#অন্যরকম বউ পর্ব
৬ ও শেষ
সামনাসামনি আমাদের সুমো গাড়ির সাথে আরেকটির সংঘর্ষ হয়।নীলার মাথার পেছন দিক প্রচন্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় রডের সাথে লেগে, আমার কোথায় লেগেছে ভুলে গেছি ওর মুমূর্ষু অবস্থা দেখে।পাহাড়ি রাস্তা, চিকিৎসা ব্যবস্থা এখানে খুবই অপ্রতুল।প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরে একটা কমিউনিটি ক্লিনিক পেলাম।অনর্গল রক্তক্ষরণ হচ্ছে, বিশেষ করে নীলার নাক দিয়ে।আমি জীবনে এতোটা অসহায় কখনো বোধ করিনি। তার উপর নীলার রক্তের গ্রুপ এ- নেগেটিভ। কেউ পরিচিত নেই যে ফোন দিব, ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও লাভ নেই।আমি যাকে পাচ্ছি বোঝাতে চেষ্টা করছি।ওরা কাকে কাকে ফোন দিচ্ছে,যোগাযোগ করছে কিন্তু চেহারা দেখে খুব ভালো কিছু মনে হচ্ছে না।অপেক্ষাকৃত বড় শহর পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে,নীলার ইমিডিয়েট রক্ত দরকার, আমি যে রক্ত দিবো আমার ব্লাড গ্রুপ ও-পজিটিভ।
বিধাতা কখনো কখনো মানুষকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় যখন অর্থ-বিত্ত,বিজ্ঞান, চিকিৎসা কোন কাজে আসে না।নিজেকে তখন তুচ্ছতম মনে হয়।নীলার শরীর সাদা ফ্যাঁকাশে হয়ে আসছে।আমি আজকে বুঝতে পারছি, এই কয়দিনে ওকে কতোটা ভালোবেসে ফেলেছি।ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে, আবার আমি কিছু করতেও পারছি না।নীলা আজ আর আপনি করে বলছে না,শুধু আস্তে আস্তে বলছে
-আমাকে বাঁচাও, আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই।
আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ পরই ওর আঙ্গুল গুলো মনে হলো ছেড়ে দিচ্ছে আমার হাত।আমার কোলের উপরেই নিস্তেজ হয়ে পড়লো,আমি বার বার নীলা নীলা বলে চিৎকার করতে থাকলাম কোন উত্তর নেই।একটা কথাই শুধু কানে ভাসছে
-আমাকে বাঁচাও, আমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই।
আমি কিভাবে লাশ নিয়ে দেশে এসেছি সেটা বলে আরও কষ্ট বাড়াতে চাইনা।নীলার কবর আমাদের বাড়ির পাশেই ওখানে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন স্বগতোক্তি করে আসি।ওর অন্যরকম কথা ও কাজগুলো ভীষণভাবে মিছ করি।প্রতিনিয়ত ওর কথাগুলো কানে ভাসতে থাকে।
……………………………………………………………
নীলার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী গেছে এক সপ্তাহ আগে।হঠাৎ আমার বড় খালা ফোন দিয়ে নানা কথা বলতে থাকে,বাবা জীবন অনেক কঠিন,একা একা আর কতদিন চলবি।তোর বাবা-মা মন খরাপ করে থাকে,নাতি-নাতনীদের দেখে যেতে চায়।আমি শুধু বললাম, খালা এতো কথা না বলে বললেই তো পারো শাহেদ বিয়ে কর।বলেই ফোন রেখে দিলাম।
যা হোক নীলা চলে যাবার চার বছর তিন মাসের মাথায় আমার আবার বিয়ে হয়েছে।মেয়ের নাম সুহানা বশরী।যথারীতি আবার বাসর রাত রুমে প্রবেশ করতেই সুহানা আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।আমি বললাম কি করছো ওঠো।সুহানা খাটে গিয়ে বসলো।আমি ওকে একটা আংটি দিয়ে বললাম, তোমার সাথে কিছু কথা আছে(ঠিক যেভাবে নীলাকে বলেছিলাম)
-জি বলেন?
সুহানাকে সব ঘটনা খুলে বললাম,যদিও অনেক খানি আগেই জানানো হয়েছিল।আমি বললাম, আমার সময় লাগবে তোমার সাথে মানিয়ে নিতে, একটু ধৈর্য্য সহকারে সহ্য করতে হবে।
-জি আচ্ছা।
যে রকম বউ আগে চেয়েছিলাম সুহানা একদম সেইরকম কিন্তু কি অদ্ভুত বিষয় এখন শুধু নীলার কথা মনে পড়ে।সুহানা আমার মুখের উপর কোন কথা বলে না,সবসময় একটা হুজুর হুজুর ভাব প্রকাশ করে।যা বলি না কেন তার আশিভাগ উত্তর আসে
-জি আচ্ছা।
সুহানা যত এরকম ব্যবহার করে তত বেশি আমার নীলার কথা মনে পড়ে।স্বাভাবিক বা গতানুগতিক কিছু যেন আর ভালো লাগে না, পানসে মনে হয়।
আমি শুধু ভাবছি জীবনটা এমন কেন,আসলেই কি আমরা যা চাই ভুল করে চাই, আর যা পাই তা চাইনা।তবে আরও একটা ইচ্ছা আছে,ছোট্টো সোনামণিদের জন্য কোন এক পাহাড়ে একটা স্কুল করবো, স্কুলের সামনে লেখা থাকবে “নীলাচল আনন্দ নিকেতন”।
END