রুপকথা পর্ব ১১
দিন পার হতে লাগলো নিহাল আর মাহিয়ার। সেই রাতের পর সেভাবে করে আর কাছে আসেনি নিহাল। মাহিয়াও কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু এর মাঝে ইচ্ছা হচ্ছিলো ওর নিহালকে পাওয়ার। তবে বলবে কিভাবে?
দেখতে দেখতে কক্সবাজার যাওয়ার দিনটা চলে আসলো। মোট সাতাশজন যাচ্ছে ওরা। এর মাঝে নিহাল আর মাহিয়াকে নিয়ে দশটা দম্পতি আর বাকি সাতজন ব্যাচেলার। রাতের বাসে চললো ওরা।
নিহাল মাহিয়ার কাছে সেই রাতের পর আর না গেলেও এটার ইফেক্ট ওদের নতুন সম্পর্কের ওপর একটুও পরেনি। নিহালের দুষ্টুমি, মাহিয়ার লজ্জা মাখা একটু আকটু আদুরে আলাপ, সবই ঠিক আছে। শুধু রাতে একপাশে শুয়ে মাহিয়া নিহালের সেই হাতের ছোয়ার অপেক্ষায় থাকে আর নিহাল থাকে অপেক্ষায় মাহিয়ার সেই হাসি মাখা চেহারার আমন্ত্রণের যা ওকে বাধা দিবে না ওর বৌয়ের কাছে যেতে।
ভোরে বাস পৌছালো কক্সবাজার। ওরা সবাই সায়মন রিসোর্টের লবিতে পৌছালো ঠিকই তবে যেহেতু এতো সকালে চেকইন সম্ভব না তাই লবিতেই নিজেদের লাগেজ রেখে ওরা চলে গেল বিচের দিকে। প্রথমে একটা রেস্টুরেন্টে ভরপেট নাস্তা করে তারপর বালিতে নামলো ওরা।
মাহিয়া এর আগে কক্সবাজার এসেছিল ওর আত্মীয়দের সাথে। তখনো বেশ মজা হয়েছিল, তবে এবারের ট্রিপের ধার কাছ দিয়েও ছিল না সেটা। এবার সবাই মোটামুটি সমবয়সই হওয়াতে সব ধরনের হাসি ঠাট্টা আর মজা নিজেদের মাঝে শেয়ার করতে পারছিল ওরা। কোনো বড়দের নিষেধাজ্ঞা নেই, নেই কোনোকিছুর প্রতি বাধা। আর সবচাইতে বড় ব্যাপারটা হলো, মাহিয়া নিহালের সাথে একদম একা এই প্রথমবার কয়েকদিন থাকছে। দিনের চব্বিশটা ঘন্টাই কাছে পাচ্ছে ওকে। অফিস, ক্লাস, পরিবারের বাকি সদস্য কোনোকিছুকেই সময় দিতে হচ্ছে না ওদের একমাএ নিজেদের ছাড়া। তার ওপর আরও নয়টা কাপল সাথে আসায় অনেক কমন বিষয় নিয়ে আলোচনা আর হাসাহাসি মিলে এই ট্রিপ টা আনন্দে মুখরিত হয়ে আছে।
ওরা মোট দুই রাত তিনদিনের প্ল্যান করে এসেছে। প্রথম দিন পুরোটাই তারা কক্সবাজারেই ঘুরলো। বিচে গিয়ে পানিতে লাফ ঝাপ, ছবি তোলা, বিচ বাইক রাইডিং, ঘুড়ি ওড়ানো আর যা যা করা যায় কোনোকিছুই বাদ গেল না। এমনকি স্পিডবোটে করেও ঘুরে আসলো ওরা। মাহিয়া তো নিহালের পাশে বসে পুরা চুপসে ছিল সমুদ্রে থাকা পুরোটা সময়। পানির ঝাপটায় চেহারা ভিজে পুরা একাকার। তবে নিহালকে ধরে রাখতে ভালো লাগছিল বলে কোনো কমপ্লেন করে নাই মাহিয়া। কিন্তু ওদের গ্রুপের দুই জন মেয়ে বোট থেকে নামার পর নিজ নিজ স্বামীদেরকে ঝাড়ি মেরে অবস্থা খারাপ করে দিল,
