রুপকথা পর্ব ১৪
মাহিয়ার চোখের পাতায় স্পষ্ট লজ্জা দেখতে পেল নিহাল। ওর ঠোটে রাখা মাহিয়ার হাতটাও একটু কাঁপছিল কি?
নিজেকে মাহিয়ার চেহারার ওপর থেকে হাল্কা সরালো নিহাল। ওর কোমর ছেড়ে দিয়ে হাতটা ধরলো। সামনে রাখা চেয়ারটায় ওকে বসিয়ে দিয়ে নিজে ওপাশের চেয়ারে বসলো। তবে মাহিয়ার থেকে এক সেকেন্ডের জন্যেও চোখ সরালো না। চুপচাপ ওর প্রত্যেকটা কাজ নিখুত ভাবে দেখতে লাগলো। মাহিয়া নিহালের চাহনিতে লজ্জায় মিশে যাচ্ছিলো পুরোপুরি। কিন্তু আজ ওকে কোনো কিছুতেই থামানোর সাধ্য মাহিয়ার নেই। ও নিজেও কি আসলে নিহালকে থামাতে চায়? একদম না। কিন্তু এই দৃষ্টি যে ওকে মেরে ফেলছে!
নিহাল মাহিয়াকে দেখা ছাড়া আর কোনো কিছুই করছে না। বাসায় থাকলে ও মাহিয়ার পাতে সবসময় খাবার বেড়ে দেয়। আজ কোনো চামচ পর্যন্ত ধরছে না ও। মাহিয়া নিজ থেকে চুপচাপ বেড়ে দিল দুইজনকে। তারপর মাথা নিচু করে ও খেতে বসলো। নিহাল খুবই মুখরোচক খাবার অর্ডার দিয়েছে তবে মাহিয়া একটুকুও খেতে পারছে না। কেমনে খাবে? সামনে বসে এরকম নির্লজ্জের মতন কেউ তাকিয়ে থাকলে কিছু খাওয়া সম্ভব? হ্যা, এখনো দেখছে। উফফ! আর সহ্য হচ্ছে না।
কোনোমতে প্লেটের খাবার পেটে পুরে হাত ধোয়ার বাহানায় টেবিল ছাড়লো মাহিয়া। যাওয়ার সময় দেখে গেছে নিহালের খাবারও প্রায় শেষের দিকে। ওয়াশরুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়লো ও। আবার হেসেও ফেললো মিষ্টি করে। এই রাতটার জন্য অনেক অপেক্ষায় ছিল ও। নিহালেরও বুঝি একই অবস্থা।
হাত ধুতে ধুতেই এক নতুন চিন্তায় মগ্ন হলো মাহিয়া। আচ্ছা, নিহালকে কি ও ভালোবেসে ফেলেছে? ইস শি ইন লাভ উইথ হিম? আরে? এই প্রশ্নটা এইকয়দিন মাথায় আসে নি কেন? ভালো তো নিশ্চয়ই বেসেছে মাহিয়া নয়তো নিজেকে নিহালের হাতে এভাবে দেওয়ার ইচ্ছা কখনোই হতো না ওর। হ্যা নিহালকে ভালোবাসে ও।
মাহিয়া লাভস্ নিহাল।
এই অনুভূতির প্রতিচ্ছবি আয়নায় দেখতে পেল মাহিয়া। খুশিতে ভোরে ওঠা এই চেহারা আজ অনেকদিন পর খুব পছন্দ হলো ওর। নিহালকে এখনি বলতে ইচ্ছা করছে। দেখতে ইচ্ছা করছে ওর চেহারার ভাব যখন ও জানাবে নিহালকে যে মাহিয়া ওর হতে চায়। শুধু নিহালের মাহিয়া হয়ে থাকতে চায় চিরজীবন।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মাহিয়া দেখলো নিহাল বারান্দায় দাড়ানো। ওর পায়ের আওয়াজে ফিরে তাকালো নিহাল। এক হাত বাড়িয়ে দিল মাহিয়ার দিকে। হাত ধরতেই কাছে টেনে আনলো ওর।