চিকেন থাই স্যুপ
———————-
বাড়িওয়ালী আন্টি ফোন দিয়ে আর্জেন্ট দুতলায় যেতে বলেছেন। আন্টির গলার স্বর অত্যাধিক চড়া, মনে হয় আঙ্কেলের সাথে আবারও গেঞ্জাম হয়েছে।
বড় রকমের গেঞ্জাম বাঁধলে আমার ডাক পড়ে। আমি তখন জাতিসংঘের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মধ্যস্থতা করে দেই। কিন্তু দুই দিন যেতে না যেতেই তারা শর্ত ভঙ্গ করে আবারও যুদ্ধে লিপ্ত হন।
আজকের যুদ্ধের কারণ, আন্টি আঙ্কেলের জন্য চিকেন থাই স্যুপ করেছিলেন। কিন্তু স্যুপের চেহারা বিদঘুটে হওয়ায় আঙ্কেল তা খেতে অস্বীকার করেছেন। আন্টি কষ্ট করে স্যুপ বানাবেন আর আঙ্কেল তুচ্ছ কারণে তা খাবেন না তা হতে পারেনা।
স্যুপ খাওয়া না খাওয়া নিয়ে প্রথমে মনমালিন্য পরে কথা কাটাকাটি এবং পরিশেষে তারা সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন।
যুদ্ধে কেউ হতাহত না হলেও ভৌত অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আন্টির বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া ইতালিয়ান ডিনার সেটের দুটো গবলেট আঙ্কেল আছার মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন।
আন্টিও কম যাননি আঙ্কেলকে ফুলদানি দিয়ে আক্রমণ করেছেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফুলদানিটি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে আন্টির নিজেরই ড্রেসিং টেবিলের আয়না ভেঙ্গে ফেলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে আমি বিবাদমান পক্ষদ্বয়কে অস্ত্র সমর্পণ করে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিলাম। পক্ষদ্বয় আমার কথা মেনে শান্তি আলোচনায় সম্মত হয়েছে।
আমি গাম্ভীর্যপূর্ণ বিচারক ভাব নিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করলাম,
– কি হয়েছে আন্টি, এমন হুলুস্থুলের কারণ কী?
আন্টি একটু দম নিয়ে বললেন,
– দেখো অনি, কষ্ট করে তার জন্য চিকেন থাই স্যুপ বানালাম সে তো খেলই না উল্টো ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে।
আমি সংক্ষুব্ধ নয়নে আঙ্কেলের দিখে তাকিয়ে বললাম,
– আঙ্কেল, ফরিয়াদি যা বলছে তা কি সত্যি?
ক্রিমিনাল আঙ্কেল ডাইনিং টেবিল থেকে অবিকল গুয়ের মতো দেখতে একটা লার্ভা জাতীয় পদার্থ দেখিয়ে বললেন,
– দেখো তো অনি, এটা কি কোন খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে পড়ে?
বাতাবীলেবু যথাযথভাবে না চিবিয়ে খেয়ে হাগলে কমোডে যেমন করে দানাগুলো ভেসে থাকে তেমন করে ঘোলা জলে চিকেন কিমাটা ভেসে আছে। কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে এই জিনিস খাওয়া সম্ভব না। তবে চোখ বন্ধ করে অনায়াসেই তা খাওয়া যেতে পারে।
আমি চোখ বন্ধ করে এক চামচ মুখে নিলাম। বিশ্বাস করেন আমি জীবনে কোনদিন গু খাইনি তবে আজ মনে হচ্ছে খেলাম । এক চামচেই আমার পেটের নাড়িনক্ষত্র কক্ষচ্যুত হয়ে গেছে। আমি আরো কয়েক চামচ খেয়ে আঙ্কেলের উদ্দেশ্যে বললাম,
– আঙ্কেল স্যুপ তো ঠিকই আছে। আপনি খাচ্ছেন না কেন?
আঙ্কেল অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। স্যুপটা কি আমি সত্যিই খেয়েছি না কি অভিনয় করেছি তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
যাই হোক আঙ্কেল পরাজিত সেনাপতির মতো রণভঙ্গ দিয়ে গৃহত্যাগ করলেন। আন্টি বিজয়ী ভঙ্গিতে সোফায় বসে আমাকে বললেন,
– অনি তুমি বাসাভাড়া কতো দাও?
– চৌদ্দ হাজার আন্টি।
– আগামী মাস থেকে বারো হাজার দিও।
– জি আচ্ছা আন্টি!
আনন্দে আমার চোখ দিয়ে পানি এসে গেছে। আন্টি আমাকে আদর করে বাকি স্যুপটাও খেতে দিলেন। আমি পরিতৃপ্তির সাথে সাগ্রহে বাকি স্যুপটুকুও খেলাম।
সব বাড়িওয়ালা বাসাভাড়া বাড়ায় কিন্তু আন্টি আমার বাসাভাড়া দুহাজার টাকা কমিয়েছেন। এখন অরিজিনাল গু দিলেও খেতে আপত্তি নাই