-আর যদি এইসব নমুনা জিনিস আমাকে দিয়ে করাইসো তুমি, তাহলে দেইখে নিও! জান হাতে নিয়ে তীরে ফিরসি। আর লবন পানি খাইতে খাইতে মুখটা পুরা তিতা হয়ে গেসে। এই! যাও! এক্ষণ মিষ্টি ডাবের পানি আনো আমার জন্য।
বেচারা স্বামী আর কি করে! দৌড় দিল মিষ্টি পানির খোজে। বাকিরা ওদের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে পাগল।
পানিতে লাফালাফি করে আর বোটে ঢেউয়ের শ্রোতে মাহিয়ার চুল ভিজে গিয়েছিল অনেকটা। কিন্তু ওর এ ব্যাপারে কোনো নজর ছিল না। ও মেয়েদের সাথে গল্পেই মেতে ছিল। নিহাল একটু দূরেই দাড়িয়েছিল। মাহিয়ার চুল ভেজা দেখে একটা টাওয়েল নিয়ে সোজা ওর পেছনে এসে নিজ হাতেই মাথায় টাওয়েল চড়ালো ওর। মাহিয়া ঘটনার আকস্মিকতায় পেছন ফিরে তাকাতে যাবে, নিহালের ভারী গলার ধমক থামিয়ে দিল ওকে।
– একদম নড়বা না। চুপচাপ দাড়াও। চুল দিয়ে টপটপ পানি পরছে আর ম্যাডামের কোনোই খেয়াল নেই! এই ভেজা মাথাই শেষ পর্যন্ত ঠান্ডা লাগায় ছাড়তে পারে।
মাহিয়া লক্ষি মেয়ের মতন চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলো। একটুও নড়লো না নিহালের শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তা দেখে অন্য মেয়েদের মাঝে প্রথমে মিটিমিটি হাসি, পরে জোড়ে হাসির তাল উঠলো। ওদের বান্ধবি টিনা তো ওর স্বামীকে ডেকেই দেখালো,
– দেখসো, স্বামী স্ত্রীর প্রেম কাকে বলে? কি সুন্দর নিহাল মাহিয়ার চুল মুছে দিচ্ছে। চুলতো আমারো ভেজা, তুমি থাকো কই হ্যা?
এভাবেই দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো। এর মাঝে কেবল দুইবার ওরা সবাই হোটেলে গেছে তাও শুধু কাপড় চেঞ্জ করতে। রাতে বার্মিস মার্কেটের জন্য রওনা দিল সবাই। মাহিয়ার শপিং জিনিসটা খুবই প্রিয়, ওর ইচ্ছা করছিল সবগুলো দোকান ঘুরে ঘুরে দেখবে তবে নিহালের কাছে বলতে বাধ লাগলো ওর। কিন্তু মজা হলো তখন, যখন নিহাল মাহিয়াকে বাকিদের থেকে সরিয়ে নিজের সাথে নিয়ে সব দোকান ঘুরতে থাকলো। দুজনে টোনাটুনির মত নিজেদের রুমের জন্য ছোট্ট দু একটা শোপিস কিনলো।
মাহিয়ার জন্য পার্লের মালাও কিনলো নিহাল। একটা এ্যান্টিক শপ থেকে রুপার ওপর কাজ করা একটা পেন হোল্ডার কিনলো মাহিয়া, নিহালের স্টাডি টেবিলের জন্য। দুই পরিবারের জন্যও টুকটাক কিছু কিনে সব শেষে কিনলো ওরা হরেক স্বাদের আচার। নিহাল তো কেনার সাথে সাথেই প্যাকেট ছিড়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছিল। খাওয়ার সময় ওর চেহারার এক একটা এক্সপ্রেশন দেখে মাহিয়া হেসেই কুটি কুটি,
-আরে তুমি এভাবে হাসছো কেন?
-তোমার খাওয়ার ঢং দেখে হাসছি। এরকম ফেস বানাচ্ছো কেন?
