#গল্প————————- ( পর্ব_তিন)
#চার আনার জীবন .
আমি আসতে চাইছিলাম না তাই সবার সামনে আমাকে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে উঠালো। রাগে-দুঃখে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। এমন আনন্দের মুহূর্তে মানুষ টা এমন একটি কাজ করতে পারলো?
দুই ঘণ্টার পথে আসতে আসতে তার কি মনে হলো জানিনা বাসায় আসার পর চুপ করে রইলো। আর আমি বসে বসে কাঁদছি। পরের দিন সকাল দশটা নাগাদ শ্বশুর-শাশুড়ি, তিথি সবাই চলে এসেছে। উনারা ছেলের আচরনে যথেষ্ট ক্ষিপ্ত হয়ে আছে, অনেক বকাবকি করলো ছেলেকে।
হঠাৎ শরীরটা খুব খারাপ জ্বর মাথাব্যথা সঙ্গে বমি হচ্ছে। আর এসবের জন্য ছেলেকেই দায়ী করলো মা।
আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা আপনার ছেলের কি কোন মানসিক সমস্যা আছে? কেন সে এতো সন্দেহপ্রবণ?
মা কিছু বললো না, শুধু বললো একটু ধৈর্য ধর মা। আমরা তোর সাথে আছি।
দুইদিনের জ্বরে আর মানসিক অস্থিরতায় আরো বেশি অসুস্থ হয়ে গেলাম। এই দুই দিনে পিয়াসের সঙ্গে আমি কোন কথা বলিনি। বারবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে, আমি ওঁর কথার কোনো প্রতি উত্তর করিনি।
অবশেষে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো পিয়াস। ডাক্তার দেখে বললেন আমি প্রেগন্যান্ট।
বাড়ির সবাই খুব খুশি।খবরটা শুনে আমার মা-বাবা ও এসেছিল, কিন্তু আমি তাদের সাথে তেমন কোন কথা বলিনি।
মা বাবা হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছে, পাক আমিও তো কষ্ট পেয়েছিলাম এখনো পাচ্ছি।
এদানিং পিয়াস অফিস থেকে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসে।
পিয়াস:- সরি রিমি আমার ভুল হয়ে গেছে। ওই দিনের কথা মনে রেখে আমাকে বাবা হওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করো না প্লিজ।
সে আমার যত্ন নিতে শুরু করলো, মাথায় তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দেওয়া, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়ানো, সময় মতো খাবার খাওয়ানো। কিন্তু আমি যানি এই ভালোবাসা ক্ষণিকের আবার কিছু থেকে কিছু হলেই সব ভুলে যাবে।
এদিকে শাশুড়ি মা আমাকে ঘরের কোনো কাজ করতে দেয় না। বেড রেস্টে থাকতে কতক্ষণ ভালো লাগে?তাই মায়ের সাথে রান্নাঘরে বসে দুজনে গল্প করি।
মা অনেকবার বলেছে হ্যাঁ রে বৌমা এখনতো যুগ অনেক আধুনিক হয়েছে, আমাদের সময়ে এত কিছু ছিল না। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখ না আমার নাতি আসছে, না নাতনি আসছে?
বললাম থাক না মা আপনারা যে রকম জানতেন না, আমিও এরকম জানতে চাই না। আল্লাহ যা দেয় তাতেই খুশি।
কয়েকদিন ধরে পা ফুলে হাঁটতে চলতে খুব সমস্যা হচ্ছে,আর ঘনঘন ওয়াশরুম যেতে হয়। আবার মাঝে মাঝে চিনচিনিয়ে পেটে খুব ব্যথা হয়। আমি কাউকে কিছু বলিনি,বলতে ইচ্ছে করে না। গ্রামের সেই দিনটির কথা আমি আজও মন থেকে মুছতে পারিনি।
কিন্তু মা শারীরিক সমস্যা টা খেয়াল করলেন, সবকিছু জানতে চাইলো আমার বর্তমান পরিস্থিতি শুনে বকাবকি করতে লাগলো কেন এগুলো তাদেরকে আমি জানাইনি।
সঙ্গে সঙ্গে পিয়াস কে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বললো। পিয়াস এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার ভর্তি করে নিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হলো, মনে হচ্ছিল আর বেঁচে ফিরতে পারবো না।
তখনও পিয়াস আমার হাতটা ধরে রেখেছিল, আমি তাকে বলেছিলাম আমি কোনো অন্যায় করিনি যদি বেঁচে না ফিরি অন্তত জীবন থেকে আপদ বিদায় হবে।
পুত্র সন্তানের মা হলাম আমি। নার্স যখন বাবু সোনাকে আমার কোলে এনে দিলো নিমিষেই সব ব্যথা কোথায় যে হাঁরিয়ে গেল!?
বাড়িতে ফেরার পর বাড়িটা যেন ঝলমল করে উঠলো সবাই খুব খুশি। আমি শুধু খাওয়ানোর সময় কাছে পাই তাছাড়া সব সময় মা তিথি তারাই সবকিছু করে।
দিনগুলো বেশ ভালই কেঁটে যাচ্ছিল।
++++++++++
হঠাৎ কয়েকদিন ধরে তিথির কিছু অস্বাভাবিক প্রবলেম চোখে পড়লো আমার। কিছু খাওয়ার পরপরই দৌড়ে ওয়াশরুমে যেয়ে কল ছেড়ে দেয়। আমার সন্দেহ হচ্ছিল ও কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লো না তো?
