ভাবীর সংসার ৪৭ তম পর্ব
কলি অনেকক্ষণ ধরে, ডায়গনস্টিক সেন্টারের রিসপশনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জুয়েলের রিপোর্ট পাঁচ টায় দিবে। কলি অধিক চিন্তায় চারটা চল্লিশে চলে এসেছে, তাই সে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
কলি দুই বার রিসিপশনের মেয়েটিকে বলেছে আপু রিপোর্ট কি এসেছে?
– আহা! এমন করছেন কেন? একবার বললাম তো, পাঁচ টায় আসবে। বসুন, আসলে আমি আপনাকে ডাকবো।
– জি।
কলি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে, দারুন ব্যস্ত হয়ে কাজ করছে। কত মানুষের রিপোর্ট সে ডেলভারী দিচ্ছে, আবার খাতায় লিখছে। এজন্য হয়তো মেজাজ এতো খারাপ হয়ে আছে।
কলি চারবার পড়ে ফেলেছে, এই ডায়াগনস্টিক সেন্ট্রারের নাম ও তাদের সেবা সমূহ। তবুও সময় যাচ্ছেনা। আজ তার নিজেকে সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তি লাগছে!
পাঁচ টা দুই মিনিটে কলির ডাক এলো। কলি তাড়াতাড়ি করে রিপোর্ট হাতে নিয়ে বললো আপু রিপোর্ট কি ভালো?
– স্যার বলবেন। আমি জানিনা।
– আপনি মাত্র খুলে দেখলেন যে?
– নাম চেক করেছি। জুয়েল খান, ঠিক আছে?
– জি।
নাহিদ পিছনে এসে বললো দে, আমার কাছে দে৷ আমি দেখছি।
– দেখ।
নাহিদ দেখলো, সব রিপোর্ট ভালো, শুধু ডেঙ্গুর রিপোর্টের পাশে লেখা পজেটিভ। নাহিদ তাড়াতাড়ি করে, রিপোর্ট খামে রেখে বললো, রিপোর্ট ভালো আছে, চল ডাক্তারের কাছে।
– এক মিনিটে বুঝে ফেলেছিস? ডাক্তার হইছে! আমার কাছে দে, রিপোর্ট।
– ভাইরে, ডাক্তারে গেলেই বুঝবি, যে রিপোর্ট নরমাল, এখন চল!
নাহিদের টেনশনে বেড়ে গিয়েছে। আহারে! কি হলো এই মানুষ টার! নাহিদ কখনোই জুয়েল কে দুলাভাই ডাকেনি, জুয়েল ভাই ডেকেছে। কারণ এই মানুষ টাকে বড় ভাই মনে হয়। নাহিদ ভাবছে, তাকে এখন অনেক যত্নে রাখতে হবে। কলিপা যে, শোনে কি করবে, তাই নিয়ে ভাবছে নাহিদ, কারণ তার আবেগ অনেক বেশি।
ডাক্তার কলিকে বললেন আপনি রোগীর কে হোন?
কলি আস্তে করে বললো উনার ওয়াইফ।
– আপনার কি জ্বর আছে? বমি কিংবা অবসাদ লাগা?
– না।
– এরকম কিছু হলেই ব্লাড টেস্ট করাবেন।
– ওর কি হয়েছে?
– ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ডেঙ্গু হয়েছে। ঔষুধের সাথে সাথে পথ্য এবং সেবা এখন রোগীর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি।
– অবস্থা কি অনেক খারাপ?
– আপনি এতো ঘাবড়ে গেলেন কেন? তাকে তরল খাবার, ভিটামিন সি খাওয়াবেন। ২৪ ঘন্টা মশারীর নিচে রাখবেন। স্প্রে এবং কয়েল ব্যবহার করবেন, তবে যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়! সাত দিন পরে আবার টেস্ট করাবেন। আর যদি বমি হয় কিংবা জ্বর ১০৩ ক্রস করে, এখানে এসে ভর্তি হবেন।
– ওর কিছু হবেনা তো?
– আশা করা যায়, তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবেন। ভালো থাকুন।
কলি নাহিদ কে ধরে বললো জুয়েলের কিছু হবে নাতো!
– তুই এমন করছিস কেন আপা? কান্নাকাটি শুরু করেছিস কেন? চল!
রাহেলা বেগম শুনেই নিজে বাজারে গিয়ে কমলা, মালটা, লেবু নিয়ে আসলেন। বিভিন্ন ধরনের শরবত বানিয়ে কিছুক্ষণ পর পর দিতে থাকলেন। জুয়েলের চোখ গুলি গর্ত ঢুকে গিয়েছে, কেমন যেন কংকাল কংকাল লাগে!
জুয়েল শুধু বলে আম্মা, আমি অনেক কষ্টে ফেলে দিলাম আপনাকে?
– তাহলে আম্মা ডাকো কেন বাপ? তাড়াতাড়ি সুস্থ হও! অনুষ্ঠানের ঝামেলা এখনো বাকী!
কলি দিন রাত এক করে জুয়েলের সেবা করছে, এতো টা দূর্বল হয়েছে জুয়েল যে, ওয়াশ রুমে একা যেতে পারেনা। কলি হাত ধরে নিয়ে যায়, দাঁড়িয়ে থেকে আবার নিয়ে আসে।
নাহিদ-শাহিদ মশারীর বাইরে থেকে জুয়েলের সাথে হাসাহাসি করে আনন্দে রাখে। শাহিদ দোকান থেকে আসতে ডাব নিয়ে আসে। নিজেই কেটে, জুয়েল কে খেতে দে!
সাত দিন পরেও রেজাল্ট আবার পজেটিভ আসলো। কলির মন একদম ভেঙে গিয়েছে। যদিও জ্বর নেই, তবুও প্রচন্ড পতিমাণে দূর্বল হয়ে আছে জুয়েল।
পুরো ষোল দিন পর, জুয়েল ডেঙ্গু থেকে মুক্ত হলেন। সেদিন কলির যে কি আনন্দ লেগেছিল। মনে হচ্ছিল সেই বোধহয়, এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
রাহেলা বেগম কে জুয়েল বললো আম্মা, আমি এখন মেসে যাই। অনেক দিন থাকলাম। অফিসে জয়েন হতে হবে।
– তুমি আরও এক সপ্তাহ এখান থেকে অফিস করবে, পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে মেসে যাওয়ার দরকার নেই।
– আম্মা, আপনারা না থাকলে আমি মরেই যেতাম। আমার মা মারা গিয়েছেন সেই ছোট্ট বেলায়, অনেক দিন পর মনে হলো আমি আমার মায়ের কাছেই আছি।
– ভালো কথা, তবে চলে যাচ্ছ কেন বাবা? সপ্তাহ খানেক থেকে সুস্থ হয়ে যাও। আমিও চিন্তা মুক্ত থাকি।
– জি, দেখছি।
আজ বিকালে রিতা খালা ফোন দিলেন, বাড়ীওয়ালার ল্যান্ড লাইনে।
আসসালামু আলাইকুম আপা! কেমন আছেন?
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছি। আপনারা?
– ভালো আছি।
– সপ্তাহ খানেক আগে পলি কল দিয়েছিল, কলির নাকি বিয়ে ঠিক করেছেন। আমিও নানান ঝামেলায় কল দিতে পারিনি। আর কলিও এই মাসে ওকদিন ও খালার খবর নিল না!
– জি আপা। বিয়ে ঠিক করেছি, কাবিন করে নিয়েছি। আগামী মাসে বিয়ের অনুষ্ঠান। জামাইয়ের মাঝে ডেঙ্গু হয়েছিল তাই একটু সবাই ঝামেলায় ছিলাম।
– এখন কেমন আছে?
– ভালো আছে। যুবায়ের ভাই, আমার দুই ভাগ্না-ভাগ্নী কেমন আছে।
– ভালো আছে।
– আমি তারিখ ঠিক করে আপনাকে ফোন দিব, কার্ড নাহিদ ডাকে ছেড়ে দিবে। ভাই, বাচ্চারা সহ আপনার আসতেই হবে। কলি-পলির আপনি হলেন অত্যন্ত প্রিয় খালা।
– আমার পলি আমাকে যত বার ফোন দে, জাহান কি দে? তাহলে বুঝেন আমার তাদের সাথে কেমন সম্পর্ক। আর অবশ্যই আসবো। কলিকে বলবেন একবার আমাকে কল দিতে। তার কি পছন্দ, আমি সেটাই উপহার দিব।
– আপনি আসলেই সে খুশি।
– সেটা আমি জানি। ছেলে ছোট নয়তো এদের আমি আমার ঘরেই রেখে দিতাম। ভালো থাকবেন, আর কলিকে কল দিতে বলবেন।
– জি আপা, ভাইকে সালাম দিয়েন। আল্লাহ হাফেজ।
জুয়েল সুস্থ হওয়ার পর, সেপ্টেম্বরের ষোল তারিখ বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। অনুষ্টান হবে, একটা মিনি হলে। দুই পক্ষের খরচে অনুষ্ঠান হবে। অতিথি হবেন সাড়ে তিনশো। জুয়েলের আত্নীয় কম, বেশির ভাগ পরিচিত মানুষ।
বিয়ের আর পনেরো দিন বাকি, আজ দুই কামরার ছোট্ট একটা বাসা দুজন মিলে ঠিক করে এসেছে। তিন তলা বাসার দুই তলার বাম পাশের ফ্ল্যাট। ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা। দুই রুম, একটা ছোট্ট রান্নাঘর আর একটা বাথরুম।
জুয়েল আর কলি আস্তে আস্তে অনেক জিনিস কিনছে, আজকে তাদের বিয়ের শাড়ি কিনতে যাওয়ার কথা। জুয়েল অফিস শেষে কলিকে নিতে বাসায় আসবে। আগামী কাল সকালে পলিও চট্টগ্রাম থেকে আসবে, তার ও সুখবর, বাবু হবে।
কলি রেডি হয়েছে, কচি কলা পাতা রঙের সুতি শাড়ি পরেছে। রাহেলা বলছেন, শাড়ি কিনতে যাচ্ছিস, শাড়ি পরে যা। এটা রাহেলা বেগমের শাড়ি। কলি খুব আগ্রহ নিয়ে শাড়িটি পরেছে। ইদানীং শাড়ি পরতে বেশ আনন্দ লাগে কলির। কলি বার বার ছাদ থেকে নিচের দিকে দেখছে জুয়েল আসছে কিনা….
চলবে…
আন্নামা চৌধুরী।
১৭.০৩.২০২২
বি.দ্রঃ আজ বই মেলার শেষ দিন, ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন বই মেলায়। বই মেলায় পেন্সিলের স্টলে (১০৫ নং স্টল) আছে আমার উপন্যাস ” সময় ঘড়ি” চাইলে কিনতে পারেন। ধন্যবাদ।