দেহ পর্ব ৪
লেখক:-মো.নীল চৌধুরী
-এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নাই,আমার সামনে সিগারেট খাওয়া যাবে না বলে হাসতে থাকে, এমন সময় একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলে জান্নাত ফোন কেটে দেয়।
এভাবে ৪-৫ বার কেটে দেওয়ার পরে
-প্রিয় কেউ ফোন করেছে নাকি? ধরতে পারো কোন সমস্যা নাই
-কাস্টমার
-কিহহ? চোখ রাঙ্গিয়ে
-না মানে সিম তো চেঞ্জ করার সময় পাইনি তাই নাম্বারও চেঞ্জ করতে পারিনি
-দেখি মোবাইলটা বলায় জান্নাত মোবাইলটা অনির হাতে দিয়ে দেওয়ার পরে গাড়ির জানালা দিয়ে রাস্তায় ছুড়ে মেরে দেওয়ার পরে
-কি করলেন এটা?(ভয় ভয় কন্ঠে)
-চুপ করো, একদম কথা বলবে না
অনির এমন হার্ড হয়ে যাওয়ার সহ্য করতে না পেরে ঠোট বেঁকে কান্না করে দেয়।
-এই কান্না বন্ধ করো,মানুষ দেখলে কি ভাববে?
-হুম আচ্ছা
-আর ঢেকুর দিয়ে দিয়ে কান্না করলে খবর আছে বলে দিলাম।
জান্নাত তখন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।
কাজলকালো ভেজা চোখেও মানুষকে এত্ত সুন্দর লাগে তা এই পাজি মেয়েকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতো না।
-স্যার আমরা এসে পরছি
-এই এগুলো নিয়ে নামো বলে জান্নাতের হাতে দুইটা ফাইল ধরিয়ে দেয়।
দুজন এখন লিফটে দাঁড়িয়ে আছে, জান্নাত কাছুমাছু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে “চেহারায় মেঘ জমিয়ে রাখাটা কি ঠিক? শুভ কাজে কি হাসা যায় না?”
-জান্নাত তখন মুচকি হেসে দেয়
-অভিনেত্রীদের মত না হেসে রিয়েল জান্নাতের মতোই হাসো।
-সিগারেট খাওয়াতে বাধা দেওয়ায় আমার সাথে এসব করছেন তাই না? আমি বুঝি
-জীবনেও না
-আপনি তো জানেনই আমি মোবাইল চেঞ্জ করার সুযোগ পায়নি তাই ঐ নাম্বার থেকে ফোন আসছে
-এরজন্যই তো চেঞ্জ করার রাস্তা তৈরি করে দিলাম
-বেড় হোন এখন
অনি তখন নিচের দিকে তাকিয়ে ” শাড়িটা ঠিকভাবে টেনে নাও”
-জান্নাত তখন লজ্জার মুখে পরে যায়।
-তারাতারি করো
-হ্যা হইছে?
-হুমম
-এখন চলেন বলে জান্নাত অনির পিছুপিছু হেটে মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে।
ঘন্টাখানেক পরে মিটিং শেষ হওয়ার পরে দুজন বেড় হয়ে
-চলো খাবে
-আমি বাহিরে খাই না
-কেন?
-বাহিরের খাবার ভালো না তাই
-তো এখন কি খাবে?
-ঐযে ব্যাগে করে নিয়ে আসছি
-আচ্ছা ওগুলো তুমি নাও, ঐখানে বসেই খাবে
-আচ্ছা
-এই মজিদ ভাই এদিকে আসো তো(ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে)
-হ্যা স্যার কিছু বলবেন
-ধুরর মিয়া তোমারে না বললাম আমারে স্যার না বলে ভাই বলে ডাকলেও হবে
মজিদ মিয়া তখন হাসিমুখে “আচ্ছা স্যার বলেন”
-এই নাও বসে একটা এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে “যাও কিছু খেয়ে নাও,আমরাও কিছু খেয়ে নিচ্ছি”
-আচ্ছা স্যার বলে হাসতে হাসতে মজিদ মিয়া রেস্টুরেন্টের দিকে চলে যেতে লাগলো।
দুজন গিয়ে একটা ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টে বসার পর প্রয়োজনমত সব অর্ডার দেওয়ার পরে ওয়েটার সব খাবার নিয়ে আসে।
-তোমার ব্যাগ থেকে খাবার বেড় করো না কেন?
-অফিসে গিয়ে খাই?
-না, এখানে খেতে আসছি, এখানেই খাও
জান্নাত তখন ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স থেকে খাবার বেড় করে চামচ হাতে নিয়ে এদিকসেদিক তাকিয়ে খাওয়া শুরু করে দেয়
-কারোর সামনে কোনকিছু খাওয়ার সময় ভদ্রতা দেখিয়ে হলেও খাবে কি না তা বলা লাগে
-স্যরি
-স্যরি বললে হবে না, বলো খাবেন কি না
-জান্নাত তখন হাসতে হাসতে “কাল থেকে বলবো”
-না না আজ থেকেই।
জান্নাত তখন টিফিন বক্সটা এগিয়ে দিয়ে “নেন”
-না থাক কারোর থেকে জোর করে খাওয়ার ইচ্ছা নাই
-জোর করে খাচ্ছেন কে বলল?
-স্বেচ্ছায় তো দেও নাই
-এত বড়লোক মানুষ সামান্য ডিম বিরিয়ানি খাবেন?
-ডিম দিয়ে আবার বিরিয়ানি হয় নাকি?
-মা বানায়
-বাহহ আনকমন
-আমাদের মত যারা আছে তাদের জন্য কমন
-আচ্ছা বাদ দাও এসব
-নেন খান
-খাইয়ে দাও
-নিজে নিজে খেয়ে নিন না
-পার্সোনাল সেক্রেটারি
-পার্সোনাল সেক্রেটারিদের খাইয়েও দেওয়া লাগে?
-আমার ক্ষেত্রে লাগতে পারে
-আচ্ছা নেন হা করেণ বলে চামচ দিয়ে এগিয়ে দেয়।
এভাবে দুজন খাবার শেষ করে অফিসে চলে যায়।
বিকাল চারটার দিকে জান্নাত যখন অফিস ত্যাগ করার সময় “একটা কথা বলার ছিলো”
-হ্যা বলো
-আমার মা অনেক অনেক খুশি হয়েছে
-হ্যা বলেছিলে
-মা বারবার বলে দিছে যাতে আপনাকে নিয়ে একদিন আমাদের বাসায় যাই
-আচ্ছা যাব
-কবে?
-অন্যকোন একদিন
-কালকেই চলেন না
-কালকেই?
-হ্যা
-আচ্ছা আর এটা নাও
-কি এতে?
-মোবাইল ফোন
-কেন?
-কথা বলার জন্য বলে হাসতে থাকে
-এত দামী ফোন আমাকে কেন?
-এমনি
-এসব আমাদের জন্য না
-এত কথা বলো কেন? আমি দিয়েছি তাই নিবা
-হু বলে ব্যাগটা হাতে নিয়ে “ধন্যবাদ “
-সাবধানে যেও
-আপনিও সাবধানে যাবেন বলে জান্নাত বেড় হয়ে যায়।
বাসায় যাওয়ার পরে
-জান্নাত খেয়ে নে মা
-মা আমি খেয়ে এসেছি
-তাও খেয়ে নে
-না এখন খাবো না
-দেখি তোর চুলের কি অবস্থা হয়ে আছে? আয় আছড়ে দে
-গোসল করছি তো তাই আর কি
-এখানে বস বলে টেনে বসিয়ে দিয়ে চিড়নী দিয়ে চুল আছড়াতে আছড়াতে
-তোর স্যারকে বলেছিলি?
-হ্যা কাল আসবে
-তাহলে বাজার করা লাগবে
-এসব নিয়ে তোমার চিন্তা করা লাগবে না,রিফাত কোথায়?
-সে আর কোথায় থাকবে? খেলতে গেছে
-ও আসলে ওকে বাজারে পাঠাবো
-আচ্ছা তুই সামনের মাসে ছুটি নিলে গ্রামে যাব
-আচ্ছা সেটা পরে দেখা যাবে
-পরে দেখা যাবে মানে? তোর কি মনে নাই আগামী মাসে তোর বাবার মৃত্যুবার্ষিকী বলে কান্না করে দেয়
-এটা আবার মনে থাকবে না? নয় বছর আগে সেই মাস থেকেই আমাদের দুর্দশা শুরু হয়
-মানুষটা কত ভালোবাসতো আমাকে জানিস? নয়টা বছর হয়ে গেছে চেহারাটা দেখি না বলে ডুকরে ডুকরে কান্না করে দেয়
-এই মা কান্না করছো কেন হ্যা? দোয়া করো যাতে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি
-তোর বাবার তো স্বপ্ন ছিলো তুই ডাক্তার আর রিফাত আর্মিতে যাবে
-আমারটা আমি পূরণ করতে পারিনি, ইনশাল্লাহ রিফাতকে আর্মির অফিসার বানাবোই
-ইনশাআল্লাহ আর শোন
-বলো
-টাকার অভাবে তো আর কখনো তোর বাবার মৃত্যুবার্ষিকিতে কোন মসজিদ কিংবা এতিমখানার মানুষকে খাওয়াতে পারিনি তাই ভাবছিলাম কি এবার কিছু একটা করতে
-ইনশাল্লাহ সব হবে
এমন সময় রিফাত খেলাধুলো করে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে ঘরে আসে
-এই তোরে না বললাম না খেলে পড়তে বসতে, একটা দিনও পড়োছ না বলে বকাবকি করতে থাকে।
-মা থামো তো, বিকালবেলা ছেলেরা খেলাধুলা করবেই,এই রিফাত এদিকে আয়
-হ্যা আপু বলো
-তোর একটু বাজারে যাওয়া লাগবে
-কেন?
-বাজার করা লাগবে
-কি বাজার?
-সবগুলোর নাম বলার পরে
-গরুর মাংস কিনতে যাব? আপু সত্যিই?
-হ্যা যা এগুলো নিয়ে আয় বলে টাকা হাতে ধরিয়ে দেয়।
-আপু আমার মনে হয় আমি স্বপ্নে আছি
-নিজের শরীরে নিজে চিমটি কেটে দেখ
-হিহিহি ব্যথা পাই তো, তার মানে সত্যিই
-পাগল একটা,যা ভালোভাবে দেখেশুনে নিয়ে আসিস
-আচ্ছা
অপরদিকে অনি সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার পরে দরজায় নক করার পরে ভিতর থেকে সিমি দরজা খুলে হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
-তুই এখানে?
-মা-বাবাও আসছে
-কেন?
-কেন মানে? আমার বাড়িতে আসতে কি কোন কারণ লাগবে নাকি?
-না ঠিক তা না
-তবে কারণ কিন্তু একটা আছেই
-কি?
-আমাদের বিয়ের ব্যাপারে হিহিহি
-কাদের?
-তোমার আর আমার
-যাহ ফট
-বউয়ের সাথে কেউ এমন বাজে ব্যবহার করে?
-থাপ্পড় খেলে বুঝবি
-মামাকে ভয় পাও না? ডাক দিয়ে বলবো নাকি যে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করো?
-সাইড হয়ে দাড়া রে বইন, আমি অনেক ক্লান্ত
-রুমে চলো, ক্লান্তি দূর করে দিব বলে অনির হাত…….
চলবে