– ফেস বানাতে যাবো কেন? এইটা খেয়ে দেখই না, এতো টক মিষ্টি, য়াম য়াম।
-তুমি দেখি মেয়েদের মতো করে টক আচার খাও।
-খাওয়ায় আবার মেয়ে ছেলে কিসের? যার যেটা পছন্দ তার সেটাই খাওয়া উচিত। আচ্ছা খাওয়া দিয়ে মনে পড়লো, ডিনার কই করা যায় বলোতো? কি খাবা?
– সবাই মিলে যেটা ডিসাইড করবে সেটাই। আমার কোনো পার্সোনাল প্রেফারেন্স নেই।
-আচ্ছা চলো তাহলে সবাইকে জিজ্ঞেস করি।
শপিং শেষ হওয়ার পরে সবার সাথে আলোচনা করে রাতের বেলা বার বি কিউ খাওয়ার প্ল্যান বানানো হলো। ঠিক হলো, সিগাল হোটেলের গার্ডেন বারবিকিউতে যাবে ওরা।
মনোরম পরিবেশে একটা জম্পেশ ডিনার হলো ওদের। কয়েকটা টেবিল একত্রিত করে লম্বা করে বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল যাতে সবাই একসাথে বসতে পারে। খাবারের মাঝেই এক একটা দম্পতি নিজেদের বিয়ের পরের অভিজ্ঞতাগুলো ভাগাভাগি করছিল সবার সাথে। ওদের সাথে আসা রত্না অনুজের প্রেমের আর বিয়ের গল্প শুনে অনেকেই মুগ্ধ হলো।
যখন কথা ঘুরে নিহাল আর মাহিয়ার কাছে আসলো, দুজনেরই লজ্জায় অবস্থা খারাপ। মাহিয়া মাথা নিচু করে হেসে দেয়াতে নিহাল বুঝলে উত্তরের ভার ওর ঘাড়েই পরেছে।
– বিয়ের পরের এক্সফেরিয়েন্স? ভালোই তো। আমার তো সবকিছু বিয়ের আগের মতনই লাগে। আই মিন খুব একটা ডিফারেন্স আছে কি? কিছু জিনিস বদলেছে মাত্র। আগে শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা থাকতো আর এখন নিজের চিন্তা করতেই ভুলে গেসি। অন্য একজনের ভাবনা সেই জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে। আগে আয়নায় নিজেকে দেখতাম, এখন তাতে অন্য কারও চেহারা খুজি। আগে অফিস থেকে বাসায় এসে একটা ভাল ঘুম দিয়ে তারপর ভার্সিটি আসতাম, আর এখন ঘুমটাই হারাম হয়ে গেসে আমার। এইতো তফাৎ, আর কিছু না।
মাহিয়া নিহালের প্রথম দুই একটা কথা শুনে একটু মনটা খারাপ করতে যাচ্ছিলো, কিন্তু পরে যখন নিহাল এত রোম্যান্টিকালি নিজের অনুভূতিগুলো সবার মাঝে প্রকাশ করলো, মাহিয়া আর যায় কই। এমনিতেই আগের থেকে লজ্জায় হাসছিল, এখন তাও বন্ধ হয়ে গেল। আর কতো লজ্জা পাবে ও আজ?
বাকিরা নিহালের উত্তর শুনে জোড়ে হাততালি দিয়ে উঠলো। ওর বন্ধু রাকিব বললো,
– আমি জানতাম আমার বন্ধু কত্তো রোম্যান্টিক। মাহিয়া, দেখলা কি বললো তোমাকে নিয়ে?
