- অবহেলার কষ্টের গল্প।
- নতুন কষ্টের গল্প।
- শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প।
- শিক্ষনীয় দুঃখের গল্প।
- অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প।
- ব্যর্থ ভালোবাসার কষ্টের গল্প
এটা তোমার পথ,তোমার একার,
অনেকেই তোমার সাথে হাঁটবে
কিন্তু কেউ তোমার জন্য হাঁটবেনা
__ জালালুদ্দিন রুমি
অপেক্ষা করতে করতে আতশবাজির মতো
কখন যে ফুরিয়ে গেছি, তোমার ঈশ্বরও জানেন না।
অথচ আঁধার পেরোবার আগে,
তোমার আমাকে আকাশভরা সূর্যোদয় দেবার কথা ছিল।
__ রুদ্র গোস্বামী
১.অবহেলার কষ্টের গল্প
রাতে ঘুমানোর সময় আমার স্ত্রী যখন আমার বুকের উপর এসে শুয়ে পড়লো তখন আমি বেশ বিরক্তি নিয়ে ওকে বললাম
–” সারাদিন কাজ করে রাতে তোমার জন্য একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারি না।
–” তুমি তো জানো আমি তোমার বুকে ছাড়া ঘুমাতে পারি না।
–” এমন নেকামো না করলেও তো পারো! তোমার জন্য কোনো কাজে শান্তি নেই আমার।
–” ভালো তবুও আমি তোমার বুকেই ঘুমাবো৷
–” তুমি মরে গিয়েও তো আমাকে মুক্তি দিতে পারো? রোজ রোজ এমন অশান্তি আমার আর সহ্য হয় না৷ এমন একটা বস্তা গায়ের উপর থাকলে কি কেউ ঘুমাতে পারে?
–” আমি তো শুধু রাতের বেলাতেই বুকে ঘুমাই আর তো কখনো জ্বালাতন করি না।
–” তোমার মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমি আর একটাও দেখিনি।
–” আমার মাথা ব্যাথা করছে একটু হাত বুলিয়ে দেও।
কথাটা বলে আমার হাতটা নিয়ে ওর কপালের উপর রাখলো। হাজারবার বলার পরও এমনকি গায়ে হাত তুলেও ওর এই স্বভাব পরিবর্তন করতে পারিনি৷ আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন স্ত্রী বুকের উপর ঘুমালে আমি এতো বিরক্ত কেন হই! আসলে ওকে আমার এখন আর ভালো লাগে না। আমার অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশন আছে। কিন্তু কিছুতেই মিতাকে বলতে পারি না। মিতা আমার স্ত্রী এর নাম। এমন বেহায়া মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। ওর জন্য রাতে কনিকার সাথে তেমন কথা বলতে পারি না। ঘুমাতে এলেই আমাকে ধরে রাখে।
।
।
গায়ের সাথে মনে হয় খুব গরম কিছু লেগে আছে মনে হচ্ছে। মিতার কপালে হাত রেখে বুঝতে পারলাম ওর গা অস্বাভাবিক ভাবে গরম হয়তো জ্বর এসেছে। শীতের রাতে গরম কিছু কার না ভালো লাগে। আমি হাতটা ওর কপালের সাথে চেপে ধরে রাখলাম। ওর কিছুটা কষ্ট কমবে এই জন্য নয় বরং এতো সময় কম্বলের বাইরে রাখা হাতটা নিমেষেই গরম হবে সেই আশায়।
সকাল আটটায় ঘুম ভেঙে দেখলাম মিতা আমার বুকের ওপরই ঘুমিয়ে আছে। গায়ে হাত দিয়ে বুঝলাম গা রাতের থেকে অনেক বেশি গরম হয়ে আছে। কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া দিলো না। ওকে বুকের ওপর থেকে সরাতে গেলে খেয়াল করলাম আমায় বেশ শক্ত করেই ধরে আছে৷ তবুও ফ্রেশ হতে চলে গেলাম৷ কিন্তু মিতার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে তাই ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।
ডাক্তার বললো ঃ- ওর অবস্থা অনেক বেশি খারাপ এখনই আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু আমি ওর জন্য এতো টাকা নষ্ট করতে পারবো না তাই সাধারণ মহিলা ওয়াডে ভর্তি করে দিয়ে এলাম৷
অফিসে এসে কনিকার সাথে গল্প জুড়ে দিলাম। মেয়েটা আমাকে ছাড়া কিছু বুঝতে চায় না৷ কনিকা আমার অফিসের কলিগ। ওর হাসি মুখটা যে কোনো পুরুষকে নিজের কাছে টানতে বাধ্য। তাই আমিও ওর কাছে চলে এসেছি।
সারাদিন বেশ ভালো কেটে গেলো। সন্ধ্যা বেলা বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম। না আজ আর এই টেবিলে আমার পছন্দের কিছু রান্না করা নেই। মিতা রোজ সন্ধ্যা হলে আমার পছন্দের হালকা খাবার বানিয়ে দিতো। তারপর নিজের হাতে খাইয়েও দিতো। কনিকার সাথে রিলেশনে যাওয়ার পর একদিন বলেছিলাম তোমার আমাকে খাইয়ে দিতে হবেনা। নাকি বিষ মিশিয়ে এইভাবে খাওয়াতে আসো? তারপর থেকে আর কখনো খাইয়ে দিতে দেখিনি। রান্না করে টেবিলে গুছিয়ে রাখতো।
আজ মিতা নেই তাই কেউ কিছু বানিয়ে রাখেনি। খাটে গিয়ে শুয়ে কনিকার সাথে কথা বলতে লাগলাম। কিন্তু এখন ওর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না। সারাদিন মিতার কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। আচ্ছা ওর কি জ্ঞান ফিরেছে? নাকি ও আর নেই। না না আমি এইসব কি ভাবছি। আর ও মরে গেলেই তো আমার আর কনিকার জন্য ভালো হয়। কিন্তু মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না। সাথে পেটও বুঝিয়ে দিচ্ছে তার খাবার চাই। কিন্তু এখন বাইরে যেতে ইচ্ছা করছে না। আনমনে বলে উঠলাম
–” মিতা আজ কি রাতে না খাইয়ে রাখবে নাকি? তুমি আসলেই কোনো কাজের না। দুপুরের টিফিনটাও দেও নি আজ।
হঠাৎ খেয়াল আসলো মিতা হাসপাতালে ভর্তি। মেয়েটার আর কোনো খোঁজ কেন নিলাম না। সকালে একবার যেতে হবে হাসপাতালে দেখি কেমন আছে! এখন ঘুমিয়ে পড়ি।
কিন্তু শুয়ে কোনো শান্তি পাচ্ছি না। কিছুতেই ঘুম আসছে না। আজ মিতা নেই বলে কি এমন হচ্ছে। হয়তো বুকের ওপর কেউ না থাকলে ঘুম আসবে না। অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে। রাত যতো বাড়ছে মিতার কথা ততো বেশি মনে পড়ছে সাথে ক্ষুধাটাও বেড়ে চলছে।
কিছু সময় এপাশ ওপাশ করলাম কিন্তু ঘুমাতে পারলাম না। উঠে গিয়ে ফ্রিজ খুলে খাবার আছে কিনা দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখলাম দুইটা চিংড়ি মাছ আর কাল রাতের তরকারি রাখা সাথে ভাতও আছে৷ খাবার গুলো নিয়ে টেবিলে খেতে বসলাম। হঠাৎ মনে হলো মিতা কাল রাতে খাইনি। আমি ওকে চারটা মাছ রান্না করতে দেখেছিলাম। ভালোই হয়েছে এখন আমি খেতে পারবো। কিন্তু গলা দিয়ে নামছে না। আগে চিংড়ি মাছ রান্না হলে মিতা আমার পাশে এসে বসে থাকতো আর ম্যাও ম্যাও করে ডাকতো। মানে তাকে খাইয়ে দিতে হবে। চিংড়ি মাছ ওর সব থেকে পছন্দের খাবার৷
খাবারগুলো রেখে ঘরে চলে এলাম৷ হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার বুকের উপর এসে শুয়ে পড়ছে৷ কিন্তু না কেউ নেই। মিতাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। ফোনটা বের করলাম কিন্তু এতে মিতার কোনো ছবি নেই। কনিকা সব ডিলেট করে দিয়ে ছিলো।
কিছু ভালো লাগছে না তার বাইক নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম। ওকে দেখে আসবো বলে৷ কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম এতো রাতে মহিলা ওয়াডে কোনো ছেলেকে ঢুকতে দিবে না। কিছু করার নেই বলে ডাক্তারের কাছে ওর খোঁজ নিতে গেলাম।
–” সকালে যে মেয়েটাকে ভর্তি করানো হয়ে ছিলো তার কি অবস্থা?
