করে যে দুইজনের লজ্জা কোনো একজনকে তো ভাঙতেই হবে, দুইজনই ছুড়ির দিকে হাত বাড়াল। হাতের ধাক্কায় একে অপরের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিল ওরা। জড়তা কাটলো অনেকটা।
নিহাল বললো তখন,
– আচ্ছা বুঝছি। তুমি বার্থডে গার্ল। সো তুমিই প্রথমে খাওয়াও আমাকে।
মাহিয়া হেসে এক পিস কেটে নিহালকে খাইয়ে দিল, তার থেকেই অর্ধেক ভেঙে মাহিয়াকে খাইয়ে দিল নিহাল।
এই পর্ব শেষ হলে ওয়েটার লাঞ্চের অর্ডারটা নিয়ে গেল ওদের থেকে। সে চলে যাওয়ার পর নিহাল বললো,
-নাও ইট্স টাইম ফর ইওর গিফ্ট।
বলেই নিজের চেয়ারের পাশ থেকে একটা কালো প্যাকেট মাহিয়ার সামনে ধরলো ও।
-নিহাল, এখন আমি খুবই বিব্রতবোধ করছি। এত বড় সারপ্রাইস দিলা আবার এখন এই গিফ্ট। একটু বেশী বেশী হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা।
– কিসের বেশী বেশী? এটা তেমন কোনো ফ্যান্সি কিছু না। আগে বিয়ে করি নাই তো, বউকে কি গিফ্ট দেওয়া যায় তা জানি না। তাই ভাবলাম দরকারি একটা জিনিস দেই। এখন খোলো, দেখো পছন্দ হয় নাকি।
মাহিয়া হেসে প্যাকেট টা নিল হাত থেকে তবে খুলে একটা ভিরমি খেল। আই ফোন এর একটা বক্স বের করলো ও।
– নিহাল… এতো এক্সপেন্সিভ গিফ্টের কি দরকার ছিলো?
– দাম বাদ দাও। বললাম না কাজের জিনিস এনেছি তোমার জন্য? আমি আই ফোন ইউস করি। এটা থাকলে তোমার সাথে আমার কানেক্ট করতে সুবিধা হবে। আমাদের মোবাইল সিঙ্ক এ থাকলে ভালো। অনেক কিছু শেয়ার করতে পারবো আমরা।
-ওওও।
এরপর খাবার চলে আসায় সেইদিকে মন দিল দুজন। খাওয়া আর বাইরের দৃশ্য দেখার মাঝে ডুব দিল ওরা। এরসাথে হাসাহাসি আর গল্প তো আছেই। দূর থেকে ওদেরকে সেই সময় দেখলে মনে হতো যেন দুই বন্ধু চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে এখানে।
-এই রেস্টুরেন্টের খাবার অনেক মজার। আমি আগে দুইবার এসেছি এইখানে। একবার আম্মুকে নিয়ে আরেকবার ফ্রেন্ডসদের সাথে। প্রত্যেকবারই এসে জায়গাটা নতুন লাগে আমার কাছে।
– সো কোনবারটা বেশী ভালো লেগেছে এখানে এসে? মাকে নিয়ে না ফ্রেন্ডদের সাথে?
– তোমার সাথে আজকে এসে।
খেতে খেতেই প্রশ্নটা করেছিল মাহিয়া, নিহালের এই উত্তর শুনে খাওয়া থামিয়ে দিল ও। নিহালের দিকে তাকাতেই দেখলো ও মাহিয়াকেই দেখছে। ওর চাহনীতে একটা ইচ্ছা দেখতে পেল মাহিয়া। লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো। নিহালও আর কোনো কিছু বললো না এ নিয়ে।
খাবারের পর মাহিয়ার ফোন টা নিয়ে নতুন ফোনে ট্র্যান্সফার করে সব সেট করে ওকে ফেরত দিল নিহাল। মাহিয়া, স্বভাবতই প্রথমে কয়েকটা সেল্ফি তুলে ফেললো নিজের। তা দেখে নিহাল গলা পরিষ্কার করার শব্দ করলো।
– ভালো ভালো! একা একাই ছবি তোলো। দাও পারলে আমিও তুলে দেই কয়েকটা!
