কালোবউ পর্ব ৪
লেখিকাঃ মেঘ কন্যা তিলোত্তমা (ছদ্মনাম)
.
(রুমে গিয়ে আকাশ থমকে গেলো মেঘলাকে দেখে)
আকাশঃ (চোখ সরছে না মেঘলার থেকে। হুমায়ুন আহমেদ স্যার যথার্থ বলেছিলেন,
“মেয়েরা যদি জানতো গোসল করার পর মাথায় টাওয়েল জড়ানো অবস্থায় তাদের কত সুন্দর লাগে। তাহলে সব মেয়ে বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের উৎসবে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে যেতো।””
অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেঘলাকে। ছোট ভেজা চুলগুলো গালে লেগে আছে আর সারা মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। ভেজা গলায় একটা কালো তিল যেন আমাকে টানছে। খুব ইচ্ছে করছে গভীর একটা,,,,একটা??? না না একটা না মন ভরে কিস করতে। কালো রঙের জামদানীতে সদ্য ফোঁটা কালো গোলাপ মনে হচ্ছে। (আকাশ এক পা এগোতে গিয়ে) না না এসব আমি কী ভাবছি ?? এই মেয়ের জন্য আজ চাঁদের কাছে কথা শুনতে হলো। এই মেয়েকে আমি ছাড়বো না। আর জ্বর নিয়ে গোসল কেন করেছে??)
ঠাসসসস,,,,
মেঘলাঃ( গোসল করে অনেকটা ফ্রেস লাছিলো। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে শাড়ী ঠিক করার চেষ্টা করছিলাম। আসলে আমি শাড়ী পরতে পারি না। কিন্তু বিয়ের পরের দিনই থ্রি-পিস পড়া ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। হঠাৎ কোথা থেকে এসে উনি গালে থাপ্পর মেরে বসলেন। মনে হচ্ছে কেউ পাথর মেরেছে গালে, দাঁত খুলে যাবে। গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম)
আকাশঃ জ্বর নিয়ে গোসল করতে কে বলেছে?? আমাকে কী তোমার কাজের লোক মনে হয়?? তুমি অসুস্থ হবে আর আমি তোমার সেবা করবো??? নাকি তোমার বাবা-মা তোমার জন্য সাথে কাজের লোক পাঠিয়েছে। আর নেক্সট টাইম যেন কালো শাড়ীতে না দেখি।(গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে এলাম বাড়ি থেকে। একটু রিলাক্স দরকার)
মেঘলাঃ(কথাগুলো বলে কিসের যেন চাবি নিয়ে হনহনিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। আচ্ছা আমার অপরাধটা কোথায়?? কী করেছি আমি?? যার জন্য এসব আমার সাথে হচ্ছে। আমি কী ইচ্ছে করে কালো হয়েছি নাকি ইচ্ছে করে অসুস্থ হয়েছি? যার কাছে দুটো ভালো কথা শুনতে পাই না, তার কাছে আমি সেবা আশা করবো (একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)। আর আমি যেই শাড়ী পড়ি উনার প্রবলেম কী? কালো রং আমার বারাবরই প্রিয় কিন্তু গায়ের রং কালো বলে কখনো পড়া হয়নি। ভেবেছিলাম কখনো পড়া হবেও না। কারণ বিয়ের পর স্বামীর পছন্দে চলতে হবে। এখন যেহেতু দেখলাম আমার প্রতি তার কোনো ইন্টারেস্ট নাই তাই নিজের পছন্দের শাড়ীটাই পড়েছিলাম। কিন্তু তা আর হলো কই। শাড়ী চেঞ্জ করে গোলাপি রঙের একটা থ্রি-পিস পড়ে নিলাম।
,,,,, ম্যাডাম আসবো??
মেঘলাঃ হ্যাঁ আসুন।
,,,,আমার নাম টিয়া। এই বাসায় কাজ করি। বড় ম্যাডাম আপনার খাবার আর ঔষধ পাঠাইছে।
মেঘলাঃ টিয়া আপু আপনি খাবারটা ঐ টেবিলে রাখুন। আর আমাকে ম্যাডাম বলতে হবে না। আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট। মেঘলা বলেই ডাকবেন কেমন??
টিয়াঃ আপনি অনেক ভালো বউমনি। আমি আপনাকে বউমনি বলেই ডাকবো।
মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলেন।
টিয়াঃ আপনাকে অনেক মিষ্টি লাগছে বউমনি।
মেঘলাঃ আমাকে,,, আর মিষ্টি??? ( একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
টিয়াঃ গায়ের রঙে সব সময় সৌন্দর্য প্রকাশ পায় না বউমনি। আপনি যে কতটা মিষ্টি দেখতে যে ভালো করে তাকাবে সেই বুঝতে পারবে। আর মানুষের আসল সৌন্দর্য চেহারা দেখে না মন দেখে বুঝা যায়।
মেঘলাঃ বাহ্ টিয়া আপু। আপনি তো খুব সুন্দর কথা বলতে পারেন। যাক এই বাড়িতে কাউকে অন্তত পাওয়া গেল কথা বলার।
টিয়াঃ কিন্তু বউমনি আপনার গালে দাগ কিসের??
মেঘলাঃ ক,,,কই কিছু না। আসলে আমার মেকআপ সয্য হয় না। তাই এলার্জি হয়ে গেছে।
টিয়াঃ ( হায়রে বাঙালি নারী। একরাত হয়েছে বিয়ের এখনি স্বামীর সম্মান বাঁচাত মিথ্যা বলছে। আমি জানি বউমনি ছোট সাহেব আপনাকে থাপ্পড় মেরেছে। ছোট সাহেব কেন এমন করছে??)
মেঘলাঃ এই বাড়িতে আর কেউ নেই??
টিয়াঃ আছে আপনার শাশুড়ী আর ননদ।
মেঘলাঃ ওহ্ ,,,,,,, আর আপু এই আপনি আপনি করেন না তো।
টিয়াঃ নিজে করে আর আমাকে না করছেন
মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমিও তুমি করে বলবো।
টিয়াঃ আচ্ছা বউমনি তাহলে তুমি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নাও আমি যাই আমার কাজ আছে।
মেঘলাঃ আচ্ছা ( টিয়া আপু চলে যেতেই আমি খাবার খেতে লাগলাম। আপুটা অনেক ভালো। কত সুন্দর করে কথা বলে। মনেই হয়না কাজের লোক। খাওয়া শেষে ঔষধ খেয়ে নিলাম। বেডে বসতে গিয়েও বসলাম না। সোফায় শুয়ে পরলাম। ভাবতে লাগলাম কী থেকে কী হয়ে গেল। এবাড়িতে মনে হয় রিসিপশন হবে না। কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ফোন নিয়ে বেলকনিতে গেলাম। বেলকনিটাও অনেক বড় আর সুন্দর। কিছু জানা আজানা ফুল দিয়ে সাজানো। একটা দোলনা আছে সেটায় বসে পড়লাম। মাকে কল দিলাম)
মেঘলাঃ আসসালামু আলাইকুম মা। কেমন আছো?
মরিয়ম বেগমঃ তোকে ছাড়া ভালো নেইরে মা । তুই কেমন আছিস??
মেঘলাঃ আমি ভালো আছি মা । এই বাড়ির মানুষ অনেক ভালো।
মাঃ আর জামাই বাবাজী??
মেঘলাঃ উনিও অনেক ভালো । আমার অনেক খেয়াল রাখে ( তোমাকে যদি সত্যিটা বলতে পারতাম মা )
মাঃ সে আমি আগেই বুঝেছিলাম । ছেলেটা অনেক ভালো। তোর আব্বার দেয়া টাকাতো নিলোই না ওল্টো বিয়ের সব খরচ নিজে করতে চেয়েছে। কিন্তু তোর আব্বা করতে দেয়নি। নিজের আদরের মেয়ে বিদায় নিজের টাকায় করবে বলে দিয়েছে।
মেঘলাঃ (এসব কী বলছে মা?? উনি টাকা নেয়নি। তাহলে বিয়ে কেন করেছে??) উনি টাকা নেয়নি??
মাঃ এক টাকাও না ।
মেঘলাঃ আ,,আচ্ছা মা এখন রাখছি।
মাঃ তোর আব্বার সাথে কথা বলবি না??
মেঘলাঃ পরে বলবো।
মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থাকিস আর ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করবি আর সবার মন জুগিয়ে চলবি। তোর শাশুড়ি মা বলছে এখন বউভাত করবে না। কী নাকি প্রবলেম হয়েছে একটু। কিছুদিন পর করবে। ততদিন ঐ বাড়িতেই থাকতে হবে।
মেঘলাঃ আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।
মাঃ আল্লাহ হাফেজ
মেঘলাঃ (ফোন রেখে ভাবতে লাগলাম টাকা না নিলে কেন বিয়ে করেছে। এটাতো সত্যি আমি উনার যোগ্য না। উনি কত সুন্দর, আমাদের তুলনায় কত ধনী। তাহলে কেন কেন??? ভাবতে পারছি না মাথা ব্যাথা করছে)
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
আকাশঃ হ্যালো
,,,,,,,,,,,
আকাশঃ What ?????? it’s true????
,,,,,,,,,,,,
আকাশঃ ওকে বাই। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। এবার খেলা জমবে আমি আসছি রুপ, এবার সামনাসামনি খেলা হবে (শয়তানি হাসি দিয়ে)
(এই রুপ আবার কে?? মেঘলাকে আকাশ বিয়েই বা কেন করছে?? কিসের খেলার কথা বলছে আকাশ??)
চলবে,,,,,,,,,