–“ওনার অবস্থা খুব খারাপ। শরীর কোনো রেসপন্স করছে না। স্যালাইনও টানতে পারছে না শরীর। আইসিইউতে না রাখলে যে কোনো সময়ে খারাপ কিছু হতে পারে।
–” তাহলে আইসিইউতে রাখার ব্যবস্হা করুন।
–” সরি স্যার এখন আইসিইউতে কোনো সিট খালি নেই৷ আপনাকে অন্য কোথাও দেখতে হবে৷ একটা সিট খালি ছিলো যা বিকালে বুক হয়ে গেছে।
ডাক্তারকে কিছু না বলে চলে এলাম সেখান থেকে শহরের আর কোনো ভালো হাসপাতাল নেই৷ বাইরে নিতে গেলে এখন অনেক সময় লাগবে। আর অনেক টাকা খরচ হবে। বাড়ি ফিরে চলে এলাম।
কিন্তু বাড়ি ফিরলে মিতাকে বেশি মনে পড়তে থাকলো। কনিকার জন্মদিনের সময় আমার কাছে টাকা ছিলো না৷ অনেক চিন্তায় ছিলাম তখন মিতা ওর গলার চেন আর নগদ দশহাজার টাকা দিয়ে বলেছিলো ঃ- আমার কাছে এতো টাকা নেই। তোমার তো বিশ হাজার টাকা লাগবে। এতে হয়তো হয়ে যাবে। তুমি চিন্তা করো না।
ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে ছিলাম। ও মুচকি হেসে বলেছিলো তুমি চিন্তায় থাকলে আমার কষ্ট হয় অনেক আমার এইগুলো লাগবে না তুমি নিয়ে নেও। চেনটা ওর মায়ের দেওয়া বলে ওটা আর বিক্রি করিনি। কনিকাকে দিয়ে দিয়েছিলাম। চোখের কোণে মনে হলো পানি জমে যাচ্ছে। আজ অনেকদিন পর মিতার সাথে কাটানো সকল মুহুর্ত মনে পড়ছে। আমাদের ভালোবাসার তো কোনো কমতি ছিলো না। তাহলে কেন এতো দূরত্ব তৈরি হলো আমাদের ভিতর? মিতা আমাকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রেখেছিলো তাহলে আমি কেন মিতাকে কষ্ট দিলাম।
অফিস থেকে ফিরতে মিতা আমাকে রোজ জড়িয়ে ধরতো। একদিন ওকে বললাম ছেলেদের শরীর লাগলে ব্যবসা করো কিন্তু আমাকে এতো বিরক্ত করবে না। সেদিনের পর থেকে মিতা আর আমাকে জড়িয়ে ধরতো না। শুধু রাতে আমার বুকে ঘুমানোটাই পরিবর্তন করতে পারিনি কোনো কিছু বলে। ওর নাকি আমার বুকে না ঘুমালে ঘুম আসে না। আমিও ওকে একসময় বলতাম তুমি আমার বুকে না ঘুমালে আমার ঘুম আসে না। আজ বুঝতে পারছি কথাটা আমি মিথ্যা বলতাম না। রাত তিনটা বেজে গেলো এখনো আমি ঘুমাতে পারিনি।
সকাল হতেই হাসপাতালে চলে গেলাম। আজ মিতাকে আইসিইউতে রাখবো এখানে না হলেও অন্য কোথাও। মিতাকে ছাড়া আমি এক রাতও থাকতে পারি না। আমার সব করা কাজের জন্য মাফ চাইবো। আর কষ্ট দিবো না ওকে।
হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম কাল রাতে একটা মেয়ে মারা গেছে। না এটা মিতা হতে পারে না। মিতা আমাকে কথা দিয়েছিলো আমাকে রেখে যাবে না। আমাকে ছাড়া ও থাকতে পারে না। মিতা নিশ্চয়ই ওর কথা রাখবে। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিলো মিতার প্রাণহীন দেহটা।
কেমন নিষ্পাপ ভাবে ঘুমিয়ে আছে৷ খুব শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। শেষ কবে ওকে জড়িয়ে ধরেছি মনে নেই। ওর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলতে লাগলাম
— তুমি বলতে না তুমি আমাকে ছাড় থাকতে পারো না তাহলে আজ থেকে কি করে থাকবে? জানো কাল রাতে আমি তোমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারিনি গায়ের উপর এই বস্তাটা না থাকলে আমার ঘুম আসে না। কে আমাকে রোজ পছন্দের খাবার রান্না করে দিবে বলো? কে আমাকে এতোটা আগলে রাখবে?
আমি তোমাকে আর কষ্ট দিবো না। এই দেখো তোমাকে জড়িয়ে ধরে কথা দিচ্ছে আমি আর কথার খেলাপ করবোনা৷ তুমি জানো কাল রাতে আমি তোনাকে ছাড়া কেমন ছিলাম। ভাতও খেতে পারিনি! তুমি আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবে না? এইবার আর বলবো না তুমি বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলতে চাও। বলো না প্লিজ। আমার খুব ক্ষধা লেগেছে কাল রাতে খাইনি জানো। তোমার কলিজা না খেয়ে আছে আর তুমি নিশ্চিত ভাবে কি করে ঘুমিয়ে আছো?
আগে প্রতিরাতে আমার বুক ওর চোখের পানিতে ভিজে যেতো আমি যেমন কিছু বলতাম না। ওর চোখ মুছিয়ে দিতাম না। আজ আমার চোখের পানিতে ওর বুক ভিজে যাচ্ছে কিন্তু ও চুপ করে ঘুমিয়ে আছে। সত্যিই কি আমি ওকে আর ফিরে পাবো না।
#অবহেলা
২.শিক্ষনীয় কষ্টের গল্প
পরগাছা
লাকি রশীদ
মা রাতে বলে রেখেছিল কালকে সকালে নাস্তায় রুটি,পরোটা,ভাজি এতো ভেজাল না করে খিচুড়ি রেঁধে দিবে। হাতের ব্যথায় হাত নাড়াতে পারছে না। নীতু ও আমি সাথে সাথে মাথা নাড়লেও বিন্দু বলে, আমি কি খিচুড়ি খাই না কি? সমস্যা নেই,চা খেয়ে চলে যাবো। মা থেমে থেমে এবার বললো, তুই আর তোর বাবা আমাকে কবরে দিয়ে ছাড়বি।
হারামির ঝাড়বংশ কোথাকার !!! আর যায় কই?
