#ডিভোর্স ২য় পর্ব
এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরেও রুহী ভাল রেজাল্ট করলো, ও বাবার মতই ব্রিলিয়ান্ট, অল্পতেই সব বুঝে নেয়। তবে আগের মত আর উৎফুল্ল নাই। মাকে কখনও জিজ্ঞেস করেনি কেন বাবার সঙ্গে ডিভোর্স হলো। রেজাল্ট জানার জন্য ওর বাবা ফোন করেছিলো ও বলেছে, বাবা ওকে ডিনারের জন্য ডেকেছে। মাকে জিজ্ঞেস করতে ফারহানা বললো অবশ্যই যাবে তোমার বাবা ডাকছে যাও।
সন্ধ্যায় রায়হান গাড়ী পাঠিয়ে দিল মেয়েকে নেওয়ার জন্য, রুহী প্রস্তুত হয়েই ছিল, ওর মা গাড়ীতে তুলে দিল। হোটেলের সামনেই ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো বাবা। রুহী নেমে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। অনেক্ষন চুপ করে বাবার বুকের সাথে মিশে থাকলো, রায়হানের মনে হচ্ছে বুকের ভিতরে প্রচণ্ড ভাংচুর চলছে। মেয়েকে বললো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবি? চল মা ভিতরে যাই। রুহী তো অবাক, ওর বাবা রীতিমতো পার্টির আয়োজন করেছে। ওর অনেক বন্ধুদেরকেও ইনভাইট করেছে। ওদের দেখে তো রুহী মহাখুশি, বেশ কিছুদিন পরে একটা আনন্দময় পরিবেশে সময় কাটালো রুহী। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওর বাবা নিজে গাড়ীতে বাসায় নিয়ে আসলো, গেটের সামনে নামিয়ে দেওয়ার সময় ওর হাতে একটা গহনার বাক্স দিয়ে বললো আমার মায়ের জন্য উপহার।রুহী বাবাকে অনুরোধ করলো বাসায় যেতে, কিন্তু রায়হান বললো এখনও সময় হয়নি মা। তুমি যাও,ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বিদায় নিল।
দোতালা থেকে সবই দেখলো ফারহানা, ওর বুক দিয়ে অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো।এই কদিনেই রায়হান কেমন শুকিয়ে গেছে। ও আস্তে জানালা থেকে সরে আসলো।
রুহী এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো, এই প্রথম ও মাকে জিজ্ঞেস করলো, মা, তোমার আর বাবার কি হয়েছিলো? যে ডিভোর্স নিতে হলো? ফারহানা বললো রুহী, বড়দের ব্যাপারে কোন কথা বলোনা। এটা শুধু বড়দের ব্যাপার না, মা, আমার বাবা আর মায়ের ব্যাপার। ফারহানা বললো, রুহী চেঞ্জ করে শুয়ে পড়। আগামীকাল আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। কেন মা? আমার একটা প্রজেক্ট ভিজিট, সেই সাথে একটু ঘোরাঘুরিও হবে। তোমার ভাল লাগবে। আমাকে তো আগে বলোনি? রুহী জানতে চাইলো। আগে বলার কি আছে? তুমি কিন্তু বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছো? রাগত স্বরে বললো ফারহানা। রুহী বললো আমি যাচ্ছি না মা। মানে? বুঝতে পারো নাই? আমি কক্সবাজার যাবো না। বলে রুহী চলে গেলো।
ফারহানা যে ভয়টা পেয়েছিলো, তাই সত্য হলো। মেয়ে ঠিকই ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো। কিন্তু ওতো বলতে পারলো না, যে ওর বাবা একজন প্রতারক। ভালবাসার নামে ফারহানার সাথে চরম প্রতারনা করেছে।
সেদিন ফারহানা অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলো ইউনিভার্সিটির ভিতর দিয়ে, ভিসির বাসার সামনে রাস্তায় দেখলো রায়হান আর একটা মেয়ে সম্ভবত ওর ইউনিভার্সিটির কোন মেয়ে, এক রিক্সায় যাচ্ছে, খুব হাসিখুশী।
বাসায় আসার পরে ফারহানা জানতে চাইলো মেয়েটা কে? রায়হান যেন আকাশ থেকে পড়লো, কার কথা বলছো? কোন মেয়ে? আমার ক্লাসে তো অনেক মেয়ে, ফারহানা বললো যার সঙ্গে রিক্সায় যাচ্ছিলে? রিক্সায়? কই না তো, তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।ফারহানা চিৎকার দিয়ে উঠলো রায়হান আমি নিজের চোখে দেখেছি, তুমি ঐ মেয়েটার সঙ্গে একই রিক্সায় যাচ্ছিলে, রায়হানও উচ্চ স্বরে বলতে লাগলো ভুল, তুমি ভুল দেখেছো। ফারহানা আর কোন কথা না বলে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
রুহী তখন ঘুমিয়ে ছিল, মার কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। অবাক হয়ে গেল, আগে কখনও মাকে তো কাঁদতে দেখিনি? মার গলা জড়িয়ে ধরে বললো কি হয়েছে মা? তুমি কাঁদছো কেন? কই নাতো? এমনি, তুমি খেয়েছো? রুহী বললো হ্যা মা,
রুহী আবারও বললো, মা আমাকে বলো। কেউ তোমাকে বকেছে? না রুহী, এখন আমাকে একটু ঘুমাতে দাও। আচ্ছা মা আমি তোমার মাথা টিপে দিচ্ছি, ফারহানা চোখ বুজে শুয়ে পড়লো।
সন্ধ্যার পরে ফারহানা ঘুম থেকে উঠলো, রুহী তখন নীচে টিচারের কাছে পড়ছে, রায়হানকে কোথাও দেখলো না। রুহী বললো মা বাবা বাইরে গেছে, বলেছে ফিরতে দেরী হবে। ফারহানা কোন কথা না বলে বাগানে গেল। এই একটা শান্তির জায়গা, কত রকমের ফুল গাছ যে আছে তার হিসেব নাই। ওর বাবা খুব সৌখিন মানুষ ছিলেন। পৃথিবীর যেখানেই গিয়েছেন সেখান থেকেই ফুলগাছ এনে লাগিয়েছেন। কিন্তু এখানেও ভাল লাগছে না ফারহানার। মাথা থেকে ঐ দৃশ্য মোটে সরাতেই পারছেনা। ছি ছি এর আগে ওর মৃত্যু হলোনা কেন?। রায়হান কিনা অন্য মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াবে?। ও মাথা চেপে ধরে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। এরমধ্যে রুহীর টিচারও চলে গেল, রুহী বাগানে এসে মায়ের পাশে বসলো, সমানে ওর এসএসসি পরীক্ষা। মাকে জিজ্ঞেস করলো তোমার কি হয়েছে? ফারহানা বললো কিছু না মা। তুমি যাও আমার জন্য এককাপ ব্লাক কফি বানাও, আমি আসছি।
অনেক রাতে ফিরলো রায়হান, তখনও ফারহানা ঘুমায়নি, ওর বুকের উপর যেন কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। রায়হান কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো কিন্তু ফারহানা বললো প্লিজ কোন কথা বলোনা। এ বিষয়ে আমি আর কোন কথা বলতে চাইনা। তবে একটা অনুরোধ আমাদের রুহীর সামনে এমন আচরন কেউ কখনও করবো না, যাতে ও মনে কষ্ট পাবে।
ফারহানা অফিসে এসে ওর এক বান্ধবীকে ফোন দিলো, সেও ঢাকা ইউনিভার্সিটির টিচার, এবং রায়হানের সাথেও ভাল সম্পর্ক। ওর নাম নিলীমা, ফারহানা বললো আমার অফিসে একটু আসতে পারবি? নিলীমা বললো লাঞ্চের পরে, ফারহানা বললো আয় আজ একসাথে লাঞ্চ করি। নিলীমা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে, কেননা রায়হান আর বৈশাখীর বিষয়টি ক্যাম্পাসের মুখোরোচক ঘটনা। বললো ঠিক আছে আমি ঠিক দুইটার সময় চলে আসবো।
বাংলামটর ফারহানার অফিস, নিলীমার পৌঁছাতে একটু দেরী হয়ে গেল, ফারহানা লাঞ্চ রেডি করেই বসেছিল, নিলীমা ঢুকেই বললো কি ব্যাপার মহারানীর এতদিনে গরীবকে মনে পড়লো? ফারহানা হাসতে হাসতে বললো বন্ধুতো চিরকালের, দশবছর কথা না হলে তুই আমার জানি জিগার, কেন রে গতপরশুদিনও তো কত গল্প করলাম, নে আগে বস, খেতে খেতে গল্প করি।
খেতে খেতে ফারহানা জানতে চাইলো, রায়হানের কি খবর রে? কোন খবর? জানতে চাইলো নিলীমা। তুই কি কিছু জানিস? কই নাতো? নিলীমা বিষয়টা গোপন করে গেল। কারন ও চায়না ওর বান্ধবী মানসিকভাবে কোন কষ্ট পাক।ফারহানা ওকে রিকোয়েস্ট করলো যদি কোন কিছু জানতে পারে তবে যেন ফারহানাকে জানায়।
চলবে……….
শওকত জাহিদ