#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ২৫
#M_Sonali
চাঁদনীকে হসপিটাল থেকে নিয়ে এসেছে আজ তিন মাস হলো। এর মাঝে চাঁদনী কারো সাথে কথা বলে না সব সময় চুপচাপ বসে থাকে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে এক নজরে। ঠিকমত খায়না কারো সাথে কথা বলে না রাতে ঠিকমতো ঘুমায়ও না চাঁদনী। যেন একটা পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়েছে চাঁদনী। চাঁদনীর আব্বু-আম্মু শত চেষ্টা করেও চাঁদনীকে স্বাভাবিক করতে পারেনি। যখন থেকে চাঁদনী ওর আব্বুর কাছ থেকে শ্রাবনের বেঈমানীর কথা শুনেছে, আর ওকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছে ওর আব্বু আম্মু তখন থেকেই চাঁদনী সবসময় মূর্তির মত বসে থাকে । যেন মনে হয় ওর মাঝে কোনো রকম কোনো ফিলিংস নেই সবকিছু যেন হারিয়ে গেছে ওর সবসময় এমন প্রতিবন্ধীর মত বসে থাকে চাঁদনী। চুলটা কখনো আচরায় না ঠিকমত গোসল করে না ওর আম্মু জোর করে ওকে সবকিছু করিয়ে দেয়। কিন্তু তাতেও যেন কোন লাভ হয়না চাঁদনীর। এই তিন মাসে চাঁদনী শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে। চোখের নিচে পড়েছে গাড়ো কালো কালি। দেখতে একদম বিচ্ছিরি লাগে আগের সেই সুন্দর্য্য আর নেই চাঁদনীর মাঝে।
চাঁদনী সব সময় অনুভব করে ওর আশেপাশে হয়তো শ্রাবণ আছে।প্রথম প্রথম চাঁদনী পাগলের মতো তার ভাম্পায়ার বরকে খুঁজত, কিন্তু যখন বুঝতে পারলো শ্রাবন ওকে ধরা দিবে না তখন থেকে চাঁদনীও আর শ্রাবনের অপেক্ষা করে না। কিন্তু তেমন কোথাও দেখতে পায় না ও শ্রাবনকে।তবে চাঁদনী নিশ্চিত জানে যে ওর আশেপাশে শ্রাবন আছে এটা ওর পুরো বিশ্বাস।চাঁদনী শুধু মনে মনে ভাবে শ্রাবণ হয়তো একদিন ফিরে আসবে ওর সামনে, আর ওকে বলবে কেন এমন বেঈমানি করেছে ওর সাথে। কিন্তু না কখনো সামনে আসে না শ্রাবন ওর।এমনকি ওকে এত অসুস্থ দেখেও শ্রাবন খোঁজ নেয় না এতে করে চাঁদনী আরো ভেঙে পড়েছে। কান্না করতে করতে চোখের জলটা ও যেন শুকিয়ে গেছে চাঁদনীর।
শ্রাবণ আড়াল থেকে তার চাঁদপাখিকে দেখে আর অঝরে কাঁদে। সবসময় চাঁদের ওপর নজর রাখে শ্রাবন। চাঁদনী যেমন বুঝতে পারে শ্রাবন তার আশেপাশে আছে, তেমনি শ্রাবনও জানে চাঁদনী ও কে অনুভব করছে। তবুও শ্রাবন ওর সামনে আসে না। শুধুমাত্র চাঁদনীর আব্বুকে দেওয়া কথা রাখার জন্য। কারন চাঁদনীর আব্বুর সেদিন শেষ কথা ছিলো শ্রাবন যদি চাঁদনীর কাছে ফিরে আসার চেষ্টা করে তাহলে শ্রাবন তার চাঁদপাখির মরা মুখ দেখবে।।মাঝে মাঝে শ্রাবণের খুব ইচ্ছে হয় ও দৌড়ে এসে তার চাঁদনীকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে
— আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও চাঁদ পাখি আমি যেটা করেছি সেটা তোমার ভালোর জন্য করেছি। আমাদের হাজারটা সন্তান যদি বলি দিতে হয় সেটাও আমি দেবো, তবু আমি শুধু তোমাকে চাই, তোমাকে নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকতে চাই, তোমার হাসি মুখ দেখতে চাই, তোমাকে সুস্থ দেখতে চাই চাঁদপাখি।
কিন্তু না শ্রাবণ সেটা বলতে পারেনা সব সময় বুকের মাঝে কষ্টের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরে কিন্তু তবুও সব কষ্ট সহ্য করে চাঁদনীকে কোন কিছু বলতে পারেনা আসতে পারে না চাঁদনীর চোখের সামনে।
চাঁদনীর সামনে না আসার আরও একটা কারণ আছে শ্রাবনের। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের নিয়ম হলো কোন মানুষের সাথে যদি কোন ভাম্পায়ারের বিয়ে হয় তাহলে সেই মানুষটাকে বাকি সব ভ্যাম্পায়ারেরা ওর স্বামী ভ্যাম্পায়ারের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ত খেয়ে মেরে ফেলে। আর সেই মানুষের স্বামী ভ্যাম্পায়ারের সেটা দাড়িয়ে দেখা ছাড়া তাঁর কোনো উপায় থাকে না। কেননা ওই মানুষটাকে মেরে ফেলার আগে তার স্বামী ভ্যাম্পায়ারের সব শক্তি তার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তাই চাঁদের ভালোর জন্য ওর থেকে দূরে সরে থাকে শ্রাবন ওর কাছে আসে না। আর বিয়ের আগে এই বিপদের কথাই বলেছিল শ্রাবণী তার ভাই-শ্রাবনকে। কিন্তু শ্রাবণ তখন চাঁদের জন্য এতটাই অন্ধ ছিল যে এই ভয়টা ওর মাঝে কখনো কাজ করেনি। কিন্তু এখন যখন ওর আব্বু আম্মু সবকিছু জানে আর শ্রাবনের বাচ্চা হয়েছিল চাঁদনীর পেটে, তাই শ্রাবনের মনে এখন ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ে ভয় কাজ করে। কারণ ভ্যাম্পায়াররা যদি কোনভাবে একবার জানতে পারে যে শ্রাবণ একটি মানুষকে বিয়ে করেছিল, আর সেই মানুষের পেটে জন্ম নিচ্ছিল শ্রাবনের বাচ্চা আর সেই মানুষটাকে বাঁচাতে শ্রাবন ওর নিজের ভ্যাম্পায়ার বাচ্চাটাকে নিজে হাতে মেরে ফেলেছে। তাহলে অবশ্যই তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে চাঁদনীর ওপর এবং নিমিষেই শ্রাবনের চোখের সামনে মেরে ফেলবে চাঁদনীকে। তখন শুধু দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না শ্রাবনের।
,
,
সোফার উপর বসে আঁচলে মুখ গুজে হু হু করে কান্না করছে চাঁদনীর আম্মু।চাঁদনীর আব্বু পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— এতটা ভেঙে পড়ো না চাঁদের আম্মু, তুমি কেন বুঝতে পারছনা আমরা যদি ভেঙে পড়ি তাহলে আমাদের মেয়েটাকে সামলাবে কে! ওকে তো আমাদেরকে সামলাতে হবে তাইনা! তুমি এভাবে কান্না করো না মেয়েটার কথা ভাবো আর যে করেই হোক মেয়েটাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করো।
— আর কবে বলতে পারো চাঁদের আব্বু আর কবে আমার মেয়েটা স্বাভাবিক হবে? সেই দিনের পর থেকে আমার মেয়েটার চোখে ঘুম নেই খাওয়া নেই নিজের যত্ন নেই কোন কিছুর ঠিক নেই। পাগলের মত সব সময় বসে থাকে যেন একটি প্রতিবন্ধী। সবসময় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে,কারো সাথে কথা বলে না একদম পাথড়ের মুর্তিতে পরিনত হয়েছে আমার হাসিখুশি মেয়েটা। এভাবে নিজের একমাত্র মেয়েকে দেখে আমি কিভাবে শান্ত থাকতে পারি বলতে পারো চাঁদের আব্বু?