বিন্দু তার তীক্ষ্ম গলায় চেঁচিয়ে উঠল, শুধু শুধু বকবে না মা বলে দিলাম। আমি তো বলছি না, পরোটা করে দিতেই হবে।
আমি জানি মা যতো কষ্টই হোক এবার বিন্দুর পরোটা ডিমভাজি করে দিবে। চট করে উঠে বলি, আমি ব্রেড বাটার নিয়ে আসছি মা,বিন্দূ ও সবাই এগুলো খাবে। কোনো খিচুড়ি রাঁধার দরকার নেই। মা আঁতকে উঠে বলে, এতো রাতে আর বের হতে হবে না। আমি হেসে বলি,১১টা কি রাত হলো না কি? নিচের দোকান থেকে নিয়ে আসছি। দোকানে গিয়ে এসব কেনার পর হঠাৎ সেমাইয়ের প্যাকেটে চোখ পড়ে। মা দুধে ভেজা জবজবে সেমাই খেতে ভালবাসে। এক প্যাকেট কিনতে গিয়ে মনে হয়, কি করছি এটা? এখন নিয়ে গেলে মা ভাববে ছেলের খেতে ইচ্ছে করছে। ব্যথা ভরা হাত দিয়ে এটা রান্না করা শুরু করবে। বাসায় ফিরে নীতুকে বলি, সকালের চা তুই বানিয়ে নিস।
চাইলে আমি তোকে হেল্প করতে পারি।
বিছানায় গা লাগাতেই দুই চোখ জলে ভরে যায়। আমার মায়ের সারাটা জীবন কষ্টে কষ্টে কাটলো।অর্থকষ্ট না, কারণ একটাই বাবা কিছু করে না। বিয়ের সময় নাকি অনেক বড় গ্ৰোসারি শপ ছিল।যেটা দেখে নানা বিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাবার অলসতার কারণে,অনুপস্থিতির কারণে লাভ কমতে থাকে। এরপর বাবার মাথায় ভুত চাপে, দোকান বিক্রি করে দেবার। মা এখনও মাঝে মাঝে বলে, আমি তোর বাবার পা পর্যন্ত ধরেছি দোকান বিক্রি না করার জন্য। শোনেনি,এতো অলক্ষী, অলস মানুষ আমি আর দেখিনি রে বাবা। পরগাছার মতো সারাটা জীবন বোনদের উপর নির্ভরশীল আর মুখাপেক্ষী হয়ে রইলো।
সত্যি কিভাবে যে এতোটা বছর বাবা শুয়ে, ঘুমিয়ে,আড্ডা দিয়ে কাটালো। ১২টা পর্যন্ত ঘুমায়, তারপর উঠে গোসল করে বন্ধুদের সাথে তাদের দোকানে, চালের আড়তে চলে যায়। সংসার চলে ফুপূদের বদান্যতায়। আমার দুই ফুপু আমেরিকা ও ইংল্যান্ড এ থাকেন। মাসের প্রথম দিকে দুজনে বেশ ভালো এমাউন্ট পাঠান। দেশেও এক ফুপূ বেশ ভালো আর্থিক সচ্ছলতায় আছেন, উনিও যখন যা প্রয়োজন পাঠিয়ে দেন। কিন্তু, প্রতিমাসে টাকা এলেই মা যেন লজ্জায় গুটিয়ে যায়। প্রথম প্রথম বাবাকে বলতো, এভাবে টাকা না এনে তুমি এককালীন কিছু টাকা এনে ছোট খাট ব্যবসাও তো করতে পারো। এভাবে ফকিরের মতো হাত পেতে নিতে আমার অসহ্য লাগে।
বাবা বিকারহীন ভাবে বলে,বূবুদের একটি মাত্র ভাই ই আমি। এতে লজ্জা পাবার কিছু নেই বিনু। আমরা যে বাসায় থাকি সেটা আমার বড়ফুপুর বাসা। বিশাল ৫ বেডরুম নিয়ে বানিয়েছেন কারণ তার ৪ ছেলে মেয়ে যদি কখনো এসে থাকতে চায়। এখন পর্যন্ত কেউ ই আসেনি যদিও। শুধু বছর বছর ফুপু দুই মাসের জন্য আসেন। উনি আসলে মা ও নীতুর অনেক কষ্ট বেড়ে যায়। খান না খান অনেক আইটেম মাকে দিয়ে রাঁধান। খুঁজে খুঁজে মানুষ কে ডেকে এনে খাওয়ান। উনার টাকা দিয়ে খাওয়ান অবশ্য, কিন্তু রান্নার চাপটা তো মা ই সামলায়।
প্রচন্ড শুচিবায়ুগ্ৰস্ত বলে নীতু কে বিছানা চাদর থেকে শুরু করে তার কাপড়,পর্দা কতোবার যে বদলাতে হয়……. তা বলার মতো না। তার ওয়াশ রুমে কেউ যেন না ঢুকে সেটাও নিশ্চিত করতে হয়। নীতু তখন আমাদের বলে, আমেরিকায় উনার স্বামী সন্তানদের সাথে কি এমন করতে পারেন বুঝিস? কক্ষনো না, লাথি মেরে বের করে দিবে ওরা। পারেন শুধু আমাদের জ্বালাতে। বাবা উনাদের উপর এতো নির্ভরশীল হওয়ায় আমাদের
এসব টর্চার করার সুযোগ পান এরা। তখন বাবা সামনে ছিল। নির্বিকার হয়ে বলছে,বয়স্ক ফুপু কে দুই মাস একটু সহ্য করতে পারিস না? তোরা এত খারাপ কেন? একটুও ধৈর্য্য সহ্য নেই। নীতু এবার কঠিন স্বরে বলে, আমাকে মায়ের মতো ভাবলে মস্ত বড় ভুল করছো বাবা। কোনদিন রাগ উঠলে আমি সবকিছু উলটপালট করে ফেলতে পারি। সেটা দয়া করে মনে রেখো।
বিন্দু ঘরের কোনো কাজ ই করে না। ফাঁকিবাজের চুড়ান্ত !!! সে আছে তার পড়াশোনা ও সাজগোজ নিয়ে। মা মাঝে মাঝে দুঃখ করে বলে, আমি চাই না তোরা কেউ তোদের বাবার মতো অকর্মণ্য হোস। কিন্তু বিন্দুকে দেখলে আমার কাছে তোদের বাবার কার্বনকপি মনে হয়। ও তখন রেগে বলে, আমার সম্পর্কে তোমার এতো উচ্চ ধারণা শুনে খুব খারাপ লাগছে মা। ঘরের কাজ করি না বলে কি বাবার মতো হবো আমি? লিখে নাও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সেরা ডাক্তারদের মধ্যে আফরোজা বিন্দুর নাম থাকবে। জেদ আছে হয়তো সে ভালো ডাক্তার হবে। তবে আমি মানি সে ইমপ্র্যাকটিক্যাল কারণ প্রায়ই গর্ব করে বলে আমার কোনো বন্ধুরই এতো বড় কোনো বেডরুম নেই। আমি শুনে হাসি, এতো চড়ুই পাখির অট্টালিকায় থাকা সুখের মতো ঘটনা হয়ে গেল। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে নীতু, তার মাষ্টার্স ফাইনাল দিচ্ছে। ওর সাবজেক্ট ইংলিশ, রেজাল্টও খুব ভালো। খাটতে পারে,তাই অনেক গুলো টিউশনি করে সে। আমি ও সে দুজনেই টিউশনির অর্ধেক টাকা মার হাতে তুলে দেই। কিন্তু পুরো মাসের খরচের এক চতুর্থাংশও তো হয় না।
