১.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস নেতা
২. তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস অফিসের বস
৩.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস অফিস পলিটিক্সের সাতকাহন
৪.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস চাটুকার
৫.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস বিশ্ব চাটুকার
১.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস নেতা
দেশে কি পরিমাণে তেলবাজি চলছে, নিচে তার একটা প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা।
এক নেতা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন- ‘আজকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলাম’।
অতঃপর কমেন্টবক্সে হাজির হয়ে গেলেন তেলবাজ কর্মীরা।
চলুন দেখে নেই তৈল যুক্ত কমেন্ট গুলো :
কমেন্ট ১ : স্যালুট বস আপনাকে…
কমেন্ট ২ : অসাধারণ ভাই, আপনি থাইমেন না, এগিয়ে যান…
কমেন্ট ৩ : যখন দেশব্যাপী মানুষ গোসলের বিরুদ্ধে কথা বলছে, সেখানে আপনি স্রোতের বিপরীতে গা ভাসিয়ে গোসল করলেন, দুর্দান্ত! আপনিই পারবেন বস, আপনাকে দিয়েই সব হবে।
কমেন্ট ৪ : এটা দলের অনন্য ও বিরল কৃতিত্ব!
কমেন্ট ৫ : শেয়ার দিলাম ভাই, যে কাজ করেছেন তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে, জনতারে জানাইতে হবে!
কমেন্ট ৬ : ভাই আপনি অসাধারণ! আপনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য!
কমেন্ট ৭ : দেখো পুরো বিশ্ব! দেখো সাইবেরিয়া! আমরাও পারি ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে।
কমেন্ট ৮ : আপনাকে সরকারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হোক। সংবর্ধনা না দিলে কালকেই প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন। লিডার আমি ইভেন্ট খুলে ফেলেছি অলরেডি। আপনি জয়েন করুন…
কমেন্ট ৯ : পাষণ্ড শীতের ধমকানো প্লাবন ডিঙিয়ে রজনীর নিশি ডিঙিয়ে ওরে তোরা সবাই নেতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গোসল কর- পবিত্র হ!
কমেন্ট ১০ : বিশ্বাস করবেন ভাই, আপনার গোসল করার খবর শুনে চোখে পানি চলে আসছে! আপনাদের মত কিছু সাহসী লোক আছে বলেই এখনো বেঁচে আছি ..
কমেন্ট ১১ : বিরোধী দলের কেউ এই কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি! এমন প্রতিকূল শীতেও যিনি গোসল করতে পারবেন, তিনিই সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসানোর ক্ষমতা রাখেন! হ্যাটস অফ ভাই!
কমেন্ট ১২ : আসুন আমরা গরম পানিকে না বলে মহান নেতাকে অনুসরণ করি।
কমেন্ট ১৩ : আপনি দেশের গর্ব লিডার!
কমেন্ট ১৪ : ভাই এদ্দিন সাহস পাচ্ছিলাম না। আপনার স্ট্যাটাস দেখে গোসল করার সাহস ফিরে পেলাম। আমার নেতা যদি পারেন, আমি কেন পারবো না। এখনই গোসলে যাচ্ছি… লাগবে না আর গরম পানি!
কমেন্ট ১৫ : আমাদের নেতা কারো কাছেই মাথা নত করতে জানেন না, এমনকি শীতের কাছেও না। আজ আরো একবার তা প্রমাণ করলেন প্রিয় নেতা। সম্মান রইলো।
কমেন্ট ১৬ : লিডার গোসলটা আসলে কতদিন পর করেছেন?
কমেন্ট ১৭ : শীতকালে গোসল না করা কর্মীদের কাছে আপনি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন লিডার..
কমেন্ট ১৮ : যে সাহসিকতার মিনার জ্বালিয়ে গেলেন বস, জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে.
কুড়িয়ে পাওয়া
২.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস অফিসের বস
আমার অফিসের বস একটা বই লিখেছেন। আজ শুনলাম বসের বইয়ের দ্বিতীয় এডিশন শেষ!
বসের একটা বই আমিও কিনেছি। না কিনে উপায় ছিল না বলে। মেলায় গিয়ে ছবি-টবি তুলে বের হয়ে চলে এসেছি।
আমাদের অফিসের সবাই বই কিনেছে সেটা তো বুঝলাম। অফিসে আর কতজন কলিগ হবে পঞ্চাশ জন। এটা ঠিক বস কে খুশি করতে দুয়েকজন কয়েককপি করে কিনেছে!
তাই বলে সেকেন্ড এডিশন শেষ! বসের বই কিন্তু বেস সেলার লিস্টে আছে।
আমি আমার অফিসের কলিগ বন্ধু কে জিজ্ঞেস করলাম, “বসের বইয়ের সেকেন্ড এডিশন নাকি শেষ?”
হালকা হেসে বলল,” শেষ তো হবেই অফিসের আয়াও শুনলাম দুই কপি কিনেছে!”
এ উপলক্ষে আজ একটা পার্টি আয়োজন করা হয়েছে। পার্টিতে অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন।
প্রথমে বই নিয়ে আলোচনা হবে তারপর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আমাদের অফিসের রুয়েল সাহেব গেলেন প্রথম আলোচনা করতে। স্যারের বইয়ের নাম সম্ভবত আমাদের ঘর। সম্ভবত বললাম কারণ বইয়ের প্যাকেট এখনো খুলা হয়নি!
রুয়েল সাহেব এ পর্যন্ত পঞ্চাশটা বই কিনেছেন। ওনার আত্মীয় স্বজন সবাইকে নাকি উপহার দিয়েছেন।
আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। রুয়েল বলা শুরু করলেন, আমাদের ঘর বইটা বাংলা সাহিত্যের এক বিরাট সম্পদ। এমন উপন্যাস আমি আমার জীবনে পড়িনি!
ছোটোবেলায় এই ঘর এই সংসার ছবি দেখে কেঁদে ছিলাম। এখন আমাদের ঘর বইটা পড়ে কাঁদলাম!
আমার মাও বইটা পড়েছেন। মাকেও আমি কাঁদতে দেখেছি। আঃ! কী একটা বই আমাদের স্যার লিখেছেন।
আমি দেখলাম স্যার ভ্রু কুঁচকে নীচের দিকে তাকিয়ে আছেন!
এরপরে আমাদের অফিসের বাবলু সাহেব বলা শুরু করলেন। তিনিও উপন্যাসের চরিত্র অসাধারণ হয়েছে এমন একটা বক্তব্য দিলেন।
আমি দেখলাম স্যার উঠে চলে গেছেন! আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে।
ব্যাগের ভিতর থেকে বইটা বের করলাম। খুব সুন্দর একটা বাড়ির ছবি আঁকা প্রচ্ছদ! প্রচ্ছদটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে!
আমি পড়া শুরু করলাম। এ কী এত ঘরবাড়ি বানানোর নিয়ম কানুন লেখা!
© Nabil Mahmud
৩.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস অফিস পলিটিক্সের সাতকাহন
কর্পোরেট জগতে একে অন্যকে ঘায়েল করতে কর্পোরেট পলিটিক্স চলে। দক্ষ ও মেধাবী একজন কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও চাটুকারের ঈর্ষার শিকার হওয়ায় বছর শেষে পদোন্নতি পায় না। আরেক চাটুকার অদক্ষ হয়েও চামচামি করে পদোন্নতি পেয়ে যায়। আরেকজন সহকর্মীকে ভুল করতে দেন এবং পরে বসের কাছে গিয়ে তার ভুলটি প্রকাশ করে সংশোধনের করার কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেরা কর্মীরাই বেশি রাজনীতির সম্মুখীন হন।
তারপরও ঝামেলা এড়াতে অফিসের সবার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে হয়। কারো সঙ্গেই ইচ্ছাকৃত খারাপ ব্যবহার করা ঠিক না। ভালো ব্যবহার করলে প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হয় না। কথা কাটাকাটি বা মনোমালিন্য হলে বসকে জানিয়ে রাখুন। অধীনস্থদের সুযোগ-সুবিধা জেনে তাদের যৌক্তিক দাবি কর্তৃপক্ষের সামনে পেশ করুন। অফিসে সবসময় সময় মতো আসুন। জরুরি কাজ আগেই সেরে ফেলুন। কাজ দিয়েই নিজেকে প্রমাণ করে যোগ্যদের তালিকাতে ঢুকুন। সাধারণত লক্ষ্য পূরণে সফল হলেও ভালো পজিশন অর্জন করা যায়।
এমন অনেকে থাকেন- যারা অফিসের কাজ কিছুই পারে না। কাজ শিখতেও চান না। তবে বড় বড় কথা বলে এমন ভাব দেখায় যেন পুরো অফিসের কাজ শুধুমাত্র সেই করছে। অনেকের কাজ করার নূন্যতম যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা ছাড়াও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অফিসে ঢুকে পড়েন, বেতনটাও বাড়িয়ে নেন নানান রকম ছলচাতুরী করে। সবাইকে ভালো মানুষ দেখালেও মনের কুৎসিৎ রূপটা বেখেয়ালেই অনেক সময় বের হয়ে যায়। অমানুষ নিরব ঘাতক ফাঁকিবাজ ভন্ডরা ভালো মানুষের ভান ধরে থাকে; কাজ না করে পাকনা পাকনা কথা বলে। অকারণে সুযোগ পেলেই অপছন্দের সহকর্মীকে খোচা দিয়ে কথা বলে। অবজ্ঞা করে কথা বলে।
অনর্থক কোনো বিষয়ে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লে, পরস্পরকে দোষারোপ করলে অথবা কোনো কাজের কৃতিত্ব দাবি করলে কোনো পক্ষকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ এবং লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কোনো একটি পক্ষ অবলম্বন না করে উভয়ের মধ্যে সাধারণ যোগাযোগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, উভয়ের বক্তব্য শুনতে হবে এবং বিচার-বিশ্লেষণ করে উভয়ের বক্তব্যের সমন্বয় করে তৃতীয় মতামত উপস্থাপন করতে হবে। এমনভাবে সমস্যাটি সমাধানের কিছু উপায় বাতলে দিতে হবে যেন কেউ নিজেকে বঞ্চিত মনে না করে। কিছু নির্দেশনা ও নিয়ম-নীতি তাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে।
চুপ করে মাথা নিচু করে নিজের কাজ করে যাওয়া সহজ সরল ভালো ভদ্রলোকও অফিস পলিটিক্সের বলি হতে পারেন। কারণ তিনি অফিসে নিয়মিত যথাসময়ে আসায় কারা দেরী করে আসেন তার সাক্ষী হয়ে যান। সারাদিন অনেক কাজ করে বা পরিশ্রম করে বললেও কাজে ফাঁকি দেয়ার সাক্ষী থাকায় অনেক অসুবিধার কারণ হয়। পরিশ্রমী দক্ষ ভালো মানুষের বিরুদ্ধেও খারাপরা জোটবদ্ধ হতে পারে। ক্ষমতাবান মামা-চাচা না থাকলে দুষ্টদের যুগে সবচেয়ে উপযুক্ত কর্মীরও চাকরি চলে যেতে পারে।