নিহালের খোঁচা মাহিয়ার বুঝতে কষ্ট হলো না। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওকে নিজের সাথে একই ফ্রেমে বন্দি করলো মাহিয়া।
ছবি তোলার পর নিহাল মাহিয়ার ফোনটা নিয়ে সব ছবিগুলো ট্র্যান্সফার করলো নিজের মোবাইলে।
– দেখসো, এখন কতো ইসি হয়ে গেল।
বিল প্রদান করে নিহাল মাহিয়াকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হলো। ওদের ড্রাইভারকে ওখান থেকেই ছেড়ে দিল নিহাল। নিজেই ড্রাইভ করে আসলো বাসায়।
বিকালে ভার্সিটি যাওয়ার পথে সিগনালে এক তোড়া গোলাপ ফুল মাহিয়াকে কিনে দিল নিহাল। মাহিয়া ফুল পেয়ে মহা খুশি,
– তোমার আই ফোনের থেকে এটা বেশি সুন্দর গিফ্ট হয়েছে।
– তার মানে আইফোন তোমার পছন্দ হয় নাই?
– আরে না, না। সেটা বলছি না। আই ফোন তো অনেক পছন্দ হয়েছে আমার, কিন্তু ওইযে তুমি বললা না, বউকে কি দিলে বউ খুশি হয় তা তুমি জানো না? সো এই ফুলগুলো হলো ওই প্রশ্নের উত্তর।
মাহিয়ার এই মজা করে কথা বলাটায় নিহাল হো হো করে হেসে দিল। মেয়েটা ক্রমেই নিজেকে ওর কাছে নিয়ে আসছে। নিহালকে আপন করে নিচ্ছে মাহিয়া।
ভার্সিটি পৌছে মাহিয়া ফুলের তোড়া সহ বের হওয়াতে নিহাল অবাক হলো,
– ফুল নিয়ে কই যাও?
– ক্যান ক্লাসে? মাহিয়ার সাবলীল উত্তর।
ক্লাসে মাহিয়াকে ফুল হাতে ঢুকতে দেখেই শুরু হলো গুঞ্জন। অনেকেই এসে এটা ওটা প্রশ্ন করতে লাগলো। আগে মাহিয়ার খারাপ লাগলেও এখন নিহালকে নিয়ে ওকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে ওর অনেক ভালো লাগে। মুখ ভরে ভরে জবাব দেয় ও। তনু ক্লাসের আসার পর গতরাত থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে সব বিস্তারিত বললো মাহিয়া। সব শুনে তনুর চোখ উঠলো মাথায়।
– নিহাল এতো রোম্যান্টিক? ওহ মাই গুডনেস মাহিয়া! ইউ আর ভেরি লাকি।
তনুর মুখ থেকে “রোম্যান্টিক” শব্দটা শুনে কেমন যেন একটু লাগলো মাহিয়ার। আসলেই কি ওদের মাঝে রোম্যান্স হচ্ছে? আসলেই কি নিহাল ওর প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে এগুলো করছে? আর মাহিয়া? ওর নিজের মনে নিহালের স্থান কোথায়? হ্যা এটা ঠিক যে নিহালকে নিজের স্বামী বলতে ভালোই লাগে ওর। মেনে নিয়েছে নিহালকে ও। ছেলেটাকেও আগের থেকে অন্যরকম ভাবে ফিল করে মাহিয়া এখন। তবে সেটা কি ভালোবাসা?
-এই কই হারাইলি মাহি? ইদানিং দেখি মাঝে মধ্যেই নিজের ভেতরে হারিয়ে যাস তুই।
তনুর ধাক্কায় ফিরে এলো মাহিয়া,
– না কিছু না। আচ্ছা শোন, তুই তো আমাদের সাথেই যাবি রেস্টুরেন্টে নাকি?
