- প্রকৃত বন্ধুর গল্প
- বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত
- বন্ধুত্বের ভালোবাসা
- বন্ধু নিয়ে কষ্টের স্ট্যাটাস।
১.প্রকৃত বন্ধুর গল্প
#হারায়ে খুঁজি
আমার ছেলে ঘুমানোর পর আমার বউ আমার কানে ফিসফিস করে বলছে
আজকে আমি একটা দারুণ কাজ করেছি। কিন্তু এই কাজের জন্য তুমি আমাকে কোন সমালোচনা করতে পারবে না।
আমার আজকে বাসায় আসতে দেরী হয়েছে। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। তাই বাসায় রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়েছি। ছেলে ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পরেছে। সিমুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবো কিনা বুঝতে পারছি না। মনোযোগ দিয়ে শুনতে গেলে ঘুম চলে যেতে পারে। তার চাইতে বরং সিমুর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে ঘুমিয়ে পড়াই মঙ্গলজনক হবে।
আরে না কিসের সমালোচনা। তুমি পারফেক্ট কাজ করেছো। এখন শান্তির ঘুম দাও। পারফেক্ট কাজের পর পারফেক্ট ঘুম তোমাকে আরো পারফেক্ট করবে।
সিমু আমার কান ধরে টানছে
তুমিতো শুনলেই না আমি কি কাজ করেছি। পাশের বিল্ডিং এর সোমা ভাবীকে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছি উনার দুই বাচ্চা সহ। উনারা এখন থেকে আমাদের বাসাতেই থাকবে।
আমি ভালো করেছো বলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু সিমুর কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনার পর আমার ঘুম উধাও হয়ে গিয়েছে। আমি তড়াক করে খাটের উপর বসে পরলাম।
মানে কি?
সোমা ভাবীর স্বামী সোহেল ভাই খুব অদ্ভুত। উনি ভাবীকে যেন সহ্যই করতে পারে না। কথায় কথায় অপমান করে। খুব ছোট করে কথা বলে। ভাবীর বাবার বাড়ি অবস্থা তেমন ভালো না। সেটা নিয়ে খোঁটা দেয়। উনার দুই বাচ্চা। সোহেল ভাই বন্ধু, বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে প্রায় রাতে করে বাড়ি ফিরে। ভাবীর জন্য খুব কঠিন দুই বাচ্চাকে ম্যানেজ করা। সোহেল ভাই কোন বাঁধা কাজের লোকও রাখতে দেয় না। আর উনাদের সঙ্গে সোহেল ভাই এর বাবা, মা থাকে। উনারা এত বেশী ডিম্যান্ড করে। বলার মত না। উনাদের কাজ আগে করে তারপর বাচ্চাদের সময় দিতে হবে। সেদিন বড় ছেলেটা চেয়ার থেকে পরে কি ব্যথা পেলো। তারপরেও উনার শ্বশুর, শাশুড়ি সারাক্ষণ কথা শুনায়। বলে বউ কোন কাজের না। আমি ভাবীকে প্রায় কাঁদতে দেখি। আমার এত খারাপ লাগে। তাই কয়েকদিন ধরেই ভাবীকে বলছিলাম আমাদের বাসায় চলে আসতে। আমাদেরতো গেস্ট রুমটা খালি পড়ে থাকে। আমরা তিনজন মানুষ। আমাদের একজন বাঁধা কাজের মেয়ে। উনাকে যদি একটু সাহায্য করা যায় তাতে মন্দ কি।
আমি বুঝতে পারছি না সিমু তুমি কিভাবে সাহায্য করবে?
আসলে আমি একটা চান্স নিয়ে দেখতে চাই। আসলেই কি সোহেল ভাই এর উনার বউ অথবা বাচ্চাদের প্রতি ভালবাসা আছে? আর যদি না থাকে তবে এই ভালবাসা-হীন সম্পর্কের কি কোন মূল্য আছে। যেখানে প্রতিদিন মরে যেতে হয়।
যদি উনারা পুলিশের আশ্রয় নেয় তখন কি হবে?
ভাবী একজন সাবালিকা মহিলা। আর সোহেল ভাইতো ভাবীকে মনে হয় সহ্যই করতে পারে না। তাহলে পুলিশের আশ্রয় কেন নিবে? বরং ভাবী উনার বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনতে পারে।
কিন্তু এটা কি কোন সমাধান?
না এটা কোন সমাধান না। কিন্তু আমার মনে হলো এই পরিস্থিতিতে একজন নারী হয়ে আমি একজন নারীর পাশে দাড়াতে পারি আমার সেই সামর্থ্য আছে। দরকার হলে ভাবি কোন চাকরি বাকরি অথবা ব্যবসা বাণিজ্য খুঁজে নিবে। কিন্তু ওই বাসায় উনার থাকা উনার প্রতিদিন একবার করে মরে যাওয়া।
উনার বাবা মা?
সেই একেই ঘটনা।
মা এমন হয়। সহ্য করে নে। সব ঠিক হয়ে যাবে। পরে এই সমাজে মুখ দেখাতি পারবি না। বাচ্চারা কার পরিচয়ে বড় হবে। সোমা ভাবী বাচ্চা নিতে চায়নি। উনার বাবা-মা, ই সারাক্ষণ বলতো বাচ্চা নিয়ে নে। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমিতো জানো এখনকার বাচ্চারা কেমন হয়। এদেরকে সামাল দিতে গিয়ে একজন মা কত ডিপ্রেশনে চলে যায়। এই সময়টাতে মা-রা সহানুভূতি চায়, সাহায্য চায়, ভালবাসা চায়।
আমি আবার শুয়ে পড়লাম। সোহেল ভাই এর সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। উনি ভালো চাকরি করে। কিন্তু সারাদিন বাইরে এই পার্টি, ঐ পার্টি করে বেড়ায়। জীবনে ব্যালেন্স বলে একটা শব্দ আছে সেটা সম্পর্কে উনার ধারনা অতি স্বল্প।
পরের দিন আমি নিজেই ইচ্ছে করে উনার সঙ্গে দেখা করলাম। দেখি রাস্তায় টং দোকানে চা খাচ্ছে এবং সিগারেট টানছে।
কি অবস্থা ভাই? জিজ্ঞেস করলাম।
আর কি অবস্থা। ভালোই আছি। আমার গাধা, মদন বউ রাগ করে চলে গিয়েছে। মোল্লার দৌড় আর কই মসজিদ পর্যন্ত। বুঝছেন ভাই। মহিলাদের একটু পাত্তা দিলে এরা মাথায় চড়ে বসে। আমি তার কোন খবরও নিবো না। এবং তাকে আনতে তার বাপের বাড়িও যাবো না। উনারাই কয়েকদিন পর সুড়সুড় করে আমার কাছে দিয়ে যাবে। ওরে এইবার এমন কথা শুনাবো, উঠতে বসতে কথা শুনাবো। আর এইবার ফিরে আসলে দুই গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিবো। জন্মের মত শিক্ষা দিবো।
আমি সোহেল ভাই এর কথা শুনে শঙ্কিত হলাম। উনি যদি জানতে পারেন উনার বউ, বাচ্চা আমার বাসায় আছে তবে আমার গালেও হয়তো দুইটা চড় বসিয়ে দিবে।
তবে আমার বাসায় এখন বেশ উৎসব ভাব। আমার বেশ মজাই লাগে। এই রঙিন শহর ঢাকাতে সবাই ব্যস্ত। সবাই ছুটে চলছে। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় এই যে প্রতিদিন কতজন মারা যায় তাদেরওতো প্ল্যান ছিলো আগামী শীতে তারা কোথায় যাবে। কি করবে। আসলে প্ল্যান হওয়া উচিত শুধু আজকের জন্য। আজকের দিনটা কিভাবে কাটানো যায়। বহুদিন পর বাসায় অতিথি। জমজমাট পরিবেশ। বেঁচে থাকার কেমন একটা অর্থ খুঁজে পাচ্ছি।
সোমা ভাবীর বড় ছেলেটার বয়স পাঁচ বছর, ছোটটা আড়াই বছর। বেশ দুষ্ট আছে। এটা সত্যি এখনকার বাচ্চারা অনেক বেশি ডিমান্ডে-বল হয়। এদের সামলানো কষ্টকর। একজন মায়ের জন্য একা কোন বাচ্চাকে সামাল দেয়া এখন বেশ দুঃসাধ্য কাজ। আমার ছেলে ওদের সঙ্গে খেলে। বাসায় মোটামুটি ভাংচুর পরিবেশ। এ যদি একটা খেলনা ভাঙ্গে আরেকজন আরেকটা খেলনা ভাঙ্গে। সোমা ভাবী আমার বউকে অনেক হেল্প করে বিভিন্ন কাজে। তবুও উনি মাঝে মধ্যে কান্নাকাটি করেন। বলেন আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। একে কি বেঁচে থাকা বলে? উনি উনার পরিবারকে জানিয়েছে। উনার বাবা মা বেশ চিন্তায় পরে গিয়েছে। আমার বউ উনার বাবা, মা-কে বুঝিয়েছে আপনাদের চিন্তার কিছু নেই। দেখা যাক না কি হয়। কোন না কোন রাস্তা নিশ্চয় বের হবে।
আমি নিয়মিত সোহেল ভাই এর সঙ্গে দেখা করি, গল্প করি। উনি এখনো বেশ জোশে আছে।
বুঝছেন আমিনুল ভাই। আমার জন্য আমার মা পাত্রী দেখছে। আমি যদি সোমাকে শিক্ষা না দেই তবে আমার নাম সোহেল না। ওতো আমার বাসায় ফিরে আসবেই। এসে দেখবে তার রুম দখল। সেখানে শুয়ে আছে অন্য মেয়ে। তারপর ওর অবস্থা কি হবে। বাসার কাজের মেয়ের অবস্থা হবে।
আমি ইদানীং উনাকে বলি
আচ্ছা সোহেল ভাই ভাবী যদি আর ফিরে না আসে। তখন কি হবে?
ধুর ভাই। দুই ছেলে নিয়ে কোন পুরুষ তাকে বিয়ে করবে। তার বাবা, মায়ের এমন সাহস নাই যে মেয়েকে সাপোর্ট দিবে। ওর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
আমাদের ইদানীং প্রায় পিকনিক হচ্ছে। বিশেষ করে বন্ধের দিনগুলোতে আমার বউ এবং ভাবী রান্না করে। সেগুলো আমরা বক্স করে কোন পার্কে চলে যাই। সবুজের কাছে কোথাও চলে যাই। নদীর ধারে চলে যাই। বাচ্চারা খেলাধুলা করে। আমরা গল্প করি।
সোমা ভাবি প্রায় বলে
আপনাদের আমাদের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি নানা জায়গায় যোগাযোগ করছি। কোন ব্যবস্থা হলে চলে যাবো।
সিমু আমার দিকে তাকায়। আমি ভাবিকে বলি
ভাবি আজকে যদি আমার বোন এমন অবস্থায় পড়তো তবে কি আমি তার পাশে থাকতাম না। বিশ্বাস করুন আমাদের ভীষণ ভাল লাগছে। অনেকদিন পর মনে হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকার কোন অর্থ আছে। জীবনে ভালো কোন কাজ করছি।
কিছুদিন পর সোহেল ভাই এর সঙ্গে আবার দেখা। না এইবার লোকটাকে অন্যরকম লাগছে। ভেঙ্গে পড়েছে মনে হচ্ছে। মুখ ভর্তি দাড়ি। চোখ গর্তে ঢুকে গেছে। চোখের নীচে কালি।
ভাই ইদানীং বাচ্চাদের কথা খুব মনে পড়ে। কতদিন ওদের কোলে নেই না। কতদিন বাবা ডাক শুনি না। কতদিন বুকে জড়িয়ে ধরি না।
আপনি না পাত্রী খুঁজছিলেন। বিয়ে করবেন বলে?
ভাই রাগের মাথায় বলেছিলাম। আসলে কি আমার সেই বয়স আছে বলেন। জীবনের দুইকাল গেলো। সুস্থ থাকবো হয়তো আর এক কাল। জীবন কি নতুন করে শুরু করা এতই সহজ? সোমার কথাও খুব মনে পড়ে। আশেপাশের বন্ধুদের জীবন দেখি। কত প্যারায় থাকে। আর আমার এবং আমার বাসার সব দায়িত্ব আমি ওর উপর চাপিয়ে দিয়েছিলাম। আমার বাবা, মাও উল্টাপাল্টা কথা বলতো। জানেন এখন উনাদের সঙ্গে আমার প্রতিদিন ঝগড়া লাগে। কেন উনারা আমার বউয়ের সঙ্গে, বাচ্চাদের সঙ্গে এমন করতো। বড্ড দেরী হয়ে গেছে বুঝতে ভাই। বড্ড দেরী হয়ে গেছে।
সোমা ভাবীকে নিয়ে আসেন আবার জীবনে।
কিভাবে আনবো। ওর বাপের বাড়ি গিয়েছিলাম পাইনি। ও যে কোথাও আছে কেউ বলতে পারে না। বলেছে ওর কোন বান্ধবীর বাসায় আছে। আমার বউ, আমার ছেলেরা কোন বিপদে পড়লো কিনা এই চিন্তায় এখন ঘুমাতে পারি না।
বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় যান। রিল্যাক্স হতে পারবেন?
ধুর ভাই। বন্ধু বান্ধবদের আড্ডা তখন ভাল লাগে যখন জীবনের সবকিছু ঠিক চলে। আমার জীবনের কিছুই ঠিক নাই। কিসের আড্ডা। কিসের ভালোলাগা।
আপনিতো ভাবীকে অনেক ছোট করতেন, অনেক খোঁচা দিতেন।
ভাই আমি যে কি মনকষ্টে আছি আপনাকে বুঝাতে পারবো না। জানেন এক বুক হাহাকার নিয়ে জীবন কাটাচ্ছি। আহা আমার ছেলেগুলো। আহা আমার বউ। ভাই মানুষ ভুল করে। তাই বলে আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। জানেন গতকাল আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাহস পাইনি দেখে করতে পারিনি। আমার জন্য দোয়া করবেন। যেন ওদের খুঁজে পাই।
আমি বাসায় এসে আমার বউ এবং ভাবীকে ডেকে বললাম।
আমার বউ বলে।
আরে না। পুরুষমানুষের কোন ঠিক আছে নাকি? এক কথা বলে আবার পরেরদিন পরিবর্তন হয়ে যাবে।
সোমার চোখ ছলছলে।
না আপা। লোকটা মিথ্যা বলে না। কটু কথা বললেও সরাসরি বলে। সত্যি বলে। আত্মহত্যা সত্যিই মনে হয় করতে চেয়েছে। বানিয়ে বলার লোক ও না। আপনারা যদি অনুমতি দেন আমি ওর কাছে ফিরতে চাই। ও যদি ভুল বুঝতে পারে। যদি পরিবর্তন হয়। একটা চান্স নিয়ে দেখি না।
সোমা সব গুছিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে ফেরত যাচ্ছে তার স্বামীর কাছে। সোহেল ভাইকে ফোন দিয়েছিলো। সোহেল ভাই নাকি কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। সোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কথা দিয়েছে সে সোমাকে সবকাজে সাহায্য করবে। সোহেল ভাই এর বাবা মাও সোমা ভাবীর সঙ্গে কথা বলেছে। তারাও বলেছে তারা আসলে মানুষের কথা কান দিয়ে ন্যায় অন্যায়ের সব ভুলে গিয়েছিলো। তারা অন্যায় করেছে। উনারা এখন উনাদের বউমা এবং নাতিদের ফেরত চায়। জীবনে আর চাওয়ার কিছু নেই।
সোমা ভাবী বের হওয়ার সময় সিমু উনাকে জড়িয়ে ধরে বললো
ভাবী যদি কখনো সমস্যা বোধ করেন তাহলে ভুলে যাবেন না। এই বাসার একটা রুম আপনার জন্য আছে। সেটা আপনার জন্য সবসময় থাকবে। আপনার বাচ্চারা আমার বাচ্চা। ওদের যত্নের কোন কমতি হবে না।
সোমা ভাবী চোখের জল মুছতে মুছতে বিদায় নিচ্ছেন।
আমি ভাবছি এই স্বল্প জীবনে আমাদের মূল্যবান সময় আমরা কত অযথা খরচ করি।