কিছু লোক থাকে যারা পরিশ্রম ছাড়াই অন্যের উপর ভর করে বা উপর মহলে তোষামোদ করে উপরে উঠতে পলিটিক্স শুরু করে। ফলে কোম্পানিতে অফিস পলিটিক্স আছে, ছিল এবং থাকবে। কোম্পানি যত বড়, পলিটিক্সও তত বেশি। তবে কর্তাদের অফিস পলিটিক্স ম্যানেজ করতে হবে। পরস্পর বিরোধিতার মানসিকতা নয়, সহ-অবস্থানের মানসিকতা দরকার হবে।
সাধারণত অনেকে অপেক্ষাকৃত ভালো থাকার আশায় অফিস পলিটিক্সের আশ্রয় নেন। অমুক বেশি ভালো করে ফেলল, এই বুঝি আমার চাকরিটা চলে যাবে- এই সকল ভয় থেকেও অফিস পলিটিক্স শুরু হয়। সুফলটা নিজের পক্ষে নেয়ার জন্য, অন্যের ভালো দেখতে না পারায়, ক্ষমতার অপব্যাবহার করায়, একজনের কাজের ক্রেডিট আরেকজনে নিয়ে নিলে- অফিস পলিটক্স মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
অফিস পলিটিক্স এড়াতে- অনেকে কলিগদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে, পাওয়ারফুল ব্যাক্তিদের সাথে এক্সট্রা খাতির রাখে, বন্ধু নির্বাচনে সচেতন থাকে, ইগো ত্যাগ করে, বিনয়ী হয় এবং দায়িত্বশীল হয়। অন্যের কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। নিজের কাজ যথাসময়ে শেষ করেন। হেল্পফুল মানসিকতা নিয়ে অন্যকে তার কাজ করতে সহযোগিতা করেন। অন্যের পছন্দের মানুষ হন। সব সময় হাসিমুখে থাকেন। কম কথা বলার অভ্যাস করেন। সিনিয়রদের সাথে বাকবিতন্ডায় যান না। পার্সোনাল ইস্যু নিয়ে গল্প করেন না। রসালো সমালোচনা থেকে দূরে থাকেন।
৪.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস চাটুকার
S M Tuhin (author)
ছিঃ চাটুকার…..
___এস.এম।
আছে যত চাটুকার দালাল,
সব কিছুই তাদের হালাল।
না আছে ধর্ম, না আছে জাত।
খয়রাত দেখলেই ধরে মোনাজাত।
কথার ভেতর কথার পাকাবে দড়ি,
তাদের নাকি সৎসঙ্গ আহামরি।
এই যখন সামাজিকীকরণের রূপ।
তখন কি করে থাকি চুপ?
বিকল এই সঙ্গের চাই মুক্তি,
কার সাথে যে করি এমন এক চুক্তি?
একটা সমাজ চাই নির্ভরতার।
যেখানো বাস নেই চাটুকারিতার।।
৫.তৈল নিয়ে স্ট্যাটাস বিশ্ব চাটুকার
বিশ্ব চাটুকার
~আবু মোতালেব
পান পাতা জর্দা মুখে, দেখি রাজার হালে
নামাজ রোজা কিছুই নাই, ইসলাম আছে গালে।
ধর্মের কথা খৈ ফুটে, কোরআন হাদিস বলে।
চাটুকারি মুনাফিকি, সব করিয়া চলে।
দেখায় নরম ভেতর গরম, পিছে ঘুরে ক্ষমতার।
হাইরে মানুষ রঙিন মানুষ, পাক্কা ঈমানদার।
দেহে মানুষ পিঠ আছে, বুকটা তাদের নাই।
বিপদকালে এদের কাছে, নাহি পাবে ঠাঁই।
খুঁজে দেখো এমন মানুষ, হাতে গোনা যায়।
তুমি আমি মনের মানুষ, দিলটা দিতে চায়।
চাটুকারি পেশা এদের, থাকে লাভের তালে।
কার্যসিদ্ধি হয়ে গেলে, আনন্দেতে দোলে।
স্টলেতে কাউকে পেলে, সালাম দিয়া দিবে।
মুচকি হেসে ফ্রি মাগনা, চা চুরুট খাবে।
চাটুকার কতেক আছে, নম্র ভদ্র জানি।
কৌশল করে টাকা কামায়, মিষ্টি মুখের বাণী।
পশু যেমন বসে বসে, চুষে মৃত হাড়।
এই সমাজে অনেক আছে, বিশ্ব চাটুকার।
বয়স কারো বেড়ে গেল, ফিরল না তো হুশ।
মন্দ স্বভাব মনের অভাব, নামেই এরা মানুষ।