#থ্রিলার নভেম্বর রেইন
৩য় পর্ব
পরদিন আমার ঘুম ভাঙ্গল দেরীতে। গতকালের দেখা সেই বীভৎস খুনের দৃশ্য থেকে আমি এখনো বের হতে পারিনি। মিলি বলল, অফিসে যেও না আজ। ছুটি নাও। রেস্টে থাক।
আমি বসকে মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম। আসলেই আমার রেস্ট দরকার। সারাদিন শুয়ে থেকে একটু চাঙ্গা বোধ করলাম। তারপর আবার কৌতূহল মাথা চাড়া দিল। কি করছে এখন গোয়েন্দা গুলজার হোসেন জানা দরকার। খুনের কোন কূল কিনারা কি করতে পেরেছে ওই ক্ষুরধার ব্রেনের লোকটা? কতদূর এগোল?
বিকেলের দিকে আমি গুলজার আংকেলের ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হলাম। গুলজার আংকেল বের হচ্ছিলেন। আমাকে দেখে বললেন, কি ব্যাপার তুমি কালকের শক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারোনি না? আমি একটু থানায় যাচ্ছি, যাবা?
আমি রাজি হয়ে গেলাম। তীব্র কৌতুহলের কাছে শারীরিক মানসিক দুর্বলতা উড়ে গেল।
থানায় গিয়ে গুলজার আংকেল ওসি সাহেব আর তদন্তকারি কর্মকর্তাকে নিয়ে মিটিং এ বসলেন।
ওসি সাহেব বললেন, স্যার আপনি যাই বলেন আমার ধারনা, রিমার ওই ঘটনার সাথে এই খুনের ঘটনার মিল নেই। এইটা কোন ডাকাতের কাজ হতে পারে অথবা জাজ সাহেবের কোন পুরানো শত্রু হওয়াও অসম্ভব না। সারা জীবন বহু মানুষের বিচার করেছেন , কে কোথা থেকে ক্ষেপে ছিল বলা যায় না ।
গুলজার আংকেল বিরক্ত হয়ে বললেন, উঁহু রফিক। মিল আছে কি নেই সেটা এখনো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। তবে আমার ধারনা একটা যোগসূত্র অবশ্যই আছে। সেটাই আমাদের বের করতে হবে। এখন আমি জানতে চাই কিভাবে পুলিশ জানলো ওই খুনের কথা? রিমা আর আনোয়ার ভাবী তখন কোথায় ছিল?
ওসি রফিক একসময় গুলজার আংকেলের সাথে কাজ করতেন, নড়েচড়ে বসে বললেন, স্যার রিমা জামিন পাওয়ার পর আমি ওই বাসার উপর নজর রাখার জন্য কনস্টেবল রাহাতকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। ও-ই প্রথমে জানতে পেরে আমাদের খবর দিয়েছে, আমরা খুব দ্রুত হাজির হয়ে গিয়েছি সেখানে। গিয়ে দেখি এই অবস্থা। রিমা তখন ঘুমাচ্ছিল তার রুমে, সম্ভবত ঘুমের ওষুধ খেয়ে, টের পায়নি কিছুই। মিসেস আনোয়ার অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন ড্রয়িং রুমে।
গুলজার হোসেন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, রাহাতকে ডাকো।
অল্প বয়সী এক পুলিশ এসে স্যালুট ঠুকলো। গুলজার হোসেন কিছুক্ষণ তাকে দেখলেন। তার সেই অন্তর্ভেদী চোখের সামতে রাহাত অস্বস্তি বোধ করতে লাগল।
গুলজার আংকেল বললেন, রাহাত আপনি কিভাবে জানলেন আনোয়ার সাহেব খুন হয়েছে?
রাহাতের অস্বস্তি বেড়ে গেল।
–স্যার আমি ওই বাসার উপর নজর রাখছিলাম। বৃষ্টি আর শীত থাকায় বাসার দারোয়ানের কাছে গিয়ে বসেছিলাম, তারপর একবার মনে হলো দুপুর থেকে জাজ সাহেবের বাসার কেউ চলাচল করছে না , অস্বাভাবিক ব্যাপার। ভাবলাম একবার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে গিয়ে ঘুরে আসি। ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি দরজা খোলা। ঢুকে দেখি এই অবস্থা। সাথে সাথে আমি ওসি স্যারকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানিয়েছি।
ওসি সাহেব বললেন, বাসার দারোয়ানও স্যার ওই রকমই বলেছে।
গুলজার হোসেন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, রাহাত গতকাল রাতে আপনার সাথে কে ঢুকেছিল ওই বাসায়? আপনাকে সে কিভাবে ম্যানেজ করল?
