ফ্রিজ
পর্ব ৪
রমজান শেষের দিকে। আমাদের এখনো কোনো জামা কেনা হয়নি! অবশ্য মা আগেই বলে দিয়েছে এবার জামা পাব না। বাবা বোনাস পেয়েছে কি-না জানি না। মনে হয় পায়নি। পেলে অবশ্যই আপার জন্য একটা শাড়ি কিনবে।
মা অবশ্য বাবাকে বলে দিয়েছে বোনাসের এক টাকাও যেন খরচ না করে। এবারের রমজানের ইফতারি খুব বাজেছিল মা খুব শক্ত হাতে টাকা বাঁচাচ্ছে। এবার মনে হয় আমাদের ফ্রিজটা কিনা হবে। যাক ভালোই হবে পানির জন্য চাচার বাসায় দৌড়াতে হবে না।
আজ একটু ভালো ইফতারি বানাচ্ছে মা। আপাও মায়ের সাথে রান্না করছে। আমি টুকটাক জিনিসপত্র এগিয়ে দিচ্ছি। রান্না ঘরের বাহিরে এসেছি শুনলাম আপা মা কে বলছে,” মা রুনুর জন্য একটা জামা কিনে দাও। ও তো ছোটো মানুষ। “
মা কী বলল শুনতে পারলাম না। আমার খুব কান্না পাচ্ছে আপার জন্য। আমার আপাটা এত ভালো! আমার ছুটে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে মা আমার কিছু লাগবে না। তুমি আপাকে একটা কাপড় কিনে দাও।
ইফতারি নিয়ে আনোয়ার চাচার বাসায় গেলাম। আনোয়ার চাচা শুয়ে আছেন। আমাকে দেখে বলল,, “কে রুনু?”
আমি ওনার দিকে তাকালাম। রমজান আসার পর উনি দাড়ি কাটেন না। দাড়ি বেশ বড়ো হয়ে গেছে। মাথায় একটা কাপড়ের টুপি পরেছেন।
“ইফতারি রেখে গেলাম চাচা।”
“এই রুনু শোন।”
আমি চাচার কাছে গেলাম। উনি আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, “তোদের ইদের জামা কিনেছিস?”
আমি মুখে কিছু না বলে মাথা দুলালাম। নিজেদের গোপন কথা কাউকে বলতে হয় না। চাচা হয়ত মাথা দুলানোটা হ্যাঁ বুঝল।
“কবে কিনলি? বাহিরে যেতেই দেখলাম না।”
আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। কিছু না বলে চলে আসলাম।
বাসায় একটা ছেলে এসেছে দুইটা প্যাকেট নিয়ে। সম্ভবত লিটন ছেলেটা কে পাঠিয়েছে। ছেলেটা মা কে বলল,” আন্টি লিটন ভাই সামান্য উপহার পাঠিয়েছে। “
মা ছেলেটা কে ভিতরে আসতে বলল। ছেলেটা আসতে চাচ্ছিল না। অনিচ্ছায় ভিতরে আসল। আমি কাঠের চেয়ারটা এনে দিলাম। ছেলেটা চেয়ারে বসল।
“কী নাম তোমার বাবা?”
“জি, আব্বাস।”
মা ছেলেটাকে চা নাস্তা দিতে বলল। আমি চা আর মায়ের বানানো পিঠা এনে দিলাম।
ছেলেটা সব পিঠা মজা করে খেল। এক গ্লাস পানি খেল। মা বলল,” চা খাও বাবা।”
আব্বাস আয়েশ করে চা খাচ্ছে। আমি মায়ের কান্ড দেখছি। মা কে ঠিক মতো বুঝতে পারছি না।
খাওয়া শেষ করে আব্বাস উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আন্টি যাই।”
“প্যাকেটটা নিয়ে যাও বাবা। লিটন কে বলবা আমি খুব খুশি হয়েছি তবে ভবিষ্যৎ এমন কাজ না করলে আর খুশি হব।”
আব্বাস বিস্মিত হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সুন্দর করে কেউ না বলতে পারে এটা তার হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। আমি খুব অবাক হয়েছি। আমার কী যে ভালো লাগছে!
আব্বাস ছেলেটা প্যাকেট নিয়ে চুপচাপ চলে গেল। লিটন এমন কাজ আর করবে বলে মনে হয় না।
ইদের ছুটি হয়ে গেছে। বাবা আজ সকাল থেকে বাসায় আছে। বাবার মনটা বোধহয় ভালো না! মা কে বলছে,” মেয়ে দুটো কে কিছুই কিনে দিবা না! এটা কেমন কথা?”
“এক ইদে নতুন জামা না পরলে কী হবে? ওরা তো ছোটো নেই। রুনুটা এখন বুঝতে শিখেছে। তুমি এ বস নিয়ে ভেবো না তো।”
বাবা কিছু বলেনি। মনখারাপ করে বসে আছে। আমি ভেবেছিলাম আপার জন্য একটা শাড়ি বাবা কিনবে তাও কিনেনি।
দুপুরের পরে আচমকা মামা হাজির হয়েছে। আমি মামা কে দেখে এত অবাক হয়েছি বলা যায় না।
মামা আমাকে দেখে হাসি দিয়ে বলল, তোরা কেমন আছিস রে মা? “
“ভালো আছি মামা। আপনি কেমন আছেন?”
“আছি ভালোই। আপা কোথায়?”
“আছে ভিতরে।”
আপা অনেকটা দৌড়ে এলো মামাকে দেখে। আপার মুখে খুশির ঝিলিক! আপা মামা কে ঝাপটে ধরল।
“কেমন আছিস রে পাগলি?”
“ভালো মামা। তুমি আসবে বলোনি তো?”
“ভাবলাম তোদের একটা সার্প্রাইজ দেই।”
“দারুণ অবাক হয়েছি মামা।”
মামা কে দেখে বাবা মা দুইজনে বেশ অবাক হলো। বাবা বললেন, ” আরে আব্বাস তুমি! “
মামা মিটিমিটি হাসছে। মা একটা আন্তরিক হাসি দিয়ে বলল,” বাড়ির সবাই কেমন আছে রে?”
“সবাই ঠিকই আছে। আপা আমি এসেছি তোমাদের সবাইকে নিয়ে যেতে। এবার ইদটা একসাথে করব। প্রতিবার ইচ্ছে হয় কিন্তু পারি না!”
বাবা বললেন, ” সে পরে দেখা যাবে। হাতমুখ ধুয়ে এসো তো।”
আমার খুব ভালো লাগছে! মামার বাড়ি যাব ভেবে। কত বছর মামা বাড়ি যাওয়া হয় না! মামা বাড়ির সামনে সেই বড়ো গাছটা এখনো আছে কি-না কে জানে? মা কি মামা বাড়ি যেতে রাজি হবে? মনে হয় হবে না। এখন মামা বাড়ি যাওয়া মানে অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে যাবে। মামা খুব কষ্ট পাবে না গেলে!
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