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ চলছে। এবার শীতটা একটু ভালো ভাবে পরা শুরু করেছে। রাতে তো বেশ শীত লাগে। তার ওপর এই পাতলা শাড়িতে বারান্দার খোলা পরিবেশে রীতিমতো কেঁপে উঠলো মাহিয়া। এই মুহূর্তে শাল টার কথা মনে হলো ওর। ইশ! ফ্যাশন করতে গিয়ে শেষে ঠান্ডাই না লেগে যায়। পাশে দাড়ানো নিহাল ওর কাপুণির গুঞ্জনও অনুভব করতে পারছিল। তাই একমুহূর্তও না অপেক্ষা করে পেছন থেকে নিজের মাঝে জড়িয়ে নিল মাহিয়াকে। নিহালের গায়ের উষ্ণতা মাহিয়ার মনে আরামের পরশ ছুইয়ে দিল। অনেক্ষণ এভাবেই রইলো দুইজন। রাতের নীরবতার মাঝে মিশে যাচ্ছিলো বোধহয়।
হঠাৎ মাহিয়ার কাধে নিজের চেহারাটা বসিয়ে ওর কাছে আসলো নিহাল।
-জানো, বিয়ের পর থেকেই আমার কতোবার ইচ্ছা হয়েছে তোমাকে নিয়ে আমাদের রুমের বারান্দায় দাড়াই। নিজের আবেশে মিশিয়ে তোমার সাথে অনেক গল্প করি। সারা রাত তোমাকে এভাবেই নিয়ে থাকি। কিন্তু সামনাসামনি বলা আর হয়ে উঠেনি। যদি তুমি মাইন্ড করো বলে। আজ এতো দিন পর আমার এই শখ্টা পূরণ হলো।
মাহিয়া ঘুরে নিহালের বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
– এখন থেকে তুমি রোজ রাতে আমাকে এভাবেই জড়িয়ে রেখে গল্প করবা বুঝছো? একদিনও মিস গেলে দেইখো।
মাহিয়ার এই আদুরে আবদারে হেসে উঠলো নিহাল,
– ঠিকাছে ম্যাডাম। যেটা আপনার হুকুম। তবে কিছু আবদার যে আমারও আছে। সেটা কে পূরণ করবে?
নিহালের কথায় মাথা উঠিয়ে ওর চোখে চোখ রাখলো মাহিয়া। ওর চেহারা নিজের দুহাতের মাঝে ভরে নিল নিহাল। চোখের সামনে হেলে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল। তারপর নিজের কাছে এনে মাহিয়ার ঠোটে নিজের অধিকারের ছোয়া বুলিয়ে দিতে শুরু করলো ও। মাহিয়াও মিশে গিয়েছিল নিহালের মাঝে। ওর কাধটা জড়িয়ে ধরে ধীরে সুস্থে নিহালের থেকে আদর গ্রহণ করতে থাকলো ও। এক সময় নিহাল মুখ ওঠালেও আলিঙ্গন থেকে সরালো না নিজের স্ত্রীকে। চোখটা বন্ধ মাহিয়ার তবে ওর কাঁপা ঠোঁটে হাসি। খুব বেশী সুন্দর লাগছে ওকে এই মুহূর্তে। তবে সুন্দরের চাইতেও বেশী নিষ্পাপ লাগছে নিহালের কাছে। আবার ফিরে আসা চুলগুলো চোখের ওপর থেকে সরাতেই চোখ খুলে গেল মাহিয়ার। নিহালকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় চুপসে গেল ও। ওর কানের কাছে ঠোট নিয়ে গেল নিহাল,
– মাহিয়া ইউ আর দা মোস্ট বিউটিফুল ওমেন আই হ্যাভ এভার সিন ইন মাই লাইফ।
