#চেম্বার_কথন_২৫
ভদ্রমহিলা, ” আপা আজকে যখন পিলখানা বিদ্রোহের নিহত শহীদদের জন্য মোনাজাত হচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল এই একটা দিনইতো! ব্যাস তারপর সব শেষ। আবার আগামী বছর এই দিনটায় সবাই একত্রিত হবে। অথচ আমার হাজব্যান্ড ২৫ তারিখে নিখোঁজ হলেন, ২৬ গেলো, ২৭ গেলো, ২৮ গেলো, ১ গেলো, আমি ২ তারিখে পাগলের মতো বেওয়ারিশ লাশের মধ্যেই ওকে খুঁজে পেলাম। আজ যখন আমি নিচু হয়ে ওর কবরটাকে ছুঁয়ে দিচ্ছিলাম, তখন ওঁর পাশের কবরে যে ভাইকে দাফন করা হয়েছে, সেই ভাবি আমাকে বললেন, ‘ ভাবী এখনও আপনার চোখের পানি শুকায়নি?’ আপা! আপনি বলেন! এখনো আমার চোখের পানি কেন শুকায় না? “
‘কিছু কিছু প্রশ্নের কোন উত্তর হয় না।’ এই কথাটা বলে ছেড়ে দেয়া যায়। কিন্তু আমি আবার নিজেই নিজের মনের আয়নায় তাকালাম। এই বালখিল্যসুলভ কথাটা একজন পেশাজীবীর উত্তর হতে পারে না। অথচ সত্যিই আমি নিরুত্তর বসে থাকলাম। ভদ্রমহিলার চোখ থেকে ঝর-ঝর করে অশ্রুবিন্দু ঝরছে। আমি মৌন!
সেই অজস্র অশ্রুবিন্দুকে কেমন করে শ্রদ্ধা জানাতে হয়, আজকে জীবনে প্রথম উপলব্ধি করলাম, সেই আচরণগত দক্ষতা, সেই তাত্ত্বিক ভাষা জ্ঞানও আমার নেই।
ইদানিং প্রায়ই মনে হয় আমি এতো কম জানি! কত কিছু বোঝার বাকি থেকে গেল জীবনে। হংস মাঝে বক যথা হয়ে মহাকালের আদি থেকে অনন্তর শেকলে একটা বিন্দুও কি হতে পারলাম?
ভদ্রমহিলা আমার জন্য আজ একটা কেক এনেছেন। চোখটা ভিজে গেল কেকের উপরের লেখাটা দেখে।
হায়দারের সেই গানটা মনে পড়ল,
“….কত ব্যথা বুকে চাপালেই
তাকে বলি আমি ধৈর্য,…”
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার