ডা. সারিকার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছি না কারণ বাসার সামনে বিশাল সিকিউরিটি ফোর্স মোতায়েন করা।
সাতটা দেশি কুকুরের বিশাল বহর ডা. সারিকার বাসার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। চীফ সিকিউরিটি কমান্ডার একটা ওল্ড লেডি ডগ বাকিগুলো ইয়াং ডগ। তেজোদ্দীপ্ত ইয়াং ফোর্স তাদের চীপ অব কমান্ডারকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাংদেহী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।
ভয়ে আমার পাকস্থলীর কন্ট্রোল সিস্টেম ঢিলা হয়ে গেছে।প্যান্ট নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ।
ড. সারিকা ফোন কেন ধরছেনা বুঝতে পাড়ছিনা!
মহিয়সী লেডি কমান্ডার আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমার সৌম্য ভদ্র চেহারা দেখে সে কনফিউজড। ইয়াং ফোর্স এলার্ট পজিশন নিয়েছে। কমান্ড পেলেই একযোগে সাড়াশি আক্রমণ করে ছিড়ে খেয়ে ফেলবে এমন একটা ভাব।
আশপাশে কোনো লোকও দেখছিনা। এখন যদি সত্যিই এই কুকুরগুলে আমাকে খেয়ে ফেলে কিছুই করার থাকবেনা। আমার যেটুকু বডি তাতে আমাকে খেতে এদের বড়জোর দশ মিনিট লাগবে। লাঞ্চ খেতে এসে এখন নিজেই কুকুরের লাঞ্চ হতে চলেছি। প্লিজ ডাক্তার ফোন ধরুন!
জুতা হাতে ঝেড়ে দৌড় দিবো ঠিক এই মূহুর্তে ডা. সারিকা আবির্ভূত হলেন এবং অথৈ সমুদ্রে ডুবে যাওয়া আমাকে লাইফ জ্যাকেট হয়ে উদ্বার করলেন।
ডা. সারিকাকে দেখে আমার স্থানচ্যুত যকৃত, ফুসফুস আবার আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। অতিরিক্ত ভয়ের কারণে সৃষ্ট টয়লেটের চাপটা এখন আর নেই। মনে হচ্ছে আগামী কয়েকমাস টয়লেট না করলেও চলবে। নিজেকে অনেকটা নির্ভার লাগছে, একেই বলে ভালোবাসার ভরসা।
মুচকি হেসে ডা. সারিকা বললেন,
– ভয় পেয়েছেন অনিকেত ?
আমি একটা শুকনা হাসি দিয়ে বললাম,
– আরে না।
– ব্রেভ হার্ট
– থ্যাঙ্কয়্যূ।
ডা. সারিকা তার বিশাল ডগ স্কোয়াডের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন,
– এ হচ্ছে সেনোরিটা আর এই ছ’জন হচ্ছে তার বংশধর। সেনোরিটার বড় ছেলের নাম উইলিয়ামস আর বড় মেয়ের নাম শার্লি।
– বাহ নাম গুলো তো চমৎকার।
– নামগুলো আমার বাবা দিয়েছেন।
– আঙ্কেল তো ইন্টারেস্টিং মানুষ।
– হুম অনেক ইন্টারেস্টিং, চলুন বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
ডা. সারিকার বাবা ঢাকা দক্ষিণ সিটি ছাদ বাগান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বৃক্ষপ্রেমিক হিসাবে গতবছর তিনি জাতীয় স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। পশু প্রেমিক হিসাবেও এলাকায় ব্যাপক সুপরিচিতি আছে।
ডা. সারিকার বাসায় লাঞ্চের দাওয়াতে এসেছি। তিনি নিজহাতে আমার জন্য অনেককিছু রান্না করেছেন। মাছ, মাংস, পোলাও, পুডিং, ডেজার্ট কোনকিছুই বাদ যায়নি। খাবারের সুঘ্রাণে সারা বাড়ি ম-ম করছে। পেটের ক্ষিদেটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আজ খেলা হবে!
কিন্তু একগ্লাস অরেঞ্জ জুস খেতেই আঙ্কেল বললেন,
– চলো অনিকেত তোমাকে আমার ছাদ বাগান দেখিয়ে আনি।
আঙ্কেল একপ্রকার জোর করে আমাকে ছাদ বাগান পরিদর্শনে নিয়ে গেলেন। এমন আজব ছাদ বাগান আর দেখিনি, কোনো ফুল ফলের গাছ নেই। ছাদ ভর্তি বিশাল বিশাল কলা গাছ, তাও আবার বিচি কলা!
ছাদের সিঁড়ি ঘরে অনেক গুলো বিচি কলার ছড়ি। আঙ্কেল আমাকে একটা পাকা বিচি কলা দিয়ে বললেন,
– অনিকেত একটা কলা খাও।
– আমি হাসিমুখে কলাটা নিলাম।
এতো বড় কলা পুরোটা খেলে লাঞ্চে কিছুই খেতে পারবো না। কিন্তু আঙ্কেল যেভাবে তাকিয়ে আছে ফেলে দেওয়ারও উপায় নাই। বিচিতে ঠাঁসা জঘন্য স্বাদের কলা। খেতে কোনো মজা নাই তাও অনেক কষ্টে করে কলাটা খেলাম। এক কলাতেই পেট ভরে গেছে।
তৃপ্তি সহকারে আমার কলা খাওয়া দেখে আঙ্কেল আফসোস করে বললেন,
– বিচি কলা আজ দেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায়। ভালো জিনিসের মর্ম বাঙালী বুঝেনা।
– জী আঙ্কেল ভালো জিনিসের প্রতি বাঙালীর প্রচন্ড অরুচি।
– ঠিক বলছো ভাতিজা, নাও আরেকটা কলা খাও ?
– আরো একটা খাবো?
– খাও ভাতিজা ঢাকা শহরে এমন ফ্রেশ কলা আর কোথাও পাবে না!
গুনে গুনে চারটা বিচি কলা খেয়ে খাবার টেবিলে বসেছি। ডাইনিং ভরা সুস্বাদু খাবার দেখে আমার কান্না পাচ্ছে। এক চামিচ পুডিং খাবো তারও উপায় নেই।
আঙ্কেল একাগ্রচিত্তে মুরগীর রান চিবুচ্ছে। ডা. সারিকা আদর করে আমার পাতে মাংস পোলাও তুলে দিচ্ছে। কিন্তু তার বাবা যে বিচি কলা খাইয়ে আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে সে কথা কেমনে বলি ? 🙄
বিচি কলা
উদ্বাস্তু অনিকেত