#এক কাপ চা
পর্ব ৩৯
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(১৯৫)
তাশদীদের ফোনের স্ক্রিনে রাফির নাম্বার দেখে সাগরিকা চুপ করে বসে রইল।তাশদীদ তার হাত বিছানার সাথে বেধে রেখেছে। বার বার নিষেধ করা স্বত্বেও সাগরিকা যখন রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো তখন তাশদীদ তার হাত বেধেছে।শুধু তাই নয় তাকে হুশিয়ারি দিয়েছে বেশি না বুঝার।
তাহলে তার পা ভেঙ্গে তাকে ঘরে বসিয়ে রেখে দিবে।
পা দিয়ে নিজের কাছে ফোন নিয়ে এসে সাগরিকা কল রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো…. “
“কী ব্যাপার এভাবে হাপাচ্ছো কেন?”
“ভাইয়া তোমার পাগলা বন্ধু আমাকে বেধে রেখেছে।”
“আমরা পাগলা বন্ধু তোমার স্বামী।তারপর বলো সাগরিকা, ভালোবাসি বলেছে?”
“মনে হচ্ছে না ইহ জন্মে বলবে। সে পারেই শুধু রাগ দেখাতে।”
“তোমাকে নিয়ে বেশি পজেসিভ।আর ভালোবাসি কী বলতেই হবে?”
“কিন্তু আমার পিচ্চিপাচ্চা ছোট্ট মনের তো শুনতে ইচ্ছে করে।”
“হাহাহা, চিন্তা করো না। একদিন বলবে। এবার বলো কী বলে ডাকবো তোমায়? ভাবী না আপু?”
“নাম ধরেই ডেকো।কিন্তু আজ তোমার ফ্রেন্ড হাবিজাবি খেয়েছে না কী?কেমন উদ্ভট আচরণ করছে।”
“আমিও তাই ভাবছি।আচ্ছা শুনো মনে হচ্ছে না তাশদীদ কিছু বলেছে বাড়িতে কিন্তু কথাটা তোমার জানা দরকার।”
রাফির থেকে বিস্তারিত শুনে সাগরিকা মৃদু হেসে বলল,
“তবে আমি কী পাচ্ছি?”
“বন্ধুকে দিয়ে দিলাম আর কি চাও? আচ্ছা হানিমুন ট্রিপ আমি স্পনসর করবো।”
” শান্তিই নাই আবার তুমি হানি খুঁজো।ওটা তোমরা দুই বন্ধু মিলেই যাও।”
ওয়াশরুম থেকে তাশদীদ সাগরিকার কন্ঠ শুনে দ্রুত পায়ে ছুটে এলো।রুমে এসে দেখলো সে কথা বলছে ফোনে। হাত থেকে ফোন নিয়েই দেখলো রাফির নাম্বার। তার মেজাজ মুহুর্তে খারাপ হয়ে গেলো।সে সাগরিকার দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুই এত অভিনয় কেন করিস?”
“কারণ আমি অভিনেত্রী হতে চাই।বানাবেন?”
“এক চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।তোর সাহস কী করে হয় রাফির সাথে কথা বলার?”
“এতে সাহসের কী আছে?”
“এতই যখন প্রেম উৎরিয়ে উঠছে তা বিয়ের আগে মনে ছিল না?”
সাগরিকার এবার মনে হলো তাশদীদ কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্ত। অবশ্যই সাগরিকার বিষয়। কারণ তাছাড়া অন্য কোনো বিষয় তাকে এতটা অস্থির করে তোলে না।শুধু তার বেলাতেই এসে বেচারা এমনিতেই পাগলামো করে।
“আমি কিছু করেছি?”
“না কি করবি তুই?”
“তবে রাগ দেখাচ্ছেন কেন?”
“বিয়ের আগে দুই বছর প্রেম করার আগে মনে ছিল না?প্রেম করবি অন্য জনের সাথে আবার বিয়ে অন্যজন কে?”
“আমি কার সাথে প্রেম করলাম?”
“অভিনয় বাদ দে।”
“আপনি ফাজলামো বাদ দিয়ে বলুন।”
“রাফি আমায় সবটা বলেছে, তুই দুই বছর যাবত কমিটেড। শুধু তাই নয় আজ রাফি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।”
“আপনার মাথা খারাপ।আপনি পাগল না কি?আমি আপনার স্ত্রী।ভুলে গেছেন?”
“আমার স্ত্রী অথচ তার ছবি থাকে অন্যের মোবাইলে।”
“কোন ছবি?”
তাশদীদ নিজের ফোন তার দিকে ছুড়ে মারলো।সাগরিকা ফোন হাতে নিয়ে ছবিগুলো দেখে বেশ ভড়কে গিয়েছে। মাথা নিচু করে সে তাশদীদ কে বলল,
“আই এম সরি। আমাকে একটা সুযোগ দিবেন?মাত্র পাঁচ মিনিট। এরপর যদি আমাকে খারাপ মনে হয় আপনার তো আর কখনো মুখ দেখাবো না আপনাকে।!
(১৯৬)
নিজের রুমে মৃদু আওয়াজে গান শুনছে তুলি।শুধু গান শুনছে এমন নয়। গানের তালে তালে দুলছে তার পুরো শরীর। সাগরিকা বাইরে থেকে এসব দেখে দৌড়ে তুলির রুমে প্রবেশ করে।বিনাবাক্য ব্যয় করে সে সরাসরি তুলির বিনুনিতে ধরে টান দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হচকচিয়ে উঠেছে তুলি।চুল ছাড়ার অনুরোধ করলেও সাগরিকা তার চুল ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
রাশেদের রুমের কাছাকাছি আসতেই রাশেদ দেখতে পায় যে সাগরিকা তুলির চুল ধরে তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসছে।নিজ রুম থেকে দৌড়ে গিয়ে রাশেদ দুজন কে আলাদা করে। ওরা সচরাচর ঝগড়া করে না।এমন চুলোচুলির ঝগড়া তো আরো নয়। সাগরিকা চঞ্চল হলেও এমন নয়। দুজন কে ছাড়িয়ে দিয়ে রাশেদ তাদের হাত ধরে এনে রুমের ভিতর বসালো।এরপর জিজ্ঞেস করলো,
” কী হয়েছে তোমদের?তোমরা কি এখনো ছোটো আছো?আর সাগরিকা এসব কেমন ব্যবহার।”
“মনে আছে বছর দুই আগে তুমি আমাদের দুজনকে কক্সবাজার থেকে ফতুয়া কিনে এনে দিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ। তো কি হয়েছে? তুলি তোমার টা নষ্ট করেছে?মা তুমি তো ওসব পরো না। প্রয়োজনে আবার কিনে এনে দিবো।তবুও এভাবে ঝগড়া করো না।”
“আরে না। শোনো তুমি ওরে জিজ্ঞেস করো যে সেই সব পোশাক পরা ছবি রাফি ভাইয়ার ফোনে গেলো কী করে?”
“রাফি কে? তাশদীদের বন্ধু?”
“এই বেয়াদব মহিলা তার সাথে দু বছর যাবত প্রেম করে। সেই কথাটা আজ আমি জেনেছি।প্রেম করিস তুই ভালো কথা, এক বিছানায় থেকেও আমি জানি না অথচ আমার ছবি তুই তাকে কেন পাঠিয়েছিস?”
রাশেদ কিছুটা গম্ভীরমুখে তুলিকে প্রশ্ন করলো,
“সাগরিকা যা বলছে সেসব সত্যি?”
তুলি মাথা নিচু করে চুপচাপ ফুঁপিয়ে কাঁদছিল।ভয়ে না কী ব্যথায় সেটা বুঝা গেল না তাকে চুপ থাকতে দেখে সাগরিকা বলল,
“ও কী বলবে?আর এদিকে বন্ধুর ফোনে সেই ছবি দেখে তোমার আদরের ভাতিজা আমার উপর ক্ষেপেছে।রাফি ভাইয়া বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে কিন্তু সেও কথা খুলে বলেনি।”
“তুলি কী বিয়ের জন্য রাজি?”