মা অনেক আশায় ছিল ভাইয়া বেলজিয়ামে এ
গেছে এবার হয়তো আমাদের মাসিক খরচটা ও
দিতে পারবে। তাহলে হয়তো বা আর বড়ফুপুর নেয়া টাকাগুলো প্রতিমাসে মাথা নিচু করে নিতে হতো না। কিন্তু ভাইয়া ওখানে এখনো লিগ্যাল হয়
নি। অদূর ভবিষ্যতে হবার আশাও ক্ষীণ বলা যায়। মা মাঝে মাঝেই বলে, আমার দূটো ছেলে চাকরি পেলেই এই বাসা ছেড়ে ছোট বাসায় চলে যাবো।কম খাবো তবু তো ইজ্জতের সাথে থাকবো।
আমাকে নীতু প্রায়ই বলে,এই সুখের আশায় থাকতে থাকতে মা মরেই যাবে। আমি চিৎকার দেই,এসব কথা বলতে তোর মুখে আটকায় না? মা সুখস্বপ্ন যা দেখছে সফল হবেই। নীতু হেসে বলে, আমি তোর মতো ভাববিলাসী না ছোটভাই।তুই তো কয়েক মাস ধরে চাকরির কতো চেষ্টা করছিস? কোনো লাভ হয়েছে? কতো বড় বড় স্বপ্ন, জ্বালানি কোম্পানিতে চাকরি করবি, অনেক টাকা স্যালারী পাবি…….. জীবন এতো সহজ না। আমি প্রাকটিক্যাল তাই এসব বলছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছি। আমি চায়ের কাপ ধুয়ে দিয়েছি, নীতু চা বানিয়ে আনলো। মা হাসছে, তোরা যে এতো আদর দিচ্ছিস দুপুরে কি রান্না করতে হবে না নাকি? পকেটে দুদিন আগে পাওয়া টিউশনির
কড়কড়ে নোট আছে বলে বললাম,আজ সবার জন্য বিরিয়ানি আনবো মা। খালাকেও বলো যেন আমাদের সাথে খেয়ে যায়। মা বলছে, শুধু শুধু এতো টাকা নষ্ট করার কোনো মানে আছে? চিন্তা করিস না, আমি ম্যানেজ করে ফেলবো। আমি বলি, তোমার কি সুখ সহ্য হয় না মা? আজ তুমি কিচেনে গেলে অনেক খারাপ হবে।
এবার মা বলছে, সারাদিন বাসায় বসে বসে তাহলে করবো টা কি শুনি? তোরা সবাই বের হয়ে যাবি, তোর বাবা ভোস ভোস করে ঘুমাবে………..
আমি কোন কাক তাড়াবো বল? হঠাৎ মনে পড়ল
যেন,মা বলছে নিশাত কে অপারেশন এর পর দেখে আসতে পারি নি। তাহলে কি ওদের বাসায় আজকের দিনটা কাটিয়ে আসবো? নিশাত বড় খালার ছোট মেয়ে। কয়েক দিন আগে টনসিলের অপারেশন হয়েছে। পৃথিবীতে মায়ের সুখদুঃখের সাথী বলতে আমরা ভাই-বোন ও বড়খালা ই। ২
বোন একজন আরেকজনের আত্মার অংশ বলা যায়। বললাম তাহলে লক্ষী মেয়ের মতো নাস্তা খেয়ে রেডি হও। আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবো।
খালা চলে এসেছে, ঝটপট হাতে বাসন ধুয়ে মুছে রাখছে। বললাম খালা আজ দুপুরে আমাদের সাথে খাবেন। খালা মুখে পানের পিক সামলাতে সামলাতে বললো,আইজ না বাজান। এখন আমি সাভারে মাইয়্যাটারে একটু দেখতে যামু। ফোন করছে ওর শরীর না কি বেশি জুইত না। মা বলে
তুমি নাস্তা খেয়ে বাসন ধুয়ে, ময়লা ফেলে চলে যাও।
কিছুক্ষণ পর আমি বাইরে থেকে শোনছি, বাবা কে
মা অক্লান্ত ভাবে ডেকে যাচ্ছে। বাবার ঘুম এতো সহজে ভাঙ্গে না। হুঁ হা করছেই,আর মা অনবরত বলছে আমি আপার বাসায় যাচ্ছি খোকার বাবা।
তুমি উঠে নাস্তা করে নিও। আমি বসে হালছাড়া ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে ভাবছি, বাবাকে না বলে মা কখনো বাইরে যায় না। বাবা তুমি যদি বুঝতে কি রত্ন পেয়েছিলে, তাহলে মার মনের ইচ্ছের দাম দিতে। ভুল মানুষের কাছে আমার মা বাধা পড়ে এতোটা বছর কাটিয়ে দিল। কম্প্রোমাইজ আর কম্প্রোমাইজ……… এতো বছর ধরে তাই করে করে আসছে। অথচ বাবা চাইলে একটা কিছু তো করতে পারতো। ঘুমানো,আড্ডা আর টিভি দেখা।
এটা কোনো লাইফ হলো? মার জ্বালা মা ই জানে। মা খুব বেশি রেগে না গেলে তা বুঝার উপায়ও নেই।
পিঠের পেছনে হাত দিয়ে বলছে, কিরে দেরি হয়ে গেল? আমি হেসে বলি না মা দেরি হয়নি। মনে মনে বলি, তোমার জন্য শত সহস্র কোটি বছর দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি আছি আমি। বের হবার সময় আমি এক দিকের দরজায় তালা মারতে মারতে দেখি, খালাকে ৫০০ টাকা দিয়ে মা বলছে এটা রাখো। মেয়ের প্রয়োজন মনে করলে দিয়ে দিও। খালা কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করেছে।
পথে দোকান থেকে নিশাতের জন্য আইসক্রিম ও বড়খালার জন্য কেক কিনে মাকে নামিয়ে দিলাম।বলি, কে কিভাবে খাবে এসব না ভেবে বোনের সাথে সুন্দর সময়টা কাটাও মা। তিনটার আগে কেউই বাসায় ফিরবে না। আমি খাবার নিয়ে এর আগেই বাসায় চলে যাবো ইনশাল্লাহ। মা হেঁসে আদর করে আল্লাহর হাওলা বলে বিদায় দিল।
সন্ধ্যায় মাকে আনতে গিয়ে দেখি দুই বোন খুব আয়েসি ভঙ্গিতে বিছানায় গল্প করতে করতে চা খাচ্ছেন। আমি তাদের মাঝখানে গিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ি। মা বলছে, কিরে বেশি টায়ার্ড নাকি? আমি হেসে বলছি,হ্যা নিজের হাতের বাজে চা খেয়ে আমি খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। নীতুর
বান্ধবী আসায় ওকে না বলে আল্লাহ আল্লাহ করে নিজে বানিয়ে দেখি, খুব ই নিকৃষ্ট চা হয়েছে। নষ্ট করবো না কি? তাই জোর করে খেয়ে এখন বমি বমি লাগছে।
বড়খালার সহকর্মী টেবিলের উপর ট্রে রাখতেই বলছেন, উঠে উৎকৃষ্ট মানের চা নাস্তা খা। দেখবি
ভালো লাগবে। বসে দেখি মায়ের প্রিয় দুধে ভেজানো সেমাই। টপাটপ খাওয়া শেষ করে ওই
রুমে নিশাতকে দেখতে যাই। কথা বলে না, বিশাল এক খাতা পাশে নিয়ে লিখে লিখে সবার সাথে ভাব বিনিময় করছে। আমি হেসে বলি,যাক এক ওসীলায় তোর গলা কিছুটা অন্তত রেষ্ট পেয়েছে।সারাক্ষণ বিন্দুর মতো শুধু বকবক করিস তো, সেজন্য বলছিলাম আর কি। মোটা মোটা চোখ দিয়ে চেয়ে আছে,যেন খেয়ে ফেলবে আমাকে একেবারে। এতো সুন্দর মেয়েদের এতো রুক্ষ রুপ দেখা কষ্টকর বলে বের হয়ে আসি।
দুপুরে কেউই বিরিয়ানি খায়নি। প্রচন্ড গরম ছিল, কেউ খাবে না বলে নীতু ঠান্ডা মিষ্টি দই দিয়ে চিড়া মেখে দিয়েছে। বাবা বাসায় আসেনি, আমরা তিন ভাই বোন খেয়েছি। তাই রাতের রান্নার জন্য মাকে কিচেনে ঢুকতে হয়নি। শুধু কিচেন অগোছালো হয়ে আছে বলে কিছুক্ষণ বকাঝকা করে ঠিক করে গোসলে ঢুকেছে।
শসা, লেবু নিয়ে বিরিয়ানি খেতে খেতে বাবা তার বন্ধুকে কিভাবে প্রতারক বোকা বানিয়ে টাকা নিয়ে গেছে সেটা হাসতে হাসতে শোনাচ্ছে। আমরাও হাসছি, খাচ্ছি। কিন্তু কোন সুখ ই যে দীর্ঘস্থায়ী নয়
সেটা প্রমাণ করতেই যেন তক্ষুণি ফোন বেজে উঠলো। বড়ফুপু তার হেড়েগলায় খুশি খুশি হয়ে বাবাকে বলছেন, মিন্টু আর এক সপ্তাহ পরের টিকেট করেছি রে। এবার আর মন মানছে না বলে এক বছর হবার আগেই চলে আসছি। খোকা কে বলবি অবশ্যই যেন সে এয়ারপোর্টে থাকে। আমি পরে সময় জানাবো। বাবা খুশি খুশি গলায় বলছে, ঠিক আছে বুবু আমরা বাপ ছেলে
দুজনেই থাকবো ইনশাল্লাহ। তুমি কোনো চিন্তা করো না।
ফোন লাউডস্পিকারে দেয়া ছিল বলে সবাই ফুপুর সব কথা শোনেছি। বাবা তাকিয়ে দেখছে আমরা সবাই বিরক্ত দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছি। কেউ কিছু বলছে না, শুধু মা শ্লেষের স্বরে স্পষ্ট করে বললো খুব তো বোনকে বলে দিলে এয়ারপোর্টে থাকবে। তখন তোমার ঘুম ভাঙ্গবে তো? না কি দেশে এসে প্রথম দিনই তোমার বোন চেঁচিয়ে হুলস্থুল কান্ড বাধাবেন? বাবা নিশ্চুপ হয়ে এবার ভাত খুঁটছে।
চলবে…..
সকল পর্বের লিংক একসাথে
https://kobitor.com/category/uponas/porgasa/
৩.শিক্ষনীয় দুঃখের গল্প
আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে বেশ কয়েকদিন লড়াই করে হেরে গেলেন ডা. অদিতি! অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন, অল্প বয়সেই করে ফেলেন এমডি এবং এফসিপিএসের মতো কঠিন দুই দুটি ডিগ্রি। তিন মাস আগে মা হয়েছিলেন দ্বিতীয় সন্তানের। আজ সবাইকে ছেড়ে, সবকিছু ছেড়ে চলে গেলেন দুনিয়ার জেলখানা থেকে!
অদিতির মৃত্যু আমাদের আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমাদের দেশে সদ্য হওয়া মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন অবহেলার শিকার।
ডা. অদিতির যা হয়েছিল, ডাক্তাররা বলেন, পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন তথা প্রসবপরবর্তী বিষন্নতা! যা হতে পারে যে কোনও মায়ের।
এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। তবে, সন্তানের জন্মদান ইমোশনাল এবং হরমোনাল এক সাইক্লোন বয়ে দেয় মাতৃমনে! এর সাথে কাজ করে আনন্দ, ভয় এবং আতঙ্কের এক মিশ্র অনুভূতি! এর পরিণতি হতে পারে, যা আপনারা হয়ত কল্পনাও করছেন না— ডিপ্রেশন!
ডিপ্রেশন শব্দটি এখন আমাদের চতুর্দিক অনুরণিত হতে থাকে। সবাই এখন কমবেশি ডিপ্রেশনে ভুগছে! তার কারণেরও অভাব নেই, একেকজন একেক কারণে ভুগছেন। সোশ্যাল মিডিয়া তার অন্যতম প্রধান একটা কারণ। যার কারণে বাড়ছে সুইসাইডাল টেনডেন্সিও!
অধিকাংশ মায়েরাই ডেলিভারির পরে ‘বেবি-ব্লু’-তে আক্রান্ত হয়, যা সাধারণত মুড সুইং, অকারণ কান্নাকাটি, আতঙ্কিত কিংবা শঙ্কিত হয়ে যাওয়া, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, এসবে সীমাবদ্ধ থাকে! এটি সাধারণত ডেলিভারির দুই তিন পর থেকে শুরু হয়ে কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে!
কিন্তু, কিছু মায়ের আরও দীর্ঘ, আরও সিভিয়ার ডিপ্রেশনে ভুগেন, যাকে পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন বলা হয়! এর থেকে আরও মারাত্মক একটা কনসিকোয়েন্স হতে পারে যাকে পোস্টাপারটাম সাইকোসিস বলে!
পোস্টাপারটাম ডিপ্রেশন কখনই চারিত্রিক সমস্যা কিংবা মায়েদের ইচ্ছাকৃত কোনও কান্ড নয়। যা আমাদের দেশে অধিকংশ পরিবার মনে করে থাকেন। এটি শুধুমাত্র ডেলিভারি পরবর্তী অন্য আরও অনেক সমস্যার মতই একটি সমস্যা। যা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভালো হয়!
কী কী লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী কিংবা বোন কিংবা বন্ধু এই সমস্যায় ভুগছেন:
1. বেবি-ব্লুজের লক্ষণ এবং উপসর্গ সমূহ: মুড সুইং, আতঙ্কিত কিংবা শঙ্কিত থাকা, হতাশা, বিরক্তি, কান্নাকাটি করা, মনোযোগ কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, ঘুম ঠিকমতো না হওয়া
2. পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের লক্ষণ এবং উপসর্গসমূহ: মারাত্মক মুড সুইং, অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা, বাচ্চার সাথে বন্ডিং না থাকা, পরিবার পরিজন থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলা, ক্ষুধামন্দা অথবা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া দাওয়া করা, অনিদ্রা অথবা অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুম, সবকিছু থেকে ইনটারেস্ট হারিয়ে ফেলা, অতিরিক্ত রাগ এবং বিরক্তি, ভালো মা হতে না পারার ভয়, আশাহীন হয়ে পড়া, নিজেকে মূল্যহীন মনে করা, লজ্জা এবং ভয়ে কুঁকড়ে থাকা, মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া, কোনওকিছু ভাবতে না পারা, কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা, অস্থিরতা, প্যানিকড হয়ে যাওয়া, বাচ্চা কিংবা নিজের ক্ষতি করার চিন্তা, বারবার আত্মহত্যা করার চিন্তা!
3. সবচেয়ে মারাত্মক পোস্টপারটাম সাইকোসিসের লক্ষণ এবং উপসর্গসমূহ: কনফিউশন এবং ডিসঅরিয়েনটেশন, বাচ্চাকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা, হ্যালুসিনেশন এবং ডেলিউশন, অনিদ্রা, অতিরিক্ত রাগ এবং ক্রোধ, প্যারোনিয়া, বাচ্চা কিংবা নিজেকে ক্ষতি করা বা করার চেষ্টা!
কখন ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন তা জানা সবচেয়ে জরুরী।
*যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে চলে না যায়!
*দিন দিন পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়!
*বাচ্চার যত্ন নিতে না পারা কিংবা যত্ন নিতে বেশি কষ্ট হয়ে গেলে!
*প্রাত্যহিক কাজকর্ম ঠিকমত করতে না পারলে!
*নিজের কিংবা বাচ্চার ক্ষতি করার চিন্তা মাথায় আসলে!
ডিপ্রেশনের রোগীরা চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হয়! যারা ডিপ্রেশনে ভুগেন, নিজেরা হয়ত বুঝতে পারেন না, তাই এগিয়ে আসতে হবে স্বামীকে, পরিবার পরিজনকে! আপনি যদি মনে করেন আপনার কাছের কেউ এমন সমস্যায় ভুগছে, আজই তাকে নিজের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। তাকে একজন মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
ডা. মোকাররম আলাভী
৫. অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প।
কারণ, আমি জানি, আমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউই ওকে সহ্য করতে পারবে না। আমি চলে গেলে ওর অনেক কষ্ট হবে। ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবি না, তবে মাঝেমাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে। সমস্যা হল, বিয়ের পর একটা সন্তান হয়ে গেলে মরাও যায় না।
কতদিন হল তোমাদের কথা হয় না?
পাঁচমাস সাতাশ দিন।
কোনো কথাই হয় না?
ও ছেলের সাথে কথা বলে, সরাসরি আমার সাথে বলে না।
তোমাদের মধ্যে না প্রেম ছিল?
হ্যাঁ, ছিল। ছয় বছরের প্রেম। তুমুল প্রেম! জানেন, এমনও হয়েছে, অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে আর ও আমার হলের সামনে সারারাত দাঁড়িয়ে আছে! ভিজছে আর আমাকে টানা ফোন করে যাচ্ছে, আমি ধরছি না।
কেন?
আমার রাগ ভাঙাতে। ঝগড়া হলে ও আমার জন্য পাগল হয়ে যেত! ও মেয়েদের মতো কাঁদতে পারতো!
আর সেই মানুষটাই এতো বদলে গেল!
হ্যাঁ। এটাই আমার নিয়তি। তবু আমি ওকেই ভালোবাসি।
সে বাসে?
বাসে হয়তো, জেদ থেকে দেখায় না, যদি হেরে যায়, সে ভয়ে! আমিও দেখতে চাই না।
কীভাবে জানলে যে বাসে?
ভালোবাসি তো, তাই বুঝতে পারি।
যদি তোমার বোঝাটা মিথ্যে হয়?
হলে হোক! কাউকে ভালোবাসলে অনেক শান্তি লাগে, নিজেকে অনেক হাল্কা লাগে। সে স্বর্গীয় অনুভূতি আমি প্রতি মুহূর্তেই পাই। ও পাচ্ছে না, সেটা ওর ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি।
বিরক্ত লাগছে তোমার কথা শুনে।
কাউকে কখনো নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছেন?
মনে পড়ছে না। না, মনে হয়।
তাহলে আপনার সাথে এটা নিয়ে গল্প করে লাভ নেই, আপনি বুঝবেন না। আসুন, আমরা অন্য গল্প করি। বাজারে ইলিশের দাম আবারো তো বেড়ে গেলো……………
৬.ব্যর্থ ভালোবাসার কষ্টের গল্প
#গল্প
এক্স ফ্যাক্টর
নিজের হলুদ সন্ধ্যায় এক্স গার্লফ্রেন্ড ইরাকে নাচতে দেখে চমকে উঠল রায়ান। হাতে থাকা কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাস থেকে ছলকে কিছুটা পানীয় পড়ল পাঞ্জাবিতে। পাশে থাকা মামী শাশুড়ি ব্যস্ত হয়ে বললেন,
আহা কি হলো এটা! এই নাও টিসু দিয়ে মুছে ফেলো জলদি। নাহলে দাগ বসে যাবে।
রায়ানের তখন মাথাটা ঝিমঝিম করছে। পাঞ্জাবির দাগ নিয়ে চিন্তা করার মতো অবস্থা নেই।
মাথার মধ্যে ঘুরছে ইরা। ওর সাথেই এমনটা হতে হবে। এই ঢাকা শহরে এতো এতো মানুষ থাকতে ইরাকেই আসতে হবে এখানে।
ইরার সাথে রায়ানের পরিচয় হয়েছিল এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে। ইরা ছিল ঐ বন্ধুর ছোট বোনের বান্ধবী। উচ্ছল সুন্দরী ইরাকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় রায়ানের। পুরোটা সময় ওর পিছে পিছে ঘুরে ফ্লার্ট করে রায়ান। হাতে থাকা ডিএস এলারে একের পর এক ইরার ছবি তোলে।
একসময় ইরা বলে,
শুনুন, জন্মদিন কিন্তু আমার না।
রায়ান বলে,
আপনাকে দেখার পর আর কারো ছবি তুলতে গেলেই ঝামেলা করছে ক্যামেরাটা!
এভাবেই ইরাকে বুঝিয়ে দেয় ওর ভালো লাগার কথা। অনুষ্ঠান শেষে দেখে ইরার ঠিকানাটাই নেয়া হয়নি। তারপর বন্ধুর ছোট বোনের কাছ থেকে ঠিকানা জোগাড় করে একদিন আচমকা গিয়ে হাজির হয় ওর মেসে। ছবিগুলো দিয়ে বলে,
এতো সুন্দর ছবি কাছে রাখতে সমস্যা হচ্ছে। তাই নিজেই ঠিকানা জোগাড় করে চলে এলাম দিতে।
কি সমস্যা হচ্ছে?
