দেহ পর্ব ৮ /শেষ
লেখক :-মো.নীল চৌধুরী
-তোমরা রাজি না হলে আমি অন্য চিন্তাভাবনা করবো, অনির মা তখন থেমে পিছনে ফিরে “কি বললি?”
-কাজী অফিসের সাহায্য নেওয়া লাগবে মনে হচ্ছে
-কিহহহহ?
-যা বলছি তা কি শুনোনি?
-তাই বলে তুই এসব বলবি?
-মা তোমরা কেন আমাকে বুঝতেছো না?
-আমার ছেলে যেখানে ভালো থাকবে আমি সেখানেই দেখতে চাই কিন্তু তোর বাবাকে তো তুই চিনিস
-চিনি বলেই তো কাজী অফিসের কথা বলতে হচ্ছে
-এসব বলে না বাবা,আমি তোর বাবাকে বুঝিয়েশুঝিয়ে দেখি রাজি করাতে পারি কি না
-আমি ওদের বাসায় বলে রাখছি যে আজকে তোমরা যাবা
-আচ্ছা এখন তুই ফ্রেশ হ গিয়ে
-সিমি কই?
-কান্নাকাটি করে চলে গেছে
-ওহ
অনির মা আর কোন কথা না বলে কিচেনের দিকে চলে যায়।
লাঞ্চের সময়
-কখন আসবা তুমি? অনির মা অনির বাবাকে ফোন দিয়ে বলে
-সন্ধ্যায়
-তোমার ছেলে কিসব পাগলামি শুরু করছে
-আবার কি?
-অনি সেই মেয়ে ছাড়া বিয়ে করবে না
-না করলে কুমার থেকে যাক
-তাও না, বলছে রাজি না হলে কাজী অফিসে যাবে
-কিহহ?
-বলছিলাম কি ওর যেহেতু মেয়েটার সাথে সম্পর্ক আছে সেহেতু আমরা দেখে আসলেই পারি
-আমার বোনকে যে কথা দিয়ে রাখছি তার কি হবে?
-দেখো এখানে যদি আমরা আমাদের কথায় স্থির থাকি তাহলে অনির কাছে সারাজীবন দায়ী থাকবো
-কি বলো এসব?
-হ্যা ওর ভালোর জন্য না হয় বোনের কাছে একটু ছোট হলে
-তুমিও ওর পক্ষ নিচ্ছো?
-পক্ষ নিয়ে কোন কথা না, সংসার যে করবে তার পছন্দের একটা প্রায়োরিটি থাকা দরকার
-যা মন চায় করো
-মেয়ের বাড়িতে দেখতে যাওয়া লাগবে
-মেয়ে দেখাই আছে
-দেখতে কেমন গো? আমার অনির সাথে মানাবে তো?
-মেয়ে দেখতে সুন্দর-ই কিন্তু সিমির ব্যাপারটা কি হবে?
-সেটা পরে দেখা যাবে, আগে বলো মেয়েটা কেমন?
-বললাম তো ভালো
-তাহলে আজকেই চলো দেখে আসি
-আজকেই?
-তোমার ছেলে ডেইট দিয়ে আসছে
-ওহহ
-হ্যা
-তো এখন কি করবো?
-কি করবা আবার? আসো, আমি রেডি হচ্ছি
-তুমি তো দেখছি বেশ খুশি
-আমার অনির মুখে কতদিন ধরে কোন আবদার শোণা হয় না, হাসিটাও কতদিন ধরে নেই,আমি চাই যেকোন মূল্যে আমার অনি হাসিখুশি থাকুক
-আচ্ছা আসতেছি
-আচ্ছা সাবধানে আইসো বলে ফোন কেটে অনিইইই
-কি হইছে বলো?
-মেয়েটা কেমন রে?
-অনেক লক্ষী
-দাবা খেলা পারে রে?
-জানি না
-না পারলে শিখিয়ে নিব,তারপর বৌমা আর আমি এক টিম, তুই আর তোর বাবা আরেক টিম
-তার মানে?
-তার মানে তোর বাবা রাজি
-সত্যিইই বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়
-কিরে তুই কান্না করছিস কেন?
-ভালোবাসি মা
-জানি তো সোনা, যা রেডি হয়ে নে তোর বাবা আসতেছে
-ওকে বলে খুশিমনে নিজের রুমে গিয়ে জান্নাতের নাম্বারে ফোন দেয়
-কিছু বলবেন?
-একটু পরে আমরা আসছি
-আপনি এসব কি শুরু করলেন বলেন তো?
-ভালোবাসি
-এটা ভালোবাসা না, এটা খনিকের আবেগ
-আবেগ আর ভালোবাসা বুঝার পার্থক্য কি আমার হয়নি?
-হলে আমার মত একটা বাজারের মেয়েকে বিয়ের কথা বলতেন না
-আরেকবার বললে থাপ্রিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলবো
-অনি আমি অপবিত্র, আমার পুরো শরীরে ঐ হায়নাদের দাগ, কথাটি একটু নিচুস্বরে বলে
-ভালোবাসা দিয়ে সব দূর করে দিব
-রাখি আমি
-আমরা আসতেছি,তোমার আম্মু মানে শাশুড়ি মাকে বলে রাখো বলতেই ফোন কেটে দিয়ে অনি গোসল করার উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।
।
।
।
অনি ফোনটা কাটতেই জান্নাত ভেজা চোখ মুছতে মুছতে ভাবে অনিকে আমারও ভালো লাগে, শুধু ভালো লাগে বললে ভুল হবে অনেক ভালো লাগে কিন্তু আমার মত সস্তা মেয়ের কি ওর এমন পবিত্র ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য? আল্লাহ তুমি অনিকে আর কয়টা দিন আগে পাঠালে না কেন? আর কয়েকটা দিন আগে পাঠালে আমি এমন পাপের কাজ করা থেকে বিরত থাকতাম বলে হুহু করে কান্না করতেই পাশের রুম থেকে ওর মা কান্নার আওয়াজ পেয়ে “এই জান্নাত কি হইছে তোর? তুই কান্না করতেছিস কেন মা?”
-মা আমি কি করবো কিছু বুঝতেছি না
-কি হইছে বল?
-অনিক স্যার আর ওনার মা- বাবা নাকি আসতেছে
-এটাতে কান্না করার কি আছে? কিভাবে আপ্যায়ন করা যায় সেটা ভাব
-করো তুমি, আমার ভালো লাগছে না
-কি হইছে তোর?
-এমনিতেই মাথাটা একটু ব্যথা করছে
-আয় টিপে দেই
-তাহলে ওনাদের জন্য কি কি রেডি করবা?
-ওহহ তাই তো, একটা নাপা খেয়ে শুয়ে থাক আমি রিফাতকে বাজারে পাঠিয়ে ফলমূল আনার ব্যবস্থা করতেছি বলে জান্নাতের মা রিফাতের খোঁজে রুম ত্যাগ করে।
ঘন্টাখানেক পরে গাড়ি থেকে নেমে অনি তার মা-বাবাকে সাথে করে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে টোকা দিতেই ভিতর থেকে জান্নাতের মা হাসিমুখে “আসসালামু ওয়ালাইকুম “
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
-আসেন, বসেন এখানে বলে হাত দিয়ে খাটে বসার ইশারা করে।
অনির মা-বাবা খাটে বসতে বসতে “তা কেমন আছেন আপনি?”
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনারা কেমন আছে?
-ভালো আছি দেখেই তো আসলাম, তা আপনার মেয়ে কোথায়?
-জান্নাত এদিকে আয় তো মা,স্যার ডাকছে তোকে
জান্নাত তখন ভয়ে ভয়ে ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে সালাম দিয়ে হাজির হয়
-ওমাহ এ তো দেখছি পরী বলে অনির মা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গালে হাত বুলাইতে বুলাইতে “অনি তোর পছন্দ আছে “
এটা বলতেই জান্নাতের মা হা করে তাকিয়ে আছে,ওনি কিছুই বুঝতে পারছে না। জান্নাতের মাকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে “বেয়াইন জান্নাতকে আমার পছন্দ হয়েছে,আপনি বিয়ার ডেইট ঠিক করেণ”
জান্নাতের মা তখন খুশিতে আত্মহারা, এই কয়দিনে যেন লক্ষী নিজে এসে ঘরের দরজায় হানা দিয়েছে।
-আপনারা যা ভালো মনে করেণ সেটাই করেণ
– আগামী শুক্রবারে আপনাদের কোন সমস্যা আছে?(অনির বাবা)
-না,এই শহরে আমাদের তেমন কেউ নেই তাই ডেইট নিয়ে তেমন কোন সমস্যা নাই
-আচ্ছা তাহলে আগামী শুক্রবারেই ফাইনাল
-ইনশাআল্লাহ
-বেয়াইন আজকে তাহলে আসি?(অনির মা)
-মাত্রই তো আসলেন,খালি মুখে যাবেন নাকি? তা হবে না, আপনারা একটু বসেন আমি সব রেডি করে নিয়ে আসছি বলে জান্নাতের মা ওদেরকে খাওয়ানোর ব্যস্ততায় লেগে যায়।
চারদিন পর
রাত এখন ১১ টা, বাড়ির মেহমানের চাপ কমবার পরক্ষনেই অনি সিমির নাম্বারে ফোন দিয়ে “কোথায় তুই?”