রুমের সবাই বিস্মিত হয়ে গুলজার হোসেনের দিকে তাকালো। রাহাত নার্ভাস ভঙ্গিতে বলল, কি বলেন স্যার ? কে থাকবে আমার সাথে?
গুলজার আংকেল বললেন, সিসি ক্যামেরায় সব ধরা আছে রাহাত। সত্যি কথা বলেন, নাকি আমি বলব? গতকাল আপনি বিকেল থেকে ওই বাসার আশেপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিভিল ড্রেসে ছিলেন যাতে পুলিশ বলে কেউ টের না পায়। রাতের দিকে এক লোক আপনার সাথে এসে গল্প জুড়ে দেয়। সে সম্ভবত কোনভাবে আপনাকে কনভিন্স করে ফেলেছিল। আমার ধারনা, সে রিমাদের বাসা নিয়ে কোন গল্প ফেঁদে ছিল আপনার কাছে। এরপর আপনার সাথে কোন বিষয় নিয়ে তর্ক করে সে সেটা প্রমান করার জন্য ওই ফ্ল্যাটে আপনাকে নিয়ে গেছে। পাশের বিল্ডিংয়ের সিসি ক্যামেরায় আপনাদের দুজনকে অনেকক্ষণ ধরে গল্প এবং শেষ দিকে মৃদু কথা কাটাকাটি করতে দেখা গেছে। যদিও ওই ক্যামেরায় ওই দোকানের সামনের ছাড়া আর কোন কাভারেজ নেই। জাজ সাহেবের বিল্ডিঙয়ে আবার সিসি ক্যামেরাও নেই। তবে আমি ঘটনা আন্দাজ করতে পারি। রাহাত, আপনার বয়স অল্প, আপনাকে ফাঁদে ফেলেছে লোকটা।
একটু থেমে গুলজার হোসেন বললেন, আমি যখন জাজ সাহেবের বাসায় যাই তখন ড্রয়িং রুমে একটা ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্ন দেখেছি। কার্পেট এবং টেবিল পরীক্ষা করে মনে হয়েছে এখানে একটা ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়েছিল। মিসেস আনোয়ারকেও ওখানে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিন্তু মিসেস আনোয়ার জানিয়েছেন তিনি কাউকে দেখেন নি। আনোয়ার সাহেবের ওই অবস্থা দেখে তিনি রিমাকে ডাকতে এসে ড্রয়িং রুমেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন। তাহলে ধ্বস্তাধ্বস্তি করল কে? আমি তখন আপনার স্টেটমেন্ট ওসি রফিকের কাছ থেকে শুনলাম। আজ সকালে দারোয়ানের সাথে কথা বলে বুঝলাম দারোয়ান কিছু লুকাচ্ছে, আপনি নিশ্চয়ই অন্য লোকটার কথা যেন না বলে তারজন্য দারোয়ানকে হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। পরে পাশের বিল্ডিঙয়ের সিসি ক্যামেরা চেক করে ওই লোকের সাথে আপনাকে কথা বলতে দেখলাম। আচ্ছা লোকটাকে কি আপনি আগে চিনতেন?
কনস্টেবল রাহাতের নার্ভাস ব্রেক ডাউন হলো। সে হাউমাউ করে উঠল।
—বিশ্বাস করেন স্যার তাকে আমি চিনতাম না। একা দাঁড়ায় ছিলাম, এসে গল্প শুরু করল। বলল, সে নাকি জাজ সাহেবকে চেনে। তার ধারনা রুমাই সব খুনের পেছনে আছে। বলল চলেন জাজ সাহেবকে গিয়ে প্রমাণ দিয়ে আসি খুনের। আমার স্যার কি হলো , ভাবলাম ব্যাটা বড় বড় কথা বলতেছে, যাই জাজ সাহেবের সামনে নিয়ে যাই। ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি দরজা ভেড়ানো, ভিতরে গিয়ে দেখি ফ্লোরে মিসেস আনোয়ার অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটা জাজ সাহেবের রুমে ঢুকে গেল। আমি সংবিৎ ফিরে তাকে ডাক দিতেই সে দ্রুত বেগে জাজ সাহেবের রুম থেকে বের হয়ে এলো। আমি তখনও বুঝিনি সে খুন করে এসেছে। ভেবেছি চুরি করতে গিয়েছিল। তাকে জাপটে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। ছুটে দৌড়ে পালিয়ে গেছে।
ওসি সাহেব হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন, হোয়াট! তুমি এই ঘটনা চেপে গেছ কেন? কেন আমাদের জানাও নি?