সারাদিন শুধু ছবিই দেখতে মনচায়।
ঘুম খাওয়া সব গেছে আমার।
ইরা ছবি নিয়ে মিষ্টি হেসে চলে যাবার জন্য ঘুরতেই রায়ান বলল,
সেল নাম্বার টা কি পেতে পারি? না মানে ছবি কেমন হয়েছে তার রিভিউ নিতাম আর কি।
ইরা যেতে যেতে বলে গেলো ওর নাম্বার।
সেদিন রাতেই কল করল রায়ান। আর তারপর প্রতিদিন।
রায়ানের কথার জালে অষ্টাদশী ইরা খুব সহজেই জড়িয়ে গেলো। মন দিয়ে ফেলল রায়ানকে।
তারপর রাতের পর রাত জেগে কথা, এখানে ওখানে দেখা করা, রায়ানের কেয়ারিং সব মিলিয়ে আরো বেশি রায়ানের সাথে জড়িয়ে গেলো ইরা।
একদিন রায়ান একটা কফিশপে ইরাকে নিয়ে হার্ডবোড ঘেরা একটা রুমে গিয়ে বসতে চাইল। ইরা বসতে না চাইলে বলল,
বাইরেতো টেবিল ফাঁকা নেই।
ইরা দেখল সত্যি সব টেবিলে মানুষ আছে।
তখন ইরা বসতে রাজি হলো।
ওয়েটার কফি দিয়ে গেলে রায়ান একহাতে ইরাকে জড়িয়ে চুমু খেলো।
ইরা একটু আড়স্ট হয়ে পড়লে ছেড়ে দিলো রায়ান। একটু পর আবার আচমকা ইরাকে জড়িয়ে ওর জামা টেনে বুকে হাত দিলো। ইরা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করল,
রায়ান ছাড়ো,এসব কি!
তুমি তো আমারই ইরা,একটু কাছে আসলে কি এমন হবে?
বলেই রায়ান টেনে ইরাকে কোলে বসিয়ে দিলো।
আর দুহাতে ইরার পুরো শরীর চটকাতে লাগল।
ইরা সব শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে বের হয়ে এলো।
রায়ান হতভম্ব হয়ে বসে থাকল। বিল মিটিয়ে বাইরে এসে দেখল ইরা নেই।
রায়ান কল দিলো কিন্তু ইরা ফোন রিসিভ করলো না।
রায়ান মেসেজ দিলো,
আমি তোমার মেসের বাইরে। তুমি যতক্ষণ ক্ষমা না করবে আমি এখান থেকে সরবো না।
ইরা ফোন অফ করে দিলো। রাত বারোটায় জানালা দিয়ে দেখল রায়ান রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে বসে আছে। জানালা বন্ধ করে ইরা ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে উঠে দেখল রায়ান ওখানেই আছে বসে। ওর বান্ধবী রুমা বলল,
এই ইরা,রায়ান ভাই নাকি সারারাত বাইরে ছিলো। সবাই কানাঘুষা করছে। যা হয়েছে মিটিয়ে ফেল। নাহলে বড় কোনো সিনক্রিয়েট হবে।
ইরা বাধ্য হয়ে রায়ানের কাছে গেল।
রায়ান বলল,
মাফ করে দাও ইরা। আর কখনো এমন হবে না।
আচ্ছা যাও।
আমাকে তুমি বিশ্বাস করো না। এটাই সবচেয়ে বেশি অপমানের। আর তাছাড়া তোমার সাথে যদি আবারও এমন করি,তুমি কাছে থাকলে আমার সব এলোমেলো হয়ে যায় ইরা। তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।
রায়ানের অবস্থা দেখে ইরার মায়া হলো। ওর মনে হলো রায়ান সত্যি ওকে ভালোবাসে। নাহলে বিয়ে করতে চাইতো না। আর তাছাড়া ওতো পুরুষ মানুষ। ওকে কাছে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। ইরা বলে,
বাড়িতে কি বলব?
আমার বাড়িতে সমস্যা নেই। তোমার পরীক্ষা হয়ে গেলে বাসায় জানিয়ে দিও।
পরদিন রায়ানের এক বন্ধুর বাসায় কাজী ডেকে বিয়ে করে নিলো দু’জনে।
আর কোনো বাঁধা থাকলো না কাছে আসতে।
আজ হোটেলে,তো কাল কোনো বন্ধুর বাসায়,দু’জনে দেখা করত।
এভাবে বছর ঘুরে এলো। রায়ানের অফিসে এক সুন্দরী মেয়ে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে জয়েন করল। রায়ান ঐ মেয়ের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ল। ইরাকে এখন আর ভালো লাগে না রায়ানের। ঐ কলিগের সাথে জড়িয়ে পড়ল রায়ান।
ইরা ঈদের বন্ধে বাড়িতে গেলো। ফিরে এসে খেয়াল করল রায়ান একটু কেমন বদলে গেছে। ঘনঘন ফোন দেয়া,দেখা করতে চাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
ইরা কল করলে কখনো একবারে রিসিভ করে না।
দেখা করতে চাইলে বলে আজ একটু ব্যস্ত আছি সোনা।
ইরার মনটা কেমন কু ডাকতে শুরু করল।
একদিন ওর রুমমেট তিফা বলল,
আজ রায়ান ভাইকে দেখলাম একটা মহিলার সাথে শপিং করছে। খুব ক্লোজ মনে হলো।
ইরার বুকের ভেতর ধক করে উঠল। ও সাথে সাথে রায়ানকে কল করল।
তুমি কোথায় ছিলে দুপুরে?
একটা মিটিং ছিলো।
আমিতো অফিসে গেলাম। তুমি নাকি ছুটি নিয়েছো।
বাড়াবাড়ি করার কি ছিলো? আমাকে কল দিতে।
কোথায় বাড়াবাড়ি করলাম। তোমার জন্য পুডিং করেছিলাম।
ভাবলাম সারপ্রাইজ দেই।
আমিতো বাইরে চলে এসেছি তখন।
মিথ্যা বলছো কেনো! আমিতো তোমাকে দেখেছি।বলো এক মেয়ের সাথে শপিং এ ছিলে তাইনা?
হুম, আমার কলিগ।
ও তাহলে এখন কলিগের সাথে শপিং করতেও হয়।
এতো মিন মাইন্ডেড কেনো তুমি?
এখনতো এটাই বলবে, আমার মন ছোট,আমি খারাপ। আচ্ছা আমি যদি কারো সাথে ঘুরতাম তোমাকে মিথ্যা বলে?
ঘোরোনা তুমি, চাইলে ডেটিং করো,শোও তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
এভাবে বললে,আমি না তোমার বিয়ে করা বৌ!
কিসের বিয়ে! আমাকে তোমার এতোটা বোকা মনে হয়! ওসব ছিলো নাটক।
কি বলছো!
হুম,ঐ কাজী,মৌলভী সব নকল ছিলো।
এটা করতে পারলে তুমি!
না করলেতো তুমি ধরা দিচ্ছিলে না। সতির মূর্তি হয়ে ছিলে। আজকাল কে শুধু দেখা করে প্রেম করে।রুম ডেট না করলে এতো টাইম ওয়েস্ট কে করে বলো।
আচ্ছা তো সেটাও তো হয়েছে তবে এখন অন্য কারো সাথে কেনো তুমি?
তোমাকে আর ভালো লাগছে না ডার্লিং। বাসি ভাতের মতো ফ্যাসফ্যাসে হয়ে গেছো তুমি।
আমি সবাইকে তোমার আসল চেহারা প্রকাশ করে দেব। তোমার অফিসে, তোমার বন্ধুদের।
আর আমি কি শাড়ি চুড়ি পরে বসে থাকব ? তোমার যেসব ছবি আমার কাছে আছে সব নেটে ছেড়ে দেব।
কিসের ছবি?
পাঠিয়ে দিচ্ছি দেখো।
মেসেঞ্জারে পাঠানো ওর নগ্ন ছবি দেখে আঁতকে উঠল ইরা। রায়ান কখন এসব তুলেছে। ও এতোটা শয়তান কখনো একটুও টের পায়নি।
তুমি এতো জঘন্য!
কিসের জঘন্য, তোমার ভাগ্য ভালো যে আমি এসব দিয়ে তোমাকে ব্লাকমেইল করছিনা। যা হয়েছে সব ভুলে চুপ করে যাও। আমিও তোমাকে ঘাটাবো না আর।
ছবি দেয়ানেয়া নিয়ে সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল,সেই ছবি দিয়েই সব শেষ করল রায়ান।
এতো কিছুর পরেও রায়ানকে ফোন দিয়েছে,ওকে বোঝাতে চেয়েছে ইরা। ওর জন্য কেঁদেছে। রাতের পর রাত জেগে থেকেছে। একসময় মানসিক রোগী হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যেতে হয়েছে।
কোনোরকমে ফাইনাল দিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমায় ইরা।
আজ এতোদিন পর এভাবে নিজের বিয়েতে ইরার সাথে দেখা হবে ভাবতেও পারেনি।
ইরার ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল রায়ানের।
ইরা বলছে,
হাই জিজু, আপনাকে এখন নাচতে হবে আমাদের সাথে।
আমি তো নাচতে পারি না।
তা বললে হবে? আজকাল কার ছেলেরা নাচতে না জানলেও নাচাতে তো জানে।
মা মা মানে।
মানে আপনি শুধু কিছু স্টেপ ফলো করবেন আমরাই নাচ চালিয়ে যাব।
যাক ইরা বিষয়টা চেপে গেছে ,এই ভেবে একটু স্বস্তি পেলো রায়ান।
ধনীর দুলালী শিমিকে বাগে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে রায়ানকে। শিমি বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। এই বিয়েটা কিছুতেই ভেস্তে দিতে দেয়া যাবে না। এখনতো রায়ানের কাছে সেসব ছবিও নেই যে ইরাকে ভয় দেখাবে। পুরাতন মোবাইলের সাথে সাথে সব নষ্ট হয়ে গেছে।
একফাঁকে শিমির চাচাতো ভাইকে ডেকে রায়ান বলল,
ঐ যে নীল লেহেঙ্গা পরা মেয়েটা নাচছে ও কে ?
ওতো শিমি আপুর ছোট খালার মেয়ে।
রায়ানের গলা শুকিয়ে গেলো। ওর হবু বৌয়ের কাজিন ইরা। কপাল!
হলুদ ছোঁয়ানোর সময় ইরাও এলো রায়ানকে হলুদ ছোঁয়াতে।
মুখের কাছে মিষ্টি তুলে ধরে হেসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
সেঞ্চুরি করার ঠিক আগে বোল্ড আউট হতে কেমন লাগে জিজু?
রায়ানের গলায় মিষ্টি আটকে কাশি উঠে গেলো।
ইরা পানি দিয়ে বলল,
কুল জিজু,অমন হড়বড় করে খাচ্ছেন কেনো। একটু রয়ে সয়ে। ওহ্,আপনার তো আবার হামলে খাওয়ার অভ্যাস।
রায়ান বুঝতে পারছে না ইরা ঠিক কি চাইছে।
হলুদ শেষে বর কনের অনেক ছবি তোলা হলো।
ইরা বলে উঠল,
আমাদের জিজু কিন্তু দারুণ ছবি তোলে তাই না জিজু?
রায়ানের অস্বস্তি হচ্ছে। ও ওয়াশরুমে গেলো।
একটু পর ইরাও এলো পিছে পিছে।
পেছন থেকে ইরা রায়ানকে জড়িয়ে ধরল। তারপর জোর করে কিস করতে লাগল।
কি হচ্ছে এসব? ছাড়ো ইরা।
কেনো একসময়তো আমাকে কাছে পেলে পাগল হয়ে যেতে জানু।
আগের কথা তুলে কি লাভ,ছাড়ো কেউ এসে পড়বে।
লাভতো আছেই তবে সেটা আমার।
প্লিজ পুরোনো সব কথা ভুলে যাও।
ভুলেই তো গেছিলাম। কিন্তু তোমাকে এখানে দেখে আবার সব মনে পড়ল সোনাপাখি।
কি চাও তুমি?
টাকা।
কি?
হুম দশ লাখ টাকা চাই।
এক টাকাও পাবে না তুমি।
তাহলে আমার সাথে তুমি যা যা করেছো সব ফাঁস করে দেবো।
কেউ বিশ্বাস করলে তো। আমি বলব তুমি টাকার জন্য এসব করছো।
এইতো ভুল করলে। তোমার পাঠানো ছবিগুলো আমার কাছে আছে। আর এইযে এখনের সব কথা রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে আমার ফোনে।
ইউ বিচ।
নো নো। গালাগালি চলবে না। কম্প্রোমাইজে আসো।
আচ্ছা পাঁচ দেব।
উহু দশ চাই। এক টাকাও কম চলবে না।
রায়ান ভেবে দেখল দশ দিলে ওর আর কিছু থাকে না। তবে শিমির সাথে বিয়েটা হলে কোটি টাকার মালিক হবে ও। তাই ইরার কথায় রাজি হয়ে গেলো।
আচ্ছা ডান। তবে তুমি যদি বিট্রে করো।
কি গ্যারান্টি যে তুমি এসব নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি করবে না।
এটুকুই মানবতা আমার আছে সোনাপাখি। তুমি তো আমাকে ব্লাকমেইল করতে পারতে কিন্তু করোনি। ধরে নাও সেটার প্রতিদান।
পরদিন রায়ান ইরার দেয়া একাউন্ট নাম্বারে দশ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে দিলো।
ইরা আর কিছু বললো না বিয়ের দিনে। বরের হাত ধোয়া থেকে শুরু করে জুতা লুকানো সবটাতেই ভীষণ মজা করল ইরা।
রায়ান হাফ ছেড়ে ভাবল যাক বিয়েটা ঠিকমতো হয়ে গেলে আর চিন্তা নেই।
কাজী এসে বরের কাছে বসল প্রথমে তারপর বৌয়ের কাছে যেতেই একটা হৈচৈ শুরু হলো। শিমির মোবাইলে কে যেন রায়ানের সাথে একটা মেয়ের ঘনিষ্ঠ ছবি পাঠিয়েছে।
একমূহুর্তে বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো। শুধু তাই না। শিমির প্রভাবশালী বাবা আইনগত ব্যবস্থা নিলেন রায়ানের বিরুদ্ধে।
ক্ষতিপূরণ গুনতে হলো রায়ানকে। সেইসাথে চাকরিটাও হারালো। কোনো ভালো কোম্পানিতে রায়ান যাতে চাকরি না পায় তেমনটাই ব্যবস্থা করলেন শিমির বাবা।
রায়ান ঠিক করল ইরাকে ছাড়বে না কিছুতেই।
কিন্তু সেদিনের পর থেকে ইরা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
খোঁজ করতে গিয়ে রায়ান জানল
ইরা ঐ ঘটনার পরেরদিন লন্ডনে ফিরে গেছে।
(সমাপ্ত)
দাম্পত্য সুখ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/category/uponas/d/
বিচ্ছেদ গল্পের লিংক