-রুমে
-ছাদে আয় তো
-তোমার না বাসর রাত?
-তোর সাথে কথা বলা জরুরি
-কিসের কথা?
-আগে তো আসবি
-হুম আসতেছি বলে ফোন কেটে দিয়ে মিনিট পাঁচেক পরে সিমি পিছন থেকে গলা ঝাড়ি দিতেই হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে “রাগ করেছিস?”
-আমি কেন রাগ করবো?
-তুই অনেক লক্ষী একটা মেয়ে,দেখবি আমার থেকে অনেক ভালো কাউকে পাবি
-এসব তোমাকে বলতে হবে না
-এখনো রাগ করে আছিস?
-নাহ
-একটা হাসি দে
-ধুরর যাও তো, ভাবি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে
-একটা হাসি দিয়ে বল
-হিহিহি যাও
-গেলাম তাহলে
-সিমি তখন আর কোন কথা না বলে ছাদের দোলনায় বসে চাঁদের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকে।
অনি রুমে ঢুকতেই জান্নাত বিছানা থেকে নেমে এসে পায়ে সালাম করতে যাবে ঠিক তখনি জান্নাতকে বুকে টেনে “তোমার জায়গা ওখানে না, এখানে” বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই জান্নাতের কান্নার আওয়াজ পেয়ে
-কি হইছে কান্না করছো কেন?
-আমার মত কলঙ্কনীকে কেন সঙ্গী বানালেন?
-ভালোবাসি
-একটা মেয়ের স্বামীর জন্য যা আমানত থাকার কথা, তা আমার নেই
-তাতে আমার কোন সমস্যা নেই
-আর সমাজ?
-বললাম না কলঙ্ক বহন করতে রাজি
-সারাজীবন পারবেন না তো,একদিন খোটা দিবেন-ই
-আমার টেনশন হচ্ছে
-কিসের?
-মা আর রিফাতকে নিয়ে
-ওদের জন্য তোমার চিন্তা করা লাগবে না, আমি দেখবো এগুলো
-নিজেকে কেন জানি ছোট মনে হচ্ছে
-জোর করে বিয়ে করেছি?
-উঁহু
-তাহলে এমন করছো কেন?
-কেমন জানি লাগছে
-কেমন লাগছে?
-যদি কখনো ছেড়ে চলে যান
-এসব কখনোই হবে না
-সত্যি তো?
-কসম এসব কখনোই হবে না
-কসম করা ভালো না, নিজের অমঙ্গল হয়
-আমার অমঙ্গল হলে কার কি?
-আপনি এখন আমার স্বামী, অমঙ্গল হলে তো আমারি হবে
-তাই নাকি?
-হু আর কখনো কসম করবেন না
-আচ্ছা,আসো এখন?
-কোথায়?
-বুকে নিয়ে গল্প করতে ইচ্ছে করছে বলে পাঁজাকোলে করে নিয়ে খাটে রেখে জান্নাতকে বুকে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে “ভালোবাসি”
-রোজ এভাবে বলা লাগবে
-বলবো তো
-কানে কানে, ফিসফিস করে
অনি তখন কানে হালকা করে কামড় কেটে ফিসফিসিয়ে ভালোবাসি বলতেই জান্নাতের শরীরে শীতল প্রকৃতির শিহরণে শিহরিত হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে “আমিও ভালোবাসি,অনেক বেশি ভালোবাসি” বলে ঠোট চেপে কান্না করে দেয়। অনি তখন বুকে নিয়ে কাজলে লেপ্টে যাওয়া চোখের জল মুছে দিয়ে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে জান্নাতের ভালোবাসার সাগরে ডুব দেওয়ার চেষ্টা করে। এভাবেই একটা ভালোবাসার সংসার শুরু হয়।
ভালো থাকুক এমন চাহিদাহীন ভালোবাসা
সমাপ্ত
রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় গল্পটা মনের মত করে ফুটিয়ে তুলতে পারিনি,ইনশাআল্লাহ সামনের গল্পে ভালো কিছু আসবে
হ্যাপি রিডিং
এক সাগর ভালোবাসা আমার পাঠকদের জন্যে