রাহাত মাথা নিচু করে বলল, স্যার আমি ভয় পাইছিলাম। ভাবছিলাম আমি জড়ায় যাব এর সাথে। তবে স্যার আমি ওই শালাকে খুঁজে বের করবই। আজ সারাদিন খুঁজছি। ওরে দেখলে ঠিকিই চিনব আমি।
ওসি সাহেব আবার হুংকার দিলেন, মূর্খ। আমাদের জানালে আগেই তাকে ধরা যেত। তোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করব আমি।
জাজ সাহেবের পাশের বাসার সিসি ক্যামেরার ভিডিও গুলজার আংকেল মোবাইলে করে নিয়ে এসেছিলেন। সেটা চালানো হলো, সেখানে দেখা গেল রাহাতের সাথে এক লোক কথা বলছে। ওই ভিডিও দেখে আর রাহাতের সাথে কথা বলে পুলিশের একজন এক্সপার্ট লোকটার একটা পোর্ট্রেট এঁকে ফেলল।
কিন্তু খুনিকে কোথায় পাওয়া যাবে? কেন সে খুন করল? আগের তিনটা খুন তাহলে কে করেছিল?
গুলজার হোসেন বললেন, ভিডিওতে দেখ, রাহাতের সাথে কথা বলার সময় লোকটা দুইবার মোবাইল ব্যবহার করে কথা বলেছে। ওই এলাকার টাওয়ার গুলোর ওই সময়ের কল বিশ্লেষণ কর রফিক। আশাকরি খুনির মোবাইল নম্বর পেয়ে যাবা। আরাকটা কথা আমার মনে হয় সে ঢাকার কোন আবাসিক হোটেলে উঠেছে, ভিডিও খেয়াল করে দেখ একবার ফোন বের করতে গিয়ে পকেট থেকে চাবি পড়েছে তার, চাবির রিং টা লম্বা, সাধারণ আবাসিক হোটেলে যেমন ব্যবহার করা হয় তেমন।
ওসি বললেন, জ্বী স্যার। ভালো বলেছেন। সব তথ্যই যাচাই করছি। আশাকরি খুনিকে ধরে ফেলব তাড়াতাড়ি।
.
.
আমরা বাসায় চলে এলাম। মিলি সব ঘটনা শুনে চোখ বড় বড় করে বলল, কি আশ্চর্য জাজ সাহেবকে খুন করল কেন লোকটা? এই লোকই কি রিমার হাজব্যন্ড আর তার বন্ধুর ফ্যামিলিকে খুন করেছে?
আমি বললাম, রিমার হাজব্যান্ড না বয়ফ্রেন্ড সেটা কিন্তু এখনও শিওর না। পুলিশ কিন্তু কোন কাবিন নামা পায় নি এখনো। ওইদিন যে বিয়ে হয়েছিল তার কোন প্রমাণই নেই।
মিলি বলল, তোমার যেমন কথা। কেউ বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বেনারসি শাড়ি পড়ে বাসর করতে যায় নাকি? বিয়ে নিশ্চয়ই করছিল, পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। রিমা সুস্থ হলে ঠিকিই পাবে।
আমি বললাম, তাও ঠিক।
পরদিন আমার ছুটি ছিল। সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে বসেছি গুলজার আংকেল ফোন দিয়ে বললেন, উনি থানায় যাচ্ছেন আমি যাব নাকি?
আমার বের হতে ইচ্ছে করছিল না। ছুটির দিনে আরাম করতে ইচ্ছা করে। অনিচ্ছা নিয়ে বললাম, আংকেল বিশেষ কোন কারন আছে থানায় যাওয়ার?
