ছুটির দিনে অনলাইনে মিটিং চলছে। মিটিং শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই পাশের বাসার ভাবি এসে বলল, ‘ভাই,দুপুরে আমাদের বাসায় আপনি সহ বাসার সবাইর দাওয়াত রইল।’
বলতে বলতে সে আমার মোবাইলের সামনে পর্যন্ত চলে আসলো।সাথে তাঁর ছোট ছেলেটি আমাকে বলে উঠলো, ‘আংকেল মোবাইলে গেমস খেলতেছো বুঝি!’
আমি হাতের তর্জনী আঙুলটি মুখে নিয়ে চুপ ইশারায় মাথা নেড়ে দাওয়াত কবুল করলাম এবং সরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিলাম।
ভাবি নাছোড়বান্দা! বলল, ‘কোট টাই আর লুঙ্গি পরে মোবাইল টিপেন ভাইর মাথাটা কী পুরাই গেছে! ‘
দাঁত কেলিয়ে সে কী হাসি।
বিষয়টি ঘরের লোকজন আঁচ করতে পেরে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিলো।
এবার রুমের দরজা রুদ্ধ করে মিটিং এ আবার মনোযোগী হলাম। গরমে খোলা মেলা থাকতে চেয়েছিলাম তা আর হল না।
মোবাইলটা টুন টুন করে বেজে উঠলো। দেখলাম কয়েকজন বন্ধু আমাকে অনলাইনে একটিভ দেখে ম্যাসেঞ্জারে বার্তা দিচ্ছে। কয়েকজন কে রিপ্লাই দিলাম, ‘মিটিং চলছে পরে কথা হবে।’ দুয়েকজন পাল্টা রিপ্লাই দিলো বন্ধের দিন কীসের মিটিং আমাদের এরিয়ে যাওয়ার ধান্ধা!
একজন ম্যাসেঞ্জারে কল দিয়েই বসল,মেজাজটা গরম তেলে পানি পড়ার মতো ছেত করে উঠলো, কী যে করি! মিটিংয়ে তখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে ডায়েরিতে নোট করছিলাম। কয়েকবার কেটে দিয়েও কাজ না হওয়ায় ব্লক মেরে দাঙ্গা দমন করলাম।
দরজার ওপাশে কিছু একটা চিৎকার চেচামেচি অনুমান করলাম। ততক্ষণে দরজায় খটখট শব্দ। দরজা খুলে বুঝতে পারলাম বাচ্চারা অনেক্ষণ আমাকে না দেখে এ হট্টগোল সৃষ্টি করছে। দরজা খোলা পেয়ে দৌঁড়ে এসে আমার ঘাড়ে পিঠে আরোহন করে আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি মোবাইল নিয়ে টানাটানি শুরু করছে।
উপায়ান্তর না পেয়ে ভিডিও অফ করে দিই। তারপর তাদের কোনরূপ বুঝিয়ে এহেন অবস্থার সামাল দিয়ে আবারও মিটিংয়ে মনোযোগী হই।
মিটিং চলছে আপন গতিতে আর আমি তা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে হজম করছি।
কিছুক্ষণ পর আবারও দরজায় খটখট শব্দ। অতিরিক্ত খটখটানিতে দরজা খুলতে বাধ্য হলাম। দেখি গিন্নির হাতে একবাটি পিঁয়াজ আর একটি বটি। আমাকে বলল, মিটিংয়েতো তোমার শুধু মুখ দেখা যায় তাই বটি নিচে রেখে পিঁয়াজ গুলো কাট এবং মিটিংও চালিয়ে যাও! আমার কাজে একটু সাহায্য করো! আমি বাচ্চাদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি।’
আহা!স্বাদের মিটিং এমন জানলে একটি হোটেলের কামরা ভাড়া নিতাম।
আবারও জামেলা একটা উদয় হল। কোথা থেকে যেন বিকট বোঁ বোঁ শব্দ আসতে শুরু করল। মিটিংয়ের কোন কথাই শোনা যাচ্ছিল না। জানালায় উঁকি দিয়ে দেখি বাসার পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদ ঢালাই চলছে। মিক্সার মেশিন থেকে এ শব্দের উৎপত্তি। এবার জানালাও বন্ধ করে দিই।
মিটিং চলছে দুর্বার গতিতে। এখন প্রধান অতিথির বক্তব্য পর্ব। হঠাৎ বিদ্যুৎ উধাও। ঘরের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ও বন্ধ হয়ে গেলো। আমি মিটিং থেকে ডিসকানেক্ট হয়ে গেলাম। মোবাইল চেক করে দেখি কোন ডাটা নেই। মোবাইল একাউন্টেও টাকা নেই। কী যে মুসিবত! ঘামাচ্ছি! এ মিটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এ টু জেড অংশগ্রহণ না করলে রিপোর্ট করা হবে।
বিদ্যুৎ কখন আসবে তা ঠিক নেই। মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতেই হবে।
মানিব্যাগ হাতে নিয়ে দরজা খুলে দ্রুত ফ্লেক্সির দোকানের দিকে পা বাড়ালাম মোবাইলের ডাটা কিনতে।
আমি দৌঁড়াচ্ছি, কাছাকাছি দোকান সব বন্ধ। লোকজন আমার দিকে তাকাচ্ছে আর হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। ভাবলাম আমার বিপদ আর সবাই তামসা দেখছে, কী আর করার!
ফ্লেক্সির দোকান পেয়ে মনটা খুশিতে ভরে গেলো। বললাম,’ভাই,দ্রুত এ নাম্বারে টাকা লোড করেন, আমার মিটিং চলছে নেট কিনতে হবে। নাম্বার মুখে বলার সাথে সাথেই সে আমার জরুরি অবস্থা বুঝতে পেরে দ্রুত লোড দিয়ে দিলো।
কিন্তু কোন ম্যাসেজ আসলো না। ব্যালেন্স চেক করে দেখি কোন টাকা নেই।
পরে নাম্বার মিলিয়ে দেখি ভুলে গিন্নির নাম্বার বলেছিলাম। দোকানদারের কোন কসুর নেই।আবার নিজের সঠিক নাম্বারে টাকা লোড নিয়ে বাসার দিকে দৌঁড়াচ্ছি।
পথে বন্ধু একজন আমাকে জোরপূর্বক দাঁড় করালো, ‘হাসতে হাসতে বলল,’কিরে তোর একি অবস্থা? ‘
বললাম, ‘সময় নেই,মিটিং আছে,পরে কথা হবে এই বলে দৌড়। ‘
বন্ধুটি পিছন থেকে হেঁকে উঠলো, ‘কোট টাই নিচে লুঙ্গি, অর্ধেক বাংলা অর্ধেক ইংলিশ, তোর স্টাইল তো জব্বর! ‘
তখন বোধোদয় হলো, হায়! আমি এ অবস্থায় রাস্তায় চলে এলাম। এজন্যই তো সবাই আমাকে দেখে মজা নিচ্ছে! দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
এখন আরও জোরে দৌঁড়াচ্ছি। এর মধ্যে গিন্নির ফোন। মোবাইল কানে তুলতেই শুনি বিদ্যুৎ চলে আসছে।
বাসায় গিয়ে দেখি ততক্ষণে মিটিং শেষ।
অনলাইন মিটিং
~সুয়েজ করিম