রুপকথা পর্ব ১৭
সন্ধ্যায় নিহাল বাসায় আসার পর মাহিয়া অথইয়ের সাথে ওর দেখা হওয়ার সব ঘটনাই জানালো। পুরোটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল নিহাল। কারণ শাহেদের বাসায় ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে মাহিয়া কখনো কথা ওঠায় না। এমনকি নিহালের সাথেও কিছুই শেয়ার করেনি ও। সেই রাতে মাহিয়া তনুকে সব খুলে বলার পর, তনু যা নিহালকে বলেছে ততটাই ও জানে।
– তুমি অথইকে সব বলে দিয়েছো? কিন্তু কেন?
– কারণ এটার দরকার ছিল নিহাল। শি মাস্ট নো বোথ সাইডস অফ দা স্টোরি। আমি ওকে কোনো ফোর্স করি নাই। ওকে সব জানানোর পর ওকেই সব বিবেচনা করতে বলেছি।
– কিন্তু, মাহিয়া এই কথাগুলো তুমি কখনো ওঠাও না। আই মিন, তোমার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হয়েছে…
হেসে দিল মাহিয়া,
– কষ্ট কিছুটা হয়েছিল তবে যেটা ঠিক আমি সেটাই করেছি। আর এই মুহূর্তে অথইকে বাঁচানোর আর কোনো পথ আমার মাথায় আসেনি। তোমার জন্য অথই অনেক ইম্পর্টেন্ট, এই কারণে ও আমার কাছেও ইম্পর্টেন্ট। ওকে ঠিক পথে আমাদের আনতেই হবে। যে ভাবেই হোক।
নিহাল জড়িয়ে ধরলো মাহিয়াকে। মুখ দিয়ে কিছুই বললো না, তবে মাহিয়া বুঝে নিল ওর মনের ভাবনা। স্বামীকে সান্ত্বনা দিল ও।
এর মাঝে আরও কিছুদিন পার হলো। নিহালের বেশ টেনশন হতে শুরু করলো। অথইয়ের সাথে মাহিয়ার সেইদিন দেখার পর আর কোনো খবর নেই ওর। মার্চের দুই তারিখ এসেও চলে গেল কিন্তু এঙ্গেজমেন্টের কোনো খবর পেলো না ওরা। কয়েকবার নিহাল ফোন দিয়েছিল অথইকে কিন্তু ফোন বন্ধ পেয়েছে। অথইয়ের ফ্যামিলি কাজী পাড়া থেকে বারিধারায় শিফ্ট হয়েছে, অথই জানিয়েছিল নিহালকে লন্ডনে থাকতে তবে পুরো ঠিকানাটা জানানো হয় নি। নিহাল কোনো পথ পাচ্ছিলোনা অথইয়ের সাথে যোগাযোগ করার।
এদিকে গত তিনচার দিন ধরে মাহিয়াকে নিয়েও একটু ডিস্টার্ব নিহাল। মেয়েটার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। প্রচুর গ্যাস ফর্ম হচ্ছে বলে খাবার ঠিক ভাবে খেতে পারছে না। রাতে ঘুমেরও সমস্যা হচ্ছে ওর। নিহাল অনেকবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওকে সাধলো কিন্তু মিডটার্মের কারণে পেছালো মাহিয়া। ইভেন নিজের বাবা মায়ের কাছেও গেল না ও দেখাতে। এসব নানান ঝামেলা মাথায় নিয়েই দিন কাটতে লাগল ওদের।
মার্চের শেষ সপ্তাহ চলছে। শুক্রবার ছিল সেইদিন। এইদিনটা নিহাল একটু বেশী সময় ধরে ঘুমায়। মাহিয়া উঠতে চাইলে ওকেও ধরে রাখে। তবে উঠে যায় মাহিয়া। এইবারও উঠলো। হাতমুখ ধুয়ে রুম থেকে বের হয়ে নাস্তার আয়োজন দেখতে গেল।
কিচেনেই ছিল মাহিয়া যখন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো নিহাল।
-মাহিয়া জলদি রেডি হও। আমাদের এক্ষণি হাসপাতালে যেতে হবে।
হাসপাতালের নাম শুনে চমকে উঠলো মাহিয়া। নিহাল অলরেডি চলে গেছে রুমে। ওর পেছনে দৌড় দিল।
– কি হয়েছে? হাসপাতালে কেন?