উনি যা বললেন তাতে চমকে গেলাম। বললেন, আজ সকালে ওই লোকটা মারা গেছে পুলিশের হাতে। যাকে খুনি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আমি বিস্মিত হয়ে গুলজার আংকেলের সাথে থানায় চললাম।
থানায় গিয়ে দেখি ওসি রফিক সাহেব বিরাট খুশি। বললেন, স্যার খুনি ফিনিশড হইয়া গেছে। ব্যাটা জোনাকি হোটেলে লুকায় ছিল। পুলিশ দেখে চারতলা থেকে পাইপ বেয়ে পালাতে গিয়েছিল। পড়ে মারা গেছে।
কনস্টেবল রাহাতকে দেখলাম নির্ভার হাসিখুশি। বোকামি করে তদন্তের মুখে পড়তে হচ্ছিল তাকে, খুনি ধরা পড়ায় স্বস্তি পেয়েছে। গুলজার আংকেলকে দেখে বিরাট স্যালুট ঠুকল। বলল, স্যার এই বদটাই ছিল সেদিন রাতে। জাজ সাহেবকে খুন করা চাকুটাও পাওয়া গেছে হোটেলে তার রুমে।
আমি বললাম, কিন্তু লোকটা খুন করল কেন জাজ সাহেবকে? গাজীপুরের তিনখুনই বা কে করেছে?
ওসি সাহেব বললেন, তদন্ত চলতেছে। খুনির পরিচয় ভালো করে বের করতে পারলেই ইতিহাস জানা যাবে।
আমরা বাসায় চলে এলাম। বিকেলের দিকে টিভিতে খবর দেখতে বসেছিলাম। খবরে খুনির পরিচয় পাওয়া গেল। খুনি লোকটা আসিফ অর্থাৎ রিমা যাকে বিয়ে করেছিল বলছে তার ছোট ভাই।
খবরে পুলিশের উদ্বৃতি দিয়ে জানানো হলো, পুলিশের ধারনা আসিফের এই ভাই রিমার উপর প্রতিশোধ নিতে খুন করেছে জাজ সাহেবকে। এমনও হতে পারে রিমাকেই খুন করতে গিয়েছিল কিন্তু জাজ সাহেবের রুমে ভুল করে চলে গেলে জাজ সাহেব দেখে ফেলেন তাই জাজ সাহেবকেই খুন করে পালিয়ে আসে খুনি। পুলিশের ধারনা আগের তিনটা খুনই রিমা করেছে। যদিও মোটিভ এখনও পরিষ্কার না। হতে পারে রিমাকে বিয়ে না করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আসিফ, রিমা খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে মারতে গিয়েছিল, আর ওই খাবার খেয়ে বাকি দুজনও মারা গেছে।
তবে খুনের রহস্য মোটামুটি শেষ। খবরে ধানমন্ডি থানার ওসি রফিক সাহেবের সাক্ষাৎকার দেখাল, রফিক সাহেব হাসিমুখে পুলিশের কৃতিত্বের কথা বললেন, কত দ্রুত খুনিকে ধরে ফেলেছে সেটাও বললেন।
মিলি খবর দেখছিল। বলল, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। রিমা তাহলে ওই তিনখুনের জন্য দায়ী। কি অবিশ্বাস্য!
আমি বললাম, সবকিছু যোগ বিয়োগ করলে তো সেটাই পাওয়া যায়। না হলে আসিফের ছোট ভাই খুন করার জন্য রিমাদের বাসায় কেন ঢুকবে চাকু নিয়ে?
মিলি মাথা নাড়ল, তাই তো মনে হচ্ছে এখন। কিন্তু যা-ই বলো ওই ব্যাটা ওসি যে গুলজার আংকেলের কথা একবারও বলল না সেটা খারাপ লাগল।
আমি কিছু বললাম না। ব্যাপারটা আমারও খারাপ লেগেছে।
.
পরদিন অফিসে বসে আছি, গুলজার আংকেল ফোন দিলেন।
—-ইমন তুমি কি হাফ বেলা ছুটি নিয়ে একটু গাজীপুর যেতে পারবে? আমার একটা জরুরী বিষয় জানা দরকার, আমি একটু অন্য কাজে ব্যাস্ত না হলে আমিই যেতাম।
অফিসে কাজ ছিল না তেমন। আমি রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু কাজটা কি? গুলজার আংকেল বললেন, গাজীপুরের যে বাসায় ট্রিপল মার্ডার হয়েছে ওই বাসায় একটু যেতে হবে, কয়েকটা জিনিস জানা দরকার। বললেন, বাসার কাবার্ড/ আলমিরাগুলো খুলে তার ছবি তুলে তাকে পাঠাতে।
আমি রওনা দিলাম। গুলজার হোসেন জাজ সাহেবকে দেয়া কথা এখনও রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বোধহয়। তিনি ভাবছেন কোনভাবে যদি রিমাকে নির্দোষ প্রমান করা যায়! আমি ভাবলাম খামাখা চেষ্টা ছাড়া আর কি!
গাজীপুর ছায়াবিথির ওই গাছপালা ঘেরা বাসায় যখন পৌছালাম তখন প্রায় সন্ধ্যা। শীতের বাতাসের সাথে আবার টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই নভেম্বর দেখি বৃষ্টি দিয়ে ভরে গেল। বাসার সামনে দেখলাম একজন পুলিশ বসে আছে। দেখে মনে হলো জামা কাপড় ইস্ত্রী করেনা ঠিক মতো। চেহারাটা চেনা চেনা লাগল, সম্ভবত রিমার সঙ্গে যখন দেখা করতে এসেছিলাম আমরা গাজীপুরে তখন দেখেছি। বুকের ব্যাজে লেখা নাম, কাঁকন। আমি গুলজার আংকেলের পরিচয় দিয়ে ভিতরে ঢুকতে চাইলাম। ব্যাটা রাজি হয় না। পরে তাকে ফোন ধরিয়ে দিলাম। সে দেখলাম গুলজার আংকেলকে চেনে, ফোনে কথা বলে আমাকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিল। তার চোখে মুখে তখনও অস্বস্তি। হয়ত ভাবছে আমাকে ঢুকতে দিয়ে সে ঠিক করল কিনা।
আমি দোতলায় উঠে ফ্ল্যাটে ঢুকলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার দরজা খোলাই ছিল। লাইট জ্বালিয়ে আমি প্রথমে বাসর সাজানো ঘরে ঢুকে দেয়ালের আলমিরা খুললাম। ভেতরে কয়েক তাক ভর্তি জামা কাপড় আর একটা ব্যাগ রাখা, আমি ছবি তুললাম। গুলজার আংকেল আসলে কি জানতে চাচ্ছেন কে জানে! বাইরে ততক্ষণে অন্ধকার নেমেছে। এই বাসায় তিনটা খুনের ঘটনা ঘটে গেছে ভাবতেই আমার একটু ভয় ভয় করতে লাগল। মনে হলো না আসলেও পারতাম, অথবা দিনে আসা উচিৎ ছিল। এই সময় আমার মোবাইল বাজল। তাকিয়ে দেখি গুলজার আংকেলের ফোন।
–হ্যালো আংকেল।
–হ্যালো ইমন …হ্যালো শুনতে পাচ্ছ?
আমি ভালো শুনতে পাচ্ছিলাম না, নেটওয়ার্ক প্রবলেম মনে হয়। গুলজার আংকেল চেঁচিয়ে যাচ্ছেন, ইমন শুনতে পাচ্ছ? ইমন… তুমি এক্ষুনী বাসা থেকে বের…এখনি।
আমি বললাম, কেন গুলজার আংকেল … কি হইছে……
কিন্তু উনি আমার কথা শুনতে পারলেন বলে মনে হলো না। দুএকবার হ্যালো হ্যালো বলার পর লাইন কেটে গেল। এই বাসায় মারাত্মক নেটওয়ার্ক প্রবলেম মনে হচ্ছে।
আমি আবার কল দেব কিনা ভাবছি, এই সময় মৃদু স্বরে একটা গানের শব্দ ভেসে এলো ড্রয়িং রুম থেকে।
এভরি বডি নিডস সাম বডি, ইউ আর নট দ্যা অনলি অন, …………
গানস এন্ড রোজেস এর নভেম্বর রেইন বাজছে।
আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। এই বাসায় আমি একা। তাহলে ড্রয়িং রুমে কে গান বাজাচ্ছে? আমি দৌড়ে গিয়ে এই রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম। টের পেলাম কেউ একজন শীষ দিতে দিতে ধীরে ধীরে দরজার দিকে হেঁটে আসছে। কে আসছে? কেন বাজাচ্ছে গান? মনে পড়ল প্রত্যেকটা খুনের জায়গায় এই গান বাজছিল। আমি তীব্র আতংকে কাঁপতে লাগলাম।
( আগামী পর্বে শেষ হবে। আগামীকাল রাতে শেষ পর্ব দেয়ার চেষ্টা করব)
লেখক খোন্দকার মেহেদী হাসান
©Khondokar Mahedi Hasan