হিংসা, বিদ্বেষ, অবহেলা, স্বার্থপরতা, ঘৃণা, বিষণ্ণতা নিয়ে খরচ করি।
এই সময়গুলো ভালোবাসাময় হতে পারতো, জীবনের অমূল্য স্মৃতি হতে পারতো।
#আমিনুলের_গল্প_সমগ্র
২.বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত
বিপদ ও বন্ধুর পরিচয়-
বিপদে বন্ধুর পরিচয় কথাটা সত্যি। যে যাকে বন্ধু মনে করে বিপদে তার প্রতি ভরসা ও বিশ্বাস রাখে। বহুলোক বিশ্বাস ও ভরসা রাখে তার পরিচিত স্বজন, তথাকথিত বন্ধুর উপর যদিও তাদের চরিত্র ইসলামের বিপরীত। যখন বিপদে তাদের হতে সাহায্য, সাড়া পায় না তখন বলে উঠে বিপদে বন্ধু চেনা যায়।
অথচ মুমিনের বন্ধু ও ভরসা হল আল্লাহ। তাই জীবনে যাই ঘটুক হতাশ হয় না, যাই ঘটুক আল্লাহ রক্ষা করবেন, না হয় এই বিপদ, দুঃখ, কষ্ট জান্নাতের সম্মান বৃদ্ধির কারণ হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলির সঙ্গে শত্রুতা করে, আমি তাকে আমার সঙ্গে যুদ্ধের আহ্বান করি।
আমি বান্দার ওপর যা ফরজ করেছি, তা অপেক্ষা আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো বস্তু নেই, যা দ্বারা আমার বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে।
আর বান্দা নফল ইবাদতের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে থাকে, এক পর্যায়ে আমি আল্লাহ স্বয়ং তাকে ভালাবাসতে শুরু করি। যখন আমি তাকে ভালাবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে। তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে হাঁটে। সে যদি কিছু চায় আমি তা অবশ্যই দান করি, যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দান করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫০২)।
হাদিস বিশারদরা বলেন, আল্লাহ ও রসুলের ভালোবাসা ঈমানের অংশ। সুতরাং তা মুমিনের ওপর ওয়াজিব।
কোরআন ও হাদিসের একাধিক বর্ণনা দ্বারা তা প্রমাণিত।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও ঈমানদারগণ; যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং বিনম্র; আর যারা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও বিশ্বাসীদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই আল্লাহর দল, তারাই বিজয়ী।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত: ৫৫-৫৬)।
আল্লাহর বন্ধুদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের জাগতিক জীবনের বন্ধুত্ব ও দূরত্বের ভিত্তিও হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা। আল্লাহর বন্ধুগণ ব্যক্তিগত রাগ, ক্ষোভ ও অভিমানের চেয়ে আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা.) ও ইসলামকে বড় করে দেখে। ফলে হাদিসের ভাষায় তাদের বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়টিই আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার ও তোমাদের শত্রুদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কোরো না।’ (সুরা: মুমতাহিনা, আয়াত: ১)।
মুসলিমদের বিপদ দেখলে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় মুনা–ফেক আর মুমিন নিজ জীবন, স্বজনের চেয়েও আল্লাহ ও তার রসুলকে ভালোবাসেন।
উহুদ যুদ্ধে বহু সাহাবী শহীদ হন স্বয়ং রসুলুল্লাহ (সাঃ) রক্তাক্ত হন। বানূ দীনার গোত্রের এক মহিলার স্বামী, ভাই ও পিতা শহীদ হন। মহিলার কাছে এই সংবাদ পৌছলে তিনি শুধু বলেছিলেন- রসুলুল্লাহ’(সা) কেমন আছেন। লোকজন বলল, হে অমুকের মা! আপনি যেমন কামনা করেছেন আলহামদুলিল্লাহ তিনি ভালো আছেন।
মহিলাটি বললেন- তাকে একটু দেখান, আমি তাকে এক নজর দেখে নিই!! রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ইশারা করে তাকে দেখানো হল।
রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখে তিনি বলে উঠলেন, “ইয়া রসুলুল্লাহ আপনাকে সুস্থ দেখার পর সকল বিপদ আমার নিকট তুচ্ছ।”
পক্ষান্তরে মুসলিমরা যখন উহুদ যুদ্ধের শহীদের জন্য কান্নাকাটি ও শোক প্রকাশ করছিল তখন মুনাফেকরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল মুসলিমদের মাঝে দুঃখ, হতাশা ছড়িয়ে রসুল (সাঃ) হতে তাদের বিছিন্ন করতে। সাথে কিছু ইয়াহুদীরা প্রচার করে- মুহাম্মাদ যদি সত্য নবী হতেন শত্রুপক্ষ তার উপর জয়ী হতে পারতেন না। তিনি এভাবে যখমপ্রাপ্ত ও বিপদগ্রস্ত হতেন না। বরং তিনি ক্ষমতালোভী, সকল ক্ষমতা করায়ত্ব করাই তার উদ্দেশ্য।
মুনাফেকরা প্রচার করছিল তোমরা যদি আমাদের মত অনুসরন করে যুদ্ধ না করে ফিরে আসতে তাহলে এরকম বিপদের সম্মুখীন হতে না। তখন আল্লাহ কুরআনের আয়াত নাযিল করে মুমিনদের সান্তনা দেন।
আল্লাহ বলেন -“”তোমরা নিরাশ বা মন ভাঙ্গা হয়ো না, দুঃখিত হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও।” (৩:১৩৯)।
ওহুদ যুদ্ধে পরাজিত হবার পর মুসলমানরা হীনবল ও হতাশ হয়ে পড়ে। এই আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, পরাজিত হলে কখনোই হতাশ হওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে যখন তোমরা তোমাদের অধিনায়কের আদেশ অমান্য করায় যুদ্ধে পরাজিত হয়েছ বরং তোমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করা উচিত। কারণ, ঈমানের ওপরই চূড়ান্ত বিজয় নির্ভর করছে।
আগের আয়াতে অতীতের ইতিহাসে রবের নীতির কথা উল্লেখ করার পর এ আয়াতে বলা হচ্ছে কোন জাতির সম্মান বিজয় ও মর্যাদার একমাত্র চালিকাশক্তি হলো, আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান এবং আল্লাহ ও তাঁর নবীগণের নির্দেশ অমান্য করার মধ্যেই রয়েছে জাতিগুলোর লাঞ্ছনা ও পরাজয়।
মুসলমানরা ওহুদ যুদ্ধের সময় আল্লাহর এ নীতি প্রত্যক্ষ করেছে। এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,
প্রথমত: আল্লাহর প্রতি ঈমান শুধু কেয়ামতের দিনই সম্মানের কারণ হবে না, ইহকালেও অন্যান্য জাতির ওপর বিজয় ও শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যম এই ঈমান।
দ্বিতীয়ত : পরাজয়ের ফলে হতাশ ও পিছু হটা উচিত নয়। পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করতে হবে। সূরা আলে ইমরানের ১৪০ ও ১৪১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (১৪০) وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ (১৪১)
“হে মুসলমানগণ! যদি যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, তবে অনুরূপ আঘাত ওদেরও লেগেছে।
আমি মানুষের মধ্যে পর্যায়ক্রমে জয় ও পরাজয়ের এই দিনগুলোর আবর্তন ঘটাই যাতে বুঝতে পারি কারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যেন সাক্ষ্য গ্রহণ করা যায়। আর আল্লাহ অত্যাচারীদের ভালবাসেন না।” (৩:১৪০)। “
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ এভাবে তাদেরকে পবিত্র করেন এবং অবিশ্বাসীদের ক্রমেই ধ্বংস করেন।” (৩:১৪১)।
এই দুই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর আরো একটি বিধান বা রীতির কথা উল্লেখ করে বলছেন, মানুষের অবস্থা সব সময় ভালো বা খারাপ থাকে না। বরং মানুষের অবস্থা পরিবর্তনশীল। সাফল্যের পর আসে তিক্ততা, জয়ের পর পরাজয়।
উত্থান ও পতনের বিধান দেয়ার কারণ হলো, এর মাধ্যমেই মানব চরিত্রের উজ্জ্বল দিকগুলো ফুটে ওঠে এবং কারা প্রকৃত মুমিন ও কারা মোনাফেক তা বোঝা যায়। অপবিত্রদের মধ্য থেকে পবিত্ররা এভাবে আলাদা বা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেন। এ থেকে অন্যরা বুঝতে পারে যে পবিত্র অবস্থায় বেঁচে থাকা ও মৃত্যুবরণ করা সম্ভব।
মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে আরো বলছেন, তোমরা এখন ওহুদ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছ কিন্তু এর আগে বদর যুদ্ধে তোমরাই বিজয়ী হয়েছিলে।
ওহুদ যুদ্ধে তোমাদের মধ্যে যেমন অনেকেই আঘাত পেয়েছে, তেমনি তোমাদের অনেক শত্রুও আহত হয়েছে। তাই প্রথমত: এ যুদ্ধ শুধু তোমাদের জন্যেই তিক্ত নয়।
আর দ্বিতীয়ত হলো: তিক্ত ও আনন্দময় ঘটনা স্থায়ী কিছু নয়। ধৈর্য্যশীল হলে শেষ পর্যন্ত তোমরাই জয়ী হবে এবং কাফেরদের পতন ও ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,
প্রথমত: যুদ্ধের মত বিভিন্ন দুর্যোগ ও বিপদের মাধ্যমে মানুষকে পরীক্ষা করা আল্লাহর অন্যতম স্থায়ী নীতি।
দ্বিতীয়ত: কাফেরদের বিজয়ের অর্থ এই নয় যে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন। খোদায়ী পরীক্ষার জন্যেই কখনো কখনো কাফেরদের বিজয় ঘটে।
তৃতীয়ত: যুদ্ধ পবিত্র ও ঈমানদার মানুষকে চেনার এক ভাল মানদণ্ড। মুমিনরা যুদ্ধের ময়দানে কখনো পরাজিত হন না। কারণ, তাদের জন্য শাহাদতও এক ধরনের বিজয়। সূরা আলে ইমরানের ১৪২নং নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ (১৪২)
“তোমরা কি মনে করেছ ঈমান আনার দাবি করলেই তোমাদেরকে জান্নাতে যেতে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখনও এটা দেখেন নি যে, তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদে যোগ দিয়েছে এবং কারা ধৈর্যশীল?”(৩:১৪২)।
আজও বিশ্ব মিডিয়া ও মুনা–ফেকগুলো মুসলিমদের উপর নির্যাতন, ম-সজিদ ও ইসলামের উপর আঘাত, মুজাহিদদের পরাজয় দেখে প্রচার করে ইসলাম ও মুসলিম, মুজাহিদরা যদি হকপন্থী হতো তাদের এই দুর্গতি হতো না বরং এটা তাদের পাপের পরিণতি, এটা তাদের উপর আযাব।
অথচ মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরাধ শিরক কিন্তু মু-শরিকদের উপর বিপদ দেখলে আযাব না বলে মিছে মায়াকান্না দেখায়। উহুদ যুদ্ধে একটু ভূলে রসূল (সাঃ) রক্তাক্ত হন ও সাহাবীরা শহীদ হন।
মুসলিমের জীবনে বিপদ, দুঃখ, অভাব সাময়িক আর তার জন্য অপেক্ষা করছে চিরস্থায়ী প্রশান্তিময় জান্নাত।
৩.বন্ধুত্বের ভালোবাসা
#গল্প
রুমে বসেই পাশের রুম থেকে আমার বন্ধু রিফাত আর ওর স্ত্রীর ঝগড়া শুনতে পাচ্ছি। এমনকি ঝগড়ার মূল বিষয়বস্তু আমাকে নিয়েই। রিফাত বারবার তিথিকে বলছে,
“তুমি একটু চুপ করো! পাশের রুমে কিন্তু মারুফ আমাদের সব কথা শুনতে পাচ্ছে। আর ওতো এখানে বেশিদিন থাকবে না, মাত্র তিনদিন। অফিসের কাজ সেরেই চলে যাবে বলছে। আর ঢাকাতে কেউ নেই দেখেইতো আমাদের এখানে এসেছে।”
রিফাতের কথা শেষ না হতেই তিথি উত্তেজিত কণ্ঠে বলে,
“আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না। কেনো আমাদের এখানেই আসা লাগবে কেনো? মেসে থাকতে পারলো না? আমার কি ঠ্যাকা পরছে যে এসব আলতু ফালতু মানুষকে রান্না করে খাওয়াবো? তুমি যদি একে বিতাড়িত না করো তাহলে আমি সাফ সাফ বলে দিচ্ছি আমি কোনো রান্নাবান্না করতে পারবো না।”
পরক্ষণেই আমি ঠাস করে একটি চড়ের শব্দ বেশ স্পষ্টভাবে শুনতে পেলাম। মুহূর্তেই আমার শরীরটা কেমন যেন করে উঠলো।
রাত এখন দশটা, তাই চাইলেও এই মুহূর্তে কোথাও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্টুডেন্ট লাইফে ঢাকা শহরকে ভেজে খেয়েছি বলা যায়। কতশত মানুষকে নিজের মেসে জায়গা দিয়েছি তার হিসেব নেই কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের দিক ভাবলে চলবে না সেটাও ঠিক। কারণ একটি ফ্যামিলি বাসাতে অবশ্যই আমার মতো এমন অচেনা এক ছেলেকে জায়গা দিতে যেকোনো নারীরই মন চাইবে না, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।
কোনোরকম ইতঃস্তত ভঙ্গিতে খাঁটের উপর বসে আছি এমন সময় রিফাত হাতে একটি বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। আমি নিশ্চিত হলাম এটা ও কিছুক্ষণ আগেই হয়তো দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসেছে। টেবিলের উপর প্যাকেটটি রেখে যখনি ও প্লেট নিয়ে আসতে আবার রুম থেকে চলে যেতে ধরবে তখনি আমি ওকে ডাক দিয়ে বলি,
“রিফাত! আমার অফিসের কাজ কালকেই শেষ হবে আর কালকে সকাল সকালই এখান থেকে সরাসরি বের হয়ে যাবো, এরপর ট্রেনিং শেষে সেখান থেকেই বাড়িতে রওনা দিবো। বুঝছিস?”
রিফাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কেনো? তুই না বললি যে তোর তিনদিনের ট্রেনিং?”
আমি ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বলি,
“না মানে আমিও তিনদিনের টার্গেট নিয়েই এসেছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে কল দিয়ে বললো যে একদিনেরই নাকি ট্রেনিং হবে। তাই আর কি!”
রিফাত হয়তো বুঝতে পেরেছে কিছুটা হলেও যে আমি কোনো এক অজুহাতে ওর বাসা থেকে চলে যেতে চাচ্ছি। তবুও একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ঠিক আছে। সমস্যা নেই। কিন্তু এমনিতে থেকে যা কয়েকটা দিন।”
শেষ কথাটা বলার সময় আমার মনে হলো ওর গলাটা কেমন যেন আটকে এসেছে। আমিও আর ওকে বিপদে না ফেলে হাসিমুখে বলি,
“আরে না না! অফিসের কাজ ছেড়ে কি থাকা যায়? আবার যদি ঢাকাতে আসি তখন নাহয় দেখা যাবে।”
রিফাত এক চিলতে হাসি দিয়ে বলে,
“ঠিক আছে তাহলে তুই একটু বস আমি প্লেট নিয়ে আসি।”
এই বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো আমার বন্ধু। ওর কথা শুনে আমার মুখে হাসি ফুটানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই এইমুহূর্তে।
একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছি দুইদিনের জন্য। ঢাকার শহরের হোটেল গুলো যে বেশ ব্যায়বহুল তা আগেই জানতাম, দুই রাত থাকার জন্যই আমাকে ব্যয় করতে হবে তিন হাজার টাকা আর খাওয়ার কথাতো বাদই দিলাম। হোটেল রুমের মধ্যে বসে আছি এমন সময় আমার স্ত্রী মিহি আমাকে কল দিলো। কলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে ওঠে,
“কেমন আছো? আর রিফাত ভাই ওনারা কেমন আছে? ভাবী ভালো আছেতো?”
মেয়েটির এতোগুলো প্রশ্ন শুনে আমি স্বাভাবিক কণ্ঠে বলি,
“হ্যাঁ সবাই ভালো আছে। আর ভাবীতো আজকে আমার জন্য অনেক কিছু রান্না করেছে। তার মতো অমায়িক মানুষ হয়ই না, বুঝছো?”
মিহি উৎফুল্ল স্বরে ওপাশ থেকে বলে,
“বলো কি! আমিও জানতাম রিফাত ভাইয়ের বউ ভালোই হবে। তুমি একটু ভাবীর কাছে ফোনটা দাও আমি একটু কথা বলি।”
আমার স্ত্রীর কথা শুনে মুহূর্তেই আমার হৃদপিন্ডটি ছ্যাঁত করে উঠলো। কোনোরকম নিজেকে আয়ত্তে এনে বলি,
“আরে এখন আমি একটু বাহিরে আছি। পরে নাহয় তোমার সাথে কথা বলিয়ে দিবো।”
মিহি আমার কথা শুনে আর এব্যাপারে কিছু বলেনি, টুকটাক ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে শেষমেশ ফোনটি রেখে দেয়।
আমি যদি এখন মিহিকে গতকাল রাতের কথাগুলো বলতাম তাহলে হয়তো ওর কষ্টের সীমা থাকতো না পাশাপাশি দুই একটা কথাও হয়তো আমাকে শুনিয়ে দিতো। কারণ একটা সময় যখন রিফাত ছাত্রাবস্থায় নিজের শূন্য পকেটে আমার মেসে মাসের পর মাস ফ্রি-তে থেকেছিল এবং খেয়েছিল সেটা মিহির অজানা নয়।
এরপর পার হয়েছে তিনবছর…
অফিস থেকে আমাকে শেষমেশ অনেক পত্র দরখাস্ত দেওয়ার পর ঢাকা শহরে ট্রান্সফার করলো। কারণ রিফাতের বাড়িতে সেই ঘটনার পর থেকে নিজের মধ্যে এক অজানা জেদ চলে এসেছিল যে যেভাবেই হোক ঢাকাতে ট্রান্সফার হবো। আমার স্ত্রী এখনো জানে না এই তোড়জোড়ের আসল কারণটা কি?
সেদিন হঠাৎই রিফাত আমাকে ফোন দেয়। বহুদিন পর ওর ফোন পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছিলাম কারণ যত যাই হোক বন্ধুত্বের বন্ধন কি আর ভোলা যায়? টুকটাক খোঁজখবর নিয়ে হঠাৎই রিফাত বলে,
“বন্ধু তোর সাথে একটা কথা ছিল! আসলে আমার চাকরিটা চলে যাওয়ার পর গ্রামে এসে ব্যবসা করছি সেটাতো জানিসই। মূলত আমার শাশুড়ির অবস্থা খুবই খারাপ! ক্যান্সার ধরা পরেছে। ডাক্তার বলছে ঢাকা নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাতে, তাই আর কি…।”
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলি,
“সমস্যা কি? আমার বাসায় চলে আয়। আমার বাসার একরুম সবসময় খালি থাকে। মূলত মেহমান দের জন্যই একরুম এক্সট্রা দেখে ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম।”
রিফাত ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বলে,
“সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু ভাবীর আবার কোনো সমস্যা হবে নাতো? উনি যদি রাগ করে!”
আমি সামান্য হেসে বলি,
“আরে ব্যাটা কি বলিস! সেই তো মেহমানের কথা চিন্তা করে একরুম আমাকে বেশি দেখে বাসা ভাড়া নিতে বলছে। ওসব নিয়ে চিন্তা নেই চলে আয়। তোরা আসলে মিহি ঠিকই খুশি হবে। আর ঢাকাতে কেউ বেড়াতে আসে নাকি? প্রয়োজনের জন্যইতো আসে।”
রিফাত আমার কথা শুনে সাথে সাথে উৎফুল্ল স্বরে বলে,
“অনেক ধন্যবাদ বন্ধু। তুই না থাকলে আমার কোথাও বাসা ভাড়া নেওয়ারও উপায় ছিল না। এখন খুবই সংকটে আছিরে বন্ধু।”
রিফাতের স্ত্রী তিথির প্লেটে যখন আমার স্ত্রী বড় একটি রুই মাছের পিস দিতে যাবে তখনি তিথি লজ্জা পেয়ে বলে,
“আরে ভাবী কি করছেন? আপনাদের এখানে আশ্রয় পেয়েছি এটাই অনেক কিছু। এতো আয়োজনের কি দরকার ছিল? বলুনতো!”
মিহি মুচকি হেসে বলে,
“কি যে বলেন ভাবী! আপনার প্রশংসা আপনার মারুফ ভাই যে আমার কাছে কত করেছে তা কি আমি ভুলে গেছি নাকি? প্রতিবার ঢাকায় আসলে তো আপনাদের বাড়িতেই আসতো আগে। আর আপনি তার জন্য কত আপ্যায়ন করেছেন তা কিন্তু ভুলিনি। সেই হিসেবে এগুলোতো কিছুইনা।”
মিহির কথা শুনে তিথি আর রিফাত অবাক নয়নে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ বাদেই দুজন আমার দিকে তাকালো। আমি হালকা রহস্যময় হাসি দিয়ে খাওয়ায় মনোযোগী হলাম। হয়তো ওরা ভাবছে জীবনে একবারই তো ওদের বাসায় গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরেছিলাম সেখানে কিনা মিহি বলছে উল্টো কথা? তাহলে কি আমি আসলেই মিহিকে ওদের ব্যপারে মিথ্যা বলেছি?
দুজনই খাবার অল্প অল্প খাচ্ছে আর লজ্জায় কিছুক্ষণ বাদে বাদেই আমার দিকে তাকাচ্ছে। সেটা আমি সরাসরি না দেখলেও ওদের তাকানোটা অনুভব করছি বেশ। কিছু বিষয়ের প্রতিশোধ হয়তো পরোক্ষভাবে দিলেও তার তীক্ষ্ণতা হয় অতুলনীয় যার দৃষ্টান্ত আমার সামনেই। ভালো স্ত্রী পেতেও হয়তো ভাগ্য লাগে যেরকম আমি এক সৌভাগ্যবান।
(সমাপ্ত)
#আশ্রয়
#Misk_Al_Maruf
৪.বন্ধু নিয়ে কষ্টের স্ট্যাটাস।
বন্ধু বাইক এক্সিডেন্ট করেছে! খবর শুনে হাসপাতালে গেলাম ওকে দেখতে।
না, ওর তেমন কিছু হয়নি। অবস্থা ভালোই। হাত-পায়ে সামান্য ব্যথা পেয়েছে।
হাসপাতালটা একটা মফস্বল শহরে। আশপাশের এলাকায় এমন হাসপাতাল আর নেই। হাসপাতালে এসে শুনলাম বন্ধুর এলাকার একটা মেয়ের বাচ্চা হয়েছে। এই মেয়ের সাথে সম্ভবত আমার বন্ধুর একটা সম্পর্ক ছিলো। বন্ধুর এলাকার এক বন্ধু বলল,” চলো বাচ্চাটা দেখে আসি।”
মেয়েটার সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে। মেয়েটা দেখতে এতো সুন্দর আর মায়াবী! দেখলেই কোলে নিতে ইচ্ছে করে!
কোলে নিয়ে মেয়েটাকে আদর-টাদর করলাম। মেয়ের মাটাও বেশ হাসিখুশি।
বাড়িতে এসে দেখি গমগমে অবস্থা! কিছুই বুঝতে পারছি না। ছোটোবোন কে জিজ্ঞেস করলাম,” কী হয়েছে রে?”
“জানো না! কী হয়েছে? “
আমি উদাস দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “বুঝতে পারছি না! “
ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, ” ন্যাকা কিছুই জানে না! “
রুমে চলে গেল। কিছুই বুঝতে পারছি না! ঘটনা কী?
মায়ের রুমে গেলাম। মা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আমার দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।” কী হয়েছে মা?”
কিছুই বলল না!
বাইরে এসে দেখি ফুফু এসেছে বাড়িতে। ফুফু আমায় দেখে বলল, “এমন কাজটা কেমনে করলি রে বাপ!”
কী কাজ করলাম রে বাবা? বন্ধু এক্সিডেন্ট করায় দেখতে গেলাম, এতে এমন কী হলো।
“কী হয়েছে বলো তো ফুফু?”
“থাক আর লুকাতে হবে না। সবাই জেনে গেছে। তোর ফুফা আসছে। ও আসলে সবাই মিলে দেখতে যাব।”
একটু অবাক হলাম। আমার বন্ধু এক্সিডেন্ট করেছে। সেটাও এত ভয়ংকর কোনো এক্সিডেন না। ওকে দেখার জন্য ফুফা ফুফু যাবে কেন?
না, বাড়ির সবার কী যেন হয়েছে কে জানে? যা করে করুক।
ফুফা এসে বলল, “আরে ইয়াংম্যান তুমি তো আমাকে হারিয়ে দিয়েছ!’
আমি উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ফুফার দিকে।
“সবাই জেনে গেছে বলে হতাশ হচ্ছ। এতে তো ভালোই হলো।” হা হা হা
“কী জেনে গেছে ফুফা?”
“নটি বয়! কী করে জানল বুঝতে পারছ না তা-ই তো? তোমার ফুফুই তো আমায় দেখাল তোমাদের ছবিটা। যাই বলো তোমার মেয়েটা দেখতে বেশ হয়েছে! “
“আমার মেয়ে কোথায় পেলেন!”
ফুফা মোবাইল বের করে ছবিটা দেখাল। একটা মেয়ে কোলে দাঁড়িয়ে আছি আমি। পিছনে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে একজন মহিলা। মানে বাচ্চার মা। সামনে একটা মেয়ে যে সেলফিটা তুলেছে।
ক্যাপশনে লেখা খালা হলাম!
® নাবিল মাহমুদ