বারবার মনে হয়েছিল জিজ্ঞেস করি, কিন্তু করিনি, কারণ আমি বাড়ির বউ হুট করেই আমার কথা বলাটা ঠিক হবে না। আমি চাই ও নিজে থেকেই বলুক।
মাঝরাতে রেহানের দুধ তৈরির জন্য কিচেনে গেলাম।কিচেনের বারান্দায় তিথির কন্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালাম, এবং স্পষ্ট ওঁর কথাটা শুনতে পেলাম জহির আমি কনসিভ করেছি। তারপর লাইট টা অন করতেই চমকে উঠল তিথি।
কি হয়েছে তিথি এতো রাতে কার সঙ্গে কথা বলো?
তিথি:- ভাবি তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা বলার আছে। কয়েকদিন ধরে বলব বলব করে ভয়ে বলতে পারছিনা । ভাইয়া জানলে কি হবে জানিনা। আর মা-বাবাকে ই বা ম্যানেজ করবো কিভাবে?
আচ্ছা ঠিক আছে কাল দিনে শুনবো এখন যাও ঘুমিয়ে পড়ো। আমার সন্দেহ টাই সত্যি হলো।
পরেরদিন,
তিথি:- বললো আমার বান্ধবী আয়েশার বড় ভাই জহির, পড়াশোনা শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করছে। আয়েশাদের বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে জহিরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর একে অপরের প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা। একটা সময় আমরা দুজনে মিলিত হই আর সেই ভালোবাসার চিহ্ন আমি বহন করতে চলেছি।
তুমি কিছু একটা করো ভাবি এখন আমার ফিরে আসার পথ নেই।
দ্বিধায় পড়ে গেলাম আমি, কিভাবে কি করব?
স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করতে লাগলাম, তিথি যাকে ভালোবাসে বলছে ছেলেটা ভালো নাকি খারাপ? সে কি ওঁর ভালো চায় নাকি ক্ষতি চায়? নাকি ওকে ব্যবহার করলো?
নানান প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমার ছেলেটার সঙ্গে কথা বলা দরকার সে আসলে কি চায়? তাহলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তিথিকে বললাম আমি জহিরের সাথে কথা বলতে চাই।
দুইদিন পর রেহানকে মায়ের কাছে রেখে আমি আর তিথি কেনাকাটার কথা বলে বের হলাম। যেখানে আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল যেয়ে দেখি জহির আগেই ওখানে উপস্থিত রয়েছে আমাদের অপেক্ষায়। একটা রেস্টুরেন্টে বসে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কথাগুলো সেরে নিলাম।
জহিরের কথা শুনে এতোটুকু বুঝতে পারলাম তিথি কে সে ভালোবাসে এবং সন্তানের স্বীকৃতি দিতে চায়। জহিরের পরিবার অমত করবে না কারণ তিথি কে তারা পছন্দ করে।
ভাবলাম এটা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, অন্তত মাকে জানাতে হবে বিষয়টা। মায়ের প্রেসারটা অনেক বেড়ে গেছে আমি প্রতিদিন দুইবার করে চেক করি।
আমার ধারণা মা বুদ্ধিমতী নারী ওনি নিশ্চয় তিথির সম্বন্ধে কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে।
তবুও মাকে আমার জানাতে হবে।
কেউ বাড়িতে নেই, এই সুযোগে আমি মায়ের পাশে গিয়ে বসলাম। বললাম আপনি উত্তেজিত হবেন না মা,আমি কিছু কথা বলবো।
মা:- কি বলতে চাও বৌমা? ছেলে তো একটা কুলাঙ্গার হয়েছেই আর এখন পাপিষ্ঠ মেয়ের কথা বলতে চাইছো?
তোমার কি মনে হয় আমি কিছু বুঝিনা,আমি কিছু দেখি না, আমি এমনি এমনি বিয়াল্লিশ বছর ধরে সংসার করে আসছি!
মা আমি ছেলেটার সঙ্গে কথা বলেছি, ছেলেটাকে আমার ভাল মনে হয়েছে। তাছাড়া সে তো প্রতিষ্ঠিত ভালো একটা চাকরি করে, বেশি দেরি করলে আমাদেরই ইজ্জত যাবে মা।
যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব লোক জানাজানি হওয়ার আগে এটা মিটিয়ে নিতে হবে।
মা:- হ্যাঁ মিটিয়ে তো নিতেই হবে। তোমার শ্বশুর ও পিয়াস কে জানাতে হবে।
তবে মা তিথির গর্ভধারণের কথাটা কাউকে বলবেন না। ও বারবার অনুরোধ করেছে এটা কাউকে না জানাতে।
মা আপনি শুয়ে থাকেন আমি কিচেনে যাই, কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই ফিরবে সন্ধ্যার নাস্তা টা তৈরি করে নেই।
এমন সময় মায়ের রুমে এলো পিয়াস,আর এসেই আমার চুলের মুঠি ধরে বেডরুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
মা পেছন পেছন ছুটে এসে চিৎকার করে দরজা খুলতে বললো, কিন্তু পিয়াসের কান পর্যন্ত মায়ের চিৎকার পৌঁছালো না। ও তখন আমার হাত দুটো পিছমোড়া দিয়ে বাঁধতে ব্যস্ত।
চলবে____
লেখা ——— Rozina Rose