বলেই ঠোটটা আরও নিচে নামালো ও, ডোবালো মাহিয়ার কাধে। চোখ আবার বন্ধ হয়ে গেল মাহিয়ার। সারা গায়ে আবার কাপুনি উঠলো, তবে সেটা শীতের না। নিহাল ওকে এক এমন সুখের পরিবেশে আবদ্ধ করে রেখেছে যা ওর কাছে একদমই নতুন। এই অনুভূতির সাথে আগে ওর পরিচয় হয়নি। তবে আজ পরিচিত হয়ে ভরে যাচ্ছে মনটা। মনে হচ্ছিলো যেন এই মুহূর্তগুলো থমকে যায় ওদের মাঝে। কেউই কাউকে ছাড়তে চাচ্ছিলো না। হঠাৎ এই ঠান্ডা হাওয়া ওদের কাছে একটুও চিন্তার কারণ রইলো না। নিজেদের উষ্ণতাই যথেষ্ট ছিল।
কতক্ষণ এভাবেই বারান্দায় সময় কাটলো জানে না ওরা তবে থাকতো বোধহয় আরও অনেক্ষণ যদি রুমের মধ্যে থেকে মোবাইলের রিং না বাজতো। বেশ রাত হয়েছে। আশপাশ নিরবতায় ছাওয়া। ওরাও কোনো কথা বলছিল না। এর মাঝে রিংটোনটা খুব কানে লাগলো ওদের। মেসেঞ্জারে ফোন এসেছে বিধায় কার ফোন বাজছে বোঝা গেল না। বিরক্তি প্রকাশ করলো নিহাল। মাহিয়া হেসে ওর কাছ থেকে সরতে গেলেই বাধা দিল। হেসে বললো মাহিয়া,
– এতো রাতে ফোন এসেছে? জরুরীও তো হতে পারে। দেখি না কার।
– যার হবে তাকে আমি এখন বদদোয়া দিব বুঝছো। আমাদের এতো সুন্দর সময়টার মাঝে ব্যাঘাত ঘটালো।
খিলখিল করে হেসে দিল মাহিয়া। তারপর ফোনের দিকে পা বাড়ালো। ইতিমধ্যে একবার কেটে যেয়ে আবার রিং হওয়া শুরু হয়েছে। কার ফোনে বাজছে? ও আচ্ছা নিহালের। আচ্ছা ওকে দিয়ে আসি। এই ভেবে যেই মাহিয়া টেবিল থেকে ফোনটা ওঠাতে যাবে স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নামটার দিকে চোখ আটকে গেল ওর। ঝটকা খেল মাহিয়া। স্থির হয়ে পড়লো একদম। শক্ত হতে লাগলো ওর মাংসপেশি।
অথই ফোন দিয়েছে নিহালকে।
নিহালের বেস্ট ফ্রেন্ড অথই।
শাহেদের বেস্ট ফ্রেন্ড অথই।
শেষের নামটা আসতেই শিউরে উঠলো মাহিয়ার সারা শরীর। আগের সব স্মৃতি একে একে চোখের সামনে দ্রুত ভেসে উঠলো ওর। থামানোর সময় পেল না ও। সেই যন্ত্রণাগুলো আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।
নিহাল বারান্দায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল মাহিয়ার জন্য। দেরী হওয়াতে রুমে উকি দিল । মাহিয়া ওকে পিঠ করে দাড়ানো। দাড়িয়েই আছে। নড়ছে না একদম। ওইদিকে টেবিলে রাখা ফোনটা তৃতীয় বারের মতন বেজে উঠলো। কোনো একটা সমস্যা আঁচ করতে পেরে নিহাল রুমে ঢুকে মাহিয়ার পিছে যেয়ে দাড়ালো। পাশ দিয়ে হাত এগিয়ে ফোনটা নিল ও। অথইয়ের ফোন দেখে খুব খুশি হলো।
– আরে অথই কল করসে? গত তিন মাস ধরে কথা হয় না ওর সাথে আমার। যাক্ শেষ পর্যন্ত আমার কথা মনে পরছে ফাজিলটার। হাহা। তবে এখন ওর ফোন ধরার কোনো মানে হয় না। এখন ওর কেন প্রেসিডেন্টের ফোন আসলেও ধরবো না আমি।
শেষ কথাগুলো খুব আবেগের সাথে বলে মাহিয়ার হাতটা ছুতে গেল নিহাল। কিন্তু ওকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে ঝটকা মেরে সরে গেল মাহিয়া। নিহাল মনে করলো মাহিয়া বোধহয় আগের মতন লজ্জা পেয়েই সরে গেছে। তাই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওর হাতের আঙ্গুলগুলো ধরে ফেললো। সাথে সাথেই আবার মাহিয়া হাতটা ছাড়িয়ে নিল ওর। নিহালের কাছ থেকে একটু দূরে যেয়ে দাড়ালো। এবার ওর চেহারা দেখলো নিহাল। কোনো নমনীয়তা ছিল না সেখানে। বরঞ্চ এক ধরণের ভীতির উপস্থিতি পেল নিহাল। মাহিয়ার কাছে গেল ও। নরম সুরে কথা বললো,
– কি হয়েছে মাহিয়া? কোনো সমস্যা? আমার বউ এতোক্ষণ আমার সাথে এতো রোমান্টিক ছিল। হঠাৎ কি হলো তার?
– নিহাল প্লিস লিভ মি এলোন।
– কেন? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? আসো, এখনি সব ঠিক করে দিচ্ছি আমি।
এই দুষ্ঠুমি করে নিহাল মাহিয়ার ঠোটের কাছে আবার আসতে চাইলে মুখ ফিরিয়ে নিল মাহিয়া।
– দয়ার বিয়েতে এই সব এর কোন জায়গা নাই নিহাল। তোমার এইসব করার কোনো মানে হয় না। আমাকে ছেড়ে দাও প্লিস।
নিহাল পিছিয়ে গেল। কপাল কুচকে দাড়ালো সামনে। মাহিয়ার কথার আগামাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। কি বলছে ও? কোন দয়ার বিয়ের কথা বলছে? স্পষ্ট করে মাহিয়াকে প্রশ্ন করলো ও,
-কি বলছো তুমি? কিসের দয়ার বিয়ে? কি করা মানায় না আমার?
– আমার সাথে তোমার এই মিলন নিহাল। আমাদের মাঝে এটা মানায় না। তুমি যেই মেয়ের ওপর দয়া করে তাকে বিয়ে করেছ তার সাথে এসব করার কথা না তোমার।
মাহিয়া কথাগুলো বলতে বলতেই হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। নিহালের মাথা সম্পূর্ণ রুপে ঘুরছে তখন। শীতল কন্ঠে মাহিয়াকে জিজ্ঞেস করলো ও,
– তোমাকে আমি দয়া করে বিয়ে করেছি, এটা তোমাকে কে বলেছে?
মাহিয়া প্রথমে উত্তর দিতে পারলো না। এক নাগারে কেঁদে যাচ্ছিলো ও। কিন্তু নিহাল সেটার তোয়াক্কা করলো না। আরও প্রেশার দিয়ে জিজ্ঞেস করলো ও।
– হু টোল্ড ইউ দিস মাহিয়া? টেল মি রাইট নাও।
– অথই।
-অথই বলেছে? তোমাকে?
– হ্যা।
– কিন্তু অথইয়ের সাথে তোমার কবে কথা হইসে?
