ক্রেডিট কার্ড
——————
পুরো অফিসের মধ্যে জুনিয়ার হলেও রিজভী সবচেয়ে স্মার্ট। পোষাক-আষাক, চলতি বিষয়সমূহ, তথ্য ও প্রযুক্তি, সর্ব বিষয়ে সে সবার চেয়ে এগিয়ে। টুকটাক সবাই তার কাছ থেকে সাহায্য পায়। বিশেষ করে কেউ নতুন কোন স্মার্টফোন কিনলে স্মার্টলি Operate করতে গেলে তার সাহায্য নেয়াই লাগে।
আজকেও সে সবার ডেস্ক এ গিয়ে গিয়ে একটা কথা বোঝাচ্ছে। ভাই/আপা, আজ অফিসে অমুক ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ডের জন্য একজন এসেছিল। দারুন সব ফিচার। দারুন সব অফার। নাম মাত্র ইন্টারেস্ট এ ইমার্জেন্সী ক্যাশ তোলা, ক্যাশ ট্রান্সফার, বিল পেমেন্ট, সংসার সাজাতে EMI, SIM রিচার্জ, এয়ারপোর্টে এক্সট্রা সুবিধা, আরও কত কি! আপনার মোবাইল ফোন দিয়েই সব করতে পারবেন।
মোটামুটি সবাই রিজভী’র মতই Impressed হয়ে গেল এবং তার কাছে কার্ড নেবে বলে Request করল। রিজভী এতে বেশ Proud ফিল করতে লাগল। সে চটপট একটা লিস্ট তৈরী করতে ডেস্ক এ চলে গেল।
লাঞ্চের টেবিলে সবাই বসে খাচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপারে রিজভী প্রায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছে কেবল ফিন্যান্স ম্যানেজার মুমীন ভাই বাদে। অবশ্য সকালে মুমীন ভাইয়ের এক্সটার্নালাল মিটিং ছিল তাই রিজভী’র সাথে কথা হয় নাই। তা না হলে হয়ত তিনিও রিজভী’র কথায় গলে যেতেন। যাই হোক, রিজভী মুমীন ভাইকে বললেন,
রিজভী: ভাইয়া সবাই বিষয়টা মোটামুটি জানেন এবং সবাই বেশ আগ্রহী
মুমীন ভাই: কি বিষয়ে?
রিজভী: অমুক ব্যাংক থেকে আমাদের ক্রেডিট কার্ডের জন্য দারুন সব ফিচার আর অফার নিয়ে এসেছিলেন।
মুমীন ভাই: তাই নাকি! একটু খুলে বলুনতো
রিজভী: নাম মাত্র ইন্টারেস্ট এ ইমার্জেন্সী ক্যাশ তোলা, ক্যাশ ট্রান্সফার, বিল পেমেন্ট, সংসার সাজাতে EMI, SIM রিচার্জ, এয়ারপোর্টে এক্সট্রা সুবিধা, আরও কত কি! আপনার মোবাইল ফোন দিয়েই সব করতে পারবেন।
আপনি তাহলে নিচ্ছেন তো?
মুমীন ভাই: প্রয়োজন নাই।
লাঞ্চের টেবিলে সবাই বিস্ময়ের সাথে সবার দিকে তাকাল। রিজভী যেন অপ্রত্যাশিত একটা হোঁচট খেল। সবাইকে এক তুড়ি মেরে রাজী করে ফেলল আর সবার সামনে কি না একজনের কাছেই সরাসরি “না” শুনল!
রিজভী: ভাই, একবার ভাবুন তো! মধ্যরাতে আপনার হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হলো, হাতে ক্যাশ নাই। আপনি কার কাছে যাবেন? তখন বুথ থেকে টাকা তুলে কাজ চালাতে পারবেন।
বন্ধু-বান্ধব মিলে আপনাকে কোন কারনে ফাসিয়ে রেস্টরেন্ট এ নিয়ে গেল। ইচ্ছামত খাওয়া দাওয়া করল। লজ্জায় আপনি কিছু বলতে পারলেন না আবার পকেটে টাকাও নাই। কোন ব্যাপার না, কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করে ফেলবেন। সে যাত্রায় তো বেঁচে গেলেন।
ধরুন, ভাবী কোন নতুন ফার্নিচার-ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টের জন্য হঠাৎ পীড়াপিড়ি শুরু করে দিলেন। পকেটে টাকা নাই কিন্তু ভাবীর মন রক্ষার্থে চলে যাবেন কোন ফার্নিচার-ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টের শো-রুমে। EMI নিয়ে কিনে ফেলবেন পছন্দের জিনিস, আরামসে।
মুমীন ভাই মুচকি হেসে ঘাড় নাড়লেন এবং চুপচাপ খেতে থাকলেন।
রিজভী: (আগ্রহ সহকারে) ভাই কি নিচ্ছেন তাহলে?
মুমীন ভাই: আমি নিচ্ছি না। কেন? শোনেন তাহলে।
আপনার নিয়্যতটাই হচ্ছে, মধ্যেরাতে হাসপাতালে যাবেন এবং সেখানে আপনি অর্থ ব্যয় করবেন। অথচ রাতে শোবার সময় আমি দোয়া করি যেন সমস্ত বালা-মুছিবাত থেকে মহান আল্লাহ্ হেফাজতে রাখেন।
আপনার নিয়্যতটাই হচ্ছে, কারনে অকারনে বন্ধু-বান্ধবের কাছে ধরা খাওয়া এবং তাদের খুশি করতে অর্থ ব্যয় করা।
আর আমার তেমন কোন বন্ধু-বান্ধব নাই যারা আমাকে অকারনে অর্থ ব্যয় করিয়ে সমস্যায় ফেলবে বরং যারা আছে তারা অযথা অর্থ খরচ না করে গরীব-দু:খীদের সাহায্য করতে বলে।
আপনার নিয়্যতটাই হচ্ছে, বউকে খুশি করতে জরুরীভাবে তাকে কিছু কিনে দিতে হবে।
অথচ আমার স্ত্রীকে আমি শিখিয়েছি সংসার জীবন সবচেয়ে সুখের থাকে যখন সে সংসারে খাবার, পোষাক, আরাম আয়েসের ব্যবস্হা কম থাকতে পারে কিন্তু কোন ঋণ থাকে না। কারন ঋণ আমাদের আত্নার সুখ, শান্তি, স্বাধীনতা সব কেড়ে নেয়। মানুষ যেকোন সময় মারা যেতে পারে তখন এ ঋণের বোঝাটা যারা বেঁচে থাকেন তাদের জন্য জুলুম হয়ে যায়।
একটা কথা মনে রাখবেন, আপনার নিয়্যত যেমন হবে মহান আল্লাহ্ আপনাকে সেভাবে নিয়ামত দান করবেন।
নিয়্যত অনুযায়ী বারাকাহ পাবেন। আশা করি, বুঝতে পেরেছেন।
সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেল। সেদিন পুরো অফিসে ২৫ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন কার্ড নিয়েছিল।