পাশে রাকিবের বউ মিরাও ছিল। নিজের স্বামীর পিঠে একটা চড় দিয়ে বললো ও,
– নিহালের মতন বন্ধু পেয়েও তো কিছু শেখনি।
ওর কথায় হো হো করে হেসে দিল বাকিরা। মাহিয়া তখন নিহালের দিকে তাকালো। নিহাল আঁচ করতে পেরে নিজেও দেখলো মাহিয়া কে। সেই যে কিছু একটা মাহিয়া নিহালের চোখে দেখেছিল প্রথম থেকে, যা ও এখন নিজেও দেখাতে চায়, সেটাই ফুটে উঠলো দুজনের চোখে। কারোরই মনে হয় ইচ্ছা হচ্ছিলো না একে অপরের থেকে চোখ সরাতে, তবে সরাতে হলোই অন্যদের খাতিরে।
খাবারের পাট চুকিয়ে সবাই বিচে নেমে যাওয়ার চিন্তা করলো। সায়মনের সামনের বিচটায় চলে গেল সবাই। ইতিমধ্যে যারা বাদ্যযন্ত্র এনেছে তারা রুমে থেকে সব নিয়ে আসলো নিচে। নিহালও ওর গিটার এনেছে এবার।
পূর্ণিমার রাত ছিল বোধহয়। আকাশে বিশাল বড় একটা রুপার থালার মতন চাঁদটা ঝুলে ছিল। আলো ছিল প্রচুর তাতে। সেই আলোর মাঝেই কয়েকটা বিচ চেয়ার দখল করে বসলো ওরা। শুরু হলো গানের আসর। একজনের গানের তালে তালে চললো অন্যদের গলা মেলানো। এই মজায় ওরা মেতে রইলো অনেক্ষণ। একসম তৌফিক বললো,
– আমাদের মাঝে সেলিব্রিটি সিঙ্গার থাকতে আমরা তার কাছ থেকে গান শুনছি না কেন? এই নিহাল, একটা গান ধর্।
– কি গান শুনবি বল্।
ওপাশ থেকে টিনা বললো,
-রোম্যান্টিকতো অবশ্যই। মাহিয়া তুমিই বলে দাও না কোনটা গাবে।
নিহাল সহ সবাই মাহিয়ার দিকে তাকালো।
-“তুমি আমার ঘুম” গানটা গাইতে পারবা? সৈনিক এর গান।
নিহাল একটা মুচকি হাসি দিয়ে গিটার টা ওঠালো নিজের হাতে,
তুমি আমার ঘুম.. তবু তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি না
তুমি আমার সুখ.. তবু তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধি না
তুমি আমার খোলা আকাশ.. কখনো সূর্য দেখি না
তুমি আমার দিন থেকে রাত..
আমি যে সময় জানি না…….
আমি বৃষ্টি চাই.. অবিরত মেঘ
তবুও সমুদ্র ছোঁব না
মরুর আকাশে মেঘ হবো শুধু.. ছায়া হবো না।
তুমি আমার খোলা আকাশ.. কখনো সূর্য দেখি না
তুমি আমার দিন থেকে রাত..
আমি যে সময় জানি না…….
ভালোবাসা জলের মতন.. দু’ হাত যেন ভরে না
প্রিয় মুখ তারার মতন..
দু’ চোখে গোনা যায় না ।।
তুমি আমার খোলা আকাশ.. কখনো সূর্য দেখি না
তুমি আমার দিন থেকে রাত..
আমি যে সময় জানি না……. ।।
তুমি আমার ঘুম.. তবু তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি না
তুমি আমার সুখ.. তবু তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধি না
তুমি আমার খোলা আকাশ.. কখনো সূর্য দেখি না
তুমি আমার দিন থেকে রাত..