– মা যেইদিন আমাদের বাসায় তোমার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন, আমি আড়াল থেকে সব শুনেছিলাম। পরে অথইকে ফোন দিয়েছিলাম আমি জানার জন্য যে তুমি কেনো প্রস্তাবটা পাঠালে। তখন ও জানিয়েছে যে এই বিয়ে তুমি আমার ওপর সিম্প্যাথি জাতিয়ে করছো। শাহেদের সাথে যা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে করছো। আমার জীবনের একটা গতি দেওয়ার জন্য করছো। কি…
-ওয়েট মাহিয়া। তোমার আর শাহেদের ঘটনা অথই জানে না। ও তখন দেশেই ছিল না। আর আমি ওকে এই নিয়ে কিছুই বলিনি।
– তুমি বলোনি কিন্তু তুমি ছাড়া অথইয়ের যে আরেকটা বেস্ট ফ্রেন্ড আছে তা কি ভুলে গেছ? শাহেদ বলেছে অথইকে, তবে ওর নিজের বানানো একটা চিপ ভার্সন। অথই বিশ্বাস করেছে ওর কথা।
পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে ততক্ষণে নিহালের,
– অথই আর কি বলেছিল তোমাকে?
– যতটুকু বলেছিল আমার জীবনকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল সেই দিন। কিন্তু জানো নিহাল, তুমি আমাকে নিয়ে এরকম কিছু ভাববা আমি চিন্তাতেও কখনো আনতে পারি নি। আমার ওপর তোমার দয়া দেখানোটা কি খুব জরুরী ছিল?
– দয়া? আমি তোমাকে দয়া দেখিয়ে বিয়ে করেছি?
চিৎকারে ফেটে পড়লো নিহাল।
– ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া ওয়াট ইউ আর সেইঙ্গ মাহিয়া? যেই আমি, তোমাকে প্রথম বসন্তের দিনে দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম, সেই আমি তোমার ওপর দয়া করেছি?
যেই আমি অনার্সের শেষ সেমিস্টারে এসে প্রত্যেকটা দিন একটু একটু করে তোমার প্রেমে মগ্ন হয়ে যাচ্ছিলাম সেই আমি তোমার ওপর সিম্প্যাথি জাগিয়েছি?
-যেই আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে নিজের জীবনসঙ্গী করার কথা চিন্তা করতে পারি নাই, সেই আমি তোমার জীবনের গতি ঠিক করার জন্য তোমাকে বিয়ে করবো? আর ইউ ফ্রিকিং ম্যাড মাহিয়া?
যেই দিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম, সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত, এখন পর্যন্ত আমি তোমাকেই ভালোবেসেছি। ইয়েস ড্যামইট, আই লাভ ইউ। আই এম ক্রেজি ফর ইউ। কোন লেভেলে তোমাকে ভালোবাসি এটার আইডিয়া আমার নিজেরও নাই। আর তুমি বলছো এই বিয়ে দয়ার ওপর হয়েছে?
আমার এই ভালোবাসা দেখেই আমার মা আমাকে না জানিয়েই তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল। তোমাকে কোনো দয়ার পাত্র মনে করা হয়নি মাহিয়া। কিন্তু তুমি যদি নিজে এসব মনে করে বসে থাকতে চাও, তাহলে তা করতে পার। আই ডোন্ট কেয়ার।
এক নাগারের চিৎকারে নিহাল নিজের ভেতরের সবকিছু প্রকাশ করে দিল মাহিয়ার সামনে। হাতের রগ টান খেয়ে গেছে ওর। চোয়াল পাথরের মতন শক্ত হয়ে গেছে। চোখ টকটকে লাল। মাহিয়া ওর অবস্থা দেখে ভয়ে পেয়েছে অনেক আগেই। চুপশে ছিল এতোক্ষণ ও। তবে নিহালের প্রত্যেকটা কথা কানে পৌছেছে ওর। সব শুনেছে ভালো করে।
নিহাল একমুহূর্ত সেই রাগান্বিতো দৃষ্টিতেই মাহিয়াকে দেখলো। তারপর রুম থেকে গটগট করে বের হয়ে চলে গেল। পেছনে দরজাটা এমন জোরে লাগিয়ে গেল যে কেঁপে উঠলো মাহিয়া। একা হয়ে গেল ও।
ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো মাহিয়া। দু চোখ দিয়ে নিঃশব্দে পানি পড়ছে ওর গাল বেয়ে। নিহালের কথাগুলো বার বার ঘুরছে মাথায়। ছেলেটা এতকিছু মনের ভেতরে নিয়ে ছিল? ও এতো ভালোবাসে মাহিয়াকে? বিয়ের আগেও তাহলে এই অনুভূতি ছিল ওর। তবে মাহিয়া কখনোই বোঝেনি। বুঝতে দেয়নি ওকে নিহাল। যেই মানুষটাকে আজ ও ভালোবাসে সেই মানুষটা না জানি কতো দিন ধরে মাহিয়ার ভালোবাসার অপেক্ষায় আছে। আর কিছু না জেনে, না বুঝে আজ এতো কষ্ট দিল নিহালকে ও।
উঠে দাড়ালো মাহিয়া। চোখ মুছে, কিকার্ড নিয়ে ছুটে রুম থেকে বের হলো নিহালের খোজে। আর দুইজনের মাঝে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবোঝির অবকাশ রাখবে না ও। নয়তো আসলেই হারিয়ে ফেলতে পারে ওর ভালবাসাকে মাহিয়া। নিহালকে ওর আপন করতেই হবে।
ওদের ফ্লোরেই পুলটা। সেখানেই পাওয়া গেল নিহালকে। পুলের এক কোনার রেলিংএ ভর দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো ওকে মাহিয়া। মাঝ রাত পার হয়ে গেছে তাই কেউই নেই এখানে ওদের দুইজন ছাড়া। নিহালের কাছে দৌড় দিল মাহিয়া। একদম যখন কাছে এসে গেছে তখন বোধহয় ওর আওয়াজ পেয়েছিল নিহাল। ঘুরে দাড়াতেই একদম ওর বুকে যেয়ে আছড়ে পড়লো মাহিয়া। লেপ্টে দিল নিজেকে নিহালের মাঝে। হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়লো।
– আই এ্যাম ভেরি সরি নিহাল। আমি এগুলা কিছুই জানতাম না। সেই সময় নিজেই এতো আনস্টেবল ছিলাম যে অথই যা বলেছে বিশ্বাস করে ফেলেছি। আর বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত তুমি আমাকে যতটা খুশি দিয়েছো তা পেয়ে আমি সেইসব পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিলাম। কিচ্ছু মনে ছিল না আমার। অথই এর নামটা পড়ে আজ এতদিন পরে সব মনে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আমি সম্পূর্ণ ক্লিয়ার। আই ট্রাস্ট ইউ। আই লাভ ইউ নিহাল। আই লাভ ইউ আলট।
নিহালের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তাকালো ওর দিকে মাহিয়া। নিহালের চমকে যাওয়া চেহারাটা দেখে লাজুক হাসি দিল ও। চোখের পানি মুছতে মুছতেই বললো,
– আজ আমি তোমাকে এমনিতেও এই কথাটা বলতাম। জানিনা কখন, কিভাবে তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিহাল। আই হ্যাভ বিকাম ক্রেজি এবাউট ইউ টু। পেছনে যা হয়েছে, যেভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে সব ভুলে চলো না নতুন ভাবে নিজেদের জীবনটা শুরু করি? তুমি আমার সাথে আছ নিহাল?
মাহিয়াকে আর কোনো কিছু বলার সুযোগ নিহাল দিল না। এক হাতে দিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে আরেক হাত দিয়ে ওর চুলে আঙ্গুল ডুবিয়ে মাহিয়ার ঠোটটা নিজের দখলে নিয়ে নিল একেবারে। আর এইবার কোনো আলতো পরশ বোলালো না ও। তবে মাহিয়াও এই পাগলামির অপেক্ষাতেই ছিল। তাই নিহালের সাথ ও ছাড়লো না। ফিরোজা জলের চাদরের পাশে আর অন্ধকারের বিশালতার মাঝে একে অপরের ভেতর মিশে রইলো দুইজন।
চলবে….