- শিক্ষনীয় হাসির ছোট গল্প
- নতুন শিক্ষনীয় গল্প
- বাংলা ছোট শিক্ষনীয় গল্প
- বিভিন্ন শিক্ষনীয় গল্প
- সুন্দর শিক্ষনীয় গল্প
- হাসির শিক্ষনীয় গল্প
১. শিক্ষনীয় হাসির ছোট গল্প
একটা ডিম বহনকারী গাড়ি অন্য গাড়ির সাথে ধা/ক্কা লেগে উল্টে গেলো। ডিম সব ভেঙ্গে গেলো। রাস্তায় ভীড় জমে গেলো সেখানে।
ভীড়ের মাঝ থেকে অমায়িক চেহারার এক ভদ্রলোক বেরিয়ে এসে ডিম বহনকারী গাড়ির ড্রাইভারকে বললেন, এজন্য নিশ্চয়ই তোমার মালিক তোমাকে দায়ী করবে৷ ক্ষতিপুরণ চাইবে।
: জ্বি
: তুমি তো গরীব। এত টাকা পাবে কোথায়? এক কাজ করো, এই আমি পাঁচ টাকা দিলাম, এখন অন্যদের কাছ থেকে আরও কিছু-কিছু নিলে বোধহয় হয়ে যাবে তোমার।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বেশ কিছু টাকা উঠে গেলো। ভীড় কমে গেলে ভদ্রলোকটিও চলে গেলেন। একজন পথিক আপন মনে বলে উঠলো, ‘কে এই ভদ্রলোক?’ ড্রাইভার বললো, ‘আমার মালিক।’
সংগৃহীত
২. নতুন শিক্ষনীয় গল্প
ফরহাদ সাহেব আমাদের বাড়ির পাশেই ভাড়া থাকেন। এক ছেলে এক মেয়ে। ফেসবুকে প্রায়ই তাদের হাসিখুশি কাপল ছবি দেখি। ফরহাদ সাহেবের বউ লিনা ভাবী নিত্য নতুন জামা কাপড় পরে ফেসবুকে ছবি আপলোড করেন।
তাদেরকে আমার সুখী পরিবার বলেই মনে হয়।
এইসব ছবি দেখে আমার বউ হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরে। সে মনে মনে ভাবে,আহা! ওদের মত যদি সুখী হইতে পারতাম!
লিনা ভাবীর সাথে আমার বউয়ের খুব ভাব। প্রায়ই দেখি দু’জন একসাথে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করে। তার সাথে দুই এক কথা কাটাকাটি হলেই বলে, এমন কাকের মত চেহারা করে রাখ কেন? চেহারা দেখলে তো মনে হয় এইমাত্র কাউরে খুন কইরা আসলা! একটু রোমান্টিক হইতে পার না? ফরহাদ ভাইকে দেখেও তো শিখতে পার, কী রোমান্টিক মানুষ। কথা শুনলেই মন জুড়িয়ে যায়! আর তোমার কথা শুনলেই মনে হয়, আগুনে ঝাপ দেই।
আমি বলি, তুমি এমন কাজের মেয়ে কাজের মেয়ে ভাব নিয়ে থাক কেন? দেখলেই মনে হয় বস্তি থেকে খালাম্মা আসছে বাড়ির কাপড়চোপড় ধুইতে। লিনা ভাবীর মতো সুন্দর করে কথা বলা শিখতে পার না? আহা, ফরহাদ সাহেবের কি ভাগ্য, এমন সুন্দর, ভদ্র একটা বউ পাইছে! আমার বউ মুখ দিয়ে কথা তো বলে না, যেন কামান দিয়ে গুলি করে!
বউ মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, লিনা ভাবীরও সৌভাগ্য এমন একজন ভদ্র জামাই পাইছে, আমার মতো এমন জামাই পায় নাই, যে সব সময় মুখে করল্লার রস নিয়ে বসে থাকে!
আমি বলি, করলার রস তো অনেক ভালো। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিষ বেদনায় কাজে লাগে।
একদিন লিনা ভাবী এসেছে আমাদের বাসায় কিছু টাকা ধার নিতে, তার কোন এক আত্মীয়ের বিয়ে। বিয়ের আগে আগে মার্কেট করবে। তার হাসবেন্ড মাস শেষে বেতন পেলেই শোধ করে দিবে।
আমি টাকা ধার দিলাম না। বললাম, আত্মীয় বাড়ি যেতে হলে ঋণ করে মার্কেট করবে কেন। এটা কী এমন জরুরি যে ঋণ করতে হবে!
আমি জানি টাকা ধার দিলেই সম্পর্ক নষ্ট হয়। এমন আমি বহু দেখেছি। তাছাড়া আত্মীয়ের বিয়ের আগে মার্কেট না করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। জরুরি দরকার হলে সেটা ভিন্ন কথা। পাওনাদারের কাছে টাকা চাইতে গেলেই নানা অজুহাত দেখায়। বেতন পান না, অসুস্থ থাকে, আত্মীয় মারা যান, এক্সিডেন্ট হয়, কিস্তি থাকে। শেষমেষ শুনতে হয়, আমার ব্যবহার খারাপ!
কী দরকার ঝামেলা বাড়িয়ে।
দুই মাস পর বউ একদিন কথা প্রসঙ্গে বলল, লিনা ভাবী আমার কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা ধার নিল, এখনো তো ফেরত দিল না।
আমি বললাম, তুমি চাও নাই?
বউ বলল, না।
আমি বললাম, টেনশন নিও না। দিয়ে দিবে। হয়তো সমস্যা হচ্ছে।
এর চার পাঁচ মাস পর বউ একদিন আবার বলল, লিনা ভাবী আমার টাকা ফেরত দেয় নাই।
আমি বললাম, চাইছিলা?
বউ বলল, না। আমার চাইতে লজ্জা হয়।
তাহলে কী আর করা, ছাইড়া দেও। তোমার পেয়ারের মানুষ। কী আর করবা!
লিনা ভাবী আগের মতই আমাদের বাড়ি আসেন,গল্পগুজব করেন। ফরহাদ ভাইকে দেখি হাত বোঝাই করে বাজার সদাই কিনে আনেন। রাস্তায় দেখা হলে ভালোমন্দ জিগ্যেস করেন ।
কয়েকমাস হল, লিনা ভাবী আমাদের বাসায় আসা কমিয়ে দিয়েছেন। আমি কারণ জানতে চাইলাম, বউ বলল, একদিন তিনি টাকার কথা তুলেছিলেন, এতে যাওয়া আসা কমিয়ে দিয়েছেন।
কষ্টের জমানো টাকা, বেচারা কয়েকদিন মন খারাপ করে রইল। লজ্জায় সে তাদের বাসায়ও যেতে পারে না। যদি কিছু মনে করেন। আমি বললাম, হয়তো ঝামেলায় আছে, একদিন দেখ হুট করে দিয়ে দিবে।
সেদিন দেখলাম, ফেসবুকে ফরহাদ সাহেব আর লিনা ভাবী হাসিমুখে যুগল ছবি ছেড়েছেন। ভাবীর গায়ে নতুন শাড়ি।
বউ বলল, আমার টাকা চাইতে লজ্জা লাগবে। তুমি একদিন ফরহাদ ভাইকে বলে দেখ।
আমি বললাম, তুমি টাকা দিয়েছ, তুমি বুঝ, এসবের মধ্যে আমি নাই।
বেচারা মুখ কালো করে ফেলল।
একদিন বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছি, ফিরে আসার সময় হঠাৎ আকাশ খারাপ করে ফেলল। বৃষ্টি আসার সম্ভাবনা। জোরে বাতাস ছেড়েছে। আমি বাসার দিকে জোরে হাঁটতে শুরু করেছি। ফরহাদ সাহেব বারান্দা থেকে দেখে বললেন, ভাইজান, চলে আসেন, চা খেয়ে যান। বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।
আসলেই বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়েছে।
ভাবলাম যাই, আমাকে দেখে হয়তো উনাদের টাকার কথা মনে হতে পারে। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। চাও খাওয়া হবে, ভাগ্য থাকলে টাকাও আদায় হতে পারে।
আমি ফরহাদ সাহেবের পিছু পিছু উনাদের বসার ঘরে গিয়ে বসলাম। লিনা ভাবী খবর পেয়ে দৌড়ে এলেন। কিছুক্ষণ এই আলাপ সেই আলাপ করে বললেন, ভাইজান বসেন, আমি চা করে আনি।
ততক্ষণে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।
আমি আগেও লক্ষ্য করেছি, ফরহাদ সাহেব কথা বলতে পছন্দ করেন। কথাও বেশ গুছিয়ে বলেন। শ্রোতা পেয়ে কথা শুরু করে দিয়েছেন। আজকের বিষয় ফ্রিডম অব স্পিচ। মানুষের যে মন খুলে কথা বলার স্বাধীনতা নেই, মন যা চায় তা যে সে বলতে পারে না, এটাই তিনি আমাকে অনেকক্ষণ যাবৎ বুঝিয়ে চলেছেন। এক পর্যায়ে বললেন, ভাইজান, এভাবে চললে তো একদিন মানুষ কথা বলাই বন্ধ করে দিবে। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা থাকা উচিত। আপনি কী মনে করেন?
আমি বললাম, নিশ্চয়। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা অবশ্যই থাকা উচিত। ফ্রিডম অব স্পিচ না থাকলে কেমনে হবে!
লিনা ভাবী চা নিয়ে এসেছেন। আমার চোখ গেল বইয়ের তাকের দিকে। সেখানে ‘সুন্দরি লেখিকা’ বইটা আছে। ভাবী তা লক্ষ্য করে বললেন, ভাইজান, আপনার লেখা বইটা আমি পড়েছি, অসাধারণ একটা বই। আমার যখনই মন খারাপ থাকে, এই বইটা আমি পড়ি। মন ভালো হয়ে যায়। আমি আপনার লেখার বিরাট ফ্যান।
লেখক এবং সুন্দরি মেয়েদের মন জয় করা একেবারেই সহজ। এলেবেলে লিখলেও আপনি যদি লেখককে বলতে পারেন, ভাইজান, আপনার লেখাটা ফাটাফাটি হইছে, তাহলে আর দেখতে হবে না। আপনার জায়গা হবে লেখকের কলিজায়। কোন সুন্দরি মেয়ে যদি মুখে আটা মাখে, আপনি বলবেন, আপা, মুখে কী মাখছিলেন? ময়দা? আপনারে তো কারিনা কাপুর লাগছে!
ময়দার কথা কেন বলবেন? আরে ভাই, বুঝতে হবে, আটার চেয়ে ময়দার মূল্য বেশি!
লিনা ভাবীর প্রসংশা পেয়ে মোমের মতো গলে গেলাম। মনে মনে বললাম, এই মূহুর্তে টাকা চাওয়া উচিত হবে না। ফ্যান বলে কথা!
বউ রাগ করলে করুক। আমি টাকা চাইবো না।
বৃষ্টি হচ্ছে। বজ্রপাত হচ্ছে। আমি একমনে চা খেয়ে যাচ্ছি। ফরহাদ সাহেব বললেন, ভাইজান, দুইটা ডালভাত খেয়ে গেলে খুশি হতাম।
লিনা ভাবী বললেন, ডালভাত যে খেতে বলছো, কী ডাইল আনছো? সকালে চুলায় বসাইলে রাত হয়ে যায়, ডাইল ফুটে না। বুঝলেন ভাইজান, এই লোকটাকে নিয়ে কী যন্ত্রণায় যে আছি! কোন কাজই জানে না। ঠিকমতো বাজারটা পর্যন্ত করতে জানে না। আমি বলেই ওর সংসার করে গেলাম। অন্য কেউ হলে কবেই চইলা যাইতো,,,,
ফরহাদ সাহেব ফোঁস করে উঠে বললেন, এমন কথা বইলো না। আমার মতো নিরীহ স্বামী পাইছিলা বইলা ঘরসংসার করতে পারলা, এই ভাইজানের মতো জামাই তোমার কপালে জুটলে খবর আছিল।
তুমি উনার নখের যোগ্যও না। ভাইজান সোনার মানুষ। তার মতো জামাই পাইতে ভাগ্য লাগে। উনার বউও অনেক লক্ষী।
তো তুমি উনার বউয়ের মতো লক্ষী হইতে পারলা না? হইছো তো পক্ষী। খালি উড়াউড়ি কর!
লিনা ভাবী কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, কী? তুমি আমারে এমন কথাটা বলতে পারলা? আল্লাহ রে! কার জন্য কী করি! ভাইজান, আপনি বলেন, আমি কার জন্য কী করি। এই লোকের মাথায় ঠাটা পড়ে না কেন! এই লোকের যেন ঠাটা পড়ে মরন হয়!!
ফরহাদ সাহেব বললেন, দেখলেন ভাইজান, অসভ্য মহিলা কী বলে!
আমি বললাম, বাদ দেন তো ভাই। ফ্রিডম অব স্পিচ। যা খুশি বলুক।
ফরহাদ সাহেব রেগেমেগে বললেন, ফ্রিডম অব স্পিচের গুষ্টি কিলাই। মেয়েদের আবার কীসের ফ্রিডম!
আমি পড়ে গেলাম গ্যাঁড়াকলে। কারে কী বলি। তবে এইটা জেনে খুশি হলাম, আমি একজন ভালো মানুষ। মনে মনে বলি, আরে শালা, আমি এতো ভালো মানুষ আর নিজেই জানি না!
পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য আমি লিনা ভাবীকে উদেশ্য করে মজা করে বললাম, একটা কথা আপনি ভুল বললেন, ভাবী। ফরহাদ সাহেবের ঠাটা পড়ে মরাটা ঠিক হবে না। এতে আপনারই লস!
হউক লস, তবুও আমি ওর মরন চাই।
মরন চান ভালো কথা। তাই বলে ঠাটা কেন? ঠাটা পড়ে মরলে লোকজন আপনাকে দেখিয়ে বলবে, এই মহিলার জামাইয়ের উপরে ঠাটা পড়ছে। এই মরনে কোনই ইজ্জত নাই। বেজ্জতি মরন। সবচেয়ে অভিজাত মরন কোনটা জানেন? হার্ট অ্যাটাক। মরলেও ইজ্জত আছে! ও মা গো বলেই কাইত!!
লিনা ভাবী বললেন, যেভাবে খুশি মরুক,আমার আফসোস নাই। আমার জীবনটা ফালা ফালা কইরা দিসে ভাইজান। ভাবীর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার আনছিলাম, এখনো শোধ দিতে পারি নাই। এদিকে পোলার স্কুলের বেতন দেওয়া হয় নাই। বেতন না দিলে পরীক্ষা দিব কেমনে? ওর বাপের সেই খেয়াল আছে?
ফরহাদ সাহেব চোখ গরম করে বললেন, মার্কেট করার সময় ওসব খেয়াল থাকে না? অসভ্য মহিলা। কে বলছে তোমারে টাকা ধার নিতে? তুমি টাকা আনছো, তুমি দিবা।
এমন সময় তাদের ছেলেটা এসে বলল, আম্মু আমার পরীক্ষার ফিস?
লিনা ভাবী বললেন, তোর বাবার কাছে চা।
ফরহাদ সাহেব ধমক দিয়ে বললেন, এই খবরদার, আমার সামনে আসবি না।। খুন করে ফেলব। তোর মায়ের কাছে যা।
ছেলেটা মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইল।
কোথায় যেন পড়েছিলাম , বই পড়ে বিএ পাশ করার চেয়ে বিয়ে করে বউ পাশ করা অনেক কঠিন।
আমি বললাম, বাবু, তোমার পরীক্ষার ফী কত?
ছেলেটা বলল, বেতনসহ দুই হাজার।
আমি মানিব্যাগ বের করে দুই হাজার টাকা ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রাস্তায় বের হয়ে এলাম। ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে।
পরেরদিন সকাল বেলা হাঁটতে গিয়ে ফিরে আসার সময় দেখি, দুজনেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখে কথা বলছে।
বুঝলাম না, তাহলে কি তারা গতকাল আমার সাথে অভিনয় করে মুরগি বানালো!
#হানিফ_ওয়াহিদ