আমি যে সময় জানি না……. ।।
গানের মাঝে মাহিয়া যেন পুরো ডুবে গিয়েছিল। নিহালকে এক নাগারে দেখতে দেখতে মনের মাঝে এটাই অনুভব হচ্ছিলো যে নিহাল মনে হয় এই গানটা ওর জন্যই গাচ্ছে। তাই বোধহয় গানটা শেষ হওয়ার পরেও একমুহূর্ত ও থমকেই ছিল। পাশের থেকে তৌফিকের আওয়াজ নড়ে উঠলো মাহিয়া।
-সাবাস বাঘের বাচ্চা। তোর গলা শিরাম রে।
মেয়েরা মাহিয়াকে ধরলো এরপর,
-মাহিয়া তুমি অনেক লাকি। বাসাতেই সিঙ্গার আছে।
অভিমানি শুরে জবাব দিল মাহিয়া,
– থাকলে কি হবে? শোনায় তো আর না।
মাহিয়ার অভিযোগে হেসে দিল নিহাল। অন্যরাও চাপা বকা দিল নিহালকে। আরও দু একটা গানের পর আড্ডা শুরু হলো তবে সবাই তাতে থাকলো না। অনেকে টায়ার্ড বোধ করছে বলে রুমে চলে গেল তো কিছু দম্পতি নিজেদের মতন বিচে সময় পার করতে একটু আলাদা হয়ে গেল।
নিহালের খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো মাহিয়ার হাত ধরে সমুদ্রের পার ধরে হাটতে। তবে মাহিয়া রাজি হবে কিনা কে জানে? তাও একটা চান্স নিল নিহাল।
– মাহিয়া আসো একটু হাটি।
নিহালকে অবাক করে দিয়ে ঝট করে উঠে দাড়ালো মাহিয়া যেন এই আমন্ত্রণের জন্যই অপেক্ষা করছিল ও। তীর ঘেসে হাটা শুরু করলো ওরা। হাটতে গিয়ে মাহিয়া ইচ্ছে করেই নিহালের হাতের সাথে নিজের হাত আলতো আলতো করে ছুইয়ে দিচ্ছিলো যাতে নিহাল না বোঝে। তবে নিহালকে মাহিয়ার এখনো অনেকটাই চেনা বাকি। মাহিয়ার নিয়ত প্রথম দুবারের ছোয়াতেই বুঝে গিয়েছিলো ও।
কিন্তু অপেক্ষায় ছিল দেখার জন্য যে মাহিয়া কি করে। যখন সাত আটবার একই জিনিস হতে লাগলো তখন নিহাল ঝট করে মাহিয়ার হাতটা ধরে ওর পাঁচটা আঙ্গুলের মাঝ দিয়ে নিজের আঙ্গুলগুলো ঢুকিয়ে মুঠ করে নিল। মাহিয়া নিহালের দিকে তাকাতে ওর হাসি দেখেই বুঝতে পারলো যে নিজে ধরা খেয়েছে। ভাগ্যিস রাতের সময় এটা, আশপাশে বেশি আলো নেই, নয়তো মাহিয়ার চেহারার লাল নিল রঙ নিহাল দেখে ফেলতো। নিহাল আরেকটু জোরে চাপ দিয়ে ধরলো মাহিয়াকে,
– তুমি কি আসলেই চাও আমি তোমাকে বাসায় গান শোনাই?
মাহিয়া অন্যদিকে ফিরে হেসে দিল এই প্রশ্নে। নিহাল আবার জিজ্ঞেস করলো,
– আচ্ছা আজকের গানটা কেমন লাগলো? সবাই প্রশংসা করলো এক তুমি ছাড়া।
মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো মাহিয়া,
-অনেক সুন্দর আওয়াজ তোমার। খুব ভালো লেগেছে শুনতে। আমি তো হারিয়েই গিয়েছিলাম গানের মাঝে।
-আসলেই ভাল হয়েছে?
– হ্যা, আসলেই।
– আর যদি বলি তোমাকে চিন্তা করেই গানটা গেয়েছিলাম তাহলে? তাহলে কি আরেকটু ভালো হয়েছে বলবা?
দাড়িয়ে পড়লো মাহিয়া। নিহাল এসে ওর সামনে মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো।
– মাইন্ড করলা?
মাহিয়া শুধু মাথা নিচু করে, নেড়ে দিয়ে না বুঝিয়ে দিল। নিহাল সুন্দর একটা হাসি মুখ রেখেই বললো,
– তোমার জন্যই গাচ্ছিলাম গানটা আমি। আই ডেডিকেট ইট টু ইউ মাহিয়া।
মাহিয়ার সেই মুহূর্তে খুশির কোনো ঠিকানা ছিল না। নিহালকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরলো ও। নিহালের বুকে মাথা দিয়ে ওর কোমরে হাত রাখলো। নিহাল খুশি আর আকস্মিতায় বোবা হয়ে গিয়েছিল সেই মুহূর্তে। তবে এর মাঝেও নিজের স্ত্রীকে আলিঙ্গনে বেধে ফেলতে ভুললো না ও।
পাশে সুবিশাল সমুদ্র আর আকাশে পুর্ণিমার চাঁদকে সাক্ষি রেখে একে অপরের মাঝে হারিয়ে গেল দুজন।
চলবে….