কালকে চক্ষুলজ্জা ভেঙ্গে আব্বাকে বলছিলাম, আব্বা শীতকাল আসছে।রাতে পা অনেক ঠান্ডা থাকে। গরম হয় না।বয়স তো কম হইলো না। এইবার যদি একটু ভেবে দেখতেন তাহলে পা ঠান্ডা নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হইত না। আব্বা মনে হয় আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিল। তিনি একটু ভেবে উত্তর দিলেন। ঠিকাছে রুমে যাও আমি ভেবে দেখবো।
আব্বা ভেবে দেখবে মানে কথা ফাইনাল। যেসব বন্ধুরা বিদেশ থাকে ওদের সবাইকে একে একে ফোন দিয়ে বললাম ” তোরে মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে থাক আমার বিয়ের।আর পারলে প্লেনের টিকেট কেটে রাখ।এইবার শীতে আর মিস হবে না। এবার আমি বিয়ে করবোই।
তারপর কল দিলাম সেইসব বন্ধুদের যারা বিয়ে করছে অথচ আমাকে দাওয়াত দেয়নি। আরে বেটা তোরা দাওয়াত দেসনাই তো কি হইছে। আমি বিয়ে করতেছি তোদের দাওয়াত ঠিক ই দিমু। তোরা আমার বাপের কলিজা সম্পর্কে জানিস নাকি। সাত আটশো লোক বিয়েতে দাওয়াত করে খাওয়ানো আমার বাপের কাছে কিছুই না।
তারপর কল দিলাম সেই প্রেমিকাকে যে আমার জন্য ৬ বছর অপেক্ষা করে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে এখন দুই বাচ্চার মা। ওকে ফোন দিয়ে বললাম মনিকা তুমি আমার জন্য আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারলে না। দেখো আমার আব্বা আজকে বলেছে আমাকে বিয়ে দিবে। কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলে খুব বেশি ক্ষতি হতো মনিকা? প্রেমিকা ফোনের ওপাশ থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। বিয়ে করবো এই খুশির আনন্দে নিজেও কেঁদে ফেললাম প্রেমিকার সাথে।
কাল সারারাত বউয়ের স্বপ্ন দেখে ঘুম ভালোই হইছিল। কিন্তু আজ একটু আগে আব্বা একজোড়া মোজা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, রাতে ঘুমানোর আগে পরে ঘুমাবা দেখবা পা ঠান্ডা হবে না। রাতে ঘুম ভালো হবে। আর ঘুমানোর আগে যদি চুলায় একটু গরম করে নিতে পারো তাহলে আরও ভালো আরাম পাবা।
আব্বার চোখের দিকে দুই মিনিট তাকায় ছিলাম। মুখে কোনো ভাষা ছিল না। অন্তরে থেকে শুধু বলতেছিল এইটা বাপ না শত্রু।
চক্ষুলজ্জা
রিফাত আহমেদ