#ডিভোর্স পেপার পর্ব ১
অবশেষে ফোনটা রিসিভ করলো রিয়াদ। কয়েক সেকেন্ড মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হচ্ছিলাম তাহলে রিসিভ করলো? কষ্টের পাথর বুকে চেপে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলাম।
– তুমি নাকি আমাকে ডিভোর্স দিয়েছো?
-কে বলেছে?
– শুনলাম যে
– দেয়া ধরছিলাম
বলেই কলটা কেটে দিলো। রিয়াদ একথাটা বলতে পারলো? তার মানে স্বীকার করে নিলো যা শুনেছি সব সত্যি?
চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। না, আমার চোখে কোনো পানি নেই। আমার ভেতরে দশ মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে যেনো।
আমি বারবার নিজেকে বোঝাচ্ছি – আমি যেনো সুইসাইড না করি। ওকে যেনো ভুলেও আর একটা কল না দেই। ও যেনো ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে না পারে আমি কষ্ট পাচ্ছি। বরং বুঝুক আমি মেনে নিয়েছি। আমি আর ওর আগের চেনা মিলি নই।
ওহ্ রিয়াদ ফোনটা কেটে দেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। আমি এই কথাটা জানার জন্যই এতোক্ষণ বেয়াহার মতো কল দিয়ে যাচ্ছিলাম তোমাকে। শেষ বারের মতো একবার বেহায়া হওয়ার সাধ হলো কারণ আমি তোমার মুখ থেকেই সত্যিটা শুনবো। আর কারও কথা বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস হচ্ছে না একমাত্র তোমার মুখ থেকে শোনা ছাড়া। নাহ্! আমার বাবার কথাও বিশ্বাস করছি না।
আজ ঠিক দশ মাস দশ দিনে ভেঙে গেলো আমাদের টোনাটুনির বৈবাহিক বন্ধন। ছোট্র একটা স্বপ্নের সংসার। বিয়ের আগে রিয়াদ কে চিনতাম না। জুনের ১০ তারিখে দেখতে আসে একটা রেস্টুরেন্টে আর আংটি পরিয়ে ই চাইলো বিয়েটা সেরে ফেলতে। হ্যাঁ, আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেলো।
রিয়াদের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। এমন ছেলেকে জামাই হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সরকারি কলেজের লেকচারার। বিনয়ী, নামাজি, ভদ্র, হ্যান্ডসাম এমন ছেলেকে জামাই হিসেবে সব বাবা- মা ই চাইবে। উভয়েরই পছন্দ হওয়ায় ও আর দেরি করতে চাইলো না, বললো বড় ভাইয়েরা ডিসেম্বরে বিদেশ থেকে আসবে তখন আনুষ্ঠানিকতা হবে।
আমার জীবনে প্রথম পুরুষ এই মানুষটা
প্রথম ভালোবাসা
আমার স্বপ্নের রাজকুমার
পৃথিবীর সেরা উপহার
ওকে ভালোবাসবো বলেই
হয়তো কারো প্রতি আমার
সামান্যতম ভালোলাগা তৈরি হয় নি।
কাউকে পছন্দ করতে পারি নি।
একজন মানুষকে যতোটা ভালোবাসা সম্ভব ততোটাই ভালোবেসেছিলাম ওকে। আমারও বিশ্বাস ছিলো ও আমাকে প্রচণ্ডরকম ভালোবাসে।
হয়তো কখনো কাউকে ভালোবাসিনি ,
কারো সাথে রসিয়ে দু’চারটে কথা বলি নি, এমনকি কারও ভালোবাসাও পাইনি বলে মনে হতে পারে এমন।
আজ ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওর সাথে আমার সমস্ত সম্পর্ক চুকে গেলো। কারণ ওর পাঠানো ডিভোর্স পেপার আমার ঠিকানায় এসে গেছে আজ।
যা আমার বিশ্বাসে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।
বিয়ের ছয় মাস পরে আমার পীড়াপীড়িতেই ও একটা বাসা নিতে বাধ্য হয়। তার ও অনেক কারণ। ও আমাদের বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে আসতো। ওর সাথে কাটানো সময় গুলোই আমার জীবনে ভালোলাগার সেরা সময়। কিন্তু প্রতিবারই কেমন করে যেনো কোনো একটা সন্দেহ রেখে যেতো। আমার কিচ্ছু ভালো লাগতো না। দিনে দিনে খুব চিন্তাযুক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। মাস্টার্স ফাইনাল দিয়েছি বিসিএস এর জন্য লেখাপড়া করছি কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করছে না। সারাক্ষণ ওর রেখে যাওয়া ঘটনা কিংবা কথা নিয়ে ভাবতে থাকতাম। অথচ ও বারবার আমাকে পড়ালেখার তাগিদ দিতো। আমার ক্যারিয়ার নিয়ে পজিটিভ ছিলো। আমাকে এমফিল করাবে বলতো। আমার জন্য যা কিছু ভালো সেগুলো ই বারবার বলতো। অনেক উৎসাহ দিতো। যেটা আমার বাবা ছাড়া কেউ করতো না।
এক শুক্রবার মাস খানেক তখন বিয়ের বয়স।
লাঞ্চ শেষে গল্প করছিলাম আচমকা বলল-
– আমি আরেক টা বিয়ে করবো তুমি কিন্তু সম্মতি দেবে।
আমি অবাক হয়ে ওর মুখে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম-
– বেশ তো। সম্মতি দেয়া হলো।
রিয়াদ মিথ্যে কথা বলে আমার অভিব্যক্তি দেখতে চাচ্ছে। আমি এখন পাগলের মতো কিছু বলবো আর ও মজা নেবে কারণ আমি প্রচণ্ড চাপা স্বভাবের ও সেটা ভালো ভাবেই জানে।
মনে মনে এমনটা ভাবলেও ওর কথাটা আমার ভালো লাগে নি। ও এমন কথা মজা করেও বলতে পারে সেটা ভাবতেও ভালো লাগছে না।
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর ও বলে যাচ্ছে।
– সে তোমার সম্পূর্ণ বিপরীত হবে। এই যেমন তুমি উচ্চ শিক্ষিত সে হবে কম শিক্ষিত, তুমি লম্বা সে হবে খাটো, তুমি চাকরি করবে সে রান্না বান্না করবে, তুমি বড় বউ সে হবে ছোট বউ। সমস্যা আছে কোনো? তোমাকে ভালোবাসার কোনো কমতি হবে না। পুরুষ মানুষ কিন্তু চারটা পর্যন্ত বিয়ে করতে পারে।
ও এসব কি বলে যাচ্ছে। এসব তো মজা করার কথা না। যাক, প্রসঙ্গ ঘোড়াতে মৃদু হেসে বললাম-
– একটা গল্প বলি শোনো। এক লোকের তিন বউ ছিলো। প্রত্যেক বউ স্বামীকে এতো বেশি বেশি ভালোবাসতো যে স্বামী ব্যাটার পাগল হওয়ার উপক্রম। খাবে না আর তখনও বউয়েরা জোরাজুরি করে খাওয়াতে থাকে আর বলতে থাকে-
একজন বলে-ও আমার রান্না এহন আর ভালা লাগে না, এহন ছোটোর রান্না ভালা বুঝি, এজন্য খাইবার মন চায় না? আজ না খাইলে বারোটা বাজাইয়া দিমু।
আরেক জন বলে- আমার রান্না না খাইয়া পেট খালি রাখবা পরে মেজোর ঘরে গিয়া গোপনে খাইয়া আইবা ? তাহা হইতে দিতাম না মরদ। এই খাওন খাইয়া উঠতে হইবো।
আরেক জন দাঁত কিড়মিড় করে বলে- বয়স হইছে বইলা কি রান্না ভুইলা গেছি বাবুসাব। আমার রান্না না খাইয়া কার ঘরে খাইবা আইজ দেইখা ছারুম।
তো স্বামী ব্যাটার তো দম যায় যায়। রাতে আরও মজার ঘটনা ঘটে।
বড় বউ বলে- আমি বড় বউ আমার ক্ষ্যামতা বেশি তুমি আমার কথা হুনবা আমার সাথেই থাইকবা। আসো আসো বলে টানতে টানতে নিয়ে যায়।
মেজ বউ বলে- আমি বেশি সুন্দরী। আমারে বাদ দিয়া কোন্ ঘরে যাইবা তোমার এতো বড় সাহস। তুমি আমার সাথে আইসো বলে টানতে থাকে।
ছোট বউ বলে- তুমি বুড়িদের ঘরে যাইবা কেনো আমারে আহ্লাদ কইরা বিয়ে করছো আমার সাথে থাইকবা কইলাম। আর কোথ্থাও যাইতে পারবা না বলে টানতে শুরু করে।
তিন বউয়ের টানাহেঁচড়ায় ব্যাটার সারা গায়ে ব্যথা উঠে যায়। কান্নাকাটি করে আকুতি মিনতি করে কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারপর যায় রাত ফুরিয়ে। স্বামী ব্যাটা ব্যথার শরীর নিয়ে শেষে মেঝেতে পড়ে থাকে।
কেমন লাগলো গল্পটা? তুমিও কয়েকটা বিয়ে করবে আর তোমাকে নিয়ে তোমার বউয়েরা টানাটানি করবে কি মজা তাই না?
তবে শোনো তুমি নিশ্চিন্তে থাকো আমি কিন্তু এমন কিছুই করবো না।
বিকেলে ওর মোবাইলে কল আসে পরপর দুবার একটা আনসেইভ নাম্বার থেকে কিন্তু রিসিভ করছে না বরং আড়াল করছে আমার থেকে মোবাইলটা।
– কার ফোন রিসিভ করছো না কেনো?
– এক স্টুডেন্ট এর ফোন। অতিরিক্ত প্যাঁচাল পারা মেয়ে এজন্য রিসিভ করছি না।
দেখতে পারলাম শুধু নাম্বারের শেষ তিনটা ডিজিট এক শুন্য শুন্য।
চলবে–
উম্মে কুলসুম লাইজু
বি:দ্র: “ডিভোর্স পেপার” আমার লেখা প্রথম গল্প। পড়ে কেমন লাগলো মতামত দিবেন তবে উৎসাহ পাবো আরও লিখতে।
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক