###জীবন যখন যেমন ১৬ তম পর্ব
###লাকি রশীদ
মা হেসে বলছে আজ তো দেখি আমার অনেক ভালো একটা দিন। আমি গরীবের ঘরে সব বড়লোকদের আগমন। উত্তরে বড়চাচা বলছেন,
আসল বড়লোক তো ভাবী আপনি। বাচ্চাগুলো মানুষের মতো মানুষ বানিয়েছেন…….. এটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া। আর কি লাগে জীবনে?
মা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছে,যতটুকু এসেছি
আমার কোনো ক্রেডিট নাই এতে। সব আমার আল্লাহর মায়া। আমি বেশ বুঝতে পারছি,দোলা কঠিন মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে সবাই উশখুশ করছেন। মা এবার বললো, দোলা যা তো মা তোর
চাচা,চাচী ও ফুপুদের জন্য চা বানা সোনা। টিনে
পাপড় আছে ভেজে দে,আর নুডুলসও কর।
ছোট ফুপু বলছেন, এতো কিছু করতে হবে না। শুধু চা নিয়ে এলেই হবে। দোলা বলছে,আর সবাই খেতে পারলেও বড়চাচা আমাদের এসব নিশ্চয়ই খেতে পারবেন না। আত্মীয় স্বজন সবাই, ক্যাটক্যাট করে কথা বলার জন্য ভীষণ ভয় পায় দোলাকে। বড়চাচা তাই আর অসম্মানি না বাড়িয়ে বুদ্ধিমানের মতো কোনো কথা না বলে হেসে বসে রইলেন। দোলা আস্তেধীরে যেন প্রচন্ড অনিচ্ছায়
রান্নাঘরে গেল। বড়চাচা এবার মাকে চাপা স্বরে বলছেন, ভাইজানের বা আপনার কারো তো এতো রাগ নেই। এই মেয়েটা এতো রাগ কোথা থেকে পেল কে জানে? মা কিছু বলার আগেই ছোট চাচা
বললেন, ওর রাগটা কিন্তু অকারণ বা অনায্য নয়।
হঠাৎ করে আসা মেহমানদের জন্য নাস্তা বানাতে নিশ্চয়ই বিরক্ত লাগছে দোলার। ও যাদেরকে পছন্দ করে না তাদের আপ্যায়ন করতে সে মোটেও ইচ্ছুক থাকে না। কিন্তু মাকে প্রচন্ড ভয় পায় বলে আমি জানি সে মায়ের কথামতো সব কিছু করবে। আমার বাবা ও মা দুজনেই মেহমান
দের আদরযত্ন করার ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। আমি দেখি সবাই তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে গল্প করছেন। আমি দোলাকে সাহায্য করতে রান্না ঘরে ঢুকি। গিয়ে দেখি মালাবু পেঁয়াজ,মরিচ ও ধনেপাতা কাটছে। দোলা গজগজ করতে করতে পাঁপড় ভাজছে। এরা কেউ আমাকে দেখেনি।বাচাল মালাবু বলছে, এইডা কিন্তুক ঠিক কইলেন
না আফা। রক্ত রক্তই,মারেন কাডেন(কাটেন) দুই ভাগ করতে পারবেন না। রক্ত দুইভাগ করা যায় না। দোলা ধমকে উঠলো, আমি দশভাগ করতে চেষ্টা করবো। সারাজীবন ঠকানো তে আর সাহায্য না করাতে মশগুল আত্মীয়ের হঠাৎ করে আহ্লাদে আটখানা হয়ে যেতে দেখলে অসহ্য লাগে। তুমি সেটা বুঝবে না। তাই, চুপ করে কাজ করে যাও।
আমি গিয়ে বলি, সাহায্য করতে আসলাম।বল্ কি
করবো? এবার বললো, তুই কিছু করতে চাইলে দেখ নুডুলস্ সিদ্ধ হয়েছে কিনা। হলে ঝাজরি তে
ঢাল। আমি পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখি, কি রকম কনফিউজড হয়ে গেছি। ওকে বলি,দেখতো মনে হচ্ছে তো সিদ্ধ হয়ে গেছে। চেঁচিয়ে উঠলো,পারিস না তো আসিস কেন? আমি দেখতে পারবো না।সিদ্ধ হয়ে গেছে মনে হলে ঢেলে দে। এবার মালাবু বলছে, ভাইজান সরেন আমি দেখি। ও দেখি খুব
নিপুণ ভাবে ঢেলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে রাখলো। আমি বলি, এবার আমি পারবো। ডিম,আলু ও গাজর, মরিচ দিয়ে বানানো নুডুলস বাটিতে ঢেলে ট্রে তে রাখি। পাপড় হাফপ্লেটে খুব ভালো ভাবে জায়গা হবে না বলে,প্লেটে রেখেছে দোলা। মালা বু এবার বলছে, ভাইজান চানাচুর আছে, দিবো?