“ওর বয়স কতো? এই বয়সে দুই বছর ধরে প্রেম করছে। আর রাজি হবে না? রাফি ভাই ওদের বিয়ের বেনারসি কিনে নিয়ে এসেছে ইন্ডিয়া থেকে। ও রাজি না থাকলেই হয়?”
“তবে রাফিকে ওর বাবা মা নিয়ে আগামীকাল আসতে বলো।আমি তুলির মা-বাবা এবং বাকী সবাইকে বলছি।”
“আমি পারবো না।যদি করতে বলো তবে তোমার পাগলা তাশদীদকে আগে পাবনায় রেখে আসো।কোনো কিছু বুঝবে না, শুনবে না আগেই আমার উপর রাগ দেখাবে।আমার আর ভালো লাগে না।কবে যেন দেশ ছেড়ে চলে যাবো।”
“তোর দেশ ছেড়ে যেতে হবে না।আর আমাকে যদি পাবনা যেতেই হয় তোকে সাথে করেই নিয়ে যাবো।”
পিছন থেকে তাশদীদের কন্ঠ শুনে সাগরিকা ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে।
রাশেদের পিছনে নিজেকে আড়াল করে নিতে নিতে বলল,
“হ্যাভ এ রিলাক্স, সি ইউ নট ফর মাইন্ড।”
(১৯৭)
সকাল বেলা সীমাকে রান্না ঘরে দেখেই মেজাজ গরম হয়ে গেল সাগরিকার। নিজের রাগ কে দমিয়ে রেখে সে তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু সীমা তার হাত ধরে বলল,
“রাগ করেছিস মানছি।কিন্তু পরিস্থিতি বুঝবি তো?”
“আপনি আমাকে বলছেন?আমি কী আপনাকে চিনি?”
“সাগরিকা স্টপ দ্যাট। এসবের মানে কী?রাগ করেছিস কর,একশো বার করবি তাই বলে কথা বলবি না? দেখেও চিনবি না? রুমুর সাথে যা হয়েছিল আমাদের সাথেও হবে এমন তো নয়।”
“আমার সাথে কোনো সম্পর্ক না দেখালেই খুশি হবো।”
কথা শেষ করে সাগরিকা হাত ছাড়িয়ে চলে গেল।ছুটির দিনে সকালের নাস্তার পর বসেছিল তুলি এবং রাফির বিষয়ে কথা হচ্ছিলো।এমন সময় তাশদীদের মা তার বিয়ের গয়না এবং বেনারসি নিয়ে এলেন।এই বেনারসিটা বরাবরই পছন্দ সাগরিকার পছন্দ। ছোটো বেলা থেকেই সে বলতো তার বিয়েতে এই শাড়িই পরবে সে। কিন্তু তাদের জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। তাই বিয়েতে বেনারসি কেন সাধারণ শাড়িও তার পরা হয়নি।
সীমাকে ডেকে এনে তাশদীদের মা সকলের সামনে সেই শাড়ি এবং গয়না গুলো তার হাতে দিয়ে দিলো।শাড়ি,গয়না দেওয়ার সময় বলল,
“বিয়ে করে যখন চলেই এসেছো তখন এসব তোমার।আমার যা আছে ইচ্ছে ছিল আমার ছেলের বৌকে দিবো।যত্ন করে রেখেছিলাম।আজ তোমাকে দিয়ে দিলাম।এবার তুমি যা ইচ্ছা করার করতে পারো।”
তাশদীদের মায়ের এমন কথায় সাগরিকার থেকেও সব থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছিল তাশদীদ এবং তার বাবা।একটা কথার মাধ্যমেই যে ভদ্রমহিলা বুঝিয়ে দিয়েছিল তাশদীদ তার ছেলে নয়, সতীনের ছেলে।আর এত বছরের এত আদর ভালোবাসা সব ছিল লোক দেখানো ঠুনকো অভিনয়।
—চলবে ….