– অথই ভর্তি।
-কেন?
– কিছুই জানি না তেমন। তবে ভালো কিছু তো না ফর শিওর। রেডি হও। জলদি।
পনের মিনিটের মধ্যে গাড়িতে উঠলো দুইজন।
– কিছুক্ষণ আগে ফোন পেলাম অথইয়ের। ফোন রিসিভ করতেই শুনলাম ওর কান্নার আওয়াজ। বেশী কিছু বলতে পারলো না। শুধু হসপিটালের নামটা জানাতে পারলো।
হাসপাতালে যেয়ে অথইয়ের কেবিন খুজে পেল ওরা। রুমে ঢুকে চমকে গেল দুইজন। হসপিটাল বেডে মুমূর্ষু অবস্থায় শুয়ে আছে অথই। চোখ বন্ধ ওর। ঘুমিয়ে গেছে। একদিকে স্যালাইন চলছে। অথইয়ের মা বসে ছিলেন পাশে। নিহালকে দেখে ছুটে এলেন ওর কাছে। হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললেন তিনি। নিহাল তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিল। মাহিয়া পরে তাকে ধরে নিয়ে বসিয়ে, পাশে বসলো তার।
কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই অথইয়ের মায়ের কাছ থেকে এক ভয়াবহ ঘটনার খবর পেল নিহাল আর মাহিয়া। শাহেদ অথইকে রেপ করেছে। দুই সপ্তাহ আগের ঘটনা এটা। এক সপ্তাহ আইসিইউতে রাখার পর কেবিনে শিফ্ট করা হয়েছে অথইকে তবে এখনো খারাপ অবস্থা ওর। তাই রিলিস হতে সময় লাগবে।
এই প্রথম নিহালের চোখে পানি দেখলো মাহিয়া। গা কাটা দিয়ে উঠলো ওর। নিহালের আওয়াজ পুরাই পাল্টে গেছে। বরফ ঠান্ডা আওয়াজে জিজ্ঞেস করলো,
– আন্টি কিভাবে এসব…?
অথইয়ের মা ফোপাতে ফোপাতেই বললেন,
– বাবা, শাহেদ আর অথইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তুমি তো জানোই। এঙ্গেজমেন্টের তারিখও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার তিনদিন আগে অথই বিয়েটা ভেঙে দেয়। কারণ হিসাবে শাহেদের খারাপ ক্যারেক্টারের কথা জানায় ও। শাহেদদের বাসায় জানানোর পর ওরা হন্তদন্ত হয়ে বাসায় আসে। অথইকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে। শাহেদ আলাদা ভাবেও অথইয়ের সাথে কথা বলেছিল।
কি কথা হয়েছে ওদের মাঝে জানি না তবে রুম থেকে বের হওয়ার পর ওদের চেহারা দেখেই বোঝা গিয়েছিল যে ব্যাপারটা আরও খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে। তুমিতো আমার অথইকে চিনোই। রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না ওর। কি বলসে শাহেদকে কে জানে। অনেক রেগে গিয়েছিল শাহেদ। ধমকি দিয়ে বের হয়েছিল বাসা থেকে। আমাদের তখনি ভুল হয়েছে বাবা। ওর ধমকি কে আমলে নেই নাই। মনে করসি এতো বড় পরিবারের ছেলে, নিজেদের রেপুটেশন রক্ষার্তে চুপ থাকবে। কিন্তু…….
আবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। মাহিয়া নিজের বুকে টেনে নিল ওনাকে। পাথর হয়ে গিয়েছিল নিহাল। কিছুক্ষণ পর আবার শুরু করলেন অথইয়ের আম্মু।
– দুই সপ্তাহ আগে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আমরা। অথইকে অনেক সাধলাম, কোনোভাবেই যেতে রাজি হলো না ও। এঙ্গেজমেন্ট ভাঙ্গার পর থেকে বাইরের মানুষের সামনে বেশী যাইতো না ও। সবার উল্টা পাল্টা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পছন্দ করতো না। আমরাও আর জোর করি নাই। কিন্তু মায়ের মন তো, কেন যেন অনুষ্ঠানে মন বসছিল না আমার। কোনো মতে খেয়ে হাল্কা পাতলা সৌজন্যতা পালন করে বাসায় ফিরলাম। এসেই দেখি ফ্ল্যাটের মেইন দরজা খোলা। ভেতরে দৌড় দিলাম আমরা।
আমাদের বাসায় একটা কাজের মেয়ে আছে, শেফালি। ওর আর অথইয়ের নাম ধরে চিৎকার করলাম। রান্নাঘরের দরজা বন্ধ, ওই পাশ থেকে শেফালীর আওয়াজ পেলাম। কাছে যেয়ে দেখি দরজাটা বাইরে থেকে লাগানো। খুলতেই শেফালী আমাকে জড়ায় ধরে চিৎকার করে শুধু অথইয়ের নামটা নিল। ওকে কোনো মতে বসিয়ে হন্য হয়ে অথইয়ের রুমে গেলাম আমরা। যেয়ে যা দেখতে পেলাম, বাবা, আমার জীবনে এতো ভয়ংকর পরিস্থিতি আমি দেখি নাই। কোনো মায়ের যেন তা দেখতে না হয়।
এইবার অথইয়ের মা এতো জোরে আর্তনাদ করলেন যে নিহাল মাহিয়ার ওনাকে সামলানো কষ্ট হয়ে পড়লো। এতো আওয়াজের মাঝে ঘুমটা ভেঙে গেল অথইর। নিহাল মাহিয়াকে দেখতে পেল ও। মাহিয়াকে আন্টির কাছে রেখে অথইর পাশে আসলো নিহাল। ওর এক হাত ধরে আরেক হাতে মাথা বুলিয়ে দিয়ে হাসলো,
– কেমন আসিশ দোস্ত?
কাঁপা স্বরে বললো অথই,
– ভালো। তোকে ফোন দিতেই তোরা চলে এলি?
– কি বলছিশ? আসবো না কেন? তোর এখন কেমন লাগছে? আচ্ছা শোন কথা বলিস না বেশী। রেস্ট নে।
নিহালের হাতটা চেপে ধরলো অথই,
– নিহাল শোন? মাহিয়া কে একটু ডাক না আমার কাছে।
ইশারায় মাহিয়াকে কাছে আসতে বললো নিহাল। মাহিয়া আসলে নিহাল সরে যেয়ে ওকে জায়গা করে দিল। অথই মাহিয়ার হাতটা ধরে বললো,
– থ্যাঙ্কস আলট আপু। তোমার জন্য এই বিয়েটা থেকে বেঁচে গেলাম আমি। তোমার কথাগুলো যখন ওকে জানালাম, মুখে তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করলেও ওর চোখে ভয় দেখতে পেয়েছিলাম আমি। তখনি সব বুঝতে পেরেছিলাম। বিয়ে ভেঙে দিলাম তখনি। ওই রাতে ও এসেছিলো মানাতে আমাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের হিংস্রতার প্রমাণ দিয়ে গেল। আমি ওর আসল চেহারাটা দেখতে পেরেছিলাম সে সময়। সেই চেহারা যেটা তুমি আমাকে বর্ণনা দিয়েছিলে। ওই শয়তানটা আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে ঠিকই তবে আমি যদি মেনে গিয়ে ওর সাথে বিয়ে করতাম তাহলে আমার এই ক্ষতি ও বারে বারে করার সুযোগ পেত। কারণ নিজের প্রতি না ওর কোনো কনট্রোল আছে আর নাহি আছে মেয়েদের প্রতি সন্মান।
নিহাল পাশ থেকে শুনছিল সব। দাঁত খিচিয়ে বললো ও,
– এইবার ওই হারামিকে আমি কোনোভাবেই ছাড়বো না।
অথই তাকালো নিহালের দিকে। শুকনা ঠোটেও বিজয়ের হাসি,
– এবার ছাড়া লাগবেও না দোস্ত। ধরা পরেছে জানোয়ারটা পুলিশের হাতে। আমার আর শেফালীর স্টেটমেন্ট নিয়েছে পুলিশ। খুব স্ট্রং স্টেটমেন্ট তৈরী হয়েছে ওর আগেন্সটে। এবার ওর আর কোনো রেহাই নাই। জেলের ভাত খাইতেই হবে ওকে অনেকদিন।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নিহাল। মাহিয়া অথইয়ের কথায় হেসে দিল। দুইজনকে একসাথে করলো অথই,
-তোমাদের দুইজনকে একসাথে ভালো করে দেখিই নাই আমি। এতো রেগে ছিলাম আসলে। ইউ টু লুক অসাম টুগেদার।
একটু থামলো অথই। ধম নিলো। তারপর বললো,
– আই এ্যাম সরি। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাদের দুইজনকেই। আমাকে মাফ করে দাও প্লিস।
অথইয়ের কম্প্লিমেন্টে লজ্জা পেল মাহিয়া। ওর পরের কথায় জড়িয়ে ধরলো।
– যা হয়েছে ভুলে যাও অথই। স্টার্ট আ নিউ লাইফ। আমরা দুই জনই আছি তোমার সাথে। সামনেও থাকবো। যদি দরকার পরে আমিও কোর্টে শাহেদের আগেন্স্টে এ সাক্ষী দিবো। কিন্তু ওকে কঠিনতম শাস্তি পাওয়ায় ছাড়বো আমরা।
এর মাঝেই একজন নার্স আসলেন একটা টেস্টের জন্য অথইয়ের রক্ত নিতে। মাহিয়া সরে ওনাকে জায়গা করে দিল।
রক্ত যখন অথইয়ের ভেইন থেকে শিশি তে পরছিলো, সেই দৃশ্যটা মাহিয়া মনে হয় নিতে পারলো না। টলে উঠলো ও। নিহালের গায়ে ধাক্কা খেলে বুঝতে পারলো নিহাল যে মাহিয়ার কিছু হয়েছে। তাড়াতাড়ি ধরে ফেললো ও।
– মাহিয়া কি হলো, কি হলো?
মাহিয়া দুর্বল গলায় বলতে পারলো শুধু,
– রক্ত।
আর কিছু মনে নেই ওর।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন একটা কেবিনে নিজেকে পেল মাহিয়া। ওর মা আর শাশুড়ি সামনে বসা। নিহালকে খুজলো ও। পেলনা। উঠতে বসতে গিয়ে ওর মা মানা করলেন,
– উঠিশ না মা। শুয়ে থাক্।
– নিহাল কোথায়?
– নিহাল আর তোর আব্বু ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন।
একটু পর রুমে ঢুকলো নিহাল। ওর চোখ মুখ দেখে অবাক হলো মাহিয়া। কোনো কারণে প্রচুর খুশি ও। তবে সেটাতে লজ্জাও মিশ্রিত । পেছন থেকে ওর বাবাকে ঢুকতে দেখলো মাহিয়া। ডাক্তার মিলন রুমে ঢুকে উচ্ছাসিত গলায় ঘোষনার সুরে বললেন,
– বিয়াইন সাহেবা মিষ্টি খাওয়ার এবং খাওয়ানোর প্রিপারেশন নেন। আমাদের ঘর আলোকিত করতে নতুন মেহমান আসছে। আমাদের নিহাল আর মাহিয়া বাবা মা হতে চলেছে।
আয়েশা আর রোখসানার খুশির কোনো ঠিকানা রইলো না। একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন তারা। কোলোকোলি করলেন। এরপর মাহিয়াকে একে একে আদর আর দোয়ায় ভরে দিলেন দুইজন।
মাহিয়া মনের ভেতর থেকে এতো খুশি ছিল যে সেই অনুভূতি ওর চোখের চমকে ছড়াচ্ছিলো। নিহাল এসে পাশে বসে শক্ত করে ওর হাতটা ধরেছিল শুধু। বড়দের মাঝে নিজেদের খুশি প্রকাশ করতে ভীষন লজ্জা লাগছিল ওদের।
তবে এক ঘন্টা পরে যখন মাহিয়াকে বাসায় নিয়ে আসলো নিহাল, তখন রুমে যেয়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। জড়িয়ে ধরলো বউকে।
– তোমার মনে হয় আইডিয়াও নেই যে তুমি আমাকে আজ কতো বড় খুশি দিয়েছো। আমরা বাবা মা হতে যাচ্ছি জান। আমাদের দুইজনের অস্তিত্ব এক করে নিয়ে কেউ আসছে আমাদের মাঝে। থ্যাকন্স আ লট ফর দিস।
মাহিয়া লজ্জা পেয়ে হেসে ফেললো। নিহাল ওকে বসিয়ে ওর পেটের ওপর হাত দিয়ে বললো,
– ডাক্তার বলেছে সিক্স উইক্স চলছে। এখন থেকে তোমার অনেক খেয়াল রাখতে বলেছে। আমি কিন্তু সব ডিসাইড করে ফেলেছি বুঝছো। এখন থেকে ফুল বেড রেস্টে থাকবা তুমি। বাসার কোনো কাজ করবা না। বাইরে আমাকে ছাড়া যাবা না। ভার্সিটি আমি তোমাকে দিয়ে আসবো আর নিয়ে আসবো।
আমার গাড়িটাও দেখি বেঁচে দিব কারণ ওটা নিচু। কষ্ট হবে তোভার ওটাতে। তোমার জন্য দেখি একটা উঁচু গাড়ি কিনে ফেলবো। আর শোনো, কোনো ঠান্ডা জিনিস খাবা না। আইসক্রিম তো ফুললি বাদ। বাকি যা খেতে মন চাবে শুধু আমাকে মুখ ফুটে বলবা, সব হাজির হয়ে যাবে কিন্তু নিজে থেকে কিছু করবা না। দরকার পরলে আম্মুকে বলে আরেকটা এক্সট্রা কাজের লোক…
নিহালের মুখ চাঁপা দিয়ে ধরলো মাহিয়া। খিলখিল করে হাসতে লাগলো,
– হাসপাতাল থেকে আসতে আসতে কি এইসব চিন্তা করেছো নাকি?
– আরে তুমি হাসছো কেন? এগুলা তোমার ভালোর জন্য বলছি।
নিহালের বুকে মাথা রাখলো মাহিয়া,
– তুমি আমার পাশে থাকলে ইনশাআল্লাহ খারাপ কিছুই হবে না আমার। কারণ আমি জানি আমার আর আমাদের বেবিটার কোনো কষ্ট তুমি হতে দেবা না। বাস তুমি পাশে থেকো। থাকবা তো নিহাল?
নিহাল ছিলো মাহিয়ার পাশে। পুরো নয়টা মাস ওর সাথে সাথে থেকেছে। ওকে আসলেই কোনো কষ্ট করতে দেয়নি। প্রত্যেকটা ফেইজে মাহিয়ার কষ্টগুলো যতটুকু পারা যায় ভাগাভাগি করে নিয়েছিল ও। পথ শেষে একটা ফুটফুটে মেয়ে বাবুকে জন্ম দিল মাহিয়া। খুশিতে ভরে গেল এই দম্পতির জীবন। সম্পূর্ণতা পেল একটা পরিবার।
শেষ