দোলা তার দিকে তাকিয়ে বলল,যা বলা হয়নি তা
করার জন্য এতো ব্যস্ত হবে না। যাও, তাদের সামনে টেবিল দিয়ে এসো। কাপ সব রেডি করে,
তাতে চা ঢাললো আর মালাবু নাস্তা নিয়ে গেল।
দোলা এবার ফিসফিস করে বলল, কি মনে হয় তোর, এই ব্যাটালিয়ন আসার পেছনে মিশন কি?
আমি বলি, কি জানি চল্ ওখানে গিয়ে দেখা যাবে। এবার দেখি সবাই হাসিখুশি হয়ে জীবনের
নানা দিক নিয়ে আলোচনা করতে করতে হাসছে। বড়চাচা দোলার ভয়ে ই হয়তো দুইটা পাপড় ও সামান্য নুডুলস খায়। এবার বড়ফুপু চা খেতে খেতে বললেন,বড়ভাবী আমরা আত্মীয়ের উপরে নতুন করে আবার আত্মীয়তা করতে এসেছি। শাওনের সঙ্গে সাদির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।মা বললো, তোমরা মানে কে? শাওনের পরিবারের মানুষ সহ নাকি? ছোট ফুপু বলছে,ওরাই ত ফোন দিয়ে বলেছে আমাদের আসতে। মা এবার শ্লেষের
হাসি হেসে বলল, আমি এতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলতে পারি না। যা বলি সোজাসুজি বলি। আমি এই বিয়েতে রাজি নই। তাছাড়া, সাদি আরেকটু গুছিয়ে নিক। তারা ভালো কোনো ছেলে
দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিক।
বড়চাচা এবার মাথা চুলকে ধীর গলায় বললেন,
আপনি তো দেখেছেন ভাবী মেয়েটা সাদির জন্য
কেমন পাগল। ঘর ছেড়ে পর্যন্ত চলে গেছে। মা এবার বলে,এটা ওদের সমস্যা। আমাকে বলে তো
লাভ নেই। আমার ছেলে তো আর ওকে ফুঁসলিয়ে বাইরে নেয়নি। যদি নিত তবে মাথা নিচু করে ঘরে তুলতাম। তাছাড়া তোমরা সবাই জানো, ওর বিয়ের পর থেকে খাজুর আমাকে কতো মানসিক কষ্ট দিয়েছে। কতো দুর্ব্যবহার করেছে। পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করেছে। তার যন্ত্রণায় এখনো এক
টা ফলফসল ঘরে তোলা যায় না। এরপরেও ঝগড়া করতেই আছে। আমি খারাপ শাশুড়ির কাছে মেয়ে দিবে কেন? টিউশনির টাকায় ৫ জন মানুষের চলা কেমন কষ্ট !!! আমি ফাহিমের কাছে গিয়েছিলাম হাদির একটা চাকরির জন্য। কথাটা ভালো করে পুরোতেই পারিনি। সেদিন একরকম
তাড়িয়েই দিয়েছিল আমাকে। দিন কি আল্লাহ না
বদলিয়ে রাখেন,কথা ই থাকে। কোটিপতি চাচা,
ফুপু,মামা থাকতে বাইরের দুইজনের কাছে থেকে ধার হিসেবে টাকা এনে দুই মেয়ে পড়ছে। কাকে তাহলে আপন বলবো আর কারে পর বলবো?
অস্বস্তিকর নীরবতা, চতুর বড়চাচা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই এ ব্যাপারে কি বলিস
সাদি? আমি ধীরে ধীরে বলি, আমার কোনো আলাদা মতামত নেই। মা যা চাইবে তাই হবে। মা এভাবে না করে দেওয়ায় বড়ফুপুর ইগোতে ভীষণ লেগেছে বুঝাই যাচ্ছে। উনি বললেন, আপনি যা বলেছেন সব ই সত্য কথা ভাবী। কিন্তু মায়ের জন্য মেয়ে দোষী হবে কেন? তাছাড়া ফাহিম বলেছে,
আপনাদের টাকায় কোনো রুম তুলতে হবে না। ও
খুব তাড়াতাড়ি ২টা রুম, সামনে সুন্দর ব্যালকনি সহ বানিয়ে দিবে। মা বললো, ফাহিম কিভাবে ভাবে যে, ওর টাকায় আমরা ঘর তুলবো? যতটুকু
সাধ্য আমাদের আছে, সেটা দিয়ে তুলবো। তাছাড়া এখানে ওর বোন থাকতেও পারবে না। সারা জীবন আরাম আয়েশ করে থেকেছে, ওকে ওইরকম পরিবার দেখে বিয়ে দিতে বলো। আমি
এক ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছি। মাষ্টার্সের এতো ভালো রেজাল্টের পর আজ হোক কাল হোক চাকরি কি ও পেত না? এবার সেধে আর অশান্তি
ডেকে আনতে চাইছি না মোটেই। দয়া করে এটা নিয়ে তোমরা আমাকে ভুল বুঝো না।
এতোক্ষণে একদম চুপ হয়ে থাকা ছোট চাচী বললেন,আরাম আয়েশ করে থাকবে বলে কি আর ইয়াং একটি মেয়ে এতো ঝামেলা করে এখানে বিয়ে করতে চাইছে ভাবী? ভালবাসার মানুষের সাথে থাকতে পারাটা অনেকের কাছেই সব। মা এবার মাথা নেড়ে বললো, তারপরও এই
বিয়েতে আমি একদম রাজি না। বড়ফুপু এবার তড়াক করে উঠে বললেন, আমরা ভাইবোনদের
কি দাবি নেই, এক ভাইপোর বিয়ের ব্যাপারে বলা?
আপনি তো নিজেরটাই ভাবছেন শুধু। আমাদের কথার যখন এক পয়সার দাম নেই, তবে আর কি করা? উঠো সবাই,এ বিয়ে হবে না মেজভাবী কে বলে যার যার বাসায় যাই। ছোট ফুপু বললো, তুমি রাগ করছো বুবু? মায়ের দাবি তো সবচেয়ে প্রথমে। বিমর্ষ মুখে সবাই চুপ করে উঠে চলে গেলেন। মা বলছে, টাকা নাই বলে এখন তাদের কথা মতো ছেলেও বিয়ে দিতে হবে। দোলা বলল, কিন্তু মা শাওন আপু মেয়ে তো খারাপ না। মা বলে
মোহে পড়ে সবকিছু রঙ্গিন মনে হচ্ছে। তারপর,
দুদিন পরেই বড়জনের মতো অশান্তি করবে আর
আমার ছেলেটাকে দোটানায় ফেলে অস্থির করবে
রাতে ঘুমাতে গেছি, চোখ বুজে ভাবছি আজকের ঘটনা ভালো না মন্দ হলো। অদ্ভুত এক বিষন্নতায়
ভুগছি কেন? আমার মন একগুঁয়ে,রাগে ফুঁসে উঠা মেয়েটাকে কি আসলেই ভালবেসে ফেলেছে
না মায়ের ভাষ্যমতে আমিও মোহে পড়ে আছি? আবার মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি কিছু করতে চাইও না। কেমন যেন অনেক বাধাবিপত্তি দিয়ে পথটা বন্ধুর হয়ে আছে। তাও ভালো যে শাওন ফোন করেনি। কি থেকে কি বলতাম, আরো সমস্যা হয়তো দেখা দিত। রেজাল্ট বের হলে একটা চাকরির বড্ড প্রয়োজন।
দুইটা টিউশনির মধ্যে একটা আগামী মাস থেকে
বন্ধ হয়ে যাবে। ওরা সবাই আমেরিকা চলে যাবে।
বাধ্য হয়ে আইরিন আপুকে বললাম। উনি বল্লেন,
ঠিক আছে আমি দেখছি। সেলিম এসে কাজে যোগ দিয়েছে। মা প্রতিদিন গিয়ে বলে, আমার ঘর
যেন বড় হয় বাছা। দক্ষিণ দিকে ভালভাবে আলো বাতাস যেন ঢুকে। সেলিম কথায় কথায় গল্প করছে,সে বেশ বড় একটা কাজ পেয়েছে বাড্ডার দিকে। প্রবাসী ভদ্রলোক একজন বানাবেন বাড়ি। তাই, তাড়াতাড়ি শেষ করবে বলে আমাদের এখানে অনেক লোক লাগিয়ে কাজ করাচ্ছে। কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এতো বড় অর্ডার ঝুলিয়ে রেখে এটাতে কেন লেগেছেন? ওটা যদি আল্লাহ না করুক হাত ফসকে চলে যায়? সে আকর্ণ বিস্তৃত হেসে বলে, ইনশাআল্লাহ যাবে না ভাইজান। কারণ কৃতজ্ঞতা থেকে এই কাজ আগে ধরেছি।অনেক আগে আপনার বাবার একটা রুমের কাজ করতে এসেছিলাম।
উনাকে আমি চাচা ডাকতাম। এক দুপুরে উনি গিয়ে দেখেন, সিমেন্ট ওয়ালে দিচ্ছি আর পাগল হয়ে কাঁদছি। জিজ্ঞেস করলেন, এতো কাঁদছ কেন সেলিম কি হয়েছে? বললাম চাচা মেডিকেলে একমাত্র ভাইকে ভর্তি করেছি। অপারেশন করার জন্য ২০ হাজার টাকা লাগে। মাত্র ৫ হাজার টাকা যোগাড় করেছি। আমার মা কাঁদতে কাঁদতে পাগল প্রায়। বললেন,কান্না বন্ধ করো। আমি আসছি,ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে। কাজ বন্ধ করে দাও আপাতত।
বললে কেউ বিশ্বাস করবে না, উনি আমার সাথে হাসপাতালে গিয়ে সবকিছু ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছেন। হায়াত ছিল আল্লাহ তাআলা বাঁচিয়ে
দিয়েছেন কিন্তু আমি ভাবি চাচার কথা। আত্মীয় না,স্বজন না……… তারপরও কতো মায়া। আজ পর্যন্ত শুনেছেন,মিস্ত্রী কেঁদেছে বলে কেউ এতো কষ্ট করে? রুম ঠিক করানোর টাকা এভাবে আমাকে দেয়ায়,কাজ আটকে থাকে।প্রায় দেড় মাস পর কাজ আরম্ভ করি। এখন বলেন উনার কাজ রেখে আরেকটায় যাই কি করে? এই যে চাচী প্রতিদিন নাস্তার জন্য এক ডেকচি খিচুড়ি আর ডিমভাজা দেয়, না দিলে কি হতো? দেয়ার তো কথা না। অনেক বড়লোকদের বাসায় কাজ করে আসছি,চা ই দেয় না। না দেয়া কোনো অন্যায় নয়। আসল কথা হলো,মন বড়। মানুষের জন্য দরদ বেশি।কই পাইবেন ভাইজান এইগুলা?
দিনে কোনো কাজ হাতে নেই বলে, মায়ের ইচ্ছেমতো সারাদিন সেলিমদের কাজ দেখি। বাবা নাকি সবসময় সামনে থেকে কাজ করাতো। তাই, মায়ের ইচ্ছের মর্যাদা দিতে আমিও থাকি। যদিও
এতে ঠিক কি লাভ হয়েছে তা আল্লাহ মালুম। কি
সুন্দর খালি জায়গাটা ইট সিমেন্টের স্তম্ভ হয়ে যাচ্ছে। বেলা তখন পৌঁণে ২টা। দোলা ফোন করে বলল, ছোট ভাই তুই এক্ষুনি এই ঠিকানায় আয়। মাকে কিছু বলার দরকার নেই। ভয় পেয়ে বলি, তোর কোনো সমস্যা হলে বল্ তাড়াতাড়ি।
বলল, এসে দেখবি। প্যান্ট বদলিয়ে কিভাবে যে এক সমুদ্র চিন্তা নিয়ে ওখানে পৌঁছি। গিয়ে দেখি এটা একটা ভাতের হোটেল। বলি, ফাজলামি করিস না কি? মা ভাত রেঁধে বসে আছে,আর তুই এখানে এই হোটেলে ডেকে নিয়ে এসেছিস !!! হাত
ধরে বললো, এতো কথা বলিস কেন ছোট ভাই?
এই তোর মস্ত বড় একটা দোষ। ভেতরে আয় তো।
ভিতরে ঢুকে দেখি কেবিন ০১, কেবিন ০২ লেখা। একটাতে দুজনে ঢুকে দেখি শাওন বসে আছে। দোলা হড়বড় করে বলল, আমার জরুরি কাজ সেরে বাসায় চলে যাচ্ছি। তুই শাওন আপুর সাথে
বসে গল্প কর। ও বেরিয়ে যেতেই মুখোমুখি চেয়ার
টা দেখিয়ে শাওন বলল বসো। আমি বলি,কি রে ভালো আছিস নাকি? একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল,
আমি মরে গেলেও হয়তো তুমি এরকম স্বাভাবিক ভাবে বলতে, শাওন মরে গেল নাকি? বলি,মরবি কেন? এটা কি সুচিত্রা যুগ চলছে নাকি? দুই চোখ পাকিয়ে বলল,এই যে তোমার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরের বাসায় থাকলাম……… একটা ফোন
দিয়েও তো খোঁজ নাও নি। চাচা,ফুপু প্রপোজাল
নিয়ে গেল, বড়চাচীর না করাটা ঠিক আছে। কিন্তু তোমাকে জিজ্ঞেস করল যখন, তুমি তো বলতে পারতে ভেবে দেখি। এবার খপ্ করে হাত ধরে বললো,আমাকে ছুঁয়ে বলো তো তুমি কি আমাকে ভালবাসো না? দোলা কে ধরে তোমার সাথে দেখা করতে হয়। কেন, কঠিন সেজে খুব ভালো লাগে?