– হমম। তাই তো জানি। তবে ব্রেকে সবার সাথে কথা বলবো। দেন ডিসাইড করবো।
ব্রেকে নিহাল আর মাহিয়ার বন্ধুরা সবাই মিলে বুঝে নিলো কে কাদের গাড়িতে যাবে। সেই অনুযায়ী ক্লাস শেষে বের হলো তারা।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে মাহিয়া দেখলো, একে একে করে ওর শাশুড়ি অনেক মানুষকে দাওয়াত দিয়ে ফেলেছে। রিতিমতো রেস্টুরেন্টের পুরো একটা ফ্লোর রিসার্ভ করতে হয়েছে এই জন্য। মাহিয়া নিজের বাবা মাকে দেখতে পেয়ে ছুটে গেল তাদের কাছে। এরপর নিহালকে সাথে নিয়ে সব গেস্টের সাথেই দেখা করলো ও। কেট কাটা, খাওয়া দাওয়া আর আড্ডার মাঝে সময়টা সুন্দর পার হলো ওদের। সর্বশেষ আয়োজন ছিল গান। নিহালের মতন নাবিলও বেশ ভালো গান পারে আর তাই সবার জোড়াজোড়িতে গান ধরলো ও। মাহিয়ার খুব মন চাচ্ছিলো যদি নিহাল ওর জন্য একটা গান গাইত। বললে হয়তোবা গেয়েও দিবে ও, তবে মাহিয়ার বলতে কেমন যেন লজ্জা লাগলো।
সবাইকে বিদায় দিয়ে নিজেদের বাসায় ফিরে আসতে অনেক সময় লেগে গেল নিহালদের। রুমেই মাহিয়ার গিফ্টগুলো এনে রাখা হলো। মাহিয়া ওর শাশুড়ি আর দেবরকে নিয়ে আসলো রুমে একসাথে গিফ্ট খোলার জন্য। সবাই খাটে বসে যখন প্রেসেন্টগুলো খুলতে লাগলো, নিহাল চেয়েছিল শুধু মাহিয়ার দিকে। মেয়েটা একেবারে বাচ্চাদের মতন এক্সাইটেড হচ্ছিলো একটার পর একটা প্যাকেট খুলতে গিয়ে। যে যাই দিয়েছে, সবকিছুর মুখ ভরে প্রশংসা করছে ও। নাবিলও একই জিনিষটা খেয়াল করেছে বোধহয়।
– ভাবী, তুমি সবকিছুকেই সুন্দর বলছো কেন? কিছু কিছু তো ওরকম ভালো না।
– নাবিল, আমার কাছে মানুষের গিফ্ট না, নিয়ত ম্যাটার করে। সে আমার কথা চিন্তা করে যে একটা কিছু এনেছে, সেই থট টাই আমার জন্য বড়।
আয়েশা ছেলের বউয়ের এই কথায় বেজায় খুশি হলেন। জড়িয়ে ধরলেন মাহিয়াকে তিনি,
-অনেক বড় চিন্তা আম্মু তোমার। দোয়া করি এই ধরনের চিন্তাগুলো নিয়েই জীবনে অনেক বড় হও তুমি।
নিহালও মাহিয়ার উত্তরটা শুনেছিল। নিজের স্ত্রীর প্রতি গর্ব হলো ওর খুব। চিন্তা করে রাখলো সবাই চলে গেলে মাহিয়াকে ও পার্সোনালি থ্যাঙ্কস দিবে এর জন্য।
………………
রাত অনেক। মাহিয়া ততক্ষণে ক্লান্ত হয়ে শুতে গেছে। নিহালেরও ক্লান্ত লাগছিল, তবে আগামিদিনের অফিসের কাজও গোছাতে হবে দেখে ল্যাপটপ নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসলো ও। কাজ করছিলো, এরই মাঝে স্ক্রিনের একসাইডে একটা উইন্ডো ক্লিক হলো। ম্যাসেজ এসেছে। খুললো ওটা নিহাল,
– আজকের দিনটা এতো স্পেশাল করার জন্য থ্যাঙ্কস। গত রাতে আপনার মেসেজগুলো পেয়ে মনে মনে খুব মজা পেয়েছিলাম। বলা হয়নি আপনাকে সেটা। মেয়েদেরকে কিভাবে ইম্প্রেস করতে হয় ভালোই জানেন দেখি?
মেসেজটা মাহিয়ার ফোন থেকে এসেছে। ওর দিকে তাকালো নিহাল। ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। নিহাল ভেবেছিল ঘুমিয়ে গেছে মাহিয়া। তবে এখন তো ব্যাপারটা অন্য দেখাচ্ছে। একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে নিহাল উত্তর টাইপ করলো,
– আমি তো অন্য কোনো মেয়েকে না, আমার ওয়াইফকেই ইম্প্রেস করার চেষ্টায় ছিলাম। শুনে ভালো লাগলো যে সে ইম্প্রেস্ড হয়েছে।
ম্যাসেজটা পাঠিয়ে দিয়ে মাহিয়ার দিকে তাকালো নিহাল। মাহিয়ার শরীরটা হাল্কা নড়ে উঠলো। হাসলে যা হয়। পা দুটো একটু ভাজ হলো। তবে এদিকে ফিরলো না মাহিয়া।
আবার মেসেজ লিখলো নিহাল,
– আজ তুমিও আমাকে কম ইম্প্রেস করোনি।
-কিভাবে?
– নাবিলকে গিফ্টের ব্যাপারে যেই উত্তর দিলা সেটার কথা বলছি। ইউর থট ইস ইন্সপায়ারিং।
এবার পাশ ফিরে তাকালো মাহিয়া। ঠোটে সুন্দর একটা হাসি। উঠে নিহালের পাশে হেলান দিয়ে বসলো ও।
– কি ঘুম নাই?
– তুমিও তো জেগে আছো।
– আমি তো কাজ করছি।
– তাহলে শেষ করো, একসাথেই ঘুমাই।
নিহাল হেসে দিয়ে ল্যাপটপের দিকে মন দিল। কিছুক্ষণ পর কাজ শেষ করে শুয়ে পড়লো মাহিয়াকে নিয়ে। আজকের আগ পর্যন্ত মাহিয়া সবসময় ওপাশ ফিরেই ঘুমিয়েছে, আজ এপাশ হয়ে শুইলো। নিহালও ওর দেখাদেখি এপাশ ফিরলো। দুজনেই মুখোমুখি এই প্রথম। হেসে ফেললো ওরা।
তবে সেই হাসির মাঝে লুকিয়ে ছিলো প্রচুর লজ্জা। দুজনেরই। কারও ঠোটই কথা বলার জন্য খুলছিল না সেই মুহূর্তে। এক ক্ষণে মাহিয়ার চোখে চোখ রেখেই ওর হাতের ওপর নিজের হাত আলতো করে রাখলো নিহাল। মাহিয়া চোখটা বন্ধ করে ছোট্ট একটা মিষ্টি হাসি দিল। নিহাল তা দেখে নিজের হাতটা ওর কব্জি থেকে উপরে ছুয়ে ছুয়ে ওঠাতে লাগলো।
মাহিয়ার হাসি বন্ধ হয়েছে কিন্তু চোখ খোলেনি ও। নিহাল নিজের মুখ কিছুটা আগালো মাহিয়ার দিকে। সেই মুহূর্তেই চোখ খুলে ফেললো মাহিয়া। নিহালকে কাছে আসতে দেখেই মুখ সরিয়ে ফেললো ও। লজ্জায় পুরোটা চেহারা গরম হয়ে গিয়েছিল ওর। ও চাচ্ছিলো নিহাল ওর হাত দিয়ে মাহিয়ার মুখটা ঘুরিয়ে নিক নিজের দিকে। তবে নিহাল মাহিয়ার এই আচরণটা বুঝতে পারলো না। ও মনে করলো মাহিয়া বোধহয় এখনি এসব চাচ্ছে না।
ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে নিজের জায়গায় চলে গেল নিহাল। মাহিয়া দেখে তো অবাক। তবে তার থেকে অনেক বেশী কষ্ট পেল ও। নিহাল তো ওকে বোঝে, তাহলে আজ কি হলো? সরে গেল কেন ও?
চলবে………