কথাগুলো বলেই আবার হু হু করে কাঁদতে লাগল চাঁদের আম্মু। চাঁদের আম্মু কে এভাবে কাঁদতে দেখে কিভাবে শান্তনা দেবে সেটা বুঝতে পারছে না চাঁদের আব্বু। ভিতরে ভিতরে সে নিজেও শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার একমাত্র মেয়ের টেনশনে। কিন্তু বউ এবং মেয়েকে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নিজেকে সবসময় স্বাভাবিক রেখে দেখাতে হয় চাঁদের আব্বুকে।
— তোমার জন্য হয়েছে চাঁদের আব্বু সবকিছু তোমার জন্য হয়েছে। আমার মেয়ের আজ এই অবস্থার জন্য একমাত্র তুমি দাই ই। সেদিন তুমি যদি শ্রাবণের নামে এত বড় মিথ্যা কথা না বলতে, শ্রাবনকে দিয়ে চাঁদের পেটের বাচ্চাটাকে না মেরে ফেলতে আর শ্রাবনকে ওভাবে ওর জীবন থেকে সরিয়ে না দিতে, তাহলে আজ আমার মেয়েটা ভালো থাকতো। এরকম পাথরের মূর্তি হয়ে থাকতে হতোনা আমার মেয়েটাকে। সব তোমাকে জন্য হয়েছে চাঁদের আব্বু সব তোমার দোষ। তুমি একজন আব্বু নামের কলঙ্ক।
হঠাৎ রেগে গিয়ে এই কথাগুলো বলে উঠল চাঁদের আম্মু। চাঁদের আম্মুর কথা শুনে চাঁদের আব্বু মাথায় হাত দিয়ে বসে বলে উঠলো
— হ্যাঁ তুমি হয়তো ঠিকই বলছ চাঁদের আম্মু, আমার জন্য আমার মেয়েটার আজকে এই অবস্থা। কিন্তু আমিই বা কি করবো বল, উ ভ্যাম্পায়ারটার সাথে আমার মেয়ে থাকলে ওর পেটে ভ্যাম্পায়ার সন্তান হলে আমার মেয়েটা শেষ হয়ে যেত।বাচ্চা ডেলিভারির সময়ই হয়তো মারা যেত চাঁদনী। নিজের একমাত্র আদরের মেয়ের মৃত্যু কিভাবে আমি সহ্য করতাম বলতে পারো চাঁদের আম্মু?
— আমি এত কিছু শুনতে চাই না চাঁদের আব্বু, আমি আমার মেয়েকে স্বাভাবিকভাবে ফেরত চাই। আমার সেই আগেকার হাসিখুশি মেয়েটাকে ফেরত চাই এভাবে পাথরের মূর্তি হয়ে ওকে আর দেখতে পারছিনা আমি। আমার মেয়েটাকে তুমি সুস্থ করে দাও ওকে তুমি স্বাভাবিক করে দাও যেভাবেই হোক চাঁদের আব্বু। আমি আর সহ্য করতে পারছি না আমার মেয়েরা এমন অবস্থা।
— আমি একটা উপায় পেয়েছি চাঁদের আম্মু। আমরা চাঁদকে আবার বিয়ে দেবো ভালো কোন পাত্র দেখে। তারপর সেই নতুন স্বামীকে ও নতুন সংসার পেয়ে আমাদের চাঁদ অবশ্যই আবার ভালো হয়ে যাবে।
— তাই করো চাঁদের আব্বু তোমার যা খুশি তাই কর তুমি। কিন্তু আমি আমার চাঁদকে ফেরত চাই আগের মতো হাসিখুশি মেয়েটাকে ফেরত চাই আমি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চাঁদনীর বিয়ের আয়োজন কর আর ভালো কোন পাত্র দেখো আমার চাঁদনীর জন্যে।
— বাহ আব্বু আম্মু বাহ, তোমাদের মত আব্বু আম্মু ঘরে ঘরে থাকা দরকার। যারা নিজের মেয়ের সংসার ভেঙে দিয়ে নিজের মেয়ের বাচ্চাকে মেরে ফেলে তার স্বামীর নামে ফাসিয়ে দিয়ে নিজের মেয়ের স্বামীকে তার থেকে আলাদা করে দিয়ে তাকে নতুন করে বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখো। তোমাদের মত বাবা-মাকে নিয়ে অহংকার হচ্ছে আমার। আমি কখনো ভাবতে পারিনি আমার আব্বু আম্মু আমার সাথে এত বড় বেইমানি করতে পারে। আজ অব্দি আমি শুধু শ্রাবনকে ভুল বুঝে গেছি, যে আমাকে পাগলের মত ভালবাসতো তাকে আমি ভুল বুঝে গেছি সব সময়। সব সময় ভেবেছে হয়তো আমার সাথে বেঈমানি করেছে আমার ভ্যাম্পায়ার বরটা কিন্তু আসল বেইমান যে আমার নিজের গর্ভধারিনী মা আর জন্মদাতা বাবা সেটা আমি কখনো ভাবতে পারিনি। তোমরা কেন আমার সাথে এমন করলে আব্বু আম্মু কেন কেন কেন?
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পড়লো চাঁদনী। চাঁদনী কে হঠাৎ এভাবে দেখে আর ওর কথা শুনে থতমত খেয়ে ঘাবড়ে গেল চাঁদের আব্বু আম্মু। চাঁদনী আড়াল থেকে ওর আব্বু আম্মুর সব কথা শুনে ফেলেছে। শুনে বুঝতে পেরেছে আসলে তার শ্রাবনের কোন দোষ নেই যা হয়েছে সব ওর আম্মু আব্বুর জন্য হয়েছে।এটা কিছুতেই মানতে পারছে না চাঁদনী। যে তার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের কারণ তার নিজের আব্বু আম্মু তার সন্তানের মৃত্যুর কারণ তার নিজের আব্বু আম্মু। এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না চাঁদনী। চাঁদনী পাগলের মত কান্না করে চলেছে ফ্লোরে বসে।
চাঁদনী কে এভাবে কাঁদতে দেখে চাঁদের আব্বু আম্মু চাঁদনির পাশে বসে চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— আমাকে ক্ষমা করে দাও মামনি আমি সত্যিই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি কখনো বুঝতে পারিনি আমার ভুলের কারণে এভাবে তুমি পাথড় হয়ে যাবে, তোমার এরকম অবস্থা হবে। বিশ্বাস কর আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্য করেছি। শ্রাবনকে তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছি শুধুমাত্র তোমার ভালোর জন্য। আর তোমার পেটে যে বাচ্চাটা ছিল সেটা ভাম্পায়ার এর বাচ্চা। ওই বাচ্চা যদি তোমার পেটে থাকতো তাহলে বাচ্চা হওয়ার সময় তুমি মরে যেতে মামনি। আমি তোমাকে হারাতে চাইনি আমি আমার একমাত্র সন্তান তোমাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবো বল।
আব্বুর কথা শুনে চাঁদনী কান্না করতে করতে বলল
— আর তোমার একমাত্র সন্তান তোমার একমাত্র মেয়েকে এভাবে পাথরের মূর্তির মতো দেখতে তোমাযর কি ভালো লাগছে আব্বু? তুমি কি চাও আমি সারা জীবন এভাবেই থেকে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাই? আমার সন্তান কে নাহয় মেরে ফেলেছো আমাকে বাঁচানোর জন্য।কিন্তু আমার শ্রাবনকে কেনো তুমি আমার থেকে সরিয়ে দিলে, কেন ওর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার কাছে ওকে বেইমান বানালে আব্বু। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে মিশে আছে শ্রাবণ। আমার প্রতিটা রক্তের ফোটায় ফোটায় মিশে আছে শ্রাবণ। শ্রাবণকে এনে দাও আব্বু না হলে আমি মরে যাব, মরে যাব ওকে ছাড়া। থাকতে পারবো না আমি শ্রাবনকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবো না আমি আব্বু। আমার শ্রাবনকে এনে দাও তুমি।
কথাগুলো বলতে বলতে কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল চাঁদনী।চাঁদনীর শরীর অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় অজ্ঞান হয়ে গেল ও। চাঁদনীর এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ল চাঁদের আব্বু আম্মু। চাঁদের আব্বু বুঝতে পারল কত বড় ভুল করেছে উনি শ্রাবনকে চাঁদের জীবন থেকে সরিয়ে, চাঁদের অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে শ্রাবন এটা চাঁদনীকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চাঁদের আব্বু মনে মনে বলল
— আমি যে ভুল করেছি সব ভুল আমি শুধরে নেব মামনি। শ্রাবনকে আমি এনে দেবো তোমার কাছে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে আবার। তুমি আবার সুস্থ হয়ে যাবে।
,
,
গত দুই ঘন্টা হল অজ্ঞান অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে চাঁদনী।কোনোভাবেই চাঁদনীর জ্ঞান ফেরানো যাচ্ছে না। ডাক্তার এসে চাঁদনীকে দেখে স্যালাইন পুশ করে দিয়ে গেছে সাথে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে। যে কারনে বিঘোরে ঘুমিয়ে আছে চাঁদনী। কিন্তু চাঁদের এমন অবস্থা দেখে ওর আব্বু আম্মুর একটুও ভালো লাগছেনা। চাঁদের আব্বু চাঁদের মাথার কাছে কিছুক্ষণ বসে থেকে চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে কি যেন একটা ভেবে চাঁদের কাছ থেকে উঠে গিলো। তারপর নিজের রুমের আলমারির কাছে গিয়ে কি যেন একটা আলমারির মধ্যে খুঁজতে লাগলো। এটা দেখে চাঁদের আম্মু চাঁদের আব্বুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল
— কি হয়েছে চাঁদের আব্বু, তুমি কি খুজছো এভাবে আলমারিতে?
চাঁদের আম্মুর কথার উত্তর না দিয়ে চাঁদের আব্বু আলমারি থেকে অনেক খুজে একটা আংটি বের করল। সেই আংটির উপরে একটা নীল রঙের পাথর বসানো পাথরের উপরে খোদাই করে আঁকানো আছে একটা ভ্যাম্পায়ারের মুখ। চাঁদের আব্বু আংটিটা সামনে উঁচু করে ধরে মনে মনে শ্রাবন কে স্মরণ করে শ্রাবন কে ডাকতে লাগল আর বলতে লাগল
— শ্রাবণ তুমি কোথায় এই মুহূর্তে এখানে চলে এসো। তোমার চাঁদনীর অবস্থা খুব খারাপ ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছে না। আমি তোমায় যে কসম দিয়েছিলাম সে কসম আমি তোমার থেকে ফিরিয়ে নিলাম। তুমি তাড়াতাড়ি এখানে চলে এসো শ্রাবণ আমার মেয়েটাকে তুমি বাঁচাও।
কথাগুলো বলার সময় চাঁদের আব্বুর চোখ থেকে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ সময় পার হয়ে গেল কিন্তু শ্রাবন এখনও আসছে না। এটা দেখে হতাশ হয়ে চাঁদের আব্বু ফ্লোরে বসে পড়ে কাঁদতে লাগল। আর বলতে লাগল
— কেন আমি সেদিন শ্রাবনকে চলে যেতে বললাম কেন আমি নিজের মেয়ের কথা ভাবতে গিয়ে নিজের মেয়ের এত বড় ক্ষতি করে ফেললাম। কেন আগে বুঝিনি আমি চাঁদের ভালো করার বদলে ওর সবচাইতে বড় ক্ষতিটাই করে বসে আছি। সব আমার দোষ আমার জন্যই আজ আমার মেয়েটার এই অবস্থা। আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে চাঁদের আম্মু, আমি এখন কি করবো কিভাবে আমার মেয়েটাকে ভাল করব স্বাভাবিক করব। শ্রাবন মনে হয় সত্যিই আর কখনো ফিরে আসবে না। কারন জানতে আমি যখন একেবারে শ্রাবনকে চলে যেতে বলি তখন শ্রাবন আমার হাতে এই আংটিটা দিয়ে বলেছিল যখন কোনো প্রয়োজন হবে এটা যেন সামনে নিয়ে ওকে স্বরণ করি, ও তখনই চলে আসবে। কিন্তু শ্রাবন তো এলো না! তাহলে কি সারা জীবনের মতো চলে গেল শ্রাবন আর কখনো ফিরবেনা ও। আমি আমার চাঁদনীকে কিভাবে বাঁচাবো জ্ঞান ফিরলে আমি কি উত্তর দেব ওর কাছে?
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এই এক পর্বে গল্পটা শেষ করতে পারলাম না তাই কালকে আরেক পর্ব দিয়ে শেষ করবো ইনশাআল্লাহ।