আমি বলি, এখন এসব কথা থাক্। আগে তোর পরিবার মানবে না ভেবেছি এখন মা যে এতো কঠোর মনোভাব নিয়ে দাঁড়াবে বুঝিনি। আর মার অবাধ্য আমি হতে পারবোনা। আস্তে করে আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলে বলছে, আমি কিচ্ছু জানি না।
আরো কিছুদিন হয়তো ভাইয়া দেখবে তারপর অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি তার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে বলি,খাওয়াবি নাকি? নয়তো বের হয়ে যাই,চট করে উঠে পাশে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে মুখ বন্ধ করে বলছে, এতো সিরিয়াস একটা কথা বলছি আর তুমি খাওয়া খাওয়া করছো? আমাকে তোমার চোখে লাগে না? কি ভাবো তুমি নিজেকে?
আমার এতো বছরের কৈশোরে, তারুণ্যে কোনো নারীকে এতো কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ দেইনি। তার গরম শ্বাস প্রশ্বাস যখন মুখের উপর ঝাপটা মারছে, মনে হচ্ছে বন্য কোনো ফুলের পাগল করা গন্ধে মাথা ঝিমঝিম করছে আমার। আমি বেশ বুঝতে পারছি,আর কিছু সেকেন্ড গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব হবে না। অতল কোন গহ্বরে নিজেও ডুববো অন্যকেও ডুবাবো। অথচ সম্পর্ক আদৌ পরিণতি পাবে কিনা………তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলি,খাদের কিনারায় এনে ফেলছিস কেন নিজেকে? আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিস নাকি? একটুখানি ম্যাচিউরিটি কি তোর কাছে আশা করা যায় না?
যেভাবে চট করে এসেছিল ঠিক সেভাবেই চেয়ারে ফিরে গিয়ে বলছে,স্যরি তোমার এই কঠোর ভাবে রক্ষা করা সতীপনা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। তোমাকে যে পাবে, তার জীবন সার্থক হয়ে যাবে। আর বিয়ের আগে তোমাকে জ্বালাবো না,সব জ্বালানো বিয়ের পর হবে। তুমি এখন কথা দাও, বড়চাচীকে খুব সুন্দর করে বলবে তুমিও আমাকে ভীষণ ভালবাসো। মনে থাকবে? তাহলেই হবে।
আর ফোন করলে তুমি ফোন ধরবে প্রমিজ করো এক্ষুনি। আমি বলি,হ্যা ঠিক আছে। এবার খাবার অর্ডার দে তো। খিদেয় পেট যেন চো চো করছে।
বয় এসে একগাদা আইটেমের নাম বলছে। শাওন
জিজ্ঞেস করছে, কি খাবে বলো? বাটার নান ও তান্দুরী চিকেন বলি? আমি বলি,এই ভরদুপুরে কে বাটারনান আর তান্দুরী ফান্দুরী খাবে? শুনুন বড় দেখে একটুকরো বোয়াল বা রুইমাছ সাথে সাদা ভাত নিয়ে আসেন প্লিজ। আমার বলা দেখে,
শাওনও একই আইটেম অর্ডার করেছে। এবার আয়েশ করে বসে বললো, বিয়ের পর সবসময় আমরা যখনই যা খাই, একই আইটেম দিয়ে খাবো। আমি কথা না বলে চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে ভাবি, কি যে আছে কপালে আদৌ আমি
জানি নারে। তোর জন্য আমার এবার ভীষণ ভয় লাগছে। স্বপ্নপুরীর মায়াবী সব স্বপ্ন ধরা দেবে নাকি স্থায়ী বিষাদ দুজনের গায়ে লেপ্টে যাবে…….
সময় ই হয়তো স্থির করবে। সৃষ্টিকর্তা তার অপার
মহিমা দিয়ে যদি দুটি আকুল হৃদয়ের বাসনা পূরণ
করে দেন……………আমি তো আর দ্বিতীয় কোনো পথ দেখতে পাই না।
(চলবে)
.