গোয়েন্দা অফিসার রায়হান অনেকটা সময় ধরে লাগেজটা দেখছেন। ভিতরে বোম টোম আছ কি না বুঝা যাচ্ছে না!
বোমস্কয়াডের একজন অফিসার পর্যবেক্ষন করছে। এ রকম পত্যন্ত অঞ্চলে বোম রেখে লাভটা কি? এ রাস্তা দিয়ে কোনো ভিআইপি যাওয়ার কথা আছে কি?
খবরটা জানা দরকার। বলা যায় না। এটা হয়ত ব্যর্থ হয়েছে। ওরা নিশ্চয়ই আর চেষ্টা করবে।
বোমস্কয়াডের অফিসার জানালেন এটাতে কোনো বোম নেই। যাক তাহলে এটা কোনো ভিআইপির জন্য রাখা হয়নি। ভিতরে লাশ থাকতে পারে! অসম্ভব কিছু না।
লাগেজটা বেশ ভারী। ভিতরে মনে হয় লাশ নেই। কারণ কোনো রক্তের ছাপ দেখা যাচ্ছে না।
রায়হান ওর সহকারী কে বলল, “আশপাশের পুরো জায়গাটা খোঁজ করে দেখুন। এটা একটা মেয়ের লাগেজ। মেয়েটা হয়ত বিপদে পড়েছে!”
সহকারী আকরাম অবাক হয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল, ” কী রে বুঝলেন স্যার এটা কোনো মেয়ের লাগেজ? “
“খুব সহজ আকরাম সাহেব। পিংক কালারের একটা লাগেজ নিয়ে কোনো ছেলে বের হবে না তা-ই না?”
আকরাম স্যারের অবজার্ভেশনে বিস্মিত হলেন। “ঠিক ধরেছেন স্যার।”
আশেপাশের সব জায়গা খোঁজ করে কোনো মেয়ে মানুষ তো দূরের কথা কোনো মানুষের চিহ্ন পাওয়া গেল না।
লাগেজের সাথে আর দুইটা জিনিস পাওয়া গেল। এক টুকরো কাপড় আর একটা কানের দুল। এতে প্রমানিত হলো রায়হানের কথাই সঠিক। এটা একটা মেয়ের লাগেজ। মেয়েটা নিশ্চই বিপদে পড়েছে!
লাগেজটা নিয়ে শহরে চলে আসল রায়হান। লাগেজে ভয়ংকর কিছু পাওয়া যায়নি। লাগেজটা রায়হানের হেফাজতে আছে। খুব দ্রুত লাগেজের মালিক খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে সব রহস্য উদঘাটন হবে। মেয়েটা না জানি কী বিপদে পড়েছে! দ্রুত উদ্ধার করা দরকার।
রায়হান বসে আছে একটা চেয়ারে। সামনের একটা টেবিলে তিনটা জিনিস রাখা। লাগেজ, এক টুকরো কাপড় আর একটা কানের দুল।
রায়হান বলল, “কোন সূত্র পেয়েছেন আকরাম?”
“না স্যার।”
“মাথা খাটান। গোয়েন্দা হয়েছেন মাথা না খাটালে হবে?”
“স্যার একটা জিনিস পাইছি।”
“কী জিনিস? “
“লাগেজটা প্রেসিডেন্ট কোম্পানির। “
“গুড! এটা ভালো একটা পয়েন্ট। আচ্ছা বের করেন তো এই শহরে প্রেসিডেন্ট ব্যাগের কয়টা শো-রুম আছে?”
“জি স্যার, আমি বের করছি।”
রায়হান কাপড়ের টুকরোটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে। হঠাৎ করে ওর চোখে পড়ল। কাপড়ের গায়ে একটা স্টিকার লাগান।” লাবনী টেইলার্স।”
এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সূত্র পাওয়া গেছে। লাবনী টেইলার্সটা খুঁজে বের করলেই অনেক কিছু পাওয়া যাবে। কানের দুল থেকে কিছুই বুঝা গেল না!
রায়হান এখন এসেছে লাবনী টেইলার্সে। খুব দামী একটা টেইলার্স মনে হচ্ছে। লাগেজের মেয়েটা নিশ্চয়ই বড়োলোক।
কাঁচের দরজা খুলে রায়হান আর ওর সহকারী আকরাম লাবনী টেইলার্সের ভিতরে ঢুকল। একজন সুন্দরী মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, “কীভাবে সাহায্য করতে পারি স্যার?”
“আমি এ এস পি রায়হান। “আইডি কার্ড বের করে দেখাল রায়হান।
“ভিতরে আসুন স্যার।”
রায়হান একটা চেয়ারে বসল। অনেক বড়ো দোকানটা। কত রকমের কাপড় দেখা যাচ্ছে। পুরো ঘরটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মেয়েটি ভিতরের দিকে গিয়ে একজন মহিলা কে ডেকে আনল। মহিলা টেইলার্সের ম্যানেজার।
রায়হানের সামনে এসে বলল, “আমি রোমানা। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার।”
“আচ্ছা, আমি একটা কেসের তদন্তের ব্যাপারে এসেছি। আপনাদের এখানে যারা ড্রেস বানায় তাদের লিস্ট থাকে নিশ্চয়ই? “
“জি, স্যার।”
” গত ছয় মাসে যারা ড্রেস বানিয়েছে তাদের লিস্টটা দেন।”
ম্যানেজার ভিতরে গিয়ে একটা মোটা খাতা নিয়ে আসল। খাতার মধ্যে গত এক বছরে যারা ড্রেস বানিয়েছে তাদের একটা তালিকা আছে। ড্রেসের কাপড়ের ছোটো একটু টুকরো খাতায় লাগান থাকে। রাস্তায় পাওয়া কাপড়ের মতো ড্রেস যারা বানিয়েছে তাদের একটা লিস্ট রায়হান জোগাড় করল।
প্রেসিডেন্ট ব্যাগের ব্রাঞ্চ থেকে এক বছরে যারা লাগেছ কিনেছে তাদের একটা লিস্ট আনা হলো। অবশ্য সবার নাম ওদের কাছে থাকার কথা না।
জয়িতা ঘরে উঁকি দিয়ে বলল, “আসব স্যার?”
“এসো জয়িতা। “
জয়িতা হলো গোয়ান্দ অফিসার। আকরাম আর জয়িতা রায়হানের সহকারী হিসাবে আছে। জয়িতা ভিতরে ঢুকে রায়হানের সামনের চেয়ারটাতে বসল।
“স্যার, আপনার কথামতো পাঁচটা মেয়ের নাম পেয়েছি। যারা প্রেসিডেন্টের শো-রুম থেকে লাগেজ কিনেছে আবার লাবনী টেইলার্স থেকে ড্রেস বানিয়েছে। “
“দারুণ কাজ করেছ তোমরা!”
“এ সময় আকরাম আসল। ও জয়িতার পাশের চেয়ারে বসল। আকরাম বলল, স্যার, এই পাঁচটা মেয়ের বাড়িতে খবর নিলেই তো আমরা জানতে পারব। কার লাগেজ হারান গেছে! এবং মেয়েটা বিপদে পড়েছে কি-না?”
“হ্যাঁ, তা পারা যাবে।”
রায়হান কিছু সময় ভাবল। ওরা দুইজন নীরব হয়ে বসে আছে। ” হঠাৎ রায়হান বলল, আচ্ছা, পাঁচ মেয়ের নাম্বার তো আছে তা-ই না?”
“জি স্যার।”
“একটু চেক করে দেখতো কোন মেয়েটার মোবাইল লাগেজ যেখানে পাওয়া গেছে ওই এলাকায়ছিলো।”
আকরাম আর জয়িতার মুখে হাসি ফুটে উঠল। রায়হান স্যার সত্যিই একজন জিনিয়াস! সব সূত্র মিলিয়ে একটা নাম পাওয়া গেল,” সুইটি!”
রায়হান এখন এসেছে আশরাফ খানের বাড়িতে। এ বাড়িতে আগে কয়েকবার আসা হয়েছিল। বাড়ির মানুষ
রায়হানের পরিচিত বলা যায়। গেট খুলে দিলো কাজের মেয়েটি। রায়হান বসে আছে সোফায়। কাজের মেয়েটি সুইটিকে ডেকে আনল।
সুইটি মিষ্টি হেসে বলল, “কেমন আছেন?”
“ভালো। আপনি?”
রায়হানের সামনে রাখা লাগেজের দিকে অনেকটা সময় অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সুইটি।
“এটা আপনি কোথায় পেলেন!”
একটু হাসল রায়হান। “সে বিশাল কাহিনি। সময় লাগবে বলতে।”
এ সময় সুইটির ছোটো বোন সিমু এসে সুইটির পাশে বসল।
সিমু রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি আপুর লাগেজ কোথায় পেলেন ভাইয়া?”
রায়হানের চেহেরায় একটা আত্মতুষ্টির হাসি ফুটে উঠল। এ সময় কাজের মেয়েটা চা বিস্কুট দিয়ে গেল।
সুইটি বলল, “চা নেন।”
সিমু বলল, “বলেন না ভাইয়া লাগেজ কী করে পেলেন?”
রায়হান চায়ের কাপে আলত চুমুক দিয়ে লাগেজ পাওয়া থেকে বলা শুরু করল।
সব ঘটনা শুনে সিমুর চোখে বিস্ময়!
সিমু বলল,” ওয়াও! কী ইন্টারেস্টিং
কাহিনি!”
সুইটি বলল, ” অনেক কষ্ট করেছেন! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি সত্যিই জিনিয়াস একজন গোয়েন্দা! “
রায়হান একটু হেসে বলল, “ধন্যবাদ। আজ তাহলে আসি। “
“আবার আসবেন কেমন।”
রায়হান খুশিমনে চলে গেল। সিমু বলল, “আচ্ছা আপু, তোমার লাগেজটা হারাল কী করে? আর তুমি তো কাউকে কিছুই বলোনি!”
“লাগেজ তো হারায়নি।”
“তাহলে উনি রাস্তায় খুঁজে পেলেন কী করে?”
“নানি বাড়ি থেকে আসার সময় নানি এতগুলা নারিকেল লাগেজে ঢুকিয়ে দিলেন। এমন ভারী লাগেজ নিয়ে আসা যায়? তাই ইচ্ছে করে রাস্তায় রেখে এসেছিলাম। এখন দেখলি কী করে লাগেজ বাসায় চলে এলো।”
“উনি এ সব তথ্য পেলো কী করে আপু!”
“সুইটি একটু হেসে বলল, আমি আমার পুরানো কাপড়ের টুকরো আর কানের দুল লাগেজের পাশে রেখে এসেছিলাম। জানতাম এ বলদটা এসব দেখেই খুঁজে বের করবে। আমি তো জানি ওরা কী করে কাজ করে।”
“আপু, রায়হান ভাই তদন্ত করতে যাবে এটা তুমি শিউর হলে কী করে?”
“আমিই তো বলদটা কে অন্য একটা নাম্বার থেকে কল করে বলেছিলাম, রাস্তায় একটা লাগেজ পড়ে আছে। মনে হয